এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আই এস এফ    

    Bodhisattva Dasgupta_Gurulogin লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ মে ২০২১ | ১৬১৬ বার পঠিত
  • #RebuildBengalLeft  


    আমার রাজনৈতিক পরিচয় আমি সিপিএম সমর্থক। তো আমার মত নকল ঘটিহারানো সর্বহারার জীবনে আপাতত হারানোর মত পড়ে আছে কিছু শতাংশ। অতএব সময়টি পাটীগণিতের পক্ষে খারাপ না। আমাদের সাথীরা অনেকেই একাধারে আর্তের সেবায় ও মার খেতে ব্যস্ত আছেন, সেগুলি মাষ্টারমশাইরা দৃষ্টির তারতম্য অনুযায়ী কিছু দেখছেন বা দেখছেন না।


    সংযুক্ত মোর্চা নামক নিরীক্ষা টি আপাতত পর্যুদস্ত। একটু কয়েকটা সংখ্যা নেড়ে চেড়ে দেখি।


    বিতর্ক ছিল আই এস এফ কে নিয়ে। তাঁরা নতুন দল একেবারে। 


    - ৩২ টা সিটে প্রার্থী দিয়েছিলেন, ১২ জন প্রার্থী ছিলেন যাঁরা মুসলমান নন। 


    - রাষ্ট্রীয় সেকুলার মজলিস পার্টি হিসেবে,  খাম চিহ্নে লড়েছেন।


    -  ৩২ টিতে লড়ে তারা ৮১৩৪৮৯ টি মত ভোট পেয়েছেন।


    -  তার মধ্যে তারা ১৪ টিতে ১০% এর উপরে , তার মধ্যে ৯ টিতে ২০% এর উপরে তারা ভোট পেয়েছেন, নতুন একটা কোনমতে শেষ মুহুর্তে তৈরী দলের পক্ষে, চমকপ্রদ বললে  কম বলা হয়। 


     - এর মধ্যে  সব মিলিয়ে ৭টিতে তারা  মোর্চার লোকের সঙ্গেই  লড়়েছেন, খুব ই বোকামো করেছেন সন্দেহ নেই, কিন্তু সেটা তাঁরা একা একাই করেছেন, এরকম বলার মত বড় সাংবাদিক বা ভোটে হেরে বিচলিত নেতা আমি নই। ঈশ্বর পরম করুণাময়।  তাঁদের কে ভোট কাটার পার্টি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে যেন ‌সেটি গর্হিত অপরাধ। যাদের খেয়াল নেই এটুকু মনে করানো যেতে পারে, এর আগে সারা পৃথিবীতে ভোটের ইতিহাসে সকলেই , কি আশ্চর্য , বাকি সকলের ভোট কেটেছেন, কখনো পর্যাপ্ত, কখনো সামান্য বা প্রণিধাণের অযোগ্য।


    -- এই ভোটে যৌথ বোকামোর মাপটা, যত টুকু চোখে পড়ল,  এরকম -শুধু আই এস এফ এর দায় বলে মনে হচ্ছে কি?


    ক - ২ টি ফরোয়ার্ড ব্লক বনাম কংগ্রেস


    খ - ৫ টি আই এস এফ বনাম কংগ্রেস


    গ -  ১ টি সিপিএম বনাম আই এস এফ


    -- আই এস এফ খারাপ ফলও করেছেন অনেক সিটে, প্রায় ১৮ টি সিটে তাঁরা ১০% এর নীচে, তার মধ্যে ১৩ টিতেই ৫% এর নীচে ভোট পেয়েছেন। এতটাই খারাপ, যে সত্যি কথা বলতে কী, ৮ লক্ষ ভোটের বেশিটাই তাঁরা ভালো ফল করা ১৪ টিতেই জিতেছেন। 


    - যেগুলিতে আই এস এফ  ১০% এর বেশি ভোট পেয়েছেন, সেই আসন গুলি মূলতঃ দুটি চব্বিশ পরগণাতে , আর একটি হাওড়ায়।


    - যেগুলিতে আই এস এফ খারাপ করেছেন, সেগুলির মধ্যে হিন্দী উর্দু ভাষী মানুষের বাস দুটি বড় শহরের আসন ছাড়াও আসনগুলি ছড়িয়ে রয়েছে, বর্ধমান পশ্চিম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়াতে।


    -মূলত দুটো চব্বিশ পরগণা তে তাঁরা নিজেদের সীমিত রাখতে পারতেন, তাতে জোটের হয়তো সুবিধে হত,   কিন্তু রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ানোর উচ্চাকাংখা সাংঘাতিক গর্হিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না। এই দোষে দুষতে গেলে অনেককেই দোষ দিতে হয়।


    -- এবার আমরা একটু দেখি , আই এস এফ এর বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম এর রক্ষনশীল অংশ, লিবেরেল মহল থেকে তোলা অভিযোগ গুলো। 


    -- আমরা রাজনৈতিক মহল বলে এক ভদ্রলোকের কথায় জেনেছিলাম, কংগ্রেস আই এস এফ এর সঙ্গে সিপিএম এর সম্পর্ক দেরিতে অনুমোদন করার মূল কারণ আই এস এফ এর উচ্চাশা, আর মালদা মুর্শিদাবাদে  অধীর বাবুর ভোটে হাত পড়ার আশংকা। তো ফলাফল যা দেখা যাচ্ছে


     - যে পাঁচটি আসনে আই এস এফ কংগ্রেস থাকা সত্ত্বেও প্রার্থী দিয়েছে, তার মধ্যে 


    একটিতে সুজাপুরে, আই এস এফ আর ৫% ভোট কংগ্রেস এর ফল ১১% যোগ করলে হয়, ১৬% মত, সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৭০% এর উপরে ভোট, রানীনগরে হিসেব টাও সেরকম, আই এস এফ(১.২৪%) আর কংগ্রেস (২৫%) মিলে পেয়েছে, ২৬-২৭ শতাংশ ভোট, সেখানে তৃণমূল পেয়েছেন ৬০ শতাংশের উপরে ভোট,  মোথাবারি তেও এক চিত্র। আই এস এফ, ২.২% ক়ংগ্রেস ১০.৩৬%, সেখানে তৃণমূল ৫৯.৭%। মুর্শিদাবাদ শহর আসনটিতে,  রাগারাগির সুযোগ আছে, তবে সেটা তৃণমূল রেগে যেতে পারেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, কারণ আই এস এফ সেখানে ১% এর ও কম ভোট পেয়েছে, কংগ্রেস পেয়েছে ১২ শতাংশ ভোট, আর বিজেপি (৪১.৮৬ %)জিতে গেছেন টায়ে টোয়ে, খুব কম ব্যবধানে  তৃণমূলকে (40.78%) হারিয়ে।  ফারাক্কাতেও আই এস এফ না দাঁড়ালেই পারতেন, পেয়েছেন ১ শতাংশের কম ভোট, তবে তাঁরা দাঁড়ানোতে কংগ্রেসের থেকে আসন হাত ফসকে গেছে এই অভিযোগ অবান্তর, কারণ কংগ্রেস ২০% শতাংশ ভোট পেলেও আই এস এফ ০.৮৪%, তৃণমূল পেয়েছেন ৫৪ শতাংশের উপরে ভোট। অতএব কংগ্রেস ও কংগ্রেস পন্থী সিপিএম এর একাংশের অভিযোগ কিম্বা সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে তাঁদের অনুমান, সর্বৈব ভুল প্রমাণিত হয়েছে,‌ফল‌ প্রকাশিত হবার পরে। লিবেরেল ওয়ালা দের ও বোঝা উচিত, কংগ্রেস বা আই এস এফ এসে ভীষণ বিজেপির উপকার হয়েছে, এই তথ্য আর যেখানেই হোক, কংগ্রেসের শক্তিশালী সমর্থনের জায়গা হিসেবে পরিচিত আসন গুলিতে খাটে না, এবং তার জন্য কংগ্রেসের রাজনীতির ইতিহাসকে তাঁদের ধন্যবাদ জানানো উচিত, তাঁদের ঐ রাজনৈতিক ইতিহাসের উত্তরসূরী হিসেবে মানুষ তৃণমূল কে দেখেছেন,‌সেটা আমার মতে ভুল মূল্যায়ন হলেও অনৈতিহাসিক না। ইতিহাস যেমন ঐতিহাসিকের পছন্দের বাঁক গুলি প্রায় ই এড়িয়ে থাকে, শিক্ষিত নিউজ জাঙ্কি রাজনৈতিক দলের সমর্থক মাত্রেই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ তৈরীর ঝোঁক , সকলের ই পাড়ার রাজনৈতিক মহল অথবা অন্তত একাংশ হয়ে ওঠার উচ্চাশা আলোচনার ক্ষতি করছে একটু।( তথ্য সূত্র, ইলেকশন কমিশন এর রেজাল্ট স্টেটাস ওয়েবসাইট,‌ফর্ম ২০ পড়ার পরে আমাকে আমার বিশ্লেষণ বদলাতে হতেই পারে, তবে একটা বহুদলীয় রাজনীতি তে নতুন দল এলে এত বিচলিত হবার কি আছে বোঝা মুশকিল, আদিতে যখন বিশ্বচরাচরে ক়ংগ্রেস ও পরম করুণাময় নিরাকার ব্রহ্ম ছাড়া কেউ ছিলেন‌না তার থেকে অধিকারবোধের ,‌জীবন্ত বিতর্কের প্রশ্নে দেশ অবশ্যই এগিয়েছে, কথা কম না বলেও গণতন্ত্রের ব্যাপারে কাজ বেশি করেছে বলেই মনে‌ হয়। এবং অবশ্যই বিরোধী হীন দলিতহীন মুসলমান হীন মধুময় ভারতবর্ষে র স্বপ্ন যাঁরা দেখেন তাঁদেরকে সর্বৈব‌ ক্ষমতার থেকে শতহস্ত দূরে রাখতে গেলে রুটি রুজি র দাবি এমনিতেও বেশিদিন চেপে রাখা যাবেনা।  ) আই‌ এস‌ এফ‌ দলটা এখন‌ কিভাবে থাকবে, আমরা জানিনা। বিশেষ করে তাদের সমর্থক উপরে যে অত্যাচার নেমে এসেছে তার পরে। কিন্তু বড় শাসক দল , রাজ্যের একটা ছোট অংশের মানুষের সময়ের দাবি কে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু  বাংলা ভাষী  গ্রামীন ও বিশ্বাসী নিম্নবর্গীয় দের অংশীদারিত্বের দাবি নিয়ে দল গড়ার চেষ্টাটা এই ভোটে মনে রাখার মত একটা বস্তু হয়ে রইল। বড় দলগুলির ভেতরে বাইরে আলোচনার পথ প্রশস্ত করলেই মঙ্গল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন