#RebuildBengalLeft
আমার রাজনৈতিক পরিচয় আমি সিপিএম সমর্থক। তো আমার মত নকল ঘটিহারানো সর্বহারার জীবনে আপাতত হারানোর মত পড়ে আছে কিছু শতাংশ। অতএব সময়টি পাটীগণিতের পক্ষে খারাপ না। আমাদের সাথীরা অনেকেই একাধারে আর্তের সেবায় ও মার খেতে ব্যস্ত আছেন, সেগুলি মাষ্টারমশাইরা দৃষ্টির তারতম্য অনুযায়ী কিছু দেখছেন বা দেখছেন না।
সংযুক্ত মোর্চা নামক নিরীক্ষা টি আপাতত পর্যুদস্ত। একটু কয়েকটা সংখ্যা নেড়ে চেড়ে দেখি।
বিতর্ক ছিল আই এস এফ কে নিয়ে। তাঁরা নতুন দল একেবারে।
- ৩২ টা সিটে প্রার্থী দিয়েছিলেন, ১২ জন প্রার্থী ছিলেন যাঁরা মুসলমান নন।
- রাষ্ট্রীয় সেকুলার মজলিস পার্টি হিসেবে, খাম চিহ্নে লড়েছেন।
- ৩২ টিতে লড়ে তারা ৮১৩৪৮৯ টি মত ভোট পেয়েছেন।
- তার মধ্যে তারা ১৪ টিতে ১০% এর উপরে , তার মধ্যে ৯ টিতে ২০% এর উপরে তারা ভোট পেয়েছেন, নতুন একটা কোনমতে শেষ মুহুর্তে তৈরী দলের পক্ষে, চমকপ্রদ বললে কম বলা হয়।
- এর মধ্যে সব মিলিয়ে ৭টিতে তারা মোর্চার লোকের সঙ্গেই লড়়েছেন, খুব ই বোকামো করেছেন সন্দেহ নেই, কিন্তু সেটা তাঁরা একা একাই করেছেন, এরকম বলার মত বড় সাংবাদিক বা ভোটে হেরে বিচলিত নেতা আমি নই। ঈশ্বর পরম করুণাময়। তাঁদের কে ভোট কাটার পার্টি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে যেন সেটি গর্হিত অপরাধ। যাদের খেয়াল নেই এটুকু মনে করানো যেতে পারে, এর আগে সারা পৃথিবীতে ভোটের ইতিহাসে সকলেই , কি আশ্চর্য , বাকি সকলের ভোট কেটেছেন, কখনো পর্যাপ্ত, কখনো সামান্য বা প্রণিধাণের অযোগ্য।
-- এই ভোটে যৌথ বোকামোর মাপটা, যত টুকু চোখে পড়ল, এরকম -শুধু আই এস এফ এর দায় বলে মনে হচ্ছে কি?
ক - ২ টি ফরোয়ার্ড ব্লক বনাম কংগ্রেস
খ - ৫ টি আই এস এফ বনাম কংগ্রেস
গ - ১ টি সিপিএম বনাম আই এস এফ
-- আই এস এফ খারাপ ফলও করেছেন অনেক সিটে, প্রায় ১৮ টি সিটে তাঁরা ১০% এর নীচে, তার মধ্যে ১৩ টিতেই ৫% এর নীচে ভোট পেয়েছেন। এতটাই খারাপ, যে সত্যি কথা বলতে কী, ৮ লক্ষ ভোটের বেশিটাই তাঁরা ভালো ফল করা ১৪ টিতেই জিতেছেন।
- যেগুলিতে আই এস এফ ১০% এর বেশি ভোট পেয়েছেন, সেই আসন গুলি মূলতঃ দুটি চব্বিশ পরগণাতে , আর একটি হাওড়ায়।
- যেগুলিতে আই এস এফ খারাপ করেছেন, সেগুলির মধ্যে হিন্দী উর্দু ভাষী মানুষের বাস দুটি বড় শহরের আসন ছাড়াও আসনগুলি ছড়িয়ে রয়েছে, বর্ধমান পশ্চিম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়াতে।
-মূলত দুটো চব্বিশ পরগণা তে তাঁরা নিজেদের সীমিত রাখতে পারতেন, তাতে জোটের হয়তো সুবিধে হত, কিন্তু রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ানোর উচ্চাকাংখা সাংঘাতিক গর্হিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না। এই দোষে দুষতে গেলে অনেককেই দোষ দিতে হয়।
-- এবার আমরা একটু দেখি , আই এস এফ এর বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম এর রক্ষনশীল অংশ, লিবেরেল মহল থেকে তোলা অভিযোগ গুলো।
-- আমরা রাজনৈতিক মহল বলে এক ভদ্রলোকের কথায় জেনেছিলাম, কংগ্রেস আই এস এফ এর সঙ্গে সিপিএম এর সম্পর্ক দেরিতে অনুমোদন করার মূল কারণ আই এস এফ এর উচ্চাশা, আর মালদা মুর্শিদাবাদে অধীর বাবুর ভোটে হাত পড়ার আশংকা। তো ফলাফল যা দেখা যাচ্ছে
- যে পাঁচটি আসনে আই এস এফ কংগ্রেস থাকা সত্ত্বেও প্রার্থী দিয়েছে, তার মধ্যে
একটিতে সুজাপুরে, আই এস এফ আর ৫% ভোট কংগ্রেস এর ফল ১১% যোগ করলে হয়, ১৬% মত, সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৭০% এর উপরে ভোট, রানীনগরে হিসেব টাও সেরকম, আই এস এফ(১.২৪%) আর কংগ্রেস (২৫%) মিলে পেয়েছে, ২৬-২৭ শতাংশ ভোট, সেখানে তৃণমূল পেয়েছেন ৬০ শতাংশের উপরে ভোট, মোথাবারি তেও এক চিত্র। আই এস এফ, ২.২% ক়ংগ্রেস ১০.৩৬%, সেখানে তৃণমূল ৫৯.৭%। মুর্শিদাবাদ শহর আসনটিতে, রাগারাগির সুযোগ আছে, তবে সেটা তৃণমূল রেগে যেতে পারেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, কারণ আই এস এফ সেখানে ১% এর ও কম ভোট পেয়েছে, কংগ্রেস পেয়েছে ১২ শতাংশ ভোট, আর বিজেপি (৪১.৮৬ %)জিতে গেছেন টায়ে টোয়ে, খুব কম ব্যবধানে তৃণমূলকে (40.78%) হারিয়ে। ফারাক্কাতেও আই এস এফ না দাঁড়ালেই পারতেন, পেয়েছেন ১ শতাংশের কম ভোট, তবে তাঁরা দাঁড়ানোতে কংগ্রেসের থেকে আসন হাত ফসকে গেছে এই অভিযোগ অবান্তর, কারণ কংগ্রেস ২০% শতাংশ ভোট পেলেও আই এস এফ ০.৮৪%, তৃণমূল পেয়েছেন ৫৪ শতাংশের উপরে ভোট। অতএব কংগ্রেস ও কংগ্রেস পন্থী সিপিএম এর একাংশের অভিযোগ কিম্বা সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে তাঁদের অনুমান, সর্বৈব ভুল প্রমাণিত হয়েছে,ফল প্রকাশিত হবার পরে। লিবেরেল ওয়ালা দের ও বোঝা উচিত, কংগ্রেস বা আই এস এফ এসে ভীষণ বিজেপির উপকার হয়েছে, এই তথ্য আর যেখানেই হোক, কংগ্রেসের শক্তিশালী সমর্থনের জায়গা হিসেবে পরিচিত আসন গুলিতে খাটে না, এবং তার জন্য কংগ্রেসের রাজনীতির ইতিহাসকে তাঁদের ধন্যবাদ জানানো উচিত, তাঁদের ঐ রাজনৈতিক ইতিহাসের উত্তরসূরী হিসেবে মানুষ তৃণমূল কে দেখেছেন,সেটা আমার মতে ভুল মূল্যায়ন হলেও অনৈতিহাসিক না। ইতিহাস যেমন ঐতিহাসিকের পছন্দের বাঁক গুলি প্রায় ই এড়িয়ে থাকে, শিক্ষিত নিউজ জাঙ্কি রাজনৈতিক দলের সমর্থক মাত্রেই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ তৈরীর ঝোঁক , সকলের ই পাড়ার রাজনৈতিক মহল অথবা অন্তত একাংশ হয়ে ওঠার উচ্চাশা আলোচনার ক্ষতি করছে একটু।( তথ্য সূত্র, ইলেকশন কমিশন এর রেজাল্ট স্টেটাস ওয়েবসাইট,ফর্ম ২০ পড়ার পরে আমাকে আমার বিশ্লেষণ বদলাতে হতেই পারে, তবে একটা বহুদলীয় রাজনীতি তে নতুন দল এলে এত বিচলিত হবার কি আছে বোঝা মুশকিল, আদিতে যখন বিশ্বচরাচরে ক়ংগ্রেস ও পরম করুণাময় নিরাকার ব্রহ্ম ছাড়া কেউ ছিলেননা তার থেকে অধিকারবোধের ,জীবন্ত বিতর্কের প্রশ্নে দেশ অবশ্যই এগিয়েছে, কথা কম না বলেও গণতন্ত্রের ব্যাপারে কাজ বেশি করেছে বলেই মনে হয়। এবং অবশ্যই বিরোধী হীন দলিতহীন মুসলমান হীন মধুময় ভারতবর্ষে র স্বপ্ন যাঁরা দেখেন তাঁদেরকে সর্বৈব ক্ষমতার থেকে শতহস্ত দূরে রাখতে গেলে রুটি রুজি র দাবি এমনিতেও বেশিদিন চেপে রাখা যাবেনা। ) আই এস এফ দলটা এখন কিভাবে থাকবে, আমরা জানিনা। বিশেষ করে তাদের সমর্থক উপরে যে অত্যাচার নেমে এসেছে তার পরে। কিন্তু বড় শাসক দল , রাজ্যের একটা ছোট অংশের মানুষের সময়ের দাবি কে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু বাংলা ভাষী গ্রামীন ও বিশ্বাসী নিম্নবর্গীয় দের অংশীদারিত্বের দাবি নিয়ে দল গড়ার চেষ্টাটা এই ভোটে মনে রাখার মত একটা বস্তু হয়ে রইল। বড় দলগুলির ভেতরে বাইরে আলোচনার পথ প্রশস্ত করলেই মঙ্গল।