এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভবিষ্যত ভেবে কাঁপুনি ধরেছে

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ মার্চ ২০২১ | ১৪০৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আমার আর এলগিন রোডের সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও গাড় হচ্ছে। কয়েকদিন তাকে নিয়ে লিখতে পারিনি। তাই প্রতিদিন আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচায় এখন সে। তাই তার অভিমান ভাঙাতে আজ এই লেখা।

    গতকাল অফিস থেকে বেরিয়েছি সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ। এলগিন মোড় পর্যন্ত যেতে আমার সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত মিনিট। কালকেও আমায় দেখে ভেংচি কেটেছে অভিমানী এই রোডটা। তাই চারিদিকে গল্প খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছিলাম। আসলে, একমাত্র কলমচিরাই জানে প্রতিটা মূহুর্তের প্রতিটা ঘটনায় এক একটা গল্প লুকিয়ে থাকে।

    ভোটের কারনে এখন রাস্তাঘাটে বাস কম। তাই বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে কয়েকদিন থেকে। গত কাল দাঁড়িয়ে আছি। পাশে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা এসে দাড়ালেন। দুজনেই ষাটোর্ধ্ব।

    বৃদ্ধার মুখের ঝোলা ফর্সা চামড়া লাল হয়ে আছে। চোখটা চিকচিক করছে। বৃদ্ধ একেবারে নিস্তব্ধ। কয়েক মূহুর্ত পর শুরু করলেন বৃদ্ধা। প্রায় একপ্রকার চেঁচিয়েই বললেন "বাসে তোলার জন্য আমাকে এতদূর হাঁটিয়ে নিয়ে এল। বাজে লোক একটা। কি করে যে সংসার করছি ভগবান জানে।"

    বৃদ্ধের মুখটা একেবারেই শুকনো। তিনি শান্ত স্বরে বললেন "টাকা নেই তো। কি করবো বলো। আজকের দিনটা একটু কষ্ট কর।"

    বৃদ্ধার আওয়াজটা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। চেঁচিয়ে বললেন "তুমি জানোনা আমার হাঁটুতে ব্যাথা।"

    বৃদ্ধ বৃদ্ধার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন "জানি তো। তাই নিয়ে এলাম। এইটুকু হাঁটলে হাঁটু খুলে যাবেনা। ডাক্তার তোমায় হাঁটতে বললেন মনে আছে?"

    বৃদ্ধা ততক্ষণে পাশের বট গাছের তলায় বাঁধানো বেদিতে বসে পড়েছেন। আমি তাদের দিকে আড়চোখে একবার দেখলাম। হাঁটুতে হাত বোলাতে বোলাতে বৃদ্ধার মুখ থেকে "বাবগো মাগো" বলে কিছু শব্দ বের হচ্ছে। পাশে জনাপাঁচেক লোকজন ছিল। তারাও একবার করে তাকাল। যে ট্রাফিকটা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ওয়াকিটকিতে কথা বলছিল সেও কথা থামিয়ে তাদের দিকে চেয়ে।

    বৃদ্ধা চেঁচিয়ে চলেছে তখনও। কি সব বলছে অত ভালো করে বুঝতে না পারলেও এইটুকু বুঝতে পেরেছি আজ দাদুর কপালে দুঃখ। শনি মাথার উপর নাচছে।

    আরও মিনিট পাঁচেক এইভাবে গজগজ করতে করতে বাস এল ওঁদের। বৃদ্ধ গিয়ে হাতটা ধরে বলল "চলো এসে গেছে।" চেঁচিয়ে বলল "ও বাস দাঁড়াও।"

    মজার ব্যাপার হল বাসটা মিনিট দুই ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল কিন্তু বৃদ্ধা সেই বাসে উঠল না। এতক্ষন ট্রাফিক পুলিশটা সব বাসগুলোকে তাড়া করছিল বাঁশি বাজিয়ে। এই বাসটাকে কিছু বলল না। হয়ত বৃদ্ধর মনের অবস্থা সেও বুঝতে পেরেছে। যতই হোক "ম্যান উইল বি ম্যান"।

    শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধা উঠল না ওই বাসে। কন্ডাক্টর দু চারটে মন্দভাষা বলে ড্রাইভারকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিল। আরও মিনিট দুই পরে বৃদ্ধ আর কোন উপায় না পেয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা হলুদ ট্যাস্কিকে ডেকে এনে বৃদ্ধাকে বলল " চলো গিন্নি। ট্যাক্সি এনেছি।"

    এবার আরও অবাক করার ব্যাপার হল বৃদ্ধা টাক্সিতেও উঠল না। উপরন্তু চেঁচিয়ে বলল "এই বলছিলে টাকা নেই। তো ট্যাক্সি ভাড়া দেবে কোথা থেকে? আমি যাবনা।" বৃদ্ধ ভ্যালভ্যালে চোখে একবার ব‌উকে দেখে আর একবার ড্রাইভারকে।

    এখন আমার মনে হচ্ছিল মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদি। আমি হলে তাই করতাম হয়ত। বৃদ্ধ অনেক কাকুতিমিনতি করার পরেও বৃদ্ধা সে ট্যাক্সিতে উঠল না। ট্যাক্সি ড্রাইভারও বিড়বিড় করতে করতে এগিয়ে গেল। ততক্ষণে আমার বাস এসে গেল। কিন্তু উঠতে পারলাম না। ভিড়ের জন্য নয়। সেই বৃদ্ধের জন্য। ভাবলাম পরেরটায় যাব। এর শেষ পরিনতি দেখেই যাই।

    মিনিট তিন পর ওঁদের বাস এল। বৃদ্ধ এবার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে। আমি তার দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ দেখি কখন বৃদ্ধা সেই বেদি থেকে নেমে এসেছে। বৃদ্ধের হাতের কব্জিটা ধরে বলল "চলো চলো উঠে পরি।"

    বৃদ্ধ শান্ত সুবোধ বালকের মত বাসে উঠল। আমার দিকে ট্রাফিকটা তাকিয়ে একবার হাসল বটে। কিন্তু আমি আমার ভবিষ্যত ভেবে হাসার অবস্থায় ছিলাম না। বিশ্বাস করুন।।

    ছত্রাক (আমার ব্লগ) - রাজকুমার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন