পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
জহর কানুনগো
গল্প? মানুষ রাস্তায় চলছে ফিরছে বা বসে আছে ঘরের সিঁড়িতে বা পার্কের বেঞ্চিতে একা, বা খেলছে – ঐ যে লোকটা দৌড়চ্ছে - রোজকার অভ্যেস বসে দৌড়চ্ছে, ট্রেন না মিস হয়ে যায় তার জন্য দৌড়চ্ছে? রোগা হতে দৌড়চ্ছে নাকি যৌবন ধরে রাখতে দৌড়চ্ছে? কেন? এখনো কিসের ক্ষুদা? বিয়ে করেছে সে। বৌ ভালো। বাড়ী সামলায়, সন্তান সামলায়, রাঁধে বারে। তবুও তার যৌবনের প্রতি কিসের এত মোহ? কেন সে রোজ দৌড়য়? কি করে সে? জিজ্ঞেস কর তাকে, গল্প বেরিয়ে আসবে।
সে বলবে, ধার দেনা বৌ বাচ্চা নিয়ে জীবন। শরীরের হতাশা চিন্তা ভাবনা গুলোকে ঘাম বানিয়ে নির্গত করি আর কি!
সে কি বলবে, না বলবে সেটা কোন কথা নয়। লেখক হিসাবে কারন টা তোকে বের করতে হবে। হয়তো লোকটা অফিস থেকে ফিরে এসে সে পার্কে যায় দৌড়াতে, কারন সে ভাবে তাকে ট্র্যাক স্যুটে দেখতে স্মার্ট লাগে। তারপর সে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে পার্কের পাশে সুপারমার্কেটে যায় কোল্ড ড্রিঙ্ক কিনতে, বা এটা ওটা কিছু কিনতে। কেন যায় রোজ? তার বাড়ীর ফ্রিজেও তো কোল্ড ড্রিঙ্ক থাকতে পারে। তার বউও তো ওকে এক গ্লাস লেবুর জলের শরবত বানিয়ে দিতে পারে। তবুও সে কেন যায় প্রতি সন্ধ্যায় সুপারমার্কেটে? বৌ তাকে জিজ্ঞেস করে, কেন রোজ এটা ওটা নিয়ে আসো। সে হয়তো বলবে, কেন, তুমিই তো বললে গোপাল ঘিটাতে বড় বেশী ঘি ঘি গন্ধ। ফেরত দিয়ে এটা নিয়ে এলাম। লোকটা সে রাতে ভাবল কেন সে যায় রোজ রোজ সুপারমার্কেটে? ভাব। তোর গল্পের লোকটাকেও ভাবা। একদিন হয়তো লোকটার মনে হল, ক্যাশ কাউন্টারের মেয়েটাই কি তাকে টানে? ব্যাস, পেয়ে গেলি গল্প। একটু বরফ নিয়ে আয়। তুই তো রাতে লিখবি। ওয়ান ফর দা রোড টা নিয়েই বাড়ী যাই।
ব্যাস, এইটুকুই গল্প?
তা কেন হবে? লোকটা একদিন বলেই ফেলল মেয়েটাকে, আপনি বড় সুন্দর বা ঐ ধরনের কিছু।
শাট আপ! লোকটি বলল, তারপর পাবলিকের হাতে পেঁদানি খেল। আর তার বৌ এই রকম মেয়েবাজ স্বামীকে সেবা করতে হসপিটালে যেতে নারাজ। লোকটা নার্সের সেবা পেল। নার্সের প্রেমে পড়ে গেল।
এক্স্যাক্টলি। এই ভাবেই গল্প এগোয়। কই, বরফটা দে!
এরকম দৌড়বাজ লোকের গল্প আমার পছন্দ নয়। আমার একটা হ্যাপি এন্ডিং দরকার।
বরফ দিলাম।
কেন, নার্সের সঙ্গে প্রেম হওয়াটা কি ব্যাড এন্ডিং?
তবে পাবলিকের হাতে মার খেলো যে একটু আগে?
তাই বলে সে বদ? এক দিনেই সে বদ হয়ে গেল?
ঠিক আছে, তুই এখন বাড়ী যা।
বন্ধু চলে গেল। হ্যাঁ, বন্ধুই বটে। কিছু টাকা ধার চেয়েছিলাম, দিলো তো নাই, তার উপর পুরো কোয়াটারটা শেষ করে, গল্প ঝেড়ে চলে গেল। শালা! ফোন বাজছে। কার্ত্তিক বাবুর না হয়!
কার্ত্তিক বাবু, সোমবারের মধ্যেই আপনার টেবিলে পেয়ে যাবেন।
হ্যাঁ নিশ্চয়। কিন্তু রাত ফুরোলেই সোমবার, সেটা খেয়াল আছে তো আপনার? নতুন লেখককে সুযোগ দিন, সুযোগ দিন বলে তো খুবই কাঁদলেন! গল্পের ইলাস্ট্রেসান অব্দি হয়ে গেছে, গল্প পেলাম না।
না না, এতক্ষন ধরে আপনার কাজইতো করছিলাম।
দুচার লাইনে নায়িকার বিবরণটা দিনতো! পবিত্র বাবু বসে আছেন। ইলাস্ট্রেসানটা করেই চলে যাবেন।
আমি একটু পরেই ফোন করছি স্যার।
মানে? গল্পে এখনো নায়িকা নেই?
না না, কার্ত্তিক বাবু, মানে, যতক্ষণ না শেষ করছি বুঝতে পারছি না গল্পের মুখ্য চরিত্রটা কে? নায়ক না নায়িকা?
ঝেড়ে কাশুন তো! তার মানে, গল্পের মুখ্য চরিত্র কে তা জানেন না, আর লিখে চলেছেন?
বেচারা নবীন লেখক আর কি করে? বলতেই হয় তাকে।
পাবলিকের হাতে প্যাঁদানি খাওয়াটা অব্দি গলপের মোটামুটি একটা বিবরণ দিলাম। শুনলেন কার্ত্তিক বাবু। তারপর জানতে চাইলেন, তারপর?
তারপর স্যার হসপিটাল, নার্স। মানে, ঐ নার্সটার প্রেমে পড়ল আর কি!
কার্ত্তিক বাবু চুপ। হয়তো ভাবছেন! নাকি অসন্তুষ্ট?
ক পাতা?
মানে?
প্যাঁদানি অব্দি কত পাতা?
চারএক পাতার মত হবে।
ওঃ, তার মানে লেখেন নি এখনো?
স্যার, পুরো রাত এখনো বাকি। লিখে ফেলবো।
ঠিক আছে। এখন ফিরে যান দোকানের ওই মেয়েটির কাছে। দেখতে কিরকম সে?
সুন্দরই হবে স্যার। সুন্দর।
সবাইয়ের চোখে সুন্দর, না শুধু ওই লোকটির চোখে?
না স্যার, মানে দীর্ঘাঙ্গি। সুন্দর চোখ মুখ, লম্বা চুল, ফরসা।
তার মানে রীতিমত সুন্দর। সুন্দর একটি মেয়েকে কেউ বলেছে যে সে সুন্দর, এর মধ্যে নতুন কি আর?
তাহলে মেয়েটাকে একটু ………
ওর বৌকে দেখতে কিরকম?
কার বউ স্যার? ওঃ নায়কের বউকে? সুন্দরী, সুশীলা, শ্যামবর্ণা, লম্বা চুল ... যে রকম বাঙালী ঘরের বউরা হয় আর কি!
এরকমই লিখছেন না তো?
না স্যার, আপনি জিজ্ঞেস করলেন, তাই বললাম।
ঠিক আছে, মেয়েটিকে লম্বাই থাকতে দিন। ফরসা – ঠিক আছে। নাকটাকে শার্প করবেন না। ধরুন একটু বোঁচা। আর স্বাস্থ্যবতী ।
স্বাস্থ্যবতী?
হ্যাঁ, ধরুন একটু মোটার দিকে। আর বব চুল।
আমার গল্পের নায়িকা স্যার!
কেন, নায়িকা কি স্বাস্থ্যবতী হতে পারে না? দাঁড়ান এক মিনিট, পবিত্র বাবু পাশেই রয়েছেন, জিজ্ঞেস করে নি উনি বব চুল আঁকতে পারেন কিনা!
স্যার মেয়েটিকে মোটা করবেন না স্যার। আমার ভিসিউলাইস করতে অসুবিধা হয়।
মোটা তো বলছি না। স্বাস্থ্যবতী। বব চুল। একসময়ে হকি খেলত। এখন ক্যাশ কাউন্টারে বসে। এরকম একটি মেয়ের সঙ্গে আপনার ওই লোকটি প্রেমে পড়ল। নাম কি রেখেছেন?
সমুদ্র।
হোয়াট?
না স্যার, নরেন।
ঠিক আছে। এবার ঐ মার খাওয়া আর হসপিটাল ইত্যাদির পর মেয়েটাকে নিয়ে আসুন। চোখের সামনে পাবলিক লোকটাকে মারল, কেন? কি এমন দোষ করেছিল লোকটা। কেন না, লোকটা তাকে বলেছে, আপনি সুন্দর। এই পর্যন্ত তাকে কেউ বলেছে সুন্দর? মেয়েটার মন অনুতাপে ভরে উঠল। শুনুন, গোটা তিনেক পাতা মেয়েটাকে নিয়ে লিখুন। আর শুনুন, মাঝে মধ্যে হাসপাতালে ফিরে আসবেন।
নিশ্চয় স্যার। বউ যে ওকে ভিসিট করতে আসছে না, ওটাও ঢুকিয়ে দিই স্যার?
তা নয়তো শুধু ওষুধ পত্র নিয়ে লিখবেন? বাট নার্সের সঙ্গে কোন প্রেম ফ্রেম নয়। আমি কোণ বদ হিরো চাই না। সে একটি সাধারন লোক, সত্যিই তার ভালো লেগেছিল ওই ..কি বলে, হকি প্লেয়ারটিকে।
বিজিতাকে।
কে বিজিতা? না না। সাধারন একটা নাম দিন।
জবা।
ঠিক আছে। জবা আয়নায় নিজেকে দেখে বার বার, আর ভাবে কি দেখে লোকটা ওকে বলল সুন্দর? তার দুটি চোখ? অতি সাধারন গোল দুটি চোখ। তার নাক? তার মা তো তাকে এখনো বুচি বলে ডাকে। তবে? তার গায়ের রং? তার বব কাট চুল? ভাবতেই থাকে। সবসময় অন্যমনস্ক। বাড়ীর কাজে মন নেই। ভাতের ফেনা উপচে পড়ে। কড়াইয়ে তরকারী পোড়ে। বুড়ো বাপ মা বাড়ীতে। ঐ তিন পেজেই নামাবেন।
কিন্তু স্যার মেয়েদের এই সুন্দর অসুন্দর ব্যাপারটাতে নারীবাদীরা অসন্তুষ্ট হবে।
ভালো পয়েন্ট। জবা হটাত নিজেকে আবিস্কার করল, সে সুন্দর কারন সে তরুণী। তারুন্যের সৌন্দর্য। লোকটার কথা মনে হল। লোকটিই তার আসল সুন্দরতাকে দেখেছে যা আর কারো নজরে পড়ে না। সুন্দরকে সুন্দর বলার সাহস আছে লোকটির মধ্যে। এবার জবাকে পাঠিয়ে দিন হসপিটালে এক গোছা ফুল নিয়ে।
মারভেলাস। একটা অনুভূতি গড়ে উঠল দুজনের মধ্যে।
দু তিন দিন পরেই লোকটিকে ফিরিয়ে আনবেন হসপিটাল থেকে।
এত তাড়াতাড়ি?
মানে? কতদিন রাখবেন হসপিটালে? প্রাইভেট না সরকারী হাসপাতাল?
স্যার, বউ তো একদিন ও ওকে ভিসিট করতে আসে নি। এই রকম একটা প্রতিকূল পরিবেশে নায়ককে নিয়ে আসবো?
বউ কে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিন।
অল রাইট, তারপর?
তারপর আবার কি? লোকটা প্রেম নিবেদন করল। মেয়েটাও স্বীকার করল।
কিন্তু লোকটার বউ, সন্তান? স্বামী হিসাবে লোকটা তো খারাপ ছিল না! জীবনে একটা মাত্র ভুলের জন্য বউ তাকে ত্যাগ করবে?
দেখুন, সবই মানি। কিন্তু কোন স্ত্রী যদি জানতে পারে যে তার স্বামী পাবলিকের হাতে ধোলাই খেয়েছে, তাও আবার নারী সংক্রান্ত ব্যাপারে, এ ব্যাপার মেনে নেওয়া কঠিন। এটা আপনাকে লিখতে হবে না। পাঠক বুঝে যাবে। ভালো কথা, বাড়িটা কার?
কার বাড়ী স্যার? নরেনের? ওটাতো ভাড়া বাড়ী।
ওটা ওর নিজের বাড়ী করে দিন। বউএর নামে লিখে দিক ওটাকে। বউ দাবী করল। সেই মুহুতেই দিয়ে দিল। সে এখন মুক্ত। নতুন জীবন আরম্ভ করতে সে প্রস্তুত।
কিন্তু স্যার, আপনিই বললেন হ্যাপি এন্ডিং করতে। আমার কিন্তু এটা পছন্দ হচ্চে না। এতদিনের বিবাহ, সম্পর্ক এক মুহূর্তে শেষ করে দিল, পাঠকের চোখে লোকটা কিন্তু ভিলেন হয়ে গেল।
দেখুন, আমার হাতে মাত্র একটা দিন। ঠিক আছে, লোকটাকে ভিলেনই বানিয়ে দিন। নায়িকা ওই হকি প্লেয়ারটাই রইল। শেষ পর্যন্ত এরকম একটা ভিলেনের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এল, এটা কম সুখের কথা?
তার মানে জবা নরেন কে ফিরিয়ে দিল? কিন্তু নরেন কে নিয়ে এতগুলো পাতা লিখলাম যে! ওর দোষই বা কি ছিল?
দেখুন, এখনো একটি পাতাও লেখেন নি। কাল প্রেসে যাবে গল্পটা, আমার আর মাথা খাবেন না। লোকটাকে ট্র্যাজিক হিরো বানিয়ে দিন। কেন জিজ্ঞাসা করবেন না। সবই ভাগ্যের হাতে। অদৃষ্টবাদ নিয়ে অনেক কিছু কাজ হচ্চে আজকাল।
কিন্তু জবার কি হবে?
জবা তার জীবনের সুন্দরতা কে আবিস্কার করেছে। এটা ছোট কথা নয়। এবার ফিরে যান সুপারমার্কেটে। জবার বস বা মালিক যেই হোক, জবাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল বেশ কদিন ধরে। মালিক শুনেছে ঐ লোকটি যখন জবাকে ‘আপনি সুন্দর’ বা হোয়াটএভার, যা যা বলেছে আর কি! মালিক লক্ষ্য করেছে জবার আত্নসন্মানবোধ। লোকটি মার খেয়েছে, সেটাও দেখেছে মালিক। অপরাধীকে শাস্তি দিতে মেয়েটার মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয় নি, সেটা কম কথা নয়। মেয়েটির চরিত্রের দৃঢ়তা মালিকের মনে ছাপ ফেলেছে। ওর বব কাট চুল দেখে এতদিন ওর মনে যে ভুল ধারনা ছিল, তা মিটে গেল। এতদিন ধরে মালিক তার সুযোগ্য পুত্রের জন্য সুপাত্রীর সন্ধানে ছিল।
স্যার, গল্প তো অন্য লাইনে যাচ্ছে। আর এতো আরো অনেক পাতার খেলা। আর তাছাড়া মালিক এসব দেখলই বা কি করে? মালিকের সামনে লোকটাই বা বলতে যাবে কেন মেয়েটিকে যে তুমি সুন্দর?
মালিক দোকানের ক্লোস সার্কিট ক্যামেরায় দেখেছে।
আর তার সুযোগ্য পুত্র মেয়েটিকে দেখে রাজী হয়ে যাবে?
ছেলেটি ছ ফুটের উপর লম্বা। ওকে রেসলার বানিয়ে দিন। মেয়েটি তো লম্বা আছেই। শুনুন, আর বেশী ক্যাচালি করবেন না তো! গুটিয়ে আনুন গল্পটাকে।
মেয়েটি রাজী হবে? কদিন আগেই তো ও নরেনের প্রেম স্বীকার করলো।
রাজী করান। শুনুন, আপনি লেখক। লাবণ্যও তো অমিত কে প্রেম করতো! ফিরিয়ে তো দিল! ওরকম একটা লাইন নিন। তুমি আমাদের লাবন্য – এরকমও একটা লাইন দিতে পারেন।
কুস্তিগির বলবে?
ওর বাপকে দিয়ে বলান। আশীর্বাদের দিন।
আর নরেনের কি হবে?
হবে আবার কি? বউ হারাল, ফ্ল্যাট হারাল। প্রেমিকা হারাল। ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই। খোঁড়া পায়ে প্রতি সন্ধায় পার্কার বেঞ্চিতে চুপচাপ বসে থাকে।
স্যার, ও আবার খোঁড়া হল কি করে?
কি মুস্কিল! আপনিই তো বললেন পাবলিকের হাতে মার খেলো। হসপিটালে রইলো এত দিন। এমনি এমনি? কাল সারে দশটার মধ্যে গল্প যেন আমার টেবিলে পাই।
রাত জেগে লিখে ফেললাম গল্পটা। ১৪ পাতা। তার মানে ২০০০ টাকা, আর পাতা প্রতি ২০০। খারাপ না।
ফেসবুকে একটা লম্বা পোস্ট করেছে কেউ – আমারই টাইম লাইনে। মানুষ মানুষীরা কি ঘোড়ার জাত যে দেহের ওজন উচ্চতা পরিমান মিলিয়ে পাত্র পাত্রীর যোটক বিচার করতে হবে? ছয় ফুটের কুস্তীগির আর প্রায় ছয় ফুটের পাত্রির যোটক নাকি এক বিশ্রী যৌন ইঙ্গিত। পাত্র পাত্রীর বংশ পরিচয়, শিক্ষা দীক্ষা, গোত্র, কত কিছুতে ওদের মেলানো যেতো। তাদের মন ভাবনা, ইচ্ছা, স্বপ্ন ছেড়ে শুধু তাদের দেহ দুটির জন্যি ওরা হয়ে উঠলো তাদের রাজ যোটক। লেখককে সেক্সিস্ট ফেসটিস ইত্যাদি বলে চেতনা বানী দিয়েছে যে অতি শীঘ্রই নাকি এই নারীবাদী সংস্থা যূথিকা প্রকাশনার অফিসে গিয়ে ধর্না দেবে। সকাল সকাল ফোন এল কার্ত্তিক বাবুর। জানতাম আসবেই কারন যূথিকা প্রকাশনাকেও ট্যাগ করেছে।
কি যে মুস্কিলে পরলাম আপনাকে লেখক বানাতে গিয়ে – ধরধর করে লিখে ফেললেন মানুষ সমাজ সরকারের কথা না ভেবে! এখন ঝামেলা আমাকেই পোহাতে হবে। কারা এরা? শুনুন, ঝটপট কিছু লিখে দিন উত্তরে। এক পাতার মত লিখবেন যাতে ওটা সামনের সংখ্যায় ছাপাতে পারি।
কিন্তু আপনিই তো রেসলারকে আনালেন!
আপনাকে কে বলেছিল ছফুটের মত লম্বা নায়িকা বানাতে? যাই হোক, গল্প আপনার, আমার কি? দরকার হলে আপনাকে ব্ল্যাকলিস্ট করে দেবো।
কার্ত্তিক বাবু, যার তার সঙ্গে যার তার জোড় বাঁধা যায় না। একজন প্রোফেসরের সঙ্গে এক হকি প্লেয়ারনি কি মানায়? তেমনি এক শিক্ষয়িত্রীর সঙ্গে এক কুস্তীগিরের? অলরাইট, আমার প্রতিবেদনে মালিকের ছেলেটিকে কোচ বানিয়ে দেবো।
গুড। আর শুনুন, ওই মালিক মালিক বলে না চেঁচিয়ে ওনার একটা নাম দেবেন। আপনাদের ঐ একটা দোষ, গয়লা, পুলিশ, বেনে, মুচি, পুরুত বলে বলে ওদের প্রত্যেককে এক একটা বর্গের প্রাণী বানিয়ে দিয়েছেন। মানুষের স্বতন্ত্রটাকে কে শেষ করে দেন আপনারা। মালিকের একটা নাম দিন। কার্ত্তিক গনেশ বা ওরকম কিছু।
ওটা কি রকম নাম হল কার্ত্তিক বাবু?
তবে কি অরবিন্দবাবু বা আশুতোষ বাবুর ছেলেকে কুস্তীগির বানাবেন? ঠিক আছে, ছোকোন বাবু টাবু ধরনের কোন নাম দিয়ে দেবেন। আর বলে দেবেন, দেহ টেহ না, রীতিমত কুষ্ঠি বিচার করে ওদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওরা বলবে, এত কারন, ব্যাখ্যা, চরিত্রদের ইতিহাস, গল্পের ফুটনোটে দেন নি কেন?
হ্যাঁ, সে তো বলতেই পারে।
ঠিক আছে স্যার, আমরা বলবো, সময় দিলেন কোথায়? গল্প কি ভাবে এগোয় সেটা তো দেখুন আগে।
এগোয় মানে, গল্পতো শেষ।
আমাদের প্রতিবেদনটা আমরা গল্পের আকারেই বার করতে পারি। মানে এটা একটা ধারাবাহিক গল্প হতে পারে।
কিছু একটা বলতে গিয়ে কার্ত্তিক বাবু থেমে গেলেন। বোধহয় কিছু একটা খারাপ ভাষা ব্যাবহার করতে চেয়েছিলেন। রেগে আছেন বুঝতে পারছি। কেই বা ফাঁদে পরা অবস্থায় নিজেকে দেখতে চায়? ওনার কিছু বলার আগেই আমি বললাম যে অলরেডি গল্পটা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে বাজারে। লোকেরা আগ্রহ করে থাকবে পরের সংখ্যায় গল্প কি ভাবে জবাব দেয়। বললাম উনাকে, চট করে যেন টুইটারে উনি লিখে দেন, ‘অত উতলা হবেন না। অপেক্ষা করুন পরের সংখ্যার নিমিত্তে। আমিষের গন্ধেই ঝাঁপিয়ে পরবেন না। দেখুন, চাখুন, তারপরে বলুন মাংস, না এঁচোড়’।
( টিফিন টাইম )
পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | গ্রাহক | পুনঃপ্রচার |