এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রাবণ

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৬৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • রাত তখন প্রায় সাড়ে বারো'টা। শহর তখন ঘুমের চাদরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আর খিদিরপুর থেকে রামনগর যাওয়ার এই রাস্তাটা সকালেই চুপচাপ থাকে। আর এখন তো একেবারে নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে দু - একটা প্রাইভেট গাড়ি যদিও ভোঁক ভোঁক করে বেড়িয়ে যাচ্ছে।

    কিছুটা দূরে একটা বাঁক নিয়ে একটা বোলেরো গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়ির ভেতর তিনটে ছেলে তখন মদ খেতে ব্যস্ত। চিপস সিগারেট আর মদের গন্ধে গাড়িটা একেবারে ভরে গেছে। গাড়ির কাঁচ তোলা, শীতকালের রাত। রাম দিয়ে নিজেদের শরীর গরম করতে করতে একজন টয়লেট করার জন্য বাইরে বেরোল।

    এই রাস্তাটা শহরের একটা বেনামী রাস্তা। খুব একটা মানুষজন ব্যবহার করেনা এটাকে। কিছুমাস আগেই একটা ধর্ষণ হয়েছিল ঠিক এখানেই। মেয়েটাকে চারজন মিলে রেপ করে যৌনাঙ্গে বিয়ারের বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে হাত পা বেঁধে ড্রেনের মধ্যে ফেলে দিয়ে গেছিল। সারারাত এখানেই পড়েছিল মেয়েটা। সকালে দুধওয়ালা দেখতে পেয়ে লোকজন জড়ো করে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ তারপর কিছুদিন মানুষ "জাস্টিস ফর রানী" বলে চেঁচিয়ে মোমবাতি মিছিল করে একমাসের মধ্যে সব ভুলে গেছে। এখন আর মেয়েটা কেমন আছে, কোথায় আছে, মরে গেছে কি বেঁচে আছে সেই খবর মিডিয়া বা মানুষ কারোর নেওয়ার দরকার বা সময় দুটোই নেই। অত সময় এখন কার আছে। নতুন নতুন সব জিনিসের একটা তাগিদ থাকে। কিছুদিন সোশ্যাল সাইট জুড়ে রানীর জাস্টিস এর জন্য ঝড় উঠেছিল। আর যারা যারা পোস্ট করেছিল সবাই কতগুলো লাইক আর কমেন্ট পড়েছে সেটা দেখতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিল। এখন সে ঝড় থেমে গেছে। এখন আবার সব শান্ত।

    ছেলেটি টয়লেট করতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে বলল " ভাই, দেখলে মাল খাড়া হ্যায়।" মাল মানে এখন মেয়েদেরই বোঝায়। সেটা ভদ্র থেকে অভদ্র সব পুরুষই একই ভাবে নেয়। বাকি দুজন একলাফে গাড়ি থেকে নেমে দেখল। অন্ধকারে বটগাছটার নীচে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। তার মুখটা ভালোভাবে না দেখা গেলেও গঠনটা ভালোভাবে বোঝাই যাচ্ছে। যদিও মুখে‌ আর কি এসে‌ যায়। ফিগার কতটা আকর্ষণীয় সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

    মেয়েটির কাঁধে একটা ব্যাগ। পরনে টপ আর জিন্স। একটি ছেলে বলল "ক্যায়া মাল হ্যায় ভাই। আজতো আপনা মুড বন জায়েগা।"

    মেয়েটা হয়ত কথাটা শুনতে পেল। তাই সে সরে আর একটু এগিয়ে সামনের দিকে চলে গেল। সামনে দিয়ে ভোঁক করে একটা গাড়ি বেড়িয়ে গেল। মেয়েটা একবার হাত দেখাল কিন্ত গাড়িটা থামল না।

    ছেলেগুলো আরও কাছে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে। আরও কাছে আরও একটু, মেয়েটার একেবারে কাছে চলে গেল ছেলেগুলো। মেয়েটা আর সরে যাওয়ার চেষ্টাও করল না। দাঁড়িয়ে রইল একই ভাবে। একটা ছেলে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল " যায়েগা? গাড়ি হ্যায়।" মেয়েটা কিছু না বলে নিজে থেকেই গাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল। ছেলেগুলোর আনন্দ তখন দেখে কে। মনে হল তারা সব জয় করে ফেলেছে।

    মেয়েটা নিজে থেকেই গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল। একে একে ছেলে তিনটেও গাড়িতে উঠল। ওদের মধ্যে একটা ছেলে বলল "এয়সে মান জায়োগী তো রেপ নেহি করনা পড়েগা।" মেয়েটা মুখটা তুলে তাকাল।

    রাত আরও বাড়ল। সাথে বাড়ল শহরের নিস্তব্ধতা। নিস্তব্ধ জনমানবহীন রাস্তা,গাড়ির কাঁচ তোলা, ভেতরে মদের গন্ধ, সিগারেটের ধোঁয়াগুলো বন্ধ গাড়ির মধ্যে আটকে এদিক ওদিক গোল গোল ঘুরে বেড় হওয়ার চেষ্টা করছে। আর তিনটে ছেলের রক্তে ভেজা গলার নলি কাটা শরীর গুলো গাড়ির মধ্যে বসে আনন্দ করছে। ফিনকি দিয়ে বেড়োনো রক্তগুলো জমাট বাঁধতে শুরু করেছে গাড়ির এখানে ওখানে৷ কাঁচেও ছিটকে গেছে অনেকটাই। শহরটা তখনও ঘুমাচ্ছে।
    ________________________

    একসাথে তিন জনের লাস উদ্ধার ঘিরে শহরে বেশ একটা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কাল খুন হওয়া ওই ছেলে তিনটের দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার আগে থানার বড়বাবু মিঃ চক্রবর্তী একবার তাদের এক এক করে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখল। প্রতিটা ছেলেকে ঠিক একই ভাবে খুন করা হয়েছে। একদম ঠান্ডা মাথায় গলার নলিগুলো ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে। তবে শরীরের আর কোথাও কোন কাঁটা ছেঁড়ার দাগ নেই।

    চক্রবর্তী নতুন জয়েন করা অনিরুদ্ধকে ডেকে বলল "কাজ শুরু করো তাহলে এবার। এই কেসটা দিয়েই হাতে খড়ি হোক। কিছু জানা গেছে কোথায় থাকে বা কি নাম এসব?"
    অনিরুদ্ধ বলল "হ্যাঁ স্যার। তিনজনই ওই খিদিরপুরের বস্তিতে থাকত। গাড়িটা এদের মধ্যেই একজনের মালিকের। বাকিটা তো পোস্টমর্টেম এর পর জানা যাবে।"
    চক্রবর্তী মাথাটা নেড়ে বলল "তবে আমার মনে হচ্ছে। খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে খুনটা করা বুঝলে। ওদের কোথাও কোন কাঁটাছেঁড়ার চিহ্ন নেই বা গাড়িতেও কোন কিছু অস্বাভাবিক দেখতে পেলাম না।"
    অনিরুদ্ধ একটু ভেবে বলল "ঠিকই বলেছেন স্যার।"

    দেহগুলোকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হল। মিডিয়া ছড়াল শহরে সিরিয়াল কিলারের জন্ম হয়েছে। কিছুদিন কয়েকটা রাস্তায় পথ অবরোধ হল। বিরোধী দলের সদস্যরা মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলল, ইত্যাদি, ইত্যাদি শহরের নতুন ট্রাডিশান হয়ে গেল কিছু দিনের জন্য।

    চক্রবর্তী আর অনিরুদ্ধ প্রানপনে লেগে রইল খুনিকে ধরার জন্য। শহরে আবার রটে গেল ওখানে যে মেয়েটার ধর্ষন হয়েছিল সে হয়ত মারা গিয়ে ভূত হয়ে বদলা নিতে ফিরে এসেছে। আর বাঙালি চিরকাল হুজুগে। ওই রাস্তায় চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। একটা দুটো বাস ওই রুট দিয়ে আসা যাওয়া করত। কিন্তু এই গত এক মাসে পেসেঞ্জার না পেয়ে তারাও তাদের পথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হল।
    ________________________

    সিসিটিভি ক্যামেরাতে ধরা পড়ল একটা মেয়ে ছেলেগুলোর সাথে গাড়িতে ঢুকেছিল। মেয়েটা রামনগরের দিক থেকে এসেছিল বারোটা নাগাদ। আর গাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল আড়াইটে নাগাদ৷ তখন আবার ওই আগত অভিমুখেই ফিরে গেছিল।

    ওই এলাকার ফাইল খুলে জানা গেল বেশ কয়েকমাস আগে ওখানে একটা রেপ হয়েছিল। আর তাতে নাম জড়িয়ে আছে এলাকার নেতার ছেলে বিবেকের তবে তার পর থেকেই সে আর তার বন্ধুরা পলাতক।

    মেয়েটা শেষ পর্যন্ত মারা গেছিল। হাসপাতালের তরফ থেকে অন্তত তাই জানানো হয়েছিল। তারপর সময়ের ঘেরাটোপে কেসটা চাপা পড়ে যায় আর রিওপেন হয়নি।

    পুরোটা দেখে শুনে অনিরুদ্ধ চক্রবর্তীকে বলল "স্যার এই কেসের সাথে ওটার কি কোন যোগ পাচ্ছেন?"
    চক্রবর্তী সিগারেটটায় একটা সুখটান দিয়ে ধোঁয়াটা ছেড়ে বলল "হুম অনিরুদ্ধ, মনে হচ্ছে একবার বস্তিতে যেতে হবে।"
    অনিরুদ্ধ বলল " তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? চলুন ঘুরে একবার ঢুঁ মেরে আসি। যদি কেউ কিছু বলতে পারে।"
    বেড়িয়ে পড়ল দুজনে গাড়িটা নিয়ে।

    গাড়িটা এসে বস্তিতে থামতেই লোকজনের একপ্রকার ভিড় জমে গেল গাড়িটা ঘিরে। অনিরুদ্ধ একজনকে জিজ্ঞেস করল "আচ্ছা, এখানে কিছুদিন আগে একটা মেয়ের রেপ হয়েছিল। ওর বাড়িটা কোনদিকে? "
    লোকটি বেশ রাগের সাথেই বলল "কেন? এবার কি ওর বাড়িটাকেও খাবেন আপনারা? ভগবান এর বিচার করবেন বাবু। মেয়েটার আর বিচার হলনা। আমাদের রানীটা মারাই গেল। আর রাবণটাও কোথায় যে গেল তারপর আর তাকে কোনদিন এ পাড়ায় দেখা যায়নি। ক্ষমা করবে না বাবু, কাউকে ছাড়বে না রানী। তাইতো আবার ফিরে এসে নিজের মৃত্যুর বদলা নিচ্ছে।"

    তারপর অনিরুদ্ধ আর চক্রবর্তী গেছিল রাবনের বাড়ি কিন্তু সেখানে কিছু পাওয়া গেলনা। তারা আবার ফিরে এল।

    সময়ের চাপে অথবা শহরের বাড়তে থাকা অপরাধের চাপে এই কেসের ফাইলটাও ফাইলের নিচে চাপা পড়ল।
    _______________________

    মাস দুয়েক পরে,

    শহরের সেই নিস্তব্ধ রাস্তা। ঘড়িতে রাত প্রায় একটা হবে। একটা গাড়ি বটগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে। বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি। আর গাড়ির ভেতরে মদের ফোয়ারা উড়ছে। মদ আর সিগারেটের গন্ধ মোটা কাচ ভেদ করে বাইরে পর্যন্ত আসছে। গাড়ির ভেতরের চারজন তখন বেশ ব্যাস্ত ফোনে নীল ছবি দেখতে। আর বাইরে নজর রাখতে যদি কোন শিকার পাওয়া যায়।

    এ শহরের বৃষ্টি মাঝেমধ্যেই মারাত্মক হয়ে ওঠে। আর বৃষ্টি হলে লোডশেডিং এই শহরের জন্মগত অধিকার। আজকের বৃষ্টিও সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে আর বেশি দেরি নেই। আর লোডশেডিং তো অলরেডি হয়েই গেছে।

    হঠাৎ গাড়ির কাঁচে দুপদুপ করে আওয়াজে চমকে উঠলো চারজন। বাইরে একটা মেয়ে গাড়ির কাঁচে জোড়ে জোড়ে মারছে। অন্ধকারে মেয়েটার মুখটা ঠিকভাবে দেখতে পেলনা তারা। কিন্তু মনে মনে খুব খুশি হল মেয়েটাকে দেখে।

    গাড়ির দরজা খুলতে মেয়েটা গাড়িতে ঢুকে গেল। তাদের হাতে যেন স্বর্গ চলে এল। মদের একটা করে পেগ বানিয়ে সবার হাতে ধরাতে গিয়ে মেয়েটা খোনা গলায় বলল "খাও ভালোবেসে দিচ্ছি। সায়দ ফির ইস জনম মে মুলাকাত হো না হো।"
    এক ঢোকে চারজনে চারটে গ্লাস শেষ করল। একজন বলল "এবার তো বের কর।" মেয়েটা ব্যাগ থেকে সেলুনের দাঁড়ি কাটার একটা ছুড়ি বের করে মুখটা তুলল। আঁতকে উঠল চারজনে।

    রাত আরও বাড়ল। বৃষ্টিতে শহরের এই রাস্তায় প্রায় গোড়ালির উপর জল জমে গেছে। গাড়িটা একা রাস্তার ধারে পড়ে আছে। ভিতরে চারটে গলার নলিকাটা দেহ। আর তাদের জমাট বাঁধা রক্ত ততক্ষনে লাল থেকে কালো হতে শুরু করেছে।

    সকালে বিবেক ও তার চার বন্ধুর দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল এলাকায়। বস্তির লোকেরা আনন্দে ঢাকঢোল বাজিয়ে রানীর ছবি নিয়ে রাস্তায় নাচতে শুরু করল। পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সেদিন ঝড় উঠল রানী তার বদলা নিতে ফিরে এসেছিল। লাইক কমেন্ট শেয়ারে সবার প্রোফাইল রিচ বেড়ে একেবারে আকাশ ছোঁয়া।

    পেপারের হেডলাইনে এল "পুলিশের কাজ এখন নিজেকেই করতে হচ্ছে। রানী বদলা নিয়েছে, পুলিশ বেকার।" ইত্যাদি ইত্যাদি।
    ______________________

    ছোট একটা সংসার রমেশ আর তার বোনের। বাপ মা মরা মেয়েটাকে নিজের হাতে একটু একটু করে বড় করে তুলছিল রমেশ।

    একটা সামান্য সেলুন দোকান চালিয়ে বোনটাকে শিক্ষিতা করতে চেয়েছিল। রানীরও দাদা অন্ত প্রান। পুরো শহরটাতে তারা দুজনে দুজনার মধ্যে নিজেদের সব আপন আত্মীয় খুঁজে নিত। শহরের মেটিয়াব্রুজের একটা বস্তির একটা ছোট্ট ঘরে দুই ভাই বোনের সুন্দর একটা সংসার পুরো তাদের পৃথিবী ছিল। বস্তির সব লোকেদের খুব প্রিয় ছিল দুজনে।

    রমেশের রানীর প্রতি ভালোবাসাটা ছিল ঠিক রাবনের মত। রানীর উপর কোন অন্যায় দেখলে তাকে ছেড়ে কথা বলত না রমেশ। ঠিক যেভাবে বোনের অপমানের বদলা নিতে পিছপা হয়নি রাবণ।এই নিয়ে দুবার জেলেও যেতে হয়েছিল তাকে। তাই পাড়ার সবাই তাকে "রাবণ" নাম দিয়েছিল। পুরো পাড়াতেই সে রাবন নামেই পরিচিত ছিল। আর শুধু রানী কেন সেই বস্তির কোন মেয়ের উপর কোন অত্যাচার দেখতে পারত না সে।

    রাবণ নাম নিয়েও তার কোন সমস্যা ছিলনা। সে বলত “আরে রাবণ যেটা করেছে নিজের বোনের জন্য করেছে আমি আমার বোনের জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি খলনায়কের নামও পাই আমার কিছু এসে যায়না।"

    যেহেতু সে ওই পাড়ায় একটা জায়গা করে নিয়েছিল তাই তার শত্রু সংখ্যাও কম ছিল না। একটা সেলুন দোকান দারের এত রমরমা পাড়ার কয়েকজন পছন্দ করত না। বিশেষ করে সেখানকার এক লোকাল দলের নেতার ছেলে “বিবেক”। মাঝে মাঝেই বচসায় জড়াত তারা। তবে রমেশ আগাগোড়াই শান্ত স্বভাবের ছেলে অনেক কথার উত্তরও দিত না সে।

    বারো বছরের রানি সেই রাতে দাদার জন্য গিফট কিনতে বেড়িয়েছিল। কাল তার একমাত্র দাদার জন্মদিন। নিজের হাতে কাল দাদাকে পায়েস রেঁধে খাওয়াবে বলে হীরা কাকার দোকান থেকে গোবিন্দ ভোগ চাল কাজু কিসমিস চিনি দুধ সব নিয়েছিল। তারপর দাদার জন্য একটা হাতঘড়িও নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ঠিক সেই সময় তাকে তুলে নিয়ে যায় বিবেকরা। বিবেক আর তার আরও তিনটে বন্ধু।

    রানী ছটফট করতে থাকে গাড়ির ভিতর। আর গাড়িটা শহরের ভেতর দিয়ে আপন বেগে চলতে থাকে। বিবেক একটা রুমালে অজ্ঞান হওয়ার ওষুধ মিশিয়ে রানীর মুখে চেপে ধরতে নিস্তেজ হয়ে পরে সে। আর তার সাথে নিস্তেজ হয় তার দাদার সমস্ত স্বপ্ন।বারো বছরের অজ্ঞান মেয়েটাকে এক এক করে ধর্ষণ করে চারজনে। তারপর যেটা হয়েছিল সেটাতো সবাই জানে। বিয়ারের বোতল যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে মুখে ফেট্টি বেঁধে হাত পা বেঁধে ড্রেনে ফেলে রেখে গেছিল তারা।

    রমেশ যখন খবর পেয়েছিল তার পৃথিবীটা থমকে গেছিল। নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে গেছিল বোনকে কাঁটাছেড়া অবস্থায় দেখে। তার মিথ্যে নামের রাবণটা সেই দিনই জেগে গেছিল। সেই জন্মদিনে তার নতুন জন্ম হয়েছিল রাবণ রুপে।
    ____________________

    চারিদিকে অন্ধকার, বাইরে বিশাল বৃষ্টি। বস্তির একচালা ঘর। ঘড়ির কাঁটা রাত একটার আশেপাশে।

    "কাজ শেষ, এবার তাহলে সারেন্ডার করে দে।" অনিরুদ্ধ বলল।

    "কাজ শেষ কোথায়? এইতো সবে শুরু স্যার। "
    রাবণ মুখটা তুলে মুচকি হেসে বলল।

    "কিন্তু সবাই যদি তোর মত হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। তাহলে আইন ব্যাবস্থা কোন অস্তিত্ব থাকবে না ভাই।"

    "যখন পাপ বেড়ে যায়। নাগালটা নিজের হাতে ধরতে হয়। কখনো রাম হয়ে অথবা কখোনো রাবণ হয়ে। তবে তুই না থাকলে আমি এসব করতে পারতাম না হয়ত৷ আজ আমার বোনটা শান্তি পেল অনি।"

    "আমি যা করেছি আমার বোনের জন্য করেছি। তবে এবার তোকে রিকোয়েস্ট করব সারেণ্ডার করে দে ভাই। তোর বন্ধু হয়ে আমি একটা বোনকে পেয়েছিলাম। আমি একসাথে দুজনকে হারাতে পারব না। "

    "কি দোষ ছিল আমার বোনটার। খারাপ জামাকাপড়, খারাপ মানসিকতা না খারাপ চরিত্র? বল, কোনটা ছিল ওর মধ্যে যে ওকে এভাবে ছিঁড়ে খেল ওরা।"

    অনিরুদ্ধ আর কোন কথা বলতে পারল না। রাবণ হেসে বলল "উত্তর নেই ভাই? এরা এদের পুরুষত্ব দেখাতে গিয়ে একটা মেয়ের জীবন নিয়ে নেয়। বোঝেনা সেই মেয়েটার সাথে তার পরিবার তার আপনজনও এই ঘটনার পর ভিতরে ভিতরে মারা যায়।"

    ঘরটাতে একটা চাপা নিঃস্তব্ধতা আর শহর তখন ভিজছে মনের সুখে।
    ______________

    রাবণের সাজা ঘোষণার দিন আদালত এখনও জানায় নি। সে নিজেকে সারেন্ডার করে দিয়েছে। সারাদেশ সাধুবাদ জানিয়েছে তার এই কাজে আবার কিছু ব্যতিক্রম লোকজন ভুল ত্রুটি খুঁজে সমালোচনাও করেছে। শহর ধীরে ধীরে আপন ছন্দে ফিরছে। অনিরুদ্ধর পোস্ট বেড়ে গেছে। কেসের ফাইল প্রায় বন্ধ।

    বেশ কিছুদিন আর শহরে নতুন করে কোন ধর্ষণের কেস দেখা গেল না। শুধু শহরে কেন, পুরো দেশের ধর্ষক জাতির লোকেরা যে ভয় পেয়েছে সেটা বোঝা গেল। মহিলার বেশে পুরুষ রাবণ তখন‌ যদিও জেলে।
    _______________

    গভীর রাত। ওই একটা দেড়টা হবে। সল্টলেকের একটা শুমশান গলিতে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। মদের আসর বসেছে গাড়ির ভেতরে। চার পাঁচ জন বন্ধু মিলে বেশ সাচ্ছন্দ্য সহকারে মদ্যপানে ব্যাস্ত।

    একটা বড় গাছের নীচে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে। মুখটা ঠিকভাবে বোঝা না গেলেও ফিগারগা বেশ সুন্দর। মুখের বেশিরভাগটাই ওড়না দিয়ে ঢাকা। গাড়িটার দিকেই তাকিয়ে আছে মেয়েটা। তারপর ধীরে ধীরে গাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল।

    রাত বাড়ল। গাড়িটে পাঁচটা গলার নলিকাটা দেহ পড়ে রয়েছে। পাশের সিট থেকে মদের বোতল থেকে মদের সাথে টুপ টুপ করে পাল্লা দিচ্ছে রক্তের ফোঁটাগুলো।

    বাড়ি এসে মহিলার পোশাকটা খুলে বিছানায় শুয়ে থাকা রানীকে অনিরুদ্ধ বলল " চিন্তা করিসনা বোন। তোর মত অবস্থা আর কারোর হতে দেব না। একটা রাবণ জেলেতো কি হয়েছে, হাজারটা রাবণ এ দেশের কোনায় কোনায় মাথা তুলে দাঁড়াবে তাদের বোনের সম্মান রক্ষার জন্য।"

    কোমায় থাকা রানীর চোখ থেকে জলের ফোঁটা তখন তার গাল বেয়ে বালিশের সাথে মিশে যাচ্ছে।

    শহরের ধর্ষণ কাণ্ডে জড়িত অথচ জামিনে মুক্ত পিশাচদের একটা লিস্ট বানিয়েছিল অনিরুদ্ধ। আর তার কাজ আজ থেকে শুরু করল সে।

    সাবধান
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন