এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • প্রাণ বাঁচিয়েই মুনাফা !

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৭৩৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • সারা পৃথিবী জুড়েই চলছে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসার রমরমা। অবাক হচ্ছেন ? অবাক হবার কিছু নেই। একেবারে ঠিকই বলছি। মানুষের জীবন বাঁচায় যে ওষুধ সামগ্রী, তার ব্যবসাতেই সবচেয়ে বেশি মুনাফা। তাই পৃথিবীর তাবড় মুনাফাখোরদের ওষুধ ব্যবসার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বুঝতে পারবেন। একটু পিছিয়ে কয়েক বছর আগেই পাড়ার দোকানগুলো ওষুধের এমআরপিতে দাম নিত। ওষুধের দামের সঙ্গে লেখা থাকত এল.টি. অর্থাৎ লোকাল ট্যাক্স এক্সট্রা। মানে একটি ওষুধের এমআরপি দাম যদি একশো টাকা হয়, খুচরো বিক্রেতা আরো আট দশটাকা বেশি অনায়াসে নিতে পারত। এই অরাজক ব্যবস্থা যদিও কালক্রমে উঠে গেছে। এখন এমআরপিই যথেষ্ট। এবার এই এমআরপি দাম দিয়েই আমরা ওষুধ কিনতে বাধ্য হতাম, এই সেদিন পর্য্যন্ত। পাড়ার দোকানগুলো হঠাৎ করেই দশ থেকে বিশ শতাংশ ছাড় দেওয়া শুরু করে দিল। সঙ্গে এলো অনলাইন এ্যাপ। তারাও একই হারে ছাড় দিয়ে বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেয়। দশ বিশ এমনকি কেউ কেউ পঁচিশ ত্রিশ শতাংশ পর্য্যন্ত ছাড় দিয়েও ওষুধ বেচছে। এবার প্রশ্ন হল, তাহলে ওষুধের ব্যবসায় কত লাভ? এত শতাংশ ছাড় দিয়েও কোনো খুচরো ব্যবসায় টিকে থাকা যায়। আর কোনো ব্যবসায় যাওয়া যায় কিনা জানিনা, ওষুধের ব্যবসায় বিলক্ষণ যায়। সেটা তো আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি। এর মধ্যেই প্রচারমাধ্যমের দৌলতে আমরা জেনে গেছি জেনেরিক ওষুধ কাকে বলে বা তা কি দামে বিক্রি হয় ! ব্রান্ডেড ওষুধ কোম্পানির যেকোনও ওষুধের চেয়ে নব্বই শতাংশ পর্য্যন্ত কম দামে জেনেরিক ওষুধ মেলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্যঃ জেনেরিক ওষুধ সম্পর্কে যাঁরা এখনও জানেন না, তাঁদের জন্য ছোট্ট একটি উদাহরণ রইল... ধরুন আপনার জ্বর হয়েছে। তাহলে আপনাকে জ্বর কমানোর জন্য প্রেসক্রাইব করা হবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ। প্যরাসিটামল ওষুধ নামীদামী কোম্পানিগুলো হরেক নামে বাজারে ছেড়ে রেখেছে। যেই আপনি নামী কোম্পানি নির্মিত সেই ওষুধ নেবেন তার দাম যদি দশটাকা হয়। তাহলে জেনেরিক অর্থাৎ কোনো নামী কোম্পানি নির্মিত নয় মূল কম্পোজিশনের এমন ওষুধটির দাম হবে পঞ্চাশ পয়সা কিংবা একটাকা। পরীক্ষা করে দেখে নেবেন। এবার আবারও লাভের কথায় আসি। বড় কোম্পানিগুলোরও যেকোনও ওষুধ নির্মাণ করতে জেনেরিক ওষুধের সমানই খরচ পড়ে। কিন্তু তাদের সংস্থা পরিচালনার খরচ বাবদ লাভের পরিমাণ বেশি রাখতে হয়। তার ওপর রয়েছে বড় কোম্পানির রিসার্চ সংক্রান্ত খরচ। এগুলো সবই সঙ্গত। কিন্তু এরপরেও ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থা থেকে খুচরো ব্যবসা পর্য্যন্ত বহুগুণ মুনাফা জেনারেট হয়ে থাকে। ওষুধ কোম্পানিগুলি প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য সেই মুনাফা থেকেই ডাক্তারদের বিভিন্নরকম উপঢৌকন প্রদান করে থাকে। দামী গাড়ি, বিদেশে ট্যুর থেকে ফ্ল্যাট পর্য্যন্ত। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর যে চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেটিকেই কেন্দ্র করে চলে মানুষকে লুটে নেওয়ার খেলা।

    কার্যসূত্রে এক সহকর্মীর বেশ কিছু ওষুধের খুচরো ব্যবসায়ী এবং ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থার কর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর মাধ্যমেই সৌভাগ্যক্রমে উক্ত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এই বিষয়ে বিশদে নানান আলোচনা করেছি। একজন নয় বেশ কয়েকজন খুচরো ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনায় জানতে পেরেছি, জীবনদায়ী অনেক ওষুধই খুচরো ব্যবসায় কমপক্ষে একশো শতাংশ মুনাফা অর্জন করা যায়। কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমের মারফত সামনে এসেছিল, হার্ট ব্লকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ইকুইপমেন্ট কেনা পড়ে ছয় হাজার টাকার আশপাশে, যার বিক্রি হয় কমবেশি লক্ষ টাকায়। এই করোনা কালে ফুসফুস আক্রান্তের সমস্যায় একটি ইনজেকশন বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ব্যবহার হচ্ছিল। যেটি নাকি এগারো হাজার টাকায় একটা কিনলে একটা ফ্রীতে মিলছিল। তার মানে একটির ক্রয়মূল্য দাঁড়াল সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। সেই ইনজেকশনটির প্রতিটি, ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালগুলির বদান্যতায় রোগীর পরিবারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অবধি মূল্যে কিনতে হয়েছে। 

    প্রতিটি ব্যবসারই মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। জনসেবা করার জন্য কেউ ব্যবসা করে না। এ কথাটি যেমন সঠিক। তেমনিই সব ব্যবসাতেই আকাশছোঁয়া মুনাফা অর্জন করাও উচিত কাজ নয়। প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্রের ব্যবসায় খুব কম লাভ করা যায়। জানলে অবাক হবেন, বিদেশী কোম্পানির ঠান্ডা পানীয় অর্থাৎ কোল্ড ড্রিংকসের একটি বোতল বিক্রি করে একজন খুচরো বিক্রেতা মাত্র এক থেকে দেড় টাকা লাভ করতে পারেন। তার মধ্যেই ফ্রিজের খরচ রয়েছে। বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি করেও তথৈবচ। নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ দ্রব্যেই এমনই লাভ পান বিক্রেতারা। তাহলে ওষুধের ব্যবসায় এরকম ডাকাতিয় নীতি কেন ? ওষুধ মানে তো মানুষের জীবন রক্ষার উপকরণ। তাহলে তার ব্যবসায় মানুষকে এইভাবে নিঙ্গড়ে নেওয়ার প্রবণতা কেন ? অনেকদিন আগে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম, ক্যান্সার সেরে যাওয়া এবং তা ঠেকানোর উপায় নিয়ে বিদেশের জনৈক বৈজ্ঞনিক একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইটি নাকি ওষুধ মাফিয়াদের একাংশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গুলি হেলনে বাজারেই আসতে পারেনি (সত্যতা জানা নেই)। এমন নানান তথ্য কানে এসেছে। কখনও কোথাও পড়ে জেনেছি। অথবা কোনোটি শুনেছি প্রসঙ্গক্রমে, অবশ্যই প্রাসঙ্গিক কারোর কাছে। 

    প্রশ্ন এখানেই বিশ্বের তামাম দেশে ওষুধ মাফিয়াদের কেন এত রমরমা ? কোটি কোটি গরীব মানুষ যেখানে টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসার নাগালটুকুই পায় না। সেই পরিস্থিতিতে ওষুধের মত পণ্যের ব্যবসায় এরকম মাফিয়ারাজ কেন চলবে ? মুনাফা করার তো অনেক পণ্য রয়েছে। যাবতীয় নেশার বস্তু, সৌখিন দ্রব্যাদি কিংবা মহিলা বা পুরুষদের প্রসাধনী সামগ্রীতে হাজার হাজার গুণ মুনাফা অর্জন করা যেতেই পারে। 

    কিন্তু ওষুধে কেন ? প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছেই...!

    (এখানে শুধুমাত্র ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংক্রান্ত ব্যবসার আলোচনা করা হল। বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের বিপুল বিলের খরচ আর একদিন হবে।)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন