পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
এক প্রখ্যাত সমাজবাদী রাজনীতিকের মন্তব্য আমরা প্রায়ই কোট করে থাকি- সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। কিন্তু, সরকার যদি দাঙ্গা চায়? তখন কি দাঙ্গা হতে বাধ্য? সরকার নির্বাচিত হয় এক বিশাল ভূখণ্ডের মানুষের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালিয়ে। আমরা সবসময়েই দেখেছি,৫০% বা তার বেশি মানুষের সমর্থন সরকারের কাছে থাকে না। সুতরাং একটা ছোট অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষ বেছেই নেন নি, এরকম সরকারের আওতায় থাকেন। তারপর, আপনি পাড়ার রাস্তা সারাই করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া একজনকে ভোট দিচ্ছেন, তিনি জিতে গিয়ে পেনশন উঠিয়ে দেওয়ার বিলকে সমর্থন করে এলেন, এরকম তো হামেশাই হয়। তাই,এই সরকার বা সরকারে আসীন দলটি যদি কোনও পদক্ষেপ নিতে চায়, যেমন দাঙ্গা, তাহলে একটা ছোট এলাকার দাঙ্গা না চাওয়া জনগোষ্ঠী কী করবে? ১৯৪৬-৪৭-এ নোয়াখালির গ্রামে ঘুরে ঘুরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেখি গান্ধিজিকে। সরকারকে বাদ দিয়ে সমাজের নিজস্ব সংগঠন কি সমাজের নিজের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের সবচেয়ে নৃশংসরূপটার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে? এর উত্তর খুঁজতে তিনি অহিংসার তত্ত্বে সবচেয়ে কঠিন এক্সপেরিমেন্টটার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এর আগে গান্ধিজি যত পদযাত্রা, আন্দোলন করেছেন, সবই সরাসরি শাসকের বিরুদ্ধে। এবং সব আন্দোলনই সাধারণ লোক নিজেদের দাবিতে শুরু করেছিল। এখানে লড়াইটা সমাজের একদম ভেতরকার ইস্যুতে, যেখানে সরাসরি শাসককে কিছু ছাড় দিতে বলা হচ্ছে না, এবং আন্দোলনটা সেখানে আগে থেকে ছিল না, বরং হিংসা অবিশ্বাস একতরফা আক্রমণে আক্রান্ত মানুষের আত্মবিশ্বাসই তলানিতে ঠেকেছিল। তাঁদেরকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর পাশাপাশিই দরকার ছিল আক্রমণকারী অংশের মধ্যে অনুতাপবোধ ফিরিয়ে আনা। এবং এর থেকে কিছু কম দরকারি ছিল না, আক্রান্ত-আক্রমণকারীর বাইরে, সমাজের যে বিশাল অংশের দর্শক মানুষ আছেন, তাঁদেরকে বিবেকোচিত ভূমিকা নিতে প্রাণিত করা। খেয়াল করার যে কংগ্রেসের মূল সংগঠন এমন কি বাংলার রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই তাঁর সঙ্গে এই লড়াইয়ে যায় নি। গান্ধিজি নিজে নোয়াখালিতে খুব ওয়েলকামড হন নি। বিশেষতঃ মুসলিম লিগ এবং সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে এক বিরাট অংশ সক্রিয় ভাবে তাঁর বিরোধিতা করেছিল। রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা বিষ্ঠা জঞ্জাল সরিয়ে আক্ষরিক অর্থে তাঁকে এগোতে হয়েছিল।
গান্ধিজি ভারতের রাজনীতির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে খুব সহজে কলকে পান নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সত্যাগ্রহের ফলে তিনি ভারতের নেতাচক্রে বহুল আলোচিত, কিন্তু গোখলে থেকে বেসান্ত যাঁর সঙ্গে তিনি কথা বলতে গেছেন, সকলেই তাঁর ধ্যান ধারণাকে এককথায় বাতিল করে দিয়েছে। যেমন, স্বাধীন ভারতের বিকাশ নিয়ে গান্ধিজির চিন্তাভাবনাকে নেহরুও আমল দেন না বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন। আমরা জানতে পারি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান্ধিজিকে বক্তব্য শেষই করতে দেন নি অ্যানি বেসান্ত প্রমুখ। তা স্বত্তেও তিনি দেশের অবিসংবাদী নেতা হয়ে উঠেছিলেন, কারণ সাধারণ লোক তাঁকে সেই জায়গা দিয়েছিল। তিনি যে কথাগুলো বলতেন, গ্রামভারতের লোক তা হৃদয় দিয়ে বুঝত বলেই তিনি গানহিবাবার আসন পেয়েছিলেন। কিন্তু, এখানে সেই সাধারণ লোকই তাঁর কথা শুনতে রাজি ছিল না। মাটি কামড়ে থাকা লড়াইয়ের সেই দিনলিপি নির্মল বসুর মাই ডেজ উইথ গান্ধিতে বিশদে পাওয়া যায়। আমরা দেখি নিষ্প্রাণ হিন্দুবাড়ির মন্দিরে দেবতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছেন তিনি, ক্রমে মানুষ সাহস পাচ্ছে পুজো শুরু করার। আবার দেখি বিবদমান মারমুখী মুসলিম জনতার মধ্যে আলোচনা করছেন তিনি, টানটান নাটকের মতন ঘটনাপ্রবাহে তাঁরা মেনে নিচ্ছেন প্রতিবেশীর ভালো থাকা তাঁদের ভালো থাকার থেকে পৃথক হতে পারে না। বড় ব্যাপার, শুধু গান্ধিজি নন, তাঁর টিমের বাকিরা যাঁরা অন্যান্য গ্রামে ছিলেন, তাঁরাও এই কাজটা করে উঠতে পারছিলেন, প্যারেলালের ডায়েরিতেও অনুরূপ ঘটনা পাই। গান্ধিজির সঙ্গে নোয়াখালিতে গিয়েছিলেন বিবি আমিতুস সালাম, হিন্দু মন্দির থেকে লুঠ হওয়া তরবারি ফেরৎ পাওয়ার জন্য তিনি ২১ দিন অনশন করেন এবং তাতে কাজ হয়। দাঙ্গাপীড়িত নোয়াখালিতে মহিলাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। গান্ধিজি ১৯৪৬-এর শেষভাগ থেকে ১৯৪৭-এর জানুয়ারি অবধি নোয়াখালিতে ছিলেন। সম্প্রীতি রক্ষার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন প্রতি গ্রাম থেকে দুজন অছি খুঁজে পেতে যাঁরা যথাক্রমে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের রক্ষার জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। তাঁর কাজ শেষ হয় নি। বিহারের দাঙ্গা নোয়াখালির শান্তি উদ্যোগে প্রভাব ফেলছিল। তিনি বারম্বার কংগ্রেস নেতাদের চিঠি লিখে বলেন বিহার শান্ত করতে, কারণ নোয়াখালির রাজনৈতিক ক্ষমতা যেমন মুসলিম লিগের হাতে ছিল, বিহারে মূল শক্তি ছিল কংগ্রেসের, আর শাসক না চাইলে দাঙ্গা হয় না। তেমনিই, গান্ধিজির দলের অখ্যাত কর্মীরা যেভাবে নোয়াখালিতে শান্তি ফেরাচ্ছিলেন, সেই উদ্যোগও কংগ্রেসের ছোট বড়ো কোনও নেতাকে বিহারে নিতে দেখি না। অনিচ্ছাস্বত্তেও বিহারের দাঙ্গা থামাতে তিনি নোয়াখালি ছেড়ে যান। প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান বছর ঘোরার মধ্যে নোয়াখালি আসার। কিন্তু সেই বছর স্বাধীনতার বছর, দেশভাগ দাঙ্গারও। ফলে বিহার-দিল্লি-কাশ্মীর-কলকাতায় ঐ দাঙ্গা থামানোর কাজের তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয় নি। পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানর সুযোগ হিন্দুত্ববাদীরা আর তাঁকে দেয় নি।
এখানে একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতন, গান্ধিজি ১৯৪৭-এর জানুয়ারিতে নোয়াখালিতে, অদূর ভবিষ্যতে ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই তখনও, তখন কিন্তু পাকিস্তান উদ্যোগ প্রায় বাস্তবায়নের দিকে, নোয়াখালি পাকিস্তানে পড়ার কথা। কংগ্রেসের উচ্চতম নেতৃত্ব প্রস্তাব একভাবে মেনেই নিয়েছেন (রাম মনোহর লোহিয়ার ভারতে সমাজবাদ বইয়ে আছে, নেহরু গান্ধিজিকে বলেছিলেন, তিনি নোয়াখালিতে থাকায় তাঁকে এই আলোচনার অংশ করা যায় নি)। যদি বিহারে দাঙ্গা পরিস্থিতি গুরুতর না হত, গান্ধিজি নোয়াখালিতে আরও দুতিন মাস থেকে যেতেন, তাহলে দেশভাগের হিস্যা কীরকম হত ভাবার অবকাশ থাকে। নোয়াখালিতে থাকবার সময় শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে বিভাজন নিয়ে আলোচনা হয়, তিনি তখনও দেশভাগ হবে মানতেন না। পরে সেই পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসায় শরৎচন্দ্র বসু স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার প্রস্তাব দেন, যা গান্ধিজি সমর্থন করেন। সেই চিঠি শরৎচন্দ্র তাঁর ‘আই ওয়ার্নড মাই কান্ট্রিমেন’ বইয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, শরৎচন্দ্র বসুকে জানান যে কংগ্রেস সেই প্রস্তাব মানছে না এবং ‘আই হ্যাভ বিন টেকেন টু দা টাস্ক ফর দিস’! গান্ধিজি, যিনি নাকি এক লাইনের বক্তব্যে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট পাল্টে দিতে পারেন, তাঁকে ‘টেকেন টু টাস্ক’ করার জায়গায় কংগ্রেসের বাকি নেতৃত্ব পৌঁছে গেছেন ততদিনে!
অর্থাৎ, আমরা দুটো জিনিস দেখতে পারি, ক) কংগ্রেসের উপর থেকে গান্ধিজির নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে, তিনি যা করছেন তা নিজের খুব কাছের কিছু অনুগামীকে নিয়েই করছেন। খ) দেশভাগের পক্ষে কংগ্রেসের মধ্যেও একটা চক্র আছে, যা গান্ধিজির বিরোধিতা করছে। লোহিয়া তাঁর বইয়ে একটি মিটিং-এর গল্প বলছেন। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং। সেখানে দেশভাগের মূল বিরোধিতা করছেন আব্দুল গফফর খান। সেই মিটিং-এ গান্ধিজিকে বলা হয় দেশভাগের যে সিদ্ধান্ত কংগ্রেস নিয়েছে তা তাঁর অনুপস্থিতিতেই নিতে হয়েছে কারণ তিনি দাঙ্গা থামানোর কাজে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিলেন। তখন গান্ধিজি প্রস্তাব দেন, দেশভাগ মেনে নিয়ে বলা হোক, আগে ইংরেজ ভারত ছাড়ুক, মুসলিম লিগ আর কংগ্রেস একত্রে শাসন নিক। তারপর তারা দেশভাগের বিস্তারিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে। লোহিয়ার মতে, এই প্রস্তাবের অকার্যকারিতাই এর মূল কার্যগুণ ছিল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নিশ্চিত বলা যায়, আর কিছু না হোক, পাঞ্জাবের বিভাজনে যে অযুত মৃত্যু ইতিহাস দেখেছে, বিভাজন কিছুটা ধীরে হলে তা কিছু হ্রাস পেত। কিন্তু কংগ্রেসের পরিচালকরা বলেন, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে, তিনি দেশের ভালো চেয়ে যেন আর বিব্রত না করেন। গান্ধিজির সঙ্গে এই ধরণের রূঢ়তা লোহিয়াকে বিস্মিত করে। এখন প্রশ্ন হতে পারে,গান্ধিজি এই পরিস্থিতি মেনে নিলেন কেন? একমাত্র উত্তর সম্ভবতঃ, ঐ সেবাদলগুলি ছাড়া তাঁর হাতে আর কোনও রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। আমাদের মনে পড়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিতে গান্ধিজির দ্বিধার কথা। বস্তুত দেখা যায়, সেই আন্দোলনে কংগ্রেসের অ্যাক্টিভিস্টরা সবাই জেলে বন্দি থাকছে। নিচুতলার বহু কর্মী পুলিশি নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে, শহিদও হচ্ছেন ঢের। এবং সেই শূন্যতায় এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, যাঁরা ক্ষমতাবান হচ্ছেন, তাঁরা এই আন্দোলনের বাইরে ছিলেন। ভারত ছাড়োর পরে গান্ধিজির নিজস্ব সংগঠন প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, ঐ সেবাদলের কিছু সামাজিক কর্মী ব্যতীত। কংগ্রেসের মধ্যে তাঁর একাকিত্ব আমরা বিভিন্ন ঘটনায় দেখতে পাচ্ছি।
এতদস্বত্তেও গণমানসে গান্ধিজির প্রভাব সুগভীর। তাই, সারাভারতে যখনই গণচেতনার কাছে আবেদনের দরকার হচ্ছে, গান্ধিজিকেই যেতে হচ্ছে। আর, তিনি যেখানেই যাচ্ছেন,যেহেতু সেই এলাকাগুলি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে, আক্রান্ত মুসলিম জনগণের পাশে তাঁকে দাঁড়াতে হচ্ছে। এবং এর পাশাপাশি তিনি বলছেন সদ্যস্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্কের কথা। ১৯৪৮-এর জানুয়ারিতে মৃত্যুর অব্যবহিত আগে তিনি শেষ অনশনটি করেন। তাঁর অনশন ছিল, ভারতের মুসলিম এবং পাকিস্তানের হিন্দু-বৌদ্ধদের হয়ে, তিনি বলেছিলেন নিশ্চিতভাবে এই অনশন ভারতের হিন্দু এবং পাকিস্তানের মুসলিম সংখ্যাগুরু মানসিকতার বিরুদ্ধে। তাঁর হত্যার পিছনে নাথুরাম যে কারণ দেখিয়েছিলেন, তা হল মুসলিম তোষণ, হিন্দু বিরোধিতা। গান্ধিজি অনশনের কারণ হিসেবে নিজে তা স্বীকারও করেন, কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষ্য এও ছিল, যে, সংখ্যালঘু হিন্দুর পাশে দাঁড়াতে তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াইয়ের একটাতে নেমেছিলেন। মৃত্যুর তিন দিন আগে, কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে এক রচনা, যাঁকে তাঁর শেষ উইল বলা হয়, যেখানে তিনি কংগ্রেসের বিলুপ্তি এবং পঞ্চায়েত ভিত্তিক শাসনকাঠামোর পক্ষে সওয়াল করেন, সেখানে তিনি দেশের সাত লক্ষ গ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং স্বরাট আর্থিক বিকাশের কথা বলছেন। নির্মল বসু এই রচনার ফুটনোটে লেখেন- সাত লক্ষ গ্রাম ভারতে নেই, আছে ভারত পাকিস্তান মিলিয়ে। অর্থাৎ, গান্ধিজি দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় পাকিস্তানকেও বাদ দিচ্ছেন না। আমরা জানি, ভারতের দাঙ্গা থেকে অব্যহতি পেলে,তাঁর পরিকল্পনা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের মধ্যে কাজ করার।
হিন্দ স্বরাজ বই, যা গান্ধিজির নিজস্ব ম্যানিফেস্টো, তাতে পাঠক রাষ্ট্রের ভূমিকা জিগেশ করলে, গান্ধিজি সম্পাদকের কলমে লেখেন- ‘রাষ্ট্র কী?’। আজ তাঁকে যতই রাষ্ট্রপিতা বানানো হোক, তিনি দেশকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন রাষ্ট্রের ওপরে। পঞ্চায়েতি রাজ থেকে পুলিশ মিলিটারি কোর্টের উপর গুরুত্ব কমানো, সব চিন্তাতেই দেশ এবং দেশের মানুষের সমাজ তুলনায় বেশি ভরসার জায়গা হয়েছে। ভারত পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের উপর আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়ার কারণও শুধুমাত্র মানবিকতা নয়, দেশের বিভাজন আটকানো। কারণ তাঁর চিন্তায় দুই ভূখণ্ডের মিলিত গ্রামসমাজ জুড়ে ছিল। তাই, দেশের বিভাজন তাঁর মৃতদেহ ছাড়া সম্ভব হত না। গান্ধিজির সেই প্রতিশ্রুতি শুধু রাষ্ট্রনৈতিক আঙ্গিক থেকে দেখলে মিথ্যে ছিল, কিন্তু দেশ-এর বৃহৎ অর্থটি ধরলে তা তিনি আক্ষরিক অর্থে পালন করেছেন।
পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | গ্রাহক | পুনঃপ্রচার |
সংক্ষিপ্ত লেখা, কিন্তু সারগর্ভ। গান্ধিজি সম্বন্ধে একুশ শতকে ব্যক্তি আমার পুনর্বিচারের খুব কাছাকাছি এই বিশ্লেষণ।আমাদের পূর্বপুরুষদের অপরিসীম অবজ্ঞা আর অজ্ঞানের আঘাত হতভাগ্য মানুষটিকে আগেই হত্যা করেছিলো। জীর্ণ শরীরটার জন্য ছিলো পিস্তল থেকে তিনটি গুলি । যতো দিন যাচ্ছে, নতুন দস্তাবেজও প্রকাশ পাচ্ছে। নোয়াখালির সমাধান যদি তাঁকে করতে দেওয়া হতো, তবে আজ নিজের মানুষদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এই বোলবালা এমন মাত্রায় পৌঁছোতো না।
একটু অবাক লাগলো লেখাটির আলোচনায় পাঠকদের আপাত অনীহা দেখে।
সোমনাথের গান্ধীপ্রীতি আমার অজানা নয়। তবে দেশভাগের মিটিং সম্পর্কে রামমনোহর লোহিয়ার যে বইটার উল্লেখ তিনি করেছেন, তার প্রকৃত নাম Guilty Men of India’s Partition। এর আগে জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছিল। তাঁর মৃতদেহের ওপর দিয়ে দেশভাগ হবে জাতীয় আবেগমথিত বক্তব্যের পরে পরেই গান্ধীর দিল্লি আগমন, মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং প্যাটেলের সঙ্গে দীর্ঘ দু-ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে দেশভাগ সম্পর্কে একদম নতুন বিষয়টিকে মেনে নেওয়া। এই বিষয়টি মৌলানা আজাদ তাঁর গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে বলেছেন। একই ভাবে গান্ধীর নোয়াখালি পরিভ্রমণের যে রোম্যান্টিক ছবি তিনি এই ছোট্ট প্রবন্ধটিতে অঙ্কিত করেছেন, তা সম্পূর্ণ চোট খেতে পারে জোসেফ লেলিভেল্ড লিখিত Great Soul: Mahatma Gandhi and His Struggle with India বইটি পড়লে। অবশ্য 'হিন্দ স্বরাজ' নিয়ে সোমনাথের অবস্থান কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীর 'সত্যাগ্রহ' নিয়ে নতুন করে কোনও তর্কে আগ্রহী নই। লাভ নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্দোলনে গান্ধীর ভূমিকা নিয়ে আগে এলেবেলের লেখায় পড়েছি। তারপর থেকে গানহি বুড়ো কে খুব সন্দেহের চোখেই দেখি।
লেলিভেল্ড-এর বই পড়ব পড়ব করে অনেকদিন ফেলে রেখেছিলাম, আপনার পোস্টে মেনশন দেখে কিনে ফেললাম, ধন্যবাদ। তবে নির্মল বসু, প্যারেলাল, মনু গান্ধীর ডায়েরি থেকে নোয়াখালির ঘটনাগুলোর একটা বর্ণনা পাওয়া যায়।
(এই লেখাটা পড়ি নি। গান্ধী আর এলেবেলে দেখে জিগ্যেস করতে এলাম)
এমনিতে গান্ধী সম্পর্কে আমার আগ্রহ বেশ কম। তা পার্টিশান নিয়ে ঘাঁটাঘাটির সুবাদে আনিস কিদওয়াইএর মেমোয়ার্স পড়ি। সেখানে দেখছি শফি কিদওয়াই দেরাদুনে খুন হবার পরে আনিস বোরখা খুলে ফেলে গান্ধীর অনুগামী হয়ে যাচ্ছেন। মৃদুলা সারাভাইয়ের সাথে কংগ্রেসের মতানৈক্য হচ্ছে অ"আবডাক্টেড উইমেনস অ্যাক্ট নিয়ে। মৃদুলা আনিস চাইছেন 'উদ্ধার' করা মেয়েদের তাদের ইচ্ছেমত বাঁচতে দিতে সরকার তথা কংগ্রেস সেটা চাইছে না। তারা মেয়েদের বাসনপত্র উদ্ধারের মত উদ্ধার করে জায়গামত ফেরত দিতে উৎসুক। এইসব ক্ষেত্রে গান্ধী অনেকসময়ই মৃদুলা আনিসের পক্ষ নিচ্ছেন।
তো এই ব্যপারটা বেশ অবাক লেগেছে। আনিস ঠিক কী কারণে গান্ধী অনুগামী হয়ে গেলেন সেটা আমার কাছে অবাক লেগেছে। আবার গান্ধীর এঁদের পক্ষ নেয়া বা মেয়েদের ইচ্ছেমত তাদের থাকতে বাঁচতে দিতে চাওয়াও আমার গান্ধী সম্পর্কে ধারণার সাথে মেলে না।
তো একটা মানুষের মধ্যে অনেক মানুষ বাস করে তার অনেকটাই আবার সাদাকালো নয় ধুসর সেসব মেনে নিয়েই স্বাধীনতা দেশভাগ পরবর্তী গান্ধী নিয়ে লেখাপত্র চাইলে কী কী রেফার করা যেতে পারে বলবেন প্লীজ।
@এলেবেলে? অন্য কেউ?
সোমনাথ কি লেলিভেল্ড কিনে ফেললেন? যদি না কিনে ফেলেন তবে অর্ডার ক্যানসেল করে দিন। বইটির হার্ড ও সফট কপি আমার কাছে আছে। আমি বইচর্চা গ্রুপে আপলোড করে দিতে পারি আপনি চাইলে।
দ-দি, আমার গান্ধী বিষয়ক লেখাটির শেষে আমি কিছু বইয়ের উল্লেখ করেছিলাম। তার মধ্যে অবশ্যপাঠ্য ---
শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় – জিন্না : পাকিস্তান / নতুন ভাবনা
Maulana Abul Kalam Azad – India Wins Freedom
Rajmohan Gandhi – Understanding the Muslim Mind
V.P. Menon – The Transfer of Power in India
Stanley Wolpert – Jinnah of Pakistan
এ ছাড়া আরও দুটি বই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
Suniti Kumar Ghosh - India and the Raj 1919-1947 (Vol. I & II)
Alex von Tunzelmann - Indian Summer The Secret History of the End of an Empire
আসলে আমি নিজে ১৯৪৬-৪৭-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা লিখব বলে ভেবে রেখেছি। বইপত্তর সংগ্রহ চলছে। তখন এই নোয়াখালি নিয়ে আমি বিস্তারিতভাবে লিখব। অন্যান্য দাঙ্গাগুলো তো থাকবেই। এই নরেন মোদীর বিরোধিতা করতে গিয়ে গান্ধীপুজোটা আমার কাছে অসহ্য লাগে। থাক সেসব।
থ্যাঙ্কু ম্যাঙ্কু :-)
হ্যাঁ আপনার গান্ধী প্রসঙ্গে যথেষ্ট রেফ ছিল। আমার আগ্রহ ওই কয়েকমাসের গান্ধী নিয়ে। বমাস বা এক বছর বলা যায়। ৪৭ এরজানু থেকে ৪৮এর জানু।
এলেবেলে, সফট কপি আপলোড করে দিন প্লিজ।
আর্কাইভ .org এও আছে । ওখান থেকেও নামাতে পারবেন
https://www.thehindu.com/opinion/op-ed/Lifting-of-ban-on-RSS-was-unconditional/article11806185.ece
সোমনাথ রায় এর লেখা আমার ভালো লাগে। ওনাকে অভিনন্দন। আমি ওনার আর এলের প্রবন্ধের ফ্যান। ইতিহাসে স্পেকুলেশন এড়ানো কঠিন। কিন্তু সিরিয়াস ইতিহাস চর্চায় ন করাই ভালো।
গান্ধী পুরো এঁড়ে বসলে পার্টিশন হত কিনা আমার সন্দেহ আছে (ঠিক যেরকম সন্দেহ আছে সুনীতিবাবু এঁড়ে বসলে, উর্দু হিন্দুস্থানী র বারোটা বাজতো কিনা ওঁর মত অথরিটি তো আর কারো ছিল না, হ্যা বাংলাকেও বেশ কিছু সহোদোরা স্বীকার করতে হত) , তবে তাতে আরো রক্ত ঝরত কিনা স্পেকুলেট করা মুশকিল।
এই প্রবন্ধে আমার মনে হয় আপনার একটা যৌক্তিক দুর্বলতা আছে, এবং সেটা হল, রাষ্ট্রের ধরণের চেয়েও সমাজ জীবন ইত্যাদি নিয়ে গাঁধীর মতামতের কথা আপনি বললেও তাঁর সংগে চিত্তরঞ্জন, শরৎ, সুভাষ, নেহরু , অন্যান্য আধুনিকতা পন্থীদের পার্থয়ের প্রধান জায়গাটা হল, গান্ধীর সময়ে প্রি কলোনিয়াল এবং প্রি মডার্ন এর ডিসটিঙ্গুইশিং টা ভালো করে ডেভেলপ করে নি , সেটা সম্পর্কে এক দু লাইন লেখা থাগলে ভালো হত । গান্ধী সম্পর্কে যেটা ক্লিয়ারলি বোঝা দরকার, সেটা হল, ভদ্রলোক নিজে যে সময় টা কলোনি বিরোধিতা করছেন, তখন ভারতীয় মধ্যযুগকে অন্ধকার বলে কলোনিয়াল পিরিয়ড স্ট্রাকচারে ফেলা হয়ে গেছে, এবং ভদ্রলোক নিয়ে গ্রামীন ভারত এবং ভক্তি আন্দোলনের ভারতকে কে কলোনির কালচারাল বাইনারি হিসেবে তুলে আনছেন। এটার দুর্বলতা কে নেই, হ্যাঁ আছে, মুসলিম আমলের আর্বানিটি তার কমপ্লেক্সিটি কে এটা স্বীকার করছে না।
কিন্তু এটা (মানে গান্ধী'র ভক্তি মুভমেন্ট এর কনস্টান্ট রেফারেন্সিং) কন্ট্রিবিউশন হিসেবে কম না, হ্যাঁ সাম্প্রদায়িকতার আলোচনা প্রসংগেই কম না, কারণ এটা করা হচ্ছে এমন একটা সময়ে, যেখানে সাধারণ ভাবে ন্যাশনালিস্ট গ্লোরিফিকেশন টা হচ্ছে প্রাচীন ভারতকে নিয়ে। সেটাই ওরিয়েন্টালিস্ট হিস্টোরিয়োগ্রাফি। এই পরিস্থিতিতে ভদ্রলোকের এমন ক্যাম্পেনের জোর, এই জিনিশ টা আগে কেউ দেখে নি, রাজনীতি করতে গিয়ে জামা কাপড় বদলে ফেলছেন, ব্যক্তি পরিচিতিটাকে ব্যাবহার করছেন ক্যাম্পেনের কাজে। এবং শুধু এই জন্যেই তাঁকে প্রোগ্রেসিভ বলা যায়, ইংরেজ আগমনের জাস্টিফিকেশন কে অসার প্রমাণ করতে তাঁকে সময়ের আন্দাজে বেশি ফিরতে হচ্ছে না, অল্প ফিরলেই হচ্ছে, এত অল্প যে গ্রামীন ভারত তাতে রেজোনেট করছে। হ্যাঁ এটা পোলিটিকাল ক্যাপেনের প্রথম ও প্রধান ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণ। সতীনাথের গান্হীবাবা এমনি তৈরী হচ্ছে না। প্রচুর প্রচুর সমস্যা সত্তএও।
এবার এই ৪৬-৪৮, 'ফাইনেস্ট আওয়ার'। যেটা আপনি অলরেডি বলছেন।
কিন্তু আপনি যেটা এড়িয়ে যাচ্ছেন , বা আপনার মতাদর্শগত কারণে এড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যে স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রে মাইনরিটি রাইট সমাজ না, রাষ্ট্রকেই নিস্চিত করার দায়িত্ত্ব নিতে হবে। এবং বিশেষতঃ সেখানে নিতে হবে, যেখানে সমাজ ব্যার্থ। এবং এটা কখ্নৈ কলোনিয়াল আধুনিকতা দিতে পারবেনা। চাইবেও না। এই ঐতিহাসিক সত্যটা আপনি অ্যাভয়েড করছেন, বলে আপনার ন্যারেটিভ পড়ে এলে উঁহু উঁহু করে যাকে বলে পকপকাইচে:-)))))
কংগ্রেস পেপার্স পাবলিশ হয়ে যাওয়ার পরে ভাবা হয়েছিল, ভারতীয় ইতিহাসে বিংশ শতকের প্রথম ভাগ টা নিয়ে আর কন্ত্রোভার্সি কি থাকবে, সব ই তো অরিজিনাল পেপার এসে গেল। ক্লাসিফায়েড থেকে বেশি কিসু কেউ আশা করে নি ।প্রতিভাবান হিস্টোরিয়ান দের একটা অংশ হয় সামাজিক ইতিহাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নতুন এজেন্সি r খোঁজে নান কিছু করেছেন। নয় আনালিস্ট দের প্রভাবে নতুন নতুন সোর্স, মূলতঃ ইংরেজি ব্যতীত দেশি বিদএশী সোর্স দেখেছেন। কিন্তু সমস্যা হল, তাতে করে আবার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হিস্টরি, স্বাধীনতা আন্দোলনের ওঠা নামা, নেতা দের নানা ব্যক্তিগত পথ পরিবর্তন, এবং নানা নেগোশিয়েশন, এগুলো নতুন করে গুঁফো হিন্দু ন্যাশনালিস্ট দের কব্জায় এসে যাচ্ছে। আর স্বাধীনতা পরবর্তী রাজ্নৈতিক ইতিহাস তো রিটায়ার্ড মিলিটারি লিডার আর বুরোক্রাট দের হাতে চলে গেছে, যাতে অয়আকচুয়ালি সমাজ , সামাজিক চাহিদা, মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, একট অখন্ড পিন্ড মাত্র, যাকে নিয়ে ফুটবল খেলা যায়। তো এই যায়গাটাতে ইনটারভেন করছেন, আকাডেমিয়ার বাইরের ঐতিহাসিকেরা, বা একেবারে তরুন প্রজন্মের গবেষক রা, রাজনৈতিক সচেতনতা থেকেই করছেন, কিন্তু এই কাজটা তে গান্ধী প্রসংগে বিশেষতঃ আমাদের মধ্যযুগের রেফারেন্স আনা জরুরী।
কিন্তু আর এস এস ও বিজেপি স্টেট পাওয়ারের অংশ হবার পর থেকে, রাজ্যস্তর থেকেই, কর্মসূচী তৈরী করেছে বিংশ শতকের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নিজের ভূমিকা ঢাকার চেষ্টা করে। কোনো সিরিয়াস এনকোয়ারি র ক্রেডিবিলিটি তাদের নেই। তো তাতে হয়েছে কি ইন্টারেস্টিংঅলি গান্ধীর সময়ের কন্ট্রাস্ট হিসেবে বলা যেতে পারে, সাম্প্রদায়িতকtaa/জাতীয়তাবাদ ডিবেট টা এক লাফে বিংশ শতকে এসেছে, এবং পূনরায় মধ্যযুদ কে ব্ল্যাক বক্স হিসেবে দেখা শুরু হয়েছে আকাডেমিয়ার বাইরে বিশেষতঃ ।
জেনেরাল হিস্টোরিয়ান যাঁরা তাঁদের, আমার মনে হয়, বিশেষত গান্ধী প্রসংগে এটা খেয়াল রাখা দরকার, যে ভারতীয় মধ্যযুগের রেফারেন্স গান্ধী প্রসংগে শুধু না, আরো বেশি করে আশা দরকার, ফারসী দস্তাবেজ কে শুধু i মুঘল শাসন এর ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহার ন করে , বা পর্তুগীজডাচ আরব মেরিটাইম ইতিহাসের খুঁটিনাটি তুলে আনাও জররী সামাজিক ইতিহাস হিসেবে। সংস্কৃত ও অন্য ভাষার সোর্স ও প্রচুর রয়েছে।
মোদী বিরোধীতা ছাড়া গান্ধীর মূল্যায়নের দরকার নেই, এই যুক্তি একেবারে ওঁছা। কত মোদী এলো গেলো। গাঁধী কে বাদ দিয়ে বিংশ শতকের সদর্থ ইতিহাস অসম্ভব। হ্যাঁ সবচেয়ে বড় ভিলেনের পোস্ট একবিংশ শতকে এখনো ফাঁকা আছে, উনিজি এগিয়ে আছেন একটু এই যা :-))))
এলের কমেন্ট প্রসংগে , মাইরি আপনাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এটা বুঝি না, একটা পিরিয়ড নিয়ে একটা বই লেখা হলেই সেটা একটা ভালো রেফারেন্স হয় কি করে। সুনীতি ঘোষ , রাজমোহন গান্ধী, মৌলানা সব হরে দরে এক করে দিচ্ছেন মাইরি। এটাকে কে একটা জেনেরাল সমালোচনা হিসেবে দেখবেন আশা করি। এটা স্ট্রেট বলছি আপনার লেখার একটা জেনেরাল দুর্বলতা (হয় তো বই তে ডিটেলের দ্বারা ব্যাপারটা ঠিক করে দিয়েছেন) , হয় অ্যানোটেট করে রেফারেন্স দেবেন, কোয়ালিফাই করে দেবেন, নইলে অন্তত বলে দেবেন, আপনার কাছে স্কলাস্টিক হিস্টোরিয়ান হিসেবে কার কিরকম এবং কেন গুরুত্ত্ব। কারণ নইলে ওটা নিয়েই লোকে পড়বে।
আপনি বই যেটা লিখছেন বলছেন, সেটা তে এগুলো ক্লিয়ার করে দেবেন।
ইন ফ্যাক্ট এলেকে চ্যালেঞ্জ করছি আমি, আপনি বিংশ শতকের সমস্ত (যতজন পারেন) হিস্টোরিয়ান দের সম্পর্কে তাঁদের বিশ্লেষণএর শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে আপনি একটা প্রবন্ধ লিখুন। কারণ নইলে আপনি সরাসরি অভিযোগ করছি, নন স্পেশালিস্ট রিডার কে এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন স্ট্যানলি ওলপার্ট , ভি পি মেনন এক ই গোত্রের ঐতিহাসিক। এটা সিরিয়াসলি মিসলিডিং । এ মানে চলবে না।
অভিযোগ টা এই কমেন্টের সাপেক্ষে বেসলেস হলেও, এটা আপনাকে একটু মাথায় রেখে কমেন করতে হবে। নইলে আবাজ খাবেন:-)))))
সোমনাথ (রায়) দেখুন আপনি পুরো বেঠিক নন। নেশন স্টেট মানুষের, বা রবীন্দ্রনাথ কে ধার করলে, 'মানব' এর বড় খুব বড় সমস্যা সমাধান করেছে কিনা দাবী করা সত্যি i যাচ্ছে না, কিন্তু সেটি ক্যাপিটালিজম নামক বস্তুটির ভূমিকা r কারণে নাকি হরলিক্স এর মত এমনি এমনি, এটা অ্যাড্রেস না করে রাষ্ট্র জিনিসটা কে ডিনাউন্স করা কঠিন। হ্যাঁ তার গঠন ও তার ভ্যারিয়েশন , বিপদ ও আপদ যাকে বলে মিয়ার ডিটেল্স :-)))
খ, সবার আগে বলুন আপনার পিতৃদেব এখন কেমন আছেন? আপনি মশাই বিশাল আঁতু, তাই ফোন করলে ধরেন না, হোঅ্যাও দেখেন না! অগত্যা।
এই যে দ-দি বলেছেন গান্ধী আর এলেবেলেকে দেখে উনি এই টইতে আসলেন কিংবা আপনি আমার বিশাল পাখা - সত্যি বলছি এগুলো আমাকে অত্যন্ত সংকোচে ফেলে দেয়। আমি এমন কিছু হরিদাস নই তো রে বাপু।
না, মুড়ি-মুড়কির এক দর এই রেফারেন্সগুলোতে করিনি। দ-দি জানতে চেয়েছিলেন, তার প্রেক্ষিতে জানিয়েছি। কারণ জানি তিনি আদৌ আজাদ আর রাজমোহন গান্ধীকে এক পঙ্ক্তিতে ফেলবেন না, ফেলতে পারেন না।
যেহেতু 'আবাজ' দিয়েছেন (যত খুশি দেবেন, সেই রাইট আপনার ও দ-দি সহ গুরুর নির্বাচিত কিছু জনের জন্য চিরদিন বজায় থাকবে), তাই রেফারেন্সগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি।
জিন্না - উলপার্ট এবং শৈলেশবাবু আনপ্যারালাল। কিন্তু রাজমোহন গান্ধীকে রেফার করেছি কেন? গান্ধীর নাতি বলে। ওই ভিউপয়েন্টটা জরুরি বলে।
আজাদ - কেন? কংগ্রেসের ঘরেলু মামলার বিশ্বস্ততম বয়ান বলে।
মেনন - কেন? দেশভাগ প্রস্তাবের রচয়িতা বলে। মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব আস্তাকুঁড়ে গিয়েছিল বলে।
সুনীতি ঘোষ - ধ্যাত! যাঁরা তাঁর কাজকর্মের সঙ্গে পরিচিত সেই পাঠকরা কখনও তাঁকে আজাদ-মেনন-রাজমোহনের সঙ্গে একাসনে বসাবেন না। সিরিয়াস চর্চাকারীরা ছাড়া এই বইটার নামই কেউ জানে না।
টুঞ্জেলম্যান - সাম্প্রতিকতম বই বলে।
এই ব্যাখ্যায় চলেগা? আর কী তখন থেকে বই-বই করছেন? গান্ধী বই হচ্ছেনাকো। কেউ ছাপার নেই। প্রকাশক পেলে বলবেন, লেখাটাকে ঢেলে সাজাব। অনেক নতুন রেফারেন্স দেব। প্রকাশক মিলেগা!!!
ছাড়েন তো মশাই, এখানে গান্ধী প্রকাশিত হওয়ার সময় পাবলিকে পান্নালাল দাশগুপ্তর কথা বলেছিল! আর আপনি আমাকে 'আবাজ' দিচ্ছেন!
আর সোমনাথের খাপের লেখাটা ভালো লেগেছে। আমার কাছে ওঁর প্রবন্ধ ভালো লাগা বা খারাপ লাগা বিষয়ভিত্তিক হয়, ব্যক্তিভিত্তিক নয়। তাই আমি মোট্টে পকপকাইনি!!!
গান্ধীকে নিয়ে দুপয়সা আমিও দিতে পারি।
প্রথম পয়সা, গান্ধীর জন্ম। তাতে নাকি রবীন্দ্রনাথ, সুভাষ বোস, আর কাদের কাদের অবদান ছিল। তবে সেটা ছোটদের গল্প, তাই এখানে বড়োদের মধ্যে বলা যাবেনা।
দ্বিতীয় পয়সা, উনি ছাগলের দুধ খেতেন, গরুর দুধ নাকি খেতেন না (রেফারেন্স নেই), মানে একেবারে ছিটেল পাবলিক। এই নাকি দেশের পিতা।
গান্ধীর ব্যপারে আর কিছু জানিনা।
এলে, ব্যক্তিগত ভাবে বাজে সময়ে আছি। বাকি কথা পরে।
ব্যাখ্যা ইজ ওকে। আমি ক্লিয়ার করি হোয়ার আই ডিফার।
রাজমোহন গান্ধী ইন্টারেস্টিং যদিও জার্নালিস্টিক। ইন্টারেস্টিং কারণ ১৯১৪ থেকে ১৯৩৭ এর রাজনীতিতে চারজন মুসলিম ইনটেলেকচুয়াল, চার রকম ভাবে ভারতের রাজনীতিতে এনগেজ করছেন। এটাকে ইন্টারেস্টিং মনে করতে গেলে ঘটে কিসু লাগে, সেটা শুধু গান্ধীর নাতি হবার সংগে সম্পর্ক নাই। সুইপিং স্টেটমেন্ট কিছু আছে। সে থাকবে।
সুনীতি ঘোষের ব্যাপারে আমি বুঝলাম না আপনি পছন্দ করেন কেন নাকি অপছন্দ করেন কেন? বাক্য গঠন টা বুঝি নি।
উলপার্ট কেন আন প্যারালাল মনে করছেন বলুন। ভালো তো বটে , কেন ভালো মনে করছেন বলুন। আমি একটা ভাবনা শেয়ার করছি। আমি বলছি উনি অসাধারণ লেখক হতে পারেন, খুব বিশাল হিস্টোরিয়ান নন, কারণ আর কিছুই না, বিশাল সুযোগ থাকা সত্তএও ওনার কাজ ন্যাশনাল হিস্টোরিওগ্রাফি যেটা স্বাধীনতার পরে তৈরী হয়েছে, তার গন্ডী ছাড়াতে পারে নি। যেটা আয়েশা জালাল রা পেরেছেন। এইবার আপনি বলতে পারেন এটা সাউথ এশিয়া সাবজেক্ট হিসেবে গড়ে ওঠার পরের ব্যাপার। আমি বলছি না, এটা স্রেফ অবস্থানের ব্যাপার। এবং ইতিহাস জিনিসটা মানব জীবনের সংগে জড়িত থাকার ব্যাপার, যেখানে ওভারসাইজ্ড হিরো ও নাই, ওভারসাইজ্ড ভিলেন ও নাই। কিন্তু একটু রিলেন্টলেস , প্রায়শ নিয়ন্ত্রনহীন গতি আছে।
বইয়ের বিষয়ে কমেনটে বাকি মোটামুটি একমত।
এবার বলুন, সোমনাথ রায়ের লেখা সম্পর্কে আপনার মূল আপত্তি টা কোথায়। বা মূল ভালো লাগাটাই ব কোথায়। আমার কেন ভালো লেগেছে বা কেন এক দু লাইন বাড়তি লেখা যেত সেটা বলেছি, গান্ধী মধ্যযুগের ইতিহাসের যে অংশটাকে আধুনিকতার বাইনারি হিসেবে বেছেন নিয়েছেন, আমি বলছি সেই নির্বাচন পদ্ধতিটার জন্যই গান্ধী অনন্য। এবার আপনি এই প্রবন্ধটা সম্পর্কে আপনার অবস্থান টা বলেন, (বই সব সময়েই লেখার কথা ভাববেন, লেখা হল কিনা টা বড় ব্যাপার না)।
শৈলেশ বন্দ্যোপাধ্যায় কে কেন আদৌ গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটাও জানা দরকার , আমি বুঝিনি। নতুন কি পেলেন।
আর আমি আয়েশা র সঙ্গে উর্বশী বুটালিয়াকে মিন করেও নামটা লিখতে ভুলে গেছি।
আয়েশা তাকিয়া?
খ, এ মাইরি খুবই বাজে ব্যাপার হচ্ছে। টইটা ক্রমে আপনার-আমার কথোপকথনের রূপ নিচ্ছে। এটা সমর্থনযোগ্য নয়। বিশেষত সোমনাথ কিছুই বলছেন না যেখানে।
যাই হোক, ফের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি।
রাজমোহন গান্ধী - আর যাই হন, অরুণ নেহরু নন। তাঁর জিন্না মূল্যায়ন সংক্ষিপ্ত ঠিকই কিন্তু সেটা খারাপ নয়। মানে গোটাটাই সুইপিং স্টেটমেন্ট নয়। এখন যিনি এই সময়টার চর্চা করবেন, তিনি যদি ছাঁকনির কাজটা না-ই করতে পারলেন, তবে বাপু ও রাস্তা পরিহার করাই ভালো।
সুনীতি ঘোষ - চরম পছন্দের ইতিহাসবিদ। মার্ক্সবাদী আঙ্গিক থেকে অত তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ আমার চোখে পড়েনি (রজনী পাম দত্তকে মনে রেখে বলছি)।
উলপার্ট - কেন? না ভিতটা গড়েছেন বলে। ওই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পরবর্তীরা চর্চা করার সুবিধেটুকু পেয়েছেন।
শৈলেশ বন্দ্যো - একজন পাঁড় গান্ধীবাদী যিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জিন্নাকে নিয়ে গবেষণা করে বই লিখলেন। প্রচুর তথ্য এবং সেগুলো যথেষ্ট মূল্যবান। এবং কোথাও বায়াসনেস নেই। এটা আমার কাছে খুবই বিশেষত্বের দাবি রাখে।
আয়েষা-উর্বশী - রেফারেন্সগুলো দিচ্ছি কাকে? না, দ-দিকে। তিনি এই দুজনকে পড়েননি ধরে নেওয়া ধৃষ্টতা। কাজেই উল্লেখ করিনি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে তিনি উলপার্ট-শৈলেশ না-ও পড়ে থাকতে পারেন। তাই রেফার করেছি। আমার কাছে উলপার্ট-শৈলেশ হচ্ছেন বিদ্যাসাগরের শম্ভুচন্দ্র-বিনয় ঘোষ। আয়েষা-উর্বশী হচ্ছেন অশোক সেন-শেখর বন্দ্যো।
সোমনাথের লেখার ক্ষেত্রে মূল দুর্বলতা উনি তিনটে জিনিসকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে এগিয়েছেন - হিন্দ স্বরাজের অভ্রান্ততা, দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহের চলতি বয়ান এবং গান্ধীর মৃতদেহর ওপর দিয়ে দেশভাগ। বলা বাহুল্য, এই ধরে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি তর্কবিদ্যার পূর্বপক্ষ-উত্তরপক্ষের ধার ধারেননি। দ্বিতীয়ত, নোয়াখালি সম্পর্কে উনি ভরসা করেছেন মূলত প্যারেলাল, মনু গান্ধী এবং নির্মল বোসকে। এটা বিশুদ্ধ বায়াসড নির্বাচন বলে আমি মনে করি। শুধু নোয়াখালি নিয়েই যেখানে বিস্তর কাজকর্ম হয়েছে সেসব না পড়ে পোবোন্দো লিখতে গিয়ে পরিশেষে এটি একটি রাজনৈতিক প্যামফ্লেটের আকার নিয়েছে।
ডিসি, এমন বিন্দাস থাকুন চিরকাল।
সোমনাথ রায় মশাইকে জানানোর ছিল যে গান্ধীর বিষয়ে মানে পার্সোনালিটি কাল্ট হিসেবেই যদি দেখতে চান ডেভিড আর্নল্ড এর প্রোফাইল ইন পাওয়ার সিরিজ এর বই টি দেখতে পারেন।ইনি সাব অল্টারন গ্রুপের লোক।
হ্যাঁ আর করবনা, অন্যায় হয়ে গেছে। সোমনাথ রায় খুব ই শান্ত সমাহিত বোধহয়। সরি এভরিওয়ান।
আমি একটা কাজে বাইরে এসেছি। তাই উত্তর দিতে পারিনি।
এলেবেলের দেওয়া বইগুলো পড়ছি।লেলিভেল্ড পড়ে নোয়াখালির ব্যাপারে ধারণা বদলালো না। উনি বলছেন দৃশ্যত রাজনৈতিক বা সামাজিক লাভ হয় নি। সেটা নিয়ে তো আমার বক্তব্যের কোনো সমস্যা হয়না। পদ্ধতিটা মূল আণ্ডারলাইন, ফলাফল অপ্রয়োজনীয় না হলেও গৌণতর।
আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সত্যাগ্রহ নিয়ে একলাইনও রেফারেন্স টানিনি। আমার দ্বিতীয় আন্ডারলাইন ছিল, আইন অমান্য নিয়ে গান্ধিজীর দ্বিধা, যার সারবত্তা আমি দেখতে পাই।
হিন্দ স্বরাজ আমার পলিটিকাল লাইন, তাতে ভ্রান্তি থাকতেই পারে। আমি যেটা করে খাই, তাতেও তো ভ্রান্তি থাকে। ভ্রান্তিটা জানা এবং ভ্রান্তিটাকে সামলে কাজ চালানো দরকারি।
বোধিদা, মধ্যযুগ খুব দরকারি লাইন। আমি এটা নিয়ে বিশদ আলোচনায় আগ্রহী।
আমি শৈলেশ বন্দ্যোপাধ্যায় পড়া শুরু করলাম। বেশ ভালো এগোচ্ছে।