যাপণ ৪
আজ ভোরবেলা সৌরর মেসেজ পেয়ে ঘুম ভেঙেছে অরিজিতের ।আজ জিত বলেছিল ও যাবেনা ছবি তুলতে। আজ তো ওর স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপুটি করার দিন। কতগুলো বছর পর বন্ধু রা একসাথে হবে। স্কুলজীবন পেরিয়ে গেছে তাও তো আঠারো বছর হয়ে গেলো।
সৌরদীপ কোলকাতা এলে যেখানে থাকে, ওখানকার ফ্ল্যাটমেট ঋজুকে নিয়ে কাজ করবার কথা। ঋজুটা এবার মডেল হওয়ার জন্য বিদেশে চলে যাবে। ঋজুকে ফ্যাশন দুনিয়ায় এনেছিল সৌরদীপই। প্রতিদিনই একটু একটু করে তৈরী করেছে । যদিও আরও অনেকের মত ঋজু সেটা বাকীদের কাছে কখনও স্বীকার না করলেও সৌরর কাছে খাপ খোলেনা।
ভোরবেলা যখন প্রায় মনখারাপের স্বরে সৌর বলল, ঋজু সেটা অস্বীকার করেছে আর সে নিয়ে ওদের মধ্যে আগের দিন ঝামেলা হয়েছে একটুও অবাক হয়নি জিত। আগের দিন বিকালটা ঋজুর সাথেই কেটেছিল ওর। তখন ঋজুর ব্যবহারে হঠাৎ করে পাওয়া সুযোগের অহংকারে একটু খারাপ লেগেছিল অরিজিতের ও। কিন্তু সেসব কথা সৌরকে জানায় নি ও। সৌর স্বগতোক্তির মত বলে," জানো, ছেলেবেলায় দিদুভাই বলত, কারও জন্য না চাইতে কিছু করলে সে সেটা মনে রাখেনা। বেশী যাচলে সোনাও রাং হয়ে যায়। ভাবছি আর কখনও এভাবে কারও জন্য করব না।" সবশুনে অরিজিত বলে, "ধুসস্ এসব ভাবলে হয়। পেশার জগতে কত কিছু হয়।" কথা বলতে বলতে হঠাৎই আবদারের সুরে সৌর বলে ওঠে, আজ তুমি যদি আসো তাহলে আমি কাজটা করব। আসবে তুমি? অবাক হয়ে জিত জানায় তার তো স্কুলের বন্ধুদের সাথে হইচই করার কথা। সৌর বলে, আসলে তুমি এলে আমার ভাল লাগবে আজ না হয় নাই বা গেলে! এরপর আর না করতে পারেনি ও। পৌঁছে গিয়ে দেখে ওকে দেখে একটু অবাক ঋজু। ও ওসবে আমল দেয়না। খানিক বাদে ঋজু এসে জানতে চায় আগের দিন রাতের ঝামেলা ও জানে কিনা। জয় স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ঋজুকে জানায় ও কিছুই জানে না। ওদিকে সৌর দেখতে পেয়েই একটা বিয়ারহাগে চেপে ধরে ওকে। জিত ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে তুমি না পেশাদার ছবিওয়ালা, পেশাদারদের এত ভাবতে নেই। সৌর আরও আশ্লেষে চেপে ধরে জিতকে।
সারাদিনের পর কাজশেষে বাড়ির দিকে রওনা দেয় অরিজিত। মনে মনে ভাবতে থাকে অরিজিত যখন সৌরদীপকে প্রথম দেখেছিল সে অনেক বছর আগে। তারপর একসময় সৌরদীপকে বলেওছিল ওর ভাললাগার কথা। খুব একটা আমল দেয়নি সৌরদীপ। তারপর থেকে এই ছবি তোলার দিনগুলোই ওদের দাম্পত্য, খুনসুটি সবকিছু। তথাকথিত খোপে ফেলা সম্পর্ক না হলেও তার থেকে অনেক বেশি।
মুখে যাই বলুক ওই খোপটার আকর্ষন তো অনেক বেশি।