এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি  সিরিয়াস৯

  • অ(ন্য)নাগরিক

    সপ্তর্ষি রাউত, আনন্দময় ভট্টাচার্য, উদয়ন রায়, নবেন্দু ভট্টাচার্য, সঞ্জয় চক্রবর্তী
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৪ আগস্ট ২০২০ | ৩৫২৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • এই দেশেরই মানুষ ছিলেন ওঁরা।একদা। নাগরিকত্ব বদল হয়ে গিয়েছে। কেমন ভাবে দেখেন এখন, ভারতের স্বাধীনতা দিবসকে? দূর থেকে? পাঁচ বাঙালি লিখলেন নিজের কথা, নিজেদের কথাও।


    আমার কোনও ভারত নেই
    সপ্তর্ষি রাউত (ব্রিটেন)



    ১। ১৯৯২, কোলকাতা

    ছড়িয়ে থাকা রাজপতাকা, জড়িয়ে থাকা ভয়
    এ মৃত্যুদেশ তোমার আদেশ, আমার নামে নয়...


    মাধ্যমিকের তখন বাকি আর কয়েক মাস। ইন্টারনেট কাকে বলে কেউ জানে না। এক হাল্কা শীতের সন্ধ্যেবেলা অংক ট্যুইশন থেকে ফেরারপথে এক সহপাঠী বেশ সগর্বে বলে উঠল, “জয় শ্রী রাম”!

    মসজিদ নাকি ভেঙে গেছে। এবার হবে হিন্দুস্তান। তার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ভেবেছিলাম ধুর বাল। হবে না। এটা ভারত। আমার ভারত।

    বালিগঞ্জ সরকারি স্কুলে পুরোনো বটগাছটার পাশে ঢ্যাঁঙা খুঁটিতে টাঙানো তেরঙ্গাটা ঝুলতো এমনি এমনি। স্যারদের নাম বদলে বদলে যেত, কথাগুলো থাকতো একই... বৈচিত্র্য, ঐক্য, সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা...

    অংক ক্লাস থেকে বাড়ি পৌছে একটু ধাক্কা লাগলো যদিও। একতলার এক কোণের অসমাপ্ত এক কামরায় জনা পাঁচজন চাপাচাপি করে, অতিথি। নওসের মিস্ত্রি, মানে নওসেরকাকু, যে ওই ঘর বানাচ্ছে। সে ও তার পরিবার। প্রাণের ভয়ে, মুর্শিদাবাদ ফেরার আগে লুকোতে। শহরে নাকি দাঙ্গা লাগতে পারে।



    ২। ২০০২, আমস্টারডাম

    তোমার নামে হাঁটছে মিছিল, কাটছে অবিশ্বাসী
    দু এক ফোঁটা রক্ত রঙে লুকিয়ে আমিও আছি


    আমার প্রথম প্রবাস, দুই দশকের পরবাসযাপনের শুরু। গোটা অফিসবাড়িতে আমাকে নিয়ে দুজন ভারতীয়, সুরিনাম-জাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত যদিও আরও বেশ কয়েকজন। আর জনা চারেক পাকিস্তানি। ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা হয়, আমি চিবোই অখাদ্য স্যান্ডউইচ আর ওরা পরোটা। নিষিদ্ধ আনন্দের মত মাঝেসাঝে কথা হয়। ক্রিকেট, কারগিল, এটা-সেটা। একদিন সাহস করে খুব নিন্দা করে দিলাম বাজপেয়ী-সাহেবের। ভাবলাম এতে যদি ভাব জমে, আর পরোটা খাওয়ার নিমন্ত্রণ। ও মা, কোথায় কী, মুখ গোমড়া করে তাদের মধ্যে একটু চুপচাপ ছেলেটি বলে উঠল, তবুও তো তোমরা কথা বলতে পারো। আজাদি আছে। স্বাধীনতা।

    তখন ফেব্রুয়ারি। ইন্টারনেটের শৈশবকাল। সকালে অফিস এসে রেডিফ ডট কমে পড়লাম। গোটা ট্রেন জ্বলে গেছে। আর তিনি কথা বলছেন। ফোন করলাম, কলিং কার্ড দিয়ে দু-চার জনকে। একজন যাকে বন্ধু জানতাম বলল একটা কাটাও আর আস্ত থাকবে না।

    আমি তখনও জানি সব ঠিক হয়ে যাবে। এটা ভারত। আমার ভারত। কেবল মাঝখান থেকে পরোটাগুলো হাপিশ হল আর কী।



    ৩। ২০১৪, লন্ডন

    দু-এক ফোঁটায় সূর্য ওঠায় মাঝরাত্তির গ্রামে
    পুড়ছে দেখো আমার বাড়ি, ইনসাফ রামনামে


    নয় নয় করে ন’বছর হয়ে গেল বিলেতে। এত দিনে দেশের অনেক মানে তৈরি। শব্দ-স্পর্শ-গন্ধের দেশ। আমার মেয়ের জন্ম দেওয়া দেশ। আর পাসপোর্টের শ্রেণিবিভক্ত দেশ। শক্তিশালী লাল পাসপোর্ট চাইলেই পেতে পারি ২০১১ থেকেই। তাতে প্রতি সপ্তাহের এয়ারপোর্টে অভিবাসনের লাইন ঘন্টাখানেক দাঁড়ানোর ঝক্কিও কমে। কিন্তু... ওই যে, ভারত। আমার ভারতবর্ষ...

    সেই সময় বদলাচ্ছে এক দারুন আচ্ছে দিনের দিকে। ইন্টারনেট তখন সেই প্রগতির প্রধান অস্ত্র। হোয়াটসঅ্যাপে কত কী জানতে পারি। সবার বিকাশ। তেজো মহালয়া। মুসলমানদের বংশবিস্তার। গুলিয়ে যেতে লাগল। ছোটবেলার সবথেকে কাছের মানুষরা ঘোষণা করে দিল, তিনি ছাড়া গতি নেই, তিনিই ভারতবর্ষে ঘটে যাওয়া শ্রেষ্ঠ ঘটনা।

    শেষ বিশ্বাসটুকু আঁকড়ে ধরে ছিলাম। মে মাসে তার উত্তর এসে গেল। তিনিই জিতলেন। আমি হেরে গেলাম আমার ভারতবর্ষের কাছে।

    জুন মাসে আমি লাল পাসপোর্টের জন্য যা যা কাগজ লাগে তা জমা দিলাম।



    ৪। ২০২০, এখনও লন্ডন।

    দেশের স্বাধীনতার বৃত্ত সম্পূর্ণ কিন্তু আমার আর নিজের কোনও ভারত নেই।

    গড়িয়ে চলা তোমার রথে ছড়িয়ে চলা ক্ষয়
    তোমার স্নেহ মৃত্যুদেহ, আমার নামে নয়...




    দেশপ্রেমিকদের ঈর্ষা করি
    আনন্দময় ভট্টাচার্য (আমেরিকা)



    সপ্তাহ দুয়েক আগের কথা, বিকেলে দেখা হল উল্টোদিকের প্রতিবেশীর সঙ্গে। একথা সেকথার পর ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন এই অতিমারীর সময়ে পাকিস্তানে আমার বাড়ির লোকজন কেমন আছেন। আমি জানালাম সকলে মোটামুটি ভালই আছেন, তবে পাকিস্তানে নয় ভারতে, যদিও তাতে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় না।

    তাঁকে সেদিন বলা হয়নি নিজেকে বৃহত্তর উপমহাদেশের অংশ হিসাবে ভাবতেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দ। কোনও রাজনৈতিক ঔচিত্যবোধের বাধ্যবাধকতা থেকে নয়, চিরকাল (অন্তত যবে থেকে বোধবুদ্ধির কিছু উদয় হয়েছে বলে আমার ধারণা) এরকম ভাবনাকেই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে, তাতেই সচেতন ভাবে সার জল দিয়ে এসেছি।

    এরই যুক্তি পরম্পরায় পনেরোই অগাস্ট ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে আর চার পাঁচটা দিনের মতই একটা দিন, জ্ঞানত আজ পর্যন্ত অন্যরকম কিছু মনে হয়নি বা কোনওদিন কোনও উদ্যোগও নিইনি অন্যভাবে কিছু ভাবনা চিন্তা অনুশীলন করার।

    এর কারণ, ইতিহাস ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে বসলে কিছুটা সাদা কালো আর অনেকটাই ধূসর প্রসঙ্গের অবতারণা করতে হয়, তবে সে সব আলোচনার পরিসর বা বিষয় এ লেখার উদ্দিষ্ট নয়।

    এখানে প্রশ্ন আসবে যে এই দেশভাগ, যা চূড়ান্ত ন্যাক্কারজনক, অপ্রয়োজনীয় এবং বিষাদকীর্ণ এক অধ্যায়, তা তো স্বাধীনতা আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল না (অন্তত প্রাথমিক ভাবে তো নয় ই)। তাহলে সে-ও কি মিথ্যা? তার উত্তরে এটুকুই বলতে পারি যে অবশ্যই নয়, কিন্তু এই দীর্ঘ অধ্যায় যে ভাবে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়েছে এবং এখন নতুন উদ্যোমে লেখা (বা বলা ভাল বদলান) হয়ে চলেছে তাতে করে ওই এক সরলরৈখিক ইতিবৃত্ত পাওয়া ছাড়া অন্য কিছু আশা করা বাতুলতা।

    স্পষ্ট করে নেওয়া ভালো, ইতিহাস বিষয়টাই যেহেতু মূলত রাজনৈতিক সুতরাং অতীব ধোঁয়াটে এবং এক জীবনে সবকিছু ঠিকঠাক বুঝে ওঠা অতীব দুষ্কর।

    বাকি রইল নাগরিকত্ব আর দেশপ্রেম, তো দেশপ্রেম বিষয়টা যে ঠিক কি বস্তু তা আমার বোধের বাইরে। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক অনিবার্যতা ছাড়াই যাঁরা দেশপ্রেমিক, তাঁদের প্রত আমার বেশ ঈর্ষাই রয়েছে। কারণ তাঁদের এ সম্পর্কে যে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে, আমার তা নেই।

    আজকের ভারতবর্ষে যে আদ্যোপান্ত সৎ (হ্যাঁ, খুব সচেতন ভাবে কথাটা লিখলাম), হিংস্র, নৃশংস এবং সর্বোপরি অপদার্থ রাজনৈতিক চালিকাশক্তি, তাদের অনুসরণে এই দেশপ্রেম আর তার উৎকট উন্মোচন এবং অনুশীলনের ভাগীদার হতে পারলে হয়তো কোনো দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব থাকত না।

    এরই হাতে হাত ধরে চলে আসে নাগরিকত্বের বিষয়টি, যেটা আমার ক্ষেত্রে পুরোপুরি (এবং একমাত্র) বৈষয়িক কারণ। কোনো আবেগ, ভালোলাগা, বিতৃষ্ণা ইত্যাদি কাজ করেনি।

    পরিশেষে একদম ব্যক্তিগত স্তরে (এবং মনের গহিনে) কিছু অসহায়তা, কষ্ট, অপরাধবোধ কাজ করে যা কিনা আপাতবিরোধীও বটে, কিন্তু তার সাথে এই নাতিহ্রস্ব আখ্যানের কোনও সম্পর্ক নেই।

    এবং সেই কারণেই বোধহয়, মিথ্যা কথা না বলতে কি, প্রতিবেশীর ওই অনিচ্ছাকৃত ভুলে মনে মনে খুব খুশিই হয়েছিলাম।

    এই আর কী!




    স্বাধীনতা দিবসে নিজেকে ছিন্নমূল মনে হয় না
    উদয়ন রায় (কানাডা)



    যদিও আমার বাবা চাকরি সূত্রে কিছুদিন আগেই পূর্ববঙ্গ ছেড়ে এদেশে এসেছিলেন, কিন্তু সপরিবারে ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে আমার ঠাকুমার পূর্ববঙ্গ ছাড়া সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় থেকে। সে হিসেবে আমরা মোটামুটি স্বাধীনতার সময়ের উদ্বাস্তু। উদ্বাস্তুদের যেমন হয়, আমাদের বাবা-জেঠুদের-ও স্বাধীনতার আঁচ তেমন করে গায়ে মাখা হয়নি। কোনটা আমাদের দেশ, পূর্ববঙ্গের ভিটেমাটি নাকি কলকাতার শহরতলির কলোনি, সেটা ভাবতে ভাবতেই অনেক বছর কেটে গিয়েছিল। সে হিসেবে আমাদের বেড়ে ওঠা আবহে কোনওদিন স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আদেখেলাপনা ছিল না। যদিও গল্পগুজব, আর বেডটাইম স্টোরিতে ভগৎ সিং, বিনয়-বাদল-দীনেশ, মাস্টারদারা, তাঁদের নিয়ে সত্যিমিথ্যে উপকথা, তাঁদের আত্মত্যাগ নিয়ে ফিরে ফিরে এসেছেন বারবার। কিন্তু সরাসরি তেরঙ্গার সাথে তাঁদের ইক্যুয়েট করা হয়নি কখনো। তার ওপরে আমাদের পরিবার নীতিগত ভাবে গান্ধীবাদী নন। তাই অহিংস অসহযোগ আন্দোলন এই সবই ইতিহাস বইতে পড়া। পরীক্ষা প্রস্তুতি হিসেবে।

    আমাদের কাছে গদগদ দেশপ্রেমটা ঠিক তেমন ভাবে ছিল না। মানে 'ও আমার দেশের মাটি' মাৰ্কা দেশপ্রেম যেরকম হয়ে থাকে সেরকম ছিল না ছোটবেলায়। হ্যাঁ, দেশপ্রেম মানে রবিঠাকুর, দেশপ্রেম মানে বিভূতিভূষণ, দেশপ্রেম মানে শিমলা মানালি দার্জিলিং বা কেরালা ভ্রমণ, দেশপ্রেম মানে পণ্ডিত রবিশঙ্কর, দেশপ্রেম মানে সত্যজিতের সিনেমা অবশ্যই ছিল বটে। বা ধরুন মফসসলের ট্রেন স্টেশনের চায়ের দোকান। শীতের সকালের ভরা সবজি বাজার। কলকাতার ময়দানের ফুটবল বা ইডেনে ভারত ওয়েস্টইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচ। এসব-ই আমাদের ছোটবেলার দেশপ্রেমের অঙ্গ। দেশপ্রেমের সাথে 'দেশের শত্রু নিপাত যাক' এটা মেলানো আমার পক্ষে মুশকিল, কারণ ছোটবেলায় দেশের বাইরের শত্রু যে কে, সেটাই জানা ছিল না। তখন ততটা বুঝতাম না। এখন বুঝি। আমার মা পাড়ার কিছু গৃহ কর্মচারীদের ছোটোছেলেমেয়দের অঙ্ক আর বাংলা পড়াতেন। অবশ্যই অবৈতনিক। এখন মনে হয় সেটাও ছিল আমার শেখা দেশপ্রেমের অঙ্গ। ১৫ই আগস্ট ইস্কুলে প্রভাত ফেরিতে অংশ নিতাম অবশ্য নিয়ম করে। প্রভাতফেরি শেষ হলে সারাদিনের ফুটবল প্রতিযোগিতা হত পার্কের মাঠে। সেটাতে একটা প্রাকপুজো মজা ছিল বটে, দেশপ্রেম কতটা ছিল বলতে পারিনে।

    আমি দেশ ছাড়া প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে নাগরিকত্ব পরিবর্তন হয়ে গেছে প্রায় আট বছর হল। এই কুড়ি বছরে ১৫ অগাস্টের সময় আলাদা অনুভূতি, বা এখন বিশেষ করে বিদেশি নাগরিকত্ব নেওয়ার পরে স্বাধীনতা দিবসে আলাদা কোনও শূন্যতা উপলব্ধি হয়নি। কারণ অবশ্য-ই আমার বেড়ে ওঠা যা আগে বললাম। কিন্তু অবশ্যই এই কুড়ি বছর পরেও আমার একটা অনুভূতি আছে যার নাম 'দো দিনো কে মেহেমান' সিনড্রোম। এখনো আমার মনে হয় বিদেশে বেড়াতে এসেছি, বেড়ানো হয়ে গেলে দেশ ফিরব, স্টেশন রোডের চায়ের দোকানের টানে, অ্যাকাডেমিতে নাটকের টানে, বাংলা বইয়ের টানে। বিদেশি পত্রিকায় আর খবরের কাগজে যত সময় কাটাই তার চেয়ে ঢের বেশি সময় খরচ করি দেশের খবরে, রাজনৈতিক বিতর্কে। এখনও আমাদের সল্টলেকের বাড়িটা 'আমার বাড়ি' মনে হয়, বিদেশে যে বাড়িতে থাকি সেটা হোটেল।

    ছিন্নমূল বোধটা স্বাধীনতা দিবসে সেরকম নেই। নাড়িতে আছে। আমার কাছে যদি একটা গুগাবাবার জুতো থাকতো, আর তালি মেরে বছরে দুদিন দেশে যাওয়ার অনুমতি থাকতো, তাহলে অবশ্যই দুর্গাপুজোর অষ্টমী আর বইমেলার উদ্বোধনী দিন বাছাই করতাম। স্বাধীনতা দিবস? মনে হয় না।





    পনেরোই অগাস্ট নিয়ে আবেগ নেই
    নবেন্দু ভট্টাচার্য (আমেরিকা)



    'ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম' - গাইতাম ছোটবেলায়। ভারতের মানুষ, নদী, বন, পাহাড়, প্রান্তর - সবই হৃদয়ের খুব কাছের। বহু বছর আমেরিকায় থেকেও ভারতকেই নিজের দেশ মনে হয়, পরবাসী প্রথম প্রজন্মের এই এক ব্যারাম।

    স্বাধীনতা ভারতকে কিছু দেয় নি, বরং নিয়েছে অনেক। সাহেব মালিক গিয়েছে বটে, কিন্তু তার জায়গায় দেশী মালিক এসেছে। দেশভাগ যে কত ভয়াবহ যন্ত্রণা, বেদনা বয়ে আনবে, কত মানুষ মারা যাবেন, উদ্বাস্তু হবেন - তা দেশিয় মালিকরা বোঝেননি, বা বুঝতে চান নি।

    ১৫ অগাস্ট নিয়ে আবেগ নেই। ভারত নিয়ে আছে। ভারতের দরিদ্র মানুষ, প্রান্তিক মানুষ যেদিন সম্মানের সাথে বাঁচতে পারবে; খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য - প্রতিটি মানুষের এই মৌলিক অধিকার গুলো যখন তাঁদের করায়ত্ত হবে, সেদিনই আসবে প্রকৃত স্বাধীনতা।

    এখন বিষণ্ণ দিন, ধর্ম নিয়ে মাতামাতি চলছে, ফ্যাসিবাদী দল দিল্লির মসনদে - একটা অন্ধকার সময়। সরকারি সংস্থা, বনভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ - সব বেচে দেওয়া হচ্ছে কর্পোরেট হাঙর-দের কাছে। কিন্তু তার মধ্যেও প্রতিবাদ জারি আছে, ভুখমারি সে আজাদি, জাতিবাদ সে আজাদি - এমন স্লোগান এখনও ওঠে। নতুন ছেলেমেয়েরা আসে, পূর্বজ-দের স্লোগান গলায় তুলে নেয়, রিলে রেসের বেটন হাত বদলায়।

    বয়স হচ্ছে, জানি না ভারতের সত্যিকার স্বাধীনতা দেখে যাব কিনা, তবে এ কথা দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে জানি যে স্বাধীনতার লড়াই চলবে।

    বুকে গভীর আছে বিশ্বাস।




    ইয়ে আজাদি ঝুটা নেহি
    সঞ্জয় চক্রবর্তী (অস্ট্রেলিয়া)



    তখন বোধহয় ক্লাস টেনে বা ইলেভেনে পড়ি, স্কুলের এক্সামের শেষে বাবা এনে দিয়েছিল দমিনিক ল্যা'পিয়েরের লেখা বই "ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট"। ছোটবেলা থেকেই পড়ার বইয়ের বাইরের জিনিস পড়ার উৎসাহ দিত বাবা। আজও মনে আছে গোগ্রাসে শেষ করেছিলাম পুরো বইটা। ছোটবেলায় স্বাধীনতা দিবস মানে ভাবতাম এটা তো ছুটির দিন, সকালে একটু প্রভাতফেরি, একটু পতাকা উত্তোলন, ব্যাস তারপর ছুটিই ছুটি। আর "ইংরেজদের দু'শো বছরের শাসন"? ও হল ইতিহাসের দশ নম্বরের প্রশ্ন, ভালো করে মুখস্থ না করলে যার উত্তর লেখা যেতো না। "ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট" হঠাৎই তখন বছর চোদ্দো'র মনে অনেক প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছিলো এই স্বাধীনতার মানে খোঁজার জন্য।

    পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসে এই ছোটবেলার পাঠ্যপুস্তকের শেখানো বিশ্বাসবোধকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল বইটা। বোধহয় তখন থেকেই মনের ভিতর সুপ্ত বীজ বোনা হয়েছিল যে এই আমার দেশ ভারতবর্ষ তাকে দেখতে হবে, অনুভব করতে হবে।

    আমি কলকাতার এঁদো মফসসলের ছেলে, জন্ম ইস্তক প্রাথমিক বেড়ে ওঠা সবটাই ওই আবহাওয়ায়। বাবা ও মায়ের ইতিহাস অবশ্য সাতচল্লিশের কাঁটাতার পেড়িয়ে আসা। তাই মূলত উদ্বাস্তু রক্ত যে ছেলের শরীরে বইছে তার কাছে আসমুদ্রহিমাচল বিপুলা ভারতবর্ষ উজাড় করে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভর্তি করে দেবে সেটাই স্বাভাবিক।

    কিন্তু এই মেলবন্ধন কি চিরস্থায়ী? হয়ত না। পরাধীনতা তো শুধুমাত্র দেশের ওপর হয়না, আমাদের তৈরি এই চারপাশের সমাজেও যে বৈষম্যের ফল্গু স্রোত এই বিশাল ভারতবর্ষে বয়ে চলেছে তাতেও তো সংকীর্ণতায় আবদ্ধ মানুষজন। সেও তো এক অর্থে পরাধীনতা।

    কর্মসুত্রে হায়দরাবাদে দেখেছি মুসলিম মহল্লায় দারিদ্র্য কী ভয়ানক, ধর্মান্ধতার প্রকট বিস্তার। মনে হতো এও কি এক অর্থে মানুষের মননের পরাধীনতা নয়? শুধু হায়দরাবাদ কেন? মুম্বাইয়ের ধারাভির বস্তি থেকে ফরিদাবাদের ঘিঞ্জি কলোনি। চিত্রটা মোটামুটি একই। এখানে একই দেশের মধ্যে দুটো দেশ, একটির নাম ইন্ডিয়া। সে বিলাসবহুল, ঝাঁ চকচকে, ফ্যাশনেবল, ইন্টারনেট সজ্জিত। অন্যটির নাম ভারতবর্ষ, সে আজও দু'মুঠো অন্নসংস্থানের জন্য লড়াই করছে, ধর্ম, জাতপাত, কুশিক্ষার দোষে দুষ্ট। ভোটের ইভিএম বাটন টেপার সময়টুকু ছাড়া তার খোঁজ তথাকথিত "ইন্ডিয়া" রাখে না।

    এছাড়া সমাজের সর্বস্তরে মহামারীর মত ছেয়ে যাওয়া দূর্নীতির জগতের কথা আর নাই বা বললাম। সে এক হীরকরাজ্য, পাইয়ে দিইয়ে থাকার সেই ট্রাডিশনে অনেক রথী মহারথীকে স্বচক্ষে কাছ থেকে দেখেছি যাদের অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে কোটি কোটি টাকার কাটমানি এদিক থেকে ওদিক নড়াচড়া।

    তো যা হয়, "লগ্ন তো সম্রাটের হাতে, পঞ্জিকা কী কয় কী এসে যায় তাতে", যায় নি, তাই ওই পরিবেশে নিজেকে আনফিট মনে করে এক দশক আগে বিদেশ যাত্রা ছিল আমার। এদেশ ওদেশ ঘুরে শেষে অস্ট্রেলিয়া। আর ফিরে যেতে দেয়নি সে।

    ছোটবেলায় মনে আছে, হাওড়ার কারশেডে লোকাল ট্রেন ঢোকার সময় দেয়ালে বড় বড় করে লেখা থাকতো দেখতাম, "ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়"। পনেরই আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার ছুটি হয় না, আমাকেও লোকাল ট্রেন ধরে অফিস যেতে হয়। মনে পড়ে, বহুদূরে যে জন্মভূমিকে ছেড়ে কর্মভূমিতে আছি, সেই জন্মভূমির আজ জন্মদিন। দেশ তো কতই এগিয়েছে বিংশ দশকে, কত উন্নতি। কিন্তু প্রদীপের তলায় অন্ধকার? সে তো আজও আছে।

    তাই শুধু ভাবি, মানুষ তো চাইলে সব কিছু পারে, তাহলে একবার শুধু একবার "সাবিদ কর দো মেরে প্যারে ওয়াতন, ইয়ে আজাদি ঝুটা নেহি থা"।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ আগস্ট ২০২০ | ৩৫২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পার্থ সেন | 117.194.196.126 | ১৬ আগস্ট ২০২০ ০৪:৩৯96335
  • অভিবাসী ছেলেমেয়েদের লেখা পড়ে মনে হল দেশের টান একেবারে নাড়ির টান। এর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এখন যা চলছে তাতে প্রতিনিয়ত তারা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। দূর থেকে অনেক ভালো দেখা যায় । আর কষ্ট বেশি হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদের সঙ্গে দেশপ্রেম সমার্থক মনে করলে ভুল করা হবে। গোটা বিশ্ব ব‍্যাপী উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে। মানুষের গনতান্ত্রিক মননে তার আঘাত অনিবার্য ভাবেই সবাইকে বিচলিত করছে। তার প্রকাশ প্রতিটি লেখাতেই দেখা যাচ্ছে। যাদের কথা কম শুনি তাদের কথা শুনলে ভালো লাগে।

  • Mousumi pahari | 45.112.241.19 | ১৬ আগস্ট ২০২০ ১৮:০৬96362
  • বেশ ভালো লাগলো। catchline একটাই জেগে থাকলো একবার তো সাবিদ কর দো মেরে প্যারে  ওয়াতান, ইয়ে আজাদী ঝুটা নেহি থা...

  • পি.হাজরা | 2409:4061:208d:3b1d:4473:6656:d31a:5c15 | ১৬ আগস্ট ২০২০ ২২:১৪96370
  • অভিবাসী দের বক্তব্য থেকে এটা বোঝা গেল যে , উক্ত দিনটি ওনাদের কাছে গুরুত্বহীন। দেশজ বহু ব্যাপারে রাজনীতি- দুর্নীতি আছে, একথা ও সত্য। প্রশ্ন হল সেটি কোন দেশে নেই? বর্তমান দেশের স্বাধীনতা দিবসে কি এক ই ভাবনা আসে? যদি আসে তাহলে তাদের চিন্তা জগত শুধু ই কি নিজস্ব প্রাপ্তি দ্বারা পরিচালিত নয় কি? প্রিয় কে আপন করতে হলে ভালো- কালো সবটুকু নিয়েই করতে হয়-এ দর্শন ভারতীয় সাহিত্যের। ওনাদের কাছে দেশ (স্বদেশ বা বিদেশ) প্রয়োজন মাত্র, প্রিয় জন নয়। 

  • aranya | 2601:84:4600:9ea0:bd7a:1985:5e00:404d | ১৭ আগস্ট ২০২০ ০০:০০96379
  • ১৫ই অগস্ট দিনটি গুরুত্বহীন; দেশ, দেশের মানুষজন গুরুত্বপূর্ণ, আমার তো এই মনে হল
  • সম্বিৎ | ১৭ আগস্ট ২০২০ ১১:৩৯96386
  • উদয়নদার এই কথাটা একেবারে আমারও কথা - "এখনো আমার মনে হয় বিদেশে বেড়াতে এসেছি, বেড়ানো হয়ে গেলে দেশ ফিরব, স্টেশন রোডের চায়ের দোকানের টানে, অ্যাকাডেমিতে নাটকের টানে, বাংলা বইয়ের টানে।"

  • শাশ্বতী | 2406:3400:21c:7cc0:2516:c07:c01:174b | ২৮ আগস্ট ২০২০ ১১:৪২96722
  • সবার লেখার মধ্যেই আমাদের প্রবাসী মনের কথা ফুটে উঠেছে। আমরা এরকমই । ভাল কি মন্দ জানা নেই। তবে দেশ  বলতে যার কাছে যা - তাই আমরা কে মিস করি। সেটা কোন বিশেষ দিন ধরে আসে  না  ।  

  • শাশ্বতী | 2406:3400:21c:7cc0:2516:c07:c01:174b | ২৮ আগস্ট ২০২০ ১১:৫৯96723
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, নবেন্দু ভট্টাচার্য, সপ্তর্ষি রাউত , আনন্দময় ভট্টাচার্য ও উদয়ন রায় কে  অনেক ধন্যবাদ । 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন