এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • খোপ

    রৌহিন লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ আগস্ট ২০২০ | ৭৭১ বার পঠিত
  • পাঁচ হাজার বছর ধরে সে শুধু ঘুমিয়েই থাকে। সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠির জাদুস্পর্শে তার বয়স বাড়ে না। কেউ আসেনি এই পঞ্চ সহস্র বছরে, কেউ না – কোন রাজপুত্র, সওদাগরপুত্র, কোটালপুত্র, মন্ত্রীপুত্র মায় কেরাণীপুত্র – কারও ইচ্ছা হয়নি তার ঘুম ভাঙাবে। নিদ্রার মধ্যেই সে টের পায় তাদের যাতায়াত – তারা তার শরীরটাকে নাড়ে চাড়ে, দেখে, খেলা করে, তারপর চলে যায় নিজ নিজ কাজে। বেশীরভাগ তো টেরই পায় না যে সে ঘুমন্ত। অনেকে আবার জানে সেটা। কিন্তু তারাও চেষ্টা করে না ঘুম ভাঙাবার। যেন অনন্ত নিদ্রা তার। যেন তার ঘুম ভাঙালেই সৃষ্টি হবে কোন মহাপ্রলয়। সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠির অতন্দ্র প্রহরায় ঘুমিয়ে থাকে রাজকন্যা। কী তার নাম? বিদ্যুন্মালা? নাকি অ্যালিস? না আলিওনুশকা? আয়েশা? মনে নেই – তার আর মনে নেই। পাঁচ হাজার বছরের অব্যবহৃত এক নাম – কারই বা মনে থাকে? আগে তো জাগুক সে – নাম নিয়ে তারপরে ভাবা যাবে না হয়।

    “এটা খুব যা তা টাইপের লেখা হচ্ছে। নেওয়া যাচ্ছে না…”

    “কেন খারাপটা কিসে হল শুনি? খালি চুলকানি শালা!”

    “নিজেই পড়ে দেখো। এগুলো মেটাফোর? তুমি কি ক্লাস ফোর?”

    “হুঁ বুঝলাম। ক্লিশে হয়ে গেছে…”

    “বস্তাপচা ক্লিশে। এই তোমার দুর্ধর্ষ গপ্পের প্লট?”

    “আরে প্লট ঠিকই আছে – ডিজাইনটা জমছে না হে। তা এইসব বস্তাপচা ক্লিশের বাইরে কিছু ভাবলে?”

    “কী ভাবব আবার? তুমি যা ভাববে আমারও তো সেটাই ভাবনা!”

    “বা বা বা। লেভেলের খেলোয়াড় বাঁ..। সমাধান জানি না, সমস্যা খাড়া করে দিলাম!”

    “তো আমি হলাম তোমার বিবেক। তোমাকে কাঠি করাই আমার কাজ। আমি আমার কর্তব্য করেছি মাত্র…”

    “বিবেকের একশো আট বার। কাঠি করা কাজ? যখন আগের লেখাটা পর পর দুদিন তিনটে ই-ম্যাগে পাঠালাম, তখন কাঠি করলে না কেন? যখন সব বন্ধুরা পুলিশের লাঠি খাচ্ছিল আর আমি ফেসবুকে গরমাগরম স্ট্যাটাস ঝাড়ছিলাম তখন কাঠি করোনি কেন? যখন–”

    “থাক থাক। কনফিউজড ছিলাম। সব সময়ে পলিটিকালি কারেক্ট থাকা কি যায়?”

    “এবারে তুমি ক্লিশে ঝাড়ছ – স্বীকার করো তোমার হল সিলেক্টিভ কাঠিবাজি…”

    “সিলেক্টিভ তো সবাই। সিলেক্টিভ হতেই হয়। কী সিলেক্ট করছি এবং কখন, সেটা জরুরী নয় কি?”

    “এসব ইন্টেলেকচুয়াল মাস্টারবেশন বন্ধ করে কিছু সাজেস্ট করবে কি? কীভাবে এগনো যায়?”

    “হুম ভাবছি। এই রাজপুত্র, সদাগরপুত্র, কোটালপুত্র, মন্ত্রীপুত্র, কেরাণীপুত্রও এনেছ দেখছি – হুম কিন্তু এরা কেউ ঘুম ভাঙাতে পারবে?”

    “পারবে না?”

    “না। পারবে কি করে? ঘুমটা তো সিস্টেম্যাটিক – সোনারকাঠি আর রুপোরকাঠির সিনট্যাক্সে বাঁধা। ভাঙতে হলে সিস্টেমের বাইরের কাউকে লাগবে।”

    “হুম এটা মন্দ বলোনি। সিস্টেমের বাইরের কেউ – কে সে? কবিপুত্র? নাকি কোন জাদুকর?”

    “জাদুকর – সিস্টেম যে ভাঙবে সে তো এমনিতেই জাদুকর – উইজার্ড। কিন্তু কবিপুত্র কিম্বা স্বীকৃত ম্যাজিশিয়ান – তারা কি আদৌ সিস্টেমের বাইরে হে? তারা তো সিস্টেমের পোষ্য – বলা যেতে পারে এক্সহস্ট সিস্টেম। স্টীম বার করে দেওয়ার ব্যবস্থা…”

    “হুঁ। তা বটে। তাহলে? তাহলে কে?”

    “এলিয়েন আনো!”

    “এলিয়েন? ভিনগ্রহী? শেষে সায়েন্স ফিকশন লিখব – রূপকথা লিখতে বসে?”

    “না হয় লিখলে। ফিকশন মানে তো রূপকথাই!”

    “না, তাই বলে–”

    “আপনাদের দ্বারা কিস্যু হবে না– বুঝলেন? কল্পনাশক্তির বড়ই অভাব” – বাল্মিকী চমকে উঠে জানালার দিকে তাকায়। ওদিক থেকেই কথাটা শোনা গেছে – নারীকণ্ঠ! কে রে বাবা?!! কাকে বলল?

    “আপনাকেই বলেছি। আমার নাম অপরাজিতা” – জানলার ধারে বাল্মিকীর অবাক চোখের সামনে একটি যুবতীর অবয়ব ফুটে ওঠে। একটা নীল টি-শার্ট আর জিনস পরণে, মুখে খুব সামান্য প্রসাধন, হাত গলা নিরাভরণ। দেখতে সুন্দরী বলা যায় না ঠিক – তবে মুখে একটা বিষণ্ণ গভীরতার ছাপ। বাহু তার কঠিন এবং পেশল, চাহনি তীব্র।

    “আপনি, ইয়ে মানে আপনাকে তো” – বাল্মিকী একটু আমতা আমতা করে।

    “মুলতুবী থাক? একটু পরে সবই জানতে পারবেন – না জানলে গল্পটা শেষ হবে কেমন করে?”

    “গল্প মানে” —

    “আপনার গল্প। আপনি বাল্মিকী বোস এতক্ষণ ধরে যেটা লিখছিলেন – গল্পের মধ্যে গল্প, সেই গল্পটা।”

    “এটা!! এটার কথা আপনি কী করে জানলেন? কাউকে তো বলিনি এখনও!!” বাল্মিকী সত্যিকারের চমকায় এইবার।

    “জানি। কেন, কী করে সে প্রশ্নের উত্তর আমার পরিচয়ের সাথে সম্পৃক্ত। কাজেই আপনার সব কৌতুহলেরই নিরসন এক্ষুণি হবে। কিন্তু তার আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন দেখি”–অপরাজিতা মেঝেতেই বসে পড়ে।

    “প্রশ্ন? বেশ, বলুন? যদিও আপনি” —

    “গত প্রায় দশ বছর হল আপনি লেখালেখি করছেন। কী লিখলেন তাহলে এতদিন ধরে? হারমোনিটা না ধরেই কোরাসে সঙ্গত করে গেলেন শুধু?”

    “দেখুন আপনি যে-ই হোন না কেন, অনধিকারে আমার ঘরে ঢুকেছেন। একটু ভদ্রতা অন্ততঃ আশা করব”

    “হতাশ হবেন। ভদ্রতা আমি করি না কারণ আমি ভদ্র নই। আর অনধিকার প্রবেশ আমি আদৌ করিনি। আপনিই আমাকে এখানে টেনে এনেছেন…”

    “আমি টেনে এনেছি!! আপনি উন্মাদ নন তো?”

    “না। অন্ততঃ আপনাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী নই।”

    “কে বলুন তো আপনি?”

    “আমি আপনার ওই গল্পের মধ্যের গল্পের ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যা,” – ভাবলেশহীন মুখে বলে অপরাজিতা, “যার নাম বিদ্যুন্মালা নাকি অ্যালিস নাকি আয়েশা না আলিওনুশকা তা আপনার কাহিনীর কাহিনীকার ঠিক করে উঠতে পারেনি এখনও তাই তার বিবেকের সাথে লড়ে যাচ্ছে…”

    কিছুক্ষণ কোনও জবাব দেয় না বাল্মিকী। টেবিলের জিনিসপত্র নিয়ে খুটখাট করে একটু। লেখার কাগজ, পেন, টেবলল্যাম্পের সুইচ, অ্যাশট্রে, গাঁজার ঠোঙা, সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই, দু-তিনটে বই, স্কেল —

    “দেখুন আমি এখনও যেটুকু গাঁজা টেনেছি তাতে আপনার আসাটা অসম্ভব নয় হয়তো” –কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাল্মিকী বলে ওঠে, “কিন্তু সমস্যাটা হল আমি সেই রিজনিংটা করতে পারার পরেও আপনি মিলিয়ে যাননি। তাতে করে মনে হচ্ছে আপনি দিব্যি রক্তমাংসের। কিন্তু এই গল্পটা আমি নিজেই এখনও পুরোটা জানি না – কোন দ্বিতীয় ব্যক্তির পক্ষে জানাটা অ্যাকচুয়ালি অসম্ভব। কী করে জানলেন আপনি?”

    “না রিজনিং গুলিয়ে যাবার মত নেশা আপনি করেননি বাল্মিকী…” অপরাজিতার ঠোঁটে একটা অস্পষ্ট হাসির আভাষ দেখা যায়, এই প্রথম– “কাজেই সব সম্ভাবনাগুলো নেড়েচেড়ে দেখুন। ডিনায়ালে যাবেন না। আমার দাবী একই রইল – আমি রাজকন্যা, আমি অপরাজিতা। ভাবুন…”

    বাল্মিকী ভাবে না। এই অ্যাবসার্ডিটি নিয়ে ভাবতে বসলে আরও ঘেঁটে যাওয়া ছাড়া কিছুই হবে না। সে সিগারেটের প্যাকেট থেকে আরেকটা জয়েন্ট বের করে ধরায়। তারপর তাতে লম্বা দুটো টান দিয়ে সোজা হয় –

    “বেশ আপাততঃ ধরে নিই আপনার ওই দুটি দাবীই সত্য। তারপর?”

    “তারপরে তো আমার প্রশ্ন। আপনাদের ইমাজিনেশনের এত্ত অভাব কেন? কেরাণীপুত্রের পরেই সোজা এলিয়েন নামাতে হল? আর এলিয়েন মানেই ভিনগ্রহী আর সায়েন্স ফিকশন?”

    “হুঁ। আপনার কাছে বিকল্প গল্প আছে?”

    “আছে। যদিও ওটা আমার কাছে গল্প নয় – বাস্তব। কিন্তু আপনাদের–”

    “আপনাদের আপনাদের করছেন কেন বলুন তো? এ ঘরে তো আমি একাই আছি!”

    “আমিও তো আছি!”

    “ওহহ ঠিক। কিন্তু আপনি ফার্স্ট পার্সন, আমি সেকেন্ড – প্লুরাল সম্বোধনের অর্থ কী?”

    “এই দেখো – বাংলা ভাষার লেখক সমস্যায় পড়ে ইংরেজি গ্রামারে চলে গেছে। শুনুন, এই ঘরে আমি আছি মানেই আপনি ছাড়া আরও অন্ততঃ দুজন রয়েছেন – স্বত:সিদ্ধ।”

    “আপনি আমার পুরো নেশাটাই চৌপাট করে দিচ্ছেন!” বাল্মিকী এবার একটু চটেই যায়, “আরও দুজন? অন্ততঃ দুজন অর্থাৎ বেশিও থাকতে পারে?”

    “বেশি থাকবে কিনা তা আপনার ওপর। এই ঘরের লেখক আপনি। আপাততঃ তিনটে চরিত্র আপনার কলমে জন্ম নিয়েছে – ঘুমন্ত রাজকন্যা, অর্থাৎ আমি, তার গপ্পের লেখক এবং তার বিবেক – যারা আদতে এক হলেও আপনি তাদের পৃথক সত্তা দিয়েছেন। আমি আপনার সামনে আসা মানে স্বতঃসিদ্ধ যে আপনার লেখক ও তার বিবেকও সঙ্গেই এসেছেন। আমি আপনাদের সবাইকেই বলছি কারণ আমার কাছে আপনারা সবাই একই।”

    “এতটা কনফিউজড জীবনে হইনি!” জয়েন্টটা অ্যাশট্রেতে ঘষে বাল্মিকী, “আচ্ছা একটা কথা বলুন, তারা যদি এ ঘরেই থাকেন তাহলে দেখা যাচ্ছে না কেন? যেমন আপনাকে দেখছি?”

    “কারণ আমার অ্যাবসার্ডিটি অনেক বেশী। একজন রাজকন্যা, পাঁচ হাজার বছর ধরে ঘুমন্ত, বয়স তার বাড়েনি, কেউ তাকে জাগানোর সাহস করেনি – এহেন আমাকে এখানে বাস্তবায়িত হতে হলে অনেক বেশী জোরালো চরিত্র হতেই হত। সেই জোর একজন রেটোরিকাল লেখক আর তার অর্ধস্বচ্ছ ধান্দাবাজ বিবেকের চরিত্রে কী করে থাকবে? তাই ওরা ধোঁয়া হয়ে আছেন।”

    “বুঝলাম,” বাল্মিকী হাল ছেড়ে দেয়, “আজকের চিত্রনাট্য আপনার হাতে। আমি বরং ধোঁয়াশাগুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করি…”

    “বলুন। শুনছি…”

    “রাজপুত্র নয়, সদাগরপুত্র, মন্ত্রীপুত্র, কোটালপুত্র, এমনকি কেরাণীপুত্র পর্যন্ত নয়। কবিপুত্রও নয়। তবে কে?”

    “আর কিচ্ছু মাথায় আসছে না?”

    “না!”

    “অন্ততঃ এইসব কন্যাদের কথাও তো ভাবা যেত। উদ্ধারের গুরুদায়িত্ব শুধুই পুত্রদের?”

    “ওহহ কন্যারা?” বাল্মিকী এবার একটু সোজা হয়, “অর্থাৎ নারীবাদ। কিন্তু প্রশ্নটা হল, কোন কন্যা? রাজকন্যা মন্ত্রীকন্যা সদাগরকন্যারা কেউ কি সিস্টেম ভাঙতে পারেন?”

    “পারেন না।” এবার হাসিটা একটু অবয়ব নেয় অপরাজিতার মুখে, “এরা সিস্টেমেরই অংশ।”

    “কিন্তু আপনি তো ভেঙেছেন। আপনি রাজকন্যা হয়েও সিস্টেম ভেঙে ঘুম থেকে উঠেছেন – কাগজের স্তর, আপনার লেখকের স্তর ভেদ করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন!”

    “আমি রাজকন্যা নই!”

    “নন? আপনি যে শুরুতেই বললেন আপনি রাজকন্যা অপরাজিতা?!!”

    “মিথ্যা বলেছি ধরে নিন!”

    “মিথ্যা? আপনি মিথ্যা বলেছেন?”

    “বললে অসুবিধা কী আছে?”

    “আছে তো। আপনি মিথ্যাবাদী হলে আপনার অস্তিত্বের পুরো বনিয়াদটাই তো বাতিল হয়ে যাচ্ছে!”

    “তাই?” এবার স্পষ্টই হেসে ওঠে অপরাজিতা, “ব্যাখ্যা করুন। বলুন কীভাবে আমি এই ঘরে এলাম? কীভাবে জানলাম আপনার না লেখা গল্প?”

    “আমি জানি না – আপনি বলেছিলেন জানাবেন!”

    “জানাচ্ছি। কিন্তু বনিয়াদটা সত্য বা মিথ্যার ওপরে তাহলে দাঁড়িয়ে নেই – তাই তো?”

    “হুম!” বাল্মিকী আবার হেলান দিয়ে বসে, “কিন্তু রাজকন্যা না হলে আপনি তাহলে কী?”

    “রাণীকন্যা। আমার পিতা রাজা ছিলেন না। মা রাণী ছিলেন”

    “রাণীকন্যা?!! ওহহ। এটাও মিথ্যা নয় তো?”

    “তাতে কিছুই এসে যায় না। আপনার পরবর্তী প্রশ্ন বাল্মিকী?”

    “এলিয়েন মানে সায়েন্স ফিকশন নয় কেন?”

    “কারণ এলিয়েনেশন এই পৃথিবীতেই হয়!” এবার নিজের জায়গা ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অপরাজিতা, “আপনি যেমন করেছেন আপনার গপ্পে…”

    “আমি এলিয়েনেশন করেছি?”

    “করেননি? রাজপুত্র থেকে কেরাণীপুত্রের বৃত্তের বাইরে সবাইকে?”

    “এই বৃত্তের বাইরে? কে?”

    “পুরো দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ!” এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে অপরাজিতা, “যাদের আপনারা চেনেনই না। একটা ছোট্ট খোপের মধ্যে বাঁচেন, আর এলিয়েনেট করতে থাকেন – নিজেদের…”

    “আপনার ঘুম কে ভাঙাল?”

    “কেউ না। আপনার এলিয়েনরা যখন আমার জগতে যাতায়াত শুরু করল, সোনারকাঠি আর রুপোরকাঠির সিনট্যাক্স এমনিতেই অকেজো হয়ে গেছিল, কারণ তারা এই সিস্টেমে চলাফেরা করে না।” অপরাজিতা আবার ঘুরে তাকায়, জানলাটা পিছনে রেখে, “আমারই সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগে গেল যে ওটা আর কাজ করছে না। জেগেই আছি আসলে। শেষে কাঠিদুটো আমিই ফেলে দিলাম!”

    “ফেলে দিলেন?”

    “হ্যাঁ। অবান্তর। পরের প্রশ্ন।”

    “এখানে কী করে এলেন? আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি কী করে?”

    সঙ্গে সঙ্গে কোনও উত্তর দেয় না অপরাজিতা। আস্তে আস্তে আবার জানলার দিকে ঘুরে যায়। গুনগুন সুরে একটা গানের সুর ভাঁজতে থাকে। বাল্মিকী আরেকটা জয়েন্ট ধরায় কাঁপা কাঁপা হাতে – তার চোখের সামনে একটু একটু করে লেখক আর তার বিবেকের চেহারা ফুটে ওঠে। স্রষ্টা ও সৃষ্টিরা পরস্পরের মুখোমুখি হয়। দীর্ঘক্ষণ তারা দেখতে থাকে পরস্পরকে। লেখক প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করে – “বুঝতে পারলেন না বাল্মিকী? একটাই লজিকাল ব্যখ্যা!”

    “কী?” আতঙ্কিত বাল্মিকী চিৎকার করে…

    “আপনিও আমাদের মতোই, একটা দুর্ধর্ষ গল্পের প্লটের ভেতরে রয়েছেন। আমাদের আর আপনার মধ্যে শুধু একটা লেয়ারের তফাৎ!”

    ********
    গল্পটি ২০১৭ সালে 4numberplatform ই-ম্যাগে প্রকাশিত হয়েছিল
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন