এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • রণক্ষেত্রের বাইরে অথবা ভিতরে

    ইন্দ্রাণী দত্ত
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ জানুয়ারি ২০০৭ | ৮৫৭ বার পঠিত
  • 'দ্য মোস্ট ভায়োলেন্ট প্লেস অন আর্থ আউটসাইড আ কমব্যাট জোন'-অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের পাম আইল্যান্ড। ১৯৯৯-এর গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী। এখানে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস।জনসংখ্যা সাড়ে তিনহাজার চারহাজারের মত।শতকরা পঁচানব্বই শতাংশ কর্মহীন। গড়ে পনেরজন মানুষ পিছু বসত একখানি-মাথার ওপর ছাদটুকুও এতটাই অপ্রতুল।মারাত্মক সব অপরাধ ঘটে চলে প্রতিনিয়ত। বেশিরভাগই মদ্যপানজনিত অপরাধ। পাম আইল্যান্ডের ইতিহাস বিশ্লেষণ ক'রে অপরাধবিদরা এর রুগম্ভীর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন; এক কথায়, 'ডেসট্রাকশান অ্যান্ড ডিজর্গানাইজেশন অফ ট্র্যাডিশনাল সোসাইটি দ্যাট অ্যাকম্পানিড হোয়াইট সেটলমেন্ট অ্যান্ড কনকোয়েস্ট।'

    একজন বহিরাগত যেভাবে জানে, যতটুকু জানতে পারে সেভাবেই জেনেছি পাম আইল্যান্ডের গোড়ার কথা। এই দ্বীপের নামটি ক্যাপ্টেন কুকের দেওয়া; সেই সময় ওখানে থাকতেন শ দুয়েক আদিবাসী - মনবরা গোষ্ঠীর।কাছাকাছির মধ্যে ছিল মিশন বীচের সরকারী আদিবাসী প্রকল্প। একটি সাঙ্ঘাতিক সাইক্লোনের পরে সরকারের তরফ থেকে মিশন বীচের জনগোষ্ঠীকে সরিয়ে আনা হয় পাম আইল্যান্ডে।
    এরপর থেকে পাম আইল্যান্ড মোটামুটি আদিবাসীদের পেনাল সেটলমেন্ট হয়ে উঠতে থাকে - শুধু আদিবাসীরাই কেন বা ঠিক কি ধরণের অপরাধে সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে এই দ্বীপে রাখার দরকার হয়-সে নিয়ে ধোয়াঁশা রয়েই যায় যদিও।অথবা ধোঁয়াশা নয়।জানা কথা।
    এরপরে যৌনরোগাক্রান্ত এবং কুষ্ঠরোগীদের পাম আইল্যান্ডে পাঠানো শুরু হয় সরকারের পক্ষ থেকে। হ্যাঁ, শুধুই আদিবাসীদের।
    এবং তথাকথিত আরোগ্যের পরে। পাম আইল্যান্ডের ভয়াবহ অবস্থার কারণ খুঁজতে গেলে এই সামান্য তথ্যই বোধ হয় যথেষ্ট।
    অ্যাবোরিজিনাল প্রটেকশন এবং রেস্ট্রিকশন অফ দ্য সেল অফ ওপিয়াম অ্যাক্টকে শিখন্ডী খাড়া করে মানবাধিকার লংঘন হতে থাকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে চলে আসেন সরকারী আমলাগণ।এই হ'ল গোড়ার কথা।

    বছর দুই আগে, পাম আইল্যান্ডের বাসিন্দা মুলুরুনজি দুমাদগী পুলিশচৌকিতে মারা যান। ঘটনার জন্য পুলিশকে সরাসরি দায়ী করে ক্রুদ্ধ জনতা চৌকি ও সরকারী অফিসে আক্রমণ চালায়। বেশ কিছুদিন প্রচন্ড গন্ডগোল চলে।কাগজপত্রে লেখালেখি হয় প্রচুর। ভায়োলেন্স আস্তে আস্তে থিতিয়েও যায়। কিন্তু আসল লড়াইটা চলতে থাকে।কাগজের হেডলাইন না হয়ে।

    ২০০৬ শেষ হওয়ার ঠিক আগে মৃত মুলুরুনজি আবার খবরের শিরোনামে চলে আসেন।করোনার ক্রিস্টিন ক্লেমেন্টের রিপোর্টে সিনিয়র সার্জেন্ট ক্রিস্টোফার হার্লেকে সরাসরি দায়ী করা হয় আর পুলিশকে অভিযুক্ত করা হয় তদন্তে গাফিলতির জন্য।করোনার আরো বলেন, ঘটনার দিন মুলুনজি গ্রেফতার হওয়ার মত কোন অপরাধই করেন নি।
    সঙ্গে সঙ্গে কুইন্সল্যান্ডের পুলিশ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট করোনারের রিপোর্টকে মাতালের সাক্ষ্যনির্ভর বলে কড়া সমালোচনা করেন। আরো দু'কদম এগিয়ে ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশন লিয়ন ক্লেয়র বলেই দেন -এই রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সার্জেন্টের বিরুদ্ধে কোনই চার্জ আনা যাবে না।
    এইবারে প্রচন্ড গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। আদিবাসী নেতা নোয়েল পিয়ারসন আর ফেডের‌্যাল লেবার প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন মানডাইনের নেতৃত্বে বিশাল র‌্যালি বেরোয়। কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার পিটার বেটি কার্যত ঘেরাও হয়ে থাকেন।প্রথমটায় বেটি পাম আইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি মাল্টি মিলিয়ন ডলারের ডাইভার্শন সেন্টারের টোপ দেন। 'উই ডোন্ট ওয়ন্ট টু বি ব্রাইবড'-উত্তর আসে।
    এই বিক্ষোভের দিন দুই পরে পিটার বেটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক প্যাট শেনেহানকে ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশনের সিদ্ধান্তটি খতিয়ে দেখবার দায়িত্ব দেন।
    এইখানে পিটার বেটি আবার একটা চালাকি করেন। লিয়ন ক্লেয়র যখন ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশন নিযুক্ত হ'ন সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্যানেলে ছিলেন এই বিচারপতি শেনেহান-ইউন্যানিমাস ডিসিশন হয়েছিল -সেই শেনেহানকে দিয়েই লিয়নের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বিচারের দায়িত্ব দেওয়া- প্রহসনটি ধরে ফেলেন পাম আইল্যান্ডের মানুষ। শেষ খবর পাওয়া অবধি যা জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন-বেটিকে বলা হয়েছে কুইন্সল্যান্ডের বাইরের কাউকে এই তদন্তের ভার দিতে।

    সিভিল লিবার্টিস লইয়র টেরি বলছেন, 'দ্য পারসেপশন ইন দ্য আইজ অফ মেনি অ্যাবরিজিনাল কমিউনিটি ইজ দ্যাট দ্য লিগাল, পোলিস, পোলিটিকাল অ্যান্ড জুডিশিয়াল এলিট ইন দিস স্টেট আর সিম্পলি ক্লোজিং র‌্যাংকস অন দিস ইস্যু।পারসেপশন হ্যাজ বিকাম রিয়ালিটি ইন দ আইজ অফ মেনি পিপল অন পাম আইল্যান্ড অ্যান্ড ইন দ্য অ্যাবরিজিনাল কমিউনিটি: দ্যাট দেয়ার ইজ ওয়ান স্ট্যান্ডার্ড অফ জাস্টিস হোয়েন অ্যাবরিজিনাল পিপল আর অ্যাকিউজড, অ্যান্ড অ্যানাদার স্ট্যান্ডার্ড হোয়েন অ্যাবোরিজিন্স আর দ্য কমপ্লেন্যান্টস।'

    এই যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, প্রশাসন যতই অস্বীকার করুক,মুলুনজির মৃত্যুর পরবর্তী প্রতিটি ঘটনায় তা দগদগে হয়ে ফুটে বেরিয়েছে ।মুলুনজির মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযুক্ত সার্জেন্ট হারলের বন্ধু অফিসারদের। একসপ্তাহ পরেই তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন 'অ্যাক্সিডেন্টাল ফল ' থেকেই এই মৃত্যু।

    প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের পরে , এই প্রশাসনিক প্রহসনের মধ্যে দিয়েও শেষ অবধি জন হাওয়ার্ডের এই যে নির্দেশ-একটি পূর্ণাঙ্গ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ-যদিও সময় লাগল অনেক-সম্ভব হ'ল পাম আইল্যান্ডের মানুষের ক্রমাগত লড়াইএর জন্যই।
    ওঁরা এখন অপেক্ষা করছেন তদন্ত রিপোর্টের। এরপর সুপ্রিম কোর্টে যাবেন জুডিশিয়াল রিভিউর জন্য।

    এদিকে, নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হবার মুখেই গতকাল, আচমকাই মারা গেলেন বছর চব্বিশের প্যাট্রিক ব্রমওয়েল, সেদিন পুলিশচৌকিতে মুলুনজির সেলমেট। অন্যতম প্রধান সাক্ষী।গতকাল তাঁর মৃতদেহটি পাওয়া যায় বাড়ীর উঠোনের একটি গাছে । ঝুলন্ত। আত্মহত্যা?

    এই বহিরাগতর কাছে পরিস্থিতি তাই অত্যন্ত দুরূহ ঠেকে। অথচ,পাম আইল্যান্ডের মানুষ সহজেই বলেন,'উই'ল কীপ ফাইটিং দিস। ইউ হ্যাভ সীন আওয়ার কমিউনিটি। উই হ্যাভ নাথিং টু লুজ'।
    ....পাম আইল্যান্ডের আকাশে মেঘের পরে মেঘ। মাঝরাত্তিরে উঁকি দিয়ে যায় চাঁদের কাস্তে। ধারালো। শাণ পড়েছে কখন যেন। কমব্যাট জোনের' বাইরে সবচেয়ে বিপদজনক এলাকাটি রণভূমি হয়ে যায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৪ জানুয়ারি ২০০৭ | ৮৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন