এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • খেলার পুতুল কিংবা লকডাউন মনোলগ

    এমদাদ রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০১ মে ২০২০ | ২৫৬৯ বার পঠিত
  • 'কবে বৃষ্টি শেষে আমার- তোমার সঙ্গে দেখা হবে...
    মৌসুমি ভৌমিক একা একাই গেয়ে যান বৃষ্টির গান আর আমি জানলা দিয়ে দূরে, বহুদুরে, আলো-অন্ধকারে, মধ্যরাতের নিঃসঙ্গ বার্চ কিংবা ওক গাছগুলির দিকে তাকাতে তাকাতে মনে করতে চেষ্টা করছিলাম- ‘রাত্তিরে, বুনোহাঁস যখন আকাশে ওড়ে’ লাইনটি কবে কখন কার লেখায় পড়েছিলাম!
    অথচ আমার এখন মুস্তাফা সিরাজের ‘অলীক মানুষ’ নিয়ে ভাবার কথা, কিন্তু আমি কবেকার পড়া গল্পের লাইন নিয়ে ভাবছি! আর এদিকে মৌসুমী ভৌমিক গেয়ে চলেছেন বৃষ্টির গান। অথচ আমি সারাদিন ধরে ভাবছিলাম জীবন খুলে সব বনুয়া পাখি উড়িয়ে দেব আর কবি হুইটম্যানের মতো মাঝরাতে তাদের দেশান্তর দেখব…হঠাৎ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় সব কিছু যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। চার দেয়ালে থমকে গেছে সব কথা।

    এখন কে আর বৃষ্টির কথাব বলবে! মৌসুমি ভৌমিক গেয়ে চলেছেন- ভেজা আকাশ ভেজা মাটি, ভেজা পথে আমরা হাঁটি... বৃষ্টি পড়ে রে...বৃষ্টি শব্দটি এত জীবন্ত যে আমাকে এক দমকা হাওয়ার তোড় যেন আর জানলার কাছে দাঁড়াতে দেবে না। আমি যেন কার কাছে যাই। কার কথা যেন আমূল বিদ্ধ হয় প্রাণের গভীরে- বইয়ের পাতার শব্দ থেকে ছবি গড়ে তোলবার জাদুশক্তিটা আমার জীবনটাকে আমূল বদলে দিয়েছিল; স্থান-কাল-পাত্রের বেড়াজাল ভেঙে অন্য দুনিয়ার চাবিকাঠিটা ধরিয়ে দিয়েছিল আমার হাতে…
    মারিও ভার্গাস ইয়োসা! পরে জেনেছিলাম এই লেখক গাবো’র মতোই জাদুশক্তির অধিকারী।
    মুস্তাফা সিরাজ কীভাবে লিখতে পারলেন এমন এক উপন্যাস! গত রাতে এই বই পড়া শেষ হতেই প্রবল তৃষ্ণা অনুভব করেছিলাম, মনে হচ্ছিল গ্লাসের পর গ্লাস জল গলায় ঢেলে দিলেও এ তৃষ্ণা আমার মিটিবে না।

    গল্পের লোকটা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে আর ভাবছে- রাত্তিরে, বুনোহাঁস যখন আকাশে ওড়ে…। কার লেখা এই লাইন কিছুতেই মনে পরে না। আমার লেখার টেবিলে বোর্হেসের পাশে বিভূতিভূষণ, তাঁর পাশে সন্দীপন, তাঁর পাশে বাশেভিস সিঙ্গার, ও’ হেনরি...
    ভারগাস য়োসা বলছেন- 'প্রত্যেক যুগেরই নিজস্ব আতঙ্ক আছে!' একটা গভীর অসুখ, গভীর আত্মক্ষয় অনুভূত হয়। সময় বয়ে চলেছে।
    লকডাউন। লকডাউন। পল এলুয়ার স্টেশনে এই রাতে একটাও ট্রেন আসবে না? প্রলম্বিত এক হ্যুইশ্যল বাজবে না কোথাও? ঈশ্বর হে, পাশের চেয়ারে এসে বসো। দেখো, আমার মনে পড়ছে মেগাডেথ। মনে পড়ছে প্লেগ। শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু একা একা কথা বলছে। এখন হু হু বাতাস ধেয়ে আসছে কোথাকার কোন সমুদ্রবন্দর থেকে। এই এখন, আমার হাতে হুইটম্যান। মাঝরাতে, পাখিদের দেশান্তর দেখছেন তিনি। বোর্হেস মুখে রহস্যময় অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে বলছেন- বাইবেল নিজেই একটি গ্রন্থাগার!
    এই রাতও শেষ হবে! আলো আসবে। আবার উদ্ভাসিত হবে অয়াইন ওক বার্চ! উন্মুখ উন্মত্ত আমি কামু'কে পড়তে থাকি-
    পাইন গাছগুলি- হলদে পরাগরেণু আর তাদের সবুজ পাতার উল্লাস!

    আমি কোনওভাবেই আমার সংশয়গুলোকে বহন করতে পারছি না।’ আমি আমার চোখগুলোকে সব সময় খোলা রাখতে পছন্দ করি।
    সারাটা জীবন ধরে আমরা আমাদের ব্যক্তিত্বকে একটা নির্দিষ্ট আকার দিতে চেষ্টা করি। যদি আমরা নিজেদেরকে পরিপূর্ণভাবে জেনে যাই, মারা যাব।
    বিপ্লব, গৌরব, মৃত্যু, এবং প্রেম। আমার ভেতরকার সেইসব আলোঅন্ধকার, যাতে ছাপ পড়ে আছে গভীর এক বোধ, এক তীব্র সত্য; সেই দিক থেকে- কী বিশেষ তাৎপর্য আছে তাদের আমার কাছে? ‘আর সেই ব্যাপারটা?’‘কান্নার সেই প্রবল ধারাস্রোত?’ সে বলল, ‘মৃত্যুতেই আমি যার সমস্ত স্বাদকে খুঁজে পেয়েছিলাম।’
    প্যারিস- তার সমস্ত আবেগ আর কোমলতা। সেই বিড়াল, শিশু আর লোকজনের সরল ও সাবলীল মনোভাব; আর- রঙের সেই অদ্ভুত ধূসরতা, সেই আকাশ, জল-পাথরের সেই প্রশান্ত প্রদর্শনী।
    আমার তখন ফিডলারকে মনে পড়ে। ফিডলার ওন দ্য রুফের সেই অদ্ভুত লোকটা। ফিডলার। তাকে ডাকি- কোথায় হে? ভায়োলিনটা নাও। বাজাও জীবনস্রোতে উন্মত্ত হয়ে। এই শোনো, মহান চ্যাপলিন গ্রেট ডিক্টেটরের শেষ ভাষণে কী বলছেন :
    এ পৃথিবীতে সকলের জন্যই একটা করে ঘর আছে আর এই মাটিপৃথিবীর আছে এমন এক উর্বরাশক্তি যে সকলের জন্য ফসলের স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করে। নিজেকে সে সবার জন্যই উন্মুক্ত করে রেখেছে। জীবনকে যাপনের পথগুলি আমাদের জন্য কতোই না মুক্ত ছিল, আর ছিল সৌন্দর্যময়। সেই মুক্ত সুন্দর পথগুলি হারিয়ে আমরা এখন বিলুপ্তির স্মৃতিতে ভুগছি!
    আহ... চ্যাপলিন। দ্য গ্রেট ডিক্টেটর।

    গুগলে চ্যাপলিনকে খুঁজতে থাকি। মডার্ন টাইমস-এর কিছু স্টিল ছবি ভেসে ওঠে। দেখি হেলেন কেলার পরম মমতায় ছুঁয়ে আছেন চ্যাপলিনের মুখ, গুগল আরও দেখায়- আয়নার সামনে নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে অ্যাডলফ হিটলার! আমার শরীরে হিমস্রোত। মেগাডেথ! ইতিহাসের পাতা ওলটাতে ওলটাতে বোর্হেস ভাবছেন-
    পত্রিকা আমি কখনোই পড়িনি, তার একমাত্র কারণ আজকাল কী ঘটছে তার চেয়ে বরং বহুদিন আগে কী ঘটেছিল- আমার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা ছিল সেইসব ঘটনাবলীর প্রতি। এক ধরনের মানসিক বিকার। মনে আছে- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হয়, আমি ছিলাম জেনেভায়। সেখানে আমি পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসের উপর লেখা বইপত্র পড়ছিলাম। সেই সময় প্রায়ই ভাবতাম, একেবারেই সাদামাটা ছিল ভাবনাটা, আর, হ্যাঁ, বয়সও তখন চৌদ্দ কি পনেরো- আমি ভাবতাম- আরে কী অদ্ভুত ব্যাপার, সবাই যেন হঠাৎ করেই ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, ভাল কথা, কিন্তু, কী অদ্ভুত, সাম্প্রতিক ডামাডোলের ভিতর কেউই আগ্রহী নয় কার্থেজের যুদ্ধের ব্যাপারে, কিংবা কেউ আগ্রহী নয় পারসিক ও গ্রিকদের মধ্যকার যুদ্ধে কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে জানতে, কিন্তু, সবাই আগ্রহী হয়ে পড়েছেন- সাম্প্রতিক ইতিহাস নিয়ে।

    রাত শেষ হচ্ছে! মৃত্যুগন্ধা এক একটি রাতম লকডাউনে স্তব্ধ। স্তব্দ ঘুম, ওঙ্কার, সব।
    এই সময় পৃথিবীর কবিরাই কেবল মুখর থাকেন, হৃদয়ে প্রবল ক্ষরণ নিয়ে মাহমুদ দারবিস, স্মৃতিকথা লিখছেন-
    What are you doing, father?
    -I'm searching for my heart, which fell away that night.
    - Do you think you'll find it here?
    -Where else am I going to find it? I bend to the ground and pick it up piece by piece just as the women of the fellahin pick up olives in October, one olive at a time.
    কবির জার্নাল। এই জার্নাল আমাদের বিপন্ন করছে। অক্টোবরের অলিভ এক ভিন্ন অর্থ নিয়ে আসছে। বিটুইন মেমোরি এন্ড হিস্ট্রি- মাতৃভূমি। দারবিস লিখছেন-
    The map is not the answer.
    এ তো দেশহীন মানুষের কথা! বিটুইন মেমোরি এন্ড হিস্ট্রি। সুতরাং, শব্দ হে- তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা। এই যে আমরা পড়ছি, এই যে বেঁধে যাচ্ছি, এই তো জীবন, এই তো ওঙ্কার। এই তো চিৎকার।

    হিস্পানি কবি গারসিয়া লোরকা চিঠি লিখছেন তাঁর বন্ধুকে-
    ‘সব কিছুই, যা যা তুমি আমাকে বলেছ— সবই সত্য, তিক্ত সত্য। আমি বুঝতে পারছি জীবন তার শিকলগুলোকে আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। জীবন নিরুপায়। তার এমনটা করার কারণও আছে, অনেকগুলো কারণ… কিন্তু, আমার ডানাগুলি কী করুণ! আমার শুকিয়ে-যাওয়া-ছেলেবেলা কী করুণ! ...আমি এই ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছি- এখন কাজ করব কিছু গীতিকা নিয়ে, যেখানে থাকবে হ্রদ আর উপহ্রদের কথা, লিখব পর্বতমালার আত্মার সঙ্গে মিলে যাবার গীতিকা, তারকাপুঞ্জের সঙ্গে সম্পর্কিত গীতিকা; বিস্ময়কর আর খুব বলবান কাজের ভাবনা। যে-কাজকে মনে হবে একটি ফুল (খামখেয়ালি এবং নিখুঁত, একটি ফুল যেমন হয়ে থাকে), পুরোটাই সৌরভ! সুগন্ধে ভরপুর। কল্পনা করুন, হ্রদের বদলে আকাশের গীতিকা; সম্ভবত, এর চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আর কিছুই নেই। এই গ্রীষ্মে, যদি ঈশ্বর আমায় সাহায্য করেন তাঁর ছোট্ট পায়রাটির মত, তাহলে আমি জনপ্রিয় আর খাঁটি আন্দালুসিয়ান ঘরানার কিছু কাজ করতে চাই... বিষাদগ্রস্ত হয়ে আছি। একজন মানুষ প্রচণ্ড মানসিক চাপ অনুভব করছে এবং তার আছে আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা। আমি আমার মাটির কাছে ফিরবার জন্য, সেই দিনগুলিকে ফিরে পাওয়ার জন্য- বুভুক্ষু। সেইসব দিনগুলিতে তোমাদের বাড়িতে আমরা উষ্ণতা বিনিময় করতাম। তোমার সঙ্গে কথা বলবার সেই সময়টাকে স্মরণ করছি। একসঙ্গে পুরোনো দিনের হিস্পানি গান গাইবার দিনগুলিকে মনে করছি।

    ভাষার সাবান দিয়ে চোখগুলিকে ধুয়ে নাও (প্রতিদিন)। তুমি আর আমি- দুজনেই আমরা, কবি, আমাদের আনন্দে। বহুকাল আগের কবি। আমার ছবি আর পংক্তিগুলি আমাকে এমন এক আবেগের অভিঘাত দিয়েছে, এমন এক ছাপ ফেলেছে আত্মার ভিতরে,… এবং, এখনও আমার আত্মার ভিতরে জেগে আছে এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা, যেন আবারও সেই শিশুটির মত হয়ে যাই, হয়ে যাই নিরুপায়, অন্তর্মুখী। লুকিয়ে থাকি নিজেরই ভিতর। নিজেকে দেখবার আগেই আমাকে দেখতে হচ্ছে চারপাশের সমস্যাগুলিকে, দেখতে হচ্ছে অসংখ্য ফাঁদ-পাতা চোখ; মগজ আর হৃদয়ের যুদ্ধের অসংখ্য দ্বন্দ্ব আর আমার আত্মা পুষ্পিত কোনও এক সোনার বাগানে ঢুকে পড়বার পথ খুঁজছে। আমি সেই বাগানে ঢুকবার পথ খুঁজে মরছি; কারণ, আমি ভালবাসি কাগজের ফুল, ছেলেবেলার খেলা। বারে বারে ঘরের মেঝেয় শুয়ে পড়ছি, খেলা করছি শিশু বোনটির সঙ্গে (যে-আমার আনন্দ!)।
    আমি জানি না, কেন সবাইকে ছেড়ে চলে আসলাম- দিনে, অন্তত একশ বার নিজেকে প্রশ্নটি করছি। এক কুঠরিঘরের আয়নায় নিজেকে দেখছি, এবং কী আশ্চর্য, আমি আমাকেই চিনতে পারছি না। মনে হচ্ছে, আমি যেন অন্য এক ফেদেরিকো।’

    আমরা পড়ছি এইসব আর আমাদের মনে এক শিল্পী গেঁথে দিচ্ছেন এক একটি শব্দ- যুগপৎ স্মৃতি ও বেদনার। তারপর, খুঁজে দেখি, তারকোভ্‌স্কি তাঁর ডায়েরিতে শব্দের কথা লিখেছেন-
    In cinema-as in life-the text, the words, are refracted in everything apart from the words themselves. The words mean nothing- words are water.
    শব্দ তবে জল! আশ্চর্য হই। একটা নতুন আইডিয়া পাওয়া গেল জল ও শব্দের বিভ্রমে।

    শব্দের পেছনে দাঁড়িয়ে আছ তুমি। শব্দের ভেতর এতো স্মৃতি! এখন, প্যারিসে, শেষরাতের বিষণ্ণ-হলদে আলোয়, শব্দ যেন স্বপ্নের এক মহত্তম বিভ্রান্তি।
    অতিমারীর লকডাউন কতদিন পর আমাকে ফিরে দেখবার অবসর দিয়েছে। ফ্রস্টের অনূদিত কবিতার বইটিতে ধুলো জমছিল, আজ যেন বিস্মৃতির অতল থেকে হাতে উঠে এল, বইটি। ‘একটা তরুণ গাছ আঁকড়ে রইলো তার গত বছরের পাতাগুলোকে’- শামসুর রাহমানের অনুবাদে, আজ বহুদিন পর, ফ্র্রস্টের কবিতা…কবিতাটির নাম 'একটি অসীম মুহূর্ত'; না, এই কবিতাটিকেই, এখন পড়তে চাইনি, আমরা। মাঝে মাঝে আমাদের মন হয়ত তেমন একটি কবিতাই পড়তে চায় (কবিতা পড়তে-চাওয়া-মন) দীর্ঘক্ষণ, একটি দিনের শেষে আরেকটি দিনের শুরু- ঠিক এইরকম মুহূর্ত-যাপনের ভেতর, হয়ত, একটি মাত্র পঙক্তিকেই আমাদের মন খুঁজে বেড়ায়। একটু যদি আশ্রয় দেয় পঙক্তিটি, আর যখন অজানা সেই পঙক্তিটিই ডানা মেলে দেয়, তখন, ঠিক তখন জীবন নূপুর তো কোথাও না কোথাও বাজবেই! এই যেমন, ফ্র্রস্টের পঙক্তি- 'এভাবে আমরা মুহূর্তের জন্যে একটা অদ্ভুত জগতে দাঁড়িয়ে রইলাম', এরকম এক বিস্ময়ের ঘোর যে তৈরি হতেই পারে, যদি কবিতাখানির শেষ পঙক্তিটি হয় এমন- 'একটা তরুণ গাছ আঁকড়ে রইলো তার গত বছরের পাতাগুলোকে। ‘গত বছরের পাতাগুলি! এই পাতাগুলিকে আমরা কী বলব? পাতাগুলি কি স্মৃতি? আমাদের আত্মার কম্পন? এই দুটি পঙক্তি হঠাৎ, কবিতা পাঠের মাঝখানে, যেন হয়ে উঠতে চাইল এক যোগ-সেতু, যোগাযোগ- অনুভবের সঙ্গে অনুভবের। লোরকা'র 'গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতা ও গদ্য' বইয়ের একটি লেখা'র কথা মনে পড়ে গেল। লেখাটা যেন কবির আত্মার গান, একটু তবে পড়েই ফেলা যাক, ফিরে
    দেখা যাক আবার, অনুবাদের নোটবই থেকে, খুঁজেপেতে বের করা যাক আজ আবার-
    'তবে, হ্যাঁ, আজ আমি যেন দেখতে পেলাম আমার আত্মাকে! দেখলাম আমার আত্মা রূপান্তরিত হয়েছে এক ত্রি-পার্শ্বকাচে। আলোক বিচ্ছুরণে অনুভব করছিলাম গভীরতা ও দূরত্বের নিখুঁত পরিপ্রেক্ষিত আর অলীক এক মূর্তির ভয়ে শিউরে উঠা কম্পন। আরেকদিন বিকালে, সবুজাভ জলে নিজের মুখটাকে প্রতিবিম্বিত হতে দেখছি। জলের ভিতর মুখের ভাঙাগড়া। দেখে, আশ্চর্য হয়ে গেলাম! একটি স্বর্ণাভ পুচ্ছবাঁকা পাখি মৃদুতরঙ্গের জলে প্রতিফলিত পপলারে যেন উড়ে বেড়াচ্ছে। পাশের সত্যিকার গাছগুলির দিকে তাকালাম। ডুবতে থাকা সূর্যের শেষ লাল আলোয় তারা দীপ্তিমান। চোখে পড়ল অদৃশ্য কিছু হাওয়ার পাখি পপলারের পাতায় পাতায় খেলা করছে। সোনালি হাওয়ার সেইসব পাখিরা হঠাৎ কোথায় জানি হারিয়েও গেল!'
    এটুকু অনুবাদের খাতা থেকে পড়ে ফেলে, ফের, ফ্র্রস্টের, সেই দুটি পঙক্তি, আবার- 'এভাবে আমরা মুহূর্তের জন্যে একটা অদ্ভুত জগতে দাঁড়িয়ে রইলাম'; তারপর- আমরা যেন জীবনের পায়ের নূপুর শুনছি। এই নূপুর... আহা, আমাদেরই জীবন-বাহিত এক ঘোর অনুভব! তারপর- হ্যাঁ, তারপর- নীরবতা। তারপর, সেই পঙক্তিখানি- 'একটা তরুণ গাছ আঁকড়ে রইলো তার গত বছরের পাতাগুলোকে।' এইবার, পড়ে ফেলা যাক, শামসুর রাহমানের অনুবাদে, ফ্র্রস্টের কবিতাখানি-
    সে দাঁড়িয়ে ছিল হাওয়ায়, আর-ঐ দূরে
    মেপল গাছের মধ্যে প্রেত ছাড়া কী আর হতে পারে এত বিবর্ণ?
    সেখানে দাঁড়িয়ে সে বৈশাখের কথা ভাবছিল,
    এবং তবু সবটা বিশ্বাস করার জন্যে সদা তৎপর।

    'আহা এই তো পুষ্পিত স্বর্গ', বললাম আমি;
    যদি ফাল্গুনের এই শুভ্র সমৃদ্ধি
    বৈশাখের আছে বলে মনে করতে পারতাম, তবে
    এটা ফুলের পক্ষে প্রসন্ন কালই বটে।

    এভাবে আমরা মুহূর্তের জন্যে একটা অদ্ভুত জগতে দাঁড়িয়ে রইলাম,
    আমি দাঁড়িয়ে রইলাম তার মতো যাকে তার নিজের ভড়ং
    করে প্রতারণা; আর তারপর আমি সত্য উচ্চারণ করলাম (আর চলতে
    শুরু করলাম আমরা) একটা তরুণ গাছ আঁকড়ে রইলো তার
    গত বছরের পাতাগুলোকে।
    এইখানে কবিতা শেষ হতে চায়, কিন্তু, পারে না, কারণ কবিতার শেষ পঙক্তিটি জীবনকে আলিঙ্গন করেছে! গাছটি তার গত বছরের পাতাগুলিকে আলিঙ্গন করছে কিন্তু আমাদের যে 'গভীর গানের' সেই কবিকেও মনে পড়ে গেছে!

    গভীর গানের কবি গারসিয়া লোরকা কী বলে দিলেন- আজ যেন আমি দেখতে পেলাম আমার আত্মাটিকে! দেখলাম আমার আত্মা রূপান্তরিত হয়েছে এক ত্রি-পার্শ্বকাচে। আলোক বিচ্ছুরণে অনুভব করছিলাম গভীরতা ও দূরত্বের নিখুঁত পরিপ্রেক্ষিত আর অলীক এক মূর্তির ভয়ে শিউরে উঠা কম্পন... আরেকদিন বিকালে, সবুজাভ জলে নিজের মুখটাকে প্রতিবিম্বিত হতে দেখছি। জলের ভিতর মুখের ভাঙাগড়া। দেখে, আশ্চর্য হয়ে গেলাম! একটি স্বর্ণাভ পুচ্ছবাঁকা পাখি মৃদুতরঙ্গের জলের উপর প্রতিফলিত পপলারে যেন উড়ে বেড়াচ্ছে। পাশের সত্যিকার গাছগুলির দিকে তাকালাম। ডুবতে থাকা সূর্যের শেষ লাল আলোয় তারা দীপ্তিমান। চোখে পড়ল অদৃশ্য কিছু হাওয়ার পাখি পপলারের পাতায় পাতায় খেলা করছে... সোনালি হাওয়ার সেইসব পাখিরা হঠাৎ কোথায় জানি হারিয়েও গেল!' একটা খেলা শুরু হয়, তখন। মৃদু তরঙ্গে কাঁপা জলের ওপর প্রতিফলিত পপলারে সোনালি পাখিটির উড়ে বেড়ানর সঙ্গে, ফ্র্রস্টের কবিতা'র পঙক্তি এক দ্বৈত-ভাষ তৈরি করে ফেলে- 'একটা তরুণ গাছ আঁকড়ে রইলো তার গত বছরের পাতাগুলোকে' এসে মিশে গেল জলে প্রতিফলিত পপলারের ডালপালায়, যেখানে, অদৃশ্য কিছু হাওয়ার পাখি পপলারের পাতায় পাতায় খেলা করছে।

    একটা ডানামেলাপাখি হঠাৎ উড়তে শুরু করে। তারে দেখা যায় না। পাখির পায়ে নূপুর। সেই এক পাখি শত পাখি হয়। দেখতে থাকি। নোটখাতা ভরে উঠেছে এলোমেলো রেখায়। দেখি, কামু'র কিছু কথা এক কোণে লেখা। তার পাশে দেখি, আরও কয়েকটি লাইন। টমাস মানের কথা। টুকে রেখেছিলাম। মনে হয় গতবছর কিংবা মনে হয়- কবেকার টুকে-রাখা-কথা, মনে নেই তারিখ। টমাস মানের পাশে তলস্তয়। তলস্তয় বলছেন- 'শিল্প হচ্ছে অণুবীক্ষণ যন্ত্র যা হয়ে আছে শিল্পীর আত্মার গূঢ়তার উপর স্থির, আর লোকজনকে দেখাচ্ছে কেবল সেই গূঢ়তাটুকুই যা তাদের সবার বেলায় এক। এই কথা পড়ছেন টমাস মান, বলছেন তিনি- 'তলস্তয়ের শেষ জীবনের ডায়রির ভিতর ডুবে আছি। কথাবার্তা একেবারেই পছন্দ হচ্ছে না। তবে, কিছু বিষয়ের সঙ্গে সহমতও পোষণ করছি। ‘শিল্প হচ্ছে অণুবীক্ষণ’। চমৎকার।
    ফ্রস্টের দু’টি পঙক্তি আমাদেরকে নিয়ে খেলছে। আমি ফিরে যাই কামু’র ডায়েরিতে-
    'দিনের বেলা পাখিদের এমন দেখা যায় যেন তারা উড়ে বেড়াচ্ছে উদ্দেশ্যহীন। সন্ধ্যায় তাদের দেখে এমন লাগে যেন তারা আবার একটা গন্ত্যব্যর সন্ধ্যান করছে। তারা যেন কোনও একটা বিশেষ দিকে উড়ে চলেছে। হতে পারে যেন তারা জীবনের সন্ধ্যার দিকেই উড়ে চলেছে...এখানে কি জীবন-সন্ধ্যা আছে?' কামু'র নোটবুক বিষণ্ণতায় ভরে থাকে। এখানে শঙ্খ বাজে, বাজে নূপুর... ভোর!

    জীবনে অদৃশ্য ঘাতক এসেছে। কত কত মৃত্যু। জন্ম-মৃত্যুর ডুয়েল। হে জন্ম, আরও একবার মুগ্ধ করো। একটা দীর্ঘ জীবনের মত ট্রেন এসে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াক... হ্যুইশ্যল বাজুক। বর্ষিত বৃষ্টি আর শতাব্দীপ্রাচীন ধূলিবসনে আমাদের মুখ ঢেকে যাক, যেন লুকিয়ে ফেলতে পারি- কান্না। যে-কান্না মৃতদের জন্য, যাদের শক্ত হাত ধরে, ছায়ারেখায়, বর্ণমালা শেখবার আনন্দের মত আন্তঃনগর ট্রেনে দূরে কোথাও যাওয়া হবে না আর।

    গারসিয়া লোরকা তার নিউইয়র্ক যাপনের কথা বলছিলেন এক বক্তৃতায়-
    'না মেঘমালা, না অহমিকা, কোনও কিছুকে পাত্তা না দিয়ে, তোয়াক্কা না করে দালানগুলির তীক্ষ্ণ প্রান্তসীমা উঠে গেছে আকাশের দিকে। গথিক স্থাপত্যকলার এইসব কোণ আর প্রান্তসীমাগুলো যেন মৃত আর কবরস্থানের হৃদয় থেকে তরঙ্গের উচ্ছ্বাসের মত ধাবমান... না। খুব বেশি আশাবাদী হবার কোনই কারণ নেই পৃথিবীতে, আমাদের। পৃথিবী আদিম, ক্রোর।' কবি বলছেন তাঁর আত্মপোলব্ধি, লিখছেন তাঁর স্মৃতিকথায়, বলছেন বক্তৃতায়- যে-বিষয়টা উপলব্ধি করবার জন্য আর মাত্র কয়েকটি দিনের প্রয়োজন, সেই বিষয়টি হল- এই অতিকায় পৃথিবীর কোনও শিকড় নেই, এই পৃথিবী শিকড়হীন, উন্মুল আর মাত্র কয়েকটি দিন লাগবে এই বিষয়টি বুঝতে যে- দ্রষ্টা এডগার পো কেন অপার রহস্যময়তাকে আলিঙ্গন করেছিলেন আর শরীরের শিরায়- উপশিরায় যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়ার মত পৃথিবীর উন্মত্ততাকে বন্ধুর মমতাময় দৃষ্টিতে দেখেছিলেন।
    স্পেনের সান্তান্দারে, বন্ধুদের সামনে কথা বলেছেন তিনি- 'একজন পথভ্রষ্ট নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে আমি আমার শৈশবকালকে এইভাবে স্মৃতিতে জাগিয়ে তুলি।’ তীব্র হ্যুইশ্যলে স্টেশনে ট্রেন থামে... আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব জাগতে থাকে। আমি দেখি, আমাদের উঠোন জুড়ে কচ্চপেরা হাঁটছে! আর অজস্র ফোঁটার বৃষ্টি! ছোট্ট আমি, উঠোনে নেমে পড়ি। ছোট্ট কচ্চপ ধরে রাখি হাতের তালুতে। একটু দূরে, মৌটুসিদের বারান্দায় হলদে বাতি জ্বলে। সেও কি কচ্ছপ ধরেছে?
    'কবে বৃষ্টি শেষে আমার- তোমার সঙ্গে দেখা হবে...

    মৌসুমি ভৌমিক একা একা গেয়ে যান বৃষ্টির গান আর আমি মৌটুসি মৌটুসি বলে ডাকি- বহুদূর থেকে। সে কি এই লেখাটি কোনওদিন পড়বে?
    আজ, এই লকডাউনের রাতের নিঃসঙ্গ বার্চ কিংবা ওক গাছগুলির দিকে তাকাতে তাকাতে মনে করতে চেষ্টা করছিলাম- ‘রাত্তিরে, বুনোহাঁস যখন আকাশে ওড়ে’ লাইনটি কবে কখন কার লেখায় পড়েছিলাম! ব্লেকের কবিতায় না ও’হেনরি’র গল্পে? মনে করতে পারি না। বহু বছর আগে কচ্ছপগুলি এসেছিল যে বাড়ির উঠোনে, সেখানে সন্ধ্যায় বাঘের ডাক শোনা যেত! বহু বছর পর ব্লেকের কবিতাতেও সেই বাঘ ফিরে এসেছিল…

    এইসব দৃশ্য আমি মুঠোয় ধরে রেখেছি, তুমি এলেই ছেড়ে দেব!
    … …
    প্যারিস, এপ্রিল ২০২০।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০১ মে ২০২০ | ২৫৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন