এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • ছত্রিশগড় থেকে ফিরে- দ্বিতীয় পর্ব

    সিদ্ধার্থ মিত্র লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ১১৭২ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | শেষ পর্ব
    আমরা গাড়ি একজায়গায় রেখে শেষ দু মাইলের মতো কাদাভরা রাস্তায় হেঁটে চললাম। মাঝে মাঝে জলে ভরা ঐ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিলাম:"সালওয়া জুডুম শুরু হল কি করে?' কোপাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি। "ওতো আগে থেকেই ছিল। প্রথমে কিছু মানুষ নকশালদের বিরুদ্ধে ছিল। ঝগড়া হত। ওরা এককাট্টা হলে নকশালরা ওদের মেরে দিত। এতো অনেক দিন ধরে চালু ছিল।' কোপা উত্তর দিল। "এখন সরকারের মনে হয়েছে যে তাদের এইটা থেকে কিছু ফায়দা হতে পারে। তখন সরকারই এদের বন্দুক দিল, মিলিটারির মদত দিল। তারপর এই লোকেরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে থাকলো।' কেউ অবাক হতে পারেন, নকশালদের বিরোধিতা করছিল যে উপজাতীয় মানুষরা, তাদের প্রতি এমন সহানুভূতি কেন সরকারের, যদি এই নতুন মাইনিং এর স্বার্থের কথা মাথায় না থাকে। কিন্তু গ্রামবাসীরা কি এটার কথা জানে? "আর যারা জুডুমের দলে যোগ দিয়েছিল, তাদের ঘরের সবাই গাঁ ছেড়ে শহরে চলে গেল। তাদের দাদা, ভাই, বোন সবাই।' উপজাতিদের মধ্যে একটা ভাগাভাগি ছিল। সালওয়া জুডুম এটা নগ্ন করে দিল। সমাজটা এবার ভেঙে গেল ঐ ভাগাভাগির জায়গা থেকে। তুমি হয় সালওয়া জুডুম অথবা নকশাল। মাঝামাঝি কিছু নেই।

    hutsছাদহীন পরিত্যক্ত সালওয়া জুড়ুমের ক্যাম্প

    শিগ্গিরিই আমরা কয়েকটা ছাদবিহীন, ভাঙা মাটির বাড়ির মুখোমুখি হলাম। আর কয়েকবার বৃষ্টি হলেই এই মাটির বাড়িগুলো ভেঙে মিশে যাবে মাটিতে। গ্রামে ফিরে যাবার আগে গ্রামবাসীরা এই সালওয়া জুডুম ক্যাম্পগুলিতে ছিল। কোপা বলল, এগুলোর আগে ছাদ ছিল, গ্রামবাসীরা এগুলো ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার সময় এগুলোর ছাদগুলো খুলে নিয়ে গেছে। যদিও আমি তখনও ভাবছিলাম, কীভাবে এখানে মানুষ থাকতে পারে! "ছাদগুলো টিনের ছিল'- কোপা বলল। ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয়রা খড়ের ছাউনি দেয় ঘরে। "প্রথমে যখন গ্রামবাসীরা ঘর ছেড়েছিল, ওরা দূরের একটা ক্যাম্পে গেছিল। তারপর গ্রামে ফেরার কিছু আগে তারা এই ক্যাম্পে আসে। যেহেতু এটা গ্রামের অনেক কাছে। "ডানদিকে আরো এরকম ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল। আর কী আশ্চর্য, ওখানে একটা ছাদওয়ালা ঘরও রয়েছে, এখনো কেউ আছে ওখানে। আমি কোপাকে জিজ্ঞেস করতে বলল, "হয়তো ওর এই ঘরটা ওর ক্ষেতের পাশেই, তাই এখানে রয়ে গেছে'। তাই কি? না কি ওরা গ্রামে সমাদৃত নয়, তাই?

    kopa meets mundar
    কোপার সাথে গোন্ডীদের দেখা


    গ্রামে ঢোকার ঠিক আগে একদল গ্রামবাসীর সাথে দেখা হল, যাদের কোপা চেনে। কোপা নিজেও একজন গোন্ডী এবং সম্ভবত এদের পরিজন। কিন্তু তাদের সাথে ওর সাংস্কৃতিক বিরোধ সহজেই বোঝা যায়। কোপা পড়ে আছে টি শার্ট, প্যান্ট, ঘড়ি। ওরা খালি পা, ঐতিহ্যগত পোষাক। ওরা কোপাকে দেখে উদ্বেলিত, তাতে কোনও লুকোছাপা নেই। আমি গোন্ডী বুঝি না, কিন্তু তাদের উচ্ছ্বাসটা বুঝতে পারছিলাম। আর কোপা, শহরের আর পাঁচটা লোকের মতই, অনেক সংযত। ওরা কথা দিল, গ্রামের সব লোককে ডাকবে, যাতে আমি তাদের সাথে কথা বলতে পারি। গ্রামে ঢোকার মুখেই একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিং নজরে এল। দাঁড়িয়ে আছে শান্তি চিহ্ন হয়ে। কোপা না বললে বুঝতেই পারতাম না ওটা ছিল একটা স্কুল। কয়েকটা গরু ঘাস খাচ্ছে, আর এমন ভাবে দলবেঁধে, যেন মনে হচ্ছে যে তারা স্কুলের ঘন্টি শুনে এগোচ্ছে স্কুল ঘরের দিকে। "জুডুম এখানে স্কুল খুলতে দেয়নি। বলেছে, বাচ্চারা ক্যাম্পে স্কুলে যাবে। তাই এখন স্কুল বন্ধ' -কোপা বলল।

    school
    পরিত্যক্ত স্কুল


    সালওয়া জুডুম মানে কেবল গ্রামবাসীদের গাঁ ছাড়িয়ে ক্যাম্পে তোলা নয়। এর মানে একটা নতুন নির্দেশতন্ত্রের জন্ম। যদিও ভারতের ৬০ শতাংশ লোক চাষি, আদিবাসী বা কৃষি শ্রমিক, তাদের জিডিপিতে ভাগ মাত্র ২৬ শতাংশ। নতুন নির্দেশতন্ত্রে যখন বেশিরভাগ মানুষ শহরে থাকবে, আর বিভিন্ন শিল্পে, খনিতে কাজ করবে, তখন সে অর্থনীতির একটা মানে থাকবে। রাষ্ট্রের কি এই মতলবও ছিল, যখন সে সালওয়া জুডুম তৈরি করছিল? চাষবাস ও গরু ছাগল পালপোষ করা ছাড়াও গ্রামবাসীরা নির্ভর করে আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপর, যেমন স্কুল, অঙ্গনওয়ারি, গ্রাম পঞ্চায়েত। জুডুম চেয়েছিল, ক্যাম্পেই এই প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তুলতে। জুডুমের খুব ইচ্ছাও ছিল না, গ্রামবাসীরা ফিরে আসার পর গ্রামের অবস্থা স্বাভাবিক হোক। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তারা এটা আটকাতেও পারছিল না। না কি অন্য কোনও কারণ আছে, স্কুলটা না খোলার? স্কুল বাড়ির লাগোয়াই স্কুলের শিক্ষকের বাড়ি। বড় বাড়ি। বাড়ির সামনের দিকটায় একজন, বোধহয় ছেলে, কাঠের কাজ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, স্কুল কেন বন্ধ? সে বলল "এর মধ্যে অনেক কিছু ব্যাপার আছে। ফিরে আসবেন যখন, তখন এখানে আসবেন, বলব।' জুডুম চাইছে না বলেই কি স্কুলটা খুলছে না? নাকি এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে, শিক্ষক মশাই বুঝে উঠতে পারছেন না, তিনি কোন পক্ষ নেবেন, তাই খুলছে না স্কুল?

    আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামে গিয়ে উঠলাম। মনে হল যেন আমাদের কেউ সময় ঘড়িতে হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এক ভারতীয় শহর থেকে এই গ্রাম ২০ কিমির মধ্যে। ঘরগুলো চিরাচরিত গ্রামের বাড়ি। মাটির। খড়ের ছাউনি। একটা বাঁশের ঝুড়িতে কিছু মাশরুম আর ছোট শুকনো মাছ নজরে এল। কিছু খরগোশ ধরার ফাঁদ এদিকে সেদিকে। এক বয়স্কা মহিলা কাঠের জ্বালে রাঁধছেন কিছু। সব মিলিয়ে কিছু পরিষ্কার গ্রামের বাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন গ্রামের মানুষ, গ্রামের মোড়ল সহ এই বাড়ির দাওয়াতে চলে এল। দুপুর গড়িয়ে গেছে তখন। দূরের পাহাড়ের ছায়া গ্রামের দিকে এগোচ্ছে। কোপা দোভাষির কাজ করছিল। আমি মোড়লকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক কী ঘটেছিল এখানে। "এক দিন জুডুম এল। গ্রামের কিছু লোককে মেরে দিল। আমরা ওদের পুঁতে দিয়ে পালিয়ে গেলাম'। একদম এই রকম।

    father killedজুড়ুম এর বাবাকে খুন করেছে

    জ্যান্ত, শ্বাস নেওয়া মানুষ মিনিটের মধ্যে মাংসের টুকরোতে পরিণত। "কত জন মারা গে¢ছল? কারা ছিল তারা?' আমি জিজ্ঞাসা করলাম। সে নাম বলতে শুরু করল, আমি কোপাকে আমার ছোট্ট নোটবুকে লিখতে বললাম নামগুলো।

    বাধক, চাল্ল।ু পঞ্চক এরা সেই মানুষগুলো, যাদের দিনের বেলা টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছিল। স্তূপে পরিণত হয়েছিল, এবং ঝেঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোনও চিহ্ন রাখা হয় নি। খুব বেশি হলে হয়ত তাদের স্মরণে কিছু পাথর রাখা হয়েছিল কোনও মাঠে। গোন্ডীদের স্মৃ¢তعম্ভ গুলো কখনো কখনো বেশ জমকালো হয়। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে এদের জন্য গ্রামবাসীরা ওরকম সাজানোর কিছু পেয়েছিল কিনা। তালিকা চলছিল। কিন্তু লেখার জন্য আমার কাছে আর কাগজ ছিল না। "এদের নামে কোনও এফআইআর করা হয়েছে?' আমি জিজ্ঞেস করলাম। বৃথা আশা। মোড়ল আমার দিকে ফাঁকা চোখে তাকিয়ে রইল। আরে তোমার কি মাথা টাথা খারাপ? কয়েকদিন আগে স্থানীয় সাংসদ বলিরাম কাশ্যপের বড় ছেলে তানসেন কাশ্যপ (২৫) তার গ্রামে মন্দির থেকে পূজো দিয়ে বেরনোর সময় মাওবাদীদের গুলিতে মারা যায়। তার ভাইয়েরও গুলি লেগেছিল। ভারতীয় মিডিয়া খাড়া হয়ে উঠেছিল এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পরিবেশন করতে। একই রিপোর্ট প্রায় সবকটা কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। অনেক রিপোর্টেই উল্লেখ ছিল, বলিরাম কাশ্যপ এবং তার পরিবার সালওয়া জুডুমকে খোলাখুলি সমর্থন করত, "সালওয়া জুডুমের লক্ষ্য বস্তার থেকে মাওবাদীদের তাড়ানো, যেখানে ঐ বামপন্থী জঙ্গীরা ১৯৮০র দশকের শেষ থেকে কব্জা রেখেছে', বলেছে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট। মিডিয়া কি এখনো বুঝতে পারছে না? এবছরের প্রথম দিকে সুপ্রিম কোর্ট সালওয়া জুডুমকে বেআইনি আখ্যা দিয়েছে। এমনকি ছত্রিশগড় সরকারের নিজের প্রশাসন বলেছে জুডুম হিংসা এবং বহু মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনার সাথে যুক্ত। যে দৈত্য তারা তৈরি করেছে, এখন তা তাদের হাতের বাইরে। সালওয়া জুডুম যদি আর কিছু করে থাকে, তবে তা হলো সে নকশাল আন্দোলনকে শক্তিশালী করা - যার ফল এখন সবাই টের পাচ্ছে।

    fir
    জুড়ুমের হাতে মৃত 'নক্সাল'দের লিস্ট

    অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, তানসেন কাশ্যপের খুনীরা সাইকেলে করে পালিয়েছে। দিনে দুপুরে। গ্রামের মধ্যে। গ্রামের রাস্তা খুব পরিষ্কার নয়। কীভাবে সেখান থেকে কেউ পালাতে পারে খুব দ্রুত তা বুঝে ওঠা মুশকিল, সম্ভব কেবল তাদের কেউ তাড়া না করলে। তারা হয়ত হেঁটে হেঁটেও পালিয়ে যেতে পারত। এটা কেবল একটা খুন নয়। এটা জনসমক্ষে চরম শাস্তি দেওয়া। সবার সামনে, হয়ত সবার হাততালির মধ্যে। তাই যখন হত্যাকারীরা চলে যেতে চায়, তখন তাদের কোনও কসরত করতে হয় না। সালওয়া জুডুম আতঙ্ক তৈরি করেছিল। যদি তুমি তাদের পক্ষে থাকো এবং তোমার সঙ্গে মিলিটারি না থাকে, তাহলে গ্রামে তোমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। এবার ভাবো, কতগুলি সংবাদপত্র চাল্লুর মৃত্যুর খবর করেছিল? পাঁচ? দুই? এক? যদি বলি কেউ না?

    ঠিকই তো! আরো কত বড় বড় ঘটনা ঘটছে তখন দেশে! আমীর শাহ্‌রুখের সম্পর্কে নিজের বক্তব্য নরম করেছেন। বলিউডের দুই তারকার মধ্যে সন্ধি হতে চলেছে। সেনসেক্স, দেশের স্টক মার্কেটের সূচক, এই সবে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তার ওপর চাঁদে মানুষ পাঠানোর কথা চলছে। হয়তো ভারত সামনের বছর আইপিএল এর ২০/২০ ক্রিকেট খেলার হোস্ট হবে। চাল্লুর মৃত্যু সে তুলনায় কোন জরুরী খবরই নয়। হয়তো কোন খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় লেখা হয়েছে "দান্তেওয়াড়ার কাছে কোনো গ্রামে কয়েকজন নকশালের মৃত্যু'। এই নকশালদের কোন নাম থাকেনা। এসবই মিলিটারির সাথে মুখোমুখি লড়াই। নকশালদের খুঁজতে যখনি জুডুম কোনো মারদাঙ্গা চালায়, মিলিটারি তার সাথে জুটে যায়। পুলিশ ফাইল কি নিয়ে দাখিল হবে? একজন উগ্রপন্থীর মৃত্যু নিয়ে? কোন মতেই নয়। এখানে তো কোন অপরাধ হয়নি। একজন দেশের শত্রু মারা গেছে শুধু। তো পুলিশ ফাইল হবে কিসের জন্য? এইই কাগজে কলমে এফআইআর। এই যে আমি নোটপ্যাডের কাগজে ওদের নাম লিখে নিচ্ছি, এটুকুই হলো কোন লিখিত নথি। তার ওপর আবার নোটপ্যাডটা বেশি বড়ও নয়। কটাই বা আর নাম লেখা যায় এতে?

    নামগুলো দেখতে দেখতে আমি শিউরে উঠলাম। লোক গুলো মরে গেছে। মানুষ। এই আমি যাদের সাথে কথা বলছি তাদের মতই। এদের মেরে ফেলা হয়েছে, বেশি দিন হয়নি, বেশি দূরেও ঘটেনি ঘটনা গুলো। হয়তো এমনিই একটা দিন ছিলো সেদিনও।

    চাল্লু, চাল্লু, তুমি কি ভেবেছিলে জীবনটা শুধুই হাসি-খেলা? তুমি গান গেয়ে, ব্যাঙের ছাতা তুলে আর পুতুল, গয়না গড়ে কাটিয়ে দেবে? তুমি কি জানো মধ্যপ্রদেশের কত বীর সন্তান ভারতে মুখ উজ্জ্বল করার জন্য প্রাণ দিয়েছে? তুমি যদি আমাদের চাঁদে লোক পাঠানোয় সরাসরি কোন সাহায্য না করতে পারো তো অন্তত রকেট, স্পেসশিপ বানানোর জন্য যা যা লাগে তা খনির তলা থেকে মাটি খুঁড়ে বার করতে তো পারতে? আমরা একটা দল। এটা তো তোমার ভালো করে জানা উচিৎ ছিল। অন্তত তোমার বাপ-দাদাদের জানা উচিৎ ছিল। অনেক আগেই তাঁদের শহরে চলে যাওয়া উচিৎ ছিল। দেখ, হয় তুমি প্রগতির পক্ষে, নয় বিপক্ষে। যদি পক্ষে হও তাহলে যারা অর্থনৈতিক গৌরবের জন্য এমন ঝলমলে রাস্তা গড়ছে তুমি তাদের দলে। তাদের সাহায্য করার জন্য যদি তোমাকে দিনে ষোল ঘন্টা খনির বা মেরামতির কাজ করতে হয় তো তাই সই। যদি বিপক্ষে হও তো তুমি দেশের শত্রু। তোমাকে মরতে হবে। চাল্লু, তুমি ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থেকে গেছিলে। কিছু করার নেই।

    মোড়লের নাম বলা হয়ে গেছিলো। খুব বেশি আর কিছু বলার বাকি ছিলোনা। আমি একটু দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম "তা এটা হবার আগে গ্রামে কেউ নকশালদের সাহায্য করত?' আমার মনে হয়েছিল হয়তো কোন নাজুক প্রশ্ন হয়ে গেল। কিন্তু ওরা নির্দ্বিধায় চট্‌পট উত্তর দিল। একজন বললো "হ্যাঁ, করত তো। কয়েকজন তো নকশালদের চাল দিয়েছে'।

    "কয়েক জন'? মনে হয় না। গ্রামের বেশির ভাগ লোকই কি আর দেয়নি? কিন্তু কাকেই বা দোষ দেওয়া যায়? নকশালরা বন্দুক নিয়ে এলে ওরা না বলবে কি করে? কি দিয়ে ওরা নিজেদের বাঁচাবে বন্দুকের হাত থেকে? খরগোশ ধরার ফাঁদ না মাছ ধরার জাল? আর সাহায্য করবে নাই বা কেন? এমনিতে তো সরকারের সাথে এদের সম্পর্ক হয় শুধু ভোটের সময়ে। ওরা বলছিল কি রকম ভোটের সময়ে পুলিশ এসে ওদের ট্রাক বোঝাই করে পোলিং বুথে নিয়ে যায়, ভোট দেবার জন্য। যতই হোক গণতন্ত্র তো আজও আছে। আর এই নকশালরাই যা ওদের জন্যে কিছু করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। ওদের জন্য লড়াইও করেছে হয়তো কখনো কখনো।

    কাজেই হ্যাঁ, সমর্থন করেছে ওরা। এই নকশাল অঞ্চলের মধ্যে, মধ্যে কেন এর বাইরেও হয়তো, এমন একটা গ্রামও খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে সমর্থন করেনি কেউ। আর এখন এটাই হবারই কথা। গ্রামের সবাইই ওদের সমর্থন করবে। কয়েকজন হয়তো মারা গেছে, কিন্তু বাকিরা তো আশেপাশেই আছে। যারা মারা গেলো তাদের বাচ্চাদের কথা ভাবো। ওরা তো কোনো দোষ করেনি, শুধুশুধু জঘন্য নিষ্ঠুরতার শিকার হলো। যখন বড় হবে, তখন কাকে সমর্থন করবে ওরা, বলো?

    যখন সূর্য ডুবছে, আমরা দান্তেওয়াড়ায় ফিরে এলাম। যাবার আগে কোপা বলল কাল খুব সকালে লিঙ্গগিরি যাবার জন্য বেরোতে হবে। সাড়ে ছ'টার বেশি দেরি হলে হবেনা।

    উল্লু, চাল্লু,বন্ধক.......লোক গুলো জানলোও না কিসের জন্য ওদের মরতে হলো। নগণ্য লোক সব, নাম গুনে আর কি হবে?

    আমি মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙলো দেখি আকাশ ফিকে হয়ে এসেছে। স্নান করে তৈরী হয়ে নিলাম। নীচে এসে দেখি কোপা বাইরে অপেক্ষা করছে। ওর বাইকে উঠে বেরিয়ে পড়া গেলো তখুনি।

    রাস্তার অবস্থা যা তা! কাদা আর নুড়ি পাথরে ভর্তি। এমন উঁচুনীচু যে আমার মাথা থেকে তখন আইইডির চিন্তা গায়েব হয়ে গেছে। আর ঐ কাদা আর গর্তের মধ্যে কোপা এত জোরে চালাচ্ছিলো যে আমার তো ভয় হচ্ছিলো এই বুঝি হুমড়ি খেয়ে পড়ব! মাঝেমাঝে আলকাতরা দেওয়া একটু রাস্তা ছিল। তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচছিলাম!

    মাঝে চা খাবার জন্য একবার বৈরামগড়ে একটুখানির জন্য দাঁড়ানো হয়েছিল। আর তেল ভরার জন্য বিজাপুরে। বিজাপুরের পর থেকেই শহর ছেড়ে গভীর বনের রাস্তা ধরতে হবে। দেখলাম ওখানে পেট্রলের ওপর খুব কড়াকড়ি। একেক বারে দু লিটারের বেশি নেওয়াই যাবেনা। পরে শুনেছিলাম যে বিজাপুরে খাবারের র‌্যাশনও আসে বাইরের থেকে। তার মানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলে গভীর বনের ভেতরে লোক গুলো খাবার দাবার, তেল, জ্বালানী, কিচ্ছু পাবেনা।

    talking headman

    লিঙ্গগিরি গ্রামের মোড়লের সাথে কথোপকথন


    লিঙ্গগিরি যাওয়ার পথের শেষ অংশটুকুতে ছ'টা মিলিটারি চেক পয়েন্ট রয়েছে। ছ'নম্বর চেকপোস্টের পর আমরা প্রথম গ্রামটায় গিয়ে উঠলাম। কয়েক কিমি পরপরই এখানে অনেকগুলো গ্রাম রয়েছে। মোড়ল এবং গ্রামবাসীরা এখানে জড়ো হল, আমরা যাওয়ার পর। মুন্দেরে যেমন দেখেছিলাম, মেয়েরা, বাচ্চারা এবং এবং পুরুষরা আলাদা আলাদা জটলা করে দাঁড়িয়ে গেল। এখানকার গল্পটাও গতকালের মতই। মোড়ল হিন্দি বলতে পারে, আমায় বলল,"নকশালরা আগে থেকেই আসত। ওরা ওদের নাচ করত। মিলিটারি কিছু বলত না।' শেষ চেকপোস্ট আর এই গ্রামের ভেতরের রাস্তাটা একই। একটা নদী আছে চেকপোস্ট আর গ্রামের মাঝখানে। চেকপোস্টে যে সেϾট্র বসে আছে সে সহজেই অনেক দূর পর্যন্ত এই রাস্তায় নজর রাখতে পারে। তাহলে কেন নকশালরা অনেকদিন ধরে আসা সত্ত্বেও এবং প্রহরীর চোখের সামনে দিয়ে তাদের নিজস্ব নাচ করা সত্ত্বেও মিলিটারি এতদিন কিছু বলে নি? কেনই বা হঠাৎ কয়েক বছর আগে তাদের এই মত বদল? মুন্দেরের চেয়ে এখানে অন্তত লোকে একটা বাছাবাছির সুযোগ পেয়েছিল। মোড়ল বলে,"জুডুম প্রথমে আমাদের গ্রামে এসে বলল, ক্যাম্পে চলো গ্রাম ছেড়ে। আমরা যাইনি। কিন্তু হঠাৎ নকশালদের সঙ্গে আছে বলে যখন গাঁয়ের কিছু লোককে মেরে দিল, তখন আর আমরা কিছু ভাবতে পারলাম না। একদিন জুডুমের অনেক লোক এল। ওদের সাথে ছিল পুলিশ, সিআরপিএফ। কিছু লাশ রাস্তায় পড়ে গেল। আমরা তাদের সমাধি দিলাম। তারপর ঐ দিনই আমরা সবকিছু নিয়ে গাঁ ছেড়ে ভেগে পড়লাম।' জুডুম গাঁয়ের সব ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল তার পর। খড়ের চালা পোড়ে ভাল, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। "তো আপনারা কোথায় গেলেন?' আমি জিজ্ঞেস করি। "আমরা অন্ধ্রপ্রদেশ চলে গেলাম। ওখানে আমাদের কিছু আত্মীয় আছে।' "কী কাজ করতেন ওখানে?' "আমরা মাটি খোঁড়ার কাজ করতাম। কুলীর কাজ করতাম। মাসে তিনশো থেকে পাঁচশো টাকা আয় হত। ঐ দিয়েই ভাড়া আর খাবার কিনতে হতো, কিছুই বাঁচতো না। তাই ভাবলাম, মরে গেলেও গ্রামে ফিরে আসব।' "আর ভিসিএ (বনবাসী চেতনা আশ্রম, ঐ গ্রামে গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনের সহায়তাকারী সংগঠন)-এর কথা কোথা থেকে শুনলেন?' "আমরা ওদের লিখেছিলাম, আমরা গ্রামে ফিরতে চাই। ওরা বলল, আমাদের সহায়তা করবে। তাই আমরা ফিরে এলাম।' "তো এখন গ্রামে থাকতে তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না?' আমি জিজ্ঞেস করলাম। "হ্যাঁ, এখন চলে তো এসেছি। কিন্তু আমাদের সব গাইগুলোতো চলে গেছে। তার ওপর এবছর বৃষ্টিও হয়নি, আমরা কিছু করতে পারছি না।'

    vca
    ভিসিএ হাট


    সালওয়া জুডুমে অনেক উপজাতীয় মানুষ আছে। একটা গ্রাম খালি করার পর তারা প্রায়শই গরু-টরু সব মেরে খেয়ে নিত। এই মানুষেরা পুনর্বাসনের কাজে সহায়তাকারী গোষ্ঠীগুলির রেশনের ওপর বেঁচে আছে। এর মধ্যেও ওরা আমাদের দুটো খেতে দিল। মুড়ি আর নারকেল। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল এই হাভাতে মানুষগুলোর কাছ থেকে খাবার নিয়ে খেতে। কিন্তু গাঁয়ের লোক নিজে না খেয়েও অতিথিকে খাওয়াবে। এক বাপ-মা মরা মেয়েকেও দেখলাম এখানে। তারা বাবা হিংসার শিকার। মুন্দেরের অভাগী বাচ্চাদের মতো এও বুঝতে পারছে না, কেন সে এখন সকলের নজরের কেন্দ্রে। দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা ঠিক করলাম, লিঙ্গাগিরির মূল গ্রামটায় যাব, এখান থেকে দু কিমি দূর। মাঠের মধ্যে রাস্তা আর নেই। এক এক সময় আমি বাইক থেকে নেমে পড়ে জলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম আর কোপা বাইক নিয়ে ওপারে গিয়ে অপেক্ষা করছিল। এই গ্রামের লোকেরা আমাদের দেখে খুব খুশি। ভিসিএ এখানে অনেকটা পুনর্বাসনের কাজ করেছে। গ্রামের কেন্দ্রে রয়েছে একটা বড়ো কুঁড়েঘর, সেখানেই জমা থাকে ভিসিএ-র সরবরাহ করা রেশন এবং অন্যান্য সামগ্রী। গ্রামের লোকেরা দ্রুতই জড়ো হয়ে গেল। লোকে এটাকে ভিসিএ-র মিটিং হিসেবেই ভেবে নিয়েছে। ভিসিএ এবং
    এএসডিএস (এগ্রিকালচার অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) এই গ্রামে অনেকগুলি স্বাস্থ্যপ্রকল্প চালু করেছে। চাষিরাই সম্প্রতি চাষিদের শেখাচ্ছে ধান বোনার নতুন পদ্ধতি। এই গ্রাম আরো ভয়ানক অত্যাচারের সাক্ষী। লিঙ্গাগিরির অন্যান্য গ্রামের মতই, এদেরও বলা হয়েছিল গ্রাম ছেড়ে ক্যাম্পে যেতে। যখন তারা শুনলো না, জুডুমরা মাঝেমধ্যেই এসে এলোপাথাড়ি পেটাতে লাগলো, কখনো কখনো চাষের কাজের সময়েও। এক বয়স্কা মহিলা শোনাচ্ছিলেন, কীভাবে তিনি কাঁধে পিঠে বারবার লাঠির বাড়ি খেয়েছেন। তিনি হয়তো এখনো সে মারের চিহ্ন শরীরে বহন করছেন, কিন্তু তিনি লজ্জা পাওয়ায় আমি আর দেখাতে জোর করিনি। তারপর একদিন জুডুম এলো দলে ভারী হয়ে। কয়েকশো জুডুম, পেছনে পুলিশ মিলিটারি নিয়ে এসে কাজ সেরে ঘরের দিকে আসা চারজন গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হলো। তিনজন পুরুষকে তারা কেটে ফেলল। আর একজন ছিল মহিলা, তাকে ধর্ষণ করে ছুরি বসিয়ে দিয়ে মেরে ফেলল। আমি গতকাল হিমাংশু কুমারের (ভিসিএ-র প্রাণপুরুষ, দান্তেওয়াড়ায় থাকেন) ঘরে মৃতদেহের ছবি দেখেছি। উনি আমাকে ছবিগুলি দেখিয়েছিলেন, দেখিয়েছিলেন তিনি কি কি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, বা শুরু করার চেষ্টা করেছেন। ছবিগুলিতে শরীরগুলি পচনের বিভিন্ন মাত্রায় রয়েছে। মহিলার শরীরটা পচে গলে পড়তে শুরু করেছে, কিন্তু তাকে তবুও চেনা যায়। তার পেটের একটা ক্ষত থেকে তার অন্ত্রটা বেরিয়ে আসছে। কোনও কেস করা যায়নি। মৃতরা নকশাল, পুলিশ দাবি করে। সংঘর্ষে মারা গেছে। আর প্রমাণ কোথায়? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যদি বা কোনও প্রত্যক্ষদর্শী থেকে থাকে তো সে রয়েছে সালওয়া জুডুম ক্যাম্পে। আমি ওদের দেওয়া সাক্ষ্যগুলো দেখেছি। প্রতিটা সাক্ষ্য হুবহু এক। এটা নকশালদের কাজ। সালওয়া জুডুম আমাদের বাঁচাতে চেয়েছিল, মৃতেরা নকশাল এবং দোষী। প্রতিটা বন এক, শুধু সাক্ষীর নাম, মৃতের নাম, আর ঘটনার অকুস্থল আলাদা। এবং সাক্ষী যদি গ্রামেই থাকে, এবং কথা বলতে উৎসাহী হয়, তবে তার বয়ান বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ তারা সবাই নকশাল বা নকশালদের সহমর্মী। তুমি ক্যাম্পে থেকে তো আর জুডুমের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে না।

    girl father killed

    এই মেয়েটির বাবা খুন হয়েছেন, লিঙ্গগিরি


    ভাবছিলাম যে মারা যাবার ঠিক আগে এই মহিলার কেমন লাগছিলো। উনি যদি সত্যিই একজন নকশাল হয়ে থাকেন আর সত্যিই যদি এটা পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় তাহলে নিশ্চয়ই খুব নাটকীয় ভাবে হয়েছিলো। মনে হয় উনি নিজেই নিজের কাপড়চোপড় কুটিকুটি করে ছিঁড়েছিলেন। আর পেটের ডানদিকে যেখানে গুলি লেগেছিলো সেই গর্ত দিয়ে নিজেই নিজের নাড়িভুঁড়ি টেনে বার করে এনেছিলেন। বন্দুকটা (যদি আদৌ থেকে থাকে) তো নির্ঘাত সেটাকে মরার আগেই দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে এসেছিলেন, কারণ আশপাশে কোথাও সেটা দেখা গেলনা। হ্যাঁ, সরকারী বিবৃতি মানলে এটাই সত্যি বলে ধরে নিতে হবে। আর যদি ভাবেন যে ওঁকে আগে ধর্ষণ করে তারপর ছোরা মেরে খুন করা হয়েছিলো, তাহলে অন্য কথা। সব হিসেব তাহলে মিলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। হ্যারল্ড পিন্টার যেমন বলেছিলেন "কিছুই হয়নি। কোন দিনই কোন কিছু হয়নি। এমনকি যখন হচ্ছিলো তখনও আসলে তা হয়নি। এতে কারু কোনো উৎসাহ নেই,কাজেই মরুক গে! কিচ্ছু যায় আসেনা।'

    গ্রামের লোকদের সাথে কথা হয়ে গেলে আমি উঠে একটু চারপাশটা ঘুরে দেখছিলাম। কোপা ওদের সাথে মিতানিন প্রকল্প নিয়ে কথা বলছিল। মহিলাদের স্বাস্থ্য আর চিকিৎসা নিয়ে এই প্রকল্প, সাহসী ডাক্তারবাবু, ড: বিনায়ক সেন শুরু করেছিলেন। ড: সেন সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ। আদিবাসী মহিলাদের চিকিৎসা নিয়ে উনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই প্রকল্পটা দাঁড় করিয়েছেন। ডাক্তারবাবু দু বছর জেলে থাকার পরে এই বেরিয়েছেন। ওঁর অপরাধ? সালওয়া জুডুমের কীর্তি-কলাপ উনি ফাঁস করে দেবার মত ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলেন। আর তার ফলে সুপ্রীম কোর্টের রায় ঘুরে গেছিলো। জুডুমকে বে-আইনী ব'লে ঘোষণা করা হয়েছিল।

    (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

    ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | শেষ পর্ব
  • ধারাবাহিক | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ১১৭২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন