শম্ভু ¢মত্র (সংগ্রাহক: শঙ্খ ঘোষ); এক-বক্তার বৈঠক; (কলকাতা: তালপাতা, ২০০৮); পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৬৪; মূল্য ১০০ টাকা
আমাদের প্রজন্ম যে শুধু শম্ভু ¢মত্র মশাইয়ের অ¢ভনয় দেখে¢ন তা নয়, বাংলা ¢থয়েটারে ওনার অভিনয়ধারার কোন ডাকসাইটে অ¢ভনেতার দেখাও পাওয়া যায়¢ন। কুমার রায়ের প¢রণত বয়সের অ¢ভনয় অবশ্য দেখা গেছে। ¢কছুটা অমর গাঙ্গু¢লরও। ¢কন্তু পরবর্তী প্রজন্মের যে সব অ¢ভনেতারা, ¢কছুটা হলেও, শম্ভুবাবুর সঙ্গে কাজ করেছেন - যেমন সৌ¢মত্র বসু, শাঁও¢ল ¢মত্র প্রমুখরা - তাঁদের বড় কাজ প্রায় আর চোখেই পড়ে না।
এ খেদ বড় করে গেঁড়ে বসে শঙ্খ ঘোষ সংগ«¢হত এক-বক্তার বৈঠক বইখানা পড়লে। শম্ভু ¢মত্রর আগের বইগুলো, ¢বশেষত: নাটক রক্তকরবী ¢ক সন্মার্গ সপর্যা পড়লে একজন সে¢রবСল অ¢ভনেতার আত্মকথনে নাটক হয়ে ওঠার গল্প যে শুধু পাওয়া যায় তা নয়, ওনার ¢চন্তার স্বচ্ছতা ও নাটকের মতন আবেগ¢ভ¢ত্তক ¢শল্পকলার প্রকাশে কি প¢রমাণ বু¢দ্ধর ব্যবহার আছে সে জেনে উদ্বেল হতে হয়।
কলকাতা ¢বশ্ব¢বদ্যালয়ের আম¢ন্ত্রত বক্ত«তার ¢ল¢খতরূপ কাকে বলে নাট্যকলা যে বই ¢হসেবে পাওয়া যায়, এক-বক্তার বৈঠক বই¢ট সেই গোত্রের। মুখের কথাকে ¢ল¢খতরূপে ধরা। আশংকা থাকে একজন অভিনেতার, ¢বশেষত: শম্ভু ¢মত্রর মতন অ¢ভনেতার, কথনকে ¢ক সেইভাবে লেখায় ধরা সম্ভব? যখন বই ¢লখেছেন, তখন জানেন তাঁর বক্তব্য বহন করার জন্যে দীর্ঘ-চ¢র্চত ও প¢রশী¢লত ক®¾ঠর সাহায্য ¢ত¢ন পাবেন না। করতে পারবেন না অনুশী¢লত মুখ ও দেহের পেশীর ব্যবহার।
কাজেই ভাষাকে সেইভাবেই ব্যবহার করেছেন। ¢কন্তু ক¢থকা বা সাক্ষাৎকারে তো সে ভাবনা নেই। ¢নজেও বলেছেন, "হুবহু আমার কথা য¢দ তুলেও দেওয়া যায় তবু তাতে কোন্ কথাটা আ¢ম ব্যঙ্গ করে বলে¢ছ আর কোন্ কথাটা অনেক থেমে থেমে বাধো-বাধো অনুভবে বলে¢ছ, আর কোন্টা গড়গড় করে, এসব ধরা পড়ে না।' কাজেই ¢ঠক কতটা ধরা পড়ল তাঁর বক্তব্য? তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, যতটা ধরা পড়ল সে ¢ক যথেষ্ট?
এর ওপর শম্ভু ¢মত্রর এই বক্তব্য টেপ করা হয়ে¢ছল আজ থেকে পঁয়¢ত¢রশ বছর আগে। কালের চাপে সেই টেপের বেশ ¢কছু অংশ উদ্ধার করা যায়¢ন। কাজেই কথাগুলো অংশ¢বশেষে খাপছাড়া। সম্পাদক ¢হসেবে (¢নজেকে "সংগ্রাহক' বলে নামাং¢কত করেছেন বইতে) শঙ্খ ঘোষ অনেক জায়গাতেই অল্প কথায় প্রেক্ষিত ধ¢রয়ে ¢দয়েছেন বটে, ¢কন্তু সর্বত্র যে তা খুব কাজের হয়েছে এমন কথা বলা যায় না।
সূচীর বদলে বইতে যে প্রসঙ্গক্রম আছে তা এইরকম -
ই¢ডপাস, জার্মা¢নতে, এখানে; ইমোশন আর সে¢ন্টমেন্ট; প¢শ্চমের চোখে এদেশের নাটক; ক¢বতার কথা; অ¢ভনয়ের অবলম্বন; সো¢ভয়েটের অ¢ভজ্ঞতা; ভালো অ¢ভনয় চেনা; ¢শ¢শরকুমারের সঙ্গে; মুক্তধারা, রক্তকরবী; প্রফুল্ল আর ¢বশ্বাসঘাতকতা; রক্তকরবী-র প্রযোজনা; খালেদ চৌধুরী; দলের অ¢ভনেতারা; ¢ভন্নরকম নাটক, ¢ভন্নরকম অ¢ভনয়; গানে বা ক¢বতায়; মা-বাবার কথা; তৈ¢র হওয়ার সময়; যাত্রার অ¢ভজ্ঞতা; খোলা জায়গার পরীক্ষা; চাঁদ ব¢ণক; সংযোজন।
এই প্রসঙ্গক্রম দেখলেই বোঝা যায় যে মোটামু¢ট ¢তনরকম ¢জ¢নস ¢নয়ে কথা বলেছেন শম্ভুবাবু - ¢বশেষ কোন প্রযোজনা, নাটক বা আর্ট সম্বন্ধে সাধারণ আলোচনা আর একেবারে ব্য¢ক্তগত ¢বষয়। যেখানে সাধারণ আলোচনা করেছেন, সেগুলো ওনার ¢নজের অ¢ভজ্ঞতা ও ¢চন্তায় জা¢রত হয়ে এমন রূপ ¢নয়েছে যে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। যেমন 'ইমোশন আর সে¢ন্টমেন্ট' ¢নয়ে বলছেন -
"আমরা কিরকম ভয় ক¢র ইমোশনকে। হ্যাঁ? ভা¢ব যে, কোনো শক্ড(ড়বষদযনধ) ইমোশান বা কোনো শক্ড জাজমেন্ট তো আছে, তাকে ¢নয়েই মানুষ বাঁচে। সেইগুলো ঢুকলেই যেন খারাপ হয়ে যাবে। তখন, যখনই ক¢র, তখন একটা ¢ড-হাইডেÐটেড চেষ্টা ক¢র - ¢ড-হাইডেÐটেড রূপের চেষ্টা ক¢র। এবং সেইটেকে মনে ক¢র খুব ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাপার হল।'
অন্য জায়গায় ¢হ¢ন্দ গান ¢নয়ে বলছেন - "ওই যে পাঁচটা গলা আছে - ওই পাঁচটা গলা ভারতবর্ষে তো - এমন তো নয় যে ওদের একটা পালক ¢পতা আছে যে ইচ্ছে করে ওদেরই কেবল ¢দচ্ছে, এমন তো নয়। একদম ¢স্টÐকট কম্¢প¢টশন। না? কত লোক এসে যেতে পারত। এই পাঁচজনকে তো হটাতে পারছে না কেউ। এই পাঁচজনের গলায় কি-ই-ই না করতে পারে - কি না করতে পারে! তাতে দেখবেন অনেক ¢মউ¢জকাল ই¢ডয়ম্স - অনেক নতুন বার করছে। অনেক তার মধ্যে চ্যাংড়া¢মও করছে। আপনার মনে হবে যে গভীর ভাবটাব কোথায় গেল। নেই, গভীরভাব নেই হয়তো। ¢কন্তু এমন একটা সচলতা এনেছে, সরসতা এবং সচলতা, সে রাহুলদেব বর্মণের ইয়েতেও আছে ... এটা য¢দ আমরা ¢শখতাম, তালে ভালো হতো। নকল করার তো কোনো দরকার নেই। ¢কন্তু ওই যে কৌশলটা, য¢দ আ¢ম ¢শখতাম। এবং আমার ¢নজের ¢মউ¢জকাল ই¢ডয়ম তৈ¢র করতাম - যে ই¢ডয়মগুলো ফট করে গলায় আসবে না বটে - অন্য লোকের আর
কি - তাহলে বাংলা গান একটা নতুন হত।'
এটাই শম্ভু ¢মত্রর আর্টের মূল কথা। চ¢র্বতচর্বন নয়। নতুন করে ভেবে ¢কছু করা। নতুন হতে হবে, ভাবনাও থাকতে হবে। ¢ব¢ভন্ন প্রসঙ্গে, নানা ফর্মে এই কথা বারবার উঠে এসেছে - "(যেমন ¢ফল্মে করা হয়।) আ¢ম জা¢ন যে দেখলে পরে একটা ইমোশন জাগাতে হবে। যেগুলো স্বীক«ত। একটা মেয়ে একদম শাদা শা¢ড় পরে দাঁ¢ড়য়ে আছে, হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছে, মুখটা শুকনো। দেখালে, বেশ তাকে কেমন দু:খের প্রতীক বলে মনে হবে। এই-যে জানা ছ¢ব, এইটেকে দেখালে আ¢ম ভালো ছ¢বকার হব। এই তো? ¢কন্তু এতে ভাঙাটা কোথায়? ছাঁচ ভেঙে ফেলাটা কী করে আসবে? ছাঁচ ভেঙে ফেলতে গেলে পরে আমার ¢চন্তাটা না প্রকাশ করলে তো হবে না?'
এই ধরণের ¢চন্তাকে কথায় সা¢জয়ে বলা রয়েছে বলে যে কোন ধরণের আর্ট¢পপাসুর পক্ষে এ বইয়ের মজা খুব। এবং এ বই একবার পড়া হয়ে গেল আর "হয়ে গেছে' বলে তাকে তুলে রাখলাম তাও নয়। প্র¢তবার নতুন পাঠ পাওয়া যায়। প্রথমবার কন্টেক্সটের কচক¢চতে ¢কছু পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে। ¢কন্তু ¢দ্বতীয়বার পড়তে গেলে পথ চেনা হয়ে যায় - কোন জায়গাগুলোতে মনে মনে ঢ্যাঁড়া কেটে রেখে¢ছ, মনে পড়ে যায়।
নাটকের, বা সাম¢গ্রকভাবে পারফর¢মং আর্টের, নন্দনতত্ত্ব আর তার ব্যবহা¢রক প্রয়োগ ¢নয়ে ¢কছু আলোচনা থাকলে ব্য¢ক্তগতভাবে আমার আরও ভাল লাগত। ই¢ঙ্গত এসেছে মাঝেমাঝে। শম্ভু ¢মত্রর অন্যান্য লেখাপত্র পড়লেও এরকম আভাস পাওয়া যায় যে ওনার মত মানুষের কাজে হয়তো কখনও কখনও ইন্টেলেকচুয়া¢লজম আর এসথে¢টক্সের দ্বন্দ্ব এসেছে। ¢বশেষত যখন গড়পড়তা ¢শ¢ক্ষত বাঙালির সম¢ষ্টগত চেতনায় "গ্রুপ ¢থয়েটার' - এবং সেই সূত্রে পুরো নবনাট্য আন্দোলনই - একধরণের ইন্টেলেকচুয়াল (এবং, বলা ভাল, এ¢ল¢টস্ট) আস্ফালনে প¢রণত হয়ে¢ছল। তাছাড়া ¢ছল অচলায়তন, যাঁর সঙ্গে সময়ে সময়ে ওনাকে লড়াই করতে হয়েছে। যেমন রক্তকরবী প্রযোজনায় পোষাকের ব্যবহারে শেষ পর্যন্ত নন্দলাল বসুর মধ্যস্থতায় শা¢ন্ত¢নকেতনি গুরুদেব-কালচারের নান্দ¢নক ¢চন্তার ¢বরুদ্ধে যেতে পেরে¢ছলেন। বইয়ের এই খাম¢ত থাকা সত্বেও যা পাওয়া গেল তা দীর্ঘ¢দনের ¢চন্তাভাবনা সঙ্গী হয়ে থাকবে।
উপ¢র পাওনা ¢কছু অ্যানেকডোট। ¢শ¢শরকুমার ভাদুড়ির সঙ্গে এক¢ট কথোপকথন - সীতা নাটকে ব¢শষ্ঠর ভূ¢মকা করার ব্যাপারে - তো অ¢ত মনোহর। উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলালাম। আর ছোট করে উপ¢র পাওয়া গেল শঙ্খ ঘোষের সূচনাকথা। কথোপকথনের ই¢তহাস। এবং ছোট ¢কন্তু অ¢ত-উৎক«ষ্ট সংযোজন¢ট। শম্ভু ¢মত্রর লেখা ও বলা এবং শম্ভু ¢মত্রর ওপর সংগ্রহযোগ্য বইয়ের তা¢লকায় এক-বক্তার বৈঠক ওপর¢দকে থাকবে। ¢হরণ ¢মত্রর প্রচ্ছদে তালপাতা-র প্রকাশনা¢ট দেখে বাংলা বইয়ের প্রকাশনার ব্যাপারে গ¢র্বত হওয়া যায়।