এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • একটি দ্বিপ্রাহরিক ভাট

    শমীক মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ এপ্রিল ২০১০ | ১৪২৩ বার পঠিত
  • - বাবা?

    - উঁ?

    - এদিকে দ্যাখো?

    - ...

    - দ্যাখো না ...

    - আমি কাজ করছি সোনা, তুমি তোমার মত আঁকো না!

    - না, আমি আঁকছি না, আমি তো বম বম বোলে দাদার সিনেমা দেখছি।

    - তো দ্যাখো না, আমি কাজটা সেরে নিই। আমাকে ডিসটার্ব কোরো না।

    - না দ্যাখো না, বম বম বোলে দাদা কেমন সুন্দর ডান্স করছে করিনাদিদির সঙ্গে, তোমার ল্যাপটপে ঐ গানটা আছে না?

    - আছে, পরে দেখাব।

    - তোমার কাছে করিনাদিদির ঐ গানটাও আছে না? ইয়ে ইশক হায়ে জান্নাত দিখায়ে?

    - ওরে বাবা, আছে রে বাবা আছে। তুই এখন যেটা দেখছিস দ্যাখ না, আমাকে কাজটা করে নিতে দে।

    - না, এখন তো অ্যাডভারমেন্ট চলছে।

    - কী মেন্ট?

    - অ্যাডভারমেন্ট।

    - ঠিক করে উচ্চারণ করো পিউ, অ্যাডভারমেন্ট নয়, অ্যাডভারটাইজমেন্ট।

    - হুঁ ... কটন হো তো ওয়ারি, জ্যাল হো তো ডোন্ট ওয়ারি ...

    - আআ:, কী সব বলছো?

    - ঐ যে ঐ দিদিটা বলছে।

    - বলুক, তোমায় সব শুনে শুনে বলতে হবে না। তুমি চ্যানেলটা ঘুরিয়ে নাও তো!

    - নাআআআ! এক্ষুণি আবার শুরু হবে তো! আমি বম বম বোলে দাদার গান দেখবো!

    - ও তো হয়ে গেল। এই দ্যাখো, এখন কী সব ভুলভাল গান দেখাচ্ছে, তোমাকে দেখতে হবে না ওসব। দেখি, রিমোটটা দাও তো

    - না ভুলভাল গান নয়, এটা তো গোবিন্দাদার গান। ঐ যে ... পঁ ক্যান্দি পঁ ক্যান্দি পঁ পঁ পঁ, ক্যাটরিনাদিদিকে কী সুন্দর দেখতে, না বাবা? ওর ফ্রকটা কী সুন্দর দ্যাখো?

    - (ক্ষক ক্ষক, খুক ...) নাহ্‌হ, তুমি কথা শোনো না একেবারে, কাজের দফারফা বাজিয়ে ছাড়লে।

    - ও বাবা, ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলে কেন? আমি বললাম যে করিনাদিদির গানটা দেখব, জান্নাত দিখায়ে ...

    - না আর হিন্দি গান দেখতে হবে না। আজকের দিনে সব বাংলা দেখতে হয়, বাংলা পড়তে হয়, বাংলা শুনতে হয়। কেন জানো তো? আজ তো বাংলা হ্যাপি নিউ ইয়ার!

    - আজকে নিউ ইয়ার? তা হলে সে¾ট্রাল পার্কে আজ রাতে আবার ডান্স হবে?

    - ওরে না-না, এই নিউ ইয়ারে ডান্স হয় না, এটা যারা বাংলা বলে, যাদের বেঙ্গলি বলে, তাদের নিউ ইয়ার। এটাকে বলে নববর্ষ। মানে, নতুন বছর। তুমি যেমন মান্থসের নাম পড়েছো, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, ঠিক সেই রকম বাংলাতেও টুয়েলভটা মান্থস আছে, তার ফার্স্ট মান্থের নাম বৈশাখ। আজ থেকে সেই বৈশাখ মান্থ শুরু হল।

    - বাংলাতেও টুয়েলভটা মান্থ আছে?

    - হুঁউঁউঁ। আর এই নিউ ইয়ার ডে-তে কী করতে হয় জানো তো? সক্কাল সক্কাল চান করে, সব কাজ বাংলায় করতে হয়। গান গাইতে হয়, এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। এই গানটা কার লেখা জানো?

    - না তো!

    - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কত্তো ভালো ভালো গান লিখে গেছেন তিনি, তুমি গাইবে বলে। আর তোমার কোনো খেয়ে বসে কাজ নেই, তুমি সারাদিন ধরে খালি গোবিন্দাদা আর ক্যাটরিনাদিদির নাচ দেখে যাচ্ছো।

    - আমার তো ক্যাটরিনাদিদিকে দেখতে ভাঁলোঁ লাঁগেঁ। ... আচ্ছা বাবা, বাংলা নিউ ইয়ারে বাংলাতে ডান্স হয় না?

    - হুঁ, তাও হয়। যারা যারা বাংলা নতুন বছরের ফাংশান করে, তারা বাংলা গানের সঙ্গে নাচ করে, আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি, তারপরে ... আরো কতো ভালো ভালো গান আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, সেই সব গানের সঙ্গে নাচ করে। তোমার দাদুর পাড়ায় আজ ফাংশান হবে তো! তোমার ঠাম্মা গান করবে সেখানে আজকে!

    - বাংলাতেই গান করবে?

    - তোমার ঠাম্মা তো হিন্দি জানে না! আর আজ ওখানে যে যা গান করবে, সব বাংলায় করবে। তোমার ঠাম্মা তো রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলো গান জানে। ... তারপরে সন্ধ্যেবেলায় ওখানে কত মজা হয়। আমরা দোকানে যেতাম হালখাতা করতে।

    - কী খাতা?

    - হালখাতা। দোকানগুলোতে আজ গণেশের পুজো হয় তো!

    - দাদুদের ওখানেও আনসাল প্লাজা আছে? শপিং মল আছে?

    - না-রে পাগল! শপিং মল নয়, এমনি ছোটো ছোটো দোকান, তারা সব্বাই আজ গণেশের পুজো করে, আর যারা দোকানে যায়, তাদের সব্বাইকে মিষ্টি খাওয়ায়, শরবৎ খাওয়ায়।

    - কেন?

    - ঐ যে, পুজো বলে! নতুন বছরের পুজো হয় তো, তাই ঐসব দোকান থেকে যারা রোজ রোজ জিনিস কেনে, তাদের সেদিন ইনভাইট করে মিষ্টি আর শরবৎ খাওয়ায়।

    - আমাদের নিউ ইয়ারে তো এখানে মাদার ডেয়ারিতে শরবৎ খাওয়ায় না? আমরা তো রোজ দুধ আর ব্রেড কিনি এখান থেকে!

    - এরা তো বেঙ্গলি নয় মা! ওটা শুধু বেঙ্গলিদের নিউ ইয়ারে হয়। নাও, চলো তো, আমরা কবিতা প্র্যাকটিস করি। তোমাকে সেই যে কবিতাটা শিখিয়েছিলাম, মনে আছে তোমার?

    - ম্‌ম্‌ম, ঐ কিস নে বানায়া ফুলোঁ কো, ঈশ্বর জো সবমে হ্যায়, ঐটা?

    - আরে না-না, ওটা তো তোমাকে স্কুলে শিখিয়েছে, আমি তোমাকে যেটা শিখিয়েছি, ঐ যে, আমি যদি দুষ্টুমি করে চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি, ওটা মনে আছে তোমার?

    - উঁ?

    - ওফ্‌ফ, হাঁ করে ক্যাটরিনাদিদির নাচ দেখছে অ্যাকেবারে, কোনো কথাই কানে ঢোকে না, টিভি চললে হয়, একেবারে বাক্সের ভেতরে ঢুকে গিয়ে বসে থাকবে, কই দেখি রিমোটটা ... এই যে, হ্যাঁ ... চলো আমরা ওঘরে যাই।

    - ব্যাব্যা প্লিঁইঁজ ...

    - এই একদম কাঁদবে না, একদম কাঁদবে না, কাজের মধ্যে কিস্যু শেখো নি খালি কাঁদতে শিখেছো, চলো না, পশ্‌শু তো কেমন সুন্দর বলছিলে তুমি ডাকো খোকাআ, কোথায় ওরে, আমি শুধু হাসি চুপ্টি করে ... দেখি আরেকবার শুনি। বলো তো!

    - ...

    - কী হল, বলো?

    - ...

    - আবার শুরু হল। আচ্ছা বাবা, যদি ঠিকঠিক বলতে পারো, তা হলে টফি দেবো।

    - ন্নাআ। বুউউউউ ...

    - আবার কাঁদে! কী ঝামেলা! আচ্ছা, যদি বলতে পারো তাহলে আমি ল্যাপটপ চালিয়ে জান্নাত দিখায়ে-দিদি আর বম্‌ বম্‌ বোলে-দাদার গান দেখতে দেবো। ঠিক আছে?

    - বাবা, আমি না, বম্‌ বম্‌ বোলে দাদার আরেকটা গান জানি। শুনবে?

    - পরে শুনব, আগে আমাকে লুকোচুরি কবিতাটা বলো।

    - শোনো নাঁআঁআঁ, মুরগি কেয়া জানে আন্ডে কা কেয়া হোগা, লাইফ মে হোগি ইয়া তাওয়ে পে ফ্রাই হোগা, হোঁট ঘুমাও সিটি বাজাও, সিটি বাজাকে বোল ভাইয়া আল ইজ ওয়েল, আরে চাচু আল ইজ ওয়েল ...

    - ওরে বাবারে বাবারে বাবা, এ মেয়ে তো পুরো হিন্দি সিনেমা গুলে খেয়েছে! তোদের বয়েসে আমরা টিভি পর্যন্ত দেখতাম না, জানিস? আমার এই অ্যাত্তোবড়ো কবিতা বীরপুরুষ মুখস্ত ছিল। আর তুই এই একটা কবিতা নিয়ে রগড়েই যাচ্ছিস, রগড়েই যাচ্ছিস। বল তো আমি যদি দুষ্টুমি করে চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি, ভোরের বেলা ...

    - মা গো, ডালের পরে কচু-পাতায় করি লুটুপুটি ...

    - উঁহুঁ, উঁহুঁ, কচু-পাতা নয়, কচু-পাতা নয়, কচি পাতা, মানে লিটিল লিভস, পাতাদের বেবি হয় না, তুমি দেখেছো তো, বাইরের টবে গাছ থেকে কেমন বেবি-বেবি পাতা বেরোয়, সেইগুলোকে কচি পাতা বলে, কচি পাতায় করি লুটোপুটি। ... বলো।

    - বাবা জানো, আরিয়ান বলছিলো, আমাদের বাবা মায়েরা যখন দুজন দুজনকে কিস করে, তখন গড তাদেরকে একটা বেবি দিয়ে দেয়, বাবা, পাতারাও কি কিস করে? নইলে তাদের বেবি কী করে আসে?

    - ইইইইই, কী সাঙ্ঘাতিক! আরিয়ানটা আবার কে?

    - ও তো আমার ফ্রেন্ড! আমার সাথেই নার্সারি ড্যাফোডিলে পড়ে। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তো!

    - বা-বা! বেশ, বেশ। তোমার কতগুলো বেস্ট ফ্রেন্ড?

    - আমার ফিফটিনটা বেস্ট ফ্রেন্ড। আরিয়ান তাদের মধ্যে সবসে বেস্ট ফ্রেন্ড।

    - তাই বুঝি? আরিয়ানের পুরো নাম কী?

    - আরিয়ান সিং।

    - ঊহ, শেষে একটা পাঁইয়া জোটালি? আর কিছু পেলি না?

    - পাঁইয়া কী বাবা?

    - ও ... কিছু না কিছু না। শোনো, এইসব কথাগুলো অসভ্য অসভ্য ছেলে মেয়েরা বলে। তুমি একদম বলবে না।

    - কেন? গড তো কত সুইট সুইট বেবি দেয় ...

    - ঠিক আছে ঠিক আছে। তুমি কবিতা ছাড়ান দাও। অনেকদিন তো তুমি আঁকাআঁকি করোনি। খালি খালি বার্থডে পার্টিতে যাও আর গাদা গাদা রংপেন্সিলের বাক্সো নিয়ে ফেরৎ আসো। তারপর দুদিন যেতে না যেতেই রঙ স-ব হারিয়ে ফ্যালো।

    - না-না, আমার কাছে সব রঙ আছে তো! আমি সব কালারগুলো আমার কিটি ব্যাগে জমিয়ে রেখে দিই। ... বাবা, কাল তুমি যখন অফিসে গেছিলে না, এবিসিডি লিখতে, আমি তখন বসে বসে একটা ছবি এঁকেছিলাম। দেখাবো?

    - আচ্ছা, দেখাও ...

    - ... এই দ্যাখো।

    - এটা কী? কাকতাড়ুয়া?

    - নাঁআঁআঁ, এটা তো স্ট্যাচুউ।

    - এইটা স্ট্যাচু? খিকি্‌খক। কার স্ট্যাচু?

    - এটা আমার স্ট্যাচু।

    - উরেবাবা। এই বয়েসেই স্ট্যাচুর চিন্তা? তুমি তো মায়াবতী হয়ে যাচ্ছো মা!

    - মায়াবতী কী বাবা?

    - তুমি যেখানে থাকো, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। উনিও ওনার স্ট্যাচু বানাতে খুব ভালবাসেন।

    - মুখ্যমন্ত্রী কাকে বলে বাবা?

    - মুখ্যমন্ত্রী? একরকমের রাজা।

    - মায়াবতী এখানকার রাজা? ইন্ডিয়ার রাজা?

    - না না, ইন্ডিয়ার না। তুমি কোথায় থাকো বলো?

    - ম্‌ম্‌ম, ইন্ডিয়াতে।

    - ইন্ডিয়ার কোন সিটিতে?

    - দিল্লিতে।

    - নাআ, দিল্লি তো পাশের সিটি, তোমার সিটির নাম কী বলেছিলাম? এই হিন্দোন প্রাইড বাড়িটা কোন সিটিতে আছে? যেখানে পিউসোনার ঘর?

    - ও ... জানি জানি, গাজিয়াবাদ!

    - হুঁ, মায়াবতী হল গাজিয়াবাদের রানী।

    - তুমি যে বললে রাজা?

    - ঐ রাজাও যা, রানীও তাই। ঐ মুখ্যমন্ত্রী যে হয়, সে বয় হলে তাকে রাজা বলে, গার্ল হলে রানী বলে।

    - মায়াবতী গার্ল?

    - হুঁ, বড় গার্ল।

    - মায়ের চেয়েও বড়?

    - এই রে, তা তো জানি না।

    - ঠাম্মার চেয়েও বড়?

    - না রে বাবা, ঠাম্মার থেকে ছোট।

    - তা হলে ঠাম্মা কেন মুখ্যমন্ত্রী হল না?

    - কী মুশকিল! তোমার কি সারাদিনে বাজে বকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?

    - না বাবা, বলো না, মায়াবতীর কুইনদের মত ক্রাউন আছে?

    - ওরে বাবা, তা আবার নেই? অনেক অনেক ক্রাউন আছে। উনি ক্রাউন পরতেও তো খুউব ভালোবাসেন।

    - সব গোল্ডেন কালারের ক্রাউন?

    - গোল্ডেন কালারের নয়, সব গোল্ড দিয়ে বানান ক্রাউন। তাতে অনেক জেম্‌স বসানো আছে।

    - সব গোল্ড দিয়ে বানানো? মীমাংসা বলছিল ওদের বাড়িতে গণেশজীর মুর্তি আছে, তাতে নাকি গোল্ডের সিংহাসনে বসিয়ে রাখা আছে।

    - তাই নাকি? বন্ধুর নাম মীমাংসা? ক্কী অদ্ভুত!

    - বাবা, ঐ মায়াবতী কুইনের স্ট্যাচু কী কালারের?

    - কালার আবার কী? পাথরের স্ট্যাচু। পাথরের যা কালার, তাই।

    - ও, মায়াবতী ড্রয়িং খাতায় স্ট্যাচু আঁকে না? পাথর দিয়ে স্ট্যাচু বানায়? সেই মায়ের ইশকুলে গান্ধীদাদুর যেমন স্ট্যাচু আছে? সেই স্ট্যাচু? গান্ধীদাদুও কি গাজিয়াবাদের মুখ ... মুখ্য ...

    - ওরে না রে পাগলি! কী সব ভাট বকে, কোথায় গান্ধী কোথায় ইয়ে। গান্ধীদাদু অন্য লোক ছিল। অনেক বড়, অনেক ভালো লোক। সেই যে তোমাকে বলেছিলাম গল্প, একদল বাজে দুষ্টু লোক ছিল, তাদের ব্রিটিশ বলত, এই গান্ধীদাদুই তো সবাইকে নিয়ে সেই দুষ্টু লোকগুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, আর ইন্ডিয়া সেই থেকে প্রতি বছর পনেরই আগস্ট হ্যাপি বার্থডে মানায়, তাই সবাই মিলে গান্ধীদাদুর স্ট্যাচু বানিয়ে দিয়েছিল।

    - মায়াবতী তা হলে ভালো লোক নয়? কেন?

    - সে কেমন লোক জানি না বাপু! মোটমাট গান্ধীদাদুর সাথে তার তুলনা চলে না।

    - কেন? কুইন তো ক্রাউন পরে, সবাইকে নিয়ে নিজের স্ট্যাচু বানায়, কুইনরা তো সবসময়ে ভালো হয়।

    - কে বলেছে সবসময়ে ভালো হয়? তুমি তো স্লিপিং বিউটির গল্প শুনেছো। স্লিপিং বিউটির সেই কুইনটা কি ভালো ছিল?

    - হ্যাঁ মনে পড়েছে মনে পড়েছে, কুইনটা তো খুউব দুষ্টু ছিল। তা হলে এই কুইনটাও দুষ্টু? সেই গুপি গাইন বাঘা বাইনের যে রাজাটা ছিল, নিজের স্ট্যাচু বানিয়েছিল, সেই রাজাটাও তো দুষ্টু ছিল, তাই না বাবা?

    - হ্যাঁ বাবা, ঐ রাজাটা অনেক অনেক বেশি দুষ্টু ছিল। তোমার মনে আছে হীরক রাজার দেশের সেই গানটা? আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে?

    - হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। এই গানটাও কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিল?

    - অ্যাঁ? না-না, এটা না। এটা তো অন্য লোক লিখেছে, ঐ গুপি গাইন আর হীরক রাজার সিনেমাদুটো যে বানিয়েছে, তার লেখা।

    - তুমি তো বলেছিলে যত ভালো ভালো গান আছে বাংলায় স-ব নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা?

    - ধুর ব্যাটা, এটা আমি কবে বললাম? রবীন্দ্রনাথের গানগুলো সব ভালো ভালো, তাই বলেছিলাম বোধ হয়। সব গান কখনো রবীন্দ্রনাথের লেখা হয়? তা তুমি স্ট্যাচু ছাড়া আর কিছু আঁকো নি? সেই যে একদিন বলেছিলাম, রিভার, তার পেছনে মাউন্টেন, রিভারে একটা বোট, দূরে সানরাইজ হচ্ছে, এই রকম আঁকতে?

    - না বাবা, রিভার আঁকতে আমার ভালো লাগে না। আমি শিন-চ্যান আঁকতে পারি, দেখবে?

    - অ্যা:, ওটা একটা আঁকার মত জিনিস হল? বদমাইশ ছেলে একটা ...

    - নাঁআঁআঁ, শিন-চ্যান আমার ফেভ্রিট!

    - সে তো হবেই, নিজেও বাঁদর তৈরি হচ্ছো, বাঁদরের কার্টুনই তো ভালো লাগবে। তুই টম অ্যান্ড জেরি আঁকতে পারবি? তোর পেন্সিল বক্সে দ্যাখ জেরির ছবি আছে, দেখে দেখে আঁকতে পারবি? আমি তা হলে টমটা এঁকে দেব।

    - বাবা আমি খেলতে যাই? বাইরে দিয়া ঈশা আর নাব্‌হ্‌নীত খেলছে।

    - পুরো দুপুরটা তুমি কী করলে বলো তো? না কবিতা বললে, না ছবি আঁকলে, খালি গোটাকয়েক টিভির অ্যাড গিললে, ভাট বকলে, আর আমার মাথাটা ধরিয়ে দিলে। এখনো রোদ পড়ে নি, এখন কোথায় খেলবে?

    - আমি এইখানেই খেলব। করিডরের ওখানে। বাবা প্লিঁইঁজ ... তুমি তো কাজ করছিলে, কাজ করো ল্যাপটপে, আমি তোমাকে একটুও ডিসটাপ করব না।

    - বেশি দূরে যাবে না। একটু পরেই মা চলে আসবে তখন তুমিও চলে আসবে। ...এই দ্যাখো এই দ্যাখো, ঘরের চটিটা পরেই বাইরে চলে গেলি? অ্যাই পিউ, পিউ ... বাইরের জুতো পরে যা ... দ্যাখো কাণ্ড, খেলতে পেলে আর কোনোদিকে হুঁশ থাকে না, ঘরের চটি পরে বেরোলি তো, মা এসে দেবে ধরে, দেখিস। ...ওফ্‌ফ, কী মাল তৈরি হচ্ছে মাইরি, ক্যাটরিনাকে ঝারিও মারে, সিটিও বাজায়, টোটাল ইয়ে হয়ে গেল মাইরি, এখানকার হাওয়ায় !

    ১৫ই এপ্রিল, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৫ এপ্রিল ২০১০ | ১৪২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Eesha | 132.176.172.88 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১২ ০৫:২৫89212
  • আজকল কে বচ্চে।।।ইইইস!
  • siki | 96.98.43.85 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১২ ০৩:০৭89213
  • :)
  • rabaahuta | 215.174.22.20 (*) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৭89214
  • দিল্লীর আপডেট খুঁজতে গিয়ে অনেকদিন পর আবার এই লেখাটা পড়ে ফেল্লামঃ)
  • :) | 192.69.250.130 (*) | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৫89215
  • ~
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন