এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কুপরিবাহী

    Indrani লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ জুলাই ২০১৪ | ১৩৫৬ বার পঠিত


  • পরিতোষের ধারণা ছবিটা বাতিঘরের। বাতিঘর আর লাইটহাউজ দুটো শব্দই ওর মনে এসেছিল ছবিটা প্রথম দেখার সময়। আসলে ছবিটা পরিতোষ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছিল। এদেশে আসার পরে, চেয়ার,টেবিল, সোফা, টিভি, খেলনা,বই সাইডওয়াকে ডাঁই করে ফেলে রাখতে দেখত পরিতোষ। কখনও একটা কাগজে খুব বড় করে লেখা থাকত ফ্রী , কখনও এমনিই পড়ে থাকতে দেখত। কাউন্সিলের গাড়ি তুলে নিয়ে যেত। একবার একটা আনকোরা নতুন প্যারাম্বুলেটর আর কট পড়ে থাকতে দেখেছিল পরিতোষ। সেটা ছিল প্রসন্নর বাড়ির গেস্ট পার্কিংএর পাশের ময়লা ফেলার জায়্গা। প্রসন্ন ওর সহকর্মী ছিল সেই সময়। নীল রঙের প্র্যাম, নীল কট। ডাস্টবিনের পাশে নতুন কট, প্র্যাম পড়ে থাকতে দেখে পরিতোষের বুকের মধ্যে হু হু করে উঠেছিল। প্রসন্নর বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর , রাতে খেতে বসে, পরিতোষ সুপর্ণাকে কটের কথা বলে। বলে, সুপর্ণা রাজি থাকলে এখনই আবার প্রসন্নর বাড়ি গিয়ে কট আর প্র্যাম তুলে নিয়ে আসবে। সেইসময় সুপর্ণা দ্বিতীয়বার প্রেগ্ন্যান্ট। সোহিনীর বয়স তিন। স্বাগতা হবে। সুপর্ণা প্রথমে ভেবেছিল, পরিতোষের নেশা হয়েছে। উত্তর না দিয়ে জলের গ্লাস বাড়িয়ে দিয়েছিল।পরিতোষকে ঢক ঢক করে জল খেতে দেখে সুপর্ণার তখন মনে হয়েছিল- পরিতোষ সিরিয়াস।এর আগেও, পরিতোষ সাইডওয়াক থেকে তুলে এনেছিল চীনেমাটির বড় গোল বাটি। নীল হলুদ বর্ডার দেওয়া ছিল । সেদিন ওদের বাড়ি গেস্ট এসেছিল। সায়ন্তনী, পার্থ, সংযুক্তারা। পরিতোষ সে বাটি ধুয়ে শুকিয়ে তাতে স্যালাড সাজিয়েছিল রাতের খাবার টেবিলে। তখন অতিথিরা এসে গেছে। সুপর্ণা খুব দ্বিধায় ছিল স্যালাডের বাটি নিয়ে ; কিন্তু ওদের তিন বছরের মেয়ে সোহিনী নির্দ্বিধায় অতিথিদের সামনে জোরে জোরে বলতে থাকে- বাবা ডগি বোলে স্যালাড দিয়েছে। এতে অতিথিরা অবাক হয়ে তাকালে সোহিনী সবিস্তারে বাটির উৎস বর্ণনা করেছিল।
    পরিতোষের জল খাওয়া দেখতে দেখতে সুপর্ণার সে সব মনে পড়তে থাকে । এরপরে খাবার টেবিলেই প্রচন্ড ঝগড়ার পরে সুপর্ণা অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে সোহিনীকে নিয়ে ওর কাকার কাছে চলে যায়।কাকা বহুবছর ও দেশে। কাকা কাকীমার বাড়ি থেকেই সুপর্ণা হাসপাতালে যায়। স্বাগতাকে নিয়ে অবশ্য পরিতোষের কাছেই ফেরে। তবে তিন বছরের জন্য। ওদের মিলছিল না । সুপর্ণার সঙ্গে ওর সম্পর্কটা ভাবলে একটা পুতুলের কথা মনে হয় পরিতোষের। খেলনার দোকানে একবার একটা পুতুল দেখেছিল পরিতোষ। সাজ গোজ করা মেয়ে পুতুল। কার্ডবোর্ডের বাক্সের মধ্যে পুতুল , সামনে সেলোফেন - যার ভেতর দিয়ে পুতুল দেখা যাচ্ছে। পুতুলের হাতের পাতাদুটি বাক্সের বাইরে ছিল-নাচের মুদ্রায়। একটি হাতের পাতা ওপর দিকে, অন্যটি নিচে।বাক্সের ওপর লেখা ছিল - হোল্ড মাই হ্যান্ডস। পরিতোষ দেখছিল, দোকানে আসা বাচ্চা , তাদের মা বাবা হাতের দুই তর্জনী দিয়ে পুতুলের হাত স্পর্শ করছে, সঙ্গে সঙ্গেই পুতুলের বুকের মধ্যে লাল নীল আলো জ্বলে উঠছে সঙ্গে খুব সুরেলা একটা বাজনা। পরিতোষের আলো জ্বালাতে ইচ্ছে হয়েছিল। পুতুলের হাত ধরেছিল আলতো করে, আলো জ্বলে নি। হাতের জোর বাড়িয়েছিল পরিতোষ। তাও জ্বলে নি আলো। পুতুলটা খারাপ মনে করে , অন্য রঙের পুতুলের হাত ধরেছিল পরিতোষ। এবারেও আলো জ্বলে নি। পরিতোষ আচমকাই অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল-একটার পর একটা পুতুলের বাক্স তুলে নিচ্ছিল, দু আঙুল দিয়ে ধরছিল পুতুলের দুই হাত, চাপ দিচ্ছিল পুতুলের হাতে। আলো জ্বলছিল না। দোকানের মেয়েটি কাছে এসে বলেছিল- প্রব্যাবলি ইয়োর হ্যান্ডস আর টু ড্রাই। পরিতোষ দোকান থেকে বেরিয়ে এসেছিল। পরে, সোহিনীকে পুতুলটা কিনে দিয়েছিল পরিতোষ। সোহিনী অক্লেশে আলো জ্বালাত পুতুলের বুকে।পরিতোষ আর কোনোদিন চেষ্টা করে নি। পুতুল আর পরিতোষের হাতের মধ্যে শুকনো হাওয়ার বুদবুদটুকু বাড়তে বাড়তে পরিতোষকেই একসময় ঘিরে নিয়েছিল সম্ভবতঃ।
    এখন পরিতোষ একাই। সাইডওয়াক থেকে জিনিস কুড়িয়ে এনে , ঘরে সাজিয়ে রাখে। এই ছবিটাও কুড়িয়ে পাওয়া।


    পরিতোষ ছবিটা প্রথম দেখেছিল গত ফলের মাঝামাঝি। তখন পাতা ঝরার কাল। লালচে, বাদামী হলুদ পাতা ঝরছে, শুকনো ঠান্ডা হাওয়ায় অল্প ভেসে থাকছে, হাওয়ার জোর থাকলে পাক খাচ্ছে খানিক, তারপর মাটিতে পড়ছে। পরিতোষ হাঁটতে বেরিয়েছিল। ওর কেডস জুতোর তলায় পাতারা গুঁড়ো গুঁড়ো হচ্ছিল। শব্দটা ভালো লাগছিল পরিতোষের। খুব হাল্কা ভালো লাগা।মনে হচ্ছিল কেউ যেন সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে।তখনই ছবিটা দেখে পরিতোষ। কার্ডবোর্ডের দুটো তিনটে বাক্স ভর্তি বাচ্চাদের খেলনা আর ঐ বাক্সে হেলান দেওয়া আয়তাকার ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। লাল,কমলা , হলুদ , আর বাদামী রঙের বাশিকৃত পাতার মধ্যে একটা রূপালী ফ্রেম, সাদা বর্ডারের মাঝখানে ছবিটা। পরিতোষ ছবি বোঝে না। ছবিটা কোনো বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা কি না জানে না । ছবিতে কোনো সাক্ষরও ছিল না। ঝরা পাতার মাঝে ঐ নীল সবুজ সমুদ্র ওকে টেনেছিল তৎক্ষণাৎ। পরে ছবির লোকটা। সফেন সবুজ আর সাদা ঢেউকে পরিতোষের সাপের ফণা মনে হয়েছিল। সাপের ফণার তলায় ঠিক যেখানে ক্যালেন্ডারের বসুদেবের থাকার কথা ঝুড়ি মাথায়, ঠিক সেখানে বাতিঘর। বাতিঘরই মনে হয়েছিল পরিতোষের। আসলে, লাইটহাউজ আর বাতিঘর দুটো শব্দই পরিতোষের মনে এসেছিল। কিন্তু লাইটহাউজ শব্দটার সঙ্গে একটা খুব চকচকে পৃষ্ঠায় এল ফর লাইটহাউজ লেখা আর খুব তীব্র একটা আলোর ফোকাস মনে পড়ায় , লাইটহাউজ রিজেক্ট করে বাতিঘর বেছে নেয় পরিতোষ।
    বাতিঘর বলতে কালচে ইঁটের একটা লম্বাটে গাঁথনি । নিচের দিকটা নীল রেলিং দেওয়া ঘেরা। তার ওপরে দুটো তলা দেখা যাচ্ছে। ছবিটা ঐ খানেই শেষ হয়ে গেছে। ঢেউএর মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। সাদা আর সবুজ সমুদ্র সম্পূর্ণ ঘিরে নিয়েছে বাতিঘরকে। নীল রেলিংএর একটু নিচে ঢেউ আছড়ে পড়ে ওপরের দিকে উঠছে। ছবিটা ঐ খানেই শেষ হওয়াতে , বাতিঘর থেকে আদৌ কোনো আলো এসে সমুদ্র পড়ছে কি না পরিতোষ জানে না। তবু ওর মনে হয় ছবিটা বাতিঘরেরই। ছবিতে একটা দরজা আর দুটো জানলা আছে। আর একজন লোক । ফুলপ্যান্ট,পুলওভার, পকেটে হাত দিয়ে পরিতোষের দিকে তাকিয়ে। তাকে সমুদ্রের লোক মনে হয় না। সে কি করে ঐ ঢেউএর মধ্যে পরিপাটি পোষাকে দাঁড়িয়ে আছে পরিতোষ জানে না। লোকটার দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে কোনো টেনশন নেই। সে যেন আজন্ম ঐ ঢেউএর মধ্যেই আছে। পরিপার্শ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। যেন ওখানেই তার আজন্ম বসবাস। আর যেন কোথাও যাবার নেই। অথচ তা নিয়ে দুঃখবোধও নেই লোকটার। সমুদ্র তাকে নিবিড় করে ঘিরে রেখেছে। পরিতোষ খেয়াল করে দেখেছে- লোকটা যে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার মাথার ওপরে দুটো জানলা। ছবির খুব কাছে গিয়ে পরিতোষ দেখেছে জানলায় আলো-খুব মৃদু অনুজ্জ্বল কিন্তু আলো। আরো খুঁটিয়ে দেখবে বলে মোবাইলে একটা ফোটো তুলে রেখেছে পরিতোষ।
    ছবির লোকটাকে নিয়ে পরিতোষ যে খুব গভীরভাবে ভাবে তা নয়, ছবিটা দেখতে দেখতে আবছা এরকমই কিছু মনে হতে থাকে পরিতোষের। আসলে পরিতোষ এরকমই। খুব গভীরভাবে কিছু অনুভব করেনা। এই যে এখন পরিতোষ একদম একা-সুপর্ণা নেই, সোহিনী, স্বাগতা কেউ নেই-সেভাবে কিছু কষ্ট হয় না ওর।মাঝে মাঝে সোহিনীকে মিস করে শুধু। আর সাটুকে। আসলে, সোহিনী আর পরিতোষ একটা বাঘ পুষেছিল খাটের তলায়।একদিন জু থেকে ফিরে রাতে পরিতোষের পাশে শুয়ে সোহিনী বলেছিল, বাবা সাটু এসেছে জানলা দিয়ে, ওকে খাটের তলায় শুতে দেব?বাঘটার নাম ছিল সাটু, চিড়িয়াখানা থেকে সোহিনীর সঙ্গে সঙ্গে এসেছে নাকি-সোহিনী এরকম বলেছিল। এরপরে ওরা একটা হাতির বাচ্চাও পোষে, সে অবশ্য বাথটাবে থাকত। পরিতোষ আর সোহিনী ছাড়া কেউ ওদের দেখেনি কোনদিন।রাতের দিকে , সোহিনীর পাশে শুয়ে গল্প বলত পরিতোষ। খোলা জানলা দিয়ে আকাশে তারা দেখা যেত। সোহিনী ফিসফিস করে বলত-বাবা, গন্ধ পাচ্ছ? সাটু এসেছে। এক এক দিন সত্যি যেন গন্ধ পেত পরিতোষ।ঘরে রুম ফ্রেশনার স্প্রে করত।
    সুপর্ণার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া শুরু হলে , সোহিনী বাবার হাত ধরে টানতে টানতে খাটের কাছে নিয়ে যেত। বলত-তুমি খাটের তলায় সাটুর কাছে থাকো। সুপর্ণা যখন মেয়েদের নিয়ে চলে গেল, সোহিনী পরিতোষকে বলেছিল, বাবা সাটু খাটের তলায় রইল, ওকে চিকেন দিও রোজ।
    অনেকদিন সাটুর কথা ভাবে নি পরিতোষ। আজ মাইক্রো ওয়েভে ডিনার গরম করতে করতে হঠাৎই মনে হল সাটুর কথা আর ফোনটাও বাজল তখনই। বাবিনদা মানে পরিতোষের পিসতুতো দাদা ফোন করে বলল, মামা পড়ে গেছে বাথরুমে,পা ভেঙেছে, নার্সিং হোম থেকে প্লাস্টার করে, কপালে স্টিচ করে বাড়ি ফিরেছে, এমনিতে স্টেবল, তবে বয়স হয়েছে বুঝতেই পারছিস।পারলে আসিস একবার।
    পরিতোষের মার খবর বাবিনদাই দিয়েছিল । সেই সময় ওর আর সুপর্ণার তুমুল গন্ডগোল চলছে। বাবিনদা ফোন করে বলেছিল, মামীমার হার্ট অ্যাটাক, বুড়ো, তুই চলে আয়। পরের দিন ফোন করে বলেছিল মামীমা ভেন্টিলেটরে। তুই আসবি না? এর পরেও যায় নি পরিতোষ। কেন যায় নি খুব নির্দিষ্ট করে জানে না পরিতোষ। শুধু ওর মনে হয়েছিল, ওকে সবাই সুপর্ণার কথা জিগ্যেস করবে। জিগ্যেস করবে -সুপর্ণা কেন এল না। জিগ্যেস করবে, সুপর্ণার সঙ্গে পরিতোষের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে কি না। সেই মুহূর্তে মার জন্য দুশ্চিন্তার থেকেও এই সব চিন্তা অনেক বড় ছিল পরিতোষের কাছে। অথচ সুপর্ণাও বারে বারে যেতে বলেছিল ওকে। বাবিনদা আবার ফোন করাতে বলেছিল, এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম, প্লেন মিস করেছি। বাবিনদা তখন আর কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দেয়। এতদিন পরে বাবিনদা ফোন করল আবার।

    পরিতোষ ছবির লোকটার দিকে তাকালো। ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাতিঘরের বারান্দায়। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে লোকটা দাঁড়িয়ে। পরিতোষ ঠিক করল, কলকাতা যাবে।


    পরিতোষ যখন বাড়ি ঢুকল, সত্যচরণ তখন পিঠে দুটো বালিশ দিয়ে বসে, গলায় ন্যাপকিন বাঁধা, কাজলদি খাইয়ে দিচ্ছে,টিভি চলছে ঘরে। লক্ষ্মীপিসি এবাড়িতে বহুদিন অছে-সেই ঠাকুমার আমল থেকে, তারই মেয়ে কাজল, সেও এবাড়িতেই। ওরাই সংসার সামলায় । অবশ্য সংসার বলতে সেরকম কিছু নেইও।
    পরিতোষ বাড়ি ঢুকতেই লক্ষ্মীপিসি ডুকরে উঠল-এতদিনে আইলা বুড়ো? সব তো শ্যাষ হইয়া গ্যাসে গিয়া।পরিতোষ মাথা নিচু করে বাবার ঘরে ঢুকলে সত্যচরণ ওর দিকে তাকিয়ে পরিষ্কার বলে-তোর মা কে আজ কেমন দেখলি বুড়ো? পরিতোষ অসম্ভব চমকে তাকালে কাজলদি আর লক্ষ্মীপিসি নিজেদের মাথার দিকে আঙুল দেখিয়ে মাথা নাড়তে থাকে। আর সত্যচরণ টিভির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে-ঐ যে টিভিতে বলছে-তোর মা আজ স্টেবল। পরিতোষ দেখল টিভিতে সুচিত্রা সেনের স্টীল ছবি। আর একজন কানঢাকা টুপি, সোয়েটার আর চশমা পরা -উত্তেজিত গলায় বলছে-হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, মহানায়িকা আজ উঠে বসেছেন, অবস্থা স্থিতিশীল। সত্যচরণ জড়িয়ে জড়িয়ে বলতে থাকে-আমাকে তো এরা যেতে দেয় না, টিভিতেই যা শুনি। তুই আজ কেমন দেখলি? কথা বলল?
    পরিতোষ আমতা আমতা করে বলল-ইন্টেনসিভ কেয়ার তো,ভেতরে ঢুকতে দেয় নি।
    বস্তুতঃ, শীতের কলকাতায় পরিতোষ এল বহুদিন পরে। বাবিনদা ছাড়া আর কারোর সঙ্গেই ওর সামান্যতম যোগাযোগও নেই। কেউ জানেও না ও কেমন আছে। জানেও না, ওর আর সুপর্ণার ছাড়াছাড়ির কথা। পরিতোষ কাউকে চিঠি লেখে না, মেইল করে না,ল্যান্ডলাইনের নম্বর শুধু বাবিনদা জেনেছিল সত্যচরণের থেকে। কাজলদিই শুধু একবার বলল, মেয়েদের স্কুল বলে বৌদি এলো না? পরিতোষ মাথা নেড়েছিল। তারপর দুটো হাতের তেলো ঘষছিল । লক্ষ্মীপিসি বলছিল-বুড়ো, শীত করত্যাসে নাকি? তোমাগো অইহানে না বরফ পড়ে!
    সকালে বেশ কুয়াশা। সত্যচরণ ঘুমিয়ে। পরিতোষ বেরিয়ে পড়ল। রোদ ওঠে নি ভালো করে।লোক্জন কান মাথা মুড়ে হাঁটছে। ফুটপাথে বাজার বসছে তার মধ্যেই। কমলালেবু, শাঁকালু, বড় বড় ফুলকপি। পরিতোষের একটা বোরোলীন কেনা দরকার মনে হচ্ছিল। সামনে রামকৃষ্ণ ফার্মাসি খোলা দেখে ঢুকল পরিতোষ। অত সকালেই দোকানে তিন চার জন । অ্যান্টিবায়োটিক, কাশির ওষুধ এই সব কিনতে দেখল পরিতোষ। দোকানে ছোটো টিভিতে সুচিত্রা সেন মালা গলায় গান গাইছেন । একজন বলছিল-অমন আর হবে না। আরেকজন বলছিল, আমরা মরে গেলে কোথাও থাকব না। সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমার রা তো টিভি খুললেই বেঁচে উঠবেন। তৃতীয়জন মাথা নেড়ে বলল -ভালো হয়ে যাবেন। কাল দিদি দেখে গেছেন।
    বোরোলীন কিনে পরিতোষ দোকানের বাইরে দাঁড়ালো। বোরোলীন কেনার পরে ওর কোথাও আর যাওয়ার নেই। মোবাইলটা বের করে বাতিঘরের লোকটার ছবি দেখতে লাগল পরিতোষ।এমন সময় একটি মেয়ে দু'কাঁধে দুটো ভারি ব্যাগ নিয়ে পরিতোষের সামনে দাঁড়ালো। উস্কো খুস্কো চুল, হাতে খড়ি উঠছে, গায়ে একটা বাদামী চাদর জড়ানো। জিগ্যেস করল,, দাদা, এখান থেকে আমরি যাব কি ভাবে জানেন? অমনি ওষুধের দোকানের পরের গন্তব্য পেয়ে গেল পরিতোষ।
    রামকৃষ্ণ ফার্মাসি থেকে আমরি হেঁটেই যাওয়া যায়। বাড়ির কাছে হওয়ায় পরিতোষের মা কে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল বাবিনদা, সেরকমই বলেছিল পরিতোষকে।মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে পরিতোষ বলল, এই তো সামনেই। আমিও তো যাচ্ছি। আমার মা ওখানে ভর্তি।পথে যেতে যেতে মেয়েটি বলল ,ওদের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। ওর মেজদিদি কাল আমরিতে ভর্তি হয়েছে অনেক রাতে । ও কাল আসতে পারে নি সঙ্গে।পাড়ার ছেলেরাই অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে এসেছিল। জামাইবাবুও এখন এখানে নেই। পরিতোষ সেভাবে কিছু শুনছিল না মন দিয়ে। কোথাও একটা যাওয়ার আছে আর ও সেখানে যাচ্ছে এটাই ভাবছিল।
    হাসপাতালে ঢোকার দরজা কাচের। ভেতরে ঢুকে আরাম লাগল পরিতোষের। মেয়েটি দু কাঁধের ব্যাগ পরিতোষের পায়ের কাছে রেখে -দাদা একটু নজর রাখবেন, টয়লেটে যেতে হবে-বলে চলে গেল। সারি সারি চেয়ার পাতা। পিছনের সারিতে দুতিনজনকে মাথায় ব্যাগ দিয়ে ঘুমোতে দেখল পরিতোষ। বাইরে গাড়ি এসে থামছিল, বা অ্যাম্বুলেন্স।কাচের দরজা ঘন ঘন খুলে যাচ্ছিল-লোক ঢুকছিল কিম্বা স্ট্রেচারে রোগীরা। রিসেপশনের কাউন্টারে বেশ ভীড়। বাকিরা কেউ চেয়ারে বসে, কেউ দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।মেয়েটি ফিরে এসে ব্যাগ নিয়ে আবার চলে গেল রিসেপশন ডেস্কের দিকে। পরিতোষ বসে রইল চেয়ারে। এখানেও টিভিতে সুচিত্রা সেনকে দেখা যাচ্ছে।অবস্থা স্থিতিশীল।
    ভাল লাগছিল পরিতোষের । ঝিম ধরে ওখানে বসে থাকতে। লোক বাড়ছিল। ভীড় বাড়ছিল। এই ভীড় , লোক, রোগ , শোক পরিতোষকে ঘিরে রাখছিল। ওকে এখানে কেউ কিছু জিগ্যেস করবে না-কেউ বলবে না ভালো আছেন? কবে এলেন? মা কে দেখতে আসেন নি কেন? বলবেনা -দাদা, বৌদি এলো না?মেয়েরা আসতে চায় না দাদুর বাড়ি? মোবাইল বের করে ছবিটা আবার দেখল পরিতোষ। তারপর নিজের হাতদুটো একবার ঘষে নিল ।
    সন্ধ্যার অনেক পরে বাড়ি ঢুকল পরিতোষ;সত্যচরণের ঘরে ঢুকে বলে এলো-মা ভালো আছে। রুটি আর মুরগীর ঝোল করেছিল কাজলদি। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন থেকে একই রুটিন। আমরির একতলায় সারি সারি চেয়ার, দেওয়ালে টিভি, দরজা খুলছে বন্ধ হচ্ছে-লিফটে ঢুকছে বেরোচ্ছে স্ট্রেচার, রোগী, ডাক্তার,রোগীর আত্মীয়স্বজন। রোগ, শোক, আরোগ্যর মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে শুধু ঝিমোয় পরিতোষ।
    সেই মেয়েটির সঙ্গে আবার দেখা হল তিনদিন পরে। পরিতোষকে বলল, আজ মেজদি অনেক ভালো, কাল জেনের্যাল বেডে দেবে বলেছে । আপনার মা কেমন আছেন, দাদা? পরিতোষ দেওয়ালের টিভিতে একবার চোখ বুলিয়ে বলল-স্টেবল। খিচুড়ি খেতে চাইছিল আজ।
    মেয়েটির সঙ্গে এক যুবক ছিল, কাঁধে ঝোলা।মেয়েটি বলল-আমার জামাইবাবু। কাচের দরজা দিয়ে ওদের দেখছিল পরিতোষ। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কাঠি আইসক্রীম চুষছে দুজনে, হাসছে।
    কলকাতায় থাকার বাকি সাতদিন এভাবেই কাটিয়ে দিল পরিতোষ। তারপর পালালো।


    নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে দেওয়ালে তাকালো পরিতোষ। সমুদ্র আছড়ে পড়ছে । লোকটা অবিচল দাঁড়িয়ে, পকেটে হাত। যেন সমুদ্রেই আজন্ম বসবাস। যেন সমুদ্র থেকে বেরোনোর কোনো ইচ্ছেও নেই লোকটার।
    ফোন বাজছিল। । কলকাতার নম্বর। বাবিনদা। পরিতোষ পৌঁছল কি না খোঁজ নিচ্ছে বা হয়তো বাবার কোনো খবর দেবে। ফোনটা ধরল না পরিতোষ।
    গত কদিন খুব নিশ্চিন্ত ছিল; আজ আবার একটা আবরণের প্রয়োজন-এই রকম মনে হচ্ছিল পরিতোষের। সেই আবরণ যার ভরসায় পকেটে হাত দিয়ে নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। মাইক্রো ওয়েভে ডিনার গরম করতে করতে দিল পরিতোষ। সেই সময় গন্ধটা নাকে এল। সাটু এসেছে-মনে হল পরিতোষের। পরিতোষ খাটের কাছে গেল , উবু হয়ে হয়ে বসে ডাক দিল-আয় সাটু, খাবি আয়। খাটের তলায় উঁকি দিল তারপর। কতদিন ভ্যাকুয়াম করা হয় নি। খাটের তলায় ধুলো, ধুলোমাখা রঙীন বল, ভাঙা পুতুল, লাল নীল মোজা আর স্কেচপেন । বাঘের গায়ের গন্ধে ঘর ভরে যাচ্ছিল অনেকদিন পরে। পরিতোষ একবার ছবির লোকটাকে দেখল। তারপর হাতের তালুদুটো একবার ঘষে নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে খাটের তলায় ঢুকে গেল ।
    ছবির লোকটাও পরিতোষকে দেখছিল। খাটের তলায় পরিতোষ যখন ঢুকে যাচ্ছিল, পকেট থেকে হাত বের করে বাড়িয়ে দিয়েছিল লোকটা। সঙ্গে সঙ্গেই আবার হাতদুটো ঘষে নিয়ে পকেটে পুরে নিয়েছিল। পরিতোষ এসব দেখে নি। খাটের তলায় ভাঙা পুতুলের বুকে জমা ধুলো। শুকনো হাত দিয়ে ধুলো মুছছিল পরিতোষ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ জুলাই ২০১৪ | ১৩৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঐশিক | 127.218.17.62 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০১:২৫74436
  • আমার বেশ ভালো লেগেছে,
    এরম আরো লেখা পাবার আশায় আমার মত চাষারা ওঁত পেতে বসে থাকে
  • সায়ন | 59.200.242.8 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৪:১৩74437
  • শান্তি নামল কেমন। ওই যে খাটের নীচে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে যাওয়ার মত আরাম। পিঠ ছোঁয়ানোর লোভ একটুকুন। গল্পটার মধ্যে দিয়ে অনেককে নিয়ে কেমন হেঁটে গেলাম। অমোঘ এমন একাকীত্ব আমার প্রত্যাশাবিহীন বেঁচে-থাকার প্রতিটা রন্ধ্রে ভবিষ্যদ্বাণীর মত সত্যি। জানি তো।
  • Atoz | 161.141.84.164 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৪:২৬74438
  • ছোটাই, হয়তো তুমি আহত হবে, তাই বলতে খুব সংকোচ হয়। তোমার লেখা খুব ঘন লাগে আমার, তীব্র সুন্দর কিন্তু খুব ঘনবুনোট। লেখাগুলোর মধ্যে যদি একটু একটু খোলা হাল্কা জায়্গা থাকতো, যেখানে কথা হচ্ছে, মানে সংলাপ আছে, বর্ণনা বা ভাবনাচিন্তা ঐ কথাগুলো দিয়েই প্রকাশ হচ্ছে, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমার পড়তে বেশ আরাম হতো। রিচ বিরিয়ানি খেতে খেতে হাঁসফাঁস করে উঠে একটু ডালভাত লেবুর টুকরো আর আচারের টাকনার আকাঙ্ক্ষা আরকি।
    একেবারেই আমার নিজের মনে হওয়া।
    এই লেখা এখন একবার একটু পড়লাম, ভালো লেগেছে। পরে আবার নতুন করে পড়বো।
  • | 24.97.234.97 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৫:১০74426
  • ইয়াহুউউ। পড়ছি আরাম করে।
    আপাতত মন্তব্য করে রাখি যাতে বাকীরাও পড়তে শুরু করে।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৫:২৫74427
  • দারুণ।
  • pharida | 52.104.24.203 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৮:০৭74428
  • এই লেখাটাও ইচ্ছেমতো পাঠককে চালিত করে।
    শুভেচ্ছা।
  • sosen | 24.139.199.11 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৮:০৯74429
  • জাস্ট টু গুড, টু উ উ গুড
  • kumu | 52.104.27.22 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৮:৪৫74430
  • ভাল লাগল বললে কম বলা হয়।খুব অনুভূতিময় লেখা।নানা রংএর পাতার মধ্যে একটা ছবি আর বাচ্চাদের খেলনা এই দৃশ্যটা খুব ভাবছি।
  • quark | 24.139.199.12 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৯:০৩74431
  • "বাবা সাটু খাটের তলায় রইল, ওকে চিকেন দিও রোজ" - চোখ ভ'রে আসে।
  • সে | 203.108.233.65 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৯:১৪74432
  • বলব? রাগ করবেন না তো?
    সেই বাঁধা ছক। পোষালো না।
  • sch | 126.203.221.42 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ০৯:২৩74433
  • অলরেডি মন খারাপ হওয়া একটা দুপুরে একটা লেখা যে মন খারাপ্টা এত্ত গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে - সেটা জানতাম না।

    মাঝে মাঝে ভাবি ওই আধুনিক বাংলা ছোটোগল্পের কথা ইত্যাদি যখন লেখা হবে - কেউ ইন্দ্রাণিদি'র নামটা জানবেনও না, না?
  • de | 190.149.51.68 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ১০:০৫74434
  • সত্যি, ভালো লাগলো বললে খুব কম বলা হয়! কত রকমের অনুভূতিরা খেলা করে ছোটাইয়ের গল্পে - -
  • i | 134.168.54.36 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৪ ১১:২০74435
  • সবাই যে পড়ছেন এতেই আমি ভীষণ খুশি। পরে কথা বলব সকলের সঙ্গে।
    এখন শুধু সে কে বলি-রাগ করব কেন বলুন তো? প্রশ্নই ওঠে না।আপনার যা মনে হয়েছে, পরিষ্কার লিখেছেন। ভালো লাগলো। ছক ভাঙার চেষ্টাই করে যাচ্ছি। পারছি না, আটকে যাচ্ছি কোথাও। দেখি কবে পারি।
  • kiki | 127.194.73.203 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৪ ০৫:৩৫74440
  • অনেকদিনপর লিখলে।ঃ)

    সায়নটাকে বে দিয়ে দেওয়া হোক। এটুকু ছেলেপিলের আবার একাকিত্বের রোগ কেন রে বাপু।:O :D
  • শিবাংশু | 127.201.148.177 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৪ ০৮:০৮74441
  • ইন্দ্রাণী,
    একটা ছক ভেঙে আরেকটা ছক তৈরি হয়। আমাদের ভাবনাচিন্তা, বেঁচে থাকা, এমন কি বেঁচে না থাকাও শেষ পর্যন্ত কি তার থেকে মুক্ত? নিজের ভিতর একলা হলে, মানুষ ভিড়ের ভিতরও একলা । তার কাছে নিজের শোবার ঘর আর হাসপাতালের বসার ঘর, তফাত নেই। একলাপনাই তার ছক । ওটা বোধ হয় ভাঙা যায়না।

    তবে তুমি আটকাচ্ছো কি ? মনে হলোনা তো... :-)
  • a x | 138.249.1.206 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৪ ০৮:৩৯74443
  • এই লেখাটা মনে হচ্ছিল অনেক বড় হবার কথা। হতে গিয়েও যেন হলনা।
  • san | 113.245.14.209 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৪ ১০:৫০74442
  • ছবির মত মুহূর্তেরা আসে যায় !
  • nina | 78.37.233.36 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৪ ১২:১২74439
  • ছোটাই
    তোর লেখাও ঠিক যেন -
    সমুদ্র আছড়ে পড়ছে ---ভাবনার সমুদ্র------
    বাহ!
  • kumu | 132.161.6.111 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৬:১৭74445
  • এমন লেখাকে যে টেখা বলে তার মাথায় গাঁট্টা।
    কুপরিবাহী নামটি নিয়ে একটু আলোচনা হবে নাকি?দেখি আমি যেমন ভেবেছি তার সঙ্গে মেলে কিনা।
  • i | 134.170.239.205 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৯:১৭74444
  • অক্ষদা,
    কনফিউশন হয়-মাথার মধ্যে সব যেন জট পাকায়-কোথায় শুরু কোথায় বা শেষ -তল পাই না। গল্পের মধ্যে গল্প গুঁজে দিতে ইচ্ছে হয়-আবার কনফিউশন হয়, আবার থমকাই। টল্প আর গল্প হয় না। দেখি কবে পথ পাই।

    শিবাংশুদা,
    নিজের কাছেই আটকাই। যে যাই বলুক, আমি তো জানি-আমার লাগে নাই সে সুর, আমার বাঁধে নাই সে কথা, শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে গানের ব্যাকুলতা। ঐ ব্যাকুলতাটুকুই সম্বল।

    স্যান,
    ছবি ছাপিয়ে কোথাও গিয়ে কি দাঁড়ায় এ টেখা?

    কিকি যে-
    আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার রেসিপি নিয়ে রান্না করে, খাওয়ার পরে স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে গেছ। ফিরেছ দেখে , আর পড়লে বলে থেন্কু।ঃ)

    নিনাদিদি,
    যে সমুদ্র আছড়ায় অহরহ মনের মধ্যে তাকে যেন শব্দে ধরতে পারি কোনোদিন-আশীর্বাদ কোরো।

    এটু জেড,
    বুনোটের কথা মাথায় রাখব। আর বাকি কথা তো ভাটেই কইলাম।

    সায়ন,
    কৃতজ্ঞ রইলাম।

    ঐশিক,
    খুব খুশি হলাম। ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা।

    দে,
    সব অনুভূতিকে আর ধরতে পারলাম কই?

    এস সি এইচ,
    এইটা একটু বেশি ইয়ে হয়ে গেল না? যতদিন লিখতে পারি লিখব, আপনারা পড়ে যদি এইটুকুও ভাবেন যে আমি চেষ্টা করতাম একটু অন্য রকম করে লিখতে-সেই অনেক খানি।

    সে,
    আগেই লিখেছি আপনাকে। আবারও বলি। আপনার স্পষ্ট কথা আমার ভালো লেগেছে।

    কোয়ার্ক,
    আপনার সঙ্গে আগে কথা হয় নি বোধ হয়। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর জানানোর জন্য। খুব ভালো লাগল , সত্যিই।

    কুমুদিদি,
    সব রং, সব অনুভূতি ধরতে পারি নি এখনও। অনেক অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা পড়ার জন্য আর জানানোর জন্য।

    সোসেন,
    থ্যাঙ্ক ইয়ু, থ্যাঙ্ক ইয়ু

    ফরিদা,
    অনেক ধন্যবাদ। অশেষ কৃতজ্ঞতা।

    বি,
    আপনার সঙ্গেও আগে কথা হয় নি সেভাবে। অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলো খুব।

    দ,
    অনেক ধন্যবাদ লেখাটা দৃশ্যমান করার জন্য। সময়মত জানাস কেমন লেগেছে। একদম হাত খুলে সমালোচনা করিস। ভালো লাগবে।

    ইতি ছোটাই
  • robu | 122.79.37.72 (*) | ২০ জুলাই ২০১৪ ০৫:৩২74447
  • খুব সুন্দর লাগল।
  • i | 134.171.1.245 (*) | ২০ জুলাই ২০১৪ ০৫:৩৭74446
  • কুমুদিদি,
    তুমি নাম নিয়ে যেমন ভেবেছ নিশ্চয়ই তাই। এতে কোনো ঘোরপ্যাঁচ নাই তো।

    টেখা কেন বলি, এই টল্পটা নিয়েই ছোটো করে বলি। এই যে পরিতোষ এঁর একলাপনা, না বোঝা বিষাদ, পলায়নী মনোবৃত্তি, স্বার্থপরতা-এসবের সঙ্গেও আছে কৌতুকময় আচরণ-যখন সে কনফিউসড, যখন সে নিজেকে লুকোতে চায়, তার আচরণে একটা কৌতুক জন্মাবার কথা পাঠকের মনে।পরিতোষের ' প্লেন মিস করা', সুচিত্রাসেন এর প্রসঙ্গ-এসবই এর মধ্যে আসে...এইখানেই সমস্ত অনুভূতিকে ধরতে পারি নি। এইখানেই ব্যর্থতা। এইখানেই লেখা না হয়ে টেখা হয়ে যাচ্ছে।

    ইতি ছোটাই
  • pragati | 126.68.64.245 (*) | ২১ জুলাই ২০১৪ ১০:১২74448
  • লিখো, আরো...
  • i | 147.157.8.253 (*) | ২২ জুলাই ২০১৪ ১০:৩০74449
  • রোবু,
    অনেক অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা।

    প্রগতি,
    না লিখলে বাঁচবই না বোধ হয়...

    ইতি ছোটাই।
  • তাপস | 122.79.39.34 (*) | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ০৭:১৬74450
  • এই তো
  • Abhyu | 107.81.97.76 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৪ ১০:৩৭74451
  • থ্যাঙ্কু তাপসদা।
  • U | 172.229.184.102 (*) | ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০০74452
  • পাতায় পাতায় যে এত মণিমুক্তো ছড়িয়ে রেখেছ জানতাম না তো। পড়ছি একে একে। তিনটে লেখা পড়লাম। তিনটেই বড় ইনটেন্স লাগল। দম আটকে আসল। কিন্তু সত ( খন্ড ত) লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন