এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সবার জন্য স্বাস্থ্যঃ মরীচিকা নয়

    Punyabrata Goon লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১৩৫০ বার পঠিত
  • পয়সা না থাকলে ডাক্তার দেখানো যাবে না-ওষুধ কেনা যাবে না। ডাক্তার অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখলেও আপনি কিনতে বাধ্য। প্রয়োজনীয় ওষুধটা জেনেরিক বা কমদামী ব্র্যান্ডে পাওয়া গেলেও ডাক্তার লিখবেন দামী ব্র্যান্ড। যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বলা হল আপনাকে, সেগুলো করাতে হবে ডাক্তারের বলে দেওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে, হয়ত সেখান থেকে ডাক্তার কাটমানি পাবেন। স্পেশালিস্টকে রেফার করার ক্ষেত্রেও অনেকক্ষেত্রে কাটমানির গল্প।

    মনে হয় না অবস্থাটা বদলানো দরকার?
    যদি এমন হতো যে, অসুস্থ হলে আপনি কোন ডাক্তারকে দেখাবেন তা পূর্বনির্ধারিত, সেখানে আপনাকে কোনও পয়সা খরচ করতে হবে না। কোন সমস্যায় ডাক্তার কোন পরীক্ষা করাবেন তা ঠিক করতে আছে স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন অর্থাৎ প্রামাণ্য চিকিৎসা বিধি। কোথা থেকে পরীক্ষা হবে তাও পূর্বনির্দিষ্ট, সেখানেও আপনার পয়সা খরচ হবে না। ডাক্তার ওষুধ লিখবেন প্রামাণ্য চিকিৎসা বিধি মেনে, ওষুধ পাবেন আপনি বিনামূল্যে। কোন বিশেষজ্ঞকে ডাক্তার রেফার করতে পারবেন তা ঠিক করা আছে, আপনার অর্থাৎ রোগীর প্রয়োজন ছাড়া সেখানে রেফারাল করার কোনও উপায়ই নেই। হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা, প্রাথমিক-মধ্যম-অন্তিম স্তরের যেকোনো চিকিৎসা করতে খরচ হবে না!

    যদি দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা চলত তিনটে মূল নীতির ভিত্তিতে! ১) সে সবার প্রয়োজন মেটাবে,
    ২) যেখানে পরিষেবা দেওয়া হবে সেখানে মূল্য লাগবে না।
    ৩) পরিষেবা রোগীর প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করবে তার পয়সা দেওয়ার ক্ষমতার ওপর নয়।

    যদি স্বাস্থ্য পরিষেবা এমন হত!
    ১) সবার জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা দেওয়া হয়।
    ২) পরিষেবা ব্যক্তির অর্থপ্রদানের ক্ষমতার ওপর নয়, তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দেয়।
    ৩) পরিষেবার লক্ষ্য উৎকর্ষ ও পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মানে পৌঁছানো।
    ৪) পরিষেবার সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রে থাকেন রোগীরা।
    ৫) রোগী, স্থানীয় জনসমূদায় ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে স্বাস্থ্য-পরিষেবা সাংগঠনিক সীমা অতিক্রম করে ও অন্যান্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করে।
    ৬) করদাতাদের অর্থের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে ও সীমাবদ্ধ সাধনের সবচেয়ে কার্যকর, স্বচ্ছ ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার করতে পরিষেবা দায়বদ্ধ থাকে।
    ৭) পরিষেবার দায়বদ্ধতা থাকে জনসাধারণ, সমাজ ও রোগীদের প্রতি।

    যদি স্বাস্থ্য পরিষেবা এই মূল্যবোধগুলো নিয়ে কাজ করত!
    একসাথে রোগীর জন্য কাজ করা,
    রোগীর প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শন,
    চিকিৎসার মানের প্রতি দায়বদ্ধতা,
    রোগীর প্রতি সহমর্মিতা,
    জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন,
    প্রত্যেককেই গুরুত্ব দেওয়া।

    এক স্বপ্নের সমাজের গল্প মনে হচ্ছে?
    না, ওপরে বলা নীতি-মূল্যবোধগুলো হল বিলেতের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা বা National Health Service-এর তিনটে মূল নীতি, পরিচালনার সাতটা নীতি ও মূল্যবোধ।

    এই ধরনের স্বাস্থ্য-পরিষেবাকে বলা হয় universal health care বা সর্বজনীন স্বাস্থ্য, সহজ কথায় সবার জন্য স্বাস্থ্য। সর্বজনীন স্বাস্থ্য বা Universal Health Care এমন এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে দেশের সমস্ত নাগরিকের চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং চিকিৎসার খরচ দেওয়া হয়।

    সবার জন্য স্বাস্থ্য
    ১৯৭৮-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ৬-১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখ সোভিয়েত সোস্যালিস্ট রিপাব্লিকের রাজধানী আলমা আটায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয়। সেই সম্মেলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল—২০০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য।

    ১৯৮১-তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৎকালীন ডিরেক্টর জেনেরাল হ্যাল্ডেন মাহলার (Halfdan Mahler) ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ বিষয়টা কি তা বুঝিয়েছিলেন এইভাবে—
    “সবার জন্য স্বাস্থ্য মানে একটা দেশের সমস্ত মানুষের নাগালে স্বাস্থ্যকে নিয়ে আসা। আর ‘স্বাস্থ্য’ মানে ভালো থাকা—কেবল চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নয়, এমন এক অবস্থা যাতে একজন মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে উৎপাদনক্ষম জীবন যাপন করতে পারেন। সবার জন্য স্বাস্থ্য মানে স্বাস্থ্যের পথে সকল বাধা সরিয়ে ফেলা- অপুষ্টি, অজ্ঞানতা, দূষিত জল, অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান; এছাড়া ডাক্তার, হাসপাতালের শয্যা, ওষুধ ও টীকার অভাবের মতো বিশুদ্ধ ডাক্তারী সমস্যাগুলোরও সমাধান করা।”

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বলেছিল—
    •সবার জন্য স্বাস্থ্য মানে স্বাস্থ্য-কে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা, কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে নয়।
    •সবার জন্য স্বাস্থ্য শেষ পর্যন্ত সবার সাক্ষরতা দাবী করে। যতক্ষণ না এমনটা হচ্ছে ততক্ষণ অন্তত প্রত্যেককে বুঝতে শুরু করতে হবে স্বাস্থ্য মানে কি।
    •চিকিৎসা-পরিষেবা ও জনস্বাস্থ্যে লাগাতার উন্নয়নের ওপর ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’নির্ভরশীল। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে সবার কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে, যাতে প্রতি গ্রামে বুনিয়াদী চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যায়; সঙ্গে আরও বিশেষজ্ঞ পরিষেবায় পাঠানোর ব্যবস্থা থাকবে। সবাইকে টীকা লাগানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
    •‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ আসলে একটা holistic ধারণা যাতে চিকিৎসাবিদ্যা ও জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, বাসস্থান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় উদ্যোগের প্রয়োজন। কেবল ডাক্তারী পরিষেবা ঝুপড়ি-তে স্বাস্থ্য পৌঁছাতে পারবে না। এসব মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এক সম্পূর্ণ নতুন জীবনযাত্রা চাই, নতুন সুযোগ চাই ভালোভাবে বাঁচার।

    আমাদের দেশ আর সবার জন্য স্বাস্থ্য
    ১৯৭৮ সালের ‘২০০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য’-এর ঘোষণায় সাক্ষরকারী প্রায় দু’শ দেশের মধ্যে ছিল আমাদের দেশও। কিন্তু আজ ২০০০ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ বছর পর কোথায় আমাদের দেশ?

    আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য-সূচকগুলো এইরকমঃ—
    •এক মাসের নিচে শিশুদের মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত শিশু জন্মে ৩২ (২০১০-এর তথ্য), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৬ নং স্থানে, আরও খারাপ কেবল পাকিস্থান, আফগানিস্থান।
    •এক বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত শিশু জন্মে ৪৮ (২০১০-এর তথ্য), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৬ নং স্থানে, আরও খারাপ পাকিস্থান, আফগানিস্থান।
    •৫ বছর বয়সের নিচে মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত শিশু জন্মে ৬৩(২০১০-এর তথ্য), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৬ নং স্থানে, আরও খারাপ পাকিস্থান, আফগানিস্থান।
    •প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর হার ২১২ (২০০৯), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৪নং স্থানে।
    •জন্মের সময় সম্ভাব্য আয়ু ৬৫ বছর (২০০৯), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৪নং স্থানে।
    •পানীয় জল পান ৮৮% মানুষ (২০০৮), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৪নং স্থানে।
    •শৌচাগারের সুবিধা আছে ৩১ শতাংশের (২০০৮), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৭ নং স্থানে, নেপালের সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ।
    •চিকিৎসক ৬.৪৯ জন প্রতি ১০ হাজারে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৩নং স্থানে।
    •নার্স ও দাই, ৯.৯৬ জন প্রতি ১০ হাজারে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৩নং স্থানে।
    •হাসপাতাল শয্যা ৯.০০ টা প্রতি ১০ হাজারে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৫নং স্থানে।
    •জিডিপি-র ৪.২ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে মোট খরচ ( ২০১০), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৫নং স্থানে।
    •স্বাস্থ্যখাতে মোট খরচের ২৯.২ শতাংশ সরকারী ব্যয় ( ২০১০), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৭নং স্থানে, ভারতের চেয়ে খারাপ কেবল আফগানিস্থান।
    •স্বাস্থ্যখাতে মোট খরচের ৭০.৮ শতাংশ বেসরকারী খরচ ( ২০১০), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ২নং স্থানে, ভারতের চেয়েও খারাপ আফগানিস্থান।
    •স্বাস্থ্যখাতে বেসরকারী খরচের ৮৬.৪ শতাংশ রোগীর পকেট থেকে যায় (২০১০), দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারত ৪নং স্থানে।

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নথি থেকে দেখে নেওয়া যাক আমাদের ভৌগোলিক অঞ্চল ও সমগ্র পৃথিবীর তুলনায় আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি—
    ভারতঅঞ্চল পৃথিবী
    শহরে বাস করে জনসংখ্যার %৩১৩৪৫২
    জন্মের সময় সম্ভাব্য আয়ু (বছরে)৬৫৬৭৭০
    ৫ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার (প্রতি ১০০০ জীবিত শিশু জন্মে)৬১৫৫৫১
    মাতৃমৃত্যুর অনুপাত (প্রতি ১ লক্ষ জীবিত শিশু জন্মে)২০০২০০২১০
    যক্ষ্মারোগের প্রাদুর্ভাব (প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায়)২৪৯২৭১১৭০
    ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব (প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায়)১৯৭৩১৭৭৩৪০৮২

    সবার জন্য স্বাস্থ্য ও যোজনা কমিশনের উচ্চ-স্তরীয় বিশেষজ্ঞদল
    ২০০০-এ সবার জন্য স্বাস্থ্য-এর লক্ষ্যে পৌঁছনো যায় নি। এখনও ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলো। তাই জনগণের স্বাস্থ্যের কথা তাদের অন্তত মুখে বলতে হয়। সে কারণেই বোধ হয় দ্বাদশ পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনার আগে ২০১০-এর অক্টোবরে যোজনা কমিশন এক উচ্চ-স্তরীয় বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে সবার জন্য স্বাস্থ্য-পরিষেবা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে। দলের প্রধান ছিলেন পাব্লিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া-র ডা শ্রীনাথ রেড্ডি। বিশেষজ্ঞ দল রিপোর্ট পেশ করে ২০১১-র নভেম্বরে।

    বিশেষজ্ঞদলের পর্যবেক্ষণ
    বিস্তারিত পর্যবেক্ষণে তাঁরা যে তথ্যগুলো পেলেন, তার কিছু অন্তত দেখে নেওয়া যাক।

    প্রধান স্বাস্থ্য-সূচকগুলোঃ অন্য কিছু দেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা
    সূচকভারতচীন ব্রাজিলশ্রী লঙ্কা থাইল্যান্ড
    নবজাতকের মৃত্যু-হার/ ১০০০ জীবিত শিশু জন্ম৫০১৭১৭১৩১২
    ৫ বছরের নীচে মৃত্যুর হার/ ১০০০ জীবিত শিশু জন্ম৬৬১৯২১১৬১৩
    পুরো টীকা পেয়েছে (%)৬৬৯৫৯৯৯৯৯৮
    দক্ষ ব্যক্তি দ্বারা প্রসব ৪৭৯৬৯৮৯৭৯৯
    সূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০১১

    স্বাস্থ্যখাতে খরচে সরকার কতটা গুরুত্ব দেয়ঃ ভারত ও আরও কটা দেশ

    জিডিপি-র % হিসেবে মোট সরকারী ব্যয়
    মোট সরকারী ব্যয়ের % হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ব্যয়
    জিডিপি-র % হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ব্যয়
    ভারত৩৩.৬ ৪.১ ১.৪
    শ্রী লংকা২৪.৫৭.৩১.৮
    চীন২২.৩ ১০.৩ ২.৩
    থাইল্যান্ড২৩.৩ ১৪.০৩.৩
    সূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যভান্ডার (২০০৯)

    ভারতের স্বাস্থ্য চিত্র
    কম ওজনের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শিশু (৩ বছরের নীচে ৪৬%)
    বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত শিশু-জন্মে ৫০;
    প্রতি ১০০০০০ জীবিত শিশু-জন্মে ২১২ জন মা মারা যান;
    জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫-র মধ্যে নবজাতকের মৃত্যু-হার ১০০০-এ ৩৮ এবং মায়ের মৃত্যুর হার ১০০০০০-এ ১০০-তে নামিয়ে আনা ;
    অসংক্রামক রোগের বোঝা বেড়ে চলেছে এই ভাবে—
    ২০১১
    (১০ লক্ষ)২০৩০
    (১০ লক্ষ)
    ডায়াবেটিস ৬১১০১
    উচ্চ রক্ত চাপ১৩০২৪০
    তামাকের কারণে মৃত্যু১+২+
    স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু (৩৫-৬৪ বছর)৯.২১৭.৯

    শিশু-মৃত্যুঃ রাজ্যগুলোতে বৈষম্য
    নবজাতকের মৃত্যু-হার মধ্য প্রদেশ : ৭২/১০০০
    উত্তর প্রদেশ : ৬৯/১০০০
    তামিল নাডু : ৩৫/১০০০
    কেরালা : ১৩/১০০০
    সদ্যজাতের মৃত্যু-হার কেরালায় যেখানে ১১/১০০০, সেখানে উড়িষ্যায় ৫৩/১০০০।

    আরও কিছু তথ্য—
    গ্রামীণ এলাকায় ১৮% ও শহরী এলাকায় ১০% অসুস্থ কোনও চিকিৎসা পান না।
     গ্রামীণ এলাকার ১২% ও শহরের ১% বাসিন্দা চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছতেই পারেন না।
     ২৮% গ্রামবাসী ও ২০% শহরবাসীর চিকিৎসা করানোর পয়সাই নেই।
     যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁদের ৪০%ও বেশী ক্ষেত্রে চিকিৎসা করাতে ধার নিতে হয় বা সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়।
     হাসপাতালে ভর্তি মানুষদের ৩৫%-এরও বেশী হাসপাতালের খরচের ভারে দারিদ্রসীমার নীচে চলে যান।
     জনসংখ্যার ২.২%-এর বেশী হাসপাতালের খরচের ভারে গরীব হয়ে যান।
     নাগরিকদের অধিকাংশ যাঁরা স্বাস্থ্য-পরিষেবার সুযোগ নিতে পারেন না তাঁরা কম আয়ের মানুষ। তথ্য-সূত্রঃ NSSO (২০০৬)

    হাসপাতালের শয্যাঃ নানা দেশের তুলনায় ভারত
    দেশপ্রতি হাজার জনসংখ্যায় শয্যাসংখ্যা
    শ্রীলংকা৩.১
    চীন ৩.০
    থাইল্যান্ড২.২
    ব্রাজিল২.৪
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৩.১
    ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য৩.৯
    ভারত০.৯
    নিকারাগুয়া০.৯
    টোগো০.৯
    ইন্দোনেশিয়া০.৯
    সূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০১১

    ভারতে স্বাস্থ্য-পরিষেবাঃ গ্রাম শহরে বৈষম্য
    •৮০% ডাক্তার,৭৫% ডিস্পেন্সারী, ৬০% হাসপাতাল আছে শহরে।
    •পাশকরা ডাক্তারঃ শহরে ১১.৩/১০০০০ ও গ্রামে ১.৯/১০০০০।

    বিশেষজ্ঞদলের সুপারিশ
    বিশাল এক রিপোর্টে এই সুপারিশগুলো পেশ করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এরকম—
    বিশেষজ্ঞ দল বলে স্বাস্থ্যখাতে সরকারী ব্যয় জিডিপি-র ১.৪% থেকে বাড়িয়ে দ্বাদশ পরিকল্পনার শেষে অন্তত জিডিপি-র ২.৫% এবং ২০২২-এর মধ্যে অন্তত ৩% করা হোক।
    বিশেষজ্ঞ দল বলে ওষুধ কেনায় সরকারী ব্যয় জিডিপি-র ০.৫% বাড়ালেই সবার জন্য বিনামূল্যে অত্যাবশ্যক ওষুধ দেওয়া যায়। তেমনটা নিশ্চিত করা হোক।
    প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের এক National Health Entitlement Card থাকবে যা দেখিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্তে বিনামূল্যে প্রাথমিক, মধ্যম স্তরের ও উচ্চ স্তরের স্বাস্থ্য-পরিষেবা পাওয়া যাবে। কি পরিষেবা পাওয়া যাবে সেগুলো ঘোষিত থাকবে ন্যাশনাল হেলথ প্যাকেজ-এ।
    সমস্ত পরিষেবা সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেখানে সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কোনও পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে সেই চিকিৎসাপরিষেবা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার তাদের স্বাস্থ্য দপ্তর বা এই কাজের জন্য স্থাপিত আধাসরকারী স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মারফৎ কিনবে, রোগীকে পরিষেবা কিনতে হবে না।
    ইএসআই, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনার মতো সরকারী পয়সায় চলা সমস্ত বীমা-প্রকল্পগুলোকে কালক্রমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সব সরকারী স্বাস্থ্যবীমা কার্ডের বদলে থাকবে National Health Entitlement Cards. শ্রম-মন্ত্রক রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা-র জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে, তা হবে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কর্মকান্ডের মেরুদন্ড। এই পরিকাঠামোকে স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে আনা হোক।
    চিকিৎসাব্যবস্থাকে নতুন দিশা দেওয়া হোক যাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় জোর দেওয়া হবে।
    জেলা হাসপাতালগুলোকে মজবুত করা হোক।
    বিভিন্ন স্তরে পর্যাপ্ত সংখ্যায় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য কারিগরীবিদ নিশ্চিত করতে হবেঃ-
    ক) জোর দিতে হবে প্রাথমিক স্তরে।
    খ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নর্ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যের জন্য মানব সম্পদ (ডাক্তার, নার্স, দাই)-এর ঘনত্ব বাড়াতে হবে।
    জেলা স্বাস্থ্য জ্ঞান কেন্দ্র স্থাপন করা হোক।
     স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মানব সম্পদের জাতীয় কাউন্সিল স্থাপন করা হোক।
     বর্তমান গ্রাম স্বাস্থ্য সমিতি বা স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমিতি-গুলোকে হেলথ কাউন্সিলে রূপান্তরিত করা হোক, যাতে গ্রামবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে।
    ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক।
     জাতীয় ও রাজ্য ওষুধ সরবরাহ লজিস্টিক কর্পোরেশন স্থাপন করা হোক।
     ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে মজবুত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রককে ক্ষমতা দেওয়া হোক।
    সর্বভারতীয় এবং রাজ্য-স্তরের পাব্লিক হেলথ সার্ভিস ক্যাডার এবং রাজ্যস্তরে বিশেষ হেলথ সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট ক্যাডার স্থাপন করা হোক যাতে জনস্বাস্থ্য বেশি গুরুত্ব পায় এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পরিচালনা মজবুত হয়।
    জাতীয় স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক এবং উন্নয়ন অধিকরণ (National Health Regulatory and Development Authority) স্থাপন করা হোক।
    জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন অধিকরণ স্থাপন করা হোক যার প্রধান উদ্দেশ্য হবে: ওষুধ ও ডাক্তারী যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করা, এবং এগুলোকে নিরাপদে ও সুলভে রোগীদের নাগালে পৌঁছানো।

    এই কমিটির সুপারিশের দুটো বিষয় আলাদা করে বলা দরকার—১) কমিটি রোগীদের কাছ থেকে ইউজার ফি নেওয়ার বিরোধিতা করেছে, ২) স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে বীমার বিরুদ্ধে এরা।

    কিন্তু এই বিশাল পরিষেবার খরচ কোথা থেকে আসবে?
    বিশেষজ্ঞ দল হিসেব করে দেখিয়েছিলেন—চিকিৎসা-পরিষেবার অর্থের মূল উৎস হবে সাধারণ কর, সঙ্গে যাঁরা মাইনে পান বা আয়কর দেন তাঁদের মাইনে বা করযোগ্য আয়ের অনুপাত হিসেবে অতিরিক্ত বাধ্যতামূলক অর্থ।

    হতাশ করল দ্বাদশ পরিকল্পনা
    শ্রীনাথ রেড্ডি কমিটি-র সুপারিশ দেখে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম—এবার বুঝি দেশের সব মানুষের নাগালে স্বাস্থ্য-পরিষেবা আসতে চলেছে। কিন্তু হতাশ করল দ্বাদশ পরিকল্পনাঃ
    জিডিপি-র ২.৫% নয়, স্বাস্থ্যখাতে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হল ১.৫৮%।
    বলা হল কেন্দ্রীয় বরাদ্দ হবে রাজ্য নিজে স্বাস্থ্যখাতে যা ব্যয় করে তার চেয়ে কিছু বেশী। কেন্দ্র কর বাবদ রাজ্য থেকে যে অর্থ নেয়, ফেরত দেয় তার ১৫-২০%। বেশীর ভাগ রাজ্য স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়াতে পারবে না।
    জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন, জননী সুরক্ষা যোজনা, পরিবার পরিকল্পনা, টীকাদান, যক্ষ্মা-ম্যালেরিয়া-ডায়েরিয়া প্রতিরোধ, ইত্যাদি সবই এখন চলে কেন্দ্রের অর্থে। রাজ্যে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের অর্ধেক যদি কেন্দ্র দেয়, তবে ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতো দূরের কথা, কমে যাবে।
    বলা হয়েছে সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবায় নিজের কেন্দ্রীয় ভূমিকা ত্যাগ করে মূলত ম্যানেজার হিসেবে কাজ করবে।বেসরকারী স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্যবীমার ভূমিকা হবে প্রধান। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর ম্যানেজড হেলথ কেয়ার-এর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
    উচ্চ-স্তরীয় বিশেষজ্ঞ দল-এর সুপারিশ করা হেলথ প্যাকেজ ও প্রয়োজনে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির বদলে সরকারের পয়সায় বেসরকারী স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি করার কথা বলা হয়েছে।
    লাভজনক তৃতীয় স্তরের পরিষেবাকে তুলে দেওয়া হবে কর্পোরেট হাসপাতালের হাতে। সরকারী অনুদানে বেসরকারী স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীরা ও অসরকারী সংস্থাগুলো নতুন চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তুলবে। যেটুকু সরকারী ব্যবস্থা আছে, সেটুকুও গুটিয়ে ফেলা হবে।
    প্রতি পরিবার নিজের পছন্দমত বেসরকারী হাসপাতাল বেছে নেবেন, সরকার একটা সীমা অবধি তার মূল্য চুকিয়ে দেবে।
    জাতীয় স্বাস্থ্য প্যাকেজের উল্লেখ অবধি নেই।
    চিকিৎসকের অভাব মেটানোর জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও মেডিকাল কলেজ গড়ে তোলার জন্য সরকার উৎসাহ দিতে মোট খরচের ২০% অবধি অনুদান দেবে।
    তাদের আয় বাড়ানোর জন্য করছাড় দেওয়া হবে।
     সরকারী অর্থে গড়ে তোলা বেসরকারী হাসপাতালে ইউজার ফি সবই নেওয়া যাবে।
    দ্বাদশ পরিকল্পনায় উল্লেখ নেই— জেনেরিক নামের ওষুধ প্রচলনের, বিনা পয়সায় অত্যাবশ্যক ওষুধ সরবরাহের, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের।

    তাহলে কি সবার জন্য স্বাস্থ্য এক অলীক কল্পনা?
    বিলেতের এনএইচএস-এর কথা আগেই বলেছি। বলতে পারেন একটা উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশে যা সম্ভব, তা ভারতের মতো গরীব দেশে সম্ভব নয়। কিন্তু জানেন কি পৃথিবী-র প্রায় অর্ধেক দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্য আছে—তার মধ্যে উন্নত বা ধনী দেশ যেমন আছে, তেমনি আছে উন্নয়নশীল বা গরীব দেশও।
    সবচেয়ে প্রথম যে ছোট দেশ তার সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব নেয় সে হল নরওয়ে, ১৯১২ সালে।
    তারপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৩৭ সালে সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্যকর করে, ১৯৬৯ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের মানুষও শহরাঞ্চলের মানুষের সমান সুবিধা পেতে থাকেন।
    ১৯৩৩-এ দুই বিদেশী জনস্বাস্থ্যবিদ ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের স্যার আর্থার নিউসহোম ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের জন অ্যাডামস কিন্সবারি সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা পর্যবেক্ষো করতে যান। তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা তাঁরা লেখেন ‘Red Medicine: Socialized Health in Soviet Russia’-এ। এই গ্রন্থের ভূমিকায় তাঁরা বলেন—‘একজন রাশিয়ান অসুস্থ হলে সরকার তার জন্য কিছু করে। বাস্তবে সরকার ইতিমধ্যেই করে রেখেছে-সোভিয়েত রাশিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ব্যক্তি মানুষের স্বাস্থ্য সামগ্রিক ভাবে সমাজেরই দায়িত্ব। বাস্তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর একমাত্র দেশ যা তার সীমায় বসবাসকারী সমস্ত পুরুষ, মহিলা ও শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ও রোগ-চিকিৎসার জন্য এক পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গঠন ও পরিচালনা করছে।’
    এরপর সবার জন্য স্বাস্থ্যের পথে হাঁটা দেশগুলো এরকমঃ
    ১৯৩৮ নিউজিল্যান্ড ও জাপান
    ১৯৪১ জার্মানী
    ১৯৪৫ বেলজিয়াম
    ১৯৪৮ ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য

    ১৯৪৯-এ চীন শোষণ-মুক্ত হয়। ১৯৫০ সালের আগস্টে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম জাতীয় স্বাস্থ্য কংগ্রেসে চারটে মূল নীতি স্থির করা হয়ঃ
    সমস্ত শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যের জন্য চিকিৎসা-ব্যবস্থা,
    রোগ-চিকিৎসার চেয়ে রোগ-প্রতিরোধে বেশী গুরুত্বদান,
    পাশ্চাত্য চিকিৎসা-পদ্ধতির সাথে প্রাচীন চীনা পদ্ধতির সমন্বয় সাধন,
    স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কাজকর্মকে গণ-আন্দোলনের সাথে যুক্ত করা।
    তাঁদের আরও দুই ঘোষিত নীতি ছিল—১)গ্রামাঞ্চলের ওপর জোর দাও (Put Emphasis on Rural Areas), ২) রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রক অবস্থানে রাখ (Put Politics in Command)।
    সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সমবায় ভিত্তিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা (Co-operative Medical Care System)-এর মাধ্যমে সবার জন্য পৌঁছে দেওয়া হতে থাকে।

    তারপর
    ১৯৫০ কুয়েত
    ১৯৫৫ সুইডেন
    ১৯৫৭ বাহরেন
    ১৯৫৮ ব্রুনেই
    ১৯৬০ কিউবা
    ১৯৬০-এ কিউবা শোষণ-মুক্ত হয়। ১৯৬০-এ বিপ্লবী, চিকিৎসক ও কিউবার মন্ত্রী চে গুয়েভারা ‘On Revolutionary Medicine’-এ বলেন—‘স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও সমধর্মী সংস্থাগুলোর আজকের কাজ হল যত বেশী সংখ্যক সম্ভব মানুষের কাছে জনস্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, রোগ-প্রতিরোধ কর্মসূচী শুরু করা, জনসাধারণকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে শিক্ষিত করা।’
    কিউবা-র সংশোধিত সংবিধান-এর ৫০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়—‘প্রত্যেকের স্বাস্থ্য-রক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। এই অধিকারকে নিশ্চিত করতে সরকার গ্রামীন মেডিকাল সার্ভিস নেটওয়ার্ক, পলিক্লিনিক, হাসপাতাল, রোগ-প্রতিরোধ ও বিশেষজ্ঞ রোগ-চিকিৎসাকেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয় ও হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, বিনামূল্যে দাঁতের চিকিৎসা দেয়, স্বাস্থ্যপ্রচার ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অভিযান চালায়, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করে, রোগের মড়ক ঠেকাতে সাধারণ টীকাকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। এই কর্মকান্ডে সমগ্র জনসাধারণ অংশ নেয় এবং সামাজিক ও গণসংগঠনগুলোর মাধ্যমে পরিকল্পনা করে।’

    কিউবার পর
    ১৯৬৬ কানাডা ও নেদারল্যান্ডস
    ১৯৬৭ অস্ট্রিয়া
    ১৯৭১ সংযুক্ত আরব আমিরশাহী
    ১৯৭২ ফিনল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া
    ১৯৭৩ ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গ
    ১৯৭৪ ফ্রান্স
    ১৯৭৫ অস্ট্রেলিয়া
    ১৯৭৭ আয়ারল্যান্ড
    ১৯৭৮ ইতালি
    ১৯৭৯ পর্তুগাল
    ১৯৮০ সাইপ্রাস
    ১৯৮৩ গ্রীস
    ১৯৮৬ স্পেন
    ১৯৮৮ দক্ষিণ কোরিয়া
    ১৯৯০ আইসল্যান্ড
    ১৯৯৩ হংকং ও সিঙ্গাপুর
    ১৯৯৪ সুইজারল্যান্ড
    ১৯৯৫ ইজরায়েল ও তাইওয়ান
    ২০০০ শ্রী লংকা
    ২০০১ থাইল্যান্ড
    ২০০৯ পেরু

    এ দেশগুলোর অধিকাংশেই সাধারণ কর হল অর্থের প্রধান উৎস। অনেক দেশে আবার এর পরিপূরক হিসেবে নির্দিষ্ট লেভি সংগ্রহ করা হয়, কখনও ব্যক্তি মানুষের কাছ থেকে কখনও বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে।

    এই সব দেশে যদি সবার জন্য স্বাস্থ্য বাস্তবায়িত হতে পারে, তাহলে আমাদের দেশে নয় কেন?

    আসুন, আমরা সবার জন্য স্বাস্থ্য-এর দাবীতে আবার মুখরিত হই, শ্রীনাথ রেড্ডি কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবী তুলি। সরকার পুলিশ-মিলিটারী খাতে ব্যয় কমিয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াক।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১৩৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • anirban | 60.152.149.104 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:৪৩73969
  • দারুন লেখা। খুব ভালো লাগল। একটা ফরম্যাটিং সমস্যা - যেখানে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে (যেমনে বিশেষজ্ঞদলের ২০১১ রিপোর্ট) - তথ্যগুলো একটা টেবিলের-আকারে দিলে পড়তে অনেক সুবিধা হত। পুন্যব্রতবাবুকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
  • সিকি | 158.195.135.17 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৪:২৫73970
  • লেখাটা ঠিকভাবে ফর্ম্যাটিং করলে আরও ভালো লাগত পড়তে।
  • Punyabrata Goon | 151.0.8.157 (*) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:৪২73972
  • পশ্চিমবঙ্গে আমরা বেশ ক'টা সংগঠন মিলে চেষ্টা করছি ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার। মার্চ ২-এ কলকাতায় একটা বড় কর্মশালা হবে। প্রায় ৫০টা সংগঠনের ২ জন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে আলোচনা হবে। প্রচার-সামগ্রী তৈরী করা হচ্ছে। বাকী রাজ্যে এভাবে কিছু হচ্ছে কিনা জানি না।
  • Ekak | 132.167.131.217 (*) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:৫৪73973
  • লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো । হেলথ কেয়ার তো আলটিমেটলি পলিটিকাল ডিসিশন কাজেই পরিবর্তন কিভাবে আসবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায় । তবু ভালো লাগলো কারন হই চৈ টা দরকার । এখন এটাকে একটু পরপর ফরম্যাট , গ্রাফিক চার্ট এইসব দিয়ে সহজ করে তুললে দেমন্স্ত্রেষণ দিতে সুবিধে হবে মনে হয় । এই পুরো লেখাটাকে যুক্তি থেকে উপলব্ধির জায়গায় নিয়ে যাওয়াটাই চ্যালেঞ্জ । এনাফ ইনফরমেশন আছে । একটু লেয়ার ,ফরম্যাট দরকার ।
  • π | 127.194.7.69 (*) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:২৫73971
  • পুণ্যদা, ইউনিভার্সাল হেল্থ কেয়ার ও রেড্ডি কমিশনের সুপারিশ গ্রহণের দাবিদাওয়া নিয়ে দেশের অন্য কোথাও কোন কিছু করা হচ্ছে কি ?
  • Pubদা | 202.193.216.147 (*) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:১১73974
  • তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগল ।
  • jhinku bibi | 126.203.208.249 (*) | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৫১73975
  • নতুন অনেক কিছু জানলাম
  • jhinku bibi | 126.203.208.249 (*) | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৫৫73976
  • সালের আধিক্যে একটু জর্জরিত লাগছে l সেগুলো উল্লেখ করা জরুরি, তবে আম জনতার মগজের পক্ষে সামান্য চাপ সৃষ্টিকারী l
  • JAW | 212.159.138.133 (*) | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১০:৫১73977
  • অত্যন্ত উঁচুমানের , তথ্যসমৃদ্ধ লেখা, যেমনটি তিনি লিখে থাকেন।
    অপ্রাসঙ্গিক হবে হয়তো, তবু বলি। সবার জন্যে স্বাস্থ্য কবে হবে তার ঠিক নেই তবে যা কিছু আছে তাতে যদি আমরা হাসপাতালের কর্মচারীরা রোগীদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হই - উদাঃ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ট্রলি নিয়ে টানাটানি এগুলোর দিকে নজর দিলেই তো অনেক উন্নতি। এর জন্যে তো এক পয়সাও বাড়তি খরচের প্রয়োজন নেই। (কেন জানিনা, পেশেন্ট পার্টি শব্দটাই কেমন যেন লাগে শুনতে)।
    গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে দেশে এক্কেবারে ফ্রী পেশেন্ট হিসেবে সরকারী হাসপাতালে বা বিদেশেও সরকারী হাসপাতালে সেই একই ফ্রী পেশেন্ট হিসেবে ভর্তি হবার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। চিকিৎসার গুণমান নিয়ে কোন কথা হবে না।
  • Punyabrata Goon | 151.0.8.158 (*) | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:২৩73978
  • মূল লেখাটায় ফর্ম্যাটিং ছিল। কিন্তু কপি-পেস্ট করতে গিয়ে টেবল ভেঙ্গে গেছে।
    একটা বুকলেট আকারে লেখাটা বেরোবে ২রা মার্চ, প্রধানত প্রচার-আন্দোলন গড়্বে তোলার জন্য।

    হাসপাতালে কর্মীরা নিজেদের কাজের প্রতি যত্নবান হবেন--এমনটা আমরা চাই। সরকারী হাসপাতালে যখন কাজ করেছি চেষ্টা করেছি, নিজেদের প্রতিষ্ঠানে চেষ্টা করি। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। এগুলো সর্বজনীন স্বাস্থ্যের বিকল্প নয়।
  • JAW | 212.159.138.133 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১২:৫৪73979
  • না, না, বিকল্প কখনো ই নয়। তবু, একটা একস্ট্রা প্রাণও যদি এতে বাঁচে, মন্দ কি।
  • pi | 57.29.135.164 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৭ ০৫:৪৭73981
  • তুলে দিলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন