এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সুগার, সুগার - তোমা বিহনে কেউ কি ক্ল্যাসিক্যাল ?

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ জুলাই ২০১৫ | ২৮৮৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে এবং সেখানকার ছোট, বড় ও ধাবা টাইপের রেষ্টুরাণ্ট, কফি শপ, প্যাটিসারী ইত্যাদি জায়গায় খেয়ে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে ভারতবর্ষে আমরা অনেক জটিল খাবার দাবার (যেমন কাঙালী ভোজনের খিচুরী, বিধবা ঠাকুমা-পিসিমাদের হাতে রান্না শুক্ত ইত্যাদি) আবিষ্কার করলেও আপাত সহজ দুটি জিনিস একেবারেই আমরা বানাতে পারি না - চীজ্‌ ও রুটি। আজ্ঞে না, চীজ্‌ ও পনীর এক জিনিস নয়। চীজ্‌কে পনীর বলা, একজন চীনাকে জাপানী বলে সনাক্ত করার মতনি ভ্রান্তিকর প্রায়। চীজ্‌ তৈরীর ইতিহাসে যে তিনটি দেশের নাম সর্বপ্রথম মনে আসে সেগুলি হল ফ্রান্স, হ্ল্যাণ্ড ও ইতালী। তাছাড়া জার্মানী ও সুইজারল্যাণ্ডও আছে কাছাকাছি। রুটি ব্যাপারটা কিন্তু আরও সেনসেটিভ - আমার ইউরোপীয়ান বন্ধুদের দেখেছি একেবারে পাশের দেশেতে গিয়েও রুটি সংক্রান্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে। চীজ্‌ যেই দেশগুলি ভালো বানায় তারাই আবার ঐতিহাসিক ভাবে রুটির কারিগরও ছিল। রুটি ও চীজের তুল্যমূল্য আলোচনা অন্য কোন এক পর্বে।

    আমাদের বাঙালীদের মধ্যে আবার জমাট বাধাঁ ছানাকে পনীর বলে চালানোর এক টেণ্ডেন্সী আছে। ছানার সঠিক কোন ইংরাজী প্রতিশব্দ নেই - ইংল্যাণ্ডে ‘কটেজ চীজ’ বলে এক জিনিস পাওয়া যায় যা প্রায় ছানার কাছাকাছি। তবে ওই - এরা সব এক ফ্যামেলীর হলেও প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। আমরা অনেক সময় ছানাকে cash বলি। অন্ততঃ আমাদের ছোটবেলায় যে ট্রেনে করে আমরা স্কুলে যেতাম তার নাম ছিল cash train। বর্ধমানে ১০টা নাগাদ ছেড়ে আমাদের স্টেশনে আসত সাড়ে দশটা নাগাদ। তা সেই ক্যাস গাড়ির প্রেডিক্টেবল ব্যাপার একটাই ছিল - উহা প্রতিদিনই লেট করত। শক্তিগড় থেকে অন্ততঃ পাণ্ডুয়া পর্যন্ত ওই ট্রেনের ভেণ্ডার কম্পার্টমেণ্টে দেদার ছানা উঠত। ছানা এক জটিল জিনিস - ছানাকে কেন্দ্র করে যে সমাজব্যবস্থা ঘূর্ণায়মান তা যেমনই চমকপ্রদ আবার অনেক সময় তেমনই বিভ্রান্তিকর। আমাদের বাঙলা সাহিত্যে শুধুমাত্র ‘গোয়ালা’ উল্লেখ করেই আমরা খালাস। অমল ও দইওয়ালা - ব্যাস, এর বাইরে বিশেষ কিছু নেই! আমরা কৃষ্ণকে বাঙালী বানিয়ে, আয়ান ঘোষকে তার মামা টাইপের সম্পর্কভুক্ত করেছি - অথচ কৃষ্ণ ব্যবহৃত প্রোডাক্টগুলি সেই ননী ও মাখনেই রেখে দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে খুব কম ‘ঘোষের’ বাচ্ছাই ননী বা মাখন নিয়ে কারবার করে, তাদের মূলত কারবার ‘ছানা’ নিয়ে।
    ছানা একান্তই বাঙালী বস্তু - এবং ছানাজাত বাই-প্রোডাক্টরা ততোধিক বাঙালীত্বে ভরপুর। আজকাল হলদিরাম, ঝুনঝুনওয়ালারা এসে মার্কেটে ক্ষীরের মিষ্টিতে ভরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাই দিয়ে বাঙালী আত্মাকে স্পর্শ করতে চাওয়া ঘোল খেয়ে দুধের স্বাদ মেটানোর মত।

    সৌভাগ্যবশতঃ আমাদের মেমারী স্টেশনবাজারে এখনও ক্ষীরের মিষ্টির প্রাদুভার্ব খুব বেশী একটা ঘটে নি - আমরা এখনও আদি, অকৃত্রিম ছানার মিষ্টি খেয়েই মানুষ হচ্ছি। এক কিলো ছানা তৈরী করতে তিন থেকে চার কিলো মত দুধ লাগে। ছানা দুইপ্রকার - জলছানা ও জাঁকছানা। ক্যাসট্রেন বড়বাজারের ছানাপট্টিতে যে ছানা উগড়ে দিত তা ছিল জলছানা। অর্থাৎ বাঁশের টুকরীতে সাদা কাপড়ে বাঁধা ছানা জলে ডোবানো অবস্থায় আনা হত। ছানা পট্টিতে সেই ছানার জল বাড় করা হত। এক কিলো জল ছানা থেকে জাঁকছানা বেরোত ৬৫০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম। এই জল বেরনো ব্যাপারটা ইনফিনিটি সিরিজের মত কাল্পনিক ও দার্শনিক। কেমন ভাবে জল বার করা হবে - কত ওজন চাপানো হবে সেই কাপড়ে বাঁধা ছানার উপর - কতক্ষণ রাখা হবে এইসব। আসলে অলিখিত নিয়মানুসারে কোন এক সময় জল নিষ্পেশন থামানো হত এবং মিউচ্যুয়াল আন্ডারস্ট্যাণ্ডিংয়ে ৭০০ গ্রাম করে কিলোতে জাঁকছানা দাঁড়ালেই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই সাধারাণত খুশী জ্ঞাপন করত।

    মেমারী স্টেশনবাজারের খুব কাছেই এক ছানা পট্টী ছিল। তাই মেমারীর মিষ্টির দোকানগুলি প্রায়শঃই এ-গ্রেড ছানা নিয়ে কারবার করত। তাছাড়া অনেক মিষ্টির দোকানে ডাইরেক্ট গোয়ালারা মাল ডেলীভারী দিত। আমাদের দিকে এই দোকানে ডেলিভারী দেওয়া গোয়ালারা আসত ‘উত্তরের’ দিক থেকে। উত্তর অর্থে দামোদর নদীর রেফারেন্সে উত্তর বলেই আমার মনে হত।একটু আনস্মার্ট টাইপের হলেই আমরা বলতাম ‘উত্তরের’ ভূত। অবশ্য পৃথিবী গোলাকার তাই আনস্মার্ট আমাদের দেখে খোদ কোলকাতার লোকেরা কি বলত আমরা জানতাম না। যাইহোক উত্তরের গোয়ালারা মালডাঙ্গা, মালম্বা ইত্যাদি লাইনের বাসের ছাতের মাথায় ছানা চাপিয়ে নিয়ে আসত মেমারিতে। এখানেও সেই শ্রেণীবিভাগ - ট্রেনে আসা গোয়ালাদের মার্কেট ভ্যালু, বাসে করে আসা গোয়ালাদের থেকে বেশি ছিল। আর তা ছাড়া ছানা এ্যাপ্রোচটাও একটু আলাদা। ট্রেনের ভেণ্ডারে বাঁশের টুকরীগুলো বসানো থাকত মেঝেতে, কিন্তু সেই একইভাবে তো আর বাসের মাথায় করে ছানা আনা যায় না! তাই বাসের মাথায় ছানা আসত টিনের ক্যানে করে - অনেকটা দুধের ক্যানের মত যেগুলি আপনারা সাধারনত রাস্তাঘাটে দেখে থাকেন।

    ছানা ডেলিভারী হয়ে যাবার পর গোয়ালারা তাদের খালি ক্যানবা বালতি করে মাঝে মাঝে নিয়ে যেত তাদের তরকারী, স্টেশনারী বাজার বা গরুর খাবার। যেদিন যেমন গিন্নির কাছ থেকে ফরমাশ আসত আর কি! আমাদের দিকে চালু কথা ছিল এই যে গোয়ালাদের নাকি ৮০ বছর না হলে বুদ্ধি হয় না। এই প্রবাদের উৎস আমি জানি না - আর এই খাবার গল্পের সাথে তার খুব একটা যোগও নেই।

    এবার আসা যাক ছানা থেকে মিষ্টি তৈরীর ব্যাপারটায়। ক্ল্যাসিক্যাল মিষ্টীর দোকানে ভিয়েন হবে রাতের বেলায়। তাই আজও দিনের বেলায় দোকানে মিষ্টি তৈরীকে আমি T-20 খেলার সমগোত্রীয় বলেই মনে করি। পাবলিক খাচ্ছে (লিটারলী!), তাই মাল তৈরী হচ্ছে দিনের বেলায় - এর মধ্যে কোথায় যেন একটা আভিজাত্যের অভাব থেকে যায়। আর তা ছাড়া মিষ্টির জগতে আজকাল এক হৃদয় বিদারী ঘটনায় প্রচলন হয়েছে - তা হল ‘সুগার ফ্রী’ মিষ্টি! এই জাতীয় জিনিস আমদানিকে ‘সমাজসংস্কারক’ ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া যেতে পারে - কিন্তু আদতে এই সব ব্যাপার প্রকৃত মিষ্টি ঐতিহ্যের বুকে ছুরি বসানোর চেষ্টার মত। অবশ্য আপনি অন্য ভাবেও নিতে পারেন যে - কতখানি মিষ্টি ভালোবাসলে সুগার ফ্রী মিষ্টি নিয়েও ভাবা যায়! রক্তে সুগার জমেছে? - তা মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দে, - কিন্তু সেটা বাঙালী পারে না, বা চায় না। নিকোটিন চুইংগামের মত, অ্যালকোহল ফ্রী বিয়ারের মত আমরা আমদানি করেছি সুগার ফ্রী মিষ্টি। আর তা ছাড়া মিষ্টি ঐতিহ্য এত ঠুনকো নয় - আজকালকার স্বাস্থ্য, বিউটি, কোলষ্টেরল সংক্রান্ত বহুজাতিক সংস্থার মুখে ছাই দিয়ে ২০০ মিটার অন্তর অন্তর আজও মিষ্টির দোকান বহাল তবিয়তে রমরমিয়ে চলছে।

    ক্ল্যাসিক্যাল বাঙালী মিষ্টি কি? দীনেশ সেন কি বাঙালীর ইতিহাসে আলাদা করে এই বিষয়ে কিছু লিখে গেছেন? জানি না - তবে আমার কাছে আর পাঁচটা বাঙালীর মতই রসগোল্লা, সন্দেশ এই সব ঠাঁই পাবে। রসগোল্লা কে সি দাশ বা নবীন ময়রা যেই আবিষ্কার করে থাকুন, শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অনেকদিন হল হস্তান্তরিত হয়েছে। আদি, অকৃত্রিম, আভিজাত্যে ভরপুর রসগোল্লা খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে বর্ধমান জেলার জামালপুর টাউনে - তারকেশ্বরের কাছাকাছি। আমি বর্ধমানের ছেলে বলে আপনি ভাবতেই পারেন যে আমি হয়ত টেনে খেলাচ্ছি - কিন্তু জামালপুরের রসগোল্লা খেলে আর একবার বুঝতে পারতেন চিরন্তন সত্য বলে এই কলিযুগেও কিছু জিনিস হয়। ওই রসগোল্লা তেমনি এক জিনিস - আপনি অনেক কিছু স্ট্যাটিসটিক্স আনতে পারেন, কিন্তু বাকি জায়গার রসগোল্লা ওই রোনাল্ড হয়েই থেকে যাবে। রোনাল্ড (আর তর্কপ্রিয় ফুটবল লাভাররা) নিজেও জানবে সে বড়জোর সেকেন্ড বেষ্ট - জামালপুরের রসগোল্লা হল গিয়ে মেসি।

    মিষ্টির দোকান পর্যালোচনা করে আমি দেখেছি যে দোকানের পরিচ্ছন্নতার সাথে মিষ্টির স্বাদের একটা ইনভার্সলি প্রপরশোনাল সম্পর্ক আছে। দোকান নোংরা হলেই যে মিষ্টি ভালো হবে এমন নয়, তবে ভালো মিষ্টির দোকান প্রায়শঃই নোংরা হয়। অবশ্য এইখানে ক্লীয়ার করে রাখা দরকার যে দোকান বলতে আমি মিষ্টি তৈরীর জায়গা সমেত মিষ্টির শোকেসের কথা বলছি। আজকালকার ফ্যাশন অনুযায়ী শুধু মিষ্টির শোকেস দেখা যায় - প্রোডাক্ট তৈরী হচ্ছে চোখের আড়ালে! এটা আমার বিলকুল না পসন্দ। যে মিষ্টির দোকানগুলি ‘ফ্লাইং’ কাষ্টমারের উপর নির্ভর করে চলে (যেমন স্টেশন, বাসস্ট্যাণ্ড এদের পাশের দোকানগুলি) তাদের বেশীর ভাগেরই রসগোল্লা ইঁটের মত। রসগোল্লার অন্দরমহলে সুজির পুর বা ছানার সাথে ভেজাল বস্তু মিশিয়ে সেই রসগোল্লা তৈরী হত। আসল রসগোল্লা হতে হবে স্পঞ্জের মত, অর্থাৎ রসগোল্লাটিকে নিংড়ে রসমুক্ত করে তা পুনরায় রসে ফেললে সেটি পুনরায় টইটম্বুর গোলাকার হত আবার। এখনতো বিদেশে বসে হ্লদিরামের টিঞ্জাত রসগোল্লা খেয়ে দুইচোখ জলে ভারে ওঠে - সেই অশ্রু একইসাথে আনন্দের ও দুঃখের। আনন্দ এই জন্য যে বিদেশে বসেও রসগোল্লা পাচ্ছি (এবং বিদেশীরাও কিনছে), আর দুঃখ প্রবল হয় প্রিজারভেটিভে আক্রান্ত রসগোল্লার কুন্ঠির স্বাদ পেয়ে।

    কমলাভোগও আমাদের দিকে বেশ জনপ্রিয় ছিল - প্রথমদিকে প্রকৃত কমলার খোসা নিসৃত খুশবু তাতে মিশে থাকলেও পরেরদিকে সুগন্ধের জন্য পুরোপুরি ক্যামিক্যালের উপর নির্ভর করতে হত। আজকালকার যুগে এক অবলুপ্তপ্রায় মিষ্টির নাম লেডিগিনি। আমাদের মেমারী স্টেশন বাজারে অন্ততঃ লেডিগিনি আর পাওয়া যায় না। লেডিগিনি প্রসঙ্গে আমার পদাকাকার বলা একটা গল্পের কথা এই ফাঁকে বলে নিই - লেডিগিনি নামকরণ নাকি আসলে এসেছে লেডী ক্যানিং থেকে। লর্ড ক্যানিং-এর পত্নী নাকি কোন এক সময় ভারতে এসে জিলীপি খেয়ে খুবই ইমপ্রেসড হয়েছিলেন। এ্যাতো ভালোলেগেছিল যে তিনি ইংল্যাণ্ড থেকে কারিগর আনলেন জিলিপী তৈরী শিখে নেবার জন্য। তো লর্ড ক্যানিং-এর সময় শেষ হলে সব একসাথে জাহাজে করে বিদেশ ফিরলেন। আমার পদাকাকার মত অনুযায়ী সেই সমুদ্রযাত্রাকালীন জাহাজের দুলুনি এক কেলেঙ্কারী সৃষ্টি করেছিল - দোলার চোটে ইংরাজ কারিগর শুধু জিলিপীর রেসিপিটাতেই ভুল করে ফেলে নি - জিলিপীর প্যাঁচ দেবার পদ্ধতিটাও পুরোপুরি ভুলে যায়। জিলিপী তৈরীর সময় কারিগর সাধারণত উবু হয়ে (অর্থাৎ দেশীয় স্টাইলে হাগতে বসার মত) বসে আর হাতটা কড়াইয়ের উপর প্যাঁচ খাওয়ায়। তা সেই ইংরাজ কারিগরেরা ব্যাপারটা উলটো করে ফেলে - অর্থাৎ কড়াইয়ের উপর তাদের হাত স্থির থাকে আর পিছনটা নাড়াতে থাকে। এর ফলে যে বিচিত্র জিনিস জন্মায় তাই নাকি লেডিগিনি নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে পরবর্তীকালে। কিন্তু বিদেশে থেকে লেডিগিনি ভারতে আবার কি ভাবে ফিরে এল সে প্রসঙ্গে পদাকাকা নীরব (তবে আমার মনে হয় এই ব্যাপারে প্রথমযুগের আই।পি।এস অফিসারেরা এবং রবীন্দ্রনাথই দায়ী থাকলেও থাকলে পারেন)।

    লেডিগিনি ফ্যামিলির দুই একটা জিনিস অবশ্য আজও অবলুপ্ত হয় নি, যেমন ছানার জিলিপী, পান্তুয়া। আর ল্যাংচা তো বহাল তবিয়তে রমরমিয়ে ব্যাবসা করছে। অনেকে গোলাপজামুন ও পান্তুয়া এক শ্রেণীভুক্ত করে ফেলেন - এটা তো বিলকুল না-ইনসাফি। আমার মনে হয় সব মিষ্টিরই বিজ্ঞানসম্মত নাম থাকা উচিত যাতে প্রত্যেকে তাদের নিজস্বতা বজায় রাখতে পারে। যেমন রসগোল্লা - ফ্যাবুলস্‌ রসগোল্লোস্‌, পান্তুয়ার - ব্ল্যাকিস পান্তিস্‌, ল্যাংচা - শক্তিগড়স্‌ স্পেশালোসো ইত্যাদি। অবাঙালী অনুষ্ঠান বাড়িতে ব্যুফে সিষ্টেমে গোলাপজামুন খেয়ে যাঁরা ওকে পান্তুয়ার প্রথিস্থাপক ভাবছেন, তাঁরা আসলেই এক মহান ইল্যুশনের মধ্যে বাস করছেন। সত্যিকারের পান্তুয়া খেতে হলে আপনাকে শুঁড়ে কালনায় বোকা ময়রার দোকানে। বোকা ময়রার পান্তুয়া স্বর্গীয় বললে কম বলা হয় - ওই পান্তুয়া প্রচণ্ডভাবে সামাজিকও - বহু ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগিয়েছে, বহু রাগ ভাঙিয়েছে, বহু ইমপ্রবেবল বিয়ের রিস্তা আগে বাড়িয়েছে বোকা ময়রার এক হাড়িঁ পান্তুয়া।

    ল্যাংচা প্রসঙ্গে আমার কিছু স্বীকারোক্তি আছে - বহুকাল আগে বর্ধমানের শক্তিগড় রেলষ্টেশনের কাছ থেকে জি।টি। রোডটা সরে দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সাথে জুড়ে যাবার সময় আমি ষ্টেশন সংলগ্ন ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এখন যা দেখলাম তা প্রায় অবিশাস্য - সেই ল্যাংচা ব্যাবসা দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সার সার দোকান - ল্যাংচা মহল, ল্যাংচা কুঠী, ল্যাংচা ঘর, ল্যাংচা ভাণ্ডার, ল্যাংচা নিকেতেন ইত্যাদি ইত্যাদি এবং এদের প্রত্যেকের সাথে যুক্ত করুন তাদের আদি ভার্সেন গুলি - অর্থৎ আদি ল্যাংচা মহল ইত্যাদি... এই বার দেশে গিয়ে একদিন গেলাম শক্তিগড়ে ল্যাংচা খেতে - সৌরভ গাঙ্গুলির সার্টিফিকেট লাগানো এক দোকানে ঢুকলাম। অর্ডিনারী ৫ টাকা ও ক্ষীরের ল্যাংচা ১০ টাকা। খাবার পর বুঝলুম শক্তিগড় এখন নামেই কাটছে - ওর থেকে আমাদের মেমারী স্টেশন বাজারের ল্যাংচা অনেক ভালো। আর তা ছাড়া শক্তিগড়ের সবচেয়ে বড় ল্যাংচার দোকানের ম্যানেজার হচ্ছে আমাদের গ্রামেরই ছেলে, আমাদের ছোটবেলার ক্রিকেট টিমের মেম্বার। ফলে কারিগর সংক্রান্ত আমাদের কাছে অনেক তথ্য থাকে যা ওই পথ দিয়ে শান্তিনিকেতনগামী কলকাতাবাসী পাবলিকদের থাকে না। এই ফাঁকে সেই সব পাবলিকদের আরো কিছু টিপস দিয়ে রাখি - আপনারা শান্তিনিকেতন থেকে গাড়ী করে ফিরবেন ভালো কথা - শক্তিগড়ে ল্যাংচা কিনবেন ভালো সেও আপনার অভিরুচী - কিন্তু প্লীজ্‌ বর্ধমান শহরে এঁদোমেদো দোকান থেকে সীতাভোগ, মিহিদানা কিনবেন না। বর্ধমান শহরে গড়পড়তা মিষ্টির দোকানের রেপুটেশন বর্ধমানের মেহেদীবাগানের ডাক্তারদের মতই - জালি মালে ভর্তি। যদি সীতাভোগ বর্ধমান থেকে কিনতেই হয় তাহলে একটু কষ্ট করে তেঁতুলতলা বাজারে গিয়ে গণেশের দোকান থেকে কিনবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করে দিই - গণেশের দোকানটিও ক্ল্যাসিক্যাল ময়রার দোকানের ঐতিহ্য মেনে অপরিচ্ছন্ন!

    যদি দূর্গাপুর হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় আপনাদের কারো শক্তিগরের ল্যাঙচা খাবার শখ হয়, তাহলে একটু কষ্ট করে হরি ঘোষের দোকানটি খুঁজে নেবেন। ওই দোকানটি পরে হাইওয়ে থেকে যে রাস্তাটি ভেঙে শক্তিগড় স্টেশনের দিকে চলে গেছে, তার পাশে। সেই ল্যাঙচা খেয়ে আমাকে একটু আওয়াজ দেবেন।

    রসগোল্লা তৈরীতে প্রতি তিন কিলো জাঁক ছানা প্রতি প্রায় এক কিলো চিনি লাগে। আর এক কিলো ছানা থেকে রসগোল্লা তৈরী হতে পারে প্রায় ৬০ থেকে ৮০টি, অবশ্যই সাইজ অনুযায়ী। আমাদের ছোটবেলায় রসগোল্লা ওজন করে বিক্রী করা হত - তখন পাবলিক রসের রকমফের নিয়ে দোকানদারের সাথে ফ্রেণ্ডলী বচসা বাঁধাত। কোন এক কারণ বশতঃ কি ভাবে যে মেমারী অঞ্চলে ঠিক হল এক কিলো রসগোল্লা মানে সাকুল্যে ২২টি হবে তা এখনও আমার কাছে রহস্যের বিষয়। স্বভাবতঃই পাবলিক তখন রসগোল্লার সাইজ নিয়ে ঈষৎ আন-ফ্রেণ্ডলী টিপ্পনী কাটত ময়রাকে। যাইহোক সমাজ বিবর্তনের সাথে সাথে এখন পিস্‌ প্রতি মালের দামই ধরা হচ্ছে যদি না প্রোডাক্ট তরল, আধাতরল, জেলী জাতিয় বা গুঁড়া না হয়। এখনও সীতাভোগ, মাখা সন্দেশ, মিহিদানা, বোঁদে কিলো হিসাবেই বিক্রী হয়। তবে প্ল্যাষ্টিকের প্যাকেটের আমদানির সাথে সাথে মিষ্টি বহন ব্যবস্থা অত্যন্ত সুখপ্রদ হয়ে এলেও তার চার্মটা হারাতে লাগল। এটা নিশ্চয়ই পাঠকবৃন্দ মানবেন যে, যে এফেক্ট মাটির হাড়িঁ ভর্তি রসগোল্লা আনতে পারে, সেটা পলিপ্যাকের গর্ভস্থ্য ইলাস্টিক বন্দিত রসগোল্লা আনতে পারে না।

    বিশেষ করে আমাদের গ্রাম্য জীবনে এর একটা প্রভাব ছিল ডাইরেক্ট। আগে মাটির হাঁড়ি হাতে করে কুটুম্ববাড়ি আনাই রীতি ছিল - ফলে আমাদের ছেলে ছোকরাদের নজরে থাকত গ্রামে আত্মীয় স্বজনদের গতিবিধি। ধরুণ ক্রিকেট খেলছি মাঠে, দেখলাম কেউ একজন মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করছে। হাঁড়ির সাইজ বড় হলে, আমরা একটু এফর্ট দেবার জন্য প্রস্তুত হতাম। কাছে গিয়ে চট করে একটা প্রণাম, ব্যক্তির বয়স অনুযায়ী মেসোমশাই বা জামাইবাবু বা দাদু বলে সম্বোধন - কেমন আছেন? দিন, দিন হাতের জিনিসগুলো, এতটা আবার কেন কষ্ট করে বইবেন, আমি সাইকেলে চট করে পৌঁছে দিয়ে আসছি বাড়িতে। তখনকার দিনে আমাদের সবারই প্রায় যৌথ পরিবার - এ্যাতো দিদি, জামাইবাবু, মাসি-মেসো, ভাইপো-ভাগনী যে সবার নাম তো দূরের কথা, মুখ পর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব হত না। এখানে একটা সাইকোলজিক্যাল এফেক্ট কাজ করত, এই আপ্যায়নে মানুষ খুবই পুলকিত হতএবং এক্সপেক্টেড মনে করত। আর দেখেছি সাইকোলজিক্যাল কারণেই এই সব ক্ষেত্রে প্রায় সবাই হাতের মিষ্টির হাঁড়িটাই বয়ে দেবার জন্য বলতেন, অন্য হাতের ব্যাগটা নয়। ফলে সেই হাঁড়ি হাত থেকে নিয়ে সাইকেলে করে একচক্কর মেরে অন্য রাস্তা দিয়ে আবার খেলার মাঠে। বলাই বাহুল্য সেই আত্মীয় মিষ্টির হাঁড়ি বা তার রেফেরেন্স কোনটাই পেতেন না বাড়ি পৌঁছে। এইভাবে আমরা অনেক সদ্‌ব্যবহার করেছি সুসম্পর্কের। কিন্তু আজকালকার আমাদের জুনিয়রেরা সেই সুযোগটা আর পায় না - সব মিষ্টিই পলিপ্যাকস্থ হয়ে হাতের ব্যাগের ভিতর - হাতে কোন নিশানা নেই, ফলে শিকার ঠিক করা মুশকিল হত।

    আগের এক পর্বে লিখেছিলাম যে মিষ্টির দোকানে গেঁজে যাওয়া রস থেকে একপ্রকার অতি উপাদেয় চাটনী বানানো হত যা দিয়ে সিঙাড়া খাওয়া এক অবিষ্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিল। তাহলে বাড়িতে মিষ্টির রস উদবৃত্ত থাকলে কি হত? মডার্ণ গৃহিনীদের কথা বলতে পারব না, তবে আমাদের মা-কাকিমারা পরাতপক্ষে সেই জিনিস ফেলতেন না। আমরাও শেষ পাতে একটু চাটনী পেতাম - সিজিন অনুযায়ী আম, আমড়া বা আনারসের। কত মিষ্টির গল্পই তো বাকি থেকে যাচ্ছে - আমার মামার বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের গল্প পরেরবার।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ জুলাই ২০১৫ | ২৮৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • | 11.39.13.232 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:২৯69114
  • হ্হ্টির রস না গেঁজে গেলে তাই দিহে জিবেগজা এলোঝেলো ইত্যাদি তৈরী হত। গাঁজলে চাটনি।

    ক্যাশগাড়ীতে মস্ত বাক্স গার্ডের কামরায় উঠতে দেখেছি ১৯৯৮তে। ওর পেছনে একটা শýআওড়াফুলি আসত আমি সেটই ধরতাম।
  • | 11.39.13.232 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:৩২69116
  • মিষ্টির

    শ্যাওড়াফুলি
  • | 11.39.13.232 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:৩২69115
  • মিষ্টির

    শ্যাওড়াফুলি
  • বুড়া | 125.187.56.89 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১০:০২69117
  • খুব ভালো লেখা, মিষ্টির মতোই। সবগুলো লেখা নিয়ে সংকলন একটা বের করা উচিতস্য উচিত।
    শুঁড়ে কালনাটা কোথায় রে ভাই?
  • শিবাংশু | 127.248.128.51 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১০:৪৫69118
  • সুকি,
    এখন বাঙাল-ঘটি করে এই নিরন্তর আনন্দধারা'কে ডিরেইল কোর্বো না।

    তবে বদ্ধোমান পুরো দই খেয়ে গেলো দেখে খুউউব খারাপ লাগছে। এখানে কি বাঁকুড়ার ভূমিপুত্তুর কেউ নেই....:-(
  • Ekak | 113.6.157.185 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১০:৫৪69119
  • লেখা হিসেবে পড়তে ভালই লাগছে । সুকি জমিয়ে লেখেন । কিন্তু এত শুধুই রসের মিষ্টি :( আমার মিষ্টিপ্রেম মূলত সন্দেশ কে ঘিরে । কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত সন্দেশ । এই লেখায় সন্দেশ নাই । মিষ্টির লেখায় সন্দেশ না থাকা অনেকটা কবিতা পড়ার মুডে বই খুলে প্রচুর ইকির-মিকির ছড়া পাঠ করার অভিজ্ঞতার মতম :(
  • Atoz | 161.141.84.176 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১১:৪৬69123
  • কী ভালো লেখা!!!!
    কিন্তু আপনারা সন্দেশ বানান না বা খান না বর্ধমানে? এই যেমন জলভরা তালশাঁস, গোল গোল রাজভোগ, শঙ্খ সন্দেশ, হাঁস সন্দেশ, মাছ সন্দেশ ইত্যাদি?
  • সুকি | 129.160.188.41 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১১:৫৫69120
  • একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করিয়া লই - আমি একদমই বাঙালি মিষ্টির ইতিহাস লিখতে বসি নি, সে যোগ্যতাও আমার নেই। এই সিরিজটি লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমি শুধুই আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা খাবার কথা লিখছি। ফলতঃ আমার কথায় বাববার বর্ধমান চলে আসছে, কারণ সেখানেই আমি মানুষ (বা অমানুষ) হয়েছি। বাঁকুড়ার মিষ্টি তো আবশ্যই খেয়েছি, কিন্তু সেই মিষ্টি আমার জীবনের অঙ্গ হয় নি।

    সেই একই কারণে কলকাতার মিষ্টী বাদ পড়েছে - একক যেমন পয়েন্ট আউট করেছে, আমার গল্পে কলকাতার সন্দেশ নাই! কি আর করা যাবে - আমার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দুইই প্রবলভাবে সীমিত।

    তাই যাঁরা জানেন, তাঁদের লিখে ফেলতে অনুরোধ করছি - আমরা সবাই পড়ে আনন্দ পাব।
  • সুকি | 129.160.188.41 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১১:৫৭69121
  • ও হ্যাঁ, বর্ধমান জেলায় দুটি কালনা আছে - একটিকে আমরা বলি অম্বিকা-কালনা (গঙ্গার ধারে, বর্ধ্মান জেলার একটি মহকুমা), অন্যটি হল শুঁড়ে কালনা - তারকেশ্বর থেকে কিছু দূরে।
  • Ekak | 113.6.157.185 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১২:১৪69122
  • না না ঠিকাছে , আপনি তো আপনার অভিজ্ঞতা থেকেই লিখবেন :) আসলে মিষ্টির গপ্পে সন্দেশ নেই দেখলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে এই আরকি । এখানে কলকাতা বাসী সন্দেশ্প্রেমি আও আছেন নিশ্চই । তাঁরা লিখবেন খন । আপনি আপনার মত লিখে যান :)
  • Abhyu | 118.85.88.75 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১২:৪১69090
  • জ্জিও। অতি অল্প হইল। টপিকটাই এমন :)
  • Abhyu | 118.85.88.75 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ১২:৪৪69091
  • পুরোনো লেখাটা মনে পড়ল
    http://www.guruchandali.com/blog/2014/03/18/1395144317453.html#.VahQkEUsddg

    গুলাবজামুন ও বনবালা

    চা তো খাওয়া হ’ল। এবার মনে হ’ল বেশ খিদে খিদে পাচ্ছে। বাংলোয় ফিরে গেলে বারোয়ারি ব্রেকফাস্ট কিছু পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু আমার ফেরার ইচ্ছে নেই, আমার কাজটা আগে। দোকানির সেই নড়বড়ে টেবিলের ওপরে অস্বচ্ছ কাঁচের ওধারে কিছু রাখা আছে, খাবারদাবার হতে পারে। আবার টেবিলের তলায় দুটো বিশাল মাটির গামলা, অনেকটা গরুদের জাবনা দেয়ার ডাবার মত। কিন্তু কিন্তু করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, ভইয়া, খানেকো কুছ মিলেগা? সে বল, হাঁ হাঁ কিঁউ নহী, সন্দেশ হ্যায়, রসগুল্লা হ্যায়, গুলাবজামুন হ্যায় – তখন খেয়াল করলাম, নীচে ঐ মাটির গামলাগুলোয় চিনির শিরার মধ্যে কিছু ভাসছে, একটায় লাল, একটায় সাদা। যাক মিষ্টিই হচ্ছে বাঙালির(মানে অন্ততঃ আমার) প্রিয়তম খাদ্য। গোলি মারো ব্রেকফাস্টকো, মিষ্টি খাওয়া যাক। বললাম ক্যায়সা হ্যায়? দোকানদার বলল, বহত আচ্ছা, খা কে দেখিয়ে না। আমি বললাম, না না, ক্যায়সা হ্যায় মতলব, ক্যায়সে দিয়া? সে বলল, এক রুপাইয়া পিস। আমি ভাবলাম এ আর এমন কি, আমাদের কোলকাতাতেও তো এক টাকাতেই (তখন) রসগোল্লা পান্তুয়া বিকোয়। বললাম, এক কাম কিজিয়ে, মুঝে চার গুলাবজামুন দিজিয়ে।

    বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি, সে তো দিচ্ছেনা? মুখ তুলে তার মুখের পানে তাকিয়ে দেখি, লোকটা হাঁ করে দেখছে আমাকে, আক্ষরিকভাবেই হাঁ করে। সেই ওরাংওটাং দেখা লোকগুলোর চেয়েও অবাক হয়ে, যেন এইমাত্র মঙ্গলগ্রহ থেকে ল্যান্ড করলাম। বললাম, আরে কেয়া হুয়া, দিজিয়ে?
    সে বলল, চারটে গুলাবজামুন?
    আমি বললাম, হ্যাঁ, চারটে, বললাম তো –
    সে বলল, কী করবেন ওগুলো নিয়ে?
    আমি বললাম, শোনো কথা, খাব, আবার কী করব।
    সে বলল, একলা?
    - মানে?
    - মানে একাই খাবেন?
    - এখানে তো চার দিকে জঙ্গল। আমার ধারে কাছে আর কাউকে দেখছেন?
    - দেখছিনা বলেই তো জিজ্ঞেস করলাম।
    - হ্যাঁ একলাই খাব, চারটে মিষ্টি খাওয়া আবার বড় কথা কী। আমাদের দেশে তো দশ বারোটা যখনতখন খাই।
    - হুম্‌। আচ্ছা বাবুজী, একটা কাজ করুন না, প্রথমে একটা খান। আমি তো আর পালাচ্ছিনা। লাগলে আরও নেবেন না হয়।

    আমি ভাবলাম কী বিপদ রে বাবা। আসলে এরা গরীব মানুষ তো, ভেবেছে একসঙ্গে চারটাকার মিষ্টি খাবে? তা যে কেউ খেতে পারে, তা মাথাতেই নেই। হুঁঃ।
    লোকটা এবার একটা প্লেট বের করল। চিনেমাটির প্লেটই, কিন্তু ধারের দিকে চলটা ওঠা, মেজে মেজে বিবর্ণ। বাড়িতে অমন প্লেট দিলে এক কিকে বেদিয়াডাঙা পেরিয়ে যেত। যাক, কী আর করা যাবে। এবার সে একটা জিনিষ বের করল, একটা লম্বা ডান্ডা, সম্ভবতঃ কোনও শক্ত গাছের ডাল, তার একেবারে মাথায় একটা হাফ নারকোলের মালা ফিট করা আছে। ওটা আসলে হাতা। কিন্তু একটা গুলাবজামুন তুলতে মশা মারতে কামানের ইন্ডেন্ট? সে এবার ওটা এগিয়ে নিয়ে গেল, যে গামলাটায় সাদা মিষ্টি ভাসছে, সেদিকে। আমি বললাম, উহুঁ উহুঁ, আমি তো গুলাবজামুন চাইলাম। সে বলল, এটাই তো গুলাবজামুন, লালটাতো রস্‌গুল্লা। আমি বললাম, যাস্‌সালা, এতো উল্টো্রাজার দেশ দেখছি। বললাম, আরে ভাই মুঝে উওহ লালওয়ালা দো, নাম যো ভি হো। এবার নারকোলের মালা যাচ্ছে গামলার দিকে। আসলে জলে বা অন্য কোনও তরলে সলিড কিছু ভাসলে তার ওয়ান এইটথ ওপরে থাকে বোধহয়। ওপর থেকে বোঝা সম্ভব নয় সাইজটা। মালটা যখন সেই ইম্প্রোভাইজড হাতায় উঠল, তখন মালুম পেলাম, দোকানদার কেন জিজ্ঞেস করেছিল, সেটা একা খাব কিনা, আর কেনই বা বলেছিল, আগে একটা খান তারপর লাগলে নেবেন, আমি কি পালাচ্ছি?

    উনিশশো ছিয়াশি সালে একবার আমাদের সদর দপ্তরে গেছি ওখানকার মেডিক্যাল অফিসারের কাছে একটা টাই-আপ সই করাতে। অনেক টাকার ধাক্কা, কিন্তু টাই আপে পয়সা লাগেনা। গরমকাল, গিয়ে দেখি ডাক্তারবাবু জামা গেঞ্জি সব খুলে খালি গায়ে তাঁর টেবিলের ওপর বসে। ভাগ্যিস শুধু জামাটাই খুলেছেন। তাঁর বিশাল চেহারায় ভীতিপ্রদ রকমের বড় বড় লোম, প্রায় মহুয়াবনে ভাল্লুকের মত। তাঁকে পরিবেষ্টিত হয়ে কিছু করণিক কাজে ফাঁকি দিয়ে মোসাহেবিতে রত। তিনি গল্প বলছেন, এঁরা শুনছেন কিংবা শোনার ভান করছেন। কেউ ডেকে পাঠালে বললেই হবে ‘স্যারের’ চেম্বারে ছিলুম।
    ডাক্তারবাবুর কাছাকাছি পৌছবার যো নেই, কিন্তু আমায় আজকেই আবার বর্ধমান লোকাল ধরতে হবে, ফিরতে অনেক দেরী হয়ে যাবে।

    ডাক্তার বলছেন, বুঝলেন মশয়, তা সেই দোকানদার তো নারকেলের হাতায় করে একটা জাইগান্টিক সাইজের মিষ্টি তুলল প্লেটে। কী বলব মশয়, সাইজ দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাবেন। একটা ক্রিকেট বলের চেয়েও বড়। দাম কত জানেন? মাত্র এক টাকা। অবশ্য জায়গাটা বান্ধবগঢ় আর সেটা বছর কুড়ি আগের কথা।
    আমি দেখলাম এই সুযোগ, বললাম, ডাক্তারবাবু, ওটা এখনও এক টাকাই আছে। উনি অ্যাঁ – বলে চমকে উঠতেই বললাম, এই টাই–আপটা যদি একটু ইয়ে –

    তা সেই ‘জাইগান্টিক’ মিষ্টি তো উঠল প্লেটে। এবার দোকানের মালিক একটা ছোট্ট ছুরি বের করল। আমরা ছোটবেলায় লেক মার্কেটে যেতাম অস্ট্রেলিয়ান আপেল কিনতে। খুব গাঢ় মেরুন রঙের, প্রায় কালচে অসাধারণ মিষ্টি আপেল। একটাই কেনা হত, ওজন যা হয়। দোকানদার এমনি একটা ছুরি দিয়ে ওটার খানিকটা অংশ সারি সারি ফালি করে কেটে পদ্মফুলের মত করে বানিয়ে দিত। ইনিও দেখলাম সেই রকম পদ্মফুল বানাচ্ছেন গুলাবজামুন, থুড়ি, এখানে তো আবার ‘রস্‌গুল্লা’ বলতে হবে, সেইটাকে। গুলাব-মানে ইয়ে রস্‌গুল্লার ভেতরটা একটা গোলাপি আভা, সাজিয়ে পদ্মফুল হয়ে সে এখন আরও মনলোভা। হাত বাড়িয়ে প্লেটটা নিতে যাচ্ছি, দোকানদার বলল, উহঁ উহুঁ –

    কীরে বাবা, এরা খালি সাজিয়ে রাখে নাকি, খেতে দেবেনা? আবার নারকোলের মালা চলল নীচে। এবার একটা দুরূহ জায়গায়, যেটা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছেনা। তাতে উঠে এল ঘন থকথকে রাবড়ি, কম করে দুশো গ্রাম। সেটা ঢেলে দেয়া হ’ল সেই ‘পদ্মফুলের’ পাপড়ির মাঝখানে। পুরো ব্যাপারটার দাম এক টাকা এবং অ্যাজ পার ডাক্তারবাবুস স্টেটমেন্ট, গত কুড়ি বছর ধরে তাই আছে।

    আমি সেদিন ফিরে গিয়ে লাঞ্চ খাইনি। শুধু ছোট্ট দু পিস মুরগির মাংস একটু চেখে দেখেছিলাম। ওই খাওয়ার পর সারাদিন না খেলেও চলত। সারাদিন খালি এই ভেবেই কেটে গেল, যে জঙ্গলের মধ্যে কারা খায় এই গুলাবজামুন- থুড়ি রস্‌গুল্লা? বাঘেরা ?
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৭69125
  • তাল শাঁস এয়েচে সিকির জেলা থেকে, ও সিকি লিখবে খন।
  • | 24.96.3.5 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৫ ০৫:০১69126
  • সুকান্ত বাবু, আমি আপনার লেখার পাখা হয়ে গেছি।আপনার লেখায় বৈঠকী মেজাজে গল্প বলার একটা ব্যাপার আ্ছে। যেটা আমার খুব ভালো লাগে।

    এই টা লেখার আগে শংকরের "রসবতী" বই টা পড়ে নিলে পারতেন। অবশ্য বিদেশে থাকলে হাতের কাছে বই পাওয়া সম্ভব নয়। ওখানে প্রতিটি মিষ্টি র সৃষ্টিকাল থেকে বেড়ে উঠা এবং নানা বিবর্তন নিয়ে সরস আলোচনা আছে। লেডিকেনি উৎপত্তি লেডি ক্যানিং থেকে সেটাও বলা আছে।

    প্রসঙ্গত বলে রাখই আমি ও হুগলী জেলার লোক। তারকেশ্বরের র কাছে গোপীনগর গ্রামে আমার আদি বাড়ি।

    মহায় , আপনি তো মহা ইয়ে। শ্রীহরির দই র কথা বললেন না? ঃ((
  • | 24.96.3.5 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৫ ০৫:০৮69127
  • ঈশেন/পাই, সুকান্ত বাবু র সব লেখা গুলো এক করে একটা সঙ্কলন করলে খুব ভালো আজ হবে। ভেবে দেখো।
  • S | 139.115.2.75 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৫ ১২:০২69124
  • বাগবাজারের স্টীম সন্দেশ। উত্তর কোলকাতার অনেক কিছুই ভালো লাগেনা, কিন্তু এইটি সেই লিস্টির বাইরে থাকবে।
  • | 77.98.72.126 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ০২:০৩69130
  • সুকি, হরিপাল র শ্রীহরি র এক পিস দোকান আছে । যতদূর মনে আসছে ওদের একটা শাখা তারকেশ্বর রেল স্টেশনের কাছেও আছে। মিষ্টি টিষ্টি গুলো তো গোলা। দই টা জাস্ট অসাম।

    প্রতাপ চন্দ্র রায়ের "মহাভোজ রাজভোজ" এই বইটার নাম আগে শুনিনি। পড়ে ফেলতে হবে। ধন্যযোগ।
  • sumeru | 127.194.80.245 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ০৭:২৬69128
  • বেশ। লিখতেই থাক। হুগলী জেলাও ভুলো না, নিদনপক্ষে শেওড়াফুলি একটু ঢুকিয়ে দিও।
  • সুকি | 129.160.188.174 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ০৯:২৬69129
  • আমাদের ওদিকে সন্দেশ আছে বৈকি! সন্দেশ (অনেকে আবার কায়দা করে সঁদেশ বলে আমাদের দিকে) ছাড়া আবার বাঙালি লাইফ নাকি? তাহলে সন্দেশ নিয়ে সামনের এক পর্ব লিখব না হয়। বর্ধ্মানের এক এক জায়গাতে মাখা সন্দেশে যা মিষ্টি দেয়, এই আমার মত মিষ্ট খোর পাবলিকেরও ব্রহ্মতালু জ্বলে যায়! জানি না আপনাদের আর কারো ওই অভিজ্ঞতা আছে কিনা।

    ব,
    আপনি যে আমার লেখা পড়ছেন সেই জেনেই আমি আপ্লুত, আর ভালো লেগেছে জানাবার জন্য ধন্যবাদ। হ্যঁ, রসবতী বইটি আমার আছে এবং পড়েছি। তবে এই মুহুর্তে হাতের কাছে নেই, দেশের বাড়িতে রয়েছে। শেষবার দুই-খান বই ঢোকাতে চেয়েছিলাম ব্যাগ তে, রসবতী আর প্রতাপ চন্দ্র রায়ের "মহাভোজ রাজভোজ" । শেষের বইটি বিদেশে আনতে পারলেও প্রথমটি খুঁজে পাচ্ছি না! আর আপনার বাড়ি যখন হুগলী, তখন মিষ্টিও আপনি ভাল জানবেন সে আর আশ্চর্য কি :)

    সুমেরুদা,
    শেওড়াফুলিতে আর তেমন মিষ্টি পেলাম কৈ! গত ৪-৫ বছর তো শুধু আদি সত্যনারায়ণের মিষ্টি খেয়েই যাচ্ছি! তেমন দোকানের হদিশ থাকলে জানাও।
  • Prabir | 125.115.197.138 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৬:৫৮69131
  • আমি যদ্দুর জানি ক্যাশগাড়ী থেকে ক্যাশ নামে না ওঠে। বিভিন্ন স্টেশনের টিকিট বিক্রির টাকা একটা নির্দিষ্ট কম্পার্টমেন্টে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি কম্পার্টমেন্টের একটা অংশকে লাল ফিতে দিয়ে ঘিরেও রাখতে দেখেছি,ঐ অংশে সাধারণের প্রবেশ নিষেধের চিহ্ন হিসেবে ।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৭:৩৪69132
  • প্রথমেই ভুল। সুইস ব্রেড ও চীজের অপমান? আরো অনেক জনিস বাদ। ব্রেড ও চীজের ব্যাপারে অ্যাতো গোঁজামিল?
  • কল্লোল | 135.17.65.130 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৬:২৯69133
  • আহা। বাঁকড়োর কেউ নাই হে??
    বাঁকুড়া শহরের চিত্তরঞ্জন, এক স্বর্গীয় মিষ্টি। পরে নানান জায়গায় ভাপা সন্দেশ নামে কিছু একটা চলে বটে, কিন্তু বাঁকুড়ার চিত্তরঞ্জন! তুলনা নেই। এমনিতে মালদার কানসাঁট চমচম বা ক্ষীরকদম ভালো, তবে আহামরি না। আমি কেষ্টনগরের সরভাজা, সরপুরিয়ার কথা বল্লাম না। ও তো বহুচর্চিত।
  • dd | 116.51.241.214 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৬:৪৪69134
  • কিন্তু চিত্তরঞ্জন শহরে বাঁকড়ো বলে কোনো মিষ্টি নেই। এটা কিন্তু অভদ্রতা।
  • কল্লোল | 135.17.65.130 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৯:৩৭69135
  • হুম। এটা পোকিতোই ভাবার বিষয়। বাঙ্গালী তথা বিশ্ববাসী একটা ভালো মিষ্টি থেকে বঞ্চিত হলো।
  • PT | 213.110.247.221 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১০:৫১69136
  • মুড়াগাছার ছানার জিলিপী-কেউ চেখে না থাকলে সত্যি সত্যি বঞ্চিত হয়েছেন।
    শালপাতায় মোড়া মাটির হাঁড়িতে এই বস্তুটি যেন আরো সুস্বাদু হয়ে উঠত কলকাতায় পৌঁছতে পৌঁছতে!!
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৯69138
  • ধ্যাৎ! অ্যাতো দিল পে নিলে চলবে?
  • সুকি | 129.160.188.177 (*) | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১১:৩৭69137
  • আবার কনফিউশন হচ্ছে - আমি আগেই ডিক্লেয়ার দিয়েছিলাম যে "এই সিরিজটি লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমি শুধুই আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা খাবার কথা লিখছি।" তাই আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে অনেক অনেক ভালো মিষ্টী আমি কভার করতে পারি নি - কিন্তু সেটা আমার দূর্ভাগ্য। আপনারা শেয়ার করুন না আপনাদের ভালো লাগা - নোট করে নিচ্ছি, সময় সুযোগ পেলে খাবার চেষ্টা দেব।

    সে,
    হল্যান্ড আর ফ্রান্স থেকে আমি সরতে পারলাম না - ইতালীর বদলে সুইস ভাবা যেতে পারে। তবে কি জানেন - গ্রামের ছেলে, তায় চাষা - কোথায় কি খেয়ে ভালো লেগে গ্যাছে কে জানে! ভুল বলে থাকলে নিজ গুণে বাচালতা ধরে সহ্য করে নেন - এই আর কি!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন