এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মন্দিরে মিলায় ধর্ম

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৯১৩ বার পঠিত


  • নির্ধারিত সময়ে ক্লাবঘরে পৌঁছে দেখি প্রায় জনা দশেক গুছিয়ে বসে আছে। এটা সচরাচর দেখতাম না ইদানীং। যে সময়ে মিটিং ডাকা হ’ত সেই সময়ে মিটিঙের আহ্বাহক পৌঁছে কাছের লোকেদের ফোন ও বাকিদের জন্য হোয়া (হোয়াটস্যাপ গ্রুপ, অনেকবার এর কথা আসবে তাই এখন থেকে হোয়া) গ্রুপে মেসেজ পাঠাতেন। সপ্তাহের মাঝ মধ্যিখানে রাত সাড়ে ন’টায় ডাকা মিটিঙে এত ভিড় দেখে ভালোই লাগল কিন্তু। কিছু একটা কথা চলছিল, আমি পৌঁছতেই আচমকা স্তব্ধতা আর যারা বসেছিল তাদের চোখে মুখে আহ্লাদের উদ্ভাস দেখেও ভালো লাগল।

    “কী খবর? সব ভালো তো?” এই সব ছেঁদো ভদ্রতাও হল টল। উৎসাহ বশত তখনই একজন বলে ওঠেন - “এবার তা’হলে শুরু হোক?” আর একজন (এখানে বাকিরা সবাই ওই “একজন” হয়ে থাকবেন, তাদের কথা, বার্তা, চিন্তা, বুদ্ধি এত এক রকম। তাছাড়া চেহারা বৈশিষ্ট্য দিয়ে বোঝান সমীচীন নয়। সবার নামও জানি না, হোয়া গ্রুপে ফিসফিস অক্ষরে নাম আসে সেই নাম চিনি, এখানে নামের সঙ্গে মুখ মেলানর উপায় নেই। আর তাছাড়া ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়ান সেপাইদের মুখ, নাম কে কবে জানতে চায়) বললেন -”আর পাঁচ মিনিট দেখা হোক, অনেকেই তো আসবে বলেছিল।” প্রেসিডেন্ট (ইনি আলাদা, এর নাম জানি, আর ডব্লু এ’র প্রেসিডেন্ট) বললেন তা’হলে ওই কথাগুলো একটু জানিয়ে রাখি… সেসব চলতে থাকল।

    এই আচমকা মিটিঙের সূত্রপাত সেইদিন (২০শে সেপ্টেমবর) সকালে, প্রায় দুপুর তখন। বাঙালিদের দুর্গাপুজোর হোয়া গ্রুপে বউ একটা মেসেজ পায়। একজন সেখানে লিখেছে পরের দিন নাকি সোসাইটিতে মাতারাণীর মূর্তি স্থাপনা হবে, যেটা কিনা মন্দির বানানোর প্রথম পদক্ষেপ। আমার বউ তাকে “সে কী? কেন? কে করছে? এটা করা যায় নাকি?” এইসব প্রশ্নে জেরবার করলে সে জানায় “সোসাইটির বাসিন্দারা ও বিল্ডার এই মন্দির বানাচ্ছে।

    বউ আমাকে এই কথা জানালে, আমরা ঠিক করি আর ডব্লু এ’র কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখা যাক, ওরা এটা জানে কী না। আমার পরিচিত এক মেম্বারকে আমি আলাদা করে হোয়াতে জানতে চাই এর সত্যতা ও আর ডব্লু এ র ভূমিকা।

    ভদ্রলোককে পাঠানো মেসেজ নীল টিক হতেই ভাবি উত্তর পাব। কিন্তু তার ফোন আসে। তিনি জানান, কয়েকজন রেসিডেন্ট চাঁদা তুলে এইসব করছে। আর ডব্লু এ জানে। কিন্তু অফিশিয়ালি এ ব্যাপারে চুপ থাকবে বলে কথা দিয়েছে। যাই হোক না কেন মন্দির তৈরি হবে। ধর্মকর্ম হবে। ভালো কাজ। তাই না?

    আমি গুম হয়ে যাই। মনে পড়ে এক বাঙালি মাস কয়েক আগে “ কে কে মন্দির চান সোসাইটিতে? যদি চান, তা’হলে বুড়ো আঙুল তুলুন” এই মর্মে হোয়াতে পাগলা করে মারছিল। অনেকে বুড়ো আঙুল তুলেছিল। আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। পরে সে নিয়ে কিছু আর এগোয়নি দেখে ভেবেছিলাম সে অন্য সাঁকো পেয়েছে।

    তখনই ঠিক করি আর ডব্লু এ’র গ্রুপে জানতে চাইব এ সম্পর্কে ওদের মতামত। আমি লিখি

    প্রিয় অধিবাসীবৃন্দ,
    জানলাম যে একটি স্থায়ী মন্দির খুব শীঘ্রই উদ্বোধন হতে চলেছে সোসাইটিতে।

    (বোল্ড করে) একজন বাসিন্দা হিসেবে আমি এইখানে এর বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

    আমি মনে হয়, মানুষ নিজের ব্যাক্তিগত পরিসরে নিজস্ব ধর্মীয় রীতিনীতি স্বচ্ছন্দ্যে পালন করতে পারে। এর অতিরিক্ত কিছু রীতিনীতি থাকলে তার জন্য আমাদের সোসাইটির কাছাকাছি অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে। এ ছাড়াও এখানেই অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয় ও উৎসাহী মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।

    আমি এও মনে করি আমাদের সোসাইটিতে এখন এর থেকেও জরুরী অনেক বিষয় আছে যা আশু সমাধান ও যথেষ্ট মনোযোগ দাবী করে।

    আর তাছাড়া আমি যদ্দুর জানি এ হেন স্থায়ী ধর্মীয় স্থান এই ধরণের আবাসনে বানানোটা বে-আইনি।

    এর সঙ্গে আমি আমাদের শ্রদ্ধেয় আর ডব্লু এ’ র প্রেসিডেন্ট ও বাকি সদস্যদের এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে ও যাথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।

    শ্রদ্ধাসহ।

    জানা ছিল। সেই অনুযায়ী এর কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়ে আসতে থাকে মন্তব্য গুলি। প্রথম দু’টি আশ্চর্যজনক ভাবে আমাকে সমর্থন করে। তারা জানায়, মন্দিরের চেয়েও সোসাইটির সামগ্রিক উন্নয়ন অনেক বেশি জরুরি। তার পরেই আসতে থাকল সেইগুলো যার অপেক্ষা ছিল। নিচে পর পর দিলাম।

    ১) আমি খুব জোর দিয়ে এই পোস্টের বিরোধীতা করছি। আমি নিজেকে সেকুলার হিসেবে প্রমাণ করতে চাই না।

    ২) মন্দির থাকলে ক্ষতি কীসের? কেন এর বিরোধীতা অপ্রয়োজনীয়ভাবে?

    ৩) এখানকার আবাসিকদের মতামত সবসময় স্বাগত (এটা ঠিক কেন বলতে চেয়েছে পরিষ্কার হয় নি, এই মেসেজ যিনি করেছেন তার কথা পরে আরও আসবে, তখন একে তিন নং বলব)

    ৪) একটা মন্দির কিছুতেই বে-আইনি হ’তে পারে না।

    ৫) দয়া করে আইনটি দেখান, যেখানে মন্দির বানানোকে বেআইনি বলা আছে।

    ৬) আমি মনে করি আমাদের সব সমস্যা বিল্ডার সমাধান করে দিয়েছে। তা ভালো, আমি জানতাম না। তা এখন আমরা নতুন ইস্যু নিয়ে বিতর্ক করতেই পারি। (অল্প সারকাজম কিন্তু ঠিক আছে)

    ৭) আমি বুঝতে পারছি না, কীভাবে মন্দির তৈরি বে-আইনি হ’তে পারে?

    ৮) আমি প্রস্তাব করি মন্দির বানান হোক। তারপর যে এটা বে আইনি মনে করছে সে কেস করুক আমাদের বিপক্ষে। তারা যদি জেতে কোর্ট এটা ভেঙে দিতে বলবে।

    ৯) মন্দির তো একটা শব্দমাত্র। একবার তৈরি করলে এতে বসান মূর্তিগুলি এর অংশ। কিন্তু সেই জায়গাটা সকলের জন্যই পবিত্র হয়ে যায়।
    ৯- ক) (ইনি পরপর দু’টো লিখলেন কি না) আমাদের অনেক ঘটনায় দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। সাম্প্রতিক অতীতে। তাই ‘পজিটিভ এনার্জি” র উৎস হিসেবে একটা মন্দির তৈরি হওয়া অবশ্যই উচিৎ।

    অফিসে কাজকর্ম থাকে তাছাড়া সব মন্তব্যের তো জবাব হয়ও না ঠিক। যারা সমর্থন করেছিল তাদের ধন্যবাদ দিলাম। লিস্টের ১) নং কে উত্তরে লিখলাম - আপনি নিজের পছন্দে একটি বে আইনি কাজ সমর্থন করতেই পারেন। পছন্দ আপনারই। ২) নং কে লিখেছিলাম - এটি বে আইনি ও এটি আবাসিকদের সাধারণ সমস্যাগুলি সমাধান করে না। ৪) নং কে বললাম - ভারতীয় আদালত যদিও তাই মনে করেছে।

    এই উত্তরগুলি দেওয়ার পরেও এই রকম মেসেজ আসতেই থাকে হোয়াতে। সেগুলো সবই একই রকম। এর পরে আসরে নামেন সেই বাঙালি ভদ্রলোক যিনি কিনা প্রথম কে কে এখানে মন্দির চান বলে ক্ষেপে গেছিল। সে খুব বড় একটা কিছু লেখে বটে, কিন্তু সে ইংরাজির যতটুকু বোধগম্য হয় তা এইরকম:

    “সবার মতামত সমান মূল্যবান।
    -স্থায়ী মন্দির এখনও বানান হয় নি।
    - নবরাত্রি তে মাতা রাণীর পুজো। যেহেতু হিন্দু তাই এতে বিতর্কের জায়গাই নেই।
    - আমার বন্ধু বলেছেন (আমাকে বন্ধু বলেছে, আমি উলুতপুলুত, তা এর সঙ্গে আলাপ পরিচয় আছে) এখানে মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে পারেন ব্যক্তিগত জায়গায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করছি তিন বছর আগে এখানে দুর্গাপুজো কেন শুরু করেছ তুমি ও তোমার বন্ধুরা মিলে? যদিও আমি তখন ছিলাম না এখানে। (হ্যাঁ, এই অবকাশে বলে রাখি সে এক পাপ করেছিলাম বটে, কিন্তু মাইরি বলছি খেটে খেটে প্রাণ গেছে, পুজোর ক’দিন সোসাইটি ছেড়ে বেরোতে পারিনি, সবার সঙ্গে তিনবেলা ভেজ গিলেছি, একফোঁটা মদ অবধি খাওয়ার সময় পাইনি। তাতেও পাপ ধোয় না)
    - এর আগে আমি মন্দির নিয়ে মতামত চাই যখন হোয়া গ্রুপে।
    - ১৮৬ টি মতামতের মধ্যে মাত্র তিনজন এর বিরুদ্ধে মত দিয়েছিল। তাদের জন্য আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা আছে। - তাই আমরা তাদের থেকেও তাইই আশা করি।
    - আমরা মনে করি আমরা যে এ নিয়ে কোনও বড় বিবাদ না করি।

    এর বেশিটাই বুঝিনি। যতটুকু বুঝেছিলাম তার উত্তরে বলেছি - তুমি যদি আমার মূল মেসেজটা আর একবার পড়তে তা’হলে হয়ত প্রশ্নের উত্তর পেতে।

    এরপর আমার বক্তব্যের সমর্থনে দু একজন আরো আসেন। তারা বাকিদের মন্তব্যের উত্তর (যেগুলো আমি দিই নি) দিয়েছেন। তাদের আমিও একটু ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আর ডব্লু এ র সবাই মুখে কুলুপ। বাড়ি ফেরার পথে আমি আর একবার একটা পোস্ট করি আর ডবলু এ’র মতামত চেয়ে। অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রেসিডেন্ট মাঠে নামেন। প্রথমেই তিনি এক জরুরি ভিত্তিতে ডাকা এক মিটিং প্রস্তাব করেন রাত সাড়ে ন’টায় ক্লাবঘরে। তার কিছু পরেই আর ডবলু এ’ অবস্থান বোঝাতে গিয়ে জানান -

    আর ডব্লু এ’র অবস্থান খুব পরিষ্কার। আমরা এই আইনানুগ সংস্থার সদস্য হিসেবে মনে করি যে যদি আইনানুগ পথে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আবাসিকদের ইচ্ছা ও আবেগ কে মাথায় রেখে যদি এটি সম্ভব হয় তাহলে আমরা এটি (মন্দির স্থাপনা) সমর্থন করব। অন্যথা, এ ব্যাপারে আমরা নিরপেক্ষ থাকব, অর্থাৎ সমর্থন করব না, বিরোধীতাও করব না।

    আর ডব্লু এ’র এই “পরিষ্কার” করে বোঝান তে মানুষজন খুবই উৎফুল্ল হ’ল। “এইত, সবকিছু কি সুন্দর স্পষ্ট ব্যাখ্যা! এই না হ’লে আর ডবলু এ - বললে হবে!

    আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম - সময়মতো পৌঁছে যাব।



    মিটিঙে পৌঁছনর পরে কিছু আজেবাজে আলোচনা হ’ল। যাতে বাকিরা আসে। দেখতে পাচ্ছিলাম, লোকজনের তাতে একটু অস্থির অস্থির ভাব। এ যেন সোসাইটি হ’লে জওয়ানি সিরিজের মুভি চালানর আগে ফিল্ম ডিভিশনের তথ্যচিত্র। যা শেষ হচ্ছেই না। কিন্তু লোকজন ঢুকছিল, এদিক ওদিক থেকে যতগুলো চেয়ার পাওয়া গেল জড়ো করে বসছিল, বাকিরা দাঁড়িয়ে। প্রেসিডেন্ট গলা ঝেড়ে নিয়ে শুরু করলেন -”আজকের এই জরুরী মিটিং তা’হলে শুরু করা যাক। যার যা বলার একে একে বলতে থাকুন।” বলে তার বাঁদিকে তাকালেন। আমি তার ডানদিকে বসে। ভাবলাম, ভালোই হল সবার কথা শুনে গুছিয়ে নিতে পারব উত্তরগুলি।

    গুছোব কি আর সাজাবই বা কি! যা যা হ’ল ঠিক তাই তাই পর পর লিখে যাই। লেখার প্রথমে যদিও বলেছিলাম যে নাম ব্যবহার করব না এবং চেহারা দিয়েও মানুষকে বোঝান ঠিক নয়। তাই প্রেসিডেন্ট এর বাঁদিকে বসা লোকটিকে এক নং দিলাম। আর খেয়াল রাখতে হবে মেসেজ অনুসারে যাকে আগে তিন নং বলে চিহ্নিত করেছি তিনি এখানে সাত। আর সেই বাঙালি ভদ্রলোক প্রথম যিনি মন্দির বলে ক্ষেপে উঠেছিলেন তার নম্বর পাঁচ। ব্যস, এইবার সব জলের মতো “পরিষ্কার”।

    দুই- আমি যেটা জানতে চাই, মানে আমার স্ত্রী আমায় এটা জানতে পাঠিয়েছেন যে, মন্দির তো দেখুন অনেক রকমের হয়, এখানে কীসের মন্দির হবে?

    সাত- মন্দিরে তো সব দেবতাই থাকবেন। কি তাইতো? মাতারাণী, শিব, হনুমান, লক্ষ্মী, বললাম না সর্বধর্ম স্থল হবে এইটা

    আট- সর্বধর্ম মানে কি মুসলমানেরাও আসবে নাকি?

    সাত - আমি কি তাই বলেছি? (তারপর একটা দুর্বাসা দৃষ্টি, এরা যে কোত্থেকে আসে - ধরণের)। শুনুন, আমি পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি…(তার কথার মাঝখানে অন্য একজন বলে ওঠেন)

    ছয়- আমি সবাইকে একটা কথা জানাতে চাই। আমি এখানে আসার আগে &*& সেক্টরে থাকতাম সেখানে… ( তার কথা শেষ করতে দেওয়া হয় না)

    সাত- আমি তো বললাম আমি সব বলছি, মাঝখান থেকে কথা বলছেন কেন?

    ছয়- সবাই সে’সব কথা জানে। আলাদা করে শোনার কিছু নেই। আমি যখন &*& সেক্টরে থাকতাম…...

    সাত - আমাকে তা’হলে বলতে দেওয়া হবে না তো?

    দুই- আমি জানতে চাই যে মন্দির যে তৈরি হবে, তার অনুদান কি আমরা ভাগাভাগি করে দেব নাকি যে যত পারে?

    ছয়- আমি তো সেটাই বলতে চাইছি। আমি যখন &*& সেক্টরে থাকতাম…

    সাত- এখানে যখন বলতে দেওয়া হচ্ছে না, তখন মিটিঙে ডাকাই বা কেন?

    @#&&%$+*&#-+++$+*&&@%& (কিছু শোনা যায় না)

    প্রেসিডেন্ট -(সামনের টেবিলে ঘুষি মেরে) আ: এইরকম করলে কী করে হবে! (সাত কে উদ্দেশ্য করে) হ্যাঁ, আপনি বলুন

    সাত - আমি বলতে চাই যে সোসাইটিতে এইরকম রুল থাকে যে কেউ ফ্ল্যাট কিনলে ফ্ল্যাটের দামের একটা পার্সেন্টেজ মন্দির ফান্ডে দিতে হয়। এখানে লোকজনকে তা দিতে হয়নি, যে যার মতো নিজেরা টাকা দিয়েই করছে, কারোর থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে না, তাতেও আপত্তি।

    অনেকে - হ্যাঁ, সে কী। নিশ্চই নিশ্চই, এমন হ’লে আমাদের কী সুন্দর বড় মন্দির হ’ত। মার্বেল বসান। ফোয়ারা থাকত ( যে যার মতো বলছিল)

    ছয়- এবার আমি বলি? আমি যখন &*& সেক্টরে থাকতাম সেখানে মন্দির বানিয়েছিলাম। একটা বড় বোর্ডে সেখানে কে কে দান দিয়েছেন তাদের নাম লেখা হয়েছিল। কিন্তু অ্যামাউন্ট লেখা হয় নি। কেউ পাঁচশো দিলেও নাম, যে পঞ্চাশ হাজার দিয়েছে তারও নাম পাশাপাশি।

    এগার - আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি একদিন সকালে বাইরেটা একটু হাঁটতে গিয়েছিলাম। দেখি তিনজন মহিলা খালি পায়ে বেরোচ্ছেন। আমি বললাম কোথায় যাচ্ছেন? ওরা বললেন আমরা প্রতি সোমবার সাই মন্দিরে শিব বাবাকে জল চড়াতে যাই। আমি বললাম খালি পায়ে? ওনারা বললেন কী আর করা যাবে, শিব বাবাকে জল চড়াতে গেলে জুতো পরা যায় নাকি? আমি ভাবলাম, যদি সোসাইটিতে একটা মন্দির থাকে তা’হলে এনাদের খালি পায়ে হাঁটার কষ্ট করতে হয় না।

    নয় - নিশ্চই নিশ্চই। মন্দির থাকলে কত সুবিধা, আমাদের জন্য তো বটেই, আমাদের সোসাইটির বয়স্করা সেখানে যেতে পারবেন। আমাদের পরের প্রজন্ম সেখান থেকে কত কী শিখতে পারবে।

    দশ- (আমার দিকে তাকিয়ে, দাঁত মুখ খিঁচিয়ে) শুনছ? এর পরেও বলবে মন্দির বানানোটা ঠিক নয়? এই যে তোমরাও তো এখানে দুর্গাপুজো করো, বলতে পারবে সোসাইটির কেউ তাতে বাধা দিয়েছে?

    আমি - (মৃদুস্বরে, প্রেসিডেন্ট এর দিকে তাকিয়ে) বলব?

    পাঁচ - (প্রেসিডেন্ট আমার দিয়ে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে হ্যাঁ কি না বলার আগেই শুরু হয়ে যান) আমি শুধু একটাই কথা বলতে চাই। আজ থেকে মাস ছয়েক আগে আমি এই গ্রুপে জানতে চাই এখানে একটা মন্দির বানানোতে কার কার মত আছে। তারা বুড়ো আঙুল দেখান। এর মধ্যে একশো ছিয়াশি জন থামস আপ (সত্যি থামস আপ ই বলেছিল) দিয়েছিল। (আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে) ও তো ছিল তখন গ্রুপে ও জানে।

    আমি - (সবার চোখ আমার দিকে) আমি কি হ্যাঁ বলেছিলাম?

    পাঁচ- না। তুমি বিরোধী ছিলে (বাকিরা হতাশ)। তিনজন শুধু বলেছিল মন্দির চাই না। কিন্তু একশো ছিয়াশি জন থামস আপ দিয়েছিল। আমি তখন আরও কয়েকজন মিলে আর ডব্লু এ’র সঙ্গে মিটিং করি। তিনবার মিটিং হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর ডব্লু এ আমাদের বলে নিজেরা টাকা পয়সা তুলে যদি করতে পারো আর তা চালানর খরচ যদি নিজে থেকেই উঠে আসে তাহলে করো। সেই অনুযায়ী আমরা মাতারাণীর মূর্তি এনেছি। কাল প্রতিষ্ঠা হবে।

    বারো - মন্দির অত্যাবশ্যকীয়। একটা সোসাইটি এখানে আছে যেখানে মন্দির নেই? তুমি আইন দেখাচ্ছ? তুমি যে সব ভিডিও দিয়েছ (আমি মাইরি বলছি খবরের লিঙ্ক দিয়েছিলাম) তাতে এক জায়গায় আছে - কে একজন জলের ট্যাঙ্কে মূর্তি বসিয়েছিল তাই কোর্ট বলেছে সেটা জলের ট্যাঙ্ক থেকে সরিয়ে সোসাইটির বাইরে বা ভেতরে, শোনো ভালো করে ভেতরেও বলেছে - স্থাপন করতে হবে। আর একটা ভিডিও, তাতে একজন বলেছে মন্দিরের মাইকের আওয়াজে তার মেয়ের পড়াশোনায় অসুবিধা হয়, তাই পুলিশ বলেছে মাইক না বাজাতে। তোমরা যে দুর্গাপুজোয় কত রাত অবধি ফাংশান করো, তাতে লোকের অসুবিধা হয় না? কেউ বলেছে দুর্গাপুজো বন্ধ করার কথা?

    আমি- সে তো সোসাইটিতে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানই পালিত হয়। হোলি, জন্মাষ্টমী গণেশ পুজো দুর্গাপুজো, সেগুলো তো সাময়িক। কিন্তু মন্দির মানে তো তাতে নিত্তনৈমিত্তিক এইসব চলবে।

    বারো- সব বুঝি, কিছু বলিনা, তোমরা তো দুর্গাপুজো একটা কমার্শিয়াল ব্যাপার করে ফেলেছ। লোকের থেকে টাকা নাও।

    আমি- সে তো প্রথমবার চাঁদা তুলেছিলাম। পরের বার তো চাঁদা চাই নি।

    বারো - লোকের বাড়ি বাড়ি তো গিয়েছিলে?

    তেরো (ইনি বাঙালি, দুর্গাপুজো দলের, সেন্সিবল লোক, মন্দির পন্থী, কিন্তু নিশ্চিত জানি আমি মারধর খেলে এই লোকটাই আটকাত বাকিদের) - সে তো নিমন্ত্রণ করতে।

    বারো - নিমন্ত্রণ? যাও তো একগাদা হ্যাণ্ডবিল দিতে (যাতে অফার টফার থাকে এমন কুপন, গতবারে মাংসর দোকানের কুপন অবধি ছিল) যত্তসব কমার্শিয়াল ব্যাপার।

    এগার - এই যে আমরা জন্মাষ্টমী করেছিলাম - একটা কোনও কমার্শিয়াল স্টল ছিল?

    সাত - (আচমকা উঠে পড়ে বাইরে যেতে উদ্যত, সবার দিয়ে হাত তুলে ওয়েভ করতে করতে) আচ্ছা আমি চললাম। দেরি হয়ে যাচ্ছে, কাল থেকে তো নবরাত্রি, যা করার আজই করতে হবে (এই বলে কোমরে হাত দিয়ে সামান্য পেলভিক শ্রাগ)।

    প্রেসিডেন্ট এবার আমার দিকে তাকালেন

    আমি- সবাইকে নমস্কার জানাই। আমি বলতে চেয়েছি মন্দির এইভাবে বানানো যায় না। একটা জমি যখন পূরসভা থেকে ছাড়পত্র পায় তাতে পরিষ্কার লেখা থাকে এর উদ্দেশ্য কি, কোথায় কি থাকবে না থাকবে। আমি যদ্দুর জানি এই জায়গার যে প্ল্যান আমি দেখেছিলাম তাতে মন্দিরের কোনও উল্লেখ ছিল না। বরং একটা বাচ্চাদের স্কুল ছিল। আমি তাই এ বিষয়ে আর ডব্লু এ অবগত আছে কি না জানতে চাই।

    দ্বিতীয়ত, আমি বলতে চাই, আমাদের সোসাইটিতে সমস্যার অন্ত নেই। আমাদের বড় রাস্তার সঙ্গে সোজাসুজি যোগাযোগ এখনও হয় নি। সোসাইটির রক্ষণাবেক্ষণ এখনও তেমন ঠিকঠাক নয়। এই অবস্থায় আর ডব্লু এ কি এমন একটা ব্যাপারে জড়াতে চাইবে যাতে পরবর্তী কালে অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে?

    তৃতীয়ত,....

    পনেরো- তুমি কি সব লিখে এনেছ?

    আমি- না, আমার মনে আছে সবই। যা বলছিলাম, আমার মনে হয়ছে যারা বিশ্বাস করেন তাঁরা তো বলেন ভগবান সর্বত্র আছেন। এখানে সোসাইটিতে আমরা যে যার বাড়িতে ইচ্ছে মতো পুজো টুজো করতেই পারি। তাছাড়া এখানে সব ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানই পালিত হয়। যাতে যে যার ইচ্ছেমত অংশ নেন। আর আশেপাশে মন্দিরও নেহাৎ কম নেই। বরং, আমি দেখেছি বাচ্চাদের স্কুল ভ্যানে কীভাবে তাদের ঠেসে ঢুকিয়ে বিপজ্জনকভাবে ভ্যান যাতায়াত করে। এখানে একটা নার্সারি স্কুল হলে বাচ্চারা নিরাপদ হতে পারে। একটা লাইব্রেরি নেই এ তল্লাটে। একটা লাইব্রেরি থাকলে লোকের অনেক সুবিধা হয়।

    পনেরো - আরও বলবে?

    আমি- এই শেষ পয়েন্ট, আমি জানি আমাদের সব ক’টা টাওয়ারের ওসি (অক্যুপেন্সি সার্টিফিকেট) নেই। তার ওপরে বে আইনি নির্মাণ হচ্ছে জেনে পূরসভা যদি বাকিগুলোর ছাড়পত্র বাতিল করে আর ডব্লু এ’র কাছে সেটা কেমন লাগবে? এটা একটু বেশি ঝুঁকি হয়ে যাবে না?

    প্রেসিডেন্ট - (এতক্ষণ কিছু না বলতে পেরে গণগণে, বাকি কার কি বলতে উদ্যত হচ্ছিল, তাদের থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল) শোনো, তোমার প্রত্যেক প্রশ্নের এক এক করে উত্তর দিচ্ছি। এই জমি আমার, আমি এই জমিতে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।

    আমি- (চোখে চোখ রেখে)- এটা আপনার জমি?

    প্রেসিডেন্ট - আমার, হ্যাঁ, মানে আমাদের সবাইকার। সবাই, মানে মেজোরিটি যা বলবে এখানে তাই হবে। আইন টাইন সব জানি। কোথায় কী হয় কীভাবে সব জানা আমার। তোমাকে ওসব ভাবতে হবে না। আর তোমার স্কুল, লাইব্রেরি? তুমি উদ্যোগ নিয়ে এস আমার কাছে আমি হ্যাঁ বলে দেব। তোমার স্কুল লাইব্রেরি তুমি যা ইচ্ছে তাই বানাও। আজ বাদে কাল এখান থেকে বিল্ডার চলে যাবে আমাদের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে। তখন আমি প্রেসিডেন্ট থাকি বা না থাকি আমি বলছি এখানে মেজোরিটি যা চাইবে তাই হবে।

    সতেরো - খুব আইন আইন করছ যে, চিৎকার করে শুনুন আচ্ছা এখানে যারা যারা আছে তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে কখনও রেড লাইট জাম্প করেনি? তারা হাত তুলুন।
    (আমি একা হাত তুললাম)
    সাতেরো - (আমার দিকে তাকিয়ে) তুমি রেড লাইট বাঙ্ক করোনি? প্রমাণ কি?

    আমি - যদি জানতাম তুমি চাইবে তা’হলে প্রমাণ রাখতাম।

    সতেরো - এখানে কেউ আছে যে কখনো কাউকে ঘুষ দেয়নি?
    (এবার হাত তুলিনি, পাপ আছে)

    সাতের- এখানে এমন কেউ আছে যে কখনও “গলত কাম” (এর ঠিক বাংলা জানি না, বোধ হয় অপরাধমূলক কাজ হবে) করে নি?
    আমি- হাত তুললাম

    সাতের - কিন্তু মেজোরটি চাইলে তো মন্দির বানাতেই হবে। আইনের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য আইন?

    আমি- অষ্টাদশ শতাব্দিতে মেজোরিটি চাইত বলে বিধবা কে মৃত স্বামীর চিতায় জ্যান্ত জ্বালান হত। মেজোরিটির বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ণ হয় বলেই বিধবারা এখন বেঁচেবর্তে থাকেন।

    প্রেসিডেন্ট - (চোখ মুখ কুঁচকে) তোমরা বাঙালিরা, কিছু মনে কোরো না, কিছুই জানো না। আমি তোমাদের দুর্গাপুজো করার অনুমতি দিই। তোমরা আমাকে একবার ডাকোও না। তোমাদের ব্যানার লেগেছে দুর্গাপুজোর, আর ডব্লু এ’র নাম আছে ওতে? এই যে তোমার সঙ্গে আমি আগের বার দুর্গাপুজোয় কথা বলেছি। বলিনি? যা যা করতে চেয়েছ সব করতে দিয়েছি- দিই নি?

    আমি - আমি কি সে কথা অস্বীকার করেছি? আমি তো জানি আমি আজ মন্দির নিয়ে কথা বলতে এসেছি।

    চারপাশ থেকে সোরগোল - একবার প্রেসিডেন্ট কে স্টেজে ডাকে নি। কী দু:সাহস। দুর্গাপুজোর ব্যানারে আর ডব্লু এ’র নাম নেই? এরা তো পুরো কমার্শিয়াল করে দিয়েছে। কত বাইরের লোক আসে সোসাইটিতে। কখন কি ঘটে যায়। তাও প্রেসিডেন্ট কে ডাকবে না স্টেজে

    তেরো - হ্যাঁ, ব্যানারে নাম থাকা উচিৎ ছিল। ঠিক আছে ওটা আমি দেখে নিচ্ছি।

    বাকিরা - তা বলে ব্যানারে আর ডব্লু এ’র নাম দেবে না?

    পাঁচ - আমি বলছি প্রেসিডেন্ট, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আর ডব্লু এ’র নাম তুলে দেব ব্যানারে।

    প্রেসিডেন্ট - হ্যাঁ। এটা ঠিক করো না তোমরা। আমি এই বলে দিচ্ছি, পরের বার এস দুর্গাপুজো করার অনুমতি নিতে, কিচ্ছু করতে দেব না।

    তেরো - প্রেসিডেন্ট, আমরা ব্যাপারটা দেখছি, আর আমাকে দেখিয়ে - ও কিন্তু এখানে এসেছে ওর নিজের পক্ষ থেকে মন্দির নয়ে কথা বলতে।

    আমি - আমি তো সেটাই….

    চারপাশ থেকে - মন্দির হবেই। আইন কি করবে? মন্দির একবার হয়ে গেলে মন্দির ভাঙবে? দেখা আছে? মন্দির হয় না নাকি কোথাও? কে বলেছে মন্দির বানানো নিষিদ্ধ? প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে এইবার।

    দূর থেকে দেখি দশ নং আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ পাকিয়ে হাত নেড়ে কীসব বলতে চেষ্টা করছে, কিন্তু মাঝখানের ওই চিৎকারে আমিও তাকে ইশারায় কানে হাত দিয়ে বললাম কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। প্রেসিডেন্ট এর কাছে গিয়ে বললাম। আমি আপনাদের ভাল চাই। দেখেছি আপনারা সোসাইটির জন্য অনেক কাজ করেন। আমি চাই না একটা মন্দির বানানো নিয়ে এতে নতুন সমস্যার জন্ম হয়।

    প্রেসিডেন্ট - আমি তোমাকে তো বললাম, এখানে আমি সবাইকে চিনি জানি। তোমার চিন্তা করার কিছু নেই সব সামলে নেব।

    সবাইকার দিকে উদ্দেশ্য করে- আচ্ছা তা’হলে এবার যাওয়া যাক।

    আমিও বাড়ির পথ ধরলাম। খালি হাতে। অনেক কিছুর জবাব অনেক রকম ভাবে দেওয়া যেত। তাতে মারধর হ’ত। একটা এফ আই আর। সেসব অ্যাফোর্ড করা যাবে না আমার।

    খালি হাতে। একা একা ফিরে আসতে হয়। যাতে অন্তত এই লেখাটা শেষ করা যায়। রাস্তা অনেক বাকি। অনেকটা যেতে হবে।

    ডিসক্লেমার - ১) আমাকে ভীরু, কাপুরুষ যা খুশি মনে করতে পারেন। ২) সব চরিত্র কাল্পনিক।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৯১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • de | 24.139.119.171 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৪৫59427
  • ডিসিকে হ্যাপ্পি জান্নি!
  • Reshmi | 129.226.173.2 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:১২59428
  • অন্য ধর্মের লোক আছে তো। সর্দারদের অনেকেই বিরোধিতা করছে। কিন্তু আবার সেই মেজরিটির গল্প।

    দুর্গাপুজো শুরু করার পেছনে নবরাত্রির সময়্কার জাগরণ, কীর্তনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়াটাও একটা কারণ ছিল। দুর্গাপুজো না হলে ওই জায়্গায় শেরাওয়ালির মূর্তি বসিয়ে এই সব চলত। আপোষ হিসাবে দুর্গাপুজোর মধ্যে একদিন "মাতা কি চৌকি" ম্যান্ডেটারি! দুর্গাপুজোর ফান্ড থেকেই। জনতা বেজায় খুশীও চারদিন ধরে মোচ্ছব পালন করার সুযোগ পেয়ে। আর প্রথম বছর ছাড়া দুর্গাপুজোতে আমাদের তেমন ভূমিকাও নেই, এবার একেবারেই নেই, কিন্তু সেটা ইম্পর্ট্যান্ট না।

    দুর্গাপুজো শুধু নয়, গণেশ চতুর্থী, জন্মাষ্টমী, বড়দিন সবই হৈ হৈ করে পালিত হয়। সেই নিয়ে প্রতিবাদ কখনো করা হয়ও নি, কারণ প্রয়োজনীয় মনে হয়নি। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে পারমানেন্ট মন্দির মনে হয় এক করে দেখা ঠিক নয়।
  • de | 24.139.119.171 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৩২59429
  • সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলাম - মুসলিম আছে একজনও?
    তাহলে তাঁদেরকে সঙ্গে নিন, মূর্তিপুজোর বিরোধিতা খালি ওই ধর্ম দিয়েই কাউন্টার করা যাবে! অবশ্য, আবারো, দূর্গাপুজোটাও তাহলে যাবে!

    এতো কিছু হয়, ঈদ বা মহরমটাও পালনের লিস্টে রাখতে সাজেসান দিন, সঙ্গে বুদ্ধ পূর্ণিমা, গুরু নানক জয়ন্তী, মহাবীর জয়ন্তীও রাখতে পারেন!

    মোদ্দা কথা, মন্দির কাউন্টার করতে গেলে অহিন্দুদের সাথে নিয়ে জোট বানানো ছাড়া উপায় নেই!
  • Rabaahuta | 233.186.18.88 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৩৮59430
  • ধর্ম দিয়ে ধর্মের বিরোধীতায় সেইতো বাইনারী।
  • Reshmi | 129.226.173.2 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৫২59431
  • মুসলিম একজনকেই জানি আমরা, সে বাঙালি, দুর্গাপুজোয় খুব অ্যাকটিভলি পার্টিসিপেট করে। কিন্তু সে একটু সাতে-পাঁচে না থাকা টাইপ, এইসব প্রতিবাদ টাদে এগিয়ে আসবে মনে হয় না। এত বিশাল আবাসন, আর কেউ থাকলেও জানা নেই।

    আসলে সমস্যা হল, মন্দির-মসজিদ-গীর্জা-গুরুদ্বার কোনটাই চাই না, এ রকম বলার লোক কই? বাকি যারা বিরোধিতা করছেও তাদের বেশিরভাগ এটা হলে ওটা নয় কেন, এই লজিকে চলছে।
  • sm | 52.110.184.84 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:২৩59432
  • মন্দির হলে সমস্যা, রাত বিরেতে তারস্বরে নাম সংকীর্তন এই তো !সেরকম অসুবিধে তো আমার পাড়ায় হরবখত হচ্ছে। জলসা,সংকীর্তন,কালী পুজো, বাজি ফাটানো একদম সরগরম পরিবেশ।
    কি করা যাবে?
    ধরুন এমন হাউসিংয়ে গেলেন যেখানে মুসলিম সংখ্যা ধিক্য। তারা যদি মাইক লাগিয়ে আজান শুরু করে;কি করবেন?
  • lcm | 179.229.10.212 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:৫৭59438
  • সিকি-র প্রথম প্যারাটা আমারও কোশ্চেন - এরকম দুমদাম কংক্রিট স্ট্রাকচার বানানো - বিল্ডিং কোড, ফায়ার কোড, ফ্রি স্পেস... এসবের এক গাদা অ্যাপ্রুভাল - এসব তো লাগার কথা।
    আর পার্মানেন্ট পাবলিক গ্যাদারিং প্লেস হলে তো আরো লাগা উচিত। ধরো, মেজরিটি ঠিক করল, কমপ্লেক্সের মধ্যেই একটা হসপিটাল তৈরি হবে, বা, ধরো থিয়েটার/সিনেমা হল - ইচ্ছে হলেই কি বানানো যায়?
  • Reshmi | 129.226.173.2 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:২১59433
  • সে রকম সোসাইটিতে যাব কেন? এই ঘটনার আগে তো আমাদের জানাই ছিল না হাউজিং সোসাইটির মধ্যে এ রকম মন্দির হয় বলে। দেখিও নি আগে, যদিও এখন শুনছি আশপাশের কিছু সোসাইটিতে নাকি আছে, সবই রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট। মানুষের ভক্তি খুব বেড়ে গেছে কি না!
  • সিকি | 158.168.40.123 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:৪৬59434
  • সোসাইটি, সোসাইটির সংখ্যাগরিষ্ঠ, সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কেউই "চাইলেই" সোসাইটির মধ্যে মন্দির, মাদার ডেয়ারি, ক্রেশ, দোকানঘর, এটিএম - কিছুই বানাতে পারেন না "অ্যাজ আ সেপারেট স্ট্রাকচার"। পারমিশন লাগে। কর্পোরেশনকে দিয়ে প্ল্যান রি-অ্যাপ্রুভ করাতে হয়, না হলে সেই স্ট্রাকচার বেআইনি। প্ল্যানের বাইরে যে কোনও কনস্ট্রাকশন বেআইনি। সে মন্দিরই হোক বা মসজিদ বা পায়খানা বাথরুম।

    হ্যাভিং সেইড দ্যাট, দেশটার নাম ভারত, এ দেশে রিলিজিয়ন সেলস লাইক নাথিং এলস, সুতরাং বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও সোসাইটির পর সোসাইটিতে এইভাবে মন্দিরেরা বংশবৃদ্ধি করেই চলে - থ্যাংকস টু টিপিকাল "জ্যায়সি আপকি শ্রদ্ধা"-মার্কা উত্তর ভারতীয় ধর্মপ্রীতি।

    যার ছিটেফোঁটা দেখলেও দাউ দাউ করে মোজা জ্বলে।
  • de | 69.185.236.51 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১২:০৬59435
  • দিল্লীতে জানিনা, বম্বেতে কর্পোরেশন কে পয়সা খাইয়ে যেকোন প্ল্যান রিঅ্যাপ্রুভ্যাল (ইভন ব্যাকডেটেডও) বার করা যায়। কার কার টেবিলে কত কত পয়সা পৌঁছতে হবে সব টেবল বানানো থাকে - পয়সা পৌঁছলেই কাজ সঙ্গে সঙ্গে! ঘুষের পয়সায় বেআইনী কাজের ইমানদারীতে কোন খামতি নেই! ওসব আইন-টাইন দেখিয়ে মন্দির রোখা মুশকিল! মন্দির আটকাতে গেলে অন্য ধর্মের লোকজনেদের জেনুইনলি কাছে টানতে হবে। একদিনের একটা ইস্যুর জন্য নয়, একটা সেক্যুলার টিম গড়তে অনেক এফোর্ট লাগে!
  • sm | 52.110.155.203 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১২:৪০59436
  • একটা কথা বোঝা যাচ্ছে না।সোসাইটি কর্পোরেশন কে মন্দির / দোকান ঘর / ডিসপেনসারি করবো বলে এপ্লাই করলে কর্পোরেশন কেন মঞ্জুর করবে না?ন্যায্য ফি দিলেই করবে। এতো সব জায়গাতেই চলে!
  • sm | 52.110.164.119 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০২59439
  • অরে সবকিছুই তো পরিবর্তন করা যায়। অনেক হাউসিং এ হটাৎ করে দুটো এক্সট্রা ফ্লোর এর পারমিশন চলে আসে।
    আর কম্যুনিটি হলেও তো প্রচুর গ্যাদারিং হয়।
    দুর্গাপুজো ,গণেশ চতুর্থী,বর্ষফুর্তির অনুষ্ঠানেও হয়ে থাকে।
    সুতরাং প্রতিযুক্তি জোরালো।
    এভাবে বাঁধা দেওয়া যায়না।
  • lcm | 109.0.80.158 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫২59440
  • বাঁধা তো দেওয়া আছে বোধবুদ্ধি, কিন্তু বাধা তো দেবে কর্পোরেশন। দেশের আইন। কিন্তু, তাদের বোধবুদ্ধিও তো বাঁধা দেওয়া আছে।

    অবশ্য, যেখানে ইচ্ছেমত রাতারাতি রাস্তার মাঝখানে (বা ধারে) কংক্রিটের স্ট্রাকচার বানানো যায়, হনুমান ঠাকুর থেকে সন্তোষী মা, বা, ইন্দিরা-রাজীব শহীদ বেদি... সেখানে তো এমন হওয়া আর আশ্চর্যের কিসের।

    বেসিক্যালি, কন্স্ট্রাকশন পারমিট ব্যাপারটাই তুলে দেওয়া উচিত।
  • amit | 213.0.3.2 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০৭59441
  • সেটাই, যখন জুগাড় আর গায়ের জোরেই সব কিছু করে নেওয়া যায়, আর কিছু লোক এসে সেটাকে জাস্টিফাই-ও করতে পারে, এই সব পারমিট তুলে দিলেই ভালো। অন্তত কিছু লোকের ঘুষ বন্ধ হবে।
  • sm | 52.110.164.119 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৬59442
  • এরকম ভাবছেন কেন?আমার জানা একটি হাউসিংয়ে সুইমিং পুল রক্ষনাবেক্ষনে অসুবিধে হচ্ছিলো। বরঞ্চ ডেঙ্গি ছড়াবার প্রবল আশংকা থেকে যাচ্ছিলো। তো, হাউসিংয়ের লোকজন ঠিক করলেন ওই জায়গা তে আর একটা ক্লাব কাম কম্যুনিটি হল বানাবেন। তো ,অসুবিধে কোথায়?
  • dc | 113.40.144.10 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১১59443
  • দে দি কে থ্যান্কু ঃ)

    সোসাইটিতে মন্দির বানানো বন্ধ করতে বলাটা আমার মনে হয় একটু ইম্প্র্যাকটিকাল আশা করা হয়ে যাচ্ছে। ভারতবর্ষে হাজার হাজার সোসাইটিতে হরেক রকম মন্দির বানানো হয়েই চলেছে। নর্থ ইন্ডিয়ায় মাতাজি তো সাউথে অম্বল দেবী। যে দেশে ফুটপাথের ওপর একটা মন্দিরের জন্য বাইপাস এক্সটেনশান করা যায়না, একটা মন্দিরের জন্য এয়ারপোর্টের এক্সটেনশান ঝুলে থাকে, সেদেশে সোসাইটিতে মন্দির বানাতে কর্পোরেশান বাধা দেবে এমন আশা করেন? (চোখ কপালে ওঠা ইমো)
  • lcm | 109.0.80.158 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩59444
  • যা বুঝলাম, হাউসিং-এর লোকেরা, অর্থাৎ, জনগণ -
    বা যাকে বলে কিনা মেজরিটি - যারা কিনা ডেঙ্গি থেকে বিল্ডিং ফায়ার কোড - মোটামুটি সবই বিষয়ই বোঝেন, জানেন। সিটি ইঞ্জিনিয়ারের পারমিশন, ইন্সপেক্শন, অ্যাপ্রুভাল -- ওগুলো এমনি কথার কথা।

    তা ভালো। স্বাধীন দেশ। জয় হিন্দ।
  • sm | 52.110.164.119 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১59445
  • উঁহু ,ব্যাপারটা ভুল বুঝলেন। কর্পোরেশন এর পারমিশন নিয়েই করা হবে। ফায়ার সেফটি এগুলো মেনেই।
    আমি নিজেই ইউকে তে সেইন্ট অলবান্স বলে একটি জায়গায় হাসপাতালের কথা বলতে পারি।
    হাসপাতাল এর একিউট এমার্জেন্সি বিভাগ বন্ধ করা হয় -প্রয়োজন নেই ও কস্ট বাঁচাতে।
    হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ কিন্তু পুরোদমেই চালু।
    এমতবস্থায় কতৃপক্ষ হাসপাতালের অনেক টা জায়গা পুরো হাউসিং করে বিক্রি করে দিয়েছে। দিব্ব্যি চলছে।
  • lcm | 109.0.80.158 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২৫59446
  • এইত্তো, তব্বে!
    অর্থাৎ, যদি কর্পোরেশন বলে যে পারমিট দেবে না, তাহলে "মেজরিটি" চাইলেও হবে না। তাই তো?
  • sm | 52.110.164.119 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৫৩59447
  • একদম হক কথা!
  • ফেবু থেকে | 193.82.17.242 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৫:০৮59448
  • এর পর বোধহয় চবর চবর করে পান পরাগ বা গুটকা চিবোনো এবং সশব্দে দেওয়ালে থুতু ফেলাটা আবশ্যিক করে দেবে, " মিলে সুর মেরা তুমহারা "
    শুরু হয়ে গেছে উগ্র উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতি'র আগ্রাসনী হানা... এই ভয়টাই ছিল
    "পঞ্চমীর দিন মন্ডপে প্রধান অনুষ্ঠানের নাম "আনন্দমেলা"। গোটা দিল্লিতেই কমবেশি এটাই রীতি। পাড়ার মহিলারা এক দুমাস আগে থেকেই জল্পনা শুরু করেন কে কি ডিশ তৈরি করবেন আনন্দমেলার জন্য। আগে থেকেই টেবল বুক করতে হবে। বাড়িতে রান্না করে মন্ডপে নিয়ে এসে বিক্রি। সুন্দর করে টেবল সাজানো আর সুস্বাদের জন্য আছে পুরস্কার। সেসব টেবলের নাম দেওয়া হয় ইষ্টিকুটুম অথবা জলযোগ কিংবা ভূরিভোজ...। কেউ করেন মালপোয়া। কেউ চিলি ফিশ। কেউবা পোলাও মাংস। অথবা পাটিসাপটা, তালের বড়া। আমাদের পুরুষদের থাকে বড় দায়, কেউ যেন মনে মনে ক্ষুব্ধ না হন যে তাঁর ডিস টা খেলাম না!! সকলেই পরস্পরের পরিচিত। সুতরাং বাধ্য হয়ে সব টেবলেই একটু কিছু কিনে দিদি বৌদি কাকীমাদের মন রাখতেই হয়। মুখে হাসি রেখেও আসলে চাপা প্রতিযোগিতা কার খাবার আগে শেষ হল অথবা কে পুরস্কার পেল। পুরস্কার দেওয়া হবে কালীপুজোর রাতে। এরপর সপ্তমী থেকে দশমী সকালে অঞ্জলী, প্রসাদ, দুপুরে আবার চেয়ার টেবল পেতে খাওয়া মন্ডপেই। সন্ধের পর তো আরতী শেষ হওয়ার অপেক্ষা। তারপর কোথাও শ্রীকান্ত আচার্য কোথাও বিনোদ রাঠোর কোথাও নান্দীকার কোথাও ভূমি, এমনকী যাত্রাও। তবে তাঁরা তো সেলেব্রিটি। তাঁদের আগে মঞ্চ আলো করে লোকাল ট্যালেন্ট। বাচ্চাদের নাচ। বাংলা না জানা সত্ত্বেও রোমান হরফে লেখা লালনের গান শোনানো পাড়ার ইয়ং গ্রুপের কোরাস। ডায়লগ ভুলে যাওয়া নাটক। হাসি রাগ অভিমান ঝগড়া আপস। বিভিন্ন পুজো মন্ডপে এভাবে সপ্তমী অষ্টমী নবমীর ফাংশনে বিভোর হয়ে থাকা। তারপর নিয়মটা হল দশমীর বিসর্জনের পর শান্তির জল, কোলাকুলি আর মিষ্টিমুখ। এবং ডিনার ফাঁকা মন্ডপে মাছ ভাত। কালীপুজোর গভীর রাতে মাংস ভাত। মোটামুটি এই হল দিল্লির পুজোর পরিচিত ধারাবিবরণী।
    আমার পাড়ার পুজোয় এবার এই রুটিনে বজ্রপাত। পুর্বাচল পুজো সমিতি। পুজো বন্ধ করতে হবে। বাঙ্গালী রা পুজোর নামে এই নবরাত্রির সময় নন ভেজ খেয়ে পবিত্রতা নষ্ট করে। তাই স্থানীয় অবাঙালী সম্প্রদায়ের ফতোয়া ছিল পুজো করতে দেওয়া হবে না।
    গত দুমাস ধরে বহু আবেদন নিবেদন কাকুতি মিনতির পর সরকারি দপ্তর পুলিশ সকলের সামনে মুচলেকা দিতে হল নন ভেজ স্পর্শ করা চলবে না। মাছ মাংস ডিম ত্রিসীমানায় যেন না থাকে। আনন্দমেলাতেও না! দুপুর বা রাতের খাবারেও না। সেই ফতোয়া মেনে নিয়ে পুজো করতে হচ্ছে। এটা কোনো দলের নির্দেশিকা নয়। কারণ ওই বিরোধীদের মধ্যে সব দলের সমর্থক কর্মী আছেন। তারা একজোট। এটা উত্তর ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একটি খন্ডচিত্র। অর্থাৎ এখানে থাকতে হলে আমাদের মতেই চলতে হবে। আমাদের খাদ্যাভাসই অভ্যাস করতে হবে। আমাদের নির্দেশে ধর্মাচরণ করতে হবে। প্রচ্ছন্নভাবে এই হল মনোভাব।
    আমরা পুজোয় মন্ডপে নন ভেজ না খেলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। নাই বা খেলাম। আমাদের মধ্যে বহু জনই তো নিরামিষ খান। বিভিন্ন ধর্মীয় পরবে বা সপ্তাহের বিশেষ দিনে অনেকেই নিরামিষ। প্রশ্ন সেটা নয়। প্রশ্ন টা স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া জোর খাটিয়ে। এটা একটা সামাজিক অপমান নয়?
    আলোচনার টেবলে যখন ওই "নন ভেজ খাওয়া হবে না" মুচলেকাটি দেওয়া হচ্ছিল, তখন নিছক কিছু প্রবাসী বাঙালীই কি শুধু অপমানিত হচ্ছিলেন? ভারতীয় সংবিধান আর গণতন্ত্রও কি সমান ভাবে অপমানিত হল না?
    কাল পঞ্চমী। হ্যাঁ আনন্দমেলা হবে। নিরামিষ। তাতে অসুবিধা নেই। স্বাধীনতার আলো একটু ম্লান হয়েছে। উৎসবের আলোয় উদ্ভাসিত মন অবশ্য একই রকম উজ্জ্বল থাকবে। ওটাই শক্তি, সংস্কৃতির।"
    Samriddha Duttaর অভিজ্ঞতা, তাঁর দেওয়াল থেকে
    (Sharing Bhargab Dhar 's post)
  • lcm | 109.0.80.158 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:১২59449
  • তার মানে মজরিটি চাইলেই সব কিছু হয় না, বা, হবার কথা নয়।
    অর্থাৎ, অরিজিন্যাল তক্কো যে মেজরিটি চাইলেই হতেই হবে - সেটি ঠিক নয়।
    (প্রমাণিত)

    ১০/১০
  • সিকি | 158.168.40.123 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০59450
  • আমাদের সোসাইটির দুর্গাপুজো এবারে বোধ হয় বারো বছরে পড়ল। মাত্রই বাইশ ঘর বাঙালি, তার মধ্যেও সকলে ইনভলভড সেভাবে হয় না বা হতে পারে না, যেমন একজন আমি। তবে শুরুর দিকে তো ইনভলভড ছিলামই। সেই বেসিক মাইন্ডসেট থেকেই যে, দুর্গাপুজোয় পুজো, ভক্তি, শ্রদ্ধা এগুলো পাঁচ পার্সেন্ট - আর মজা, আনন্দ, আনন্দমেলা, স্টলের অ্যারেঞ্জমেন্ট, একসাথে বসে হুল্লোড়, বেরনো, বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া, কালচারাল প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করা, তার জন্য উদয়াস্ত খাটা পুজোর কটা দিন - এগুলোই পঁচানব্বই পার্সেন্ট।

    যে হেতু মাত্রই বাইশ ঘর বাঙালি, ফলে অবাঙালিদের ইনফিলট্রেশন বা ইনভলভমেন্ট বেশ ভালো রকমই আছে। শুধু সে জন্যেই কিনা জানি না, আমাদের আনন্দমেলায় কোনওদিনও কোনও আমিষ পদ আসে নি। আসে না। যাঁরা স্টল দেন সেদিন, তাঁদের পঞ্চাশ পার্সেন্টই অবাঙালি।

    মন্দির আছে একটা - এবং তাদের এই "বাঙালিদের" দুর্গাপুজোর দিকে লোভ অনেকদিনের, এই পুরো ইভেন্টটাকে তারা ক্যাপচার করতে চায়, এই লেভেলের ক্রাউড, এই লেভেলের ইনভলভমেন্ট, এই লেভেলের ইকোনমি মন্দির সমিতির কোনও অনুষ্ঠানে হয় না। ওখানে ভিড় হয় মাতা কি চৌকি আর জাগরণে। তারস্বরে মাইক বাজে, বেসুরে গান করেন কিছু শিল্পী, ভক্তেরা ভক্তিতে উদ্বেলিত হয়।

    এই মন্দির নিয়েও আমাদের ইয়াহুগ্রুপ সরগরম হয়েছিল - তখনও হোয়াটস্যাপ জন্ম নেয় নি। বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম একা আমি, কিন্তু কিছুই করতে পারি নি। আজ আমাদের পঁচিশ বছরের পুরনো সোসাইটির লিফট চলে না ঠিকমত, বাইরের দেয়াল থেকে সিমেন্টের চাপড়া খসে পড়ে, ছাদে বৃষ্টি পড়লে সিলিং ফ্যানের ফুটো দিয়ে ঘরের মধ্যে জল পড়ে - অন্যদিকে মন্দিরের সর্বাঙ্গে লেগেছে দামী টাইল, সাঁইবাবা পেয়েছেন শ্বেতপাথরের মূর্তি, সোনার গয়না, রূপোর মুকুট, কাঁচের বাক্স, মন্দিরের দরজা দামী কাঠের, দেয়ালে এলসিডির ডিসপ্লেতে অবিরত স্ক্রোল হয় ভগবানের নামঠিকানা, পাশে প্যাউ (পানীয়) জল - পরিশ্রুততম। আমাদের ঘরে কিচেনের জলেও বোদা গন্ধ ছাড়ে। আরও-র জলে সমস্ত কাজ সারতে হয়।

    কিছু করা যায় নি। কিছু করা যায় না। মন্দিররা হয়ই। মন্দির হম ওঁহি বনায়েঙ্গে - এটা শুনলে আজও আমার যে রকম গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, এদের কাছে এটা ভক্তির উক্তি, মজার উক্তি। ভক্তির বহিঃপ্রকাশ।

    মন্দির থাক। তার মার্বেলের মেঝেতে আমি কখনওই পা রাখি নি। দুর্গাপুজোয় ফিরে আসি।

    পুজো হয় সোসাইটির মাঠে। চারপাশ ঘিরে স্টল পড়ে। আমাদের পুজোর আগে একমাস আশেপাশের দোকানে গিয়ে স্টলের জন্য ঝুলোঝুলি করতে হয়। কেউ স্বেচ্ছায় আসে, কাউকে তোষামোদ করে আনতে হয়। ডমিনোজ পিজ্জা প্রতি বছর স্টল দেয় - কিন্তু পুজোর মাঠে তারা নন ভেজ পিজ্জা বিক্রি করে না। অলিখিত আপত্তি।

    সেবার, পুজোর স্টলের জন্য এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে গেছি বাড়ির সামনের মহাগুণ মেট্রো মলএ। তার ফুড কোর্টে সারিসারি দোকান, একটা একটা করে অ্যাপ্রোচ করতে করতে শেষে পৌঁছেছি কেএফসি-তে।

    স্টল দেবেন?

    কর্মচারিটির সেই অবাক এবং ভয়ার্ত দৃষ্টিটি আমার ভুলতে সময় লেগেছিল। হম ক্যায়সে স্টল দেঁ - বঁহা মাতাজি কা অধিষ্ঠান হোগা, হম তো চিকেন বেচতে হ্যাঁয়, হম তো স্টল নহি লগা সকতে হ্যায় না উধর!

    আমার যুক্তির অতীত, বুদ্ধির অতীত, আমাকে হুঁ তা তো বটেই - বলে সরে পড়তে হল।

    এখন ব্যাক ইন দা মাইন্ড এইসব জিনিসগুলো খেয়াল রাখতে রাখতে ঘুরতে হয়।
  • de | 24.139.119.173 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৩১59451
  • এটা নর্থ ইন্ডিয়া বলেই - বাঙালী পুজোয় ফিশ - ফ্রাই, মাটন কষা, মোগলাই-রোলের দোকান থাকবে না, এ'রম পুজো বম্বেতে কোথাও হয় না!
  • sm | 52.110.174.167 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:৪৫59452
  • ওই তৃণভোজী গুলোর মাথায় পেরেক ঠুকে বলতে হবে -মা হলো গিয়ে চন্ডী!মায়ের সবচেয়ে বড়ো ভক্ত হলো গিয়ে অসুর।
    আমরা ভক্তরা আই মিন, অসুর কূলে জন্মেছি যারা ;তাদের মাংস না খেলে চলে ?রোগ হয়ে পড়বো না !
  • de | 24.139.119.175 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:৫৫59453
  • দূর্গাপুজো কিন্তু পুজোই - যদি উৎসবই হবে, তাহলে পাঁচদিন ধরে পুরুত ডেকে পুজো না করে, এমনিই মূর্তি বসিয়ে, গানবাজনা, খাওয়া-আড্ডা করলেই হয়! সেটা একবার বলে দেখলেই সবাই হাঁ হাঁ করে ওঠে!
  • :) | 88.109.23.1 (*) | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:৫৭59454
  • আচ্ছা আমিষ মানে কী বিফ বা বাফ মেলে?
  • hasmot | 113.220.204.132 (*) | ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:০২59455
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন