এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অতলান্তিকের যুদ্ধ

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ | ১০৫৮ বার পঠিত
  • অতলান্তিকের যুদ্ধ
    ********************************
    ৩ সেপ্টেম্বর,১৯৩৯, সকাল এগারোটা। বলা যেতে পারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলো। ব্রিটেইন আর ফ্রান্স, দুই দেশই একসাথে জর্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন।

    আর সেই ঘোষনার ঠিক আট ঘন্টা পরেই প্রথম সাবমেরিন আক্রমন ঘটলো। পরিষ্কার নিষেধ থাকা স্বত্তেও এক জার্মান ইউ বোট এক ব্রিটীশ যাত্রীবাহী জাহাজ "এথেনিয়া"কে টর্পেডো মেরে ডুবিয়ে দিলো। জার্মানীর মাথা হেঁট। যুদ্ধ তখনো বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর তারই মধ্যে প্রথম আক্রমনই এক প্যাসেঞ্জার জাহাজকে?

    সেই যে শুরু হোলো, এই সাবমেরিনের হামলা চলতেই থাকবে বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত্য।এটাই হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব থেকে দীর্ঘস্থায়ী ক্যামপেইন। তবে, ৪৩'এর মাঝামাঝি সময় থেকেই ওটি আর "ইউ বোট আতংক" থাকবে না। এদিক ওদিক খুচ খাচ বিক্ষিপ্ত হামলা হবে ,কিন্তু প্রথম চার বছরের মতন একটানা যুদ্ধ আর রইবে না। জার্মানী হেরে যাবে মহাসাগরের এই সাব মেরিন যুদ্ধে।

    এই বিশ্ব যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে নিহত হয়েছিলেন ছয় কোটি মানুষ। সেই হিসেবে এই চার বছরের ইউ বোট ক্যামপেইনে মারা যাবে "মাত্র" ষাঠ হাজার মানুষ। কিন্তু এই লড়াই তো জমি দখলের লড়াই ছিলো না। এ ছিলো নৌ অবরোধের লড়াই। এই যুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার মালবাহী জাহাজ ডুববে, আর ১৭৫ টি যুদ্ধ জাহাজ। সলিল সমাধি হবে ৭৮৩টি ইউ বোটেরও।

    ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও
    ********************************************
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও কিন্তু ইউ বোটের ছিলো রমরমা। ব্রিটেইনকে শায়েস্তা করতে সাবমেরিনের মতন অস্ত্র আর কিছু নেই। ব্রিটেইন তো খাবার দাবার থেকে কাঁচা মাল , সব কিছুর জন্যেই তার সাগরপারের কলোনীদের উপর নির্ভর করে থাকে। আর ব্রিটেইনের অর্থনীতিও খুবই বহির্বাণিজ্য নির্ভর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও ব্রিটেইনের অবস্থা কাহিল হয়ে পরেছিলো জার্মানীর ইউ বোটের আক্রমনে। প্রায় ৫০০০ জাহাজ ডুবেছিলো,মারা গেছিলেন ১৫০০০ মানুষ। ১৭৮ টা ইউ বোটও রক্ষা পায় নি।কিন্তু উইনস্টন চার্চিল, তখনো প্রধানমন্ত্রী নন, কিন্তু ব্রিটীশ নৌ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (ফার্স্ট লর্ড অফ দ্য অ্যাডমিরালিটি) হিসেবে তেমন গুরুত্ব দেন নি এই ইউ বোটের হামলাকে। বলেছিলেন কোনো civilized nation"ই আর সাবমেরিন আক্রমন করবে না।তবে যুদ্ধের পরে কিন্তু সেই চার্চিল সাহেবই স্বীকার করেছিলেন '... the only thing that ever really frightened me during the war was the U-boat peril'.

    তবে এথেনিয়ার দুর্ঘটনা বাদ দিলে যুদ্ধের প্রথম দিকে কিন্তু খুবই সভ্য ছিলো এই হামলাবাজী। যেনো কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধ। অটো ক্রেশমার (Otto Kretschmer) ছিলেন জার্মান ইউ বোটের একজন Ace। তার কথাই শুনুন। যুদ্ধের গোড়ার দিকেই তিনি টর্পেডো মেরে ডুবিয়ে দিলেন ব্রিটীশ পণ্যবাহী জাহাজ মেগগকে। কিন্তু তখনই নিজের ইউ বোট নিয়ে হাজির হলেন ডুবন্ত শত্রু জাহাজ কাছে। সবাই ঠিক ঠাক লাইফবোটে না ওঠা পর্যন্ত্য হাজির ছিলেন তিনি এমন কি সেই জাহাজের ক্যাপটেনকে এক বোতোল ব্র্যান্ডী দিতেও ভোলেন নি ! তবে এ হেন শিভালরী ক্রমশঃই বিলীয়মান হবে যুদ্ধ যতই আরো তুমুল হয়ে উঠবে

    একথা জানিতে তুমি জার্মান সম্রাট হিটলার
    ***************************************************
    ব্রিটেইনকে যুদ্ধে হারাতে হলে এই ইউ বোট ছাড়া উপায় নেই। এটা জার্মানীর ভাগ্যবিধাতারা জানতেন। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর জার্মানীর সব কটা ইউ বোট, মিত্র পক্ষ দখল করে নেয়, নির্মিয়মান ইউ বোটগুলিকে ভেঙে ফেলা হয় আর ভবিষ্যতের সাবমেরিন বানানো নিয়েও প্রচুর বাধা নিষেধ জারী করা হয়। এহ বাহ্য, মিত্র পক্ষ যে সতেরোজন জার্মান সেনাদের যুদ্ধাপরাধী বলে গন্য করে তাদের বিচার দাবী করেন তার মধ্যে সাত জনই ছিলেন সাবমেরিনের নৌসেনা। যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বেশীর ভাগ মালবাহী জাহাজ ডুবেছিলো কিন্তু ভাসমান রনতরীর হামলাতেই।

    সেই মতন যুদ্ধমধ্যবর্ত্তী কালে ব্রিটেইন ASDIC সাব মেরিন বিদ্ধ্বংশী টেকনলজি আবিষ্কার করেন কিন্তু সেগুলির ফীল্ড ট্রায়াল প্রায় কিছুই হয় নি। বেশ একটা গাজোয়ারি ভাব। এসডিক মানে শব্দ তরংগ পাঠিয়ে জলের নীচে ডুবোজাহাজের হদীশ সন্ধান, এক কথায় বলা যায় জলের জন্য তৈরী রেডার। পরে এর নাম করন হয় SONAR। কিন্তু এ ছাড়া ব্রিটেইন আর কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। না প্রতিরক্ষায় না আক্রমনের জন্য।

    জার্মানী কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর পরই ভার্সাই চুক্তির নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে শুরু করে। সেই ১৯২০ সাল থেকেই গোপনে তার সাবমেরিন তৈরীর আটঘাট শুরু হয়ে যায়। ফ্রান্স হল্যান্ড - এইসব দেশে তারা সাব মেরিনের পার্টস তৈরী শুরু করে দেন। ১৯৩৩ সালে সাব মেরিন নাবিকদের জন্য স্কুল খোলা হয় এব`, প্রথম ব্যাচেই ষাঠ জন নাবিককে সুদক্ষ করা হয়।

    হিটলার সিংহাসনে বসবার পর সাব মেরিন ডিভিশন আরো চাংগা হয়ে ওঠে।

    লড়াই হোলো শুরু
    ***********************************
    সেই ১৯৩৬ সালেই জার্মানী কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল চুক্তি করেন যে পন্যজাহাজকে আক্রমন করলেও তার নাবিকদের বাঁচবার সব সুযোগ করে দিতে হবে আক্রমনকারী জাহাজকে। কিন্তু,বাস্তবে সেরকম হোলো কই? না হিটলার, না ইউ বোটের কমান্ডার ডুনিৎস, এইসব ভব্যতার ধার ধারতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ডুনিৎস ছিলেন এক ইউ বোটের ক্যাপটেইন। ব্রিটেশের হাতে সেই সাবমেরিনের সলিলসমাধি হয় এবং তিনি যুদ্ধবন্দী হন। তার বোধয় একটা ব্যক্তিগত আক্রোশও ছিলো ব্রিটীশদের উপর।

    যুদ্ধ শুরুর সেপ্টেম্বর মাসেই ২৬টি ব্রিটীশ পণ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয় জার্মান ইউ বোটেরা। এর পরের মাসে এক জেমস বন্ড গোছের কায়দায় এক জার্মান কমান্ডার গুয়েন্থার প্রিয়েন তার ইউ বোট ৪৭কে নিয়ে রাতের আঁধারে ঢুকে পড়েন স্কটল্যান্ডের উত্তরে স্কাপা ফ্লো নামে খাঁড়িতে। সেই খাঁড়িতে মজুত থাকতো অনেক ব্রিটীশ যুদ্ধজাহাজ। বলা যায় ওটি ছিলো রণতরীর পার্কিং লট। প্রিয়েনের দুর্ভাগ্য, তার সেই দুঃসাহসিক অভিযানের রাতে অল্প কয়েকটি জাহাজই সেখানে হাজির ছিলো। তো তিনি টর্পেডো আর বোমা দিয়ে ডুবিয়ে দিলেন ব্যাটেলশিপ রয়াল ওক আর কেরিয়ার কারেজিয়াসকে। প্রিয়েনও ছিলেন জার্মানীর হীরো। উনি কিন্তু বরাবরই তার শিকার মার্চেন্ট নেভীর জাহাজের নাবিকদের সুরক্ষায় যথাসম্ভব চেষ্টা করতেন। এই যুদ্ধের সবথেকে চমকপ্রদ আক্রমনের এটি অন্যতম। স্বয়ং চার্চিল খোদ পার্লিয়ামেন্টেই এই ঘটনা জানিয়ে বলেছিলেন " A remarkable exploit of professional skill and daring"।

    এইবারে হিসেবটা দেখুন। ব্রিটেইনের প্রতি মাসে আমদানী করতে হতো ৫৫ মিলিয়ন টন পণ্য। এর জন্য তার ছিলো ৩০০০ সাগরগামী জাহাজ আর প্রায় ১০০০ কোস্টাল জাহাজ। যে কোনো সময়েই প্রায় ২৫০০ ব্রিটীশ পণ্যবাহী জাহাজ থাকতো দরিয়ায়। দেড়লাখেরও বেশী নাবিক ছিলো এই কর্মকান্ডে যুক্ত।যুদ্ধের শুরুতে প্রাথমিক ভাবে এদের প্রতিরক্ষায় শুধু শ দুয়েক যুদ্ধ জাহাজ নামাতে পেরেছিলো ব্রিটেইন - বড্ডোই কম।

    ডুনিৎসের হাতেও তখন কুল্লে সাতান্নটা ইউ বোট,সেও ঝড়তি পড়তি নিয়েই।আর তার মধ্যে লং রেঞ্জ অপারেশনাল ইউ বোট ২৬টা, বাকী আরো কিছু তখন জোরকদমে তৈরী হচ্ছে বা মেরামতিতে রয়েছে। এদের রেঞ্জও বেশ কম।
    এই ব্রিটেইনকে, "ভাতে মারবো,পানিতে মারবো" নীতির জন্য কিন্তু ইউ বোটের একারই ইজারা ছিলো না। উড়ো জাহাজ থেকে বোমা মেরে, যুদ্ধ জাহাজ থেকে কামান দাগিয়ে অথবা মাইন দিয়ে - এই তিন ভাবেও ব্রিটেইনের মার্চেন্ট নেভীকে ধ্বংশ করবার চেষ্টা চলতো। যদিও নানান কারনে ইউ বোটই ছিলো মুল শিকারী। আর যে ASDIC নিয়ে এতো মাতামাতি ছিলো,সেটির যোগ্যতাও বাস্তবে ছিলো খুবই কম। এক ব্রিটীশ কর্ত্তা তো বলেই ছিলেন যে এসডীক আসলে একটি ”huge bluff”।চলতি রীতি হচ্ছে এই পুরো ক্যামপেইনকে চারটে পর্বে ভাগ করা। এই প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিলো বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই আর চালু থাকবে যতদিন না ফ্রান্সের পতন না হয় মানে ১৯৪০ সালের জুন মাস পর্যন্ত্য।

    দ্বিতীয় পর্ব - জার্মানীর আচ্ছে দিন
    ********************************************
    ফ্রান্সের পতন হতেই ইংলন্ডের কনভয়গুলি জার্মানীর একেবারে হাতের মুঠোয় এসে গেলো। খুব তাড়াহুড়ো করে ফ্রান্সের লরেইনে সাব মেরিনের ঘাঁটি তৈরী হোলো। (ফেরো কংক্রীটের সেই দুর্ভেদ্য ছাদকে ভাঙবার মতন টেকনলজি মিত্র পক্ষের ছিলো না।তাই তারা লরেইন শহরকে একেবারে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিয়েছিলেন যাতে ঐ ইউ বোটগুলোকে টর্পেডো বা তেলের যোগান না দেওয়া হয়। তবে সেটা সম্পুর্ন অকেজো করতে আরো তিন বছর লাগবে।) ফ্রান্সের দখল নিতে না নিতেই ডুনিৎস ট্রেন ভর্ত্তি করে গোলা,বারুদ আর টর্পেডো নিয়ে ফ্রান্সে হাজির হলেন। নিজের হেড কোয়ার্টারও সড়িয়ে আনলেন ফ্রান্সের ব্রেস্ট শহরে। আর সেই স্কটল্যান্ড ঘুড়ে আসতে হবে না ইউ বোটেদের। ফ্রান্স থেকে সড়াসড়ি পৌঁছে যাবেন অ্যাটলান্টিকে, উৎসাহ এমন বেশী যে কিছু ইউ বোটের ক্যাপটেইন যেনো মুষরেই পড়লেন "ধুর, আমরা তো লড়াই করার সুযোগই পাবো না। তার আগেই ব্রিটেইন হেরে যাবে"।
    শুধু দুরত্ব কমলো তাই ই নয়, ফ্রান্সের দখলের দরুন জার্মানীর হাতে এলো অনেক কাঁচা মাল, বিশেষতঃ তামা - যা ইউ বোটের নির্মানে খুবই জরুরী অথচ তখন জার্মানীতে সুষ্প্রাপ্য ছিলো।

    ডুনিৎসের তত্ত্ব অনুযায়ী ইউ বোটগুলো ঝাঁক বেঁধে আক্রমন করতো ব্রিটীশ কনভয়গুলিকে। ফলাফল ছিলো মারাত্মক। এই "নেকড়ের ঝাঁক" মানে একসাথে দল বেঁধে আক্রমন করার ট্যাকটিক নাকি ডুনিৎস যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দী ছিলেন সেই সময়েই ভেবে রেখেছিলেন।

    তবে দুই পক্ষেই নানান অস্বস্তি ছিলো। ডুনিৎস চাইছিলেন ইউ বোটের সংখ্যা বাড়ানো হোক যাতে ইংলন্ডকে একেবারে ঘিড়ে ফেলা যায় কিন্তু তাঁর বস, রীডার সেটা নাকচ করে দিলেন। রীডার তখনো প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের খোয়াব দেখছিলেন। তিনি চাইছিলেন বরং জার্মানী বড় বড় ব্যাটেলশিপ তৈরী করুক আর সেই বিশাল নৌ শক্তি নিয়েই ব্রিটেইনকে হারিয়ে দেবেন।
    ডুনিৎসের থিওরী ছিলো ব্রিটেইনের অর্থনীতিকে ধ্বংশ করে দেওয়া। নৌ শক্তিকে আক্রমন না করে , ডুনিৎস চাইতেন তার ইউ বোটেরা যেনো মার্চেন্ট নেভীকেই শুধু আক্রমন করে। কিন্তু বাদ সাধেন রীডার - তিনি বলেন দুর, এ তো কাপুরুষের মতন কথাবার্ত্তা।

    ডুনিত্সের আরেক কায়দা ছিলো তার ইউ বোটের ঝাঁক কনভয়কে হামলা করবে শুধু রাতের বেলা আর সেও জলে ডুবে নয়। রীতিমতন জলের উপরে ভেসেই টর্পেডো আর কামান দাগিয়ে ডুবিয়ে দেবে নিরস্ত্র মালবাহী জাহাজদের। এই কাজে সাহায্য করতো লং রেঞ্জ FW 200 বিমানেরা। সেগুলির কাজ ছিলো শুধু আকাশপথে কনভয়ের খোঁজ নিয়ে ইউ বোটের ঝাঁককে নিশানা জানিয়ে দেওয়া।

    জার্মানেরা বলতেন "হ্যাপী টাইম"। কেননা প্রায় বিনা বাধায় তারা ব্রিটেইনকে একেবারে আক্ষরিক অর্থে নাকানি চোবানি খাওয়াতে লাগলেন। প্রায় প্রতিটি সাব ই গড়ে ষাঠ হাজার টন পণ্য ডুবিয়ে দিচ্ছিলেন। অক্টোবরের ১৮-১৯,বিশেষতঃ ছিলো ব্রিটেইনের পক্ষে এক কালো দিন। দুটি কনভয়ের ৭৯টি জাহাজের মধ্যে ৩৬টাই চলে গেলো জলের নীচে।
    এই একবছর ধরে জার্মানী দাপিয়ে বেড়াবে অতলান্তিকে। কিছু তথ্য - ৩৯'এর সেপ্টেম্বর থেকে ৪০এর মার্চ, মানে প্রথম সাত মাসেই ব্রিটেইন হারাবে ৪০২টি জাহাজ। যার মধ্যে ইউ বোটের শিকার ২২২ আর মাইনে ধ্বংশ হবে১২৯টি। বিমান হানায় ডুববে ৩০টি জাহাজ আর জার্মান যুদ্ধ জাহাজের হানায় ১৬টি (অন্যান্য কারনে ৫)।

    এর পরের সাত মাসে জাহাজ ধ্বংশ হবে ৮৭৮টি, যার মধ্যে সিংহ ভাগ (৩৬৩) ইউ বোটের শিকার আর এর পরেই আছে বিমান হানা (১৭২)। যেটা উল্লেখযোগ্য জার্মান যুদ্ধ জাহাজের হামলায় ডুববে শুধু ১৬টি জাহাজ।

    এটলান্টিকের যুদ্ধে জার্মান ওয়ারশিপেরা আদৌ সুবিধে করতে পারে নি। পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই মিত্রপক্ষের যতো মার্চেন্ট নেভী ঘায়েল হয়েছিলো তার মাত্র ৬% ছিলো জার্মানীর জলজাহাজের আক্রমনে - তাও আবার এর বেশীর ভাগটাই রেইডার জাহাজের হাতে। যুদ্ধ জাহাজের অবদান সামান্যই। এর থেকে কিছুটা বেশী পন্যজাহাজ ধ্বংশ হয় মাইনের আঘাতে।১৩% বিমান হানায় আর বাকীটা মানে ৭০ ভাগই ইউবোটের হামলায়।
    রেইডার বা মার্চেন্ট রেইডার হচ্ছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো যাত্রীবাহী বা পণ্যবাহী জাহাজ, যেগুলিতে অল্প কিছু কামান বসিয়ে "যুদ্ধ" জাহাজে রূপান্তর করা হয়েছিলো। জার্মানী গোটা ছয়েক এরকম মার্চেন্ট রেডার ব্যবহার করেছিলো - যেগুলি বেশীর ভাগই আদতে ছিলো রেফ্রিজেরেটেড জাহাজ, পচনশীল খাবার নিয়ে যারা আসতো। সেই কারনেই এরা ছিলো খুব দ্রুতগতির কিন্তু খুবই হাল্কা।

    তবে ইউ বোটের শিকার আরো অনেক অনেক বেড়ে যেতো যদি জার্মান টর্পেডোগুলি ভালো হতো। প্রায় এক তৃতীয়াংশ টর্পেডো'ই ব্যার্থ হতো। মানে ফাটতোই না।

    হীরোদের কথা
    **************************
    অটো ক্রেশমারের কথাই ধরুন।
    জার্মানীর সব থেকে সফল এই সাবমেরিন ক্যাপটেইন, কনভয়ের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক ট্যাকটিক নিতেন। ডুনিৎজরে পদ্ধতি ছিলো এইরকম - তার দূর পাল্লার কন্ডর বিমান কনভয়কে দেখতে পেলেই খবার পাঠাতো তাদের হেড কোয়ার্টারে। সেখান থেকে নির্দেশ যেতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাবমেরিনদের এক যায়গায় (কনভয়ের সম্ভাব্য রুটে) জড়ো হতে। তার পরে দুই সাড়ি ইউ বোটের ঝাঁক থাকতো দুই পাশে আর রাতের বেলায় কনভয়কে দুই দিক থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে টর্পেডো ছুঁড়ে কচুকাটা করতো।

    উঁহু। ঐ কায়দা ক্রেশমারের বিলকুল নাপসন্দ। তিনি রাতের অন্ধকারে ডুব দিয়ে কনভয়ের একবারে মাঝখানে গিয়ে হঠাৎ ভেসে উঠে, প্রায় হ্যান্ড শেকিং দূরত্বে থেকে, দ্রুত টর্পেডো ছুঁড়ে ঘায়েল করতেন জাহাজদের। তার পছন্দের স্লোগান ছিলো "একটি টর্পেডো একট জাহাজ"।

    তিনি ,প্রিয়েন, শেপক্যা এবং আরো বেশ কয়েকজন ইউ বোটের ক্যাপটেইন ছিলেন জার্মানীর হীরো। তারা সফর সেরে জার্মানীর বন্দরে আসলে সাধারন মানুষে ভীড় করতেন তাদের স্বাগত জানাতে। এই গোটা যুদ্ধেই আর কোনো দেশে ইউ বোটের ক্যাপটেনেরা দেশের থেকে এতো সন্মান পান নি। আমেরিকা তো তার সাবমেরিনের ক্যাপটেনদের প্রকাশ্যেই আনতো না - পাছে কোনো বাজে প্রোপাগান্ডা হয় এই ভেবে।তুলনায় দেশের সব থেকে লড়াকু ও কট্টর নাৎসীরা ভীড় করতেন ইউ বোটের সেনা হবার জন্য। প্রায় ৭০% হতাহত হলেও এর জনপ্রিয়তা কমে নি জার্মানীতে। তাদের জন্য আলাদা খাতিরো ছিলো। পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে তারাই দাড়ি রাখতে পারতেন। যেনো জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে তোমরা কিন্তু একটু আলাদা - অন্যদের থেকে।

    ক্রেশমার (যাকে ডাকা হতো নিঃশব্দ অটো বলে কেনো না ব্যক্তি জীবনে এবং জাহাজের ওয়্যারলেসেও তিনি খুবই কম কথা বলতেন) যখন নাইটস ক্র্স পুরষ্কার পান তখন রীতিমতন প্যারেড করে সেই সন্মান জানানো হয়। ড্রামার জন্য এক দল ইউ বোটের নাবিকেরা সকলেই ব্রিটীশ ইউনিউফর্ম হয়ে হাজির ছিলেন !!

    ১৯৪১,৬ মার্চের রাতে ক্রেশমার আর প্রিয়েন দুজনেই হাজির ছিলেন এক কনভয়ের উপর হামলায়। সেই রাতে জার্মানী এই দুজনকেই হারাবেন। প্রথমে প্রিয়েনের ইউবোটকে তাড়া করে এলো দুই ডেস্ট্রয়ার। পালা করে একজন ডেপথ চার্জ করে যেতে লাগলো তো অন্যজন এসডিক সোনার চালিয়ে প্রিয়েনকে ট্র্যাক করে যেতে থাকলো। টানা চার ঘন্টা নাগাড়ে এই রকম চলবার পরে এক ডেস্ট্রয়ারের হাইড্রোফোনে শোনা গেলো "এক গাদা চীনামাটীর বাসন গুঁড়িয়ে যাওয়ার মতন শব্দ" আর তার এক মিনিট পরেই সাগরের নীচ থেকে কমলা রঙের আলো বুঝিয়ে দিলো প্রিয়েনের ইউবোট চুর্ণ হয়েছে।

    একই সময়ে একটানা ডেপথ চার্জের আক্রমনে ক্রেশমারের ইউবোট ইউ৯৯ , জলের নীচে সাতশো ফীট গভীরে চলে যায়। তার ইউ বোট ইম্প্লোড করে যেতে পারে এই ভয়ে ক্রেশমার তার যতোটুকু কম্প্রেসড এয়ার ছিলো সেই দিয়ে এক ধাক্কায় সোডার বোতোলের ছিপির মতন জলের উপরে ভেসে উঠলেন কিন্তু তার জখমী ইউ বোট আর সচল ছিলো না। ক্রেশমার তখন ব্রিটীশ ডেস্ট্রয়ারে সিগন্যাল পাঠালেন "ক্যাপটেইন টু ক্যাপটেইন।আমরা ডুবে যাচ্ছি।আমার নাবিকদের উদ্ধার করুন"। ব্রিটীশ ক্যাপটেইন ম্যাকিনটায়ার তাতে সায় দিয়ে জার্মান নাবিকদের উদ্ধার করলেন। বন্দী করলেন ক্রেশমারকেও।

    এর দুই সপ্তাহের মধেই তৃতীয় জার্মান এস, শেপক্যা নিহত হন। মরাল নষ্ট হয়ে যাবে বলে জার্মানী বেশ কিছুদিন প্রিয়েনের মৃত্যু ঘোষণা করে নি কিন্তু বৃটীশ রেডিও ক্রমাগতঃ টন্ট করে যাচ্ছিলো "কোথায় প্রিয়েন" বলে, অগত্যা জার্মানী তার মৃত্যু মেনে নেন।

    তবে এই লড়াইতে একজন ব্রিটীশ নৌ সেনা বেশ নাম করেছিলেন, তিনি জন ওয়াকার। অবশ্যই লোকে তাকে জনী ওয়াকার বলেই ডাকতো। তার সুখ্যাতি ছিলো ইউ বোট শিকারী হিসাবে। অনেকগুলি ইউ বোটের সমাধি ঘটিয়ে তার মৃত্যু হয় ১৯৪৪'এ - কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে।

    তবে ব্রিটেইনের এই দুঃসময়ে তাঁর প্রকৃত হীরোরা ছিলেন মার্চেন্ট নেভীর সাধারন নাবিকেরা। সম্পুর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমী এই লোকেরা দলে দলো যোগদান করেছেন তাদের কাজে। বত্রিশ হাজার নাবিক মারা গেছেন কিন্তু কোনো ঘাটতি পড়ে নি তাদের যোগানে। তাদের মৃত্যুর হার ছিলো প্রায় ২০%। এমন না যে তারা প্রচুর মায়না পেতেন। সেই সময়ের তুলনাতেও তাদের পারিশ্রমিক ছিলো সামান্য। কিন্তু একটি সফর শেষ করেই পরের সফরে নাম লেখাতে দ্বিধা ছিলো না কারুর।

    যুদ্ধজাহাজ গুলি কী করছিলো ?
    ***************************************
    এই ব্রিটেইনকে অবরোধের লড়াইতে কিন্তু জার্মান যুদ্ধ জাহাজের ভূমিকা নেহাৎই অকিঞ্চিতকর ছিলো।এক হয়তো জার্মান নৌ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রেইডার আদৌ চাইতেন না তার বীরপুরুষ যুদ্ধ জাহাজেরা নিরস্ত্র মালবাহী জাহাজকে ডুবিয়ে দিয়ে সস্তা হততালি কুড়াবেন। তায় সে রকম অনেক যুদ্ধ জাহাজও তেমন ছিলো না জার্মানীর।তাও ,তার ছিলো দুটি অতিকায় ব্যাটেলশিপ - বিসমার্ক আর টির্পিৎজ। জাপানী দুটি ব্যাটেলশিপ বাদ দিলে তখন দুনিয়ার সব থেকে বিরাট। এরমধ্যে বিসমার্ক,যদিও যুদ্ধ শুরু করেছিলো চমকপ্রদ ভাবে কিন্তু তারপরেই সেটিকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।আর টির্পিৎজ প্রথম থেকেই আহত হয়ে সাইডলাইনের বাইরেই রয়ে গেলো আগাগোড়া যুদ্ধটাই।

    হিটলার তার জাহাজের ব্যাপারে বেশী সাবধানী ছিলেন। রেইডারও।

    তাই যুদ্ধ শুরুর প্রায় প্রথম এক বছর এই সারফেস শিপেরা আদৌ কোনো হামলা করে নি। ১৯৪০'র মাঝামাঝি ,জার্মানীর পকেট ব্যাটেলশিপ "অ্যাডমিরাল শীর(Scheer)"এক কনভয়কে আক্রমন করে হেলায় পর পর পাঁচটি পন্যজাহাজকে ডুবিয়ে দিলো, জখম করলো আরো কয়েকটিকে। পুরো কনভয়ই সেদিন সলিল সমাধি হতো যদি না রাতের আঁধার তাদের রক্ষা না করতো। সেই কনভয়ের পুঁচকে রক্ষী ছিলো জার্ভিস বে - আসলে একটা সাধারন মার্চেন্ট শিপ, কিন্তু কয়েকটা কামান বসিয়ে তাকে সামান্য "দাঁত আর নখ" দেওয়া হয়েছিলো। এই ছোট্টো জাহাজটি অসমান্য বীরত্বে লড়েও কিছুটা বাঁচিয়ে দিয়েছিলো কনভয়ের (HX84) বাকী জাহাজদের।

    আরেক জার্মান ক্রুজার - অ্যাডমিরাল হিপ্পার- ১৯৪০'র ক্রিসমাসের রাতে হানা দিয়েছিলো এক কনভয়ের উপর। কিন্তু সেই কনভয়ের রক্ষী জাহাজ এর তাড়া খেয়ে সে পালিয়ে যায়।কিন্তু দুই মাস পরেই আবার আরেক কনভয়ের উপর হামলা করে তার সাতটি মালবাহী জাহাজকে ডুবিয়ে দেয়। ঐ কনভয়ের কোনো প্রতিরক্ষী জাহাজ ছিলো না।

    এতোদিন ধরে ঐ যা দু একটা হামলা হয়েছিলো সেগুলি করেছিলো ছোটো যুদ্ধ জাহাজেরাই। সেই ৪১'র জানুয়ারী মাসে প্রথম দুটো জার্মান ব্যাটেলশিপ,শার্নহর্স্ট আর নাইসেনু (Scharnahorst and Gneisenau) অতলান্তিকে এলো কনভয়ের মোকাবেলায়। বাধ্য হয়ে ব্রিটেইনকেও তাদের ব্যাটেলশিপদেরকে ভাসাতে হলো দরিয়ায়। বেশীর ভাগই একেবারে পুরোনো আমলের ব্যাটেলশিপ কিন্তু এদের উপস্থিতির জন্যই দু বার দুটো কনভয়কে সামনে পেয়েও জার্মান ব্যাটেলশিপেরা আক্রমন করে নি।

    জার্মানী এইবারে একটু নড়ে চড়ে বসলো। ৪১'এর মে মাসে তাদের মুখ্য ব্যাটেলশিপ বিসমার্ক আর তার সংগী প্রিন্স ইউজেন নামলো রনাংগনে। খবর পেয়েই ব্রিটীশ জাহাজেরাও ছুটলো । ডেনমার্কের কাছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিসমার্কের গোলায় ডুবে গেলো ব্রিটীশ রণতরী হুড। কিন্তু বিসমার্কও জখম হলো আর মেরামতির জন্য ফিরে এলো ফ্রান্সে। সেখানে এক অদ্ভুত ভাবে এক নিতান্ত সাদামাটা ব্রিটীশ বাইপ্লেনের টর্পেডো আক্রমনে ঘায়েল হলো বিসমার্ক। সেই পুরোনো জমানার বাই প্লেন এতোই ধীরে আকাশে উড়ছিলো যে বিসমার্কের তুখোড় গোলন্দাজেরা তাকে নিশানাই করতে পারলো না !! আর সেই সবেধন নীলমনি একটি টর্পেডো এমন মোক্ষোম যায়গায় ঘা দিলো যে রেডার ভেঙে বিসমার্ক নট নড়ন চরন নট কিচ্ছু হয়ে মাঝ সাগরে দাঁড়িয়ে পড়লো।সেই থমকে যাওয়া ঘায়েল বিসমার্ককেকে পরে আরো ব্রিটীশ জাহাজ কামান দাগিয়ে আর টর্পেডো ছুঁড়ে ডুবিয়ে দেয়।

    বিসমার্ককে ডুবিয়ে দেওয়ার লড়াই ছিলো খুবই ইন্টেরেস্টিং এক ঐতিহাসিক ঘটনা।কিছু বছর আগে বিসমার্কের ধ্বংশাবশেষ জল থেকে তুলে নাকি দেখা গেছে টর্পেডো বা গোলা - কোনোটাতেই বিসমার্ক ডোবে নি। তার ক্যাপটেইন নিরুপায় হয়ে নিজেই তাঁর জাহাজকে ডুবিয়ে দেন। তবে এই নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।

    ব্যাস। এর পরে জার্মানী আর কখনই যুদ্ধ জাহাজকে দিয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে কনভয়ের উপর হামলা চালায় নি।
    শার্নহর্স্ট আর নাইসেনুর রিপোর্ট কার্ডও আদৌ ভালো নয়। নরওয়েতে নৌ যুদ্ধে জখমী হয়ে এই দুই জাহাজই ফ্রান্সে এসেছিলো মেরামতির জন্য। সেখানে এসে প্রাকটিক্যালি বন্দী হয়ে যায়। কেনো না ততদিনে সাবমেরিন আর বিমান দিয়ে এমন প্রহরী বসিয়েছিলো ব্রিটেইন যে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে বেরিয়ে এসে অ্যাটলান্টিকে যাবার কোনো সুযোগই ছিলো না। অথচ ডকে থাকলেও তো শান্তি নেই। ক্রমাগত বিমান হানা চলতো।

    ৪২'র ফেব্রুয়ারীতে এক চমকপ্রদ দৌড় মেরে এই দুই জাহাজ ফ্রান্সের "গারদ" থেকে বেরিয়ে জার্মানীর অপেক্ষাকৃত নিরাপদে ডকে ঢুকে পরে।

    কিন্তু লাভ হোলো না। সপ্তাহ খানেক পরেই ব্রিটীশ বোমারুরা জার্মানীর ডকে বোমা মেরে নাইসেনুকে একেবারে ভাঙচুড় করে দেয়। এতো'ই বড়ো জখম হয়েছিলো যে এই জাহাজ আর যুদ্ধ করে নি কোনোদিন।

    শার্নহর্স্ট অবশ্য জার্মানী থেকে এরপর নরওয়েতে যাবে টির্পিৎসের পাশে থাকার জন্য। ওখানে এক কনভয়কে আক্রমনের প্ল্যান করে এগোতেই তাকে ধরে ফেলে দুই ব্রিটীশ ক্রুজার - ডিউক অফ ইয়র্ক আর নরফোক। এই দুই ব্রিটীশ জাহাজই খাতায় কলমে শারনহর্স্টের তুলনায় অনেক কম শক্তির। কিন্তু শার্নহর্স্ট একেবারেই সুবিধা করতে পারলো না। প্রায় ১৩টা গোলা শর্নহর্স্টের প্রায় সব কটা কামানকে অকেজো করে দিয়েছিলো। এর পরে ব্রিটীশ ডেসট্রয়ারেরা নাগাড়ে টর্পেডো আঘাত করে শার্নহর্স্টকে ডুবিয়ে দেয়।
    তবে যুদ্ধের শুরুতে কিন্তু জার্মানীর একটা বিস্তারিত প্ল্যান ছিলো, নাম ছিলো Plan Z।সেই মতন একটা লম্বা পরিকল্পনা ছিলো আরো অনেকগুলি ব্যাটেলশিপ তৈরী করবে জার্মানী এই কনভয়দের তোপ দেগে উড়িয়ে দেবার জন্য। কিন্তু সেই সুসময় আর হয়ে ওঠে নি।

    আমেরিকা এলো যুদ্ধে - তৃতীয় পর্ব
    ******************************************
    ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারের পর জাপান যুদ্ধ ঘোষণা করলে জার্মানীও আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। অফিশিয়ালি দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হল।

    কিন্তু আমেরিকা কিন্তু ব্রিটেইনকে সাহায্যের নামে আস্তে আস্তে জড়িয়েই পড়ছিলো যুদ্ধে। কায়দা করে নিজেদের অবস্থানকে বলতেন hostile neutrality!! ৫০ খানা সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডেস্ট্রয়ার দিয়েছিলেন তৃতীয় বার ভোটে জেতা রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট। যদিও ব্রিটেইনের অনেক নৌ অধ্যক্ষই যথেষ্ট গাঁই গুই করেছিলেন ওরকম তাপ্পিমারা জাহাজ নিতে। আর সেগুলিকে আবার ব্রিটীশ নাবিকদের পাঠিয়ে নিয়ে আসার কথা বলায় তো আপত্তির ঝড় বয়ে গেছিলো। কিছু লিবারেটর প্লেন পাঠালে ব্রিটীশ বিমান বাহিনীর কর্ত্তা "বম্বার" হ্যারিস সেগুলিকে মার্চেন্ট নেভীর সুরক্ষায় ছাড়তে একেবারে রাজী ছিলেন না। এসব ছাড়াও আমেরিকার ও ব্রিটেইনের মধ্যে ট্রেড রুট সচল রাখার জন্য আমেরিকা প্রহরী হিসেবে ব্রিটীশ কনভয়কে কিছুটা দুর পর্যন্ত্য এগিয়ে দিয়ে আসতেন তাদের যুদ্ধজাহাজকে প্রহরী করে।

    যুদ্ধ ঘোষনার পর বোঝা গেলো আমেরিকার যুদ্ধ প্রস্তুতি একেবারেই বেসামাল। সেই ব্রিটেইনই আবার কিছু প্লেন আর প্রতিরক্ষী জাহাজ ধার দিলো আমেরিকাকে।

    আর ব্রিটেইনের নিজেরই তো টানাটানির সংসার, তার মধ্যে ৪১'র জুন মাস থেকে রাশিয়াকে জার্মানী আক্রমন করলে কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা কিছু পারা যায় সেটাও ব্রিটেইন পাঠাতে লাগলো রাশিয়ায়। অ্যাডমিরাল পাউন্ড একেবারে খুসী ছিলেন না। শুধু রসদের ঘাটতিটাই একমাত্র সমস্যা তো নয় - ঐ ডেনমার্কের পাশ দিয়ে আর্কটিকে ধার ঘেঁষে বিশাল যাত্রা। কিন্তু চার্চিল কোনো আপতি ই শোনেন নি। টোকেন হলেও ৪১'র শেষে প্রথম ব্রিটিশ আর্কটিক কনভয় রাশিয়ায় পৌঁছেছিলো অক্ষত অবস্থাতেই। তারা নিয়ে গেছিলো অল্প কিছু ট্যাংক, প্লেন ও রবার।

    এবার আমেরিকা যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়লে আর একটি রণাংগন তৈরী হলো- পশ্চিম অ্যাটলান্টিকে।এই সময় দিয়েই উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধেও কনভয় বনাম ইউ বোটের লড়াই শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রায় চারটি আলাদা আলাদা রণক্ষেত্র।
    আমেরিকা যুদ্ধ ঘোষনা করতেই ডুনিৎস তার ছ'টি ইউ বোট পাঠিয়ে দেন আমেরিকার ইস্ট কোস্টে। নির্দেশ ছিলো খুব বাধ্য না হলে পথে কোনো লড়াই করবে না। চুপিসাড়ে আমেরিকার পুর্ব ভাগে গিয়ে সেখানকার কনভয়কে অ্যাটাক করবে।
    ৪২'র প্রথম কয় মাস তখন আরেক "হ্যাপী টাইম" এসে গেলো জার্মান ইউ বোটের কাছে। যথেচ্চ মালবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিচ্ছে প্রায় বিনা বাধায়। আমেরিকার না আছে প্রহরী যুদ্ধ জাহাজ না রয়েছে কোনো ভাবনা চিন্তা। ব্রিটেইন বার বার অনুরোধ করলেও আমেরিকা কনভয় করে জাহাজ পাঠাতে রাজী ছিলো না। তায় নিউ ইয়র্ক ।বোস্টন ইত্যাদি কোনো শহরেই ব্ল্যাক আউট মানা হোতো না। ঝলমলে শহরের প্রেক্ষাপটে রাতের বেলায় ভাসমান জাহাজগুলির শিলুএট পরিষ্কার দেখা যেতো। নিশানায় টর্পেডো দাগাতে কোনো অসুবিধেই হোতো না জার্মান ইউ বোটেদের।

    পুরো ৪২ সালই খুব খারাপ যাবে মিত্র পক্ষের। সারা বছর মিলিয়ে ১৬৬৪টি জাহাজ হারাবে তারা। ব্রিটেইনের ভাঁড়ারও শুণ্যর দিকে। খাবার ও তেল - দুটোই একেনারে ক্রিটিকাল অবস্থা। আর জার্মানী যদিও আফ্রিকা ও রাশিয়ায় ফ্রন্ট খুলে বেশ বেকায়দায়,তাও এই বছর থেকেই নতুন ইউ বোটেরা আসতে থাকবে গড়ে কুরিটি করে প্রতি মাসে।
    ড্যুনিৎস অনেক বারই বলেছিলেন তার হাতে যদি ৩০০টি ইউ বোট থাকে তো ইউ বোট দিয়েই যুদ্ধ জিতে যাবেন। সেইমতন ৩০০টি ইউ বোট এসেও যাবে ডুনিৎসের হাতে।

    কালো গহ্বরের বিভীষিকা
    ***********************************
    হ্যাঁ, এটা বেশ স্বপনকুমারের লেখা রোমাঞ্চ সিরীসের বইএর মতনই শোনাচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে "এয়ার গ্যাপ" বা যার পোষাকী নাম ছিলো ব্ল্যাক পিট। আমেরিকা থেকে ব্রিটেইন যাবার ট্রেড রুটে আকাশে থাকতো মিত্রপক্ষের বিমানেরা প্রহরীর ভূমিকায়।কিন্তু সেরকম লংরেঞ্জ বম্বার তখন কই যে সারাটা পথই কনভয়ের সাথে একটানা উড়ে যাবে? তাই কনভয়ের শুরুতে আর আবার শেষের দিকটাতেই এই প্রতিরক্ষা জুটতো, মধ্যিখানে ছিলো বিশাল ফাঁক। যুদ্ধের প্রথম দিকটায় এই এয়ার গ্যাপ ছিলো অনেক বড়ো,ক্রমশঃ আরো লং রেঞ্জ বিমানের উপস্থিতি বা কনভয়ের সাথে চলা এস্কর্ট এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ারের জন্য এই এয়ার গ্যাপ ক্রমশঃই কমে আসে।
    এই এয়ার গ্যাপের জন্যই এই রুটে বেশীর ভাগ ইউ বোট হামলা হতো এই মধ্যবর্তী যায়গাতেই। নাবিকেরা তাই এটাকে ব্ল্যাক পিট নামে উল্লেখ করতেন।
    ব্লেচলে পার্ক বনাম বি- ডিয়েন্স্ট
    ১৯৪১ সালের মে মাসের ৯ তারিখে ইউ১১০ সাবমেরিনকে "বন্দী" করে ব্রিটীশেরা।ডেপথ চার্জে জখম এই ইউ বোটকে তার নাবিকেরা পরিত্যাগ করবার সময়েই, তার ক্যাপটেন লেম্প নিহত হন। তার শেষ নির্দেশ ছিলো নিজের ইউ বোটটিকে ডুবিয়ে দেওয়ার কিন্তু শেষ পর্যন্ত্য সেটি সম্ভব হয় নি।মোটকথা ইউ বোটটিকে একেবারে অক্ষত (যদিও অচল) অবস্থায় পায় ব্রিটেইন। সেটার থেকে উদ্ধার হয় এনিগমা মেশিন, কোডের সমস্ত কাগজপত্র।

    এই খবর এতোই টপ সিক্রেট ছিলো যে চার্চিল এই সুখবর স্বয়ং রুজভেল্টের সাথেও শেয়ার করেন তার সাত মাস পরে। যখন আমেরিকা জার্মানীর সাথে যুদ্ধে সামিল, সেই ৪২'এর জানুয়ারীতে।

    ব্যাস। ব্লেচলে পার্কের কোড ব্রেকারেরা যেনো হাতে স্বর্গ পেলেন। হু হু করে গোপন বার্তা পৌঁছে যেতে লাগলো যথাস্থানে। এতো আজ সবাই জানেন।
    যেটা কম প্রচলিত খবর সেটা হচ্ছে যে জার্মান কোড ব্রেকারেরাও কিন্তু ব্রিটীশ কোড পড়তে শুরু করে দেন ৪১'র ডিসেম্বর থেকে।

    ব্রিটেশেরা জার্মান নির্দেশগুলি "পড়ে" তৎক্ষনাত জানিয়ে দিতেন তাদের কনভয়গুলিকে রুট পাল্টাতে। বেশ কয়েকবার এরকম হবার পর ডুনিৎস সন্ধিগ্ধ হন। তিনি তদন্ত করতে শুরু করেন যে তার কোড কি ব্রিটিশেরা পড়তে পারছে না কি কোনো গুপ্তচর এইসব ফাঁস করে দিচ্ছে?

    তদন্তে রায় হয় যে হয় কোনো গুপ্তচরের কান্ড বা নেহাৎই কাকতালীয় ঘটনা। কিন্তু সাবধানের মার নেই - ডুনিৎস তার এনিগমার এক নতুন মডেল ব্যবহার শুরু করলেন যাতে তিনটের বদলে চারটে রোটোর থাকে। জার্মানীর অন্যন্য ডিভিশন সেই আগের এনিগমা মেশিনই ব্যবহার করে যেতে থাকায় ব্লেচলে পার্ক বাকী সব কোড পড়তে পারলেও অ্যাট্লান্টিকের যুদ্ধে একেবারে "কানা" হয়ে গেলেন। প্রায় দশ মাস লাগবে এই নতুন কোড ব্রেকিংএ। ১৯৪২ সালের ইউ বোটের বিরুদ্ধে লড়াইতে ওটা একটা বিরাট বাধা ছিলো।এই বিশ্বযুদ্ধে তাই অন্যান্য সেক্টরে এনিগমা যেরকম বড়ো ভুমিকায় থাকবে, এই অতলান্তিকের যুদ্ধে সেটা অনেকটাই গৌন থাকবে।

    তবে এটা ঠিক নয় যে ব্লেচলে পার্ক পুরো ৪২ সালটাই বসে ছিলো। এনিগমা কোড না পড়তে পারলেও ইউ বোটের রেডিও ট্র্যাফিক বিশ্লেষণ করে (হাফ/ডাফ প্রযুক্তি দিয়ে) ইউ বোটেরা কোথায় লুকিয়ে আছে সেটা টের পেতো। সেই মতন খবর পাঠিয়ে তারা কনভয়গুলিকে ঘুড়িয়ে দিতেন। জুলাই ৪২ থেকে ৪৩'র মে মাসের মধ্যে এরকম ভাবে ১৭৪টি কনভয়ের মধ্যে ১০৫টি'র যাত্রাপথ বদলিয়ে দেন এবং ৫৩টি র ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমিয়ে দেন। মাত্র ১৬টি সরাসরি ইউ বোটের অ্যামবুশের মধ্যে পড়ে ও প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

    ৪২'র ৩০ অক্টোবরে,জার্মান ইউ বোট ৫৫৯ যখন ডুবে যাচ্ছে তখন আক্রমনকারী জাহাজের দুজন ব্রিটীশ নৌ সেনা আর তাদের সাহায্য করতে জাহাজের এক ক্যান্টিন বয় প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে ঐ ডুবন্ত সাবমেরিনে ঢোকে আর কোনোরকমে নতুন এনিগমা মেশিন আর তার কাগজপত্র উদ্ধার করে। ঐ দুই নৌসেনা- ফাসন আর গ্রাজিয়ার বেঁচে ফিরতে পারেন নি। তাদের মরনোত্তোর পদক দেওয়া হয়। সহকারী ক্যান্টিন বয় ব্রাঊনকে দেওয়া হয় জর্জ ক্রস পদক। আর তখনই আবিষ্কার হয় এই ব্রাউন নেহাৎই এক ষোলো বছরের বাচ্চা। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বয়স ভাঁড়িয়ে নেভীতে যোগ দিয়েছে! তাকে তৎক্ষনাত নেভীর থেকে দূর করে দেওয়া হয়।
    কিন্তু ব্লেচলে পার্ক, ঐ চার রোটোরের নতুন এনিগমা মেশিন হাতে পেয়ে আবার টপাটপ জার্মান মেসেজ "পড়তে" শুরু করে দেয়।

    কয়েক মাস পরেই ডুনিৎস দেখেন আর কোনো ব্রিটীশ কনভয়ের দেখা মিলছে না। বি ডেইনস্টের কোডব্রেকাররা ব্রিটীশ মেসেজ বিশ্লেষণ করে টের পান যে ব্রিটীশেরা আবার এনিগমা মেসেজ পড়তে পারছে।

    কিন্তু ততদিনে বড্ডো দেরী হয়ে গেছে। অ্যাটলান্টিকের লড়াইএর ফয়সালা প্রায় হয়ে গেছে। যদিও যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত্য ইতঃস্তত ইউ বোটের হামলা চলবেই কিন্তু ঐ ঝাঁক বেঁধে কনভয় আক্রমনের দিন শেষ হয়ে গেছে।অনেকগুলি নতুন টেকনলজি এসে গেছে মিত্রপক্ষের হাতে। আরো আসবে আগামী মাসগুলিতে।

    সাব মেরিনকে হারাতে কী কী লাগে ?
    *******************************************
    লিস্টটা বেশ বড়োই। কেননা এই দুনিয়ার দীর্ঘতম যুদ্ধের ফয়সালা তো একটা ম্যাজিকেই সম্ভব নয়। অনেক অনেকগুলো টেকনলজির দরকার। কয়েকটা নেহাৎই কমন সেন্সের ব্যাপার- কয়েকটা একেবারে নতুন আবিষ্কার।

    যেমন ধরুন লে লাইট। (Leigh Light)। এটা আর কিছুই নয় - একটি বড় সার্চ লাইট। অভিনবত্ব হচ্ছে এটি লাগানো হোলো প্লেনের ডানার নীচে। যাতে রাতের বেলাতেও সাবমেরিনদের খুঁজতে সুবিধে হয়।

    (১) দুরপাল্লার বোমারু বিমান
    এয়ার গ্যাপ বন্ধ করার জন্য লং রেঞ্জ আমেরিকান বি ২৪ লিবারেটর ছিলো এই কাজের যোগ্য সম্পদ। যাতে রেঞ্জ বাড়ানো যায় তাই এই বিমানের একটি ভার্শনে কামান ও মেশিনগান অনেকগুলো বাদ দিয়ে সেটি VLR বা ভেরী লং রেঞ্জ টাইপের করা হয়। অ্যার গ্যাপের অনেকটাই পুরণ হয় এই লিবারেটরে জন্যেই। আমেরিকা ও ব্রিটেইন- দু দেশ থেকেই লিবারেটর বিমান উড়ে কনভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতো। তাছাড়া শেষের দিকে আইসল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডে বিমান ঘাঁটি তৈরী করে এর এফেকটিভ রেঞ্জ আরো বাড়ানো হয়।
    প্রায় ১৯ হাজার লিবারেটর বিমান তৈরী করা হয়।
    যুদ্ধ শুরুর প্রথমেই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও, ঝট করে তা সামলে নিয়েই, আমেরিকা যে পরিমানে উৎপাদন ক্ষমতা দেখিয়েছিলো তা একেবারে অবিশ্বাস্য।

    (২) রেডার ও অন্যান্য।
    চলতি নাম ছিলো হাফ ডাফ। হাই ফ্রিকুয়েন্সী ডাইরেকশন ফাইন্ডিং। ইউ বোট থেকে কোনো রেডিও বার্ত্তা গেলেই বিভিন্ন অ্যাংগেল থেকে মেপে ইউ বোটের অবস্থান বার করা।
    (৩) সেন্টোমেট্রিক রেডার। যদি গেম চেঞ্জার বলেন বা গোদা বাংলায়, ইউ বোটের হেরে যাবার সব থেকে বড়ো কারন - তা হলে সেটা হচ্ছে এই সেন্টিমেট্রিক রেডার। যুদ্ধের শুরুতে রেডার ছিলো বেশ ভারী আরো বড়সড়ো। জাহাজেই আঁটতো ভালো। সেন্টিমেট্রিক রেডার সেটিকে ছোটো করে এরোপ্লেনের উপযোগী করে তোলে। ডুনিৎসও মনে করতেন এটি ই তার নেমেসিস।

    (৪)কনভয়ের জন্য প্রহরী জাহাজ
    কনভয়ের সংগী হিসেবে খুব অতিকায় ব্যাটেলশিপ বা বিশাল এয়ারক্র্যাফ্ট কেরিয়ার তো আদর্শ ব্যাপার। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। এতো এতো কনভয় চলেছে - সব গুলোকেই এরকম সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। আর মনে রাখবেন ডি ডে'র জন্য হাজারে হাজারে সেনা,প্লেন,ট্যাংক,গোলা বারুদ সবই তখন (মানে ৪২'এর পর থেকেই) আসছে ব্রিটেইনএ। এর সাথে চলেছে রাশিয়াকে যোগান দেওয়া। কী নেই তাতে? ট্যাংক, কামান, ফীল্ড টেলিফোন, জুতো, রেশন, এরোপ্লেন,ট্রাক,জীপ। পুরো যুদ্ধের যোগানই চলেছে এই জাহাজ পথে।'
    এর জন্যে নামানো হলো দুটি স্পেশালাইজড জাহাজ। একটি, যার নাম কর্ভেট(corvette)। সস্তা ও পুষ্টিকর। নেহাৎই পুঁচকে এক যুদ্ধ জাহাজ। সাবমেরিন শিকারের জন্য মিনিমাম অস্ত্র নিয়ে কনভয়কে এস্কর্ট করতো। জাহাজে থাকতো হাল্কা কামান, কয়েকটি ডেপথ চার্জ আর অল্প টর্পেডো।
    আর আরেকটি হোলো এস্কর্ট কেরিয়ার। সেই বিমানবাহী জাহাজ'ই কিন্তু অনেক ছোটো। একটা সাধারন কেরিয়ারে যেখানে শ খানেক প্লেন থাকে, এই ছোটো কেরিয়ারে থাকে ২৫-৩০টা প্লেন মাত্র।

    (৫) প্রথম দিকে ডেপথ চার্জ শুধু জাহাজ থেকে টপকে ফেলা হতো। সময় ও লাগতো বেশী আর নিশানাও ভুল ভাল হতো। ৪২ সাল থেকে শুরু হোলো হেজহগ নামের ডেপথ চার্জ ছোঁড়ার মর্টার। এর ফিউসও বদলে দেওয়া হোলো। আগে ছিলো ব্যারোমেট্রিক ফিউস অর্থাৎ জলের চাপের উপর সেট করে রাখা ফিউস আর এবার হোলো কনটাক্ট ফিউস।
    ফলাফলও হাতেনাতে পাওয়া গেলে। যেখানে আগে আগে ডেপথ চার্জে গড়ে আশীটা ছুঁড়লে একটি ইউ বোট ধ্বংশ হত, এই হেজহগ মর্টারের গড়ে সেটি গিয়ে দাঁড়ালো প্রতি পাঁচটা গোলায় একটি সাফল্য।

    এ ছাড়াও আরো অনেক অনেক ছোটো খাটো টেকনলজি আসছিলো মিত্র পক্ষে। তুলনায় জার্মান উদ্ভাবনী ক্ষমতা ছিলো খুবই সংকীর্ণ। এমন কি তাদের টর্পেডোর দোষ ত্রুটিগুলো সামলাতেই প্রায় বছর দুয়েক কেটে গেলো। ক্রমাগতঃ বিমান হানা বেড়ে যাওয়ায় ডুনিৎস নির্দেশ দিলেন সাবমেরিনকেও আক্রমনাত্মক হতে হবে। সেই মতন ডেকের উপর বসালেন ভারী বিমানবিধ্বংশী কামান। আর শত্রু বিমান দেখলেই তড়িঘড়ি জলে ডুব দেওয়া নয়, এইবারে সাবমেরিনও পাল্টা আক্রমন করবে। কিন্তু ফলাফল আদৌ সুবিধের হয় নি।
    নতুন উন্নততর সাবমেরিন আসলো যেগুলোর গায়ের বর্ম অনেক ভারী ফলে তারা সমুদ্রের আরো গভীরে যেতে পারতো, কিন্তু এটাও খুব সন্তোষজনক কিছু হয় নি।

    বরং জার্মানীর "দুধেলা গাই"(Milch cow) টেকনিক বেশ কাজের ছিলো। এটা আর কিছুই নয় - বিশেষ ভাবে তৈরী মালবাহী সাবমেরিন। এর অস্ত্র কিছুই ছিলো না। মাঝ সাগরে ইউ বোটগুলিকে রসদ যোগানের জন্য এগুলো ব্যবহার হতো । বেশ বড়ো সাইজের এই এক একটা সাবমেরিন তার পেটে করে নিয়ে যেতো প্রায় ৬০০ টন জ্বালানী তেল, ১৩ টন মোটোর অয়েল,চারটে টর্পেডো আর যথেষ্ট খাবার দাবার।
    কোড ব্রেকিংএর যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও বাকী প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে পড়েছিলো জার্মানী ।

    ৪৩এর মাঝামাঝি তাই এই অতলান্তিকের লড়াই শেষ হবে।
    আর্কটিক কনভয়

    কিন্তু উপসংহারের আগে এই উত্তর অ্যাট্লান্টিকের কনভয় রুটের কথা বলি। ৪১'র জুন মাসে রাশিয়া আক্রান্ত হল আর চার্চিলের প্রবল আদেশে ব্রিটেইন শুরু করলো রাশিয়াকে যোগান দেওয়া।

    বিরাট বড় যাত্রাপথ।যদিও শীতকালে বরফের জন্য নরওয়ের বেশ কাছ দিয়েই যেতে হয় আর সেটাই বড়ো চিন্তার। নরওয়ে থেকে বিমান হানা খুবই সহজ এ ছাড়াও রয়েছে বিসমার্কের "সিসটার শিপ" টির্পিৎস। নরওয়েই তার ঘাঁটী। অবহেলায় কনভয় ও তাদের সামান্য প্রহরী জাহাজদের ডুবিয়ে দিতে পারে। আরেক যুদ্ধজাহাজ শার্নহর্স্টও তার সংগী। ভালোর মধ্যে একটাই গোটা শীতকাল অন্ধকারে ঢাকা থাকে।চুপিসাড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রশস্ত।
    গ্রীষ্মকালে বরফ কমে গেলে অনেকটা দুর দিয়ে যাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু আলো থাকে প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই। সে ও এক ঝামেলা।
    কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার যে একটার পর একটা আর্কটিক কনভয় নিরুপদ্রবেই পৌঁছাতে লাগলো রাশিয়ায়। মাঝে দু একটা বড় সড়ো জার্মান সাফল্য হলেও কনভয়ের ক্ষতি অসহ্য কিছু ছিলো না। ম্যাক্স হেস্টিংস লিখেছিলেন "What is remarkable is not how many Allied ship they sank, but how few"।

    একটা বড়ো কারন হিটলার স্বয়ং। তিনি যে কোন কারনে তার যুদ্ধ জাহাজদের বসিয়ে রেখেছিলেন তা দুর্বোধ্য। আসলে তার সব সময়েই আশংকা ছিলো মিত্রপক্ষ ফ্রান্সে না গিয়ে নরওয়েই তাদের সেকেন্ড ফ্রন্ট খুলবে, আর সেই জন্য টিরপিৎসকে প্রায় ন্যাপথলিনে মুড়ে রেখে দিয়েছিলেন।

    অবশ্য একটা সমস্যা ছিলো - সেটা জাহাজের জন্য জরুরী জ্বালানী তেলের। নরওয়েতে সেটার যোগান ছিলো খুবই কম। আর টিরপিত্স তো একা যেতো না,সংগে থাকতো ছোটো বড়ো মিলিয়ে আরো সাত আটটা জাহাজ।যাই হোক, টিরপিত্স মোটামুটি এক খাঁড়িতেই লুকিয়ে থাকতো।

    ৪৩'এর মার্চ মাসে কোনোরকমে নড়ে চড়ে টিরপিত্স হামলা করলো উত্তর নরওয়ের কাছে এক ছোটো দ্বীপে যেখানে শ দেড়েক সেনা মোতায়েন ছিলো ব্রিটীশ কনভয়ের রিফুএলিং স্টেশন হিসেবে। তোপ দাগিয়ে সেই "পেট্রোল পাম্প" ভেঙে দিয়ে টিরপিত্স আবার ফিরে এলো তার সুরক্ষিত ঘাঁটীতে। ঐ একবারই টিরপিত্স তার কামান দাগিয়েছিলো।

    বছর প্রায় শেষ হয়ে এলো, সেই সেপ্টেম্বর মাসে, গোটা দশেক বামন সাবমেরিন (খুব ছোটো, তিন কি চারজন লোক শুধু আঁটে) রওয়ানা হোলো চুপিসাড়ে টির্পিৎসের গায়ে মাইন সেঁটে তাকে ঘায়েল করবে। দশটির মধ্যে মাত্র দুটি সাবমেরিন, মাইন পাততে সক্ষম হবে আর সেই মাইন বিস্ফোরনেই প্রচন্ড জখম হবে সেই অতিকায় যুদ্ধজাহাজ।

    এর একমাস পরেই দুই ঝাঁক বোমারু বিমান টিরপিৎসকে আরো ঘায়েল করে অচল করে দেয়।এর পরেও আরো বিমান হানা হবে এবং টিরপিত্স আরো জখম হবে। তাকে কোনোক্রমে নিয়ে যাওয়া হোলো দুশো মাইল দুরের ট্রমসো ডকে - সেটাই এই ব্যাটেলশিপের শেষ যাত্রা।অবশেষে, যুদ্ধ প্রায় শেষই হয়ে এসেছে - সেই ৪৪এর নভেম্বর মাসে এক বিরাট বিমানের দল খুব ভারী (প্রায় ৬ টন) ওজনের টলবয় বোমা ফেলে টিরপিৎসের সলিল সমাধি নিশ্চিন্ত করে। এরকম একটি ফালতু জাহাজ জীবন আর কখনো ঘটে নি। এক ঐতিহাসিক লিখেছিলেন "She lived an invalid's life and died a cripple's death"।

    শেষের শুরু
    ********************************
    ৪৩ সালে শুরু হতেই প্রথম কয়েক মাস কিন্তু জার্মানী খুব দাপিয়ে বেরালো। কিন্তু তারপরে আর মাথাই তুলতে পারলো না। একটানা নানান রকম প্রযুক্তির হাত ধরে মিত্রপক্ষ এমনই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো যে কোনো ইউ বোট জলে ভাসলেই তাকে খুঁজে পেতো তারা আর সরাসরি বিমান হানা বা ডেপথ চার্জ তো বটেই তাছাড়া নতুন প্রযুক্তির FIDO, বিমান থেকে ছোঁড়া টর্পেডো, একটানা ইউবোটদের ডুবিয়ে দিচ্ছিলো।
    আর ইউরোপে প্রচন্ড বোমা ফেলে ইউ বোটের ঘাঁটি ও তাদের যোগাযোগের রাস্তা সবই গুঁড়িয়ে দিচ্ছিলো মিত্রপক্ষের বিমানেরা।

    ফলে মে মাসে মাত্র ৪০টি পণ্যজাহাজ ডুবে যায় কিন্তু অন্যদিকে ৩৮টি ইউ বোটও ডুবে যায়। ডুনিৎস স্বীকার করে নেন এই যুদ্ধ তিনি হেরে গেছেন। জুন মাসে'র হিসেব - মিত্রপক্ষে মাত্র সাতটি জাহাজ আর জার্মানীর ১৭টি ইউবোট। জুলাই মাসেও তাই - মিত্রপক্ষের মালবাহী জাহাজের তুলনায় বেশী সংখ্যক ইউ বোট ডুবে যাচ্ছে। এইভাবে আর যুদ্ধ চালানো সম্ভব নয়।

    ডুনিৎস অগত্যা হিটলারকে গিয়ে বল্লেন যে অন্তত কিছুদিনের জন্য সাবমেরিন অপারেশন মুলতুবী থাকুক। নতুন প্রযুক্তি না আসলে আর জার্মনের পক্ষে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানালেন যে ব্রিটীশেরা এক নতুন "লোকেশন ফাইন্ডার" যন্ত্র বসিয়েছে যার ফলে দিনে বা রাতে, যে কোনো আবহাওয়ায় তারা সাবমেরিনের অবস্থান টের পেয়ে যাচ্ছে। ডুনিৎস ঐ সেন্টিমেট্রিক রেডারের কথাই বলেছিলেন। গোদের উপর বিষফোঁড়া, প্রায় বছর খানেক নিষ্ফলা কাটিয়ে ব্লেচলে পার্ক আবার এনিগমা কোড পড়তে পারছিলেন।

    নতুন জার্মান প্রযুক্তি যে একেবারই বন্ধ হয়ে গেছিলো তা নয়। যেমন রেডার ডিটেক্টর মেটক্স। এই মেটক্স দিয়ে ব্রিটীশ রেডার অনেক ক্ষেত্রেই অচল করে দেওয়া যেতো যদিও মেটক্স পুরোপুরি ত্রুটিহীন ছিলো না, নানান ব্যবহারিক অসুবিধাও ছিলো।

    ৪৩ সালে ব্রিটীশেরা আরেকটি উন্নততর রেডার নিয়ে আসলে জার্মান ক্ষয় ক্ষতি খুবই বেড়ে যায়। এর মধ্যে আবার এক ব্রিটীশ অফিসারকে বন্দী করে জেরা করলে তিনি বলেন যে মেটক্সের থেকে যে ক্ষীণ সিগন্যাল বার হয় সেটা ব্রিটীশেরা ধরতে পারছে। এটা সম্পুর্ন মিথ্যা কথা যদিও টেকনিক্যালি অসম্ভব ছিলো না। কিন্তু জার্মানরা তাদের পরের মডেলের (নাক্সস) জন্য আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে লাগলো - আরো কয়েক মাস দেরী হয়ে গেলো।

    আর ছিলো শব্দভেদী একাউস্টিক টর্পেডো, যেটা শত্রুজাহাজের প্রপেলারের আওয়াজে আকৃষ্ট হয়ে আঘাত করতো। কিন্তু আগে ভাগেই এই খবর পেয়ে ব্রীটীশেরা তৈরীই ছিলো । প্রতিষেধক হিসেবে তারা নামালেন "ফক্সার"। যেটি তাদের জাহাজের সাথে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো। সেটা এক যন্ত্র যার থেকে প্রপেলারের থেকে বেশী আওয়াজ হয়। জার্মান একাউস্টিক টর্পেডোরা এরকম অনেকগুলি "কলরবকারী" ডিভাইস চুর্ণ করলেও কোনো জাহাজকে ডোবাতে পারে নি।

    সব শেষে আর সব থেকে গুরুত্বপুর্ণ "আবিষ্কার" হচ্ছে স্নরকেল। এটা একটা পাইপ বা বলা যায় একটা বড় পাইপের মধ্যে একটা ছোটো পাইপ যেটা দিয়ে একটা সাবমেরিন জলের নীচে প্রায় পার্মানেন্টলি থাকতে পারবে। এটাও একেবারে ১০০% সফল ছিলো না। অনেক দুর্ঘটনা ঘটতো। আর এই স্নরকেল লাগানো থাকলে সাবমেরিনকে অনেক আস্তে যেতে হোতো। আওয়াজও হতো বেশী। কিন্তু এই প্রযুক্তিও এসেছিলো একেবারে শেষের দিকে। যুদ্ধ তখন প্রায় শেষ,

    তার পরে কী হোলো
    *********************************
    বলা যায় নটে গাছটি মুরোলো।

    ১৯৪৩'র মে মাসে ইউ বোটের ঝাঁক তুলে নেওয়া হোলো। মে মাসের সতেরো তারিখের পর আবার একটা ইউ বোটের হানা হবে প্রায় মাস পাঁচেক পর।

    সেই মে মাসেই উত্তর আফ্রিকা থেকে জার্মান বাহিনী বিদায় নেবে।মাস দুয়েক পরে রাশিয়ায় কার্স্কে'র মহারণ থেকে একক ভাবে ভংগ দেবে জার্মানী। আর সেই যে রাশিয়ার বিজয়রথ গরগরিয়ে চলবে সেটা থামবে সেই বার্লিনের পতনের পর। আর্কটিকে কনভয় রুটে রাশিয়াকে ঢেলে রসদ পাঠাবে মিত্রপক্ষ। আমেরিকা ব্রিটেইনের ট্রেড রুটেও আর কোনো ঝামেলা থাকবে না।

    ঐ, প্রায় গেরিলা কায়দায় কখনো সখনো একটা দুটো হামলা হবে। অল্প কিছু মালবাহী জাহাজও ডুববে। কিন্তু সেগুলি সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

    কিন্তু যেটা থামে নি সেটা হচ্ছে ইউ বোটেদের সাগরে খুঁজে পেতে তারপরে ডুবিয়ে দেওয়া - সেটা কিন্তু চলতেই থাকবে।
    এর মধ্যে আবার হাওয়া বদল বুঝে পর্তুগাল তার এজোরেসে যুদ্ধ জাহাজ আর বিমানের ঘাঁটি গড়ার অনুমতি দিলো মিত্রপক্ষকে। আটলান্টিকে মিত্র পক্ষর হাত আরো শক্ত হোলো। মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

    বছর গড়িয়ে ১৯৪৪ আসতেই প্রথম পাঁচ মাসে ২৫টি মার্চেন্টশিপের বদলে সলিল সমাধি হোলো ৭৭টি ইউ বোটের। আর জুন মাসে নরম্যান্ডি ল্যান্ডিংএর সাথে ফ্রান্সে ইউ বোটের জন্য আর কোনো সুরক্ষিত ঘাঁটিও রইলো না।
    শেষতম ইউ বোট সংক্রান্ত ঘটনা ৪৫'র ৬ মে; পৃথক ঘটনায় দুটি ইউবোট ও তাদের আক্রমনে একটি মালবাহী জাহাজ "ব্ল্যাক পয়েন্ট" ডুবে যায়।

    এর দুই দিন পরেই বিশ্বযুদ্ধও শেষ হয়ে যাবে ইউরোপে।
    **************************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ | ১০৫৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.97.108.120 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:৩১58106
  • হ্যাঃ আমার সাড়ে ষোল পাক লাগল।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:২৪58102
  • অসম্ভব ভালো।। ডিডিদার জন্যে বাড়ো হাঁরি ড়াবরি ।
  • T | 165.69.187.62 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:৫৫58103
  • চমৎকার।
  • সিংগল k | 74.233.173.203 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৬:০০58107
  • এটাই কি ডিডিদার ওয়ার সিরিজের সেরা লেখা? যদি না হয় তবে সেরাটা আমার চোখ এড়িয়ে গেছে নিশ্চয়ই।
    ডিডিদাকে আর কি বলব, সিংগলT প্রভৃতি যাঁরা ক্রমাগত প্রেশার দিয়ে ডিডিদার কলম থেকে এই অসাধারন গভীর লেখাটি নিংড়ে আনলেন, তাঁদেরকে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন।
  • avi | 125.187.41.211 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৬:১৭58104
  • সাধু সাধু।
  • সিংগল k | 212.142.118.134 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪৫58105
  • রাত্তিরে পড়ব ডিডিদা, লেখাটা বেশ লম্বা চওড়া করার জন্য আপাতত প্রচন্ড ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম। :)
    প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার মাউসের হুইলে পুরো ২২ পাক, দারুন দারুন! :)
  • T | 24.100.134.82 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:৪৫58108
  • অন্য টই ডোবাচ্ছি তাই...
  • T | 24.100.134.82 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:১৯58109
  • ডিডিদা, সোভিয়েত ফ্রন্টে লড়াই টা নিয়েও লিখুন।
  • Arpan | 125.118.132.66 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:৫৬58110
  • অসাধারণ হয়েছে। এই সিরিজের অন্যতম সেরা লেখা।

    সেরা লেখাটা অবশ্যই সোভিয়েত ফ্রন্টের লড়াইটা নিয়ে যেটা এখানেই কোন এক ওয়েব এডিশনে বেরিয়েছিল। @T
  • de | 24.139.119.173 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:১৩58111
  • অসাধারণ!!!!
    সোভিয়েট ফ্রন্ট্রের লেখাটার সফট কপি আছে? ও ডিডিদা!
  • সিংগল k | 212.142.114.189 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:৩১58113
  • নিঃসন্দেহে সোভিএত ফ্রন্ট এগিয়ে। এটা আগে পড়ি নি, নিয়মিত আসি না তো..
  • avi | 113.24.86.240 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৪৩58114
  • অ, এটাই সোভিয়েত ফ্রন্টের লেখাটা? এটা পড়ার পর আমি এনিমি য়্যাট দ্য গেট সিনেমাটা দেখি। পুরো লেখাটা মূর্ত হয়ে উঠেছিল চোখের সামনে।
  • T | 165.69.168.138 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:২৮58115
  • তাহলে এইটেও দেখে নিন,
  • Arpan | 125.118.35.189 (*) | ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:৪৮58117
  • ডিডিদার কাছে কোরিয়ান ওয়ার নিয়ে একটা এপিসোডের দাবি জানিয়ে গেলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন