এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ব্যবসায়ীর ব‌উ

    জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ মে ২০১৯ | ৯৩১ বার পঠিত
  • ভার্সিটি পড়ুয়া কাজিন শেলু আপার হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে গেছে‌ এক বড়লোক ব্যবসায়ীর সাথে। শেলু আপা ব্যাপক পরিমাণে স্মার্ট একটা মেয়ে। স্টাইলিশ, সুন্দরী,চুল প্রায় কোমর ছুঁইছুঁই। ইন্টার পাশ করতেই না করতেই শখানেক লাভ লেটার ডাস্টবিনে ফেলা হয়ে গেছে। বাড়ির সামনে ছেলেদের লাইন। রোজ‌ই একটা না একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে যেগুলো তিনি নিজেই রিজেক্ট করে দেন। তাহলে এতকিছু ছেড়ে পড়ালেখার মাঝখানেই এই ব্যবসায়ীকে বিয়ে করার মানে কি? কারণ জানতে ছুটে গেলাম।

    যা জানলাম তা এখনকার জামানায় খুব স্বাভাবিক। ধনকুব ব্যবসায়ী আসগর আলী দুলাভাইয়ের প্রচুর টাকা। এত টাকা যা দিয়ে শেলু আপার মতো দশজনের বাপকে কিনে নিতে পারেন।

    আসগর দুলাভাইকে দেখে টাসকি খেলাম। আমার খালু অর্থাৎ শেলু আপার বাবার থেকেও বেশী বয়সী দেখাচ্ছে। শেলু আপাকে এ কথা বলতেই কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ওর ওতো বয়স না রে! ব্যবসার টেনশনে চুলগুলো জাস্ট‌ ঝরে যাচ্ছে।

    আমি মনে মনে বললাম, ভুঁড়ি তো বানাইছে মাশাআল্লাহ! এইটা তো ব্যবসার টেনশনে কমে নাই!

    মাসখানেক পর সেমিস্টার ব্রেকে শেলু আপার বাড়িতে গেলাম বেড়াতে। আমাকে দেখে আপা হা-হুতাশ করতে করতে ছুটে এসে কাঁদতে লাগলেন।

    ঘন্টাখানেকের মধ্যে এতদিনের পুরো ফ্ল্যাশব্যাক আমার জানা হয়ে গেল। দুলাভাই অত্যন্ত রসকসহীন একজন ব্যক্তি। আপুর কোন স্বপ্ন,কোনো সাধ আহ্লাদ‌ই পূর্ণ হয়নি।

    আপু কাঁদতে কাঁদতে বললেন, টাকাই সুখ নাইরে,টাকায় সুখ নাই।

    আমি নিচু গলায় বললাম,সেটা আমি আগেই জানি যে টাকায় সুখ নাই।

    ঘটনাটা এরকম, দুলাভাই প্রচন্ড রকম আনরোমান্টিক। যে সময়ে তার ব‌উকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার কথা তার বদলে ব‌উকে নিয়ে গেছে জমি দেখাইতে। গ্রামের দিকে কোথায় কোথায় জমি কিনেছে,কি কি গাছ লাগিয়েছে,কোথা থেকে কেমন ফলন, কেমন ইনকাম সেসব দেখিয়ে ফেরত নিয়ে এসেছে।

    আপা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন, জানিস বাসররাতে আমারে কি গিফট দিছে?

    আমি অনুমান করার চেষ্টা করতে করতে বললাম, গোলাপ ফুল? কেক? আংটি?

    আপা বারুদে আগুন লাগার মতো ফেটে পড়ে বললেন, না না না! কাতলা মাছ!

    -এ্যাঁ! কাতলা মাছ! আমি কি ঠিক শুনছি?

    :বাসর রাতে আমারে ইয়া বড় এক কাতলা মাছ এনে দিয়ে বলছে, এইটা আমার পুকুরের মাছ! ঝালঝাল করে রান্না করো।

    ইভেন এখনো, এখনো আমি যখন রাগ করে থাকি তোর দুলাভাই আমার রাগ ভাঙ্গাতে বাজার থেকে বড় চিংড়ি,রুই,কাতলা,ইলিশ এসব নিয়ে আসে আমার রাগ ভাঙ্গাতে।‌ ঈদের পরে বললাম,চলো কোথাও ঘুরতে যাই। সে বললো,খামাখা ঘোরাঘুরির পেছনে টাকা নষ্ট করার কোনো ফায়দা নাই! নতুন ব্যবসায় ইনভেস্ট করা লাগবে।

    এত দুঃখের মধ্যেও হাসি পেল আমার। কোনোমতে হাসি চেপে মুখে দুঃখি দুঃখি একটা ভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম, তুমিতো দারুন লাকি আপা! একদম অন্যরকম!

    আপা লাল চোখে তাকিয়ে র‌ইলেন। খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আবার বলছেন, অন্তরের কথা মনে আছে তোর?

    হ্যাঁ! অন্তর ভাইয়ের কথা আমার মনে আছে।‌ শেলু আপার জন্য পাগল ছিল বেচারা। একবার সুইসাইড করতে গিয়ে হসপিটালেও লটকায়ে পড়ে ছিল। শেলু আপার বাড়ির সামনে থেকে কখনো নড়তো না। একটার পর একটা লাভ লেটার লিখে ইট পেঁচিয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারত। এভাবে একবার খালার মাথায় ঢিল লেগে গেল। তারপর পুলিশ দিয়ে পিটানি খাওয়ানোর পর তার উপদ্রব একটু কমেছিলো বটে। কিন্তু শেলু আপার বিয়ের পর আমি তাকে কয়েকদিন রাস্তায় দেখেছি। গান্জা খেয়ে পড়ে থাকে আর বলে, মেয়েমানুষ বেইমান! মেয়েমানুষের জাত শালা!!

    শেলু আপা নিজের মনে কথা বলছেন, কত ছেলে আমার জন্য পাগল ছিলো রে! অন্তর ছেলেটা কি না করেছে আমার জন্য! রায়হানকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম সেই রাগে রাগে আজ সে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে! আর আমি কি না বিয়ে করলাম এমন এক লোককে যার কাছে সুখ মানেই বড়মাছ,মাংস,জমিজমা!

    আমি বললাম,তুমিতো টাকা দেখেই বিয়ে করেছিলে!

    আপা রাগী গলায় বললেন, তুই চুপ কর! কাঁটা ঘায়ে আর নুন ছিটাস না।‌

    আমি নুন ছিটালাম না। নিজের মনে বাড়িঘর ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।‌ এত বড়লোকের বাড়ি অথচ কোন বিলাসী আসবাবপত্র নাই,বাড়িটাও সেকেলে। এত টাকা দিয়ে দুলাভাই বেচারা করবেটা কি? শুনেছি সারাগায়ে সরিষার তেল মেখে ছাদে বসে থাকে, ঘুমের মধ্যে এমন নাক ডাকে যে আপা বেচারা ঘুমাতে না পেরে সারারাত গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে ঘুম ভাঙ্গায়। আহারে বেচারী।

    খাবার টেবিলে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা হলো। কোন সামাজিক আলাপের ধার দিয়েও না গিয়ে তিনি সোজাসুজি প্রথম যে কথাটা বললেন তা হচ্ছে, তোমার ভাগ্যটা খুব ভালো।

    আমি অবাক হয়ে বললাম,কেন?

    -নদীর ফ্রেশ রুই মাছ পেয়েছি। একদম ফ্রেশ। টমেটো দিয়ে রান্না করছে, যা টেস্ট!

    অনাগত খাদ্যদ্রব্যের কথা চিন্তা করতে করতেই দুলাভাই স্বপ্নসাগরে হাবুডুবু খেতে লাগলেন।

    আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম, দুলাভাই! ব‌উ সামলে রাখেন, ব‌উ কিন্তু থাকবে না!

    রুই মাছের স্বপ্নলোক থেকে দুলাভাই যেন ঠাস করে বাস্তবতায় ফিরে এলেন। চোখ মাথায় তুলে প্রশ্ন করলেন, কি বললে?

    -সুন্দরী ব‌উ দুলাভাই! তারপর একটু কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান না,সময় দেন না, দেন খালি রুইমাছ! এযুগের মেয়ে কি শুধু মাছে ভোলে?

    দুলাভাই বোঝনদার স্টাইলে মাথা নাড়লেন।

    আমি আবার কন্টিনিউ করলাম, আপনিতো জানেন না,এককালে কতো ছেলে আপার জন্য পাগল ছিল! আপনার অবস্থা দেখেন! চুল পড়ে গেছে, ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে।‌ টিপিকাল ব্যবসায়ীদের মতো আচার আচরণ! এরকমভাবে চলে এই যুগে অত সুন্দর ব‌উ মেইনটেইন করা সম্ভব? লোকে কি বলে!? বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা এমন কথা বলবে!

    আমার লেকচারে কাজ হলো। দুলাভাই পরদিনই সেজেগুজে আপাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেন। শুনলাম খুব শিগগিরই দেশের বাইরেও যাবেন। আমি নিশ্চিত মনে বাড়ি চলে এলাম।

    মাসখানেক আপার আইডিতে খুব আহ্লাদী আহ্লাদী সব কাপল পিক, বিভিন্ন জায়গায় চেক-ইনসহ লুতুপুতু স্টাটাস দেখলাম। আপার পিকে দুলাভাইয়ের কমেন্ট‌ও দেখলাম, ''মেরি জান!'' আমি ভাবলাম এতদিনে সব ঠিকঠাক।

    তার কিছুদিন পর আবার আপার কোন খোঁজখবর নাই, অনলাইনে পাওয়া যায় না। একদিন খালা ফোন দিয়ে বললেন আপার শরীর ভালো না, সম্ভব হলে যেন দেখে আসি।

    দেখতে গেলাম। আপার চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। শরীর দূর্বল, স্যালাইন চলছে।

    আমি অবাক হয়ে বললাম,কি হয়েছে?

    আপা হা-হুতাশ করে বললেন,তোর দুলাভাই বাজার করা বন্ধ করে দিছে।

    -কেন?

    :কি এক মেইনটেইনের ভুত চাপছে। আজ একমাস বাড়িতে কোন মাছ,মাংস কেনে না। সবজি খেয়ে খেয়ে থাকি। না খেয়ে মরে যাচ্ছি তাও সে মাছ কেনে না। মাছে নাকি প্রেম নষ্ট হয়। আবার সাজসজ্জা‌ও বেড়েছে তার! কলপ দিয়ে চুল করছে কালো, ভুঁড়ি কমানোর জন্য দুইবেলা জিমে যাচ্ছে! আমার মনে হয় তোর দুলাভাই নতুন প্রেম করছে রে!

    আপার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের মনে বলে উঠলাম, লে হালুয়া!

    লেখা- জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ মে ২০১৯ | ৯৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জাহাংগির আলম | 340112.67.9005612.73 (*) | ১১ মে ২০১৯ ০২:০৫48549
  • আপু খুব সুন্দর লেখা , তবে শেষের অংশ নাটকীয় হয়নি, মাছ মাংস না খেলে কেউ হাসপাতালগত হয় না,
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন