ওপরের ছোট ঘরটাতে একটা ছোট টেবিল আর তিনটে চেয়ার আছে । একপাশে একটা তিন তাকওয়ালা দেয়াল আলমারি আছে । তাতে পুরণো ফাইল আর কাগজপত্র ঠাসা । কোন সিলিং ফ্যান নেই । একটা পেডেস্টাল ফ্যান আছে।বনবন করে ঘুরছে । কলতান বসে আছে মিস্টার সিনহার অপেক্ষায় মিনিট পাঁচেক ধরে ।সিদ্ধার্থবাবুকে একজন কনস্টেবল ওপরে পৌঁছে দিয়ে গেল । বিকেল চারটে বাজতে চলল ।------ ' আসুন আসুন মিস্টার সিনহা ... বসুন 'মিস্টার সিনহা কলতানের সামনের চেয়ারটায় বসে পড়লেন। ----- ' আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো এখানে? ' কলতান খোঁজ নেয় ।----- ' মিনিংলেস কোশ্চেন ... এখানে সুবিধেটা কি হবে ... এটা কি মামার বাড়ি ... ...
কলতান এবং কুলচা সহ বালীগঞ্জ থানার দলবল মিসেস সিনহাকে নিয়ে থানায় এসে নামল ।কলতান বলেছিল, 'একটা ক্যাব বুক করে দিচ্ছি তুই বাড়ি ফিরে যা ...তোর তো এখন কোন কাজ নেই এখানে ... ' । কিন্তু কুলচা ফিরে যেতে রাজি হল না। সে আরও উত্তেজক নাটক দেখার লোভ সংবরণ করতে পারল না। কুলচাকে দেখে গৌতম রক্ষিত কলতানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ঠোঁট উল্টে মাথা ওপর নীচ করলেন । কলতান বলল, ' আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট... '----- ' ও আচ্ছা আচ্ছা .... গুড আফটারনুন ... ...
দীপ্তি সিনহা একটু থতমত খেয়ে বললেন, ' সতীশ মিশ্রকে আপনারা কোথায় পেলেন ? রাঁচি থেকে ধরে এনেছেন ? '----- ' না ... ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয় । আমরা ধরে আনিনি । ও-ই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে । অনেক কিছু বলেওছে । আমরা অবশ্য সেগুলো বিশ্বাস করিনি ... যাকে বলে কগনিজেন্সে নিইনি । তেমন সলিড কোন এভিডেন্স নেই ... কগনিজেবল এভিডেন্স ছাড়া কারো কথা বিশ্বাস করা যায় না ... তাই না ? 'মিসেস সিনহা বলে উঠলেন, ' কিরকম ...কিরকম ?কি ... কি বলেছে ও ? '----- ' বলছিল তো অনেক কিছু ... কিন্তু ওরকম একটা লোকের কথা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য ? ... ...
দীপ্তি সিনহার যেন হঠাৎ মনে পড়ে গেল ।------ ' ও আচ্ছা আচ্ছা ... ওই অ্যাড এজেন্সির এক্জিকিউটিভ... নাম শুনেছি ... না না এখানে আসবে কেন ? '----- ' ওনার সঙ্গে কি ফোনে কথা হত আপনার হাসব্যান্ডের ? '------ ' কি জানি .... সেটা ঠিক বলতে পারব না ... আমি তো ওর পার্সোনাল কন্ট্যাক্টে ইন্টারভেন করতাম না ... '----- ' হমম্ ... মিসেস সেন আপনি কতবার দুবাই গেছেন ? 'মিসেস সেনগুপ্ত আকাশ থেকে পড়লেন ---- ' দু..বাই ! না না ... আমি দুবাই কি করতে যাব ? মিস্টার সিনহা একবার কি একটা কাজে একবার গিয়েছিল ওখানে ... কি কাজে ঠিক জানি ... ...
একটু পরে হরিপ্রসাদ আগরওয়ালের ফোন এল একটু পরে ।কলতান বলল, ' হ্যাঁ বলুন ... মিস্টার আগরওয়াল... এনি প্রবলেম ? '----- ' না আর কিছু হয়নি এখনও। তবে সব সময়ে ডর লাগে । কখন আবার ফোন আসে ...----- ' ঠিক আছে । আমি নজর রাখছি ... আপনি চিন্তা করবেন না । কোন কল এলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন ... '----- ' হ্যাঁ নিশ্চয়ই.... আপনার ভরোসাতেই তো আছি স্যার । আপনার পেমেন্টের কিছুটা দিতে পারলে শান্তি পেতাম ... '----- ' ওটার জন্য চিন্তা করবেন না । আমি ঠিক সময়ে বলব ...'------ ' আর একটা কথা স্যার .... আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। সাধনা আমাকে ইয়াদ ... ...
পি এন আর স্যার মন দিয়ে একটা নামী কোম্পানির সিলিং ফ্যানের বিজ্ঞাপনের দশ শব্দের ক্যাচলাইন লিখছিলেন । তিন চারটে ক্যাচি ভিসুয়ালের সাজেশানও দিতে হবে । তার মধ্যে একটা বাছা হবে । ঠিক হয়েছে একজন মেল , একজন ফিমেল মডেলের সঙ্গে সইসাবুদ হয়ে গেছে । তারপরে তো আবার ফ্যান কোম্পানিতেফাইনাল লে আউট প্রেজেন্টেশনের ঝক্কি আছে । পি আর ডিপার্টমেন্টের কর্তাদের মনে না ধরলে আবার নতুন একটা প্রেজেন্টেশনের ঝক্কি আছে ।তিতির ডেস্কটপে চোখ লাগিয়ে বসে আছে । ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইন অ্যাসেম্বল করছে । চিরশ্রী স্টুডিওতে । একবার পিএনআর আর তিতিরের কাছে এসে একপাক ঘুরে গেল ।পিএনআর কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বললেন , ... ...
ওসি সাহেব যাকে প্রমার রেজিস্টার আনতে হাত নেড়ে ইঙ্গিত করলেন তার ফিরে আসার কথা ছিল না , ফিরে আসেওনি । রেজিস্টার আনবে কোথা থেকে ? প্রমার খাতা প্রমাতেই আছে । কলতান ওখানে রেজিস্টার আনতে গেলই বা কখন ? এটা কলতানের একটা কুশলী চাল । অপরাধীকে মনস্তাত্বিক ধোঁকা দিয়ে স্বীকারোক্তি বার করে আনার এরকম অনেক পদ্ধতি আছে । কলতান বলল, ' ডিসিশান নেওয়ার আগে আর এক রাউন্ড ইনটারোগেশানের দরকার আছে স্যার ..... 'গৌতমবাবু বললেন , ' করুন না .... তবে তার আগে এক রাউন্ড করে চা হবে নাকি ? '----- ' তা হতে পারে .... আপনি চা বলুন .... আমি ততক্ষণ ... ...
বাইরে এনকোয়্যারি কাউন্টারে একজন মাঝবয়সী ইন্সপেক্টর বসে আছেন । অশেষ কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ইন্সপেক্টর ভদ্রলোক অশেষকে আগের দিন দেখেছেন । আজ তার আসার ব্যাপারটা পুরোটাই জানেন ।তিনি ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন । তিনি' ঠিক আছে , ওই কথাই রইল ... ' বলে ফোন বন্ধ করে অশেষের ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন ,' ও ... এসে গেছেন .... দাঁড়ান ... ' বলে ইন্টারকমে ডায়াল করলেন ।ওদিক থেকে উত্তর পেয়ে অশেষকে বললেন ,' যান .... ভেতরে যান ... ' ।অশেষ ভিতরে ওসি-র ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। দরজার উল্টোদিকে বসা গৌতম রক্ষিতের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল অশেষের ।রক্ষিতবাবু বললেন , ' ... ...
কলতানের কুন্তলকে ডাক দেওয়াটা সিদ্ধার্থ সিনহাবুঝতে পারলেন না ।মিস্টার সিনহার শোরগোল থামলে কলতান আবার নিষ্পাপ মুখে বলল, ' জীবনকৃষ্ণ বেঁচে নেই!সেকি ! কিন্তু এই পরশুদিনই তো আমার সঙ্গে কথা হল .... ও-ই তো আমাকে বলল .... 'এবার কলতান যেটা ঘটাতে চাইছিল সেটাই ঘটল ।সিদ্ধার্থ সিনহার ধুরন্ধর মস্তিস্কে পুরো সিস্টেম তালগোল পাকিয়ে গেল ।ক্রোধ, বিরক্তি , অবচেতনের পাপবোধ সব কিছুর মিলিত প্রতিক্রিয়ায় মিস্টার সিনহা আবার একবার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে উন্মত্তের মতো চেঁচিয়ে উঠলেন , ' আরে দূ..র ... সে তো বেঁচেই নেই .... '----- ' কিন্তু স্যার,সেটা আপনি জানলেন কি করে ?'সিদ্ধার্থ সিনহার এখনও ঘোর কাটেনি । অবসেসিভ সাবজেক্টিভ ... ...
কলতান সেদিন রাত্রেই বালীগঞ্জ থানার ওসি গৌতম রক্ষিতকে ফোন করল ।----- ' রক্ষিতবাবু আপনি এখন কোথায় ? '----- ' বাড়িতে আছি । আজ নাইট ডিউটি নেই । কি খবর বলুন .... '----- ' ওই ব্যাপারটায় আপনার একটু ফেভার চাইছি ... '----- ' বলুন না .... '----- ' সেদিন যাকে তুলে আনা হয়েছিল সেই অশেষ পালিতকে কাল সকাল এগারোটার মধ্যে থানায় আসতে বলুন । একটু কথা বলব । যদি না আসতে চায় মোবাইল টাওয়ার থেকে ওর লোকেশান ট্র্যাক করে ওকে তুলে নিয়ে আসবেন । রতন সমররা ওর যে বাড়ির ছবিটা তুলেছিল সেটা আমাকে পাঠাতে বলবেন । ঠিক আছে ... কাল সকালে ... ...