গল্পলেখক শান্তনু দেবনাথ, যার আসল নাম নাকি একক, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আসলে একজন ভিনগ্রহের জীব। কারণ, প্রথমত আমি একককে কোনোদিন চোখে দেখিনি, শুধু লেখা পড়েছি। দ্বিতীয়ত, বাইনারি বা হেক্সাডেসিমালের মতো শতক, দশক বা এককও কোনো মানুষের নাম হয়না। তৃতীয়ত, এবং সবচেয়ে বড় কারণ এই, যে, কোনো এক মায়াপাতার গুষ্টিতে আমি যখন 'সুন্দরবনের বাঘেদের খামোখা মানুষখেকো হয়ে ওঠার জন্য জ্যান্ত রাখার দরকার কী, মেরে ফেললেই হয়না?', জাতীয় একটি নিষ্পাপ প্রশ্ন করি, তখন একক আমাকে সমর্থন করেছিল। ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে রহস্যজনক, কারণ, শ ... ...
সব খুচরো জটিলতা এড়িয়ে একদম সরল করে বললে সোজাসাপ্টা জিনিসটা এইরকম।
এনআর সিঃ হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে 'অবৈধ' বাঙালিদের তালিকা বানানো হবে। এবং নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে। তালিকার বাঙালিদের ডিটেনশান ক্যাম্পে রাখা হবে, না লাথি মেরে বাংলাদেশে তাড়ানো হবে জানা যায়নি।
ঝামেলায় পড়বেন কারাঃ কেবলমাত্র বাঙালিরা। এখনও পর্যন্ত, শোনা যাচ্ছে, অবৈধ তালিকায় আছেন হিন্দু ও মুসলমান ৪০ লক্ষ বাঙালি।
পক্ষে-বিপক্ষেঃ এর পক্ষে আছেন ভারতের মূলধারার সমস্ত দল। অগপ, বিজেপি জোরালো সমর্থক। কংগ্রেস, বাম, ত ... ...
মন্দির টন্দির নিয়ে আমি বিশেষ কিছু জানিনা। সবরীমালা না শবরীমালা, স না শ, তাও জানতামনা, এখনও জানিনা। বাঙালি গড়পড়তা বাঙালি মধ্যবিত্তও আমার চেয়ে বেশি কিছু জানে বলে মনে হয়না। দক্ষিণের একটি মন্দিরে মানুষের মাথায় নারকেল ফাটানো হয় রিচুয়াল হিসেবে, এরকম একটা ভিডিও দেখে হেসেছিলাম মনে আছে। তারপর এই শবরীমালা। সেই মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের ঢোকা বারন, এরকম পড়লাম চারদিকে। তা নিয়ে দিগ্বিদিকে প্রবল হইচই, কোর্টের রায়, মানবীপ্রাচীর। অবশেষে দুজন অ্যাটিভিস্ট ঢুকে পড়লেন মন্দিরে। তারপর আরেকদফা হইচই। চতুর্দিক ... ...
যাদবপুরের উপাচার্যকে নিয়ে একটা খবর দেখলাম। সম্ভবত সত্যিই। যে, যাদবপুরে ডোমিসাইল নীতির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েদের অগ্রাধিকার দেবার প্রস্তাব স্থগিত রাখা হয়েছে। বর্তমান নীতি অনুযায়ী রাজ্যের সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি কলেজগুলিতে রাজ্যের বাইরের ছাত্রছাত্রীদেরও প্রায় অবাধে ভর্তি বহার সমানাধিকার দেওয়া আছে। খবরে পড়েছি, যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডেমোগ্রাফি গত এক বা দু বছরে একেবারে বদলে গেছে। অন্য কলেজের কী খবর জানিনা। এখনই যদি একই অবস্থা না হয়, তো অদূর ভবিষ্যতেই হবে বলে আন্দাজ করা যায়।
য ... ...
একদা যে কলেজটিতে পড়তাম, তার নাম বিই কলেজ। নাম বদলে যদিও এখন আই আই ইএসটি। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায়না। আমাদের কাছে এখনও বিই কলেজই। সেখানে যে সরকারি উদ্যোগে একটি হিন্দি সেল তৈরি হয়েছে জানতামই না, যদিনা আমার বন্ধু গৌরব ফেসবুকে একটি পোস্ট করত। তার পোস্টের সূত্র ধরে কলেজ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি, সেখানে ইংরিজির পাশে একটি হিন্দি সংস্করণও আছে। এবং হিন্দি সেলকে সরকারি ভাবে একটি আলাদা ওয়েবসাইট (সাবডোমেন) ও দান করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে নানা মণিমুক্ত দেখা গেল। পুরোটাই ... ...
আমাদের প্রথম শত্রু, বিধর্মীরা। টিভির দ্রৌপদী পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, এ দেশ হল হিন্দুদের। বাবর এসে দেহলির নাম করে দিয়েছেন দিল্লি, শাজাহান তেজঃমহলের নাম বদলে করেছেন, তাজমহল, সে অনাচার আর সহ্য করা হবেনা।সব বিধর্মী নাম বদলে দেওয়া হবে। মুঘলসরাই এর নাম হবে দীনদয়াল উপাধ্যায়, মোগলাই পরোটার নাম হবে শ্যামাপ্রসাদ । লালকেল্লা ইতিমধ্যেই ডালমিয়া কোম্পানির হাতে চলে এসেছে। যদিও বিশুদ্ধ হিন্দু সংস্থা, কিন্তু নামের শেষে 'মিয়া' থাকায় এখনও নাম বদলনো যায়নি, তবে চিন্তার কিছু নেই, শেষ দুটো অক্ষর বাদ দেবার সিদ্ধান্ত ... ...
প্রশ্নটা স্রেফ এনআরসি নিয়ে নয়। "অবৈধ অনুপ্রবেশ"এর সন তারিখ ১৯৫১ বা ৭১ বা ৮১ বা ২০১১ যাই হোক না কেন, তাতে কিস্যু এসে যায়না, কারণ প্রশ্নটা সালতামামি নিয়ে নয়। প্রশ্নটা "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক একটি অদ্ভুত ধারণাকে নিয়ে। বলা ভালো "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক বস্তুটির বৈধতা নিয়েই। "অনুপ্রবেশ" শব্দটি নতুন। বৃটিশ ভারত এই শব্দটির অস্তিত্ব জানতনা। ভারতে তখন শাসক ছিল, শাসিত ছিল, শোষক ছিল, শোষিত ছিল, ঔপনিবেশিক ছিল, সায়েবসুবো ছিল, জমিদার ছিল, জাতপাত ছিল, চোর-চোট্টা-চিটিংবাজ ছিল, ধান্দাবাজ্ব রাজনীতিবিদ ছিল, বহু রকম উঁ ... ...
২০১৫ সালের সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হবার পর, ফরাসী দেশের একটি সুবিখ্যাত কার্টুন উৎপাদক পত্রিকা শার্লি হেবদো (নাকি অন্য কোনো উচ্চারণ হবে কে জানে) এখন একটি অতি পরিচিত নাম। এদের অফিসে হামলার পর, আমি, আপনি সহ প্রায় গোটা দুনিয়া হাতে হাত মিলিয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে এবং বাক-স্বাধীনতার পক্ষে থাকার শপথ নিয়েছিল। ফ্রান্সের নানা শহরে হয়েছিল বিরাট মিছিল। এবং জন্ম হয়েছিল একটি নতুন বাক্যাংশের। Je suis charlie। অর্থাৎ কিনা 'আমিই শার্লি'। ওই ঘটনার পর এই বাক্যাংশটিতে ক্রমশ বাক-স্বাধীনতার এবং সহমর্মিতা জ্ঞাপনের প্রত ... ...
হিন্দি সিনেমার গান শুনে বাঙালি কেন উলুতপুলুত হয়, আপাতদৃষ্টিতে বোঝা মুশকিল। যে ঘরানার গানের শ্রেষ্ঠ লিরিক নাকি 'মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়', অর্থাৎ কিনা 'আমার কিছু মালপত্তর তোমার কাছে পড়ে আছে' আর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ লিরিক তর্কযোগ্যভাবে 'বিড়ি জ্বালাইলে', অর্থাৎ কিনা 'সিঁড়ির নিচে বিড়ির দোকান', সে গান শুনলে এমনিই ভদ্রজনের মাথা হেঁট হয়ে যাবার কথা। হিন্দি বলয়ের কথা আলাদা, ওদের এরকমই কপাল। ইউপি-বিহারে আধুনিক কালে কোনো জীবনানন্দ জন্মাননি। আর অতীতের গৌরব যা ছিল, সেসব স্টিমরোলার চালিয়ে কবেই ফ্ল্যাট ... ...
"মহাপৃথিবীর ইতিহাস নাকি আসলে কতগুলি মেটাফরের ইতিহাস"। এসব আজকাল অচল হয়ে হয়ে গেছে, তবু মনে পড়ে, সে কতযুগ আগে বাক্যটি পড়ি প্রথমবার। কলেজে থাকতে। পত্রিকার নাম, বোধহয় রক্তকরবী। লেখার নাম ছিল মণিময় ও মেটাফর। মনে আছে, আমি পড়ে সিনহাকে পড়াই। আমরা দুজনেই তারপর কিছুক্ষণ থম হয়ে যাই। মুগ্ধ হয়ে নয়। মুগ্ধতা-টুগ্ধতা অতি তুচ্ছ কথা। লোকে হরবখৎ নানা জিনিস দেখে মুগ্ধ হয়েই চলেছে। সৌরভ গাঙ্গুলির কভার ড্রাইভ, ডায়মন্ডহারবারের সূর্যগ্রহণ, সোনি ব্রাভিয়া। এ লেখায় ওইসব নৈসর্গিকতা নেই, নেভিল কার্ডাসীয় শব্দবাজির প্রশ্নই নেই ... ...