ছোটবেলায় মোটা বেতের ঝুড়ি মাথায় ফেরিওয়ালারা হেঁকে যেত “হরেএএএক মাল পাঁসসিকে”, এখন যায় তাদেরই আধুনিক সংস্করনরা, রেকর্ড করা গলায় বলে “আমাদের প্রচার গাড়িতে পাবেন নানা ধরনের জিনিস”। ‘প্রচার গাড়ি’ শব্দগুচ্ছ অনেকটা ‘সৌন্দর্য সাবান’-এর মত, কী যে তার মানে কেউ জানে না। যাই হোক, সেই পায়ে চালানো গাড়িতে যা যা থাকে তার প্রায় সবই ভেসে যেতে দেখলাম বারান্দা থেকে - ছোট গামলা, বাটি, খেলার বল, বোতল, ক্যারি ব্যাগ, দড়ি ইত্যাদি। গাড়িতে যা থাকে না তাও দেখলাম - ধবধবে সাদা টগর ফুল, সবুজ রঙের বাঁশ, গাছের পাতা, এমনকি এক পাটি জুতোও। ... ...
ঘুড়ি ওড়ানোর সাথে জড়িত নানাবিধ পতনের রঙিন গল্প আমাদের চার পাশে উড়ে বেড়াচ্ছে বহুদিন ধরে। ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে ছাত থেকে পড়ে যাওয়া, কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরতে গিয়ে পুকুরে পড়ে যাওয়া, অন্যের ছাতে পড়ে থাকা ঘুড়ি চুরি করতে গিয়ে সে বাড়ির মেয়ের প্রেমে পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সে সব নয়, আমার হল না-ওড়ানোর গল্প। ... ...
প্রতিটা তারের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত জুড়ে রয়েছে ঝুলতে থাকা সারি সারি ছোট বড় জলের ফোঁটা। বৃষ্টি থেমে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে, তবে হাওয়া দিচ্ছে না বলে এখনও ফোঁটাগুলো আটকে আছে, মনে হল আমার জন্যই আটকে আছে। একটা ফোঁটায় আঙুল ছোঁয়াতে গিয়ে হাত লেগে গেল তারে, জলের বিন্দুরা ভিজে ছাদের ওপর টুপটুপ করে ঝরে পড়ল। ... ...
মানুষের চোখ যে এত সুন্দর তা এই অতিমারী না হলে হয়তো জানতেই পারতাম না। মহিলা, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ - সবার চোখ দৃশ্যমান। নাকের নিচ থেকে ঢাকা মুখোশে, মাথা আর কপালও অনেকেরই টুপির নিচে চলে গেছে। বাজারে ঢোকার মুখের রাস্তায় পাঁচটা মিনিট দাঁড়িয়ে যান, দেখুন আশপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের চোখ। কারও চোখ যামিনী রায়ের ক্যানভাসের মত, কারোর আবার রবি ঠাকুরের কালোহরিণ। কারও চোখে সরু কাজলের টান, কারোর চোখের উজ্জ্বলতা আবার চশমার ভিতর দিয়েও স্পষ্ট। কারও চোখ আবার অন্য গল্পও বলে। ... ...
মনে করা যাক আজ থেকে ৫০০ বা ১০০০ বছর সেই সময়ের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় পরিস্থিতিতে যে নিয়ম তৈরি হয়েছিল তা আজকের বহু বহুগুণ বদলে যাওয়া সমাজে কেন মেনে চলতে হবে সে প্রশ্ন তোলা বা তা নিয়ে তর্ক করাটাও অনিয়মের মধ্যে পড়ে। ক্লাস টুর বাচ্চাটার গল্প থেকে একটু সরে আসা হয়েছে, তার কথাও এখানেই শেষ হতেই পারত, তবে কিনা এটা তো ঠিক গল্প নয়, তাই একটা "তার পর" রয়েছে। তবে আপাততঃ ওই শিশুর ছোট্ট জীবনে যে নতুন নিয়মটা যোগ হল তা হচ্ছে প্রশ্ন করতে নেই। আর বৃহত্তর সমাজে এরই অনুসিদ্ধান্ত হল প্রশ্ন করতে দিতে নেই। ... ...
বাড়ির নয়, স্কুলের খিচুড়ির কথা হচ্ছে। সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলের খিচুড়ি। এর কোন তুলনা আছে কি? না, একটা এমফ্যাটিক না। ... ...
তেমন ‘বড় মাপের’ মানবিকতা না দেখালে তো আর খবরের কাগজে জায়গা পাওয়া যায় না। তবু মনে হয় ছোট সাহায্যও কি কম? প্রতিদিনের এমন কত ছোট ছোট সাহায্য যে কত মানুষকে অন্য ভাবে খবরের কাগজে নাম ওঠান থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে কে তার হিসেব রাখে। ... ...
--- আরে একটা অন্য প্রবলেম হয়েছে। --- কী হল স্যার? শরীর টরির ঠিক আছে তো? --- হ্যাঁ হ্যাঁ সে সব ঠিক আছে। বলছি এই বাজারে বাইরে থেকে কেউ এলে লোকাল লোকেরা ঝামেলা করছে শুনছি। --- হ্যাঁ সে রকম ঘটনা ঘটেছে কিছু। তবে আপনি ভাবছেন কেন? আপনি তো নিজের বাড়িতে ফিরবেন। --- তা তো ফিরব। আসলে প্রবলেমটা অন্য জায়গায়। ব্যাপার হচ্ছে আমার পাড়ায় এক মাতব্বর আছে, চিন্তাটা তাকে নিয়ে। মাস কয়েক আগে পাশের বাড়ির মালীকে ফালতু কারণে চড় থাপ্পড় মেরেছিল। তখন যে দু-চার জন প্রোটেস্ট করেছিল, সুযোগ পেলেই এখন তাদের হ্যারাস করে। --- বুঝলাম। ওই দু-চার জনের মধ্যে আপনিও ছিলেন আর এখন ভয় পাচ্ছেন লোকটা এই সুযোগে আপনার পিছনে লাগবে। --- ঠিক তাই। লোকটার নুইসেন্স ভ্যালু আছে। ঝামেলা পাকাতে ওস্তাদ। আর করোনা ইস্যুতে সঙ্গী পেয়ে যাবারও চান্স রয়েছে। বলছি হোটেলে থাকা যায় না? ১৪ দিন না হয় হোটেলেই থাকলাম। ... ...
পাঁচটি চেনা গল্প, বিভিন্ন জনের রচনা, রঙ-রসও তাদের আলাদা। মিল একটাই, অন্তিম পংক্তিগুলি যেন কবিতার মত ডানা মেলে, গল্পের আওতায় আটকে থাকতে চায় না। আর সেই শেষ শব্দগুলির মধ্যে দিয়েই তাদের অন্তরে পৌঁছনোর চেষ্টা। ... ...
হ্যাঁ হ্যাঁ বুয়েছি, আপনি বলছেন এ চাপ তো রাবণের মায়ের, ছেলের কোথায়? আরে মশায়, দশ খানা মাথায় ঘুম আসাটা কি চাট্টিখানি কথা? এক মাথা চ্যাঁ ভ্যাঁ করলে পাশের জনের, থুড়ি, পাশের মাথার কানে চলে যাবে, ব্যাস, যেটুকু ঘুম এসেছিল তার বারোটা।... আবার কী বলছেন? রাবণের কান কটা? কেন, কু---- না না, ঠিকই তো বলেছেন। মাথাগুলো তো সবকটাই পাশাপাশি আটকানো, কানের জন্য কোনও অ্যালাউন্স তো নেই। তাহলে বোধহয় দুটোই কান -- ফার ইস্টের একটা আর ফার ওয়েস্টের একটা। এতে অবশ্য একটা সুবিধে -- কান বেশি থাকলে কামমলাও বেশি খেতে হত। ... ...