[৬] কিছু অন্য প্রশ্ন
উপরে বর্তমান প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমরা বিশ শতকে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন সমস্যাগুলির কিছু কিছু বিষয়ে এম এন রায়ের বক্তব্য নিয়ে যতটুকু আলোচনা করলাম তাতে বোধ হয় এটা বোঝানো সম্ভব হয়েছে যে আলোচ্য বিষয়ে তিনি অনেক মূল্যবান কথা আমাদের উপহার দিয়েছেন। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি সমস্যা নিয়ে তিনি তাঁর পূর্বোল্লেখিত বইগুলোতে বিশ্লেষণ করেছেন, এবং সমকালীন সময়ের বিচারে তাদের যথেষ্ট যথাযথ সমাধান দেবার প্রয়াস করেছেন। যেমন, বিজ্ঞানের প্রেক্ষিত থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা উপস্থিতির প্রশ্ন ... ...
[৩] প্রত্যক্ষবাদ নয়
তবে শুরুতেই একটা কথা বলে নেওয়া দরকার।
মানবেন্দ্রনাথ রায় যদি সরলরৈখিক ভাষায় বস্তুবাদের সাধারণ সুপরিচিত সিদ্ধান্তগুলি পর পর বলে যেতেন তাহলে আজ আমাদের কাছে তার কোনোরকম গুরুত্বই থাকত না। তা তিনি করেননি। বরং আমরা দেখব, তিনি বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে সেই সময়ের সব চেয়ে বিপজ্জনক প্রবণতার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং বিজ্ঞানের দর্শন আলোচনার গোড়াতেই সেকথা বলে নিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলিকে যে আর আগেকার মতো ধ্রুপদী ভাববাদের সপক্ষে কাজে লাগানো যায় না, এ কথা বিশ শতকের যে ... ...
[১] উপেক্ষিত নায়ক
মানবেন্দ্রনাথ রায় (১৮৮৭-১৯৫৪) বিংশ শতাব্দের একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো, মৃত্যুর ষাট বছর পরে শুধু নয়, অনেক আগে থেকেই তাঁর সম্পর্কে আমরা, একালের প্রগতি শিবিরের লোকেরা, খুব ভালো করে জানি না। নামটা হয়ত অনেকেরই জানা রয়েছে। কিন্তু তাঁর চিন্তা ও কর্মের সাথে আমাদের পরিচয় প্রায় নেই বললেই চলে। কিংবা বলা ভালো, পরিচয় রাখার চেষ্টাও কোথাও নেই।
তাঁর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আমি যতটা যা জানি তা সংক্ষেপে এইরকম: তিনি তাঁর বিপ্লবী জীবন শুরু ক ... ...
[গ] বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে কী বোঝায়
এপর্যন্ত পড়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, বিজ্ঞান-মনস্কতার কথা বলতে বসে আমি স্রেফ ভূগোল আর ইতিহাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কেন? বিজ্ঞান নিয়ে এখন অবধি একটাও কথা তো পাড়িনি। বিজ্ঞান বাদ দিয়ে বিজ্ঞান-বোধ হয় নাকি? বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান যা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠিত—এই সব কথা তো বলছি না। বিজ্ঞান মানে সব কিছুকে যুক্তি তর্ক করে বিচার বিশ্লেষণ করে তবে গ্রহণ করতে হবে—সেই সব পুরনো কাসুন্দির কথা তুলছি না তো? ধান ভানতে বসে শিবের গীত গাইছি কেন? ... ...
ফেসবুকে বছর দুয়েক আগে একটা খবর পড়ে চমকে উঠেছিলাম। বিহারের একটি গ্রামে বাবা-মা তাদের দুই যমজ কন্যার একজনকে পুড়িয়ে মেরেছে আর একজনকে সুস্থ করে তোলার অভিপ্রায়ে। সন্তানদুটি দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছিল। কিছুতেই ভালো হচ্ছিল না। শেষে তারা নিরুপায় হয়ে এক তান্ত্রিক বাবার কাছে যায়। সে পরামর্শ দেয়, ভগবান নাকি কোনো কারণে সেই বাবা-মার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে এদের ফেরত চাইছে। তাই ওরা ভালো হচ্ছে না। হবেও না। অন্তত একজনকে ভগবানের কাছে ফেরত দিতে হবে। তাহলেই একমাত্র অপর সন্তানটি সুস্থ হয়ে উঠবে। তারপরেই একদিন বড় সড় আয়োজন ক ... ...
গরুমোষ আর দেবাসুর!
এই সব প্রশ্ন ধরে আর সামান্য কিছুটা এগোলেই আমরা আলোচ্য সমস্যার একেবারে মূলে পৌঁছে যেতে পারব এবং সমাধানেরও কিঞ্চিত হদিশ হয়ত পেয়ে যাব।
এবার সেই কথা।
সকলেই জানেন, হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে বৌদ্ধ খ্রিস্টান বা ইসলাম ধর্মগুলির মতো কেন্দ্রীয় শাস্ত্র গ্রন্থ, অনুশাসন, আচারবিধি, (এক বা বহু বচনে) নির্দিষ্ট দেবতা বা দেবমণ্ডলি, সামাজিক রীতি—কোনো কিছুই নেই। নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যাকে জনজাতীয় ধর্ম (tribal religion) বলা হয়, তার মতোই এর সমস্ত প্রকরণই প্রকটভাবে আঞ্চ ... ...
সংবিধান, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও খাদ্য নির্বাচনের অধিকার
সেকালের এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে এসে এবার আমরা এখানে আধুনিক কালের প্রেক্ষিতে কিছু নতুন যুক্তি তর্ক হাজির করব শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের ভেবে দেখবার জন্য। আমাদের প্রথম প্রশ্ন ধর্মনিরপেক্ষতা (secularism)-এর মাপকাঠিতে একজন সাধারণ নাগরিকের খাদ্য বিষয়ে সাংবিধানিক অধিকার কতখানি সুরক্ষিত সেই সম্পর্কে। ভারতের সংবিধান নাকি ভারত রাষ্ট্রকে একটা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা গড়ে তুলবার নির্দেশ দেয়। এই ব্যাপারে শুধু কংগ্রেস বা গান্ধীবাদীরা নন, বেশিরভাগ বামপন্থী দ ... ...
প্রচারক। শাস্ত্র বলে গরু আমাদের মাতা।
বিবেকানন্দ। হ্যাঁ, গরু যে আমাদের মা, তা আমি বিলক্ষণ বুঝেছি—তা না হলে এমন সব
কৃতি সন্তান আর কে প্রসব করবেন?
[“স্বামী-শিষ্য-সংবাদ”; স্বামীজীর বাণী ও রচনা, ৯ম খণ্ড]
ভারতেও “নাসা”!
আপনারা ভাবছেন, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে নাসা (NASA) নামক যে সংস্থাটি মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাথে সংযুক্ত, তারা বুঝি আমাদের দেশেও কোনো শাখা খুলছে বলে আ ... ...
।। ৭ ।।
মৃত্যুতেও ডিরোজিও তাঁর এই উচ্চগ্রাম মূল্যবোধের পরিচয় দিয়ে গেছেন। ১৯ ডিসেম্বর ১৮৩১ তিনি ধর্মতলা অ্যাকাডেমি স্কুলে গেলেন বার্ষিক পরীক্ষা নিতে। সেখানেই তিনি দিলেন তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনের শেষ ভাষণ। আশা প্রকাশ করে গেলেন শেষবারের মতো, ড্রামন্ডের এই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মতোই এক দিন আসবে—
When man to man the world o’er
Shall brothers be, and a’ that.
সেখান থেকে ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুরারোগ্য কলেরায় আক্রান্ত হন। আসলে সেই সময় সারা কলকাতা জুড়েই কলেরা এক মহামারীর রূপ নিয়ে ... ...
।। ৬ ।।
ডিরোজিওর এই সমস্ত মতাদর্শগত সাফল্যের পেছনে মৌল উৎসগুলি কী কী? তিনি কি প্রচলিত বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো রকম ঈশ্বরের ধারণায় বিশ্বাস করতেন? অথবা, তিনি কি পুরোপুরি নাস্তিক ছিলেন? তাঁর কি সুনির্দিষ্ট কোনো দার্শনিক বোধ তৈরি হয়েছিল? নাকি, তিনি যখন যা মনে হত সেই মতো বলতেন বা আচরণ করতেন? তাঁর ছাত্রদের কাছেই বা তাঁর মতাদর্শগত বার্তা ঠিক কী ধরনের ছিল? খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি তাঁর মনোভাব ঠিক কী ধরনের ছিল? ভারতের খ্রিস্টান মিশনারিরাই বা তাঁর সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করত?
এবার সেই সব প্রশ্নে ... ...