এরপরের ব্যাপার তো ইতিহাস! বিগত দুশো বছরে শ্যাম্পেনের ডিমান্ড এবং প্রোডাকশন বেড়েছে চড়চড় করে। যেমন ১৮০০ সালে বছরে শ্যাম্পেন উৎপাদন হত বছরে তিন লক্ষ বোতলের মত। ১৮৫০ সালের সেটা বেড়ে দাঁড়ায় বছরে দু-কোটি বোতলের মত। আর ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী বছরে ৩৪ কোটি বোতল উৎপাদন হয় শ্যাম্পেন। ... ...
খ্রীষ্টপূর্ব দেড় হাজার বছর আগে থেকে খ্রীষ্টের জন্মের পরে প্রায় আরো এক হাজার বছর পর্যন্ত ভারতের লোহা এবং তার বানানোর জ্ঞান-জন্মি একদম স্টেট অব্ দ্যা আর্ট ছিল। অনেক বিষয়ে ভারতে সেই সব পৃথিবীতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। মিশরের পাবলিক যে সব মন্দির, পিরামিড এই সব বানিয়ে তাতে হেয়ারোগ্লিফিক্স নাকি কি সব দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল, সেই সব বানাতে যে যন্ত্রপাতি ইত্যাদি লেগেছিল তা বানাতে নাকি ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতীয় ইস্পাত। বলা হয়ে থাকে যে সেই সময়ে ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন সভ্যতায় এমন লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় নি যে তারা ভারতের মতন এত উন্নত মানের ইস্পাত তৈরী করতে পারত। সেই সময়কার গ্রীক এবং ল্যাটিন লেখা লিখি পড়লে এটা বোঝা যায় যে এই লোহা-ইস্পাত ইত্যাদির ডিটেলস্ সম্পর্কে তারা বেশ অজ্ঞই ছিল। অবশ্যই তারা জানত কি ভাবে লোহা-ইস্পাত ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু কি ভাবে লৌহ আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাষণ করে তার থেকে ইস্পাত ইত্যাদি বানাতে হয় সেই সম্পর্কে তারা তেমন কিছু জানত না। ... ...
এই লৌহস্তম্ভ রয়েছে দিল্লীর কুতুব কমপ্লেক্সে। বর্তমানে বললাম এই জন্যই যে, এই স্তম্ভ দিল্লীতে চিরকাল ছিল না। মালটা প্রথমে কোথায় ছিল সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে - তবে মোটামুটি সব বিজ্ঞরা আজকাল এই সিদ্ধান্তে এসে পোঁছেছেন যে, এই স্তম্ভ প্রথমে খাড়া করা হয়েছিল বর্তমান উদয়গিরি-তে, ওই ৪০০-৪৫০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ। তারপর সেখান থেকে দিল্লীতে আসে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই স্তম্ভ সত্যিই ১৬০০ বছরের পুরানো, তাহলে বছরের হিসাবে দেখতে গেলে দিল্লীতে এর ঠাঁই শেষ আটশো বছরের মত। কিন্তু লৌহস্তম্ভটি ক্ষয়ে যাচ্ছে না কেন? যেখানে আমাদের বারান্দার গ্রীল বছর চারেক রঙ করে মেনটেন না করলে ক্ষয়ে গিয়ে দফারফা, সেখানে আজ প্রায় ১৬০০ বছর ধরে এই লৌহ স্তম্ভ কি ভাবে না ক্ষয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে! এর পিছনের রহস্য কি? কোন বিশেষ ধরণের লোহার ব্যাবহার, নাকি বানানোর বিশেষত্ব, নাকি মৃদু আবহাওয়ার প্রকোপ? ... ...
সেই ১৮৩২ সাল নাগাদ ফ্যারাডে যখন ইলেক্ট্রোমেকেষ্ট্রির জনক হতে যাচ্ছেন তখন তিনি লণ্ডন রয়েল ইনষ্টীটিউটশনে – নিজের প্রথাগত শিক্ষা না থাকায় আত্মবিশ্বাস কিছু কম। তাই তিনি চিঠি লিখছেন হুইওয়েল-কে এই জানতে যে অথোরিটি এই ব্যাপারে কি মনে করে। ফ্যারাডে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিকের জন্য ঠিক কি নাম ব্যবহার করা ঠিক হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ চাইছেন। এই সব চিঠি বাইরে রাখা থাকে না পাবলিক প্রদর্শনীর জন্য। আমাদের প্রোফেসর ট্রিনিটি কলেজের লাইব্রেরীয়ানকে বলে বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। লাইব্রেরীয়ান ভল্ট থেকে আসল চিঠি পত্র নিয়ে সে দেখালেন – সে অনেক চিঠি, সুন্দর করে রাখা আছে। বাঁধানো বইয়ের মত করে পাতায় পাতায় চিঠি গুলো আটকানো আছে। প্রথম দিকে ফ্যারাডের চিঠি এবং শেষের দিকে সেই চিঠির প্রেক্ষিতে হুইওয়েল এর উত্তর। এই চিঠি সব ব্যাখা করছিলেন লাইব্রেরীয়ান, কারণ সেই হাতের লেখা পড়া খুব দুঃষ্কর। এই ভাবেই দেখা গেল ১৮৩৪ সাল নাগাদ প্রথম প্রস্তাব করলেন হুইওয়েল ‘ক্যাথোড’ এবং ‘অ্যানোড’ শব্দের ব্যবহার। আরো বেশ কিছু ক্ষণ সময় কাটালাম – ... ...
অনেক কিছু স্মৃতি উঠে আসছে – ২০০০ সাল অবধি তেমন ভাবে ‘কবিতা’ নিয়ে চর্চা বা ভাবনা হয়ে ওঠে নি। ওই গোঁফ ওঠার বয়সে যা ছড়া/কবিতা লেখে সবাই তেমন কিছু ছাড়া। আর সব প্রচলিত বিখ্যাত কবির কবিতা পড়া – সেই সময় ছিল সমকালীন জয় গোস্বামী টাইপের ইত্যাদি। এমন এক সময়ে পরিচয় হয়ে যায় এক অদ্ভুত ওয়েবসাইটের সাথে – মনে রাখতে হবে তখনো ইন্টারনেট এমন প্রচলিত হয়ে ওঠে নি, ব্রড ব্যান্ড ইত্যাদি তো দূরের কথা – অর্কূট, ফেসবুক, ইউটিউব কিছুই নেই। এমন ভাবে নিরলস কবিতার সাধনা করে যাওয়ার সাইট বিরল। দুই বাংলার অনেক এখনকার চেনা এবং জনপ্রিয় কবি এই সাইটে হাত পাকিয়েছিলেন এখানে। ভাবছি তেমন কারো কারো দের দিয়েই কিছু লেখা যাক টুকটাক। ... ...
অথচ দরজাটা খোলাই ছিল। ছাদ আশ্রয়, দেওয়াল সুরক্ষা দিলে দরজা দিয়েছে গোপনীয়তা। আর সেই সূচনা থেকেই জানালার সাথে মিথ্ হয়ে গেছে অজস্র অলিখিত ও কিছু লিখিত পঙতিমালা। বলা হয় এক ছাদের নীচে বসবাস করলে নাকি সম্পর্ক দানা বাঁধে। সেই পরিবর্তনশীল সম্পর্কের সাথে মানবিক বিক্রিয়ায় কিছু মুহুর্ত তৈরী হয়। তেমনি কিছু মুহুর্ত কবিতার আকারে – যেখানে কাঠের সিঁড়ির সাথে নুপূরধ্বনি অজান্তেই মিশে গেছে ... ...
মনুষ্য সভ্যতায় এবং অস্তিত্ত্বের এক অবিচ্ছেদ্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল স্বাধীনতা। কেবলমাত্র বেঁচে থেকে স্বাধীনতা অনুভব করা যায় না! আপনাকে ‘স্বাধীনতা’ চাইতে হবে এবং আপনাকে ‘স্বাধীনতা’ বেছে নিতে হবে – তা না হলে আপনি কোনদিনই সেটা অনুভব করতে পারবে না। এ সেই অনেকটা ‘সুখ’ নামক কনসেপ্টটার মত। আপনি অত্যন্ত সুন্দর, প্রাকৃতিক সৌন্দ্রর্য্যে ভরপুর কোন জায়গায় বেড়াতে গিয়েও নিজেকে ‘অসুখী’ করে রাখতে পারেন বিলকুল – সব বেড়ানোর দিনগুলি করে তুলতে পারেন বেদনাদায়ক! আপনা আপনি ‘স্বাধীনতা’ অনুভব করা যায় না এবং তার মূল কারণ হল মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ‘নিয়ন্ত্রণ’ নামক একটি জিনিসের দ্বারা পরিচালিত হয়। নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতা দুই সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্তে অবস্থান করে ‘স্বাধীনতা সূচকে’। আমরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে ‘স্বাধীন’ নয় কারণ কেউ বা কারা আমাদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে চায়। সে রাষ্ট্র হতে পারে বা অন্য কেউ। ... ...
দুরিয়ান কাঁঠাল প্রজাতির ফল, আর দেখতেও অনেকটা কাঁঠালের মতই। দুরিয়ান খাবার জন্য মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ডের কিছুটা, কিছু ইন্দোনেশিয়া – এরা সব পাগল। সেই উন্মাদনার কাছাকাছি বাঙালীর কোন কিছু খাবার বিষয়ক উন্মাদনা আসতেই পারে না, বাজারে হিমসাগর উঠলে আমরা এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারি না। কথিত আছে যে প্রাক মোবাইল যুগে বাজারে দুরিয়ান ওঠার খবর রেগুলেট করা হত সরকারী অফিস বা হাসপাতালে, বা ব্যাঙ্কে বা স্কুল-কলেজে। ডাক্তার নাকি অপারেশন থামিয়ে দুরিয়ান কিনতে ছুটছে যেই শুনেছে বাজারে দুরিয়ান উঠেছে – স্কুল-কলেজে টিচার হাওয়া! এখন হোয়াটঅ্যাপ এসে যাওয়ায় আর রেগুলেট করা যাচ্ছে না খবর চাওড় হওয়া। তাই সরকার নাকি ভাবছে কেবলমাত্র ওয়ার্কিং-আওয়ারসের বাইরের দুরিয়ান বিক্রী করতে দেওয়া হবে ওপেন মার্কেটে! ... ...
এমন নয় যে রামসে-ই পৃথিবীর সব থেকে ভালো শেফ, সেই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। কিন্তু গর্ডন সবচেয়ে বিখ্যাত, সেই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মিচলিন স্টারের দিক থেকে দেখতে গেলে গর্ডন তৃতীয় স্থানে, ১৬টা স্টার নিয়ে। সেই যখন প্রথম প্রথম দেখতাম গর্ডন-কে, তখন তার প্রতিপক্ষ মিডিয়া খাড়া করেছিল জিমি অলিভার-কে। আর আজ অলিভার প্রায় দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে। এই তো সেই দিন সিঙ্গাপুরে জিমি অলিভারের ইতালিয়ান রেষ্টুরান্টে দেখে এলাম লাঞ্চ আওয়ারে কি বিশাল ছাড় দিচ্ছে – দুজন খেলে একজন ফ্রী বা এই জাতীয় কিছু। একজন বিখ্যাত শেফের রেষ্টুরান্টে যেটা ভাবাই যায় না! ... ...
আমাদের একটা আস্ত সমুদ্র ছিল – ছিল সমুদ্র সৈকত। ঘরে থেকে বেরোলেই ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেতাম ঝাউগাছের তলায় আর কখনও কখনও প্রবল তাপদগ্ধ অলস দুপুর কাটাতে কাটাতে বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতাম বিকেলের ভেজা বালির। আমরা তখনও কেবল দুজন মাত্র। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ঢেউ পেরিয়ে পেরিয়ে – কখনও দেখা হয়ে যায় পাশের বাড়ির কুকুর নিয়ে ঘুরতে বেরোনো মালকিনের সাথে, কখনও দেখা হয় কাঁকড়া খুঁজতে আসা সেই স্থানীয় লোকেদের সাথে। কখনও দেখি এক পুরো পরিবার চিঙড়ি মাছ ধরছে জাল দিয়ে ছেঁকে – বাচ্চাদের উৎসাহ অবশ্যই মাছ ধরার থেকে জলে হুটোপুটিতেই বেশী। এক সময় গোধূলি নেমে আসে – এত রঙ আমরা আর কোথাও দেখি নি। জলের সাথে ভেসে আসা কাঠের গুঁড়ির উপর বসে সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখি। ঢেউ দেখি – শব্দের সাথে মিশে যায় দিগন্তে আকাশের শত রঙ। ধর আজকে মেঘ করেছে – এমন মেঘের ফাঁক দিয়েও আলো চুঁইয়ে পড়বে জানি অনভ্যাসের আলতা পায়ে। লাল মুছে নিয়ে যাবে ক্রমাগত আর ফিরে না আসা ঢেউ। আমি তখন দূরে ছোটার ক্লান্তি নিয়ে তাকিয়ে আছি একে একে জ্বলে ওঠা জলের ওধারে জাহাজের আলোর দিকে। আলো স্পষ্ট হয়ে আসে, ঢেউ এগিয়ে এসেছে অনেক – আমরা হাতের আঙুল নিয়ে খেলতে খেলতে ফিরে আসি কাঠের বাড়িতে। ... ...