একদিন জেন বলল ওর বৌদি বেশ সমস্যায় পড়েছে – কারণ ওর দাদা ফ্যামিলি ছেড়ে চলে গেছে অন্য ভালোবাসার মানুষের সাথে। জেনের দাদার বয়স তখন প্রায় ৪৮ মত – তিন ছেলে মেয়ের বাবা। বিদেশে এই সব হতেই পারে – কিন্তু আমার চমকটা লাগলো অন্য জায়গায়। বেশ কিছু দিন ধরেই দাদা-বৌদির বনিবনা হচ্ছিল না। ওর দাদা নাকি অন্য একটা ছেলের প্রতি আসক্ত হয় পড়ছিল ক্রমে – এবং খুব রিসেন্টলি জেনের বৌদি-কে জানায় আর একসাথে থাকা সম্ভব নয়, কারণ তার উপর সে আর কোন আকর্ষণ অনুভব করছে না! বরং বুঝতে পেরেছে ওই ছেলেটিকে ও প্রবল ভালোবেসে ফেলেছে। তাই ডিভোর্স দিয়ে ছেলেটার সাথে থাকতে চায়। সেই শুনে আমার অবাক অবস্থা দেখে জেন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল "সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন" কাকে বলে ইত্যাদি। ... ...
জানুয়ারীর শেষের দিকের সেই ঠান্ডাকে পাতলা জামাটা বাগে আনতে পারছিল না, আমি ক্রমশঃ কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। কাঁধের গামছাটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নিলাম যতটা ঢাকা যায়। ফাঁকা জায়গায় কাঁচা বাঁশের চৌদল্লা ছুঁয়ে বসে আছি অনেকক্ষণ – গঙ্গার হাওয়া থেকে বাঁচার জন্য উঠে এসে একটু আড়াল পানে যাব তার উপায় নেই। কারণ আমাকে নাকি ছুঁয়ে থাকতেই হবে! পদা-কাকার অবশ্য শীত করার কথা নয়, তবুও সাদা কাপড়টা ভালো করে টেনেটুনে দিলাম। চন্দনের গন্ধ আছে, আছে রজনীগন্ধার আর নতুন কাপড়ের। মাথায় গোড়ায় তখনও জ্বেলে রাখা ধূপ গোছার থেকে ধোঁয়া পায়ের গোড়ায় আমার দিকেই ভাসিয়ে দিচ্ছে গঙ্গার হাওয়া। গাছের পাতা দেখা যায় না অন্ধকারে, ওরা অনেক দূরে – তাই ধোঁয়া দেখেই বুঝতে পারি বাতাসও মাঝে মাঝে আনমনা হয়! এতদূরে বাল্বের আলোও এসে ওঠে নি ঠিকঠাক – প্রায় অন্ধকারই – যেটুকু আবছায়া তাও ওই হ্যারিকেনের আলোয়। পদাকাকুর মুখটা দেখতে পাচ্ছি না পায়ের দিকে বসে, যেন মনে হচ্ছে শুধু সাদা তুলো আভাস পাচ্ছি মুখের আশেপাশে। কতই বা বয়স আমার তখন! মনে হয় সেই প্রথম একাকীত্বের অনুভব – আনমনা ভাবতে থাকি, আসলেই এই ভাবেই সবাই একদিন একা হয়ে যাব – তখনও হয়ত অন্য কেউ চন্দনের গন্ধ পাবে – প্রিয়জন, প্রতিবেশী, অচেনা? উত্তর তো জানা নেই আমার! ... ...
এই লেখার শুরুর আগে শুরুর গল্প বলে কিছু নেই। কিংবা আছে, কে জানে! পাই বলল একটা নিয়মিত কলাম লিখতে। ব্যাপারটা একটু ভীতপ্রদ, কারণ নিয়মমাফিক লেখা চাপ। আর তাছাড়া আজকাল গুরুতে অন্য বাকি সব লেখা বা কলামের সমাজচেতনা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অ্যানালিসিসের তীব্রতা – এর সবকটাই আমার নাগালের বাইরে। কিন্তু পাই-য়ের রিকোয়েষ্ট ফেলা চাপের – তো যেটা ঠিক হল, আমার যা খুশী লেখার লাইসেন্স থাকবে। এটুকু বলার, যাদের ব্রেন সারাদিন জটিলতার চাপ না নিয়ে রাতের বেলা রেষ্ট নিতে পারে না – যাদের ব্রেন তত্ত্ব এবং তথ্যের ভারে নিমজ্জিত না হলে হা-হুতাশের ফীডব্যাক লুপে ঢুকে করে – তাঁরা স্বচ্ছন্দে এই লেখা এড়িয়ে যেতে পারেন। এই কলামের অনেক লেখা হয়ত মায়ের কাছে মাসির গল্পের মত হয়ে যাবে – তাঁরা আমাকে নাদান এবং চাষার ছেলে বলে অ্যাডজাষ্ট করে নেবেন। তো কি দিয়ে শুরু করা যায়? ঠাকুমা বলত শুভ দিনে নাকি মাছ পয়া জিনিস – ছোটবেলায় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হলে তার পিছনে পুকুরের কাতলা মাছের অবদান যে অর্ধেকের বেশী সেই বিষয়ে ঠাকুমা আমার পুরো কনভিন্সড ছিল। তাই মাছের গল্প দিয়েই শুরু হোক। লেখা ভালো লাগলে, বেল আইকনে চাপ দেবেন। ও, এখানে তো আবার বেল আইকন নেই! বাট ইউ নো, হোয়াট আই মিন। কিছু একটাতে চাপ দেবেন। ... ...
কিন্তু চকোলেটের ‘আধুনিক’ যুগের সূচনা বলতে গেলে ১৮২৮ সালের পর। যখন কর্মাশিয়াল ভাবে চকোলেটের আরো বেশী করে উৎপাদন শুরু হল। এর এইখানেই ডাচ্-দের অবদান। কোয়েনার্ড ভ্যান হুটেন নামে এক ডাচ্ কেমিষ্ট উদভাবন করে ফেলল কোকো জগতে যুগান্ত কারী এক জিনিস। তিনি উদভাবন করলেন এক হাইড্রোলিক প্রেস যার মাধ্যমে প্রসেস করা কোকো বিনস্ থেকে কোকো বাটার-কে আলাদা করে ফেলা গেল খুব সহজে, আর পরে রইল চকোলেটের/কোকো-র গুঁড়ো। ব্যাস আর পায় কে! কিন্তু ভ্যান হুটেন এতেই থামলেন না, তিনি আরো গবেষণা করে সেই চকোলেটের পাওডারের সাথে ক্ষারক জাতীয় লবণ (অ্যালকালাইন সল্ট) মিশিয়ে এই পাওডার-কে এমন করে তুললেন যে সেই পাওডার এবার খুব সহজেই কোন তরলে মিশে যায়। এই প্রসেসটা তিনি পেটেন্ট করেছিলেন এবং তা কালক্রেমে পরিচিত হয় ‘ডাচিং’ পদ্ধতি নামে। বলতে গেলে এই ডাচিং প্রসেস ছাড়া হয়ত আজকের এই চকোলেট বিপ্লব সম্ভব হত না। ... ...
এরপরের ব্যাপার তো ইতিহাস! বিগত দুশো বছরে শ্যাম্পেনের ডিমান্ড এবং প্রোডাকশন বেড়েছে চড়চড় করে। যেমন ১৮০০ সালে বছরে শ্যাম্পেন উৎপাদন হত বছরে তিন লক্ষ বোতলের মত। ১৮৫০ সালের সেটা বেড়ে দাঁড়ায় বছরে দু-কোটি বোতলের মত। আর ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী বছরে ৩৪ কোটি বোতল উৎপাদন হয় শ্যাম্পেন। ... ...
খ্রীষ্টপূর্ব দেড় হাজার বছর আগে থেকে খ্রীষ্টের জন্মের পরে প্রায় আরো এক হাজার বছর পর্যন্ত ভারতের লোহা এবং তার বানানোর জ্ঞান-জন্মি একদম স্টেট অব্ দ্যা আর্ট ছিল। অনেক বিষয়ে ভারতে সেই সব পৃথিবীতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। মিশরের পাবলিক যে সব মন্দির, পিরামিড এই সব বানিয়ে তাতে হেয়ারোগ্লিফিক্স নাকি কি সব দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল, সেই সব বানাতে যে যন্ত্রপাতি ইত্যাদি লেগেছিল তা বানাতে নাকি ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতীয় ইস্পাত। বলা হয়ে থাকে যে সেই সময়ে ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন সভ্যতায় এমন লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় নি যে তারা ভারতের মতন এত উন্নত মানের ইস্পাত তৈরী করতে পারত। সেই সময়কার গ্রীক এবং ল্যাটিন লেখা লিখি পড়লে এটা বোঝা যায় যে এই লোহা-ইস্পাত ইত্যাদির ডিটেলস্ সম্পর্কে তারা বেশ অজ্ঞই ছিল। অবশ্যই তারা জানত কি ভাবে লোহা-ইস্পাত ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু কি ভাবে লৌহ আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাষণ করে তার থেকে ইস্পাত ইত্যাদি বানাতে হয় সেই সম্পর্কে তারা তেমন কিছু জানত না। ... ...
এই লৌহস্তম্ভ রয়েছে দিল্লীর কুতুব কমপ্লেক্সে। বর্তমানে বললাম এই জন্যই যে, এই স্তম্ভ দিল্লীতে চিরকাল ছিল না। মালটা প্রথমে কোথায় ছিল সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে - তবে মোটামুটি সব বিজ্ঞরা আজকাল এই সিদ্ধান্তে এসে পোঁছেছেন যে, এই স্তম্ভ প্রথমে খাড়া করা হয়েছিল বর্তমান উদয়গিরি-তে, ওই ৪০০-৪৫০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ। তারপর সেখান থেকে দিল্লীতে আসে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই স্তম্ভ সত্যিই ১৬০০ বছরের পুরানো, তাহলে বছরের হিসাবে দেখতে গেলে দিল্লীতে এর ঠাঁই শেষ আটশো বছরের মত। কিন্তু লৌহস্তম্ভটি ক্ষয়ে যাচ্ছে না কেন? যেখানে আমাদের বারান্দার গ্রীল বছর চারেক রঙ করে মেনটেন না করলে ক্ষয়ে গিয়ে দফারফা, সেখানে আজ প্রায় ১৬০০ বছর ধরে এই লৌহ স্তম্ভ কি ভাবে না ক্ষয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে! এর পিছনের রহস্য কি? কোন বিশেষ ধরণের লোহার ব্যাবহার, নাকি বানানোর বিশেষত্ব, নাকি মৃদু আবহাওয়ার প্রকোপ? ... ...
সেই ১৮৩২ সাল নাগাদ ফ্যারাডে যখন ইলেক্ট্রোমেকেষ্ট্রির জনক হতে যাচ্ছেন তখন তিনি লণ্ডন রয়েল ইনষ্টীটিউটশনে – নিজের প্রথাগত শিক্ষা না থাকায় আত্মবিশ্বাস কিছু কম। তাই তিনি চিঠি লিখছেন হুইওয়েল-কে এই জানতে যে অথোরিটি এই ব্যাপারে কি মনে করে। ফ্যারাডে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিকের জন্য ঠিক কি নাম ব্যবহার করা ঠিক হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ চাইছেন। এই সব চিঠি বাইরে রাখা থাকে না পাবলিক প্রদর্শনীর জন্য। আমাদের প্রোফেসর ট্রিনিটি কলেজের লাইব্রেরীয়ানকে বলে বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। লাইব্রেরীয়ান ভল্ট থেকে আসল চিঠি পত্র নিয়ে সে দেখালেন – সে অনেক চিঠি, সুন্দর করে রাখা আছে। বাঁধানো বইয়ের মত করে পাতায় পাতায় চিঠি গুলো আটকানো আছে। প্রথম দিকে ফ্যারাডের চিঠি এবং শেষের দিকে সেই চিঠির প্রেক্ষিতে হুইওয়েল এর উত্তর। এই চিঠি সব ব্যাখা করছিলেন লাইব্রেরীয়ান, কারণ সেই হাতের লেখা পড়া খুব দুঃষ্কর। এই ভাবেই দেখা গেল ১৮৩৪ সাল নাগাদ প্রথম প্রস্তাব করলেন হুইওয়েল ‘ক্যাথোড’ এবং ‘অ্যানোড’ শব্দের ব্যবহার। আরো বেশ কিছু ক্ষণ সময় কাটালাম – ... ...
অনেক কিছু স্মৃতি উঠে আসছে – ২০০০ সাল অবধি তেমন ভাবে ‘কবিতা’ নিয়ে চর্চা বা ভাবনা হয়ে ওঠে নি। ওই গোঁফ ওঠার বয়সে যা ছড়া/কবিতা লেখে সবাই তেমন কিছু ছাড়া। আর সব প্রচলিত বিখ্যাত কবির কবিতা পড়া – সেই সময় ছিল সমকালীন জয় গোস্বামী টাইপের ইত্যাদি। এমন এক সময়ে পরিচয় হয়ে যায় এক অদ্ভুত ওয়েবসাইটের সাথে – মনে রাখতে হবে তখনো ইন্টারনেট এমন প্রচলিত হয়ে ওঠে নি, ব্রড ব্যান্ড ইত্যাদি তো দূরের কথা – অর্কূট, ফেসবুক, ইউটিউব কিছুই নেই। এমন ভাবে নিরলস কবিতার সাধনা করে যাওয়ার সাইট বিরল। দুই বাংলার অনেক এখনকার চেনা এবং জনপ্রিয় কবি এই সাইটে হাত পাকিয়েছিলেন এখানে। ভাবছি তেমন কারো কারো দের দিয়েই কিছু লেখা যাক টুকটাক। ... ...
অথচ দরজাটা খোলাই ছিল। ছাদ আশ্রয়, দেওয়াল সুরক্ষা দিলে দরজা দিয়েছে গোপনীয়তা। আর সেই সূচনা থেকেই জানালার সাথে মিথ্ হয়ে গেছে অজস্র অলিখিত ও কিছু লিখিত পঙতিমালা। বলা হয় এক ছাদের নীচে বসবাস করলে নাকি সম্পর্ক দানা বাঁধে। সেই পরিবর্তনশীল সম্পর্কের সাথে মানবিক বিক্রিয়ায় কিছু মুহুর্ত তৈরী হয়। তেমনি কিছু মুহুর্ত কবিতার আকারে – যেখানে কাঠের সিঁড়ির সাথে নুপূরধ্বনি অজান্তেই মিশে গেছে ... ...