পৃথিবীতে একটা মাত্র ডাইনোসর আছে যার সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত নাম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে চলে, জীনাস নেম, স্পিসিস নেম - দুটোই একসাথে উচ্চারিত হয়। আজ অবধি আর কোনো ডাইনোসর বিজ্ঞানীমহলের বাইরে এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তার নামের মধ্যেই তার একচ্ছত্রাধিপত্যের পরিচয়, সে ডাইনোসরের রাজা, 'অত্যাচার-সম্রাট' টাইর্যানোসরাস রেক্স। জীনাস Tyrannosaurus, অর্থাৎ অত্যাচারী টিকটিকি, স্পিসিস rex, অর্থাৎ king। স্থলচর মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে টী-রেক্স সর্ববৃহৎ নয়, জাইগ্যানোটোসরের মতো কেউ কেউ তার চেয়ে বড়। কিন্তু আকারটাই তো রাজকীয়তার শেষ কথা নয়। রেক্স ছাড়া টাইরানোসরাসের আরও অনেক প্রজাতি আছে, টাইরানোসরাস বাদেও অনেক বাঘা বাঘা জাত-শিকারী ডাইনোসর আছে। Carcharodontosaurus আছে,Velociraptor আছে। ভেলোসির্যাপটরকে আমরা একরকমভাবে চিনি, 'জুরাসিক পার্ক'-এর র্যাপটর এরাই। এরা সবাই থেরোপড। থেরোপডদের মধ্যে থেকেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও আধুনিক ডাইনোসররা উঠে এসেছিল। এদের একটা শাখা এখনও পৃথিবীতে মজুত আছে। তাদের আমরা বলি 'পাখি'। ... ...
দ্বিতীয় লাইনটি ফলো করলেই নোটিফিকেশানের লিস্টে কারা অন্তর্ভুক্ত জানা যায় শুধুমাত্র মুসলমান শব্দটিকে বাদ দিলেই। যারা জানেন তারা জানেন যে ইমিগ্রান্টস দের মধ্যে শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারীর বিভাজন সংঘপরিবারের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় রাজনীতির উপাদান। নোটিফিকেশানের মাধ্যমে তাকেই আইনী বৈধতা দেওয়া হল, যে নোটিফিকেশনের একমাত্র প্যারামিটার হচ্ছে ধর্মীয় নির্যাতন। যে বিশাল সংখ্যক দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতিত মুসলিম জনগণ জীবনধারণের আশায় ঢুকে পড়ছে ভারতবর্ষে,এখন থেকে সরকারীভাবে তাদের অনুপ্রবেশকারী ঘোষণা করা হবে। কিন্তু যারা শরণার্থী, তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সরকারীভাবে বিবেচিত হলো কি? এই নোটিফিকেশনে তার উত্তর মেলেনা। ... ...
এই গুলিয়ে ফেলা থেকে আরো বড় বিভ্রান্তি জন্ম নেয়। মধ্য যৌনতায় (খেয়াল করবেন, ‘মধ্যলিঙ্গ’ বলি নি) অবস্থানকারী মানুষরা যেহেতু ‘ট্রান্সজেণ্ডার’ এর অংশ, তাই কেউ কেউ সমকামিতা আর অন্তর্বর্তী লিঙ্গকে একসূত্রে ফেলে দেয়। এদের উৎপাতেই ফেসবুকে ‘গে শি-মেল হিজড়ে’ নামের একাধিক পেজ অবস্থান করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সমানাধিকার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকে, কিন্তু সাইটটাকে সাজানো হয় অন্তর্লিঙ্গ মানুষদের ছবি দিয়ে। অন্তর্লিঙ্গ ও সমপ্রেম দুটোই যেহেতু গোঁড়াদের বক্রদৃষ্টির আওতায়, তাই উদারপন্থীরা হিজড়ে ও সমকামীদের এক মঞ্চে বসিয়ে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন। চেতনা উদযাপক লেখায় অনেকে রূপান্তরিত, রূপান্তরকামী, ইউনাক, অ্যাণ্ড্রোজিনাস, বৃহন্নলা সব্বার কথা লিখে যান। বুঝি যে, তাঁরা দরদ দিয়ে লিখছেন, সমবেদনাও জাগাচ্ছেন পাঠকদের মধ্যে, কিন্তু উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে একের সাথে আরেকের পার্থক্য কিছুই বোঝাতে পারছেন না। ফলে ঠেলাগাড়ির ঠেলা খেয়ে সবাই গিয়ে পড়ছে ‘ট্রান্স’ বর্গে। ... ...
ভারতেও অবস্থাটা ছিল একই রকমের ভয়ঙ্কর। ডঃ রিচারিয়ার প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেল। বিশিষ্ট ধান উৎপাদনকারীদের একটি টাস্ক ফোর্স লক্ষ্য করেন যে “উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রচলন গাল মিজ, বাদামি শোষক পোকা, পাতা মারা পোকা, হোর ম্যাগট প্রভৃতি ক্ষতিকর পোকার চরিত্রে পরিবর্তন আনে। বেশিরভাগ বাজারে আসা উচ্চ ফলনশীল জাতের মেজর পেস্ট দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে যাতে করে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ অবধি ফসলের ক্ষতি হতে পারে।” বেশিরভাগ উচ্চ ফলনশীল জাত তৈরী হয়েছে টি এন ১ ও আইআর ৮ থেকে এবং সেজন্যই বেঁটে করার জিন ডিজিওগেন বহন করে। এই ক্ষুদ্র জিন ভাণ্ডার বিপজ্জনক রকমের সমরূপতা সৃষ্টি করে পেস্ট ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছিল। বাজারে আসা বেশিরভাগ জাতই উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো জমি, যেগুলি একত্রে দেশের মোট ধান জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ, সেই ধরনের জমির পক্ষে উপযুক্ত নয়। ... ...
প্রসঙ্গ - টাকার খেলা কে কে খেলেছে। আমাদের জানা নেই। তবে টাকার খেলা ছাড়াও অনেক ঘটনাই ঘটা সম্ভব। মামলায় অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে পুলিশের ক্রেডিট মেলে, সরকারি আইনজীবীরও। এই পরিস্থিতিতে সহজে যাকে দোষী প্রমাণ করা যায়, পুলিশের তাকেই পছন্দ হবে। ফ্ল্যাটবাড়িতে খুন হয়ে সিকিউরিটি এজেন্সি যদি চাপে পড়ে থাকে, তারা পুলিশকে সাহায্য করবে নিজের স্বার্থেই। আর আদালত এই মামলার রায়ে নিজেই বলেছে - মেয়েদের উপর আক্রমণ বেড়ে চলেছে, বহু দোষী ছাড়া পেয়ে যায়, সমাজ সুবিচার চায়, তার আকুতিতে সাড়া দেওয়ার দায় আছে আদালতের, ধনঞ্জয়ের শাস্তিবিধান হয়েছে এইসব বিবেচনা করে। অর্থাৎ যে-খেলা এই মামলায় চলেছে, তা এই সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লজিকের দৈনন্দিন খেলা। ধনঞ্জয়ের জন্য বিশেষ করে এবং অর্থব্যয় করে এর আয়োজন হয়েছিল এমন নাও হতে পারে। ... ...
এখানেই এই উপাখ্যান শেষ হতে পারত। কিন্তু মানুষের মৃত্যর পরও তার ছায়া থেকে যায়, আর উপসংহারের পরেও থেকে যায় পরিশিষ্ট। ২০১৩ সালে শঙ্কর কিষ্ণরাও খাড়ে বনাম স্টেট অফ মহারাষ্ট্র মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার পূর্বতন মৃত্যুদন্ডের সিদ্ধান্তগুলি খতিয়ে দেখে। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সেই মামলার রায়ের কিয়দংশ উদ্ধৃত করা হয়। এটা কোনো আপতিক ঘটনা নয়, যে, আমরা আগের পরিচ্ছেদে ওই মামলার যেদুটি অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টও উদ্ধৃত করে সেই দুটি অনুচ্ছেদ থেকেই। এবং তারপর এক লাইনে মন্তব্য করা হয়, “Prima facie, it is seen that criminal test has not been satisfied, since there was not much discussion on the mitigating circumstances to satisfy the ‘criminal test’.” খুব ছোটো করে এর মানে এইরকম, যে, ধনঞ্জয়ের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেই পারিপার্শ্বিকতাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা দন্ডদানের পরিমাপ বাড়ায় (অ্যাগ্রাভেটিং সারকমস্ট্যানসেস)। যাতে দন্ডদানের পরিমাপ কমে, সেই পারিপার্শ্বিকতা (মিটিগেটিং সারকমস্ট্যানসেস) কে দেখা হয়নি। দার্শনিকভাবে দেখলে, এও এক পূর্বনির্ধারিত আখ্যানের একরকম স্বীকৃতি, যার চাপে কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে উপেক্ষা করা হয়, আর কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে দেওয়া হয় অধিকতর গুরুত্ব। ... ...
এবং এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় এই কাহিনীর অসঙ্গতি। সলিল বসুচৌধুরির সঙ্গে এই অভিযানের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন ছাতনা থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর প্রণব চ্যাটার্জি। তিনিও আদালতে এই অভিযানের একটি বর্ণনা দেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ীও তাঁরা ধনঞ্জয়ের বাড়ি পৌঁছন মাঝরাতের পরে এবং পাশাপাশি তিনটি বাড়ি সার্চ করেন। ধনঞ্জয়কে কোথায় পাওয়া যায়? তাঁর বর্ণনানুযায়ী একটা খড়ের চালের বাড়ির সামনে ছিল একটা খড়ের চালের বারান্দা। ধনঞ্জয় লুকিয়ে ছিল সেই বারান্দার ছাদে। বারান্দার ছাদ আর খড়ের গাদার পিছন নিশ্চয়ই এক জায়গা নয়। তাহলে ধনঞ্জয়কে গ্রেপ্তার আসলে কোথায় করা হয়েছিল? যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসা করলে কি আসল উত্তরটা পাওয়া সম্ভব? আদালতে ধনঞ্জয়কে এই প্রশ্নটি করা হয়েওছিল, যে, সে কি জ্যাঠার বাড়ির খড়ের গাদার পিছনে লুকিয়ে ছিল এবং সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে? ধনঞ্জয় তার উত্তরে স্পষ্ট করেই জানায়, সেটা ঘটনা নয়। সে ছিল তার বাড়িতে। তার স্ত্রীও ছিল সঙ্গে। ... ...
বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে। ... ...
আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আগমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিখে ফেলা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে রামধনির খারিজ হওয়া বয়ান হুবহু মিলে যায়। এই মিল আপতিক বা সাজানো হওয়া কঠিন, কারণ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের পক্ষে বহুদিন পরে রামধনি আদালতে গিয়ে কী বলবেন সেটা আন্দাজ করা অসম্ভব। যেটা সম্ভব, সেটা হল, রামধনি হয়তো আদালতে সত্যি কথাই বলছিলেন। এটি অবশ্য একটি সম্ভাবনাই, কিন্তু সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এবং আদালতে সংবাদপত্র প্রসঙ্গটি আসেইনি। রক্তের দাগের প্রসঙ্গটি অবশ্য এসেছিল। হাইকোর্টে ধনঞ্জয়ের কৌঁসুলী প্রশ্ন তোলেন, যে, এই নৃশংস খুনের(হেতালের শরীরে ২১ টি আঘাত ছিল) পরেও কোনো সাক্ষীই কেন ধনঞ্জয়ের হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে কোনো রক্তের দাগ দেখতে পায়নি? সরকারপক্ষের আখ্যানে এর কোনো উত্তর নেই। বিচারক রায়দানের সময় এই ধাঁধার সমাধান করেন এই ভাবে, যে, যেহেতু খুনের আগে ধর্ষণ হয়েছে, তাই খুনের সময় ধনঞ্জয়ের শরীরে জামাকাপড় ছিলনা। এবং সেখানে রক্তের দাগ লাগার তাই কোনো প্রশ্নই নেই। ... ...
তো, আমারো কি এখন থেকে পরিবারের কথা মেনে সাবধান হওয়া উচিৎ? আমাকে কতল কাল কখন, কোথায় হবে? ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার সময় রাতের বেলা গলির মুখে কি ঘাপটি মেরে থাকবে কোনো মৌলবাদের নাতি? নাকি সকাল, সকালই নূরানী লেবাসের চাপাতিতন্ত্র বাসার সামনে ঝাপিয়েঁ পড়বে আমার ওপর? অথবা তারা আমার শোবার ঘরেই সদলবলে ঢুকে কুপিয়ে জিহাদ কায়েম করে গেল, এমনো তো হতে পারে? তারা আমার গলা কাটার আগে আমি কি তাদের মুখগুলো একনজর দেখার সময় পাবো? আর অনিবার্য প্রশ্ন এই, তখন কি হবে আমার অনুভূতি? ... ...
বাবা একদিন মরে পরে রইলেন চেয়ার মধ্যে। যে কাঠের চেয়ারটায় রোজ বসে থাকতেন বারান্দা, একদিন দেখা গেলো মাথাটা হেলে আছে চেয়ারের কাধে, মুখ দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে…। খুব বড় আয়োজন করে বাবার কুলখানি করলেন বড় ভাই। আমাদের ডালডা আর তেলের কারখানাটা বড় ভাইই চালান। ভাবী আমাদের এখানে থাকতে চান না বলে উত্তরায় ফ্ল্যাট কিনে ভাই-ভাবী সেখানেই থাকেন। এই বাড়িতে এখন আমি একা। পুরো একটা বাড়িতে একা থাকতে আমার একটুও একা লাগে না। কেন লাগে না জানি না। স্বপন যে ঘরটাতে ফাঁস দিয়েছিল সেঘরটা তালা দেয়া থাকে। মাঝে মাঝে খুলে ভেতরে ঢুকি। চেষ্টা করি স্বপনের কোন অস্তিত্ব অনুভব করতে। আজ ২২ বছর স্বপন নেই! মণীশ জ্যাঠার যেমন বয়স আটকে আছে মহাকালের ফ্রেমে, স্বপনও সদ্য যৌবনের চেহারা নিয়ে এ্যালবামে আটকে আছে। কি অদ্ভূত, মণীশ জ্যাঠা এ বাড়ির মায়া আজো কাটাতে পারলেন না কিন্তু স্বপনকে কতদিন প্রত্যাশা করেছি শুধু একবার দেখবো…। কিন্তু স্বপন যে দূর কোন দেশের অধিবাসী। স্বপন চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি…। ... ...
তাই সবকিছুর পরেও এই বই সেই মানুষদের গল্প বলে, সেই ভূখণ্ডের গল্প বলে, আধিপত্যবাদের নিষ্পেষণে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও যা তুমুল জীবনের উদযাপনে বাঁচতে চায়। গ্রামের স্থানীয় মসজিদে গিয়ে সৌদির ক্যাম্প থেকে ফেরা কট্টর ইসলামিস্ট ছোকরা যখন চোখ-মুখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা’ (শ্রেষ্ঠ কে?) তার উত্তরে কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ চেঁচিয়ে ওঠে না, বরং একে অন্যের মুখ চাওয়া-চায়ী করে। চেঁচাবে কি করে? আরবি জানলে তো! ছেলেপুলের কাছে তুমুল প্যাঁক খেয়ে চোখমুখ লাল করে সেই ইসলামিস্ট বুঝিয়ে দেয় যা এই স্লোগানের উত্তরে আল্লাহু আকবর বলাটাই নিয়ম। তারপর আব্বার চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা”। দুই একজন মিনমিন করে বলে ওঠে ‘আল্লাহু আকবর’। প্রোগ্রাম সুপারফ্লপ হবার পর এক বছর ধরে সেই ছোকরা আওয়াজ খেতে থাকে গ্রামের অন্য ছেলেপুলের কাছে। ততদিনে কিন্তু ধর্মের হাত ধরে রেজিস্টান্স পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। পণ্ডিতদের মাস এক্সোডাস ঘটে গেছে, শ্রীনগরের রাস্তা উজিয়ে উঠছে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিখোঁজ এবং ঘরছাড়া। কিন্তু জীবন যেখানে যেটুকু চেটেপুটে নেবার, নেবেই। আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে পিকনিক করার নাম-ই কাশ্মীর, বারবার মনে করিয়ে দেয় এই বই। ... ...
দিল্লী থেকে ফিরে এসেছি অনেকদিন হয়ে গেল। এর মধ্যে আমেরিকায় গে ম্যারেজ লিগাল হয়ে গেছে। সামাজিক সাম্যের লক্ষ্যে একটা বড় পদক্ষেপ। কিন্তু অনেকেই বলছেন যে এটা একটা আপাত সাম্য, হেটেরোনর্মাটিভ সমাজের ছুঁড়ে দেওয়া রুটির টুকরো। অনেকে মনে করছেন, সম্পর্কের বহু রঙ কে অস্বীকার করে এটাও একধরনের চাপিয়ে দেওয়া কপি পেস্ট। আমেরিকার সুপ্রীমকোর্টের রায়ের শেষ অনুচ্ছেদ পড়লে তাদের বক্তব্যকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না। ওই রায়ে বলা হচ্ছে, “No union is more profound than marriage, for it embodies the highest ideals of love, fidelity, devotion, sacrifice, and family. In forming a marital union, two people become something greater than once they were.” অর্থাৎ, বিবাহের থেকে গভীর আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার প্রশ্ন, কি করে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি ঠিক করে দিতে পারে কোন সম্পর্কটা প্রোফাউন্ড আর কোনটা নয়? কোন নিক্তিতে মাপা যেতে পারে, সুখের ভালবাসা কার জন্য বেশী গভীর, আমার জন্য না কি তার নতুন প্রেমিকের জন্য? অবয়বহীন ভালবাসার কি গভীরতা মাপা যায়? যারা ভাবতে পারেন “বিয়ের প্রয়োজন যার হয় তার হয়, আমার হয় না”, তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা মাপতে যাওয়ার আমরা কে? ... ...
খল (নায়িকা)- সাধারণত নায়কের বড় পিসেমশাইয়ের ছেলের বা আপন জামাইবাবুর বা ভালোমানুষ ভাইয়ের খারাপ মানুষ বউ বা নায়কের প্রাক্তন প্রেমিকা যিনি ওই বড়লোকবাড়িতেই থাকেন বা সকালে উঠেই দাঁত মাজতে মাজতে চলে আসেন। বৌদির রান্নায় বেশি নুন ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার মত জিনিয়াস আইডিয়াগুলো যাদের মাথা থেকে বেরোয় কিন্তু স্ত্রৈণ স্বামীরা এক্সিকিউট করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে ধরা পড়ে যান তারপর এনাদের নির্দেশেই পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চান। হাপুশ কেঁদে স্বামীকে জেলের লপসি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান। এরপর কয়েকদিন চুপচাপ থেকে আবার উক্ত কাজগুলো শুরু করেন। ... ...
বিজ্ঞানের জগতে রাজনীতির অস্তিত্ত্ব কতটা তীব্র ও হিংস্র তা অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই জানেন। পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার – এসব যে বিজ্ঞানমহলেও কোন অংশে কম নয় তা-ও এখন আর কোন খবর নয়। কিন্তু আবার ভেবে দেখতে অনুরোধ জানাই – একজনকে ‘চুরি’র দায়ে গণধোলাই দিয়ে চুরি বন্ধ করা যায় কি? টিম হান্টের সঙ্গে যা যা হয়েছে, তার অন্যায় মন্তব্য সত্ত্বেও বলতেই হচ্ছে যে সেটা মূলতঃ ‘মব লিঞ্চিং’ – একটা সহজ টার্গেট খুঁজে নিয়ে সস্তার বিপ্লব। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোন উদ্দেশ্য, পূর্ব পরিকল্পনা বা নির্মিতি ছিল কি না তা নিশ্চিত জানা না থাকলেও এই সস্তায় বাজিমাতের প্রবণতাকে অবশ্যই ধিক্কার জানানো উচিৎ। দিস ইজ নট সায়েন্স। ... ...
কেইএম হাসপাতালের প্রাক্তন মেট্রন দুর্গা মেহেতা-কে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি ও তাঁর অন্যান্য নার্সরা চাননি অরুণাকে নিষ্কৃতিমৃত্যু দেওয়া হোক l উত্তরে তিনি টিভির পর্দায় জানালেন- আমাদের অধিকার মানুষকে বাঁচানোর, হত্যা করার নয় l অরুণা আমাদেরই একজন ছিল l তুমি নিশ্চয় চাইবে না তোমার কোনো প্রিয়জনকে এভাবে হত্যা করা হোক l (We have right to give life to anybody, not the right to kill anybody. She was one of us. You don’t want your family member to be killed.) এ আবেগসর্বস্ব বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া কোনো যুক্তিনির্ভর মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয় l তবে, অরুণার শায়িত শরীরের সাথে আবেগ ব্যতিরেকে আরও টুকরো টুকরো কিছু বাস্তবতা জড়িয়ে ছিল l নার্সরা জানান- অনেক বছর আগে জন্মদিনে একবার অরুণাকে মাছের টুকরো ভেঙে খাওয়ানো হয়েছিল l অরুণা নাকি সেদিন খুশি হয়েছিল খুব l তার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠেছিল l বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল আপাত-ভাষাহীন চোখ l মনে পড়ে যাচ্ছে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবির আনন্দভাই-এর কথা, যে একমাত্র মুন্নার প্রশ্নের উত্তরেই ‘পলক ঝপককে’ জবাব দিত, আর বাকিদের কাছে সে ছিল স্রেফ একটা ‘কেস’ l ... ...
আঠারো শতকের শেষভাগে সামান্য কয়েকটা লেখায় বিক্ষিপ্ত প্রয়োগ দেখা গেছে। তবে সেটাকে ‘হোমোসেক্সুয়ালিটি’ না বলে ‘হোমো-ইরোটিসিজম’ বলা যায়, যেটা সমকামিতার একটা ‘সাময়িক’ সংস্করণ। দুই পুরুষ বা দুই নারীর মধ্যে ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণমাত্র। ‘ইন্দিরা’তে বঙ্কিমচন্দ্র ইন্দিরা ও সুভাষিনীর মধ্যে এরকমই একটা সম্পর্ক দেখিয়েছিলেন। পরবর্তী যুগে কবিতা সিংহের একটা গল্পে একইভাবে দুই নারীর মধ্যে ‘হোমো-ইরোটিসিজম’ এসেছে। সমরেশ মজুমদার একটি উপন্যাসে হালকভাবে প্রসঙ্গটা ছুঁয়ে গেছেন। ষাটের দশকে হাংরি মুভমেণ্টের সময় অরুণেশ ঘোষের ছোটগল্প ‘শিকার’ ছাড়া আর কোনো নথি চোখে পড়ে নি। একটা ব্যাপার বেশ বোঝাই যাচ্ছে, যৌনতা বস্তুটাই যখন মারাত্মক ট্যাবু ছিল তখন ‘অপর যৌনতা’ নিয়ে কাহিনী নির্মাণ কল্পনারও দূর অস্ত। তাছাড়া সাহিত্যিকরা উপাদান পাবেনই বা কোত্থেকে? ... ...
ইতিমধ্যে মাসখানেক আগে আরো একটি হত্যাকান্ড ঘটে গেছে তুলনায় নিঃশব্দে। পাকিস্তানের করাচীতে নাস্তিকতার শহিদ হয়েছেন সমাজকর্মী সাবীন মাহমুদ। হত্যার মোডাস অপারেন্ডি এবং চরিত্র অনন্ত বা তার আগে ওয়াশিকুর-অভিজিত প্রমুখদের চেয়ে খুব পৃথক কিছু নয়। অথচ তেমন করে কিছু লেখালেখি হয়নি এ নিয়ে। তার কারণ কি শুধুই সাবীন পাকিস্তানি বলে? সাবীনকে নিয়ে তেমন ঢেউ ওঠেনি আমাদের এই বাংলায় বা বাংলাদেশে, এটা ঘটনা। কারণটা শুধুই পাকিস্তান কি? ... ...
জন ন্যাশ সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন না, অর্থনীতিবিদ-ও নন, তিনি গণিতজ্ঞ। কিন্তু সেই গণিতের ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম, মুশকিলটা হল অধিকাংশ মানুষ এই ব্যবহারিক গুরুত্বটাকে মাপেন লাভ-ক্ষতির হিসাবে আর তাই মনে হয় ন্যাশ সাম্যাবস্থা একটা 'ইউটোপিয়ান কনসেপ্ট'। যারা সিলভিয়া নাসারের লেখা জীবনীটি পড়েছেন বা রাসেল ক্রো অভিনীত সিনেমাটি দেখেছেন তাঁদের জন ন্যাশের জীবনযুদ্ধ নিয়ে নতুন করে কিছু শোনানোর দরকার নেই। যারা পড়েন নি বা দেখেন নি তাঁরা গুগল বা উইকি সার্চ করতে পারেন 'জন ন্যাশ' বা 'আ বিউটিফুল মাইন্ড' শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। আমি কিন্তু জন ন্যাশের জীবনসংগ্রামের কথা নিয়ে কিছু লিখছি না, বুদ্ধিজীবী ন্যাশের দর্শন এবং চিন্তাধারাকে বিদ্বজনরা কি ভাবে ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছেন সে নিয়ে কিছু বলাই আমার উদ্দেশ্য ... ...
প্রাচীন ভারতে সমকামিতা গর্হিত ছিল না। কিন্তু মানুষ ধীরে ধীরে যৌনতার প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠল। এই পরিবর্তনের প্রমাণসাপেক্ষ বিবরণ পাওয়া যায় বৈষ্ণব সন্ন্যাসী অমর দাস উইলহেলমের ‘ইণ্ডিয়াস স্লো ডিসেণ্ট ইনটু হোমোফোবিয়া’ বইতে। লেখক ‘গে অ্যাণ্ড লেসবিয়ান বৈষ্ণব অ্যাসোসিয়েশন’ (GALVA) এর প্রতিষ্ঠাতা। ভারতীয় বংশোদ্ভুত লেখিকা-গবেষিকা রুথ বানিতা একাধিক বইতে বিশদভাবে একই বক্তব্য রেখেছেন। উইকিপিডিয়াতে বইয়ের তালিকা দেখে নিতে পারেন। ভানিতার সাথে যুগ্মভাবে ‘সেম সেক্স লাভ ইন ইণ্ডিয়াঃ রিডিংস ফ্রম লিটারেচার অ্যাণ্ড হিস্ট্রি’ বইয়ের সম্পাদনা করেছেন ইতিহাসের অধ্যাপক সেলিম কিড়ওয়াই। তিনি প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি স্বঘোষিত সমকামী । রামদেবের ‘হোমো-বাদ’এর উপর ‘আস্থা’শীল লোকজন বোধ হয় এঁদের নামই শোনে নি। কিন্তু এঁদের দৌলতে এখন অনেকের কাছেই প্রতীত যে, সমকামিতা ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ‘হেয়ারলুম’ । এছাড়া ছোটখাটো অগুনতি লেখায় প্রাচীন ভারতে ও প্রাচীন সাহিত্যে সমকামিতার কাঁড়ি কাঁড়ি উদাহরণ পড়েছি। ... ...