শহরে আমাদের দু’কামরার বাড়িটাকে মা-বাবা বাসা বলে। হ্যাঁ তাই তো, চিলতে উঠোনের নিরিবিলি ছোট্ট এই বাড়িটা কীভাবে আমাদের বাড়ি হবে? বাইরবাড়ি নেই, দুপুরের ভাতঘুম ফাঁকি দিয়ে জেঠি ঠাকুমাদের আড্ডা নেই, আমার খেলার কোনো সঙ্গী নেই আর নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়। তাঁতঘর থেকে তাঁতিদের গানের মত ভেসে আসা সুর দূরে থাক, এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে একটু আধটু কারো কথার আওয়াজও পাওয়া যায় না। আর তা যাবেই বা কী করে? এখানে সব বাড়িই প্রাচীর ঘেরা যে। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ কিস্তিতে এমপাওয়াপাওয়া সমতল-অঞ্চল দিয়ে চলার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
চাঁদরাত কথাটা খুব মিষ্টি। মায়ের ভালোবাসার মতন মিষ্টি। আলতো করে চোখ বুজলাম। আমি আমাদের বর্ধমানের গোলাপি বাড়িটার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে। পুরো পাড়াটা সবুজ নীল টুনি বাল্বে মায়াময়। ক্লাবের সামনে প্যান্ডেল... সুভানসাহেবের বাড়ি সামনেও প্যান্ডেল। ছোটো ছোটো বাচ্চারা নতুন জামা পরে সেজে গুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে ছোট্ট টাকার ব্যাগ। তাতে আছে জমানো টাকা। কাল অনেকে ঈদ সালামি পাবে। ... ...
জামিনে মুক্ত বারোটি বর্ণহিন্দু পরিবারের পুরুষ, মহিলা, এমনকী নাবালকরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে সুরেখা, সুধীর, রোশন, আর সতের বছরের প্রিয়াঙ্কার ওপর। ভাইয়ালাল সেই সময় বাড়ির বাইরে ছিলেন, বাঁচাতে পারেননি তাঁর পরিবারের কাউকে। বাড়ি থাকলেও বাঁচাতে পারতেন বলে মনে হয় না। হয়ত নিজেই বাঁচতেন না। বর্ণহিন্দু মহিলারা টেনে বের করে আনে সুরেখা, সুধীর, রোশন, প্রিয়াঙ্কার দলিত দেহগুলি, আর ছুঁড়ে দেয় তাদের পুরুষদের উন্মত্ত বাহুতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে। ... ...
হাতের বাতি দোলাতে দোলাতে পুব-মাথা থেকে শুরু করে বিল্ডিঙের পশ্চিম-মুখো চলেছিল বিল। বারোটার ঘণ্টা শুরু হতে হতেই ও সেই আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে হপস্কচ খেলার ভঙ্গিতে প্রতিটা ঢং শব্দের সঙ্গে কল্পিত ছক লাফাতে লাফাতে পার করল। কেউ দেখলে ভাবত এই মোটা মুচওয়ালা মুশকো জোয়ানটা করছে কী? আর ওর আট বছরের মিয়নো বউ সিমোন দেখলে কী বলত? কে কী বলল বা ভাবল তাতে বিলের ঠ্যাঙা। রাতের অন্ধকার যেমন কিছু ভয় জুটিয়ে আনে, তেমনি অনেক ভান-ভণিতাও ছেড়ে চলে যায়। এই যেমন, রাত একটার ঘণ্টা বাজার সময়, সে যদি পুব দিকে থাকে তাহলে ক্যাপ্টেন বার্কের গ্রে হাউন্ড জ্যাকের মত গলা উপরে তুলে একটা গম্ভীর ডাক ছাড়ে। দিনে দিনে গলাটা জ্যাকের মত সুরে খেলছে। ভাবলেই গর্বে বিলের বুক ভুঁড়ি ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায়। এমনি-ধারা নানান খেলা দিয়ে নিজেকে জাগিয়ে রাখে বিল গেন্স। ... ...
উফফ্ দু-দন্ড যে একটু শান্তিতে দিন কাটাবো তার যো নেই। হতভাগাগুলো আবার “দাও দাও” আবদার শুরু করেছে। হ্যাঁ রে অনামুখোর দল, এই যে তোদের কথামত ৩৭৭ সরালুম, তাতেও তোদের আশ মিটল না। না, মানে আমরা সরিয়েছি তা নয়, সুপ্রীম কোর্ট সরিয়েছে, কিন্তু আমরা কি তাতে কিছু বলেছি? হুঁ হুঁ বাবাসকল, এ হল অমৃতকাল, সবকা বিকাশ না করে ছাড়ব না। এই যা, বাবাসকল বলে দিলাম, তোদের তো আবার কে বাবা আর কে মা তার ঠিকঠিকানা নেই। আজকে দাড়িগোঁফওয়ালা শাড়ি পরে ঘুরছে তো কাল আরেকজন মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল চলতে থাকলে আমরা কী আর তাল রাখতে পারি? যাক গে, যাক। যে কথা বলছিলাম। ৩৭৭ গেল কি গেল না, তোরা এসে উপস্থিত হলি বে করব বায়না নিয়ে। বলি বিয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া না নোটবন্দী যে চাইলেই করে ফেলবি? এ হল অতি গুরুতর বিষয়, সমাজের হিত, দেশের ভিত, আর ঐতিহ্যের মিথ সব এতে মিলেমিশে আসে। অমন বিয়ে করব বললি আর অমনি আমরা অনুমতি দিয়ে দিলাম, এ আবার হয় না কি? ... ...
সাহিত্যের ভাষা ভৌগোলিকভাবে যেখানকারই হোক না কেন তা তো কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই চলবে। সুতরাং, আমি যেখানেই থাকি, আমার মাতৃভাষা যাই হোক, এই ছোঁয়া ঠিক লাগবেই। কারণ, একমাত্র একজন লেখকই অনুসন্ধান করেন আর কোথায় কি লেখা হচ্ছে। ... বছর কুড়ি আগে কলকাতায় এই সাক্ষাৎকারটি দেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। ... ...
কী ঘটেছিলো সেই রাতে কুপওয়ারা জেলার এই জনবিরল গ্রামদুটিতে ? অভিযোগ করা হয়েছে, কাছাকাছি কোথাও সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে রাতের বেলা রাজপুতানা রেজিমেন্টের সামরিক উর্দিধারীরা তল্লাসির নামে ঘিরে ফেলে গোটা গ্রাম। সাধারণ আবালবৃদ্ধবনিতাকে ঘেরাও করে রেখে চালানো হয় নির্বিচার ধর্ষণ। বৃদ্ধা থেকে বালিকা প্রায় একশ কাশ্মিরী নারী এই লালসার শিকার হয়। পরবর্তীতে মেয়েরা স্বাভাবিক ট্যাবু ঝেড়ে বার বার অভিযোগ করা সত্ত্বেও সৈন্যবাহিনীর অস্বীকার করাকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নেওয়া হয় এবং এই অভিযোগকে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ... ...
"যে অংশটুকু বাকি ছিল এই কাহিনির, লিখে গেলাম। এই কাহিনিকে মরে যেতে দিও না। আলো হাতে, প্রেম বুকে নিয়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে, হৃদয়ে সাহস নিয়ে আমরা সবসময় মানুষের পাশে পাশেই থেকেছি। তাপিতকে শান্ত কর। ভ্রান্তকে পথ দেখাও আলমিত্রা। তোমার কাছে এসে যেন লোকে শান্তি পায়। মাছি হয়ো না, মৌমাছি হও। তুমি স্বেচ্ছায় আমার পথ বেছে নিয়েছ। আমি চলে যাবার পর থেকেই শুরু হোক তোমার পথ চলা। শেবার রানির বাকি কাহিনি লিখে গেলাম। রানির মত হও। একাকী, সাহসী, ব্যতিক্রমী, নির্জন । " ... ...
ভাষা তার নিজের সুবিধার্থেই অর্থের সীমা সম্প্রসারণ করে, প্রয়োজনের চাপে নতুন শব্দও নির্মাণ করে, প্রয়োজনের তাপে অশুদ্ধ শব্দকে শুদ্ধিকরণ করে নেয়। ব্যকরণের আদালতের রায় যাই হোক না কেন ‘সাহিত্যিক’ আর ‘ভাষাভাষী’ উভয়টির প্রয়োগ নিয়ে যেমন আজ আর কেউ প্রশ্ন করবেন না, তেমনি আদালতের নিয়োগপ্রাপ্ত সম্মানিত তদাকরকারীদের রায় যাই হোক না কেন, অন্যতম শব্দটির অর্থের যে সম্প্রসারণ ঘটে গেছে, তাকে আর পুরনো সীমায় বেধে রাখা যাবে না। কী ক্ষতি ‘অন্যতম ব্যক্তি’ বলতে ব্যক্তির বেলায় যেমনটা আমরা বুঝি, ‘অন্যতম গ্রন্থ’ বলে ব্যক্তির কীর্তিকে তেমনি আমরা বোঝাতে পারি? ভাষা এইভাবেই নিয়ত তার অর্থ সম্প্রসারণ করে চলে। বরং বাংলা ভাষার সত্যিকারের বিপদ যদি কোনদিক দিয়ে থাকে, সেটা সমাজের উচ্চক্ষেত্রগুলোতে তার চর্চা না করার ফল। শৌখিন রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা দিয়ে তাকে সামান্যই রক্ষা করা যাবে। আমরা কি খেয়াল করছি রবীন্দ্র-নজরুলের ব্যবহার করা শব্দগুলোও তরুণতর প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট ঠেকছে, ক্রমে তারা ধূলিমলিন হয়ে পড়বে? জায়গীর বাদ যাক, কেন না প্রথাটাই নেই, কিন্তু বাংলাভাষা এখন শুধুমাত্র আটপৌরে জীবনেই ব্যবহৃত হচ্ছে, সমাজের-রাষ্ট্রের উচ্চস্থানগুলো থেকে সে কোন রসদ সরবরাহ পাচ্ছে না। উচ্চশ্রেণির সন্তানেরা যদি শিক্ষার প্রধান অংশ ইংরেজিতে সম্পন্ন করেন, আমলাতন্ত্র-সামরিকতন্ত্র-বনিকতন্ত্র সর্বত্র যদি ইংরেজিই দাপুটে ভাষা হয়ে থাকে, মায় আদালতে পর্যন্ত যদি প্রায় সমুদাংশ সওয়াল-জওয়াব মাতৃভাষায় না হয়; তো বাংলার ওপর ইংরেজির প্রভাব শুধু হুকুম বলে নড়ানো যাবে না, তার আগেই অজস্র হাকিম সরে যাবেন। কিন্তু যদি কোন হাকিমের হুকুমে যদি এই আদেশ কার্যকর করা যায় যে, বঙ্গদেশে আজ থেকে সরকারি-বেসরকারী কোন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ না দর্শিয়ে বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় পরীক্ষা নেয়া যাবে না, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো কর্মক্ষেত্রে-আদালতে সাধারণ মানুষের অবোধ্য কোন ভাষায় আলাপ করা যাবে না, সকল পাঠ্যগ্রন্থ অবিলম্বে বাংলায় প্রণয়ন করা হবে -- হুকুম করে ভাষাদূষণ বন্ধ করতে হবে না, আপনাতেই সেখানে প্রাণের স্রোত বইতে থাকবে। ... ...
কয়েকবছর হল, জীবনের দুটো নিয়ন্ত্রককে আমরা বরণ করে নিয়েছি বেশ। প্রথমটা ছোট্ট একটা স্ক্রিন বসানো রবারের ব্যান্ড। কব্জিতে তা এঁটে রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, স্নান করার সময়ও খোলা নিষ্প্রয়োজন। পোশাকি নাম ফিটনেস ট্র্যাকার। আপনার চলন, শয়ন, স্বপন-বপন সব কিছু সেই ১৫ গ্রামের ছোট্ট ডিভাইস মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। স্মার্ট ফোনের লেজুড় হয়ে কল, এসএমএস, হোয়্যাটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন তো পাঠাবেই, ডায়ালের তলায় রাখা ইনফ্রারেড আলো আপনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপবে, হৃৎস্পন্দন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে। ... ...
গত শুক্রবার বাবা মারা গেছেন। মেডিকেল কলেজ নন-কোভিড দের জন্য বন্ধ করে দেওয়ায় বাবার চিকিৎসাও বন্ধ ছিল। গরীবের তো অ্যাপোলো নেই৷ ৪ দিন হস্পিটালে ভর্তি ছিল বাবা। কিন্তু তাতে রোগের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিলো না। ভেন্টিলেশনের পেশেন্টের ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট বেসরকারি ল্যাব থেকে যতদিনে আসার কথা তার আগেই পেশেন্ট মারা যাচ্ছে। রাত ১২ টায় একটা হস্পিটাল পেশেন্টকে বের করে দিতে চায় ভেন্টিলেশন নেই বলে। না, কোনোরকম ব্যবস্থা করে দিতেও তারা চায়নি। অবশেষে ৫ ঘন্টা টানাপোড়েনে ভর্তির ব্যবস্থা হয় অন্য হস্পিটালে। ... ...
এক ছিল শান্ত , নিরিবিলি পাড়া। সেই পাড়াতে একটা বাড়িতে থাকতাে একটি পরিবার। পরিবারে ছিল দাদু , দিদা, বাবা, মা আর দুই বিচ্ছু ছেলে মেয়ে – টগর আর রবি। বিছুদুটোর খেলার সাথী ছিল একটা কুকুর টম আর একটা বেড়াল মিনি। ওরা সারাদিন টম আর মিনির সাথে খেলে বেড়াত। একদিন ওরা ঠিক করল টম আর মিনিকে ঘােরাতে নিয়ে যাবে। বড়রা বারবার ওদের মানা করল। দাদু বলল, “তােরা ওদের সামলাতে পারবি না।” মা বলল , “রাস্তার কুকুরেরা ওদের তাড়া করবে।” কিন্তু ওরা শুনলে তাে! ... ...
– জেঠিমা, তার মানে পুতুল দিদা যে এমন হৈ চৈ করে, সেটা মনের দুঃখ ঢেকে রাখার জন্য? এসব এত কিছু তো জানতামই না। – মানুষের মনের খবর কেই বা রাখতে পারে বাবু। – জেঠিমা, তুমি মোহনবাগানের গল্প বলতে গিয়ে বলেছিলে, স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন কুমুদিনী। পুতুলদিদাও কি ভেঙে পড়েছে? – এসব কথা তো আর কাউকে জিজ্ঞেস করা যায় না। বুঝে নিতে হয়। তবে আগের পিসি আর এখনকার পিসির মধ্যে কিছুটা তফাৎ তো আছেই। তোর জেঠুও ঐজন্য সবসময়ে দেখিস না পিসির সঙ্গে টরেটক্কা করে যায়? আগের পিসিকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আর রইল কুমুদিনীর কথা। নিজের কথা তিনি নিজেই বলে গেছেন। ... ...
মাসিদোনিয়াতে তাঁরা জনসংখ্যার পঁচিশ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি বললেন জনশ্রুতি এই যে মাসিদোনিয়ান সরকার তাঁদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আলবানিয়ান ভাষা শেখানো হয় না, ছেলে মেয়েদের আলবানিয়ান নাম দেওয়া নিষিদ্ধ, সরকারি দফতরে, আর্মিতে চাকরি জোটে না। ক্লিনটন সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিন্তু আপনাদের জানাতে পারি এটি সম্পূর্ণ অসত্য। মুশকিল হলো প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি এমন সব রাজনৈতিক ইসু তুলে ধরলেন যার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা ছিল না। ... ...
দেশের রাজার ভারী অসুখ করেছে। মুখে হাসি নেই, চোখের তলায় কালি, মাঝেমাঝেই কাতরে কাতরে ওঠে আর বলে, ‘ও হো হো, আমি আর বাঁচব না।’ আমেরিকা থেকে সাহেব ডাক্তার এল। টিপেটুপে দেখে বলল, ‘মহারাজ, বেদনাটা চিনচিন না ঝনঝন, উপর থেকে নীচে, না পাশ থেকে মাঝে?’ রাজা রেগে গিয়ে বলল, ‘সবই আমি বলে দিলে তোমাকে হাওয়াই জাহাজের টিকিট কেটে আনা হল কেন হে?’ ... ...
বাংলার বৃহৎ সংবাদপত্র নিন্দা করেছে। আমাদের ভয় ছিল সুভাষ ভৌমিক আবার আসবেন কি না? সুভাষ ভৌমিক যথারীতি এলেন। যাঁরা লিখেছেন তাঁদের ধন্যবাদ দিলেন। বাকিদের সাতদিন সময় দেওয়া হলো। এরপরের অভিযান গড়িয়াহাট মোড়। সেখানেও সুভাষ ভৌমিক সব হাজির। সঙ্গে শ্রী লেদার্সের মালিক সত্যব্রত দে সহ বহু লেখক শিল্পী। এরপরের অভিযান রবীন্দ্র সদন, পার্ক স্ট্রিট এলাকা। পরের বছর ১৯ মে বেলেঘাটা এলাকায়। সেখানেও ছিলেন। আসেন ২০০৫-এর পয়লা বৈশাখ উদযাপনে আকাদেমির সামনে। শৈলেন মান্না পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কেন আসেন? সুভাষদার জবাব ছিল, বাংলা ভাষা না বাঁচলে বাঙালি বাঁচবে না। বাঙালিত্ব মরে গেলে ময়দানের ফুটবলও মরে যাবে। কথাটা খাঁটি সত্য। বাংলা বাঙালি বাঙালির সংস্কৃতি শিক্ষা খাবার ফুটবল জীবনচর্যা একসূত্রে গাঁথা। একটা বাদ দিয়ে আরেকটা হয় না। ... ...
চারটে দশের ঘন্টা পড়তে গিয়ে তাই নিজেকেই ফিরে পড়ি। মনে হয় এ কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্মৃতি-গাথা নয়, বরং সত্তর আশির দশকে ব্যাপ্ত মফস্বল তার সমস্ত কাহিনি নিয়ে এইখানে জ্যান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অরহান পামুকের স্মৃতিকথা ইস্তানবুলের মতোই এতে শুধু ব্যক্তি নয়, প্রাধান্য পেয়েছে বিশেষ সময় এবং স্থান। নাই বা হলো সে কোনো বিখ্যাত শহর, কিন্তু মেদিনীপুরের কাঁসাই কী মন্ত্রবলে উত্তরবঙ্গের মানসাই নদীকে স্মৃতির জলোচ্ছ্বাসে মিলেমিশে একাকার করে দিয়েছে। ... ...
সি-বিচে জলের ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, সর্ষে দানার মত থেকে শুরু করে, ছোট মটর-কড়াই এর মত আকারের বালির গোল গোল ঢেলা প্রচুর পড়ে থাকতে দেখলাম; প্রথমে এগুলি কি তা না বুঝলেও, পরে আবিষ্কার করেছিলাম যে লাল কাঁকড়ারা তাদের গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করার জন্য দাঁড়া দিয়ে বালির ঢেলা তৈরি করে – যেগুলি বাড়ির উপর ছড়িয়ে রেখেছে। এদের বাসার গর্তগুলি বেশ গভীর ছিল। উপর থেকে গর্তের ভিতর বসে থাকা কাঁকড়াকে দেখতে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সমুদ্রের জলের ধারে এরা এমন দল বেঁধে বসেছিল, যে একটু দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন জলের ধারে বালির উপর কেউ লাল চাদর পেতে রেখেছে। সমুদ্রের জলের ঢেউ কখনও অল্প, আবার কখনও বালির অনেকটা উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। লাল কাঁকড়ারাও দল বেঁধে সেই ঢেউয়ের তালে উপরে নিচে ওঠানামা করছিল। দূর থেকে মনে হচ্ছিল যেন লাল চাদরটা জলের দামে একবার নিচে নেমে যাচ্ছে ও আবার ঢেউয়ের ঠেলায় উপরে উঠে যাচ্ছে। ... ...