বিসমার্ক দূরের কথা, এঁরা কেউ সাম্প্রতিক ইতিহাসটুকু পড়ে আসেননি। আপাত স্বাধীনতার লম্বা দড়ি ছেড়ে দিয়ে টিটো তো ঠিক সেটাই চেয়েছিলেন – রাজনীতি নয়, অর্থনীতি। লগে রহো ক্রোয়াট আউর সার্ব ভাই। চল্লিশ বছর যাবত হয়তো সেই কারণে শান্তি বজায় ছিল। এবারের বিবাদ অর্থনীতির নয়, জাতীয়তাবাদের। স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা বাকি ইয়ুগোস্লাভিয়া না হয় মেনে নিল; কিন্তু আসল সমস্যা সার্ব বনাম ক্রোয়াটদের পারস্পরিক শোধ তোলার বাসনা। ... ...
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী—এই আপ্তবাক্যকে অবহেলা করে বাহাদুরি দেখাবার চিরাচরিত বাঙালি অভ্যাস কখনও ত্যাগ করিনি। লিলিয়ানার কাছে শোনা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার এই সুযোগ। বললাম, ভিটেক, যতটুকু জানি – পোলিশ, চেক, স্লোভেনিয়ান একই স্লাভিক ভাষা পরিবারের সদস্য। তফাৎ আছে ব্যাকরণে, বাক্য বিন্যাসে, কিন্তু নিত্যদিনের ব্যবহারের শব্দ প্রায় এক। পোলিশে তোমরা গোনো ইয়েদনা দ্ভা ত্রি, স্লোভেনিয়ানরা গোনে এনা দ্বা ত্রি; পোলিশে কেনা হলো কুপিচ, এরা বলে কুপিতি। কার্ড কেনা নিয়ে কথা। তুমি তো আর দোকানদারের সঙ্গে ব্লেদ শহরের মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা বিষয়ে কোনো আলোচনায় বসছ না! ... ...
ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ৮৩ বছর। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইনিই মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর পদের বৈধ উত্তরাধিকারী। মুর্শিদাবাদ শহরবাসী তাঁকে নবাব বাহাদুর হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেন। ভদ্রলোকের নাম নবাব সৈয়দ মুহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা। তিনি থাকেন কেল্লা নিজামতের ভেতরে দক্ষিণ দরজার পাশে অবস্থিত একটি পুরনো বাড়িতে। তবে নবাব সাহেবের দেখা পাওয়া মুশকিল, অনেকেই তাঁর সাথে দেখা করতে চান কিন্তু তিনি খুব একটা দেখা দিতে চান না। এতে অবশ্য কোনো অস্বাভাবিকতা নেই, কারণ আজ যদি নবাবী আমল হতো আর উনি যদি নবাব হতেন তবে তো নবাব সাহেবের সাথে দেখা করা মোটেই সহজ সাধ্য হতো না। আজ হয়তো নবাবী আমল নেই ঠিকই কিন্তু নবাব সাহেবের শরীরের মধ্যে তো এখনও তাঁর পূর্ব পুরুষদের রাজকীয় রক্ত বইছে।ফলে তাঁর কিছুটা প্রভাব তাঁর আচরণে দেখা দেওয়া দোষের কিছু নয়। ... ...
জাগ্রেবের দুই শিল্পী, অলিঙ্কা ও দ্রাঝান একদিন অনুভব করলেন তাঁদের কণ্ঠে জড়ানো গভীর ভালবাসার মন্দার মালিকা ম্লান হয়ে এসেছে – এবার কি খেলা ভাঙার খেলা? ভালবাসার স্বর্গ হতে বিদায় নেওয়ার কাল আসন্ন হলে দ্রাঝান বলেন, “আচ্ছা, আমাদের এই চারটে বছরের প্রেমের, এক অন্তহীন খুশির দিনগুলির স্মৃতি কি হারিয়ে যাবে? তুমি আমি একসঙ্গে হয়তো কিছু কিনেছি, ছবি এঁকেছি তোমার। ভোলার পালা শুরু হলে এই ছবি, ওই পেয়ালা তারা কি চলে যাবে জঞ্জালের স্তূপে?” ... ...
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের ভয়াবহ ধর্মযুদ্ধে আশি লক্ষ মানুষ (ইউরোপীয় জনসংখ্যার দশ শতাংশ) মারা যান। সে সময়ে ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ার সৈন্য ফরাসিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিধর্মী প্রটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আজকের বিচারে ভাড়াটে সৈন্য কিংবা রাশিয়াতে এই ভাগনারের মতন মারসিনারি হিসেবে। ফরাসি সমর বাহিনির পোশাক পরার অধিকার তাদের নেই - যুদ্ধক্ষেত্রে তারা নামে নিজেদের ইউনিফরম পরে আর গলায় রঙ্গিন রুমাল বেঁধে,আমাদের যুবাকালে দেব আনন্দ যেটাকে স্টাইলে পরিণত করেছিলেন! রুমাল বাঁধার ফলে জ্যাকেটের ওপরের বোতাম থাকে টাইট, সেটি কারণে অকারণে খুলে গিয়ে অস্ত্র চালনায় বাধা সৃষ্টি করে না – এই তাদের ভাষ্য। ... ...
দাল মে কুছ কালা হ্যায় যারা বলেন তাঁদের আমরা সামগ্রিকভাবে বংশীবাদক—হুইসলব্লোয়ার—আখ্যা দিয়ে থাকি, যুগে যুগে তাঁদের দেখা পাওয়া গেছে। খুব কম ক্ষেত্রেই তাঁদের কথা মানুষ শুনেছে। তবে এক্ষেত্রে বাজারি কানাকানির ভিত্তিতে মিউনিকের টনক নড়ে। তাঁদের তাড়ায় অতি দ্রুত রিয়েচকা বাঙ্কার তদন্তকারি অফিসাররা খাতাপত্র দেখে আবিষ্কার করলেন সব্বোনাশ, এডুয়ার্ড নদিলো বিগত চার বছর (১৯৯৮ থেকে) ডলারের দামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফাটকা খেলেছেন। অনেক লোকসান লুকিয়ে রেখেছিলেন বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার ব্যাবসায়ের আবরণে—তাঁর বসেরা টের পাননি। ... ...
কেল্লায় যে এত ভূতের বসবাস আমি নিজেও তা জানতাম না আগে, আমি তো সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একদিন হলেও কেল্লায় যাই, কিন্তু কেল্লার ভেতরে জ্বিন দেখার সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। একবার তো কেল্লার জঙ্গলে ঢাকা বেগম মহলে ভরা শীতের সময় প্রায় সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত ছিলাম, কিন্তু সেদিনও সেখানে কিছুই দেখতে পাইনি—তবে নিশ্চয় কোনো না কোনো দিন ঠিকই কেল্লার ভেতরে জ্বিনের দেখা পাবো—এই আশা রাখি। ... ...
হলফ করে বলতে পারি নিজের চোখে দেখা—কনটিনেন্টাল ব্যাঙ্ক ফ্রাঙ্কফুর্টের অফিসার জামিনদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরে তাঁর বিবরণীতে (কল নোট) লিখছেন: “আমাদের দীর্ঘ মধ্যাহ্ন ভোজনের শেষে, কফি পান করার সময়, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সি-ই-ও জামিনদাতা—হের ফিশার—বললেন, তাঁরা এই কোম্পানির সমর্থনে আছেন ও থাকবেন”। তখন ঠিক কটা বাজে, কোন দিন, কফির আগে না পরে এই রূপ আশ্বাসবাণী দেয়া হয়েছিল, তার ফিরিস্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল কে জানে। জার্মানি ছেড়ে আসার আগেই এই আশ্বাসবাণী যে ঋণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি, তার বহুত নমুনা দেখে এসেছি। ... ...
আগাথা ক্রিস্টির মার্ডার অন দি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (অ্যান্ড দেয়ার ওয়্যার নান—যা থেকে হিন্দি ছবি গুমনাম—এর পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস) যাঁরা পড়েছেন, অবিলম্বে এই দৃশ্যটি চিনতে পারবেন। প্রথম চলচ্চিত্র ভার্শনটি (১৯৭৪) দেখেছিলাম—তাতে মেগাস্টার কাস্ট: আলবার্ট ফিনি (যাঁকে আগাথা ক্রিস্টি এরকিউল পোয়ারোর চরিত্রে একেবারে পছন্দ করেননি), শন কোনারি, জন গিয়েলগুড, ইনগ্রিড বেরগমান, ভেনেসা রেডগ্রেভ, জ্যাকেলিন বিসে এবং আরও অনেকে। পরে জেনেছি গার দে লেস্ত, প্যারিস থেকে বাইশশো কিলোমিটার দূরের ইস্তানবুলগামী ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইউরোপের পয়লা দূরপাল্লার ট্রেন। সময় লাগত তিন দিন। সেকালে খুব কম ট্রেন তার আপন দেশের গণ্ডির বাইরে গিয়ে স্টিমের ধোঁয়া ছেড়েছে। ... ...
জলে ঝাঁপাচ্ছে যে শিশুর দল, তাদের কেউ প্রশ্ন করে তার পরিচয় কী? সে বসনিয়াক না সার্ব না ক্রোয়াট? জিজ্ঞাসে কোনজন? পথের দু-পাশ সবুজে ভরে আছে। আকাশ কী উজ্জ্বল! বিশ বছর আগে এই রাস্তায় দেখা গেছে ট্যাঙ্কের সারি, জ্বলন্ত বাড়ির আড়ালে আড়ালে স্নাইপারের ছায়া, কখনো আকাশে সারবিয়ান বোমারু বিমান, কোনো বাড়ির উঠোনে বসে সেই বিমানের দিকে বন্দুক তাক করছে এক যুবক। সারি সারি দেহকে একই সঙ্গে গোর দেওয়া হচ্ছে, কোথাও ক্যাথলিক কোথাও অর্থোডক্স ক্রসের নিচে। দু-হাত দূরে মুসলিম মাজার। এই সেদিন। ... ...
মুর্শিদাবাদ বাসীদের যেখানে বিশ্বাসঘাতক কিম্বা বিশ্বাসঘাতকের জেলার মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় সেখানে মীরজাফরের বংশধরদের কী অবস্থা হয়? তাঁরা কী তবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন? পূর্ব পুরুষদের কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জা পান? নাকি তাঁদের পূর্ব পুরুষদের গায়ে লেগে থাকা 'বিশ্বাসঘাতক' তকমার বিরোধিতা করেন নিজস্ব যুক্তি দিয়ে? চলুন কেল্লায় বসবাসকারী নিজামত পরিবারের কিছু প্রবীণ সদস্যদের কাছ থেকে এই বিষয়ে জানা যাক। ... ...
বিংশ শতাব্দীর শুরু ও শেষ এইখানে। সারায়েভোতে। গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের পিস্তলের গুলি—দুটি নয়, বহু কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। খুন কা বদলা খুনের খেলা শুরু হল — চলবে গোটা শতাব্দী জুড়ে। ইতিহাসে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের স্থান বার বার পরিবর্তিত হয়েছে—কারো চোখে তিনি সন্ত্রাসবাদী, কখনো বা জাতীয়তাবাদের পুরোধা। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সহিংস প্রতিবাদ যে ঘটনাচক্রের সূচনা করল, তা হয়তো বদলে দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ভবিষ্যতকে। ... ...
এ প্রসঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফেরাদুন জার বংশধর নাফিসুন নিসা নাসির (নাফিসা) এর বিয়ের খাওয়া দাওয়ার কথা আজও ভুলতে পারিনি। আগেই বলেছি এক সময় নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা তবে আজকাল নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির খুব রমরমা শুরু হয়েছে। নাফিসার বিয়েতেও মূল খাবার হিসেবে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছিল, সেই বিরিয়ানির স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। সেবার খেতে বসে প্রথমেই দেওয়া হয়েছিল ঘিয়ে ভাজা পরোটা ও চিকেন রেজালা, ওহ সে কি অপূর্ব স্বাদ। ... ...
সারি মস্ত আবার তৈরি হয়েছে – কিন্তু সে কি পারে মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে? তিন বছরের গৃহযুদ্ধ বিনষ্ট করেছে পাঁচশো বছরের সহাবস্থান। ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে যায়, কিন্তু আগের মতো এক ঘরে একই ক্লাসে বসে না: সিলেবাস এক, ভাষা এক। কিন্তু ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢোকার গেট আলাদা – মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ক্লাসরুম আলাদা। এক নতুন বৈষম্য। ... ...
ক্রোয়েশিয়ান চৌকির পুলিস কিঞ্চিৎ কৌতূহলী। আমার চেহারার সঙ্গে আমার পাসপোর্টের রঙ, গাড়ির নম্বর প্লেট এবং পার্শ্ববর্তিনীর মুখ কোনটাই মেলে না, প্রায় কখনোই। চার দশক কেটে গেছে, পুলিশের বিস্ময় আমাকে আর বিস্মিত করে না। এখন কেবল পরবর্তী সংলাপের অপেক্ষা। পরিচ্ছন্ন ইংরেজিতে জানতে চাইলেন ঠিক কোথায় যাচ্ছি—মস্তার? বললাম, মস্তার যাবো, তবে মেজুগরিয়ে হয়ে। রোদিকাকে দেখিয়ে বললাম ইনি যে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা মহিলা, একবার মা মেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান! ... ...
বিগত তিরিশ বছরে নানান দেশের নানান ব্যাঙ্কিং প্যানেলে বহু জ্ঞানীগুণীর সঙ্গে একাসনে বসে ঘণ্টাখানেক বাক্যালাপ করে পাঁচজনের সঙ্গে আমিও ফিরিতে হাততালি কুড়িয়েছি। এইসব প্যানেল আমারই মত অন্যান্য ব্যাঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিঙের ফিরিওলা, কর্পোরেট প্রধান, সরকারি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাঝারি প্রবক্তা, খবরের কাগজের প্রতিনিধি (যাঁরা প্রশ্ন করেন কেতাবি, উত্তরের অর্থ অর্ধেক বোঝেন কিনা সন্দেহ) এমনি সব মানুষদের নিয়ে তৈরি হয়। নির্ধারিত অনুষ্ঠানের আগেই আমরা কনফারেন্স কল (জুম কল আসতে দেরি আছে) করে ঠিক করে নিই প্রশ্নাবলী কী হবে, কে কী বলবে। শ্রোতারা ভাবেন – চার-পাঁচ জন নারী পুরুষ একত্র বসে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা বা বিষয়ের ওপরে কোনো গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দ্বারা মহতী সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন। ... ...
আরতুরোস বললে, ‘দেখতে থাক। পাঁচ মিনিটের বেশি যদি লাগে, হোটেলে ফিরে গিয়ে আমার পয়সায় বিয়ার খাওয়াব। কৌতূহল বেড়ে গেল। বিয়ারের জন্য নয়। সপরিবারে পরায়া গাড়িতে কারো লিফট পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তিরিশ বছর আগে জার্মানিতে হাত দেখিয়ে লিফট জোগাড় করার ভীষণ চল ছিল। নিজে করেছি। তবে সেটা অটোবানে। শহরে নয় -সেখানে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা আছে, আমেরিকার মতন নয়। কথ্য জার্মানে বলা হয়, বুড়ো আঙ্গুল (প্যার দাউমেন) দেখিয়ে সফর করা। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হয়তো জার্মানিতে এই যানযাত্রার পদ্ধতি প্রায় বিলীন এখন। ... ...
আমরা কেউ অবশ্য পুরোপুরি সফল হই না! তাহলে পৃথিবীর চেহারাটা বদলে যেত। তবে একই জিনিসকে আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে জানার ও শোনার বিশেষ মূল্য আছে। আন্তর্জাতিক ঋণ প্রায় ৯৫% ইংরেজি আইনের আওতায় (ইংলিশ ল) পড়ে – (আমেরিকান ল বলে কিছু নেই)। তবু ঋণ গ্রহীতার দেশের আইনকানুনের খবর রাখতে হয়েছে। তার পূর্ণ দায়িত্ব আমার নয়। ... ...
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পনেরো টুকরো হয়েছে। একদা এই পনেরোটি রিপাবলিকের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল রাশিয়ান। কালিনিনগ্রাদে যখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে, পুবে দিওমেদ দ্বীপে তখন পরের দিনের ভোর সাড়ে পাঁচটা – সর্বত্র ভাষা এক। লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া থেকে কাজাখ অবদি সবার নিজস্ব ভাষা আছে, ছিল। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় রাশিয়ান। নইলে রাজ্য শাসন অসম্ভব। যেমন আমাদের শাসকরা চাপিয়েছিলেন ইংরেজি, সেটিকে আমরা আঁকড়ে ধরেছি। বাইরের জগতের পাসপোর্ট এটি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রাঁসোয়া দুপ্লে রবার্ট ক্লাইভকে হারাতে পারলে ফরাসি আমাদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হত! ... ...
কোনো এক সুপ্রভাতে হয়তো মন ভালো ছিল, তাই প্রকৃতি কাজাখকে দিলেন ইউরেনিয়াম, তামা, শিসে, ক্রোমিয়াম, দস্তা, লোহা, হীরে এবং অগাধ খনিজ তেলের ভাঁড়ার। কিন্তু এই আশ্চর্য ধন সম্পদ খুঁজে দেখেননি, তার পরোয়া করেননি যাযাবর জনতা। সে অমৃত পড়ে রইল আসা যাওয়ার পথের ধারে। এ দেশের মানুষ স্থায়ী ভাবে বাস করতেন না কোথাও। মোঙ্গল রক্ত শরীরে আর মন উড়ু উড়ু। যাযাবরের মত আসা যাওয়া—আজ এখানে, কাল ওখানে। দেশটা এত বড়ো, যে, চরৈবেতি বলে চরে খাওয়ার কোনো অসুবিধে ছিল না। দীর্ঘ জনযাত্রায় তাঁদের চোখে পড়েছে দেশের বিস্তৃত প্রান্তরে একটি ক্ষিপ্র গতির প্রাণী এখানে ওখানে দৌড়ে বেড়ায়। হেঁটে ক্লান্ত যাযাবরেরা হঠাৎ কোনো এক সময়ে তার ওপর চড়ে বসলেন। সে প্রাণী খুব একটা প্রতিবাদ হয়তো করেনি, করলেও তার কথা লিখে রাখবার মতন ট্রাভেল রাইটার জোটেনি। ... ...