দেশত্যাগ বিয়ের কনে বিদায় দেবার মত ব্যাপার নয়। এখানে সবাইকে জানিয়ে যাওয়া যায় না। যথাসম্ভব চুপিচুপি চলে যেতে হয়। বিদায়ের কষ্টের চেয়েও ঢেড় বড় হচ্ছে নিরাপত্তা। ১৩৫৪ সনের পৌষের এক কুয়াশাঢাকা ভোরে খলিল আর জাহেরা পরিবার নিজেদের সামান্য পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে বেলডুবি ছাড়লেন। পেছন ফিরে তাকাতে সারি সারি তাল, নারকেল আর সুপুরি গাছের মাথাগুলো দেখা গেল; তার নিচে বাকি গাছপালা আর গাঁয়ের বাড়িগুলো কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেছে। মনে হচ্ছিল তাঁরা সবাই যেন এক প্রাগৈতিহাসিক গুহার ভেতর থেকে বের হয়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটছেন। ... ...
একটা দল খুনোখুনিতে ছিল না, কিছু লুটও করেনি – তাদের লক্ষ্য ছিল ভেতর বাড়ি। প্রতিটি ঘর, রান্না ঘর, বারান্দায় তারা কী যেন খুঁজে শেষে ভাঁড়ার ঘরের ভেতরে জাহেরাদের তিনজনকে আবিষ্কার করে। এইবার এই দলটি ‘নেড়েটার মাগীগুলোকে পেয়ে গেছি রে!’ বলে উল্লাস করে ওঠে। তারা জাহেরাদেরকে টেনে হিঁচড়ে ভেতরের শোবার ঘরে নিয়ে এসে উপর্যুপরি ধর্ষণ শুরু করে। ধর্ষণ কি জিনিস তা জাহেরা বা ঝিয়ের জানা থাকলেও তেরো বছরের মাহিরার অজ্ঞাত ছিল। তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে চেপে ধরাতে সে চেঁচাচ্ছিল, কিন্তু প্রথমবার তাকে যখন বিদ্ধ করা হল তখন সে এক অপার্থিব জান্তব চিৎকার দিয়ে উঠল। ... ...
জাহেরা কসাই বাড়ির মেয়ে। তাঁর হাঁকডাক কম নয়, দরকারে ছুরি-চাপাতিও চালাতে পারেন। চাইলে তিনি প্রবল প্রতিরোধ করতে পারতেন, হৈচৈ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেসবের কিছুই করলেন না। তাঁর সকল প্রতিরোধের শক্তি গত কয়েক মাসে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেদেশে নারীর পরিধেয় ব্লাউজ, পেটিকোট বা শেমিজ বিহীন শাড়ি আর পুরুষের পরিধেয় ধুতি বা লুঙ্গি—সেদেশে তাদের যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বেশি আয়াসের দরকার হয় না, সম্পূর্ণ বিবস্ত্রও হতে হয় না। নাজির খাঁ’র ভারি দেহের নিচে নিষ্পেষিত হতে হতে জাহেরা ভাবলেন, উদয়াস্ত পরিশ্রম করলে তাঁদের তিন জনের দু’বেলার খাবার হয়তো জোটানো যাবে, কিন্তু সবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়তি কিছু মূল্য দিতে হবে। বাইরের দুনিয়ায় শেয়াল শকুনের খাবার হবার চেয়ে এটা হয়তো মন্দের ভালো হল। ... ...
বাংলা ১৩৪৬ সনে ভারত যখন মহাযুদ্ধে জড়াল, তখন থেকে একটু একটু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আক্রা হতে শুরু করল। ‘জাপানিরা বর্ম্মাতে এসে গেছে, দু’দিন পরে কলকাতায় চলে আসবে’। ‘জাপানি বিমান দুমদাম বোমা ফেলে সব শেষ করে দিচ্ছে’। এমনসব কথা যত বাড়তে থাকল, বাজার থেকে চাল-ডাল ততই উধাও হতে থাকল। বর্ম্মা থেকে আসা গরিবের খাবার ‘পেগু চাল’ একেবারেই মিলল না। মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মত ১৩৪৯ সনের আশ্বিন মাসের ঘূর্ণিঝড়ে বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো তছনছ হয়ে গেল। ঘুর্ণিঝড়ের পরে ধানের রোগবালাই আর পোকার আক্রমণ বেড়ে আমন ধান মার খেয়ে গেল। সে আমলে বোরো নয়, আমনই মূল ফসল ছিল। ফৌজি লোকজন বড় বড় নৌকা পুড়িয়ে দিতে আর গরুর গাড়ি ভেঙে দিতে থাকলে গাঁ থেকে ধানের চালান আর শহরে বা অন্যত্র যেতে পারল না। ১৩৪৮ সনের শীতকালে মোটা চালের দাম ছিল সাড়ে পাঁচ টাকা ছ’টাকা মণ, সেই চালের দাম এক বছরের মাথায় ১৩৪৯ সনের চৈত্র মাসে গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ টাকা মণ দরে। ... ...
বাংলা পড়া শেখার কথা সায়েরা একদিন ভয়ে ভয়ে আলীর দাদীকে বলেও ফেলে। আলীর দাদী কিন্তু মোটেও রাগ করলেন না। উলটো তিনি বললেন, মেয়েদের বাংলা পড়তে ও লিখতে, গোনাগুনতি শিখতে পারা উচিত। তাহলে তারা নামাজ শিক্ষাসহ ইসলামী বইগুলো পড়তে পারবে, নিজের বাচ্চাকাচ্চাকে দ্বীনি এলেম শেখাতে পারবে, খসম দূরে কোথাও কাজে গেলে তাঁকে চিঠি লিখতে পারবে, চিঠি লিখে নিজের বাবা-মায়ের খোঁজও নিতে পারবে। তাছাড়া মেয়েরা যদি গোনাগুনতি না শেখে, পাই পাই হিসেব করতে না পারে তাহলে সংসারের আয়-রোজগার বারো ভূতে লুটে খাবে। সায়েরার ইচ্ছার কথা শুনে আলীর দাদী ঠিক করলেন তিনি মেয়েদেরকে বাংলা আর হিসেবও শেখাবেন। এই কথা জানার পরে মেয়েদের বাবারা তো বটেই আলীর চাচা (কাকা) মান্নাফ, ইয়ার নবী আর হারুনও বেঁকে বসলেন। ... ...
‘রাইডিং দ্য ওয়াইল্ড হর্স মেডিটেশন’ আমি আর কখনো করিনি। ঐ পাঁচদিন আমার শরীরের, মনের ওপর যে ছাপ ফেলেছিল – তার জের সামলে উঠতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পেরে গেছিলাম, যে জীবনকে আমি এতদিন যা বলে জেনে এসেছি, তা ঐ পাঁচদিনে একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেই ‘আমি’ শেষ হয়ে গেছে তার সঙ্গেই। আমি বুনো ঘোড়ার পিঠে উঠতে গেছিলাম। বুনো ঘোড়ারা আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ঐ ধুলোর মধ্যে এখন রয়েছি পড়ে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ক্রিচারের মত এই ‘আমি’। নিজের অচেনা। নতুন। হ্যাঁ, ঐ বুনো ঘোড়া আমার জন্মদাতা। ... ...
আমাদের সব অনুভূতিই একেকটা মেসেঞ্জারের মত। একেক জন একেক খবর নিয়ে আসে। খবরটা দেবার জন্য ওরা আমাদের ডাকে। বলে "ওগো,তাকিয়ে দেখো। এমন ঘটনা ঘটলে তুমি নিরাপদে থাকবে। এমন ঘটলে তোমার সমূহ বিপদ। এই কাজ ভুলেও করতে যেওনা। এই কাজটা বারবার কোরো।" এইসব। এইবার আমাদের ওরা ডাকবে কী করে? ওরা মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারেনা, গলার স্বর নেই ওদের। আঙুলও নেই যে ইমেল করবে, হোয়াট্স-অ্যাপ করবে। ... ...
আমাদের বিক্রম রাজা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলে তার যুক্তিটাও বলে দিতেন। কিন্তু জর্জিয়াবাসী এই বাচ্চা সেসবের ধার দিয়ে গেলোনা। শুধু উত্তর। তা তাই সই। রাজা সবার অলক্ষ্যে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ... ...
বিক্রমাদিত্য আর বেতালের গল্প কত পুরোনো ভাবো। ভারতীয় গল্প-সংস্কৃতি পুরোই হবেনা এই সিরিজটা বাদ দিলে। আমি খুঁজতে খুঁজতে, ধুলো, মাকড়্সার জাল হাতড়ে অনে-এ-এক দূরের এক দেশের উপকথার মধ্যে একটা গল্প খুঁজে পেলাম যার সাথে এই বিক্রম-বেতালের (পুরনো গান মনে আছে? বিক্রম বিক্রম বিক্রম, বেতাল তাল তাল?) বেবাক মিল! দেশটার নাম জর্জিয়া। হ্যাঁ, পূর্ব ইউরোপের সেই ককেশাস পাহাড় আর কালো সমুদ্দুরের দেশ। গল্পটা হলো 'রাজা আর আপেলের গল্প'। ... ...
পার্কসার্কাসের ধাঙড় বাজারের সার্কাস হোটেল। সামনের ফুটপাথে একটা হাইড্রেন, তার থেকে মুখ খুলে হোসপাইপ লাগিয়ে কর্পোরেশনের লোক রোজ ভোরে রাস্তা ধুয়ে দেয়। সময়টা যে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। তোড়ে যে জল বেরিয়ে আসে তা কিন্তু গঙ্গার ঘোলা জল, আর ফুটপাথে থেকে তিন ধাপ সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় উঠলেই খোলা উনুন বসানো। সেখানে ঝকঝকে শিকে গেঁথে পোড়ানো হচ্ছে মশলা মাখা লালচে হলুদ রঙের মাংসের টুকরো। তৈরি হচ্ছে শিককাবাব। তার পাশেই দু'জন ময়দা মেখে লেচি বানিয়ে সেঁকছে রুমালি রুটি আর ভেজে তুলছে পরোটা। ... ...
-- উনি কি জানতেন যে বিংশ শতাব্দীতে রণজিৎ গুহ- গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তিরা মিলে একটা অন্যরকমের ইতিহাস, ধোপা-নাপিত-কামার-কুমোরের ইতিহাস লেখার জন্যে গজল্লা করবেন? তবে এইটা লিখেছেন যে জ্যেঠা রাজকৃষ্ণ অত্যন্ত ধার্মিক ও ""নামে রুচি,জীবে দয়া, ভক্তি ভগবানে'' গোছের লোক ছিলেন। খরা-বন্যা-মহামারীর সময় প্রজাদের জন্যে ধানের গোলা খুলে দিতেন, যে যা চাইত ধার দিতেন, হিসেব রাখতেন না। দিয়ে খুশি হতেন। একেবারে টিমন অফ এথেন্স! ফলটাও হাতে হাতে পেলেন। লোকে ধার শোধ করতে ভুলে গেল। আস্তে আস্তে ওনার তালুকদারীর নৌকোয় ফুটো হতে লাগল। ফলে দশবছর বয়সে পিতৃহীন গগনচন্দ্রকে ইংরেজি স্কুলে পড়ার জন্যে দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে রেঁধে বেড়ে খেয়ে থাকার শর্তে নওয়া-যশোদল যেতে হল। সেখানে আবার স্কুলে স্ট্রাইক ও হয়েছিল, ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে, স্কুল বন্ধ হল, তার ব্যাপক গল্প আছে। হে-হে, বংশের ধারা যাবে কোথায়? আম্মো না নাকতলা স্কুলে ১৯৬৬তে স্ট্রাইক করিয়েছিলাম। --ঢের হয়েছে। এবার একটা চুটকি গল্প বলে শেষ কর, খালি প্যারাবলের মত শেষে কোন মর্যালিস্ট লেকচার দিও না। ... ...
বলার কী আছে? মোদ্দাকথাটা হল অন্নই ব্রহ্ম, আর কতবার বলবো? যুগে যুগে বিভিন্ন জনগোষ্ঠি অন্নের অনটন হওয়ায় এক বাসস্থান ছেড়ে নতুন জনপদের সন্ধানে ঘটিবাটি-বোঁচকাবুঁচকি বেঁধে বেরিয়ে পড়েছে। আবার নতুন করে আস্তানা গেড়েছে হয় কোন নদীর তীরে, নয় কোন পাহাড়ের নীচে। তোমাদের খানদানের ব্যাপারটাও ঠিক তাই। তোমারা আদতে বাঙাল নও। ছিলে রাঢ় বাংলার ইন্দ্র। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় অন্নচিন্তা চমৎকারা হলে লং মার্চ করে গঙ্গা পেরিয়ে গারোপাহাড়ের নীচে ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগ সাবডিভিসনের মেঘনা নদীর পাড়ে আঠারবাড়িয়া গ্রামে জঙ্গল সাফ করে বাঘ মেরে বসতি স্থাপন করলে। ইন্দ্র থেকে ক্রমশ: রায় হলে। ছিরু পাল থেকে শ্রীহরি ঘোষ:))))) ... ...
ওই পূর্ব পাকিস্তান থেকে রিফিউজি হয়ে এসে তিনকামরার দাদুর দস্তানায় মাথা গোঁজা পার্কসার্কাসের ভাড়াবাড়িতে বাইশজনের এজমালি সংসার। তাতে এই ভদ্রলোক প্রত্যেক ঋতুতে তোদের ফল খাওয়ায়নি? অন্তত: প্রত্যেক ফল একবার করে? আর তোরা ,অর্বাচীন অপোগন্ডের দল! ইংরেজি গ্রামারের শৌখিন, প্রতিদিন কবিতা পড়ার মত করে স্টেটস্ম্যানের এডিটোরিয়াল পড়া, ফেবার অ্যান্ড ফেবারের নিয়মিত বই কেনা, টি এস এলিয়ট ভক্ত এই ভদ্রলোককে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসতিস্, পেটি বুর্জোয়া টেস্ট, তাই না? আসলে ওনার ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল বিশাল। ভালবেসে ক্ষতি স্বীকার করতেও উনি কুন্ঠিত হতেন না। তোরা ভালবাসিস শুধু নিজেকে। ... ...
হেই লাইগ্যা তাইন, মানে ফকিরচন্দ্র একটা উঁচা টিলা দেইখ্যা তার উপর বাড়ি বানাইলেন। আটচালা বাড়ি। মাঝখানে ঊঠান। চাইরদিগে টানাবারান্দা আর তার গায়ে গায়ে ঘর। হেইডা করতে গিয়া বাঘ-সাপ-খাটাশ কিছু মাইর্যা কিছু তাড়াইয়া জঙ্গল সাফ করলেন। এইডা ছিল তাঁর প্রথম বছর। পরের বছর বাড়ির সামনে বিশাল পুষ্কুনি কাটাইলেন। লোকে কইতো দীঘি। সেই দীঘি পারাপার করা কঠিন ছিল। সারা বছ্ছর গভীর কালোজল। মাইয়ামাইনষে বুকে কলস লইয়া চেষ্টা করতো, কিন্তু পারাপার হইতো মা। সেই দীঘি আজও আছে। খালি তার মইধ্যে আইজ বাবর আলি মুন্সীর হাঁসেরা সাঁতার কাটে। যাউকগিয়া, তিনি উদ্যোগীপুরুষ ছিলেন। কয় বছরের মইধ্যে পাটের চাষ আর অন্য কৃষিকার্য কইর্যা সম্পত্তি বাড়াইলেন। আঠরবাড়িয়া-বাজিতপুর-ময়মনসিংহ সদরে বাড়ি করলেন। ... ...
আরে, এখানেই শেষ নয়। বেয়াল্লিশের মন্বন্তরের সময় গান্ধীজি করলেন 'ভারত ছোড়ো' আন্দোলন। কিন্তু কমিউনিস্টরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক পিতৃভুমি(!) রক্ষার লড়াইয়ে মিত্রশক্তি অর্থাৎ বৃটিশের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের ডাক দিল। বুভুক্ষু মানুষের জন্যে লঙ্গর পরিচালন তখন তাদের মুখ্য কর্মসূচী হয়ে দাঁড়াল। সলিল কুমার থাকতেন জ্যোতি সিনেমার কাছে ধর্মতলায় একটি মেসে। সেখানে বোর্ডারদের টাইমপাস রাজনৈতিক বিতর্কে কমিউনিস্টদের অবস্থানকে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে চড়া গলায় চেঁচিয়ে ছিলেন। কাছেই ছিল 'ইস্কাস্' বা 'ইন্দো-সোভিয়েত কালচারাল সোসইটি''র অফিস। কমরেড ভুপেশ তখন সেইখানেই থাকতেন। শুনে বল্লেন - ওনাকে এখানে ডেকে আন, বুঝিয়ে দেব। ... ...
ঠাকুর্দা গগনচন্দ্র কথা রেখে ছিলেন। সারাজীবন নিষ্ঠাবান হিন্দু রইলেন। ওকালতিতে ও তালুকদারিতে সফল হলেও "পঞ্চাশোর্ধ্বেবনং ব্রজেৎ'' এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে ছেলে সতীশচন্দ্রের হাতে সংসারের ভার সঁপে দিয়ে বৃন্দাবনে কুটির নির্মাণ করে রইলেন। দুবেলা মাধুকরীবৃত্তি করে ( গোদা বাংলায় "ভিক্ষে দাও গো ব্রজবাসী'' বলে) আহার করলেন। বারো বছর পরে দেশের বাড়িতে ফিরে এসে বাইরের দিকে একটা ঘর বানিয়ে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিলেন। ... ...
সুষমা মারা গেছেন। খবরটা পেয়ে উদাস হয়ে সিগ্রেট ধরাতেই গিন্নি বল্লেন - কি হয়েছেটা কি? আমি বল্লাম যে নিজের সময়ের আগে জন্মানো একজন এই দুনিয়াথেকে পাত্তাড়ি গোটালেন। তারপর এই সুষমাটি কে? আমার সঙ্গে কিসের সম্পর্ক? - এইসব বাঁধাগতের হাবিজাবি কথা উঠতেই আমি ঠাকুমার একটি ছড়া ঝাড়লাম,--- উনি আমার কি লাগেন? ঠাকুরবাড়ির গাই লাগেন। ... ...
১৯৯৬ য়ের জুন মাস। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের দূর্গাবাড়ি রোডের রাস্তায় একটি টয়োটা গাড়ি। ভর-দুপুরে গাড়িটি ঢিমে লয়ে চলছে, এদিক-ওদিক, দোকানের সামনে থেমে জানতে চাইছে - সূর্যসিঁড়ি নামের বাড়িটি কি করে যাব? বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামে তারা দু'জন। কমবয়েসি ছেলেটি রজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের ছাত্র। এক বন্ধুর দাদার দেওয়া যোগাযোগে কদিন ধরে কাজকম্ম ছেড়ে ঘুরছে কোলকাতা থেকে আসা একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিকের সঙ্গে। ঘুরছে চরকিবাজির মত। ... ...
পাকিস্তান ছাড়ল শেষ রেলগাড়ি ১৯৪৯এর কোলকাতা। ফাগুনমাসের শেষ। পশ্চিম আকাশে লজ্জা-লজ্জা গোলাপী আভা তখনও মিলিয়ে যায়নি। মনুমেন্ট ময়দানের পাশ দিয়ে কোণাকুণি হাঁটছেন সলিলকুমার। রোজ ফোর্ট উইলিয়মের ডিউটি সেরে এই পথেই কিছুটা এগিয়ে পার্কসার্কাস লেখা বোর্ড টাঙানো ২০নং ট্রাম ধরে বাড়ি ফেরেন। ... ...
এই রাস্তায় কিছুদিন না যাওয়াই ভাল। রাত যত বাড়ছে কুকুরেরা তত প্রবল হয়ে পড়ছে। ইতস্তত ভাবে ইঁটগুলোও ছড়িয়ে থাকবে। ঠোক্কর খেতে খেতে আমিও লাট খাওয়া ঘুড়ির মত এদিক-সেদিক। ঘুম অনেক স্মুথ আসে। নলেন গুড়ের মত। তারপর যা হয়, ইচ্ছেকে আটকাতে নেই। দুধে আম দাও, ব্যস সব ছানাকাটা। ... ...