এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • শঙ্খপুরীর রাজকন্যা

    Indrani
    বইপত্তর | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৫ | ১১২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • indrani | 202.128.112.252 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৫ ১০:৫৫401540
  • বিপুল দাসের তিরিশখানি ছোট গল্পের সঙ্কলন 'শঙ্খপুরীর রাজকন্যা'আনন্দ পাবলিশার্স থেকে সদ্য প্রকাশিত(জুন,২০০৫), দেড়শো টাকা দাম।
    সূচিপত্র চোখ বুলিয়ে আকৃষ্ট হবেন পাঠক গল্পের নামকরণে।'রক্তচন্দন ও কালোমহিষ', 'হেমামালিনীর হিরো', 'মস্তকপ্রধান কাঁকড়া', 'চক্রবৎ সুধীর','কলনবিদ্যা ও শিল্পের জন্ম','মিউচুয়াল হয় না'-বিভিন্ন গল্পের নাম।
    প্রথম গল্প 'রক্তচন্দন ও কালো মহিষ' তারাশঙ্করকে মনে করাবেই, অনিবার্য্যভাবে মনে আসবেন 'জীবনমশাই'-
    "বুঝলে বড় বউ, আমরা বলি সুষনিশাক। আসলে কিন্তু ওটার নাম সুনিষণ্নক।লীলাবতীতে আছে ইড়া আর পিঙ্গলা জুড়ে যেমন মনকে সুষুপ্তিতে পৌঁছে দেয়, এই যমকপত্র নিষন্ন মনকে তেমনি গভীর প্রশান্তিতে নিয়ে যায়। সেই জন্য এই শাকের নাম সুনিষণ্নক...সংনিষন্নো হিমগ্রাহী মোহদোষত্রয়াপহ:"।
    গল্প শেষ হয় এ'ভাবে-"প্রাচীন সমুদ্রে দুটি সবুজকণার মতো ওরা দুজন ক্রমশ: মিশে যাচ্ছিল।...অমোঘ দু'টি ক্লোরোফিলের এই সংযোজন, ফ্ল্যাটবাড়ি পুলিশ পোস্ট অফিস হাসপাতাল ইস্কুল থানা গির্জা-সমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ধেয়ে আসা কালো মহিষকে আরো একবার যুদ্ধের ডাক দেয়।" একটিও কমা ব্যবহার না করে ফ্ল্যটবাড়ি পুলিশ...গির্জা,আর এক ঝটকায় 'জীবনমশাই'এর থেকে 'তারাকান্ত কবিরাজ' আলাদা করে দেওয়া এই সমাপ্তি পাঠকে পরের গল্পে আগ্রহী করে তোলে সহজেই।
    পরের গল্প 'শংখপুরীর রাজকন্যা'র নায়ক জগবন্ধু শাঁখারি শাঁখা বানায় শাঁখা পরায়-"শঙ্খগুলোর ভেতর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত শরীরের শেষ অংশটা যখন বের করে ফেলা হত, কথ্যভাষায় যাকে বলে গ্যাঁড়া বের করা... মনে হত , একটা প্রাণী ছিল বটে। প্রান ছিল বটে শক্ত খোলসের আড়ালে।... আরব দরিয়ায়।...বস্তার ঘেরাটোপে, গুদামের সুরক্ষায়। ওর শরীরের সব আর্দ্রতা শুষে নেয় বরানগরের গরম বাতাস, নিরম্বু, কলকাতার ধোঁয়া, সধবার কামনা'।
    পরবর্তী গল্পের নায়ক হিরো মহম্মদ-"তার 'হিরো' নামের ভেতর আরবি মুলুকের ছাপ না থাকার ব্যাপারে হিরোর কোনো হাত ছিল না। ষষ্ঠ দিবসে সে নাকি এমন হাত পা ছোঁড়া শুরু করেছিল ....বাপ মহম্মদ সিরাজুল বলে ফেলেছিল-'ছওয়াটা মোর হিরো হোবার ধইচ্ছে। ছাওআটার অ্যালা ছুকরি নাগে। এই কথা নবপ্রসূতির কানে গেলে হিরো নামই সাব্যস্ত হয়। তখন শিশুর মা শিশুকে বলছিল-...কি ও সিয়ানা মোর পুত, তোক মুই হেমামালিনী আনি দিম।... এমনও শোনা গেছিল যে হেমামালিনীর নাম শুনে ষষ্ঠ দিবসেই হিরো মহম্মদ নাকি এক চোখ বন্ধ করেছিল।"
    পরবতী গল্পগুলির প্রধান চরিত্র জমির দালাল, সাপের ওঝা,অ্যাবনর্মাল পিসতুতো ভাই,কাঁকড়া ধরা সাধু, কাজের লোক কমলা,এমনকি চা-গাছের ওল্টানো গুঁড়ির টেবিল,হাতুড়ে ডাক্তার,মাছ ধরা ছেড়ে বৈষ্ণব হয়ে যাওয়া শ্রীপদ, কুমোর কামদারঞ্জন কিম্বা বীমার দালাল সুধীর কাঞ্জিলাল যে ভাবে-"উপযুক্ত প্রিমিয়াম কেউ দিলে ঐ প্রাচীন চাঁদের কেন বীমা হবে না।....'
    বেশীর ভাগ গল্পের পটভূমিকাই উত্তরবঙ্গ, গ্রাম ও মফস্বল।
    বারে বারে এসেছে সাইকেল চালানো-"চাকার কি আশ্চর্য্য কেরামতি!থাইএর মৃদু আস্ফালন পায়ের গুলি হয়ে নেমে যায় প্যাডেলে। দাঁতওয়ালা চাকা হয়ে চেন বেয়ে ক্যালোরি পৌঁছয় পেছনের চাকায়। প্যাডেল ঘোরে, চেনের দালালিতে পেছনের চাকা ঘোরে। আর চাকা ঘোরা মানে যে এগিয়ে যাওয়া, এ কথা ক্লাস সেভেনের ইতিহাস বইএর লেখক দিগ্বিজয় মাইতি থেকে মার্ক্সসাহেব-সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন।"
    হিরো মহম্মদের নামকরণের মতই ঘুরে ঘুরে এসেছে নামকরণ-"এখানে আসার আগে ধনঞ্জয় দুটো চায়ের দোকান, একটা হোটেল পার করেছে.... চায়ের দোকান দুটোতে তাকে সবাই দাকত ধনা। কিন্তু হোটেলের ঠাকুর... আরে এইটা দেখি এক্কেরে ভেতকি মাছ...উপরন্তু নীচের ঠোঁট পুরু...এবাবদ গ্রামে তার নাম ছিল চিকা...সেই যে তার নাম ভেটকি হল সে ভুলেই গেল সে আদতে ধনঞ্জয় সর্দার, বাপের নাম যুধিষ্ঠির সর্দার... তার ওপরে দুই দিদি-ললিতা সর্দার, বিশাখা সর্দার।"

    পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক নিজের শৈলীতে নিজেই মজেছেন। ১৭ই নভেম্বরের দেশে প্রকাশিত লেখকের 'তৃষ্ণা-বলয়' সেই সম্ভাবনাকেই সমর্থন করে।
    তৃষ্ণা বলয় থেকে-"যমপুষ্করিণীর ব্রত গতকাল শুরু হয়েছে...এঁটেল মাটির ওপর প্রদীপ বসিয়ে সন্ধ্যেবেলা বাঁশের মাথায় প্লেন ওঠাত ব্রজবল্লভ। একমাস ধরে নিত্যকর্ম... প্লেনের ডানাদুটো সবুজ, বডি সাদা, ল্যাজটা লাল...একবার ফানুস ছেড়েছিল নয়ন। অনেক ওপরে উঠে হাওয়ার তানে দক্ষিন-পুব কোনাকুনি ভেসে গিয়েছিল"
    এই বইএর 'মস্তক প্রধান কাঁকড়ায়' দেখি,"যমপুষ্করিণীর ব্রত গতকাল শুরু হয়েছে...এঁটেল মাটির ওপর প্রদীপ বসিয়ে সন্ধ্যেবেলা বাঁশের মাথায় এরোপ্লেন তোলা হয়। একমাস ধরে চলবে...ডানাদুটো সবুজ, বডিটা সাদা, ল্যাজটা লাল...একবার ফানুস ছেড়েছিল ওরা। অনেক ওপরে উঠে হাওয়ার তানে দক্ষিন-পুব কোনাকুনি ভেসে গেছিল"।

    এই কারণে একটানা বইটি পড়া একঘেয়েমির সৃষ্টি করে, ক্লান্তিকর লাগে কখন কখনও। কোনো কোনো গল্প অসম্ভব ভালো লাগে এরি মধ্যে-'তোমার তুলনা তুমি, প্রাণ' তার মধ্যে একটি।

    বইএর মলাটে লেখক পরিচিতিতে লেখা আছে,'প্রাণের ধ্বংস নয়, সমস্ত প্রতিকূল পরিবেশে টিঁকে থাকার যে রহস্যময় কৌশল প্রাণ নিজেই খুঁজে নেয়, সেই বোধ সবসময় লিখতে অনুপ্রাণিত করে'।
    আমার মতে, এই চেতনাই ত্রিশটি আলেখ্যকে একসূত্রে গেঁথেছে। সেই বীমার দালালের চিন্তার মতো,"প্রাণ বড় দামী জিনিষ হে। দুশো কোটি বছর ধরে নিজেই নিজেকে শান দিয়েছে। শুধু ব্যাটন চেঞ্জ।"

    পড়ে দেখুন,কেমন লাগে আপনাদের।
  • indo | 195.10.45.200 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৫ ১৬:১৯401541
  • মনে হচ্ছে বিপুল দাসকে পড়ে ফেলা বেশ জরুরী।অল্প যে কটা লাইন তুলে দিল ইন্দ্রাণীদি, তার থেকে মহাশ্বেতা দেবী ও আবুল বাশার মনে পড়ে যায়।
    কতদিন ধরে লেখালিখি করছেন বিপুল? আগে পড়ি নি-অতি আশ্চর্য এক অপরাধ। প্রাকৃত জগৎ ও গ্রামবৃদ্ধের গল্প বলার আদিমতা বুনো মেঘের মত পেয়ে বসছে।
    উসকে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, ইন্দ্রাণীদি। রিভিউ হো তো অ্যায়সা ।
  • Samit | 59.144.52.146 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৫ ১৭:১৩401542
  • সুস্বাদু আলোচনা। বইটি পড়ার উৎসাহ পেলাম। ধন্যবাদ ইন্দ্রানী - বইটির আলোচনার জন্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন