এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • হুয়ান রুল্ফো - পেদ্রো পারামো

    dash
    বইপত্তর | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৫৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • - | 125.18.104.1 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১২:৩১391024
  • মানব বাবুর হাতে অনুবাদ হয়ে এই বই বহুদিন আগে আমাদের হাতে এসেছে। নতুন করে এই প্রবাদপ্রতীম বইটির কথা বলার এমনি খুব বেশি কিছু মানে হয় না। তবে প্রায় বছর দুয়েক ধরে ভালোলাগা বইয়ের কথা এখানে লেখাটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই খানিকটা অভ্যেসের বশেই লিখছি।

    রুল্ফোর কিছু ছোট গল্প সম্পর্কে আলোচনাও এই টই তে ঢোকানোর ইচ্ছে আছে। তবে প্রথমে এই আশ্চর্য্য ক্লাসিক টি দিয়েই শুরু করা যাক। আপনারাও যারা পড়েছেন লিখবেন।

    আমার কাছে যে এডিশনটি আছে সেটি মার্গারেট সেয়ার্স অনূদিত। উপরি পাওনা সুসান সোনতাগ এর লেখা একটি ফোরওয়ার্ড। প্রকাশক গ্রোভ প্রেস। মূল্য এগারো ডলার।

  • m_s | 202.78.237.13 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১২:৫৩391025
  • পড়ার ইচ্ছে রইল। কৌতূহল হচ্ছে।

    মূল স্প্যানিশে না পড়লে রসগ্রহণের অভাব থাকবেই...বিশেষত: এই কারণে যে, শুধু ২টি বইয়ের ভিত্তিতে (একটি ছোটগল্প সংকলন, আর পেদ্রো পারামো) এনাকে বিংশ-শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্প্যানিশ-লেখক নির্বাচিত করা হয়েছিল।

    একটি পরিত্যক্ত মফস্বল-শহর, সেই শহরের অশরীরী বাসিন্দারা, আর তাদের সাথে মূলচরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে শহরের অতীত সম্পর্কে জানা...মূলত: এই হ'ল বিষয়। অলৌকিকতা এবং বাস্তবতার টানাপোড়েন।

  • - | 125.18.104.1 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৪:২৫391026
  • প্রথম যেটা চোখে পড়ার মত, সেটা হল ব্রেভিটি। একটা অদ্ভুত কম কথা বলার অভ্যেস। রুল্ফো প্রায়শ: পুরোটা বলেন না। ন্যারেটিভ বা ডেস্ক্রিপশান গুলি আদৌ কথা দিয়ে ভর্তি নয়। আশ্চর্য্য লাগে, কারণ দক্ষিন আমেরিকার আর যে সব মাস্টার্স দের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটেছে, ফুয়েন্তেস, মার্কেস, আমাদো, নেরুদা, কোর্তাজার তাঁরা প্রত্যেকেই যাকে বলে ডিটেলের, বাচ্যের, শব্দ চয়নের সম্রাট। ফুয়েন্তেসের বাক্যবন্ধে তো মাঝে মাঝে দমবন্ধ লাগে। ক্যাম্পেন গল্পটার সেই রুদ্ধ্বশ্বাস শুরু টার কথা ভাবুন। চারিদিকে ফেস্টিভিটি কিম্বা আগুন লাগার ক্যাওসের মধ্যে দিয়ে বালথাসার বিশপের বাচ্চাটিকে চুরি করে ফেললো। বা ধরুন মার্কেজের সেই অনণুকরণীয় সৃষ্ঠি, লাভ আন্ড আদার ডেমন্স। প্রথম বাক্যে একটি পাগলাটে রাস্তার কুকুর চার ক্রীতদাসের বাজারের হট্টগোলের মধ্যে দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে গিয়ে পর পর চারজন কে কামড়ালো। তার মধ্যে শেষে কামড় খেলেন, বারো বছরের শ্রীমতি সিয়ের্ভা মারিয়া। সেদিন খুকি তাঁর জন্মদিনের বাজার করতে এসেছিলেন কোন একটা দাসীর সঙ্গে। আমাদোর গল্পে মূল আকর্ষণ পারিপার্শিকের বর্ণনা। ব্রাজিলের বাজার দৃশ্যের যাকে বলে জমাটী বিবরণ পাবেন তাঁর লেখায়।

    কিন্তু রুল্ফো এ সবের তুলনায় প্রায় নিশ্চুপ। খুব ধীর বচন। ধীর গতি। প্রতিটি বাক্য যেন চিসেল করা। তাড়া নেই। কন্টেক্সটএর ব্যাপকতা , মার্কেজ এবং ফুয়েন্তেস যা দিয়ে আমাদের মুগ্‌ধ করেন, সেটা আদৌ অনুপস্থিত নয় যদিও। রুল্ফোর পদ্ধতিটি ভিন্ন। মননের যে সব দিকে শব্দ কম তিনি সেই দিকে আকৃষ্ট।
  • - | 61.246.161.222 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২০:০৮391027
  • সাধারণ ভাবে একটা নিরুত্তাপ ধীর চলন। গতি প্রায় শূন্য। প্রারম্ভে -

    "I came to comala because I have been told that my father named Pedro Paramo, lived there. It was my mother who told me.And I had promised her that after she died I would go see him. I squeezed her hands as a sign I would do it. She was near death, and I would have promised her anything."

    বিশেষ চমক, নাট্য বা তাড়া কিছুই নাই।

    মার্কেজ দেখুন, মূলত: রুইন্স এর কথাকার হয়েও কত ভিগরাস।

    "An ash-gray dog with a white blaze on its forehead burst onto the rough terrain of the market on the first Sunday in December, knocked down tables of fried food, overturned Indians' stalls and lottery kiosks and bit four people who happened to cross its path. Three of them were black slaves. The fourth, Sierva Maria de Todos los Angeles, the only child of the Marquis de Casalduero, had come there with a mulatta servant to buy a string of bells for the celebration of her twelfth birthday." - Of Love and other Demons

    কিম্বা সেই অবিস্মরণীয় "Many years later while facing the firing squad, Colonel Aureliano Buendia remembered that distant afternoon when his father Jose Arcadio Buendia took him to discover ice." - One hundred years of solitude

    সুসান সোনতাগের ভূমিকা থেকে চুরি করে বলাই যায়, এই গল্পের শুরুটা এমন যেন বহুকথনের একটা বার্নিশ পড়েছে এই গল্পে।বহুদিনের পরিচিত, দীর্ঘজীবি গপ্পবুড়ি। মায়ের কাছে শোনা কথা যেন বলছে নায়ক হুয়ান প্রেসিয়াদো। শুরুটা বহুকথিত রূপকথার গপ্পের মত এমনি সাদামাটা, যে প্রথম ঝটকাটা একটু দেরিতেই লাগবে। দুটো গুঁতো রয়েছে ন্যারেটিভে। প্রথমত সেই লাতিন আমেরিকান সময়ের খেল। কখনো গত শতকের শেষের অতীত, কখনো বর্তমান। কখনো প্রথম পুরুষ হুয়ান প্রেসিয়াদো, কখনো বা গল্পটি পেদ্রো র জীবৎ কালের কাহিনী বলা হচ্ছে। আর প্রেসিয়াদো কোমালায় এসে পৌঁছোনোর পরে আরো গুবলেট হচ্ছে সময় নিয়ে, কখনো মৃত, কখনো জীবিত, কখনো জীবন-কাল-অস্তিঙ্কÄ নিরপেক্ষে সব মেয়েপুরুষ কথা বলে চলেছে , নানাবিধ কাজকর্ম করে চলেছে। আর পার্সপেকটিভ ক্রমাগত বদলাচ্ছে। অথচ এমন ভাবে বদলাচ্ছে যে গতির চিহ্ন মাত্র নেই। কারণ সময় এতটাই দুরাচারি আর দুর্নিবার, তাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর বিশেষ কোন অর্থ নেই। ডেস্টিনি র ভয়ংকরতা সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম, কারণ সংক্ষেপে বলা যায়, একশো বছরের নিসঙ্গতা কিম্বা একটি মৃত্যুর পূর্বঘোষণা, কিম্বা চিঠির আশায় বসে থাকা কর্নেলের কথা আমি পড়েছি, কিন্তু সেই ভয়ংকরতা র এমন নিরুত্তাপ অতিবাহন আমার অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দালির একটা না, একাধিক ছবি ই হয়তো আছে, ঠিক মনে পড়ছে না, একট ঘড়ি দুমড়ে মুচড়ে বেঁকে পড়ে আছে। সময়ের ঐ চেহারাটা , ছবি টা যদি দেখে থাকেন, বার বার মাথায় ভেসে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। রুল্ফোর সঙ্গে কোমালায় থাকতে গিয়ে।

    স্টাইলের পার্থক্যের আরেকটা কারণ হতে পারে মার্কেজ সাংবাদিক ছিলেন দীর্ঘদিন, পাঠক কে মনোযোগ হারানোর সুযোগ না দিয়ে তাঁকে চলতে হয়েছে প্রতিদিন, কিন্তু রুল্ফোর সে সব চাপ হয়তো ছিলো না।টায়ার বিক্রি করতেন, মেক্সিকোর নানা জায়্‌গায়। লেখা পড়ে মনে হয় তাঁর জীবনে তাড়া কম। অথচ ভিগর বিন্দুমাত্র কম নাই।

    সাধারণ ভাবে স্বল্পকথন রয়েছে কাফকার লেখাতেও। কুন্দেরা বলছেন তাঁর আর্ট অফ নভেল প্রবন্ধ গুচ্ছে। ফুয়েন্তেস এর শৈলীর সঙ্গে ক¾ট্রাস্টের কথা বলতে গিয়ে। বলছেন হেমিংওয়ে আর কাফকার শব্দ সম্ভার ও সীমিত।ফুয়েন্তেস এর তুলনায়। আমার অবশ্য সেটা মনে হয় নি রুল্ফোর ক্ষেত্রে। আমার মনে হয়েছে, কোমালার মত মৃত্যু উপত্যকা র বর্ণনায় এই রীতিই আদর্শ।

    তবে কয়েকটা জায়গা সত্যি গা শির শির করে।
  • tay ei katha | 192.168.1.102 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২১:৫১391028
  • হুয়ান রুল্ফো,আলেহো আর্পেন্তিয়ের,হুলিও কোর্তাসার-এই তিন লেখকের লেখা যতটুকু পড়া তা মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদের হাত ধরে।হুলিও কোর্তাসার যেহেতু একটু পুরোনো এবং তাঁর গুটিকয় অনুগল্প ছাড়া কিছুই পড়ার সৌভাগ্য হয় নি,তাই তাঁর সাথে যাদু-বাস্তবের তুলনা হয়ত বুঝব,কিন্তু কালপ্রক্ষেপের তুলনা বুঝব না।কার্পেন্তিয়েরের কিন্তু গতি ছিল,উল্টো পথে হাঁটা হয়ে যাবে।আমার মনে হয় রুল্ফোর সামান্য তুলনা টানা যেতে পারে তার দেশেরই ওক্তাভিও পাজের ছোটগল্পের সাথে ;খুব অল্প কথায় শীতলতার ভিতর আগুন তৈরি করে দেওয়া।পাজের "নীল চোখের স্তবক" বারবার পড়তে বলব।তাতে রুল্ফোর পাঠের নিবিড়তা আর গ্রহণক্ষমতা বাড়বে।
  • - | 61.246.161.222 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৪:৩০391029
  • বিংশ শতকের বিশের দশকে মেক্সিকোয় ধর্মকে কেন্দ্র করে সিভিল ওয়ার হয়েছিল। সেই সময় হুআন রুল্ফো (১৯১৭-১৯৮৬) বালক মাত্র। এক পরিচিত পাদ্রী নিজের লাইব্রেরী টি ঐ ডামাডোলের বাজারে রুল্ফো কে দেখাশুনো করতে দেন। রুল্ফো মহানন্দে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন এবং অচিরেই সিরিয়াস পাঠক হয়ে ওঠেন। পরে কর্মসূত্রে রুল্ফো কে সারা মেক্সিকো ঘুরতে হয়েছে। অসংখ্য স্থানীয় ভাষা, রূপকথার সঙ্গে তাঁর সেই ভাবেই পরিচয়। যিনি নিজের জায়গারএকটি গুরুঙ্কÄপূর্ণ রুপান্তরের সময়কে নিয়ে এই ক্লাসিক টি রচনা করবেন, তাঁর শিক্ষানবিশী শুধু লাইব্রেরী তে সীমাবদ্ধ থাকা মুশকিল।

    ঊনবিংশ শতকের শেষাংশে স্থিত পেদ্রো পারামো উপন্যাসটি। তখন মেক্সিকো তে জমির মালিকদের একছত্র ক্ষমতায় একটু একটু করে ফাটল ধরছে। দীর্ঘ দিনের সীমাহীন অনাচার এবং বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে পেদ্রো পারামোর মত ডেস্পট রা কৃষি ব্যবস্থায় যে নির্মম দখল কায়েম করেছিলেন তার থেকে মুক্তি পেতে গ্রাম উজাড় করে কৃষিজীবিরা হয় শহরের বস্তিতে পালিয়ে যাচ্ছেন জীবনের সন্ধানে নয়তো কোথাও কোথাও অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন হাতে। এই রূপান্তর তার ভয়াবহ রূপ নিয়ে উপস্থিত প্রেসিয়াদোর জবানীতে। প্রেক্ষাপটে রয়েছে কোমালার মৃত মানুষ দের অস্ফুট উচ্চারণ। অতীত আর বর্তমানের মধ্যে যোগসূত্র শুধু এই মৃতের কথোপকথন।

    পার্সপেকটিভের কথা বলছিলাম। উপন্যাসটির একটি দীর্ঘ অংশ জুড়ে রয়েছে আশচর্য্য সংলাপ। প্রেসিয়াদোর মা ডলোরেসের পূর্বপরিচিত ডরোটিয়া আর প্রেসিয়াদো কবরের ভেতরে পাশাপাশি শুয়ে কথা বলছেন। চমকপ্রদ সেই আলাপচারিতা।
  • - | 61.246.161.222 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২১:০৫391030
  • এবং আশ্চর্য্য অন্তরঙ্গ:

    ডরোটিয়া - আচ্চা, হুয়ান প্রেসিয়াদো, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করাতে চাইছো তুমি জলে ডুবে মরেছ?আমি কিন্তু তোমায় শহরের মধ্যেখানে বড় চাতাল টা খুঁজে পেয়েছি। ডোনিসের বাড়ির থেকে অনেক দূরে। ডোনিস ও ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। বলছিল তুমি মিথ্যে মিথ্যে মরার ভান করছো। ও আর আমি মিলে তোমাকে আমরা কলোনেডের আর্চ গুলোর তলা দিয়ে টানতে টানতে একটু ছায়ায় নিয়ে গেলাম।তখনি তোমার শরীর টা শক্ত হয়ে গেছিল, যেন মনে হচ্ছিল তোমার মৃত্যু হয়েছে খুব ভয়ের মধ্যে। তোমার মরার সময়ে যদি শ্বাস নেওয়ার মত কোন বাতাস না থাকতো, তুমি যা ভারী হয়ে যেতে, আমরা তোমাকে টেনে নিয়ে যেতাম কি করে আর কবর দিতাম ই বা কি করে? দেখতেই তো পাচ্ছো বাপু তোমাকে আমরা যত্ন করে কবর দিয়েচি।

    প্রেসিয়াদো - তোমার নাম ডরোটিয়ো?

    ড- টিয়ো নয়, ডরোটিয়া।

    প্রে - ঠিক ই বলেছ ডরোটিয়া, ঐ একটানা ফিসফিস একটা চাপা আওয়াজ
    ই আমার মৃত্যুর কারণ। এখন তাই মনে হচ্ছে। the murmuring killed me.

    ....

    প্রে- আমার মনে হচ্ছে , আমাদের উপর দিয়ে কেউ একটা হাঁটছে।
    ড- ভয় পেয়ো না। তোমায় আর কেউ ভয় দেখাতে পারবে না। সুন্দর মিষ্টি কিছু ভাবো। এখানে এই মাটির ভেতরে আমাদের অনেক্‌ক্ষণ থাকতে হবে যে।
  • - | 125.18.104.1 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৪:০০391031
  • মাকে দেওয়া কথা রাখতে প্রেসিয়াদো যখন কোমালার দিকে এগোতে শুরু করলেন তখন তাঁর সহযাত্রী আবান্দিয়ো কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন পেদ্রো পারামোর কথা। আবান্দিয়ো জানিয়েছিলেন তিনটে কথা। পেদ্রো পারামো বহুদিন আগে মারা গেছেন। পেদ্রো পারামো একটি জীবন্ত শয়তান। এবং তাঁর বাপের নাম ও পেদ্রো পারামো। মায়ের বর্ণনা করা স্বপ্নের কোমালা এই ভাবে খন্ড বিখন্ড হতে শুরু করেছিলো প্রেসিয়াদোর চোখের সামনে। পৌঁছে দেখলেন কোমালা, পারামোর বিস্তীর্ণ খামার মিদিয়া লুনা, গোটা এলকাটাই খাঁ খাঁ করছে মনুশ্য বিহীন। ঠিক মনুষ্য বিহীন বলা যায় কিনা জানা যাচ্ছে না। কারণ যাদের সঙ্গে প্রেসিয়াদো র দেখা হচ্ছে তারা কেউ ই বেঁচে নেই।
  • - | 125.18.104.1 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৪:৩০391032
  • গল্পটা ক্রমাগত তিন থেকে চার্টে ন্যারেটিভ স্ট্রাকচার এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। একটা হল 'প্রথম পুরুষে' লেখা। হুআন প্রেসিয়াদো বলছেন। তার মধ্যে মাঝে মাঝে কতগুলো বিবরণধর্মী অংশ আছে সেগুলো এমন ভাবে সাজানো মনে হবে প্রেসিয়াদোর মা ডলোরেস কথা বলছেন। প্রেসিয়াদো কে গল্পচ্ছলে বলছেন তাঁর যৌবনের কোমালার কথা।পেদ্রো র কথা। আরেকটা অংশ 'তৃতীয় পুরুষে' লেখা। সেখানে পেদ্রো যখন জীবিত ছিলেন, যখন কোমালায় লোকজন বেঁচে ছিলেন সে আমলের কথা। এই অংশটা অপেক্ষাকৃত ভাবে বেশি বর্ণনাত্মক। ঘটনাবহুল। আমরা যানতে পারছি, কি ভাবে পেদ্রো ক্রমাগত জমি তছরুপ করতেন, যার তার সঙ্গে শুয়ে পড়তেন, পাদ্রী রেনেটারিয়াকে স্রেফ পকেটে পুরে রাখতেন, পেদ্রো র ছেলে মিগুয়েল কি ভাবে মেয়েদের উপরে অত্যাচার করতো, মানুষ খুন করতো, একটা বিয়ে তে কোন খুনের বদলা নেওয়ার জন্য পেদ্রো কি ভাবে অসংখ্য মানুষ কে খুন করিয়েছিলেন, কি ভাবে 'ক্রিস্তেরোস যুদ্ধের' সময় মানুষ বেঁচে থাকতো, কি ভাবে কোন দিন বার্থোলোমের মেয়ে সুসানা পাগল হয়ে যান, এবং তাঁর প্রেম পেতে পেদ্রো ব্যর্থ হন, কি ভাবে এক দল বিদ্রোহী কে পয়সা দিয়ে কিনে নেন পেদ্রো এবং শেষে কি ভাবে নিজের প্রাণ দেন সম্পূর্ণ ঘটনাবিহীন ভাবে। আরেকটা অংশ আছে, যেটা আমাকে একেবারে নড়িয়ে দিয়ে গেছে, সেটা হল ঐ ডরোটিয়ার সঙ্গে হুয়ান প্রেসিয়াদো র কবরে শুয়ে শুয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনচর্যা। আমি বাপের জন্মে এ জিনিস পড়ি নি। থ্যাংকফুলি অনেকেই বাপ কেন অনেকের জন্মেই এই জিনিস কল্পনাও করতে পারবে না।
    ১৯৫৫ সালে যখন এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়, তখন কার আভা গার্দ দের মধ্যে হই হই পড়ে গেছিল। সুসান সোনতাগ জানাচ্ছেন, স্বয়ং গ্যাবো নাকি বলেছেন, এই বইটা সম্পূর্ণ মুখস্থ আছে তাঁর। রুল্ফোর যে দিকটা চমকে দেওয়ার মত সেটা হল পরিমিতি এবং ইতিহাস বোধের একটা আশ্চর্য্য ব্যালান্স। এবং এই ইতিহাসবোধ সরাসরি জাতিগর্বী, আর বিভিন্ন স্বর্ণযুগ প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে। অথচ কলোনী গুলোতে ইউরোপীয় আধুনিকতা বলতে যা বোঝায় তাকেও মুক্তি দেয় না। সম্পূর্ণ আপ্রিসিয়েশন আমার মত সাধারণ পাঠকের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এটুকু বার বার মনে হয়েছে, লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে, বোরহেস আর রুল্ফো দুটো কাউন্টার পয়েন্ট। ভালো মন্দের বিচার অবান্তর।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন