এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে - ৫

    Samran
    অন্যান্য | ১৯ জুন ২০০৭ | ১২৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Samran | 59.93.202.242 | ১৯ জুন ২০০৭ ১৮:০২389601
  • মৃদু মন্দে মন্দারমণি

    মন্দারমণি। এক কিশোরী, সমুদ্রতট। সদ্য সদ্য গজিয়ে ওঠা এই সৈকতে সবে লোকজন যেতে শুরু করেছে, নিয়মিত। সমুদ্র পাড়ের চেনা দৃশ্য ভ্যানিশ, না ট্রলার নৌকা, না শুটকির গন্ধ। স্নানাভিলষীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্নান করেন সমুদ্রে। ঢেউএর পরে ঢেউ এসে ভাঙে আর উচ্ছ্বাস বাড়ে স্নানরত ছেলে-মেয়েদের। নারী ও পুরুষদের। বাবার হাত ধরে সমুদ্রস্নান করতে আসা ছোট্ট শিশুটি তার হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে খেলা করে জল নিয়ে, তার খিলখিল হাসির শব্দ চাপা পড়ে সমুদ্রের গর্জনে। সৈকতময় ভাঙা, গোটা ঝিনুকদের মাঝে ইত:স্তত দাঁড়িয়ে দু-তিনটি ডাবওয়ালা। সাইকেলের পেছনে ঝোলানো কাঁদি কাঁদি ডাব আর সমনে ঝোলানো বাজারের থলেতে বিয়ার। একটি ডাব খেতে হলে খরচ করতে হবে দশটি টাকা আর বিয়ারের দাম জানা হয়নি। বেলা বারোটার জ্বলন্ত সূর্যের গনগনে তাপকে উপেক্ষা করে স্নানে মগ্ন কিছু মানুষ। সৈকত ধরে মাঝে মাঝেই ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। টাটা সুমো, কোয়ালিস, সাফারি। এমাথা থেকে ওমাথায়। কলেজ পালিয়ে কলকাতা থেকে আসা এক দল ছেলে-মেয়ে জলে হুটোপাটি করতে করতে নিজেদের মধ্যেই তামাশা করে, এখন কোন ক্লাস চলছে? আজকে কি কি ক্লাস ছিল? বাড়ি গিয়ে সব ঠিকঠাক বলতে হবে তো! তাদের হাসির শব্দে চাপা পড়ে সমুদ্রের গর্জন।

    ছোট বড় নানা সাইজের নানা আকারের অজস্র অজস্র ঝিনুক ছড়িয়ে আছে সৈকতে। কুড়িয়ে নেওয়ার কেউ নেই। প্রতিটি ঢেউএর সাথেই আসছে আরও ঝিনুক। ছোট্ট নুড়ির মত দেখতে আস্ত ঝিনুকও দেখলাম কিছু কিন্তু অ্যাত্ত নরম! হাতে নেওয়ামাত্রই সেগুলো ভেঙে যায়। সৈকতে যদ্দূর ঢেউ আছড়ে পড়ছে, তদ্দূর অব্দি বালি ঠান্ডা, ভেজা ভেজা। আর তারপরেই শুকনো তপ্ত বালি। খালি পা রাখতেই মনে হল যেন ফোস্কা পড়ল পায়ে! এই তপ্ত বালিতেও কিছু মানুষ বসে আছেন। কেউ বা বেড়াতে এসেছেন, কেউ বা ওখানকারই লোক। দুজন মানুষকে দেখলাম খানিকটা বালি সরিয়ে তাতে প্লাষ্টিক বিছিয়ে জল ঢেলে দিয়েছেন দু-তিন গামলা। ছোট্ট, খুব ছোট্ট এক পুকুর যেন! তাতে কিলবিল কিলবিল করছে ভীষণ ছোট্ট সব মাছ, ইঞ্চিখানেক লম্বা সাপ। মানুষটি বসে বসে কিছু একটা বেছে আলাদা করছেন আর সেই আলাদা করে তুলে রাখা অতি ক্ষুদ্র মাছগুলি তুলে রাখছেন পাশেই রাখা প্লাস্টিকের গামলাভর্তি জলে। খানিক দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করেও বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করব ভেবেও কিছু বললাম না, একাগ্র মানুষটির মনযোগ নষ্ট করতে মন চাইল না বলে। ডাবওয়ালারা ভিজে গামছা গায়ে মাথায় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে গরম বালিতে। বিচের দিকে এগুনো যে কোন মানুষকে দেখেই এগিয়ে আসছে তারা সাইকেল নিয়ে, ডাব খান বাবু ডাব। ডাব খাবেন না? তবে বিয়ার খান! তোমরা বিয়ারও রাখো নাকি? জানতে চাইলে জবাব এলো, হ্যাঁ দিদি, রাখি। যা চান সবই পাবেন! কি চাই বলুন!

    চারিদিকে তাকিয়ে দেখি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বেশ কিছু মানুষ। কেউ বসে আছেন একেবারে জলের ধারটি ঘেঁষে, কোলে একেবারেই ছোট বাচ্চা। কর্তা গিন্নি দুজনেই জলের ধারে বসে আছেন। ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিলে যেটুকু স্নান হয় ওটুকুতেই তারা খুশি। স্কুলপড়ুয়া তিনটি ছেলে নেমে গেছে অনেকটা জলে। ঢেউএর সাথে সাথে ওরা ডুবছে ভাসছে। মাঝে মাঝে দেখাও যাচ্ছে না ওদের। আবার দেখা যায়, ঐ যে! ওরা লাফাচ্ছে! আমার মনে হল, এভাবেই তো সমুদ্রে স্নান করতে এসে ডুবে যায় অনেকে। মাঝে মাঝেই খবরের কাগজে থাকে সেই সব খবর। কিন্তু ঐ বাচ্চাগুলোর কোনদিকে কোন খেয়াল নেই। বিশাল উঁচু উঁচু ঢেউএর মাথায় চেপে চেপে তার চলে যাচ্ছে দূরে আরও দূরে!

    একটু উঁচু জায়গায় চটি রেখে এগিয়ে যাই জলের দিকে। ঝিনুক কোড়োতে কুড়োতে। দু'হাত ভরে ওঠে নিমেষেই। এত ঝিনুক এতো এতো ঝিনুক! এক সময় মনে হয় থাক, কী হবে! ক'টা ঝিনুক আমি সাজিয়ে রাখব? থাক ওরা এখানেই। সমুদ্র এখানে খুব কাছে ডাঙা থেকে। খুব খুব কাছে। বিছিয়ে আছে এক সাগর জল নিয়ে। শুয়ে আছে। ঘোলাটে জল নিয়ে ধুসর সমুদ্র বিছিয়ে আছে দৃষ্টিসীমার বাইরে অব্দি। এই সমুদ্রকে, এই বিছিয়ে থাকা বিস্তীর্ণ জলরাশিকে এখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। সত্যি সত্যিই ছোঁয়া যায়! হাতে নেওয়া যায় আঁজলাভর্তি জল। যদিও নিমেষেই আবার তা গড়িয়ে নেমে যায় সাগরেই! একমুঠো বালি তুলে আনি আমি জলের ভেতর থেকে, মুঠো খোলার আগেই বালি নেমে যায় জলের সাথে। আমি দেখতে পাই আমার হাতে ছোট্ট এক নুড়ি আর একটা ছোট্ট ঝিনুক, জ্যান্ত! আমি ওকে আবার জলেই ফিরিয়ে দিই, নুড়িটিকেও। এই সমুদ্র গায়ে মেখে জলপরী হওয়া যায়। ঢেউ ভেঙে ভেঙে যদিও খুব বেশিদূর এগুতে পারি না আমি। ঢেউ আমাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসে ডাঙায়, যেন ফিরিয়ে দিয়ে যায়। যেন বলে, ওরে কোথায় যাচ্ছিস, ডুবে যাবি যে! নোনা জলে জ্বালা করে ওঠে চোখ।

    ছোট ছোট চারটি গ্রাম নিয়ে এই মন্দারমণি । দাদনপাত্রবার, সোনামুই, মন্দারমণি ( চতুর্থ গ্রামের নামটি ভুলে গেছি)। পাশাপাশি ছোট্ট ছোট্ট সব গ্রাম, আগে সমুদ্রের কাছে ছিলনা বোধহয় এখন বেশীর্ভগ্‌টাই সমুদ্রে অল্প একটু অংশ পড়ে আছে বাইরে, তাও ক'দিন আছে বলা যায় না। সমুদ্রতীরবর্তী সব গ্রামে ছিল নোনা জলের ভেড়ি। "রোজভ্যালী'র মালিকেরা মন্দারমণিতে মাছের ব্যবসা করতে গেছিলেন বছর পাঁচেক আগে। সস্তার জমি কিনে মাছের ভেড়ি করলেন তারা। একটি দুটি ঘর তৈরী হল একটি গেষ্টহাউস মতন। যেখানে মাছ কিনতে আসা লোকজন এসে রাত্রিযাপন করতেন। সৈকতের সৌন্দর্যে মুগ্‌ধ হয়ে তাঁরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদেরও নিয়ে আসতে লাগলেন। ঘর বাড়তে লাগল গেষ্টহাউসের আর কিছুদিনের মধ্যেই সেই গেষ্টহাউস রূপ নিল এক চারতারা হোটেলের। সমুদ্রের একেবারে ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেই হোটেল। মাছের ব্যবসা করতে আসা রোজভ্যালী সেখানে শুরু করল হোটেলব্যবসা। দেখাদেখি সেখানে দাঁড়িয়ে গেল আরও কিছু হোটেল, কটেজ। রমরমা ব্যবসা। কোন হোটেলে, কটেজে একটি ঘরও খালি থাকে না সেখানে এখন জানাল গার্ডেন রিট্রিট নামের রঙচঙে কটেজের কেয়ারটেকার কাম ম্যানেজার বিশুবাবু।

    পাঁচখানা ঘর নিয়ে পাঁচমাস আগে হয়েছে এই গার্ডেন রিট্রিট কটেজ। রাস্তার ধারে খনিকটা জায়গা গোল করে ঘিরে নিয়ে মাথায় খড়ের ছাউনি দিয়ে রিসেপশন কাম সিটিংপ্লেস। পাশেই একটা লম্বাটে ঘরমত জায়গা, তারও মাথায় খড়েরই ছউনি। চারপাশ আদ্ধেকটা ঘেরা। কাঠের খুঁটির উপরে দাঁড়িয়ে আছে এই খাওয়ার ঘরের ছাউনি। খাওয়ার ঘরের পাশেই ডানধার ধরে একের পর এক ছোট ছোট এক কামরার ঘর, কটেজ। সাথে একফালি বাথরুম। সারি দিয়ে একের পর এক ঘর, শেষমাথার ঘরখানিতে আমরা ঠাঁই নিয়েছিলাম একবেলার জন্যে। এই ঘরের পেছনে কাজ চলছে আরও পাঁচখানি ঘরের। তবে এই ঘরগুলি ইটের। কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, লাল ইটের ঘরগুলি প্রায় তৈরী।

    গাঢ় লাল হাফ ইটের দেওয়ালের উপর গাঢ় সবুজ দরমার বেড়া আর মাথায় সাদা অ্যাসবেষ্টাসের চাল দেওয়া এই কটেজগুলির পোষাকী নাম গার্ডেন রিট্রিট । কালো কাঁচের জানালাগুলোর ধারগুলো সবুজে রাঙানো। কালো কাঁচের মাথা নিচু দরজা আর দুটো করে জানালা। ঘরের ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল নীল আর সাদা চৌকো চৌকো খোপকাটা ছাপওয়ালা স্যাটিন কাপড়ের চাঁদোয়া টাঙানো অ্যাসবেষ্টাসের নিচে। আধো আধো আলো আঁধারির খেলা সেখানে। লাল, সবুজ, নীল আর সাদা রং সাথে কালো কাচের দরজা জানালা। সব মিলে মিশে সৃষ্টি করেছে এক অদ্ভুত রঙ্গ। গরমটাকে উপেক্ষা করতে পারলে শুধু এই রংএর খেলা দেখেই হয়ত কাটিয়ে দেওয়া যেত একটি বেলা। কিন্তু না। এই গরমকে উপেক্ষা করা গেল না কিছুতেই। আসবাব বলতে এক প্রশস্ত বিছানা, ছোট একখানি সাইড টেবল, কাঁচের আর দু'খানি প্লাষ্টিকের চেয়ার। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে চোখে পড়ে এক মরা বেগুনের বাগান। এবড়ো-খেবড়ো শুকনো ধুলোময় বালুমাটিতে বাগানসুদ্ধু গাছগুলো মরা। দাঁড়িয়ে আছে কে জানে কার, কিসের সাক্ষী হয়ে। কাদের এই বাগান? এই কটেজ মালিকেরই কি? এখানকার এই কটেজের ব্যবসা দেখতে দেখতে কারও একটুও হয়ত সময় হয়নি ঐ গাছেদের গোড়ায় একটু জল দেওয়ার। শুকিয়ে গেছে তাই এক বাগানভর্তি বেগুনগাছ! মরা বেগুনের বাগানের পাশেই সবুজ পত্রবহুল এক নিমগাছ। কী অদ্ভুত!

    মন্দারমণিতে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছোয়নি। তাতে কি? জেনারেটর আছে কী করতে। হোটেল, কটেজ সবই চলে জেনারটরে। নামমাত্র খরচে যে যেভাবে পারে কটেজ তুলে দাঁড়িয়ে পড়েছে সেখানে ব্যবসা করতে। দরমার বেড়া, অ্যাসবেষ্টাসের চালের মাথা নিচু সেই সব কটেজে ঢুকলে জাহান্নামের আগুনের আঁচ খানিকটা টের পাওয়া যায়। জেনারেটরে চলা পাখার বাতাস যেন আগুন ছড়ায় সেই কটেজে। যারা চার অংকে বিল মেটাতে পারবেন তাঁরা ওঠেন রোজভ্যালীর চারতারা হোটেলে, সেখানে ঘরগুলো তাপানুকূল। আমাদের মত পাতি মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের সম্বল ঐ জাহান্নামসম কটেজ।

    সেখানে করে খাচ্ছেন এখন বেশ কিছু মানুষ। কেউ বা দিয়েছেন বিস্কুট, সফট ড্রিংকস, চিপসের দোকান তো কেউ কিনেছেন গাড়ি। মারুতী ভ্যান, টাটাসুমো নিদেনপক্ষে একটি অ্যাম্বাসেডর। গাড়ি কেনার টাকা এসেছে ফসলী জমি বিক্রী করে। সেইসব জমি আবার কিনে সেখানে ঢালাও চলছে মাছের ব্যবসা। তৈরিই হয়েছে সব ভেড়ি। বাগদা, পোনা, তেলাপিয়ারা সেখানে বড় হয় মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে। জমি বিক্রী করে যাঁরা গাড়ি কিনেছেন তাঁরাও ভালই করে খাচ্ছেন। দশ কিলোমিটার মতন রাস্তা কলকাতা দীঘা মহাসড়ক থেকে। যেতে হয় চাউলখোলায় নেমে। ট্রেকার আর ইঞ্জিনচালিত ভ্যানরিক্সা ছাড়া যাতায়াতের একমাত্র সম্বল এই গাড়িগুলি। চড়া ভাড়ায় দল বেঁধে মানুষ চাপেন এই গাড়িগুলোতে। হোটেল, কটেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন গাড়ির মালিকেরা গাড়ি নিয়ে। বেড়াতে আসা যাত্রীদের পৌঁছে দিয়ে আসেন এঁরা কাঁথি, জুনপুট, দীঘা। দশ কিলোমিটার দূরের চাউলখোলায় যেতে একটি মারুতী ভ্যান ভাড়া নেয় দুশো পঞ্চাশ টাকা, কাঁথি নিয়ে গেলে নেয় সাড়ে চারশো টাকা। যাঁরা ফোন করে হোটেল-কটেজ বুক করে আসেন, তাঁরা চাইলে এই সব গাড়িগুলো এসে তাঁদের নিয়ে যায় কাঁথি, জুনপুট কিংবা দীঘা থেকে। ভাঙা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার ঝাঁকুনি কিংবা ধুলো থেকে অনেকটাই বাঁচিয়ে দেয় এই গাড়ি। গরমের কথা বলাই বাহুল্য।

    অনেকেই একবেলার জন্যে এসে ঘুরে যান এই মন্দারমণিতে। গাড়ি করে সকাল সকাল এসে ঘুরে বেড়িয়ে, সমুদ্রস্নান করে আবার ফিরে যাওয়া জুনপুট, দীঘা কিংবা কলকাতায়। চমৎকার দীর্ঘ সৈকত, প্রবল গর্জনে আছড়ে পড়া সমুদ্র আর দূরে বিস্তৃত নারকেল বন। একটু নীরবতা প্রার্থীদের বেড়াতে আসার জন্যে আদর্শ স্থান। সাথে গাড়ি থাকলে ঘুরে আসা যায় আঠেরো কিলোমিটার লম্বা এই বিচ, যার সাথে সাথেই এগিয়েছে নারকেলের বনও। গাড়ি না থাকলে চুপটি করে বসে পড়া যায় কোথাও একটা জায়গা দেখে নিয়ে। তবে যাঁরা রাত্রিবাস করবেন না তাঁদের এখানে বেলা বেশি না করাটাই শ্রেয়। নইলে মিস করতে হতে পারে কলকাতা ফেরার সাড়ে চারটের লাষ্ট বাসটি। যেমন আমরা করেছিলাম। তারপর? একটি বাসের অপেক্ষায় হা পিত্যেশ! মেচেদা, হলদিয়া। যাহোক কিছু একটা! সময় বুঝে আকাশের কোণে জমে ওঠে ঘন মেঘ, ঘন কালো। দেখতে দেখতেই তা ছড়িয়ে যায় গোটা আকাশে , দেয় গুরুগম্ভীর ডাক আর নেমে আসে অঝোর বৃষ্টি। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে কোনমতে দাঁড়িয়ে থাকা, টিনের চাল ভেদ করে মাথায় বৃষ্টির ফোটারা এসে পড়ে টুপটাপ টুপটাপ। কিছুই না পেয়ে অগত্যা উল্টো দিকের বাস ধরে যেতে হবে দীঘায় আর যাওয়ার আগে অবশ্যই মনে মনে একটা হিসেব করে নিতে হবে, হাতে এক্সট্রা সময় আর পয়সাকড়ি আছে তো!

    মফিজুল। মারুতী ভ্যানের মালিক। নিজেই গাড়ি চালিয়ে পর্যটকদের নিয়া আসা যাওয়া করে, কাঁথি, জুনপুট, দীঘা। আবার ফিরে আসে মন্দারমণি। মফিজুলের বাড়ি সোনামুই'তে। গ্রামের নামটি কি সোনামুখী? না না। সোনামুখী নয়, সোনামুই! মফিজুলদের একসম বিঘা তিরিশ জমি ছিল। সম্পন্ন চাষী পরিবার। কিন্তু এখন আর নেই সেই জমি। সমুদ্র খেয়ে নিয়েছে ওদের চাষের জমি। এখনও খানিকটা বেঁচে আছে। বিঘে দশ মতন। তবে এও যেতে পারে সাগরের পেটে যে কোন সময়। সময় থাকতে মফিজুল তাই বেঁচে থাকা জমিটুকু বিক্রী করে দিয়েছে মাছের ব্যবসা করতে আসা একজনের কাছে, সেই টাকায় মফিজুল কিনেছে এই গাড়ি আর একটি ট্রাক্টর। গাড়িটি সে নিজেই চালায়। ট্রাক্টর ভাড়ায় খাটে। যাত্রীর আশায় মফিজুল যখন দাঁড়িয়ে থাকে কটেজের সামনে তখন পরম মমতায় পালকের ঝাড়ন দিয়ে ধুলো ঝাড়ে গাড়ির গা থেকে। নরম কাপড় দিয়ে মুছে মুছে চকচকে করে তোলে সে তার গাড়ির শরীর। মফিজুলদের গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ যায়নি। মন্দারমণি থেকে মাইল পাঁচেক দূরে বিদ্যুৎএর শেষ খুঁটিটি দাঁড়িয়ে আছে। এরপরে আর কবে এগোবে তা মফিজুল জানে না। তবে এগোবে এটুকু জানে। কারণ, যেভাবে বাইরের মানুষ মন্দারমণিতে আসছে, মাছের ব্যবসা, হোটেলব্যবসা করছে, তাদের নিজেদের তাগিদেই তারা বিদ্যুৎএর জন্যে দৌড়-ঝাঁপ করবে আর আলো নিয়ে আসবে এটা মফিজুলের বিশ্বাস।

    সামরান

  • I | 172.159.240.178 | ১৯ জুন ২০০৭ ১৯:৫০389602
  • বা : !
  • m | 71.239.32.103 | ২০ জুন ২০০৭ ০২:৩০389603
  • সামরানদি,
    চমৎকার:)
  • S | 61.95.167.91 | ২০ জুন ২০০৭ ১০:৪০389604
  • সামরান,

    অসাধরণ। কিন্তু জায়গাটা কোথায়? পবঙ্গ, না ওড়িশা?
  • Blank | 74.130.201.170 | ২০ জুন ২০০৭ ১১:১৭389605
  • প: ব: তেই
  • sumeru | 59.93.197.103 | ২০ জুন ২০০৭ ১৮:১৯389606
  • তারপর দীঘা গিয়ে কি হইল?
  • dri | 129.46.154.111 | ২১ জুন ২০০৭ ০২:২৯389607
  • আমারও সেই একই প্রশ্ন। তারপর?
  • dri | 129.46.154.111 | ২৩ জুন ২০০৭ ০২:৪৫389608
  • গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়ল কেন?
  • Tina | 71.166.101.129 | ২৩ জুন ২০০৭ ০৪:২০389609
  • সামরান-দি,
    মন্দারমণি যাবো কিভাবে? মনে কলকাতা থেকে কিভাবে যাওয়া যায়?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন