এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • শংকর ভাষ‍্যে - বশী বন্দনা

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩৬২৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  •    শঙ্করীপ্রসাদ বসু ছিলেন পেশায় অধ‍্যাপক। নেশায় বিবেকানন্দ গবেষক। সাত খণ্ডে "বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ" গ্ৰন্থ রচনার জন‍্য তিনি সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কারে সম্মানিত হন। একদা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শঙ্করীপ্রসাদ দীর্ঘদিন ওখানে বাংলা বিভাগে অধ‍্যাপনা করে অবশেষে নয় বছর বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে অবসর নেন। গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে ১৯৯৫তে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কিত আর্কাইভের জন্মলগ্ন হতে আমৃত্যু সংযুক্ত ছিলেন। হয়েছিলেন সেই আর্কাইভের ডিরেক্টর। ডঃ নিমাইসাধন বসু‌ও একজন ঐতিহাসিক, শিক্ষাবিদ। মাধ‍্যমিকে ওনার ইতিহাস ‌ব‌ই পড়ে‌ছি। সাবলীল ভাষা, সুন্দর বিষয় বিন‍্যাস, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা, ঝকঝকে ছাপার ব‌ই‌টি ছিল আমার খুব প্রিয়। ডঃ ভোলানাথ চক্রবর্তী ছিলেন এক প্রখ‍্যাত হোমিওপ্যাথ। রাষ্ট্রপতি, রাজ‍্যপালের চিকিৎসার জন‍্য‌ও ওনার ডাক পড়তো।
     

       উপরোক্ত তিন বিখ‍্যাত ব‍্যক্তিত্ব‌ই ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হা‌ওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন নামক স্বনামধন‍্য বিদ‍্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। ১৯৫৬ সালে সেই  বিদ‍্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক শাখার ভবনটি‌র উদ্বোধন করেন আর এক মহান ব‍্যক্তিত্ব - তদানীন্তন রাজ‍্যপাল ডঃ হরেন্দ্রনাথ মুখার্জী।  মণিশংকর মুখোপাধ্যায় বা জনপ্রিয়, সাহিত‍্য আকাদেমী পুরস্কার‌প্রাপ্ত লেখক - শংকর‌ও ছিলেন বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশনের ছাত্র। বয়সে ৫ বছরের অগ্ৰজ বিবেকানন্দ স্কুলের শঙ্করীপ্রসাদ শংকরকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহভরে তুই তোকারি করতেন। লেখা‌র ব‍্যাপারে উৎসাহ, তথ‍্য, পরামর্শ, দিশা জুগিয়েছে‌ন। অবশ‍্য শংকর তাঁর স্বভাবজ বিনয়ে অনেক অগ্ৰজ লেখকের স্নেহ‌ভাজন ছিলেন - যেমন বিমল মিত্র। শংকরের প্রথম ব‌ই "কত অজানারে" ও দ্বিতীয় ব‌ই "চৌরঙ্গী" প্রকাশের পর শঙ্করীপ্রসাদ অনুজ শংকরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন - হাইকোর্টের অভিজ্ঞতা, হোটেলের আখ‍্যান তো হোলো - এবার নতুন কোনো বিষয়ে লেখ্। দীর্ঘ এক বছরের প্রচেষ্টায় শংকর লিখলেন - "নিবেদিতা রিসার্চ ল‍্যাবরেটরি"। 
     

     ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে - "শারদীয়া বর্তমান" ১৪২৮এ প্রকাশিত শংকরের একটি বিশেষ রচনা - "কেমনে তোমারে ভুলি?" পড়ে বেশ লাগলো। নানা অজানা বিষয় জানলাম। যেমন ঐ নিবন্ধের কেন্দ্রীয় বাস্তব চরিত্র - বশী সেনের আদলেই নির্মিত হয়েছিল নিবেদিতা রিসার্চ ল‍্যাবরেটরি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র - বিজ্ঞানী জীমূতবাহন সেন।



    শংকরের এই বিশেষ রচনার চরিত্র - বিশ্ববিখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী বশীশ্বর সেন - আদিতে  বিষ্ণু‌পুর নিবাসী বশী সেন। হায়! এনার প্রেক্ষাপট, কর্মকাণ্ড তো দুরের কথা - ২০২২এ শংকরের লেখাটি পড়ার আগে অবধি আমি ওনার নাম পর্যন্ত শুনিনি‌। কী লজ্জা! শংকরের লেখা‌য় ওনার সম্পর্কে অনেক কথা জানলাম - যেমন কীভাবে লেওনার্ড এলমহার্স্ট বারংবার ওনাকে নানাভাবে আর্থিক সাহায্য করেছে‌ন। কেমব্রিজ ও কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত এই বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ কৃষি‌বিজ্ঞানী‌র কথা অবশ‍্য কিছুটা জানা ছিল। জানতাম তিনি শান্তি‌নিকেতনে বেশ কিছুদিন থেকে রবীন্দ্রনাথের আশ্রমে কাজ করেছেন, সেখানে স্থাপনা করেছেন Institute of Rural Reconstruction. 
     

    শংকরের ঐ লেখায় মহান বিজ্ঞানী আচার্য্য জগদীশ চন্দ্রের কিছু চারিত্রিক ক্ষুদ্রতা জেনে দুঃখ পেলাম। বশী সেন তাঁর সাহায্য‌কারী হিসেবে বারো বছর কাজ করে একদিন‌ও ছুটি নেননি - কিন্তু ছোট ভাই সতীশ্বরের প্রবল অসুস্থতার জন‍্য একটি রবিবার না আসায়, আচার্য্য বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বশী সেন তিন বছরের মেহনতে তৈরী করে তাঁর মৌলিক গবেষণার খসড়া দেখতে দিয়েছিলেন জগদীশ‌ চন্দ্রকে। মহান আচার্য্য বশী সেনের নামোল্লেখ অবধি না করে তা বিদেশে‌র জার্নালে নিজের নামে ছাপিয়ে দিলেন! 
     
     অন‍্য লেখা‌তে পড়েছি সমসাময়িক ঋষি‌প্রতি‌ম বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের প্রকাশিত গবেষণা‌পত্রে সেই গবেষণায় তাঁর সহকারী‌দের নাম‌ও থাকতো। জগদীশ‌ চন্দ্রর তেমন সৌজন্য‌বোধ, মানবিক উদারতা ছিল না। তাই জগদীশ চন্দ্রের র প্রকাশিত গবেষণা পত্রে তাঁর বিশেষ সহকারী‌দের নাম‌ও থাকতো না।

       একবার আমেরিকা‌ন গবেষক গ্ৰেন ওভারটন বশীকে এক বছরের জন‍্য সহকারী হিসেবে নিয়ে যেতে চাইলে‌ন। বশী আচার্য্য‌র কাছে এক বছরের ছুটি চাইলেন। বিরক্ত হয়ে আচার্য্য বসু বললেন -"যদি তোমার এখানে কাজ করতে ভালো না লাগে তাহলে যেখানে খুশী যেতে পারো"। একযুগ ধরে নিরলস কর্মসেবার যোগ‍্য পুরস্কার! 
     
      চলে গেলেন বশী আমেরিকা‌য়। তবু বশী যে দুজন মানুষের শতায়ু কামনা করতেন - তাঁদের একজন রবীন্দ্রনাথ। অন‍্যজন জগদীশ‌ চন্দ্র‌। এতেই 'সদানন্দ‌র কুত্তা' বশীশ্বর সেনের মহানুভবতা উপলব্ধি করা যায়।
     
     
      বিবেকানন্দ যখন স্বামী‌জী হয়ে বিশ্ববিখ্যাত হননি, সেই তখন যে মানুষটি নির্দ্বিধায় এক অচেনা রমতা যোগীর শিষ‍্যত্ব গ্ৰহণ করে হেলায় উত্তরপ্রদেশে হাতরাশ স্টেশনের রেল কর্মচারী‌র চাকরি ছেড়ে বিবেকানন্দ‌র সাথে অনির্দিষ্ট সন্ন‍্যাসযাত্রায় পথে নামেন - স্বামী‌জীর সেই  প্রথম শিষ‍্য‌ই সদানন্দ। পরে বশী সেন শিষ‍্যত্ব গ্ৰহণ করেন সদানন্দ‌র। বশীদের বিষ্ণুপুরের নিবাসে‌ স্বামী সদানন্দ এসেছেন, থেকেছে‌ন। বশী পেয়েছেন গুরুসেবার সুযোগ। মৃত্যুর আগে বশীশ্বর, ভাই মতীশ্বর ও বশীর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সহপাঠী বিভূতি ঘোষকে সদানন্দ সস্নেহে বলেছিলেন - "যা শালারা ডালকুত্তা রেখে গেলাম - তোদের কিছু করতে পেরেছি কী পারিনি জানি না - তোদের কর্তার (স্বামীজীর) সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি"। আজীবন বশী তাই তাঁর গুরু সদানন্দ‌র কুকুর হতে পেরে নিজেকে ধন‍্য মনে করেছেন। 

      আমেরিকা থেকে ফিরে বশী পুনরায় আচার্য্য জগদীশ চন্দ্রের কাছে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে যোগ দিতে চাইলেন। ইচ্ছা প্রকাশ করলেন আচার্য্য একটি ঘর দিলে বশী নিজের মতো কিছু গবেষণা করতে পারেন। আচার্য্য বশী‌র ইচ্ছা‌য় সাড়া দিলেন না। 
     
       তখন বশী কলকাতা‌য় তাঁদের আট নম্বর বোসপাড়া লেনের ছোট্ট বাড়ির রান্না‌ঘরে স্থাপনা করলেন - "বিবেকানন্দ ল‍্যাবরেটরি"। ঐ বাড়িতে‌ই ১৯১১তে দেহাবসানের আগে অবধি বশী ও ভাই মতী দু বছর তাঁদের মৃত্যুপথযাত্রী গুরু সদানন্দ‌র সেবা করেছেন। মৃত্যুর পর দোতলায় সদানন্দ‌র স্মৃতি রক্ষিত। একতলায় একটিমাত্র কক্ষ। তাই রান্নাঘরে দুটি চাকা লাগানো বাক্সের ওপর শুরু হোলো ল‍্যাবরেটরি‌র কাজ। রাতে যন্ত্রপাতি সরিয়ে ওটাই শোয়ার জায়গা।
     

      আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র পিছিয়ে গেলে‌ও এহেন অভিনব বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা‌য় এগিয়ে এলেন অন‍্য অনেকে। যেমন বিবেকানন্দের আমেরিকা‌ন বন্ধু (হ‍্যাঁ, তিনি নিজেকে স্বামীজীর শিষ‍্যার বদলে বন্ধু‌ই ভাবতেন) যোশেফিন ম‍্যাকলাউড। বিবেকানন্দে নিবেদিত‌প্রাণা এই মহিলা বহুভাবে অর্থসাহায্য করে গেছেন। বেলুড় মঠের স্থাপনা‌তে‌ও তাঁর আর্থিক সাহায্য ছিল। এগিয়ে এলেন শিল্পী নিকোলা বোয়েরিস, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয়। এবং আবার সেই লেওনার্ড এলমহার্স্ট! তিনি বিনামূল্যে কিছু যন্ত্রপাতি পাঠানো ছাড়াও নিয়মিত বশীকে ডলার পাঠাতেন। লন্ডনের রয়‍্যাল সোসাইটি পাঠাতো বছরে সত্তর পাউন্ড অনুদান।  
     

      পরে সেই ল‍্যাবরেটরি স্থানান্তরিত হয় আলমোড়ার কুন্দন হাউসে। ১৯৪৩এর দুর্ভিক্ষ দেখে বিচলিত বশী উচ্চফলনশীল বীজের গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। আজ‌ও উইকিপিডিয়া খুললে দেখা যাবে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সময়ে পাঞ্জাবে যে সবুজ বিপ্লবের শুরুয়াৎ হয়েছিল - তার রূপকার ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী এম এস স্বামী‌নাথন - সেই এন্ট্রি‌তে বশী সেনের কোনো উল্লেখ অবধি নেই। কিন্তু স্বামী‌নাথন জানতেন বশী সেনের বৈজ্ঞানিক অবদান। মান‍্য করতেন তাঁকে। বশী সেন সম্পর্কে লিখিত গিরিশ মেহরার গ্ৰন্থের ভূমিকা‌য় স্বামী‌নথন কৃষি‌বিপ্লবে বশী‌ সেনের অবদান কৃতজ্ঞ‌চিত্তে স্মরণ করে লিখে‌ছেন - one of the greatest classics of our time.

    বশী সেনের সাথে নেহরুর সুসম্পর্ক ছিল। ১৯৫৭ সালে বশী পদ্মভূষণ উপাধি পান। ১৯৫৯ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকার হাবালবাগে কৃষি গবেষণা‌র জন‍্য বিবেকানন্দ ল‍্যাবরেটরি‌কে ২১৫ একর জমি দান করে। বশীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধীর উদ‍্যোগে সেই ল‍্যাবরেটরি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে সংযুক্ত হয় ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র - ICAR বা Indian Council of Agricultural Research এর সাথে। তখন ICAR এর ডিরেক্টর ছিলেন স্বামী‌নাথন। বশী‌র অনুরোধ ছিল ল‍্যাবরেটরি‌র জন্মলগ্ন থেকে জড়িত "বিবেকানন্দ" নামটি যেন বাদ না যায়। কথা রেখেছি‌লেন স্বামী‌নাথন। বশী সেন স্থাপিত সেই গবেষণা‌গারের নাম হয় - "বিবেকানন্দ পার্বত‍্য কৃষি অনুসন্ধান সংস্থা‌ন"। 

    শংকরের সেই লেখা‌তেই পড়েছিলাম এমন একটি বৈজ্ঞানিক তথ‍্য যা সেযাবৎ ছিল আমার অজানা। ইলেকট্রিসিটি, কম্প্রেসর ছাড়াই শূণ‍্য ডিগ্ৰি অবধি তাপমান নামিয়ে দিতে সক্ষম ১৯২০ দশকের এক  গুপীযন্ত্র - কেরোসিন রেফ্রিজারেটর! মৃত্যুর চার বছর আগে রবীন্দ্রনাথ বশী সেনের আমন্ত্রণে আলমোড়ায় এসে কিছু‌দিন ছিলেন। তাঁর জন‍্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সেন্ট মার্কস ভবন। বিবেকানন্দের মতো রবীন্দ্রনাথ‌ও ছিলেন আইসক্রিমের ভক্ত। আলমোড়ায় কবি‌র সেই বাসভবন থেকে মাঝে মাঝে ডাণ্ডিতে করে নিয়ে আসা হোতো বশী সেনের গবেষণা‌গার কাম বাসস্থান কুন্দন হাউসে। কেরোসিন ফ্রী‌জে জমানো আইসক্রিম তৃপ্তি সহকারে খেতেন কবি।

    জানলাম বশী সেন ছিলেন এক বিশেষ ধরণের বডি ম‍্যাসাজে দক্ষ। বশী সেন দিল্লিতে গেলে নিদ্রা‌হীনতায় আক্রান্ত জহরলালের কপালে ম‍্যাসাজ করে দেওয়ার জন‍্য কখনো তিনমুর্তি ভবনে সাদর ডাক পড়তো বশীর। তাঁর আঙুলের জাদুচলনে অচিরেই ঘুমিয়ে পড়তেন নেহরু। 

    এমনই সব নানা বিষ্ময়কর, অজানা তথ‍্যের খাজানা শংকরের ঐ লেখাটি। এমন লেখা পড়ে সেই পাঠানন্দ নিজের মধ‍্যে রেখে দেওয়া মুশকিল। তাই তার কিছু নির্যাস এখানে শেয়ার করলাম।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩৬২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৫527829
  • @র২হ

    সূত্র দেওয়ার জন‍্য ধন‍্যবাদ।



    এবার :।:- এর মন্তব্য “এইটা বেশ শিশিবোতল লাগলো।” - বোঝা গেল। অর্থাৎ আমার দেওয়া শিরোনাম‌ - “শংকর ভাষ‍্যে - বশী বন্দনা” - :।: এর কাছে হযবরল-তে নেড়ার গানে বর্ণিত শিশিবোতল সদৃশ মাথামুন্ডু‌হীন লেগেছে। অর্থাৎ ওটা থেকে - লেখাটির যে মূল প্রতিপাদ‍্য বিষয় - শংকরের লেখনী‌তে বশী বন্দনা - এটা বোঝার কোনো সম্ভাবনা‌ই নেই।

    বেশ। একটা নতুন পার্সপেক্টিভ পেলাম। 
     
  • শিশিবোতল মানে শক্ত | 97.81.101.181 | ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৭527830
  • নেড়া বলল, 'হাঁ, আছে, কিন্তু সেটা অন্য একটা গান । সেটা হচ্ছে- অলিগলি চলি রাম, ফুটপাথে ধুমধাম, কালি দিয়ে চুনকাম । সে গান আজকাল আমি গাই না । আরেকটা গান আছে- নাইনিতালের নতুন আলু- সেটা খুব নরল সুরে গাইতে হয় । সেটাও আজকাল গাইতে পারি না । আজকাল যেটা গাই, সেটা হচ্ছে শিখিপাখার গান ।' এই বলে সে গান ধরল-
     
    মিশিপাখা শিখিপাখা আকাশের কানে কানে
    শিশিবোতল ছিপিঢাকা সরু সরু গানে গানে
    আলোভোলা বাঁকা আলো আধো আধো কতদূরে
    সরু মোটা শাদা কালো ছলছল ছায়াসুরে ।
     
    আমি বললাম, 'এ আবার গান হল নাকি । এর তো মাথামুণ্ডু কোনো মানেই হয় না ।'
    হিজিবিজ্‌বিজ্‌ বলল, 'হ্যাঁ, গানটা ভারি শক্ত ।'
    ছাগল বলল, 'শক্ত আবার কোথায় ? ঐ শিশি বোতলের জায়গাটা একটু শক্ত ঠেকল, তাছাড়া তো শক্ত কিছু পেলাম না ।'
     
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:১৫527831
  •  সমরেশ বাবু আমাকে সাত দিনের জেল আর তিন দিনের ফাঁসি না ধার্য করলে আরেকটা কথা বলা যেতে পারে। 
     
    এত লোক থাকতে শংকর হঠাৎ বশী সেনের গুণগান করতে গেলেন কেন? সে কি বশী সেন অনাদৃত বৈজ্ঞানিক বলে, না কি তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী সদানন্দের ভক্ত বলে? গিরিশ মোহরার বইয়ের রিভিউ করতে গিয়ে বি এন ট্যাণ্ডন বশী সেন যে একাধারে বৈজ্ঞানিক এবং পুজো আচ্চা করা মহা ভক্ত মানুষ, এই নিয়ে গদগদ। এখানে স্বভাবতই যে প্রশ্নটিওঠে একজন বৈজ্ঞানিক যদি "ভক্ত" হন, তাঁকে কি প্রকৃত বৈজ্ঞানিক বলা চলে? বিজ্ঞানের প্রথম শর্তই যে কোন কিছুর প্রতি অন্ধবিশ্বাস না রাখা, সেখানে ভক্তির কিন্তু কোন স্থান নেই । এবং আপনার অবান্তর মনে হতে পারে, এইখানে আবার জগদীশচন্দ্রের প্রসঙ্গ আসছে, জগদীশচন্দ্র কিন্ত সে অর্থে নাস্তিক বৈজ্ঞানিক ছিলেন। সেদিক থেকে ভাবলে বশী সেন জগদীশচন্দ্রের কাছে কাজ শিখতে পারেন, কিন্তু এটুকুই । 
  • :|: | 174.251.160.43 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:২৪527832
  • জগদীশ কি নাস্তিক ছিলেন? ব্রাহ্ম ধর্মে বিশ্বাস ছিলো জান্তুম যে! নির্ঘাৎ গোলাচ্ছি। 
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৩৬527833
  • ব্রাহ্ম ছিলেন তো, গোলাবেন কেন? তাতে তো আর নাস্তিক হতে আটকাচ্ছে না। 
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪২527834
  • জগদীশচন্দ্র খুব সেলফ সেন্টারড মানুষ ছিলেন। ভালো বাংলায় বললে 'আপনভোলা'। তাঁর এই স্বভাবের জন্য আশপাশের মানুষজনকে ভুগতে হয়েছে কমবেশি। 
    জগদীশচন্দ্র ব্রাহ্ম ছিলেন। তবে মায়ের হিন্দু ধর্মের প্রভাব রয়ে গিয়েছিল যা নিবেদিতার প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিল। আর প্রথম থেকেই ওলে বুল আর্থিক সাহায্য করেছিলেন জগদীশচন্দ্রকে। একমাত্র বসু বিজ্ঞান মন্দিরের জন্যই নয়। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের মূর্তিটি নিবেদিতার কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। কারো মতে হ্যাঁ, কারো মতে না।
  • দীমু | 182.69.177.150 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৩527835
  • সেলফ সেন্টারড মানে আত্মকেন্দ্রিক। 'আপনভোলা' সেটার ঠিক উল্টো।
  • এলেবেলে | 202.142.71.17 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৮527836
  • সমরেশবাবু 'পিরিয়ড' বলে ঘোষণা করলেও অরিনবাবু তা বলেননি। ফলে সামান্য সাহস সঞ্চয় করে আরও দু-চার কথা বলি। প্রথমত শংকর এবং পোবোন্দো হল অক্সিমোরনের চূড়ান্ত উদাহরণ। এবং সেটি ছাপা হয়েছে বত্তোমানে, যার একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক পাঠক ঠাকুরের মারাত্মক পাখা। সেখানে তথ্যসূত্রহীন পোবোন্দোটি এমনই অভিঘাত সৃষ্টি করেছে যে খোদ সমরেশবাবুও চুক্কি খেয়ে জগদীশচন্দ্র মোটে কলকে পাচ্ছিলেন না, এমতাবস্থায় নিবেদিতাই তাঁকে বিশ্বজগতে পরিচিত করান বলেন কিংবা প্রফুল্লচন্দ্রকে সম্বল করে জগদীশের সংকীর্ণ চিত্তের অবতারণা করেন। এমনকি জগদীশচন্দ্রের পেটেন্ট নেওয়ার মোটে ইচ্ছে ছিল না, নেহাতই বিবেকানন্দের উৎসাহে তিনি তা নিতে নিমরাজি হন - এমন লেখার লিঙ্কও চিপকে দিয়েছেন। কাজেই এই লেখায় ওঁর পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট। এসব চালু গপ্পে যে তাঁর আস্থা আছে, এটা প্রকাশিত হয়েছে। কী ভাগ্যিস তিনি নিবেদিতাই যে রবি ঠাকুরকে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত করার প্রথম উদ্যোগটি নেন জাতীয় মিশনের প্রোপাগান্ডায় পা দেননি!
     
    জগদীশচন্দ্র ব্রাহ্ম ছিলেন এবং নিবেদিতার সঙ্গে প্রথম (কিংবা দ্বিতীয় সাক্ষাতে) রামকৃষ্ণ সম্পর্কে অত্যন্ত রূঢ় মন্তব্য করেছিলেন। তবে পেটেন্ট নেওয়ার ব্যাপারে জগদীশচন্দ্র যে তাঁর অন্যতম সুহৃদ রবীন্দ্রনাথকে লিখিত আকারে মিথ্যা কথা লিখেছিলেন, সেই রেফারেন্স আমার কাছে মজুত আছে। প্লাস উনি বন্ধুর উদাহরণে অনুপ্রাণিত হয়ে নাইটহুড খেতাবটি পরিত্যাগ করেননি। জগদীশচন্দ্রের এই দুটি বিষয় আমার না-পসন্দ। 
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৯527837
  • ইচ্ছা করেই লিখেছি। সেলফ সেন্টারড এর মানে আত্মকেন্দ্রিক আমি জানি। আপনভোলার মোড়কে আসলে ওইটিই ছিলেন। 
  • এলেবেলে | 202.142.71.17 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৫১527838
  • আচ্ছা, দময়ন্তী দাশগুপ্ত এসে গেছেন। খুব ভালো কথা। আপনি এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখুন, আমরা সকলে ঋদ্ধ হই।
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৫৪527839
  • জগদীশচন্দ্র রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের প্রতি নিবেদিতার অতিভক্তি পছন্দ করতেন না শুরুতে। সেই জগদীশচন্দ্রই একাধিকবার সারদাদেবীর কাছে যৌথভাবে প্রণাম করতে গিয়েছেন। পরেরদিকে রামকৃষ্ণের নিন্দা শুনে প্রবল প্রতিবাদও করেছেন। 
  • :|: | 174.251.160.43 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:০০527840
  • ০০:৩৬ -- "ব্রাহ্ম ছিলেন তো, গোলাবেন কেন? তাতে তো আর নাস্তিক হতে আটকাচ্ছে না।"
    এই রকম লেখার অর্থ সত্যিই বুঝছিনা। সগুণ নিরাকার ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসীকে নাস্তিক বলছেন কেন? 
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:০৪527841
  • বশীশ্বর সেনের ঘটনাটা আমিও জানি তবে শঙ্কর নয় অন্য কোনও সূত্রে। যেহেতু আমি অবলা কেন্দ্রিক কাজ করেছি তাই এসব অত খেয়াল নেই আর এখন। জগদীশচন্দ্র যে সহকারিদের নাম লিখতেন না সেটাও সত্যি। মিসেস বুল ( মিসেস ওলে বুল বা সারা বুল) এর ঘটনাটি ব্যতিক্রম। হয়তো কৃতজ্ঞতা আর্থিক সাহায্যের জন্য।
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:০৮527842
  • এডিটের অপশন নেই কেন? প্রথম লেখাটায় মিসেস ওলে বুল লিখতে গিয়ে মিসেস লিখতে ভুলে গেছি। কারেকশন করতে পারছি না।
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:১০527843
  • এলেবেলে, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের ব্যাপারে জগদীশচন্দ্র আশ্চর্য রকমের উদাসীন ছিলেন, বা হয়ত ব্যাপারটা বুঝতেন না, মনে হয় আজকের যুগ হলে কপিলেফট বা ঐ রকম ধরণের কিছু একটা করে বসতেন। এখন অনেক সময়েই উদ্ভাবকরা এইসব ব্যাপারে উদাসীন থাকেন, যার জন্য আজকাল পেটেন্টের জন্য আলাদা আইনি বিশেষজ্ঞ দের প্রয়োজন হয়।‌ 
     
     রবীন্দ্রনাথকে কি মিথ্যা কথা লিখেছিলেন? 
    সব সময় রবীন্দ্রনাথ আর জগদীশ চন্দ্রের সম্পর্ক খুব মধুর মনে হয় ছিল না। আত্মকেন্দ্রিক তো ছিলেনই। তবে ওনার প্রচুর কাজ সত্যি একা একার কাজ, বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভ আর ওয়াই ফাই এর আবিষ্কার সংক্রান্ত বিষয়সমূহ। ফলে কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক হওয়া আশ্চর্যের নয়‌ । 
     
     
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:১৭527844
  • হ্যাঁ, অরিন্দম্বাবু, একেবারেই তাই। অনেক কাজই একা করেছেন জগদীশচন্দ্র। তাতে কোনও দ্বিমত নেই। তবে চাইলে বিজ্ঞান শিক্ষিত অবলাকে পাশে পেতেই পারতেন প্রথম থেকে বিজ্ঞান না জানা নিবেদিতার থেকে। করতে পারতেন সহকারীও। কিন্তু অবলা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিমণ্ডিতা ছিলেন সেটুকুও স্বীকার করেননি।
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:১৭527845
  • "নিরাকার ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসীকে নাস্তিক বলছেন কেন? "
     
    বেশ,  ঠিক আছে, নাস্তিক ছিলেন না। 
    তবে একাধিক বায়োগ্রাফি পড়ে যতটুকু বুঝেছি, তিনি ধার্মিক ছিলেন বলেও মনে হয় নি। 
    তাছাড়া, ধর্ম তো মানুষের denomination, সামাজিক  লেবেল, তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কে নাস্তিক, কে নয়, সে সব কি বলা যায়?
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:২৪527846
  • প্রতিদিন ভোরে উঠে জগদীশচন্দ্র ও অবলা নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা করতেন, অবলা গাইতেন গান। দার্জিলিং এ দুজনেরই আলাদা আলাদা উপাসনার জায়গাও ছিল। তাই জগদীশ ঈশ্বরচর্চা করতেন না একথা ঠিক তো নয়ই, তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন একথাই সত্যি।
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:৩৬527847
  • আসলে plant neurobiology তে জগদীশচন্দ্রের ধারণা নিয়ে আবার ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে । 
    কারো মতে জগদীশচন্দ্র আমেরিকান সায়েন্টিফিক রেসিজমের শিকার, 
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:৪৯527848
  • বিজ্ঞানী হিসেবে জগদীশচন্দ্রের উচ্চতার সঠিক পরিমাপ সেকালে পুরোপুরি হয়নি। ইংল্যান্ডেই বিজ্ঞানীদের ঈর্ষার শিকার হয়েছিলেন। এখানে মানুষ জগদীশচন্দ্রের কথা এল বলেই কিছু কথা লিখলাম আমি সামান্য যা জানি।
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৩০527849
  • একালে ভারতেই হয়নি, তো কলোনিয়াল আমলের কথা!
    এই থ্রেডটি ঘাঁটলেই তো দেখা যাচ্ছে স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক, চৌর্যবৃত্তি, হিংসুটে, জগদীশচন্দ্রের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিশেষণের অন্ত নেই। 
  • r2h | 165.1.200.97 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৫৮527850
  • এই ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝছি না।
    অতি প্রতিভাবান মানুষেরা প্রায়শই একসেন্ট্রিক, অন্য রকম হন। অতি প্রতিভাবানদের মধ্যে নানান রকম বদগুণ, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা গিজগিজ করে। প্রতিভার আবশ্যিক ব্যাগেজ সেসব প্রায়শই।
    তাঁদের সমসময়ে সেসব ম্যাটার করে, তাঁদের পিয়ার, কাছের মানুষদের সেসবের জন্যে ভুগতে হয়, হাড়মাস ভাজাভাজা হয়ে যায়। উদাহরণ তো বিরল না।

    অবশেষে পড়ে থাকে তাঁদের কাজ, উত্তরকালের জন্য।

    বাকি সবই বড়চর্চা, ছিদ্রান্বেষন বলে মনে হয়। সেযুগে পুরুষের মানসিকতা ও নারীর স্থান - এসব গবেষণার উপজীব্য অবশ্য হতে পারে।

    দুটো জিনিস মনে পড়লো, সুমনেরঃ

    পৃথিবী যে নিয়মে চলছে
    সে ঠিক সে নিয়মে চলে না
    তাকে সহজে বোঝা যায় না
    তার ভাবনা অন্যরকম।


    আর দ্য বিগ ব্যাং থিওরি সিরিজের শেলডন কুপার।
     
    প্রতিভাবানদের প্রতিভা তাঁদের বদমাইশির গ্রাহ্য অজুহাত হতে পারে না মানি। কদিন আগে কে যেন একজন ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যিকের ডাইরি বেরিয়ে খুব হইচই হল? এছাড়া পিকাসো মনে পড়ছে, আইনস্টাইন তো আছেনই।
  • Arindam Basu | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:৪৭527851
  • প্রতিভাবানদের প্রতিভা তাঁদের বদমাইশির গ্রাহ্য অজুহাত হতে পারে না মানি।
     
    কোনটা কোন যুগে বদমাইশি আর কখন গ্রহণীয় সে ভারি তর্কের বিষয়। ২০২৪ এ দাঁড়িয়ে ১৯২৪:এর সমকালীন মানুষের জীবন পর্যালোচনা করে ব্যক্তিমানুষের কাটাছেঁড়া আজকের সামাজিক মূল্যে করতে গেলে কিছুটা তো সাবজেকটিভিটির সমস্যা হবেই। 
  • র২হ | 96.230.215.15 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:৫০527852
  • হ্যাঁ, কাল প্রেক্ষিত এসবও বিবেচনায় রাখা দরকার অবশ্যই।
  • dc | 2401:4900:7b7c:5d09:4496:b6d4:ae51:e1a7 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৯527854
  • "এখানে স্বভাবতই যে প্রশ্নটিওঠে একজন বৈজ্ঞানিক যদি "ভক্ত" হন, তাঁকে কি প্রকৃত বৈজ্ঞানিক বলা চলে?"
     
    এখানে আমার অল্প একটু আপত্তি আছে। "বিজ্ঞান" বলতে যে হাইপোথিসিস-অবসার্ভেশান-টেস্ট-পিয়ার রিভিউ প্রসেস, সেখানে বিশ্বাস বা ভক্তির কোন জায়গাই নেই। কিন্তু একজন ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞানচর্চা করেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে কিছুতে বিশ্বাস করতেই পারেন। তিনি যদি রিসার্চ কের কিছু আবিষ্কার করেন আর সেটা ঐ বিজ্ঞান এর ফ্রেমওয়ার্ক মেনে পিয়ার রিভিউ এর পরে জেনারালি অ্যাক্সেপটেড হয়, তাহলে তাঁর সেই কাজটা বৈজ্ঞানিক নলেজবেস এর একটা অংশ হয়ে গেলো, কিন্তু তিনি নিজে তাঁর সমস্ত বিশ্বাস, কুসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে একজন ব্যাক্তি হিসেবেই থেকে গেলেন। মানে আমি বলতে চাইছি, "বিজ্ঞান" ইট্সেল্ফ ব্যক্তি বৈজ্ঞানিক এর উর্দ্ধে। বৈজ্ঞানিকদের শুধু অন্ধবিশ্বাসঈ যে থাকে তাই না, নানারকম সংকীর্ণতা, হিংসে, মিথ্যাচার, লোভ ইত্যাদি সবই থাকে। কিন্তু "বিজ্ঞান" নামের স্ট্রাকচারটা সেসবের বাইরে। 
     
    এবার হ্যাঁ, আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যদি জিগ্যেস করেন যে, যিনি "ভক্ত" তাঁকে কি আপনি প্রকৃত বৈজ্ঞানিক হিসেবে মেনে নেবেন? তাহলে আমি বলবো আমি পার্সোনালি হয়তো মেনে নেবো না, কিন্তু এটা মানতে অসুবিধে নেই যে বহু নামকরা বৈজ্ঞানিক আছেন বা ছিলেন যাঁরা ঈশ্বর বা ওরকম কিছু মানেন বা মানতেন। তাতে তাঁদের কাজের মান কম কিছু হয় নি।  
  • dc | 2401:4900:7b7c:5d09:4496:b6d4:ae51:e1a7 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৬527855
  • বিজ্ঞান অ্যাস এ বডি অফ নলেজ আর ব্যক্তি বৈজ্ঞানিক এর মধ্যে তফাত আছে, এইটা বলতে চাইছি আর কি। 
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৬527856
  • একদম। বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানে অবদান আর তাঁর ব্যক্তিজীবন একেবারে আলাদা। এবং তাঁকে বিচার করতে হয় তাঁর সময় দিয়েই। তবে আমাদের দেশে ব্যক্তিপূজা করারও একটা অভ্যেস আছে। যে কোনও মানুষকে মানুষ হিসেবেই বিচার করা ভালো। তবে তিনি যে রেঞ্জে কাজ করেছেন তাতে কিছুটা এইরকম না হলে পারতেনও না। অবলাকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জগদীশচন্দ্রের ব্যক্তিজীবনের নানা খুঁটিনাটি দেখতে পেয়েছি। তাই লিখেছি।
  • =)) | 43.251.171.194 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪২527858
  • নিবেদিতা মহিলাটি বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র এঁদের সকলের জীবনে ঢুকে এমন কিছু মানবিক সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি করেছেন, সেগুলির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে আইকনগুলির রক্তমাংসের শরীর তাঁদের কফবমিমলমুত্রপুঁজরক্তঘাক্ষত সমেত বেরিয়ে আসতে পারে। বিশেষত তৎকালীন ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শনের সঙ্গে আলোকপ্রাপ্ত অগ্রণী বাঙালী মণীষার সরাসরি সংঘাত, প্রভাব ও মেলবন্ধনের ক্ষেত্র হিসেবেও হয়ত সেই সম্পর্কের টানাপোড়েন ও সমকালোন ঘটনাবলীতে তার রেশএর চর্চা আগ্রহের। তবে, শতাব্দীকাল পরে ব্যক্তিমানুষের দুর্বলতা ও অপরিপূর্ণতার চর্চা করার বদলে তাঁদের অনুসরণযোগ্য গুণাবলী ও কার্যকলাপের দিকে মনোযোগ দেওয়াই সদর্থক ও ফলপ্রসূ বলে মনে হয়।
    আগ্রহজনক বিষয়ের চর্চামাত্রই পজিটিভ আউটকাম দেয় না তো। মূলত এই কারণেই হয়ত গতজীবন মানুষদের মূলত আদর্শযোগ্য গুণাবলী ও কাজের নজিরগুলো নিয়ে চর্চার অভ্যাস সামাজিকভাবে রয়ে গেছে। বাকিটুকু নিয়ে চর্চার অভ্যাস ড্রেইন ইন্সপেক্টারের কাজের মতোই স্ট্যাটাস পেয়ে থাকে। অরিনবাবুর আপত্তির জায়গাটা সম্ভবত এখানেই।
  • এলেবেলে | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৬527859
  • //ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের ব্যাপারে জগদীশচন্দ্র আশ্চর্য রকমের উদাসীন ছিলেন, বা হয়ত ব্যাপারটা বুঝতেন না, মনে হয় আজকের যুগ হলে কপিলেফট বা ঐ রকম ধরণের কিছু একটা করে বসতেন। এখন অনেক সময়েই উদ্ভাবকরা এইসব ব্যাপারে উদাসীন থাকেন//
     
    এইটা হচ্ছে জগদীশচন্দ্র সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত মত এবং বাঙালির 'বঞ্চিত জগদীশ' গাইবার থিম সং। অথচ বাস্তব ঘটনা সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। এ ব্যাপারে যে তিনি রীতিমতো সচেতন ছিলেন এবং বিবেকানন্দ বা অন্য কেউ যে তাঁকে ইনসিস্ট করেননি, তার প্রমাণ আছে।
     
    বন্ধু রবীন্দ্রনাথের কাছে জগদীশচন্দ্র তাঁর 'উদাসীন' ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য ১৯০১ সালের ১৭ মে লন্ডন থেকে কবিকে লেখেন --- “আমার বক্তৃতার কিয়ৎক্ষণ পূর্বে একজন অতি বিখ্যাত Telegraph কম্পানির ক্রোড়পতি proprietor, telegraph করিয়া পাঠাইলেন, দেখা করিবার বিশেষ দরকার; আমি লিখিলাম সময় নাই, তার উত্তরে পাইলাম ‘আমি নিজেই আসিতেছি’ অল্পক্ষণ মধ্যেই স্বয়ং উপস্থিত। হাতে patent form। আমাকে বিশেষ অনুরোধ করিলেন, আপনি আজ বক্তৃতায় সব কথা খুলিয়া বলিবেন না, ‘There is money in it— let me take out patent for you. You do not know what money you are throwing away’ ইত্যাদি। অবশ্য, ‘I will only take half share in the profit— I will finance it’ ইত্যাদি। এই ক্রোড়পতি, আর কিছু লাভ করিবার জন্য আমার নিকট ভিক্ষুকের ন্যায় আসিয়াছে। বন্ধু, তুমি যদি এ দেশের টাকার উপর মায়া দেখিতে— টাকা— টাকা— কি ভয়ানক সর্বগ্রাসী লোভ। আমি যদি এই যাঁতাকলে একবার পড়ি তাহা হইলে উদ্ধার নাই। দেখ আমি যে কাজ লইয়া আছি তাহা বাণিজ্যের লাভালাভের উপরে মনে করি, আমার জীবনের দিন কমিয়া আসিতেছে, আমার যাহা বলিবার তাহারও সময় পাই না, আমি অসম্মত হইলাম।” অস্যার্থ, জগদীশচন্দ্র তাঁর আবিষ্কারের পেটেন্ট নিয়ে একেবারেই ভাবিত নন।
     
    অথচ ১৯০৪ সালে তিনি যখন আমেরিকায় তাঁর পেটেন্টটি লাভ করেন, সেখানে তিনি নিজেই পেটেন্টের আবেদনপত্রে জানান যে ইতিপূর্বে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছেও পেটেন্টের জন্য সর্বমোট চারবার --- ১৯০১ সালের ৯ মে, ৩০ জুলাই, ১২ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ সেপ্টেম্বর দরখাস্ত করেছেন।
     
    যিনি পেটেন্টের জন্য এক বছরে চারবার আবেদন করেন, তাঁকে আর যাই হোক এই বিষয়ে উদাসীন বলা চলে না। তিনি যে গোটা বিষয়টা রবীন্দ্রনাথের কাছে গোপন রেখেছিলেন (বা মিথ্যা কথা লিখেছিলেন) তা কবিকে লেখা চিঠিটির তারিখ দেখলেই মালুম হবে।
  • দময়ন্তী দাশগুপ্ত | 2405:201:8014:c08f:d595:6aa:e82d:9182 | ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৭527860
  • এলেবেলে, আমাকে পেটেন্ট এর অ্যাপ্লাই করার ডিটেলটা একটু দেবেন। এটা আমি পাইনি। বরুণদাকে দিলেই হবে। উনি পাঠিয়ে দেবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন