এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • দু নৌকায় পা - ১ম পর্ব

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ৭৮৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  •                             ৷৷ ১ ৷৷

    -সেদিন আন্দাজ সকাল দশটা। একটি প্রৌঢ় হন্তদন্ত হয়ে কলেজে যাচ্ছেন। ইস্ত্রি করা ট্রাউজার, কোট, টাই। এক কাঁধে ঝুলছে ন‍্যাপস‍্যাক ...

    -ফেঁদে বসলেন তো এক গাঁজাখুরি গপ্পো?

    -কেন?

    -প্রৌঢ় লোক আবার কলেজে যায় না কী?

    -যায় না?

    -যায়, তবে পড়তে নয়, পড়াতে।

    -কিন্তু আমি তো বলিনি লোকটা কলেজে কেন যাচ্ছে, পড়তে না পড়াতে।

    -সেটা না বললেও বোঝা যায়।

    -কীভাবে?

    -ঐ যে, বললেন, হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছে‌। 

    -তাতে কী বোঝা গেল?

    -তাতেই বোঝা যায় কেউ পড়তে যাচ্ছে। পড়াতে যাওয়ার তাড়া সচরাচর কারুর‌ থাকে না।

    -তাই বুঝি? আর যারা পড়তে যায় তাদের বুঝি খুব তাড়া থাকে? জ্ঞানপিপাসা বলছেন?

    -না, তাও নয়।

    -তাহলে?

    -সেটাও নিছক নিয়মের বশবর্তী হয়ে। সবাই যায় তাই যায়। ঘন্টা পড়ে গেলে ক্লাসে ঢুকতে পাবে না, তাই তাড়াহুড়ো করে। বেশিরভাগ‌ই পড়তে যায় পেটের ধান্দায়, জ্ঞানার্জনের জন্য নয়।

    -ঠিক আছে। ধরে নিন প্রৌঢ় লোকটা পড়তেই যাচ্ছে। তারপর হোলো কী ...

    -না ঠিক নেই।

    -কেন?

    -ঐ যে বললাম, মাঝবয়সী লোক পড়তে যায় না। আপনার গপ্পোটাই গাঁজাখুরি।

    -তবে কারা যায়?

    -যাদের পড়তে যাওয়ার বয়স। এখন তো তিন বছরের শিশুকে‌ও প্লেওয়ে স্কুলে পাঠায়। বা ধরুন বালক, কিশোর, তরুণ। এমনকি সদ‍্য যৌবন‌উত্তীর্ণ মানুষ‌ও হয়তো যায়। ঝাঁকে‌র ক‌ইয়ের মতো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ার ওটা‌ই বয়স। কিন্তু প্রৌঢ় লোক একা অথবা পন্ডিতপরিবেষ্টিত হয়ে সাক্ষাৎকার দেয়, সেমিনারে গিয়ে জ্ঞান বিতরণ করে। জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে  গবেষণা‌গারে অন্বেষণ করে, গ্ৰন্থাগারে অধ‍্যয়ন বা বাড়িতে  নিমগ্ন হয়ে পঠন‌ও করতে পারে।

    -বয়স্ক‌রা তবে পড়তে যায় না বলছেন?

    -যাবে না কেন, যায়, যেমন ধরুন বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে। সময়কালে যা করা উচিত ছিল সুযোগ পেয়েও তা না করে বা কোনো কারণে তা করতে না পেরে পরে সেই ভুল উপলব্ধি করে অবেলায় সান্ধ্য‌ক্লাসে শিখতে আসে এবিসিডি বা যোগ, বিয়োগ। পড়াতে আসে আদর্শ‌বাদী তরুণ তরুণী বা প্রতিষ্ঠিত মানুষ যাদের কোনো কারণে ব‍্যক্তি‌গত সাফল‍্য ধাওয়া করার বদলে সমাজসেবা‌র  পোকায় কেটেছে।

    -ঠিক আছে, হতে পারে, না, না, হয়েই থাকে, আপনি যখন বলছেন, তবে এ লোকটি সত‍্যি‌ই কলেজে পড়তে যাচ্ছে।

    -এতো নিশ্চিত‌ হয়ে কীভাবে বলছেন আপনি?

    -আমি যে তাকে চিনি?

    -তাই নাকি? কী নাম তার?

    -তিনিবাবু।

    -এ্যাঁ! তিনিবাবু! এটা আবার কারুর নাম হয় নাকি? আমি, আপনি, উনি, তিনি এসব তো সর্বসাধারণের যে কেউ হতে পারে, অর্থাৎ সর্বনাম। পরিবর্তন‌শীল‌ও বটে। যেমন ধরুন, আপনি আমার কাছে আপনি কিন্তু আপনি আপনার কাছে আমি। আমরা তো সেই অর্থে সবাই এক‌ই সময়ে আমি, আপনি, উনি, তিনি হয়ে বিরাজ করি।

    -আচ্ছা পরের বার দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবো ওনার আসল নাম কী, ঠিক আছে তো হোলো কী, উনি হন্তদন্ত হয়ে…

    -না, ঠিক নেই।

    -আবার কী হোলো?

    -একটা মাঝবয়সী লোক কর্পোরেট অফিসের বাবুর মতো কোট প‍্যান্ট টাই পরে এক কাঁধে ন‍্যাপস‍্যাক ঝুলিয়ে কলেজে যায় না। ওসব টিনএজারদের স্টাইল। সকাল সকাল কী খেয়েছে‌ন বলুন তো?

    -যা খাই রোজ - টোষ্ট, পোহা, রুটি তরকারি, আলু পরোটা, চাউমিন - ধরে নিন তার‌ই কোনো একটা। সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু তিনিবাবু‌র বোধহয় সেদিন সকাল থেকেই দিনটা বেগড়বাঁ‌ই করছি‌ল।

    -কেন?

    -কলেজ যাওয়ার আগে উনি না চিবিয়ে‌ই খেয়ে ফেলেছিলেন সরষের তেল দিয়ে পান্তা‌ভাত, আলুভাজা ও পিঁয়াজ সহযোগে। মানে গিলে গিলে‌ই খেয়ে ফেলেছিলেন আর কী।

    -এ্যাঁ। এ আবার সম্ভব নাকি?

    -খেয়ে উঠে পেষ্ট ছাড়াই দাঁত মেজে‌ ফেলেছিলেন।

    -ম‍্যাঁ গো! তিনিবাবু সকালে পান্তাভাত খান? প্রাতরাশের পর মাজন ছাড়া দাঁত মাজেন? তাহলে তো এমন লোকের পক্ষে মধ‍্যবয়সে কোটপ‍্যান্ট পড়ে হন্তদন্ত হয়ে কলেজ যাওয়া অসম্ভব নয়।

    -কিন্তু শেষ অবধি যাওয়া হোলো না।

    -কেন? বেশ তো যাচ্ছিলেন আপনার গল্পের তিনিবাবু, হন্তদন্ত হয়ে। 

    -এটা গল্প নয়, ঘটনা।

    -আচ্ছা, না হয় ঘটনা‌ই হোলো। তা যাওয়া হোলো না কেন?

    -জুতো পরতে ভুলে গেছিলেন।

    -সে কী! জুতো ছাড়াই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি‌লেন? আচ্ছা কিম্ভূত লোক তো মশা‌ই আপনার তিনিবাবু।

    -আমার তিনিবাবু আবার কী? আমি শুধু ওনাকে চিনি, এই যা। হ‍তে পারে উনি একটু বিচিত্র প্রকৃতির। তেমন একটু আধটু তো আমরা অনেকেই, তাই না? নিজেরাই শুধু বুঝতে পারি না, এই যা। অন‍্যেরা কিন্তু বোঝে, তবে ভদ্রতার খাতিরে বলে না। যাইহোক, যা বলছিলাম, সেদিন বাড়ি থেকে অনেকটা এসেও উনি বুঝতে‌ই পারেননি যে ওনার খালি পা। ওনার মনে হচ্ছিল উনি যেন ঘরের মেঝেতেই হাঁটছেন। যে‌ই দুর থেকে কলেজের বিশাল ভবনের চূড়া‌টা দেখতে পেলেন, উনি নীচে তাকিয়ে দেখলেন ওনার খালি পা। কলেজ তখনও বেশ খানিকটা দুরে... 

    -আর অমনি আপনার তিনিবাবু খালি পায়ে হাঁটছেন বুঝে পায়ে ব‍্যাথা টের পেলেন, তাই তো?

    -মোটেও তা নয়। পায়ে জুতো না থাকলে‌ও উনি পায়ে কোনো ব‍্যাথা‌র অনুভূতি‌ টের পাননি। উনি তো ভাবছি‌লেন খালি পায়েই চলে যাবেন ক্লাসে।

    -তা গেলেন না কেন? আপনার কিম্ভূত‌বাবু।

    -মিষ্টির দোকানীটা বারণ করলো যে।

    -মিষ্টির দোকানী?

    -হ‍্যাঁ। তিনিবাবু যেখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলেন যে পায়ে জুতো নেই সেখানেই ছিল একটা মামূলী মিষ্টির দোকান। শো কেসে সাজানো থাকে অল্প কিছু মিষ্টি। বিক্রি বিশেষ হয় না। তবু ও যত্ন করে রোজ সাজায়। মিষ্টি‌গুলো‌ দেখতে চটকদার। তবে সাতবাসকে।

    -মিষ্টির বিক্রি নেই তবু সে নিয়ম করে শোকেসে রোজ সাজায় কেন?

    -ঐ যেমন আপনি বললেন, অনেকে নিয়ম করে কলেজে যায় ডিগ্ৰি নিতে, নিয়ে যে কী হবে জানে না,  তবু যায়, অভ‍্যাসে, সবাই‌কে দেখে, সেরকম।

    -তো মিষ্টির দোকানীর চলে কীভাবে?

    -বাতাসা বিক্রি করে। 

    -বাতাসা! এখন আর কেউ খায় বাতাসা?

    -তা জানি না। তবে পুজো আচ্চা‌য়, মন্দিরে, গাঁয়ে হরির লুটে এখন‌ও চলে। তাই ওর মিষ্টির থেকে বাতাসাই বেশী বিক্রি হয়, ভালো লাভ‌ও হয়, নিজে‌ই বানায় যে। 

    -নিজে বানায়? আপনি দেখেছেন?

    -দেখেছি বৈকি। বেশ লাগে দেখতে। একটা চ‍্যাপটা মাটির হাঁড়ির গলায় লোহার আঁকশি পড়ানো। কানার নীচে একটা ফুটো। কয়লার উনুনে হাঁড়িতে ফোটে সোডা মেশানো গুড়ের রস। খাপড়ার চালে‌র ঝুলপড়া দোকানের ভেতর উনুনের পাশে মেঝেতে পাতে একটা শেতলপাটি। আঁকশি‌ বাঁধা হাঁড়িটা বাঁহাতে নিয়ে ডানহাতে একটা কাঠের হাতায় ফুটন্ত রস বিশেষ কায়দায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফোস্কা‌র মতো শেতলপাটি‌তে ফেলে। তাড়াতাড়ি করতে হয়। কয়েক‌ সারি ফেলা‌র পর ফুটন্ত হলদেটে রস ঠান্ডা হয়ে ফ‍্যাকাশে হয়ে আসে। তখন হাঁড়ি‌টা আবার উনুনে বসিয়ে দেয়।

    -বাঃ, খুব সরল পদ্ধতি তো?

    -হ‍্যাঁ, শুনতে সরল বটে তবে করা অতো সোজা নয়। বাতাসাগুলো দেখলে মনে হবে হাঁড়ি থেকে পড়েই পাটিতে কামড়ে বসে গেল বুঝি। কিন্তু তা নয়। গরম বাতাসা একটু ঠান্ডা হয়ে জমতে‌ই দোকানী পাটি‌টা দুপাশে দু হাতে তুলে ধরে। সমান পাটি গোল হয়ে যায়। দু একবার এদিক ওদিক করে। বাতাসা‌গুলো কেউ কেউ গায়ে গায়ে লেগে থাকে তবে বেশিরভাগ‌ই ছাড়াছাড়া হয়ে জমিয়ে বসেছিল পাটিতে। ওভাবে পাটি দোলাতে‌ই খররর করে ছেড়ে গিয়ে একসাথে এসে জড়ো হয় পাটির মাঝে। ও তখন পাশে রাখা টিনে পাটিটা কাত করে ফররর করে ঢেলে দেয়। হয়ে গেল বাতাসা তৈরী। 

    -বাঃ, বেশ মজার ব‍্যাপার তো? তা মিষ্টির দোকানী তিনিবাবুকে বারণ করলো কেন?

    -ও নিজে থেকে কিছু বলেনি। ও তো বাইরে বেঞ্চিতে বসে দ‌ই মুড়ি খাচ্ছিল। তিনিবাবু‌ই ভ‍্যালভ‍্যাল করে দোকানীর দিকে তাকিয়ে বললেন, যাঃ জুতো পরতে ভুলে গেছি, এভাবেই চলে যাই ক্লাসে? 

    -বাতাসাওলাকে জিজ্ঞেস করলেন উনি? ও হয়তো কোনোদিনই স্কুলেই যায় নি। কলেজের কেতার ব‍্যাপারে ও কী জানে?

    -ঠিক বলেছেন। তবে এমনটা তো হয়েই থাকে। যে প্রশ্ন যাকে করার নয় বরং নিজেকে‌ই করা উচিত তাও তো আমরা কখনো অন‍্যকে করে বসি। করি না?

    -হুমম, তা হয় বটে। তা দোকানী কী বললো?

    -ও বললো, না বাবু, খালি পায়ে লাঙল কাঁধে জমিতে বা জাল পিঠে নদীতে যাওয়া চলে, তবে পায়ে কিছু না পরে পড়তে যাবেন না।

    -আশ্চর্য! এমন কথা বাতাসা বানানো এক মামূলী দোকানী দ‌ই মেখে মুড়ি চিবোতে চিবোতে বলে দিল?

    -অন‍্যকে দেখেই হয়তো। অনেক কলেজ পড়ুয়াই তো যায় ওখান দিয়ে।

    -হতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও চোখকান খোলা মানুষ অন‍্যকে দেখে অনেক কিছু বোঝে। তো তিনিবাবু  কী করলেন?

    -তিনিবাবু রোজ দশ কিমি ট্রেনে এসে প্রায় দু কিমি হেঁটে কলেজ যান। তখনও কলেজ প্রায় দেড়কিমি দুরে। পকেটে বেশী পয়সা‌ও নেই। তাই উনি ভাবলেন উল্টো‌দিকে ফুটপাতের দোকান থেকে আজকের জন‍্য একটা হাওয়া‌ই চটি কিনে নেবেন। কিন্তু সেদিকে এগোতেই দোকানী বলে, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

    -সত‍্যি ভারি অদ্ভুত আপনার তিনিবাবু। পকেটে পয়সা কম, ট্রেনে, হেঁটে কলেজে আসেন অথচ পরে আছেন ধোপদূরস্ত কোট-প‍্যান্ট-টাই। তো তিনিবাবুর হাওয়াই চটি কেনার প্ল‍্যান শুনে দোকানী কী বললো?

    -সে বলে, না, না, অমন নীলচে কোটপ‍্যান্টের সাথে লাল হাওয়া‌ই চটি মোটেও মানায় না। ওর কাছে তো সব‌ই লাল চটি। তাছাড়া পদত্রাণ‌ তো কেবল পায়ের প্রয়োজনে নয়, পোষাকের সাথে‌ও তো মানানসই‌ হ‌ওয়া চাই।

    -পদত্রাণ!

    -মানে পাদুকা বা জুতো, যা পদযুগলকে রাস্তার বিপদ থেকে ত্রাণ বা রক্ষা ক‍রে।

    -বাব্বাঃ, জুতোর এমন শুদ্ধ প্রতিশব্দ জানলো কী করে আপনার গল্পের বাতাসা ময়রা এতো আমি‌ও জানতাম না। 

    -হয়তো শুনেছে কারুর কাছে। সবাই কী সবকিছু লেখাপড়া করে জানে? তবে আবার‌ও বলছি, বারবার গল্প গল্প করবেন না, এটা ঘটনা। 

    -ও হ‍্যাঁ, তাও তো বটে, এটা তো আবার ঘটনা, তো তার‌পর কী হোলো আপনার ঘটনার?

    -তিনিবাবু হতাশ ভঙ্গিতে বলেন, তাহলে আর আজ আমার কলেজ যাওয়া হোলো না। বাড়ি‌ই চলে যাই। জুতো কেনার তো পয়সা নেই। তাই শুনে দোকানী বলে, তা কেন? ঐ দেখুন আমার দোকানে‌র কোনের তাকে কয়েক জোড়া পদত্রাণ রাখা আছে। দেখুন কোনো একটা আপনার হয় কিনা।

    -যে মিষ্টির দোকানীর মিষ্টি বিক্রি হয়না, বাতাসা বানিয়ে পেট চলে সে দোকানে কয়েক জোড়া জুতো রেখে দিয়ে‌ছে আপনার তিনিবাবুর মতো কিম্ভূত লোক মনের ভুলে কখনো খালি পায়ে কলেজে চলে আসবে বলে? এমন উদ্ভট গল্প, যা আপনি বলছেন ঘটনা, আমায় বিশ্বাস ক‍রতে বলেন?

    -সে আপনার মর্জি। তবে আপনার পক্ষে যা বিশ্বাসযোগ‍্য তাই কেবল ঘটনা আর অবিশ্বাস্য লাগলে‌‌ই গল্প, এমনটা তো নাও হতে পারে। তো শুনুন না যা বলছিলাম। জুতোর তাকে ছিল কয়েক জোড়া জুতো। ছেলেদের‌ই বেশী। মেয়েদের মাত্র দু জোড়া। তিনিবাবুর পায়ে এক জোড়া হোলো। হান্টারের মতো, পুরু সোল, উঁচু কানা, অনেক ফিতে বাঁধা‌র ফুটো। কিন্তু রঙটা সাদা। মোজা নেই। দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে তাড়াহুড়ো‌ করে তিনিবাবু ডান পাটা এক পাটিতে ঢুকিয়ে ওপর থেকে নীচে ফিতে বেঁধে বাঁ পাটা অন‍্য পাটিতে ঢোকাতে যাচ্ছেন, এমন সময় দোকানী বলে, একটু দাঁড়ান।

    -আবার কী হোলো?

    -তিনিবাবু‌ও সেই এক‌ই প্রশ্ন করেন। দোকানী বলে, কতদিন খোলা পড়ে আছে তাকে, আপনি না দেখেই পা ঢুকিয়ে দিলেন? ভেতরে আরশোলা, মাকড়সা থাকতে পারে। উল্টো করে ঝেড়ে নিন। তিনিবাবু বাঁ জুতোটা উল্টো করে ঝাড়লেন।

    -কিছু ছিল নাকি?

    -হ‍্যাঁ, ঠপাস করে একটা কাঁকড়া‌বিছে মাটিতে পড়ে হেলেদুলে চলে গেল।

    -কী সর্বনাশ!

    -তবে তিনিবাবু চমকালেন না। চোখ কুঁচকে খানিক কী যেন ভাবলেন। দোকানী বলে, কী হোলো? তিনিবাবু বলেন, ডান পায়ের কড়ে আঙ্গুলের পাশেও কী যেন একটা নরম নরম ঠেকছে। দোকানী বলে, খুলে ঝেড়ে আবার পড়ুন। ওটার জুড়ি‌ও হতে পারে। হয়তো লীলাখেলার পর পাশেরটায় ঢুকেছে ডিম পাড়তে। 

    -হতেই পারে। তারপর? ওরে বাবা, শুনে‌ই তো আমার গা শিরশির করছে।

    -আপনি‌ তো বলেইছেন তিনিবাবু লোকটা কিম্ভূত প্রকৃতির। তাই উনি বলেন, না, না, কাঁকড়াবিছে হলে খরখরে হোতো। এতক্ষণে হয়তো কামড়ে‌ও দিতো। এটা হয়তো টিকটিকি হবে। দেরী হয়ে যাচ্ছে কলেজের। এখন যাই, ফার্স্ট পিরিয়ডে‌র পর খুলে দেখবো।

    -সত‍্যি অদ্ভুত মানুষ তো তিনিবাবু! তো দোকানী কিছু বললো না?

    -শুধু বললো‌ই না, রীতিমতো জোর করলো। সে বলে, তা হয় না, খুলে ঝেড়ে আবার পড়ুন। আমার দেওয়া পদত্রাণ পরে আপনার কিছু হলে আমার আফশোষের সীমা থাকবে না। দেরী হবে না। ঐ সামনের মোড় থেকে বাস পেয়ে যাবেন। পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবেন কলেজে। আবার ফিতে খুলে ডান পায়ের জুতোটা ঝাড়তে এবার টপাক করে মাটিতে পড়লো ছোট্ট একটা সবজেটে সোনাব‍্যাঙ। মুখটা ছুঁচলো। কালো চোখ। খুব মিষ্টি দেখতে। মাটিতে পড়ে তার আর লাফানোর ক্ষমতা নেই। পায়ের চাপে দমবন্ধ হয়ে কাহিল অবস্থা। ওটাকে জুতোর মধ‍্যে পায়ে চেপে তিনিবাবু এক পিরিয়ড ক্লাস করলে ওর পঞ্চত্বপ্রাপ্তি অবধারিত ছিল।

    -একটা জুতোয় কাঁকড়াবিছে অন‍্যটায় ব‍্যাঙ? আপনার গল্পে, থুরি, ঘটনায় দেখছি অত‍্যন্ত বিচিত্র সব ঘটনার ঘনঘটা! তারপর কী হোলো?

    -তিনিবাবু জুতো পরে দৌড়ে গিয়ে মোড় থেকে একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়লেন।

    -যাক  শেষ অবধি তাহলে তিনিবাবু‌র কলেজ যাওয়া হোলো।

    -নাঃ, তাও হোলোনা, কলেজ মিস হয়ে গেলো।

    -এ্যাঁ, কীভাবে? এই তো বললেন বাসে কলেজ মোটে পাঁচ মিনিটের পথ। তাহলে?

    -তিনিবাবু একটা ভুল বাসে উঠে পড়েছিলেন। বললাম না, সেদিন ওনার দিনটাই গড়বড় যাচ্ছি‌ল। সে বাসে কোনো রুট নম্বর নেই। সামনে গন্তব্য লেখা বোর্ডটা‌ও ফ‍্যাটফেটে সাদা। ও বাস সন্ধ্যার আগে কোথাও দাঁড়ায়‌ও না। যে রাস্তায় যায় তাতে কখনো জ‍্যাম‌ও হয় না।  তাই চলতেই থাকে। কখনো রাস্তা বেশ মসৃন। তখন বাসের গতি বেড়ে যায়। গতি‌র নিজস্ব উন্মাদ‌না আছে, জানেন তো? জানলা দিয়ে তখন ফুরফুরে বাতাস আসে। কোথায় যাচ্ছে না জেনেও তখন যাত্রী‌রা বেশ উৎফুল্ল বোধ করে। মাঝে মাঝে ও রাস্তায় বেশ খানাখন্দ আছে। তখন বাস সেখান দিয়ে প্রচন্ড নেচেকুঁদে আস্তে আস্তে যায়। গায়ে গতরে ব‍্যাথা হয়ে যায়। তবু বেশিরভাগ যাত্রী‌ই বসে থাকে। ভাবে আবার মসৃন রাস্তা আসবে। শুধু কিছু অধৈর্য্য যাত্রী সেই নাচনকোঁদন সহ‍্য করতে না পেরে খোদলানো রাস্তায় ধীরগতিতে চলা বাস থেকে লাফিয়ে নেমে পড়তে যায়। তবে রাস্তার পাশে‌ই গভীর খাদ। টাল সামলাতে না পেরে গড়িয়ে পড়ে খাদে। ওখান থেকে তোলার কেউ নেই।

    -যেমন আপনার তিনিবাবু তেমনি অদ্ভুত বাস তো মশাই? ওতে কন্ডাক্টর নেই?

    -আছে।

    -চলন্ত বাস থেকে কেউ নামতে গেলে সে বারণ করে না?

    -না। বাসে সে থাকে বটে তবে তার কোনো ভূমিকা‌ নেই। তিনিবাবুর মতো তার‌ও কোনো নাম‌ নেই।

    -নাম নেই মানে?

    -নামের কী দরকার। তাকে সবাই ডাকে ভাই বলে। ও ভাই শুনছো, কোথায় যাচ্ছে এ বাস? সে চুপ। ও ভাই এখন কোথায় এলো? সে চুপ। ও ভাই একটু দাঁড়াবে? সে চুপ। সে ভাড়া‌ও চায় না। কেউ উঠলে কিছু জানতে চায় না। চলন্ত বাস থেকে কেউ লাফিয়ে নামতে গেলেও বাধা দেয় না। সে কেবল চুপ করে বসে থাকে তার নির্ধারিত আসনে।

    -আশ্চর্য ব‍্যাপার তো! তাহলে তার বাসে থাকার দরকার‌টাই বা কী?

    -সেটাও ঐ - আপনি যা বললেন - নিছক নিয়ম। চলন্ত বাসে একজন চালক ও একজন সঞ্চালক থাকতে‌ হয়, তাই। তবে কোথায় যাচ্ছে, কোথায় এলো  এসব প্রশ্ন না করে অন‍্য কিছু জানতে চাইলে সে জবাব দেয়। 

    -যেমন?

    -যেমন ধরুন তিনিবাবু চলন্ত বাসে উঠে দেখেন পিছন থেকে তীব্র হর্ণ দিচ্ছে একটা প্রাইভেট কার। তারপর তিনিবাবুর সাথে কন্ডাক্টরের যা কথাবার্তা হোলো তা এই প্রকার: 

    -ও ভাই, ঐ গাড়িটা অতো হর্ণ দিচ্ছে কেন? 

    -ওর তাড়া আছে।

    -কিসের তাড়া? 

    -বাসটাকে ওভার‌টেক করার। 

    -ওভার‌টেক করে কোথায় যাবে? 

    -যেখানে এই বাসটা যাচ্ছে, রাস্তা‌ তো একটাই। 

    -অমন প্রাইভেট কার কী কেবল বাসকেই ওভার‌টেক করে? 

    -না অন‍্য কোনো প্রাইভেট কার বাসের থেকে জোরে গেলে‌ও তাকে‌‌ও কেউ কেউ ওভার‌টেক করতে চায়।

    -কেন? 

    -সে আরো দ্রুত যেতে চায়।

    -এ বাসটা কোথায় যাচ্ছে? 

    -জানি না। 

    -কোথায় যাচ্ছে না জেনেই বাস চলছে?

    -হ‍্যাঁ। রাস্তা তো একটা‌ই।

    -কতদূর যাবে?
     
    -যেখানে সন্ধ‍্যা হবে সেখানেই যাত্রা শেষ।

    -সেখানেই কি বাসের সবাই নেমে যাবে? 

    -হ‍্যাঁ। 

    -আমাকেও কি ওখানেই নামতে হবে? 

    -হ‍্যাঁ। 

    -ওখানেই কি রাস্তা শেষ?
     
    -তা জানি না। তার‌পর ওদিকে কোনোদিন যায়নি বাস। রাস্তা আছে কী নেই তা অন্ধকারে বোঝা‌‌ও যায় না। তবে যারা বাস থেকে নামে তাদের কাউকে টর্চ হাতে ওদিকে যেতে দেখেছি। বাকি‌রা কী করে, কোথায় যায়, জানিনা। 

    -বাস কি ওখানেই রাতে থেকে যাবে?
     
    -না, ফিরে আসবে। 

    -কোথায়? 

    -সকালে যেখান থেকে ছেড়েছিল সেখানে। 

    -সেটা কোথায়?

    -জানি না।

    -আমি কি তাহলে এই বাসেই আবার ফিরে আসতে পারি? 

    -না, এই বাসে কাউকে ফেরৎ নিয়ে আসার নিয়ম নেই। 

    -তাহলে আমি কী করবো?
     
    -জানি না।
     
    -রাতে ওখানেই থেকে সকালে ফিরে আসতে পারি?
     
    -পারেন, তবে কোনো নিশ্চয়তা নেই।

    -মানে? 

    -সকালে কোন বাস ছাড়ে জানি না, রোজ ছাড়ে কিনা, কখন ছাড়ে তাও জানি না।
     
    -তাহলে? আজ না হয় আমার কলেজে মিস হয়ে গেলো, কাল কী হবে?

    -জানি না। 

    চুপ করে যান তিনিবাবু। তাঁর প্রশ্ন শেষ হয়ে যায়। তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে ...

    (পরবর্তী পর্বে সমাপ‍্য)

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ৭৮৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb91:89d:9cdb:d93d:3ff2:1a91:6db5 | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:১৭526355
  • হুঁ, তিনিবাবুর সাথে চেনা একজনের খুব মিল পাচ্ছি। পুরোটা পড়ি, তারপর বলবো।
  • বুড়া | 2405:8100:8000:5ca1::1c1:8516 | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫০526358
  • ধোর মাথামুন্ডু নেই এত লম্বা হ্যাজর হ্যাজর। অদ্ধেকও পড়া গেল না।
  • জিজ্ঞাসু | ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০০:২৪526361
  • সমরেশ‌বাবু - কিছু মনে করবেন না , গপ্পো‌টা পুরোটা পড়লাম , কিন্তু অনেক ভেবেও আমি‌ও কোনো মাথামুন্ডু খুঁজে পেলাম না । 
     
    sadcrying
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৪526411
  • @জিজ্ঞাসু - লেখাটি পুরোটা পড়ে, অনেক ভেবেও আপনি যে কোনো মাথা মুণ্ডু খুঁজে পাননি তা সোজা‌সাপ্টা জানানোর জন‍্য আপনাকে ধন্যবাদ। এটাই এ লেখার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক, কাঙ্খিত পাঠ প্রতিক্রিয়া ছিল। পরবর্তী পর্বের জন‍্য অনুগ্ৰহ করে একটু ধৈর্য ধরবেন প্লিজ।

    গুরুতে অনেকে ধোর, ধুস, ধ‍্যার, ধুত্তোর, জাতীয় তাচ্ছিল‍্য এবং #$&৶ জাতীয় অকথ‍্য গালাগালি সূচক শব্দ সহযোগে বিরক্তি, অপছন্দ প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। তাদের কাছে সেটা‌ই হয়তো স্মার্টনেসের পরিচায়ক। তেমনই একজনের - লেখাটি দ্বিতীয় পর্বে সমাপ‍্য জানা‌নো সত্ত্বেও - প্রথম পর্বের অর্ধেক‌টাও না পড়ে - “লম্বা  হ‍্যাজর হ‍্যাজর” মনে হোলো। তবে যেহেতু আমি লেখাটি কাউকে গান পয়েন্টে পড়তে বাধ‍্য করিনি তাই বিরক্তি‌টা ওভাবে না প্রকাশ করলে‌ও চলতো। 
    বাংলালাইভে দুটো লেখা প্রকাশিত হতে  - বাংলা লেখাটি‌র জন‍্য ৮০০ এবং ইংরেজি লেখাটি‌র জন‍্য ১০০০ টাকা সাম্মানিক পেয়েছি। গুরুর মতো অনিয়ন্ত্রিত ফোরামে লেখার প্রাপ্তি -  কিছু প্রশংসা এবং কিছু অপ্রত্যাশিত কিছু জুতো, ঝাঁটা‌পেটা এবং গালিগালাজ।

    আমেরিকা‌ন ভয়েস আর্টিস্ট ডেভ উইলিসের একটি বক্তব্যের সাথে (Be an encourager. The world has plenty of critics already) আমি‌ও একাত্মতা অনুভব করি। তাই গুরুতে কারুর লেখা‌ ভালো লাগলে honest, encouraging, appreciative ফিডব্যাক দিই - না লাগলে নীরব থাকি। এটা আমার ন‍্যূনতম, ভদ্রতা, সৌজন্য‌বোধের পরিচায়ক বলে মনে হয়। তবে এই স্বভাব বৈশিষ্ট্য‌গুলি অর্জন এবং অভ‍্যাস করতে হয়, বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। 

    ভালো থাকবেন।
  • Kishore Ghosal | ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:০০526419
  • সমরেশ, আমার কিন্তু ভালই লাগল - কোথাও একটা রূপক যেন রূপ নিচ্ছে - দেখা যাক দ্বিতীয় পর্বটা আসুক। 
     
     
  • :-) | 2405:8100:8000:5ca1::42:36f2 | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৩৪526430
  • পাবলিক ফোরামে লেখা আসলে পাবলিক মন্তব্য করবেই। আধপাতা বেকার  জ্ঞান  ঢালার জন্য যেমন পাবলিক ফোরাম একশব্দে ধোরবা বলার জন্যও তাই। যে লেখা অর্ধেকের বেশী একজন পড়তেই পারে নি সে তার বিরক্তি প্রকাশ করেছে। বেশ করেছে। ওই সময়টা নষ্ট হল তারই।
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৩১526440
  • বাঙালির অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও কিছু বঙ পাবলিক ফোরামে অন‍্যের লেখার ওপর পোঁ, বো, ধোরবা বলার 'নব‍্য কালচার' ধরে রেখেছে। ঐ সময়টুকু‌ও নষ্ট না করলে হয়তো পৃথিবীর সমস‍্যার কিছু সমাধান হতে পারতো।
  • dc | 2401:4900:1cd0:e4ce:935:233c:e475:969a | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১১:১০526441
  • খুব ভালো লাগলো পড়তে। গল্পটার স্ট্রাকচার ভারি ইন্টারেস্টিং, পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২০526444
  • @dc "গল্পটার স্ট্রাকচার ভারি ইন্টারেস্টিং" - আপনি একদম বুলস্ আইতে হিট করেছেন। ঠিক এই ভাবনা থেকেই এটা লেখা এবং দুটি পর্বে দেওয়াটা একটা এক্সপেরিমেন্ট - দেখতে চেয়েছিলাম গুরুর উবের ইন্টেলেকচুয়াল পাবলিক প্রথম পর্বটি পড়ে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করে। 
     
    ধোর, ধ‍্যার বলতে অভ‍্যস্থ গুরুর উচ্চমন‍্য কিছু পাঠক - ভেবেও দেখলো না - কে ন‍্যারেট করছে, প্রশ্নগুলোই বা করছে কে - তার কোনো উল্লেখ নেই গল্পে। এভাবে গল্প হয়? তিনি‌বাবু শেষে দৌড়ে যে বাসটিতে উঠলেন - সেটা আদৌ বাস না অন‍্য কিছু? 
     
    @ কিশোরদা চিন্তা‌শীল মানুষ, তাই উনি কিছু একটা আঁচ করেছেন।
     
    @kk স‍্যূররিয়ালিয়াস্টিক ধরণের লিখতে পছন্দ করেন - তিনি‌ও সাবধানে মন্তব্য করেছেন।
     
    এহেন মার্জিত, সংযত, ঋদ্ধ পাঠ প্রতিক্রিয়া  আমার মতো আনকোরা লেখকের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ।
     
    নিকের আড়াল থেকে যারা ধোরবা জাতীয় মন্তব্য করেন, ওসব রাস্তায় পড়ে থাকা মাতালের বমি। লোকে নাকে রূমাল চাপা দিয়ে এড়িয়ে যায়, আমি‌ও তাই করি। তাই প্রথমে "বুড়া'র বমির ওপর কোনো মন্তব্য করিনি।
     
     @জিজ্ঞাসু - চেষ্টা করেও কিছু বুঝতে পারেননি সেটা সোজাসুজি জানাতে ওনাকে কিছু মনের কথা লিখেছিলাম যা দেখে আবার বুড়ার এজেন্ট  :-) এর মির্চি লাগলো।
     
  • hihihi | 2405:8100:8000:5ca1::242:6a4d | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৫526445
  • বিচুটি যে কার লেগেচে সে ত দেকতেই পাচ্চি।  ঘুরে ঘুরে এসে ককনো ওই ত অমুক জায়গায় পহা দিইচে লেখা পড়ের ডম্ফাই  ত ককনো ভদ্দরতার হ্যাজ। laugh কেকে ডিশি সব নিকের আড়াল হলেও পেসংশা করিচে কিনা তাই খুউব ভাল। নিন্দে কল্লিই নিকের দোষ। তা তুমি বাপু লেকার শুরুতেই লিকে দিও এই লেখা পড়িয়া সবাই   ভাল ভাল বলিবেন আমি পেসংশা ভিকিরি। নিন্দে করিবেন না। নিন্দে আমি হজম করিতে পারি না।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৮526446
  • @হিহিহি‌হিহিহি -  ওমানে হাইপেয়িং চাকরির অফার পেয়েও না যাওয়া, কানাডাতে Independent Category তে আবেদন করে দিল্লি‌তে কানাডিয়ান হাই কমিশনে PR Visa'র ইন্টারভিউ কল পেয়ে না যা‌ওয়া - পারিবারিক কারণে, জীবনের পরিবর্তিত সমীকরণে। দেশেই প্রথম ৯ বছর ছোটোখাটো কাজ করে পরবর্তী ২৫ বছর L&T, Essar Projects, Reliance এ Construction Projects এ কাজ করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের (৫৮) আড়াই বছর আগে সাড়ে পঞ্চান‌য় চাকরি ছেড়ে দিয়ে‌ছি বাকি জীবন নিজের শর্তে বাঁচতে। পয়সা কামানোর আকাঙ্ক্ষা থাকলে অবসরের পরে‌ও contract এ চাকরি করতে পারতাম। তাই আপনার ভাবনা চিন্তার টেমপ্লেট দিয়ে আমায় বোঝা অতো সহজ নয়।
     
    চাকরি ছেড়েও ছেলেকে ছয়টি বছর মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কস্টলি জায়গা থেকে ব‍্যাচেলর ও মাস্টার্স করিয়েছি। অবসরের সামান্য সঞ্চয় থেকে আবার DHFL Scam এ ৩৭ লাখ টাকা খোয়ালাম। তাও আমি পয়সার জন‍্য উনুনে হাঁড়ি চড়িয়ে লিখি না। আপনি‌ আমার বক্তব্য‌টাই ধরতে পারে‌ন নি। আরও একটি ওয়েবজিন চারটি প্রকাশিত লেখা‌র জন‍্য ৫০০ টাকা করে দিয়েছি‌ল। 
     
    বলতে চেয়েছি, গুরুতে লেখার প্রাপ্তি - কিছু প্রশংসা এবং কিছু নিকের আড়াল থেকে হাটুরে ভাষায় ব‍্যক্তি আক্রমণ। 
     
    না, আমি কেবলই প্রশংসা‌র কাঙাল ন‌ই তবে সমালোচনা‌‌ও সংযত,  মার্জিত ভাষায়,  objective way তে হ‌ওয়া বাঞ্চনীয় বলে মনে করি। এটাই আমার পারি‌বারিক শিক্ষা। এটাই আমায় ৬৩+ কাউকে তুমি তুমি করে সম্বোধন করতে অনুমোদন করে না। হয়তো আপনার আপব্রিংগিং সেই‌রকম।
     
    আপনাদের মতো ব‍্যক্তি‌ত্ব নিকের আড়াল থেকে নিজের বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র, কন‍্যা, শিক্ষকদের‌ও এভাবে লিখলে অবাক হবো না। এটাই হয়তো আপনাদের পেডিগ্ৰি - তাই অন‍্যদের মধ‍্যে খুঁজে বেড়ান এমন কিছু যা আপনাদের নজরের পরিচায়ক।
  • dc | 2401:4900:1cd0:e4ce:935:233c:e475:969a | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৯526447
  • সমরেশবাবু, কমেন্ট নিয়ে চিন্তা করবেন না। 
     
    হ্যাঁ, সারিয়ালিস্ট বা ম্যাজিক রিয়ালিজম গল্প আমারও ভালো লাগে, সেজন্য আপনি প্রথম পর্ব কোথায় থামিয়েছেন সেটা বুঝতে পেরেছি। বাসের ব্যাপারটাও খেয়াল করেছি, সেজন্যই নেক্সট পার্টের জন্য অপেক্ষা করছি :-)
     
    নিও আর সতীকে মবিল অ্যাভিনিউতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল, জানেন নিশ্চয়ই। 
  • যোষিতা | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৮526449
  • এটা একটা অসম্ভব সুন্দর গল্প। পুরো একটা অন্য জগতে নিয়ে চলেছে। চলুক।
  • Kishore Ghosal | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৯526451
  • সমরেশ,  আমার পরামর্শ অযৌক্তিক মন্তব্যের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ সহজবোধ্য। ও জিনিষ শুরুতে আমারও হয়েছিল। আমাকে হেল্প করেছিলেন  KK, dc, অমিতাভ দাশগুপ্ত প্রমুখ। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৯526452
  • @ dc - আমি এক নিতান্তই মধ‍্যমেধার, সাধারণ পাঠক, লেখক‌। যাদুবাস্তবতা নিয়ে পড়াশোনা বা তেমন লেখনী‌তে আমার এলেম নেই। তাই - "নিও আর সতীকে মবিল অ্যাভিনিউতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল, জানেন নিশ্চয়ই।" - প্রসঙ্গে বলি - না, জানি না। "বাকিটা ব‍্যক্তি‌গত" সিনেমার শেষ দৃশ‍্য‌টি মনে আছে যেখানে ক্ষণিকের জন‍্য যাদু ও বাস্তব‌তা একাকার হয়ে গেছি‌ল।

    এ লেখাটির স্ফূলিঙ্গ ছিল মনিপালে থাকতে - ১৩.৬.২০ রাতে দেখা একটি ছোট্ট, বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন‌ দৃশ‍্য - "একটি লোক কোট প‍্যান্ট পরে হন্তদন্ত হয়ে খালি পায়ে কলেজে যাচ্ছে"। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভ‍্যাবলা মেরে খানিক‌ক্ষণ বসে ছিলাম - এটা কী দেখলাম!? সারাদিন ধরে নানা কাজের মাঝে দৃশ‍্যটা ঘুরে ফিরে মনে হানা দিয়েছে। সন্ধ্যায় লিখতে গিয়ে হাওয়া মেঠাই তৈরী‌র মতো বাকি‌সব দানা বেঁধেছে। 

    ঠিক‌ই বলেছেন, এই আইটেম‌গুলিকে পাত্তা না দেওয়া‌ই উচিত। ক্রমশ চামড়া মোটা হয়ে গেলে দেবো‌ও না। এরা লেখা‌টি পড়েন না। তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন না। কেবল ঘুরেফিরে মন্তব্য সেকশনে আসেন লেখকদের গালিগালাজ করতে। 

    সৌভাগ্য‌ক্রমে আমাকে তো তবু তেমন কিছুই বলে‌ননি - শরৎ সংখ্যা‌য় ২৬শে অক্টোবর "ং" নামক জনৈক নিক বয়স্ক লেখক কিশোরদার "মশা-‌ই" লেখা‌র ওপর লেখা ছেড়ে লেখক ও আর এক পাঠিকা‌কে জড়িয়ে এতো কুৎসিত মন্তব্য করেছিলেন - দেখে গা গুলি‌য়ে  উঠেছি‌ল। ভাগ‍্যিস এ্যাডমিন সেটি পরে উড়িয়ে দেন। 

    এই ধরণের মন্তব্য সাহিত্য, সমাজ, বিজ্ঞান, দর্শন নিয়ে ঋদ্ধ লেখা প্রকাশ, তার ওপর বিশদে আলোচনা চলা ফোরামের পক্ষে‌ও হানিকারক বলে আমার মনে হয়। Freedom of expression এর নামে Character assassination কে প্রশ্রয় দেওয়া - আমার মতে দূর্বলতা‌ বা তার ওপর লাগাম টানতে  অক্ষমতার নামান্তর।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৪526453
  • কিশোরদা 
     
    আপনি ভুক্তভোগী, তাই dc'র মতো আপনার পরামর্শ‌ও মনে রাখতে চেষ্টা করবো। 
  • ফরিদা | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৮526455
  • লেখাটা খুব পছন্দ হ'ল। "পরবর্তী পর্বে সমপ্য বলে পরের পর্ব যদি নাও আসে, তা-হলেও এই গল্পের পঠে চেপে বসাই যায় এক অগন্তব্য ভ্রমণে।
     
    চমক লাগান লেখা। মাঝে মাঝে ফিরব এর কাছে। 
     
    সমরেশবাবু, আপনার বেড়ানর গল্পগুলো পড়েছি, আগে লেখা হয় নি — যেভাবে আপনি দেখেন, দেখান.. আশ্চর্য লাগে। 
     
    দিনটা অন্যরকম হয়ে গেল আজ। 
  • kk | 2607:fb90:ea99:1143:6078:5fdf:a197:7f64 | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০০526456
  • সমরেশবাবু,
    মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই একটা কথা বলি। গুরুতে ইউজুয়াল ট্রেন্ড, আমি যা লক্ষ্য করেছি, হচ্ছে ভালো লাগলে জানানো, না ভালো লাগলে কোনো মন্তব্য না করা। যেটা আপনিও করেন বলে জানিয়েছেন। তবে পাবলিক ফোরামে তো সবার মানসিক গঠন এক রকম হয়না। আমি পার্সোন্যালি মনে করি খারাপ লাগলে সেটাও জানালেই ভালো হয়। তাতে লেখকের উন্নতি করার সুযোগ বাড়ে। এখন কথা হলো মন্তব্যের ভাষা বা প্রকাশভঙ্গী কেমন। এখানে আবার সেই একই কথা চলে আসছে -- পাবলিক ফোরামে নানা রকম পাঠকের প্রকাশভঙ্গীও নানা রকম। আমার মনে হয় আপনি আপনার মত লিখে যান। অনেক রকমই মন্তব্য আসবে, সে আসুক। অন্য এক টইতে সুদীপ্ত খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন আমাকে। কিছু মানুষের শোরগোল করে পাখি উড়িয়ে দেওয়া নিয়ে আমি রাগ প্রকাশ করেছিলাম। সুদীপ্ত বললেন এগুলোও তো চলার পথে এক রকমের খুঁজে পাওয়া অভিজ্ঞতাই(ভার্বাটিম নয়, তবে মূল ভাবটা এইই)।ঐ কারণেই পাখিটা বসে থাকা অবস্থাতেও দেখা হলো, ডানা মেলা অবস্থাতেও দেখা হলো। আমার খুব ভালো লাগলো কথাটা পড়ে জানেন? সত্যিই আমি ঐদিকটা আগে দেখতে পাইনি। তো, এখানেও সেই একই কথা। সব রকম মন্তব্যই দেখা হলো। কে কীভাবে এই জাতীয় লেখা প্রসেস করছেন তাও দেখা হলো। মানে এগুলো আমার নিজের মনে হওয়া, তাই বললাম। এ নয় যে সবাইকে মানতে হবে।
    এই লেখার বাকিটুকুর জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:১৯526457
  • @kk - আপনার মাধ‍্যমে সুদীপ্ত‌র কথাটি সত‍্যি ভাবার মতো। এটা মনে রাখতে পারলে মানসিক শান্তি‌দায়ক। 
     
    আপনার কথাটা - "তো, এখানেও সেই একই কথা। সব রকম মন্তব্যই দেখা হলো। কে কীভাবে এই জাতীয় লেখা প্রসেস করছেন তাও দেখা হলো।" - খুব দাগ কাটলো। 
     
    আজ ঐসব আজেবাজে মন্তব‍্যের কারণে কিঞ্চিৎ চিত্তবিক্ষেপে আপনার, কিশোরদা‌র ও dc'র motivating comment এ্যালোভেরা জেলের মতো সুদিং লাগলো। আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন‍্যবাদ।
     
    বহুদিন আগে L&T তে এক ইন্টারনাল সেমিনারে এক ভদ্রলোক বলেছিলেন  - Try to see rainbow in the gutter. 
     
    হায়, এসব কথা যদি সদা‌ই মনে রেখে জীবনাচরণে পালন করতে পারতাম ...
     
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৭526458
  • @ফরিদা - আপনার মন্তব্য -  "পরের পর্ব যদি নাও আসে, তা-হলেও এই গল্পের পঠে চেপে বসাই যায় এক অগন্তব্য ভ্রমণে।" সুন্দর বলেছেন। এমন মন্তব্য ঋদ্ধ করে।
     
    লেখাটার মধ‍্যে‌ই  ১ এবং ২ করে পর্ব ভাগ করেছি‌লাম।  জুন ২০২০ তে পুরোটা একসাথে মুষ্টিমেয় কজন বন্ধু‌কে পাঠিয়েছিলাম। তাদের একজন ঠিক এই মন্তব্য করেছিলেন - প্রথম পর্বটা‌ই একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ লেখা। 
     
    গুরুতে  আমি ইচ্ছে করে প্রথম পর্বটা  আলাদা করে পোষ্টেছিলাম কী প্রতিক্রিয়া আসে  দেখতে। আপনি, কেকে, যোষিতা, কিশোরদা, dc -  আপনারা  যে আপাত অবান্তর লেখাটির সাথে কোনোভাবে কনেক্ট করতে পেরেছে‌ন - সেটা দেখে ভালো লাগলো। 
     
    তবে @জিজ্ঞাসুর মন্তব‍্যে সত্যিই কিছু মনে করিনি কারণ তিনি ব‍্যঙ্গ বিদ্রুপ না করে  পরিস্কার বলেছেন - লেখাটি পড়ে তিনি কিছু বুঝতে‌ পারেন নি। আমার প্রকাশ‌ভঙ্গি সোজা‌সাপটা - তবু সব কিছুর যেমন প্রাঞ্জল অর্থ থাকতেই হবে তার কোনো মানে নেই তেমনি  কোনো লেখা পড়ে যদি কেউ বুঝতে না পারেন এবং সেটা মার্জিত আঙ্গিকে জানা‌ন - তেমন মন্তব্য  মনে / মানে লাগা উচিত নয়। 
     
    এ ব‍্যাপারে আমি কেকের সাথে একমত - অযথা, কদর্য মন্তব্য যেমন মুড অফ করে দেয় তেমনি পরিচিতির সুবাদে পিঠ চাপড়ানো‌ও লেখকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। Dispassionate, Objective, Constructive criticism is indeed enlightening for a budding writer. লেখক যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান, তার ব‌ই যখন বাজারে কাটে তখন আর তিনি প্রাথমিক দিনগুলো‌র মতো পাঠকের মতামতের তোয়াক্কা করেন না। 
     
     
     
  • রঞ্জন রায় | 2401:4900:1c01:71c8:994:b519:9010:1a38 | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০১526467
  • লেখাটি হেব্বি লেগেছে।
    একটু পরে পেটপুজো করে ল্যাপি খুলে বসবো। একটু বড়সড় কমেন্ট লিখব।
  • Ranjan Roy | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৬526471
  • '"একদিন প্রতিদিন" সিনেমাটি দেখার পর, সম্ভবতঃ প্রিমিয়ার শো'তে, কিছু দর্শক ডিস্টার্ব হয়ে পরিচালক মৃণাল সেনকে প্রশ্ন  করেছিলেন--সব তো বুঝলাম, কিন্তু মেয়েটি রাত কোথায় কাটালো সেটা তো জানা গেল না? 
      মৃণালের উত্তর--সেটা তো আমিও জানি না। 
     আসলে ওই সিনেমার অভিঘাত ছিল মধ্যবিত্তের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধকে প্রশ্ন করা, একটা নিটোল গল্প বলা নয়। এই লেখাটি পড়ে সেই কথাই মনে হল।
    সমরেশবাবুর লেখাটি সেই গোত্রের। 
     
    আমি কবি ফরিদার সঙ্গে  সহমত। এই পর্বটা আপাত স্বয়ংসম্পূর্ণ, পাঠককে টেনে নিয়ে যায় এক 'অগন্তব্য ভ্রমণে'র সম্ভাবনায়। সেটাই বড় প্রাপ্তি।  
    আর স্ট্রাকচারটি! প্রতি মুহুর্তে এক চরিত্র গল্পটা যে , গতানুগতিক অর্থে, গল্পই নয়, খামখেয়ালি অসংগতিপূর্ণ সে কথাটি লেখক বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
     তাহলে কোন পাঠক ওই চরিত্রের মত অসহিষ্ণু হলে সমরেশ ডিস্টার্ব হচ্ছেন কেন? সেই পাঠক তো আপনার লেখার মধ্যেই বসে আছেন! 
     
    আমাদের অনেকের মধ্যেই এক 'তিনিবাবু' ঘাপটি মেরে আছে। আমরা অনেক সময় তাকে চিনেও চিনি না বা চিনতে চাই না। 
      কারণ, চিনলে বড় বিপদ। ভিটেমাটি চাটি হয়ে যেতে পারে।
    কখন সেই খেয়ালে বা বেখেয়ালে বেরিয়ে যাব নিরুদ্দেশ যাত্রায়, অগম্যস্থলে। ভেসে যাবে দৈনন্দিন সংসার। সন্তান এবং স্ত্রী বলবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, স্বার্থপর। কিন্তু সেই টান যে অমোঘ।
       মৃণাল সেনেরই "একদিন আচানক" সিনেমার সেই অধ্যাপককে (শ্রীরাম লাগু)মনে করুন। তিনি কেন হঠাৎ ভরা সংসার ফেলে ছাতি বগলে আসছি বলে নিরুদ্দেশ হলেন কেউ জানে না। 
     
    নিজের কথাই বলি। 
    বছরে কয়েকবার স্বপ্নে দেখি পরীক্ষা হলে বসেছি। সব উত্তর জানা, কিন্তু লিখতে পারছি না। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কারণ আমি বেখেয়ালে গেঞ্জি গায়ে বসে আছি। সবাই আমার দিকে আড়ে আড়ে তাকাচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। অথচ উঠে গিয়ে হোস্টেলের রুম থেকে জামা গলিয়ে ফিরে আসব, তার সময় নেই।
      এটা হয়ত আমার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা করতে না পারার আফশোসের এক্সট্রাপোলেশন। আর স্বপ্নে সব সময় ভুল বাসে বা ট্রেনে উঠে পড়ি। কোর্স কারেকশন   করতে গিয়ে ক্রমশঃ দূরে, আরো দূরে চলে যাই। 
        এই লেখাটি আমাকে একটা ওইরকম নিরুদ্দেশ যাত্রায় যাওয়া নিয়ে উপন্যাস লিখতে উসকে দিচ্ছে, জানি না লিখে উঠতে পারব কিনা। আয়ু ফুরিয়ে যাচ্ছে। 
        এইরকম লেখা আরও লিখুন সমরেশ। পরের পর্বের প্রতীক্ষায় আছি। 
     
    পুঃ আর গুরুর পাতায় খিল্লি করা কমন ফীচার। কিছুদিন পরে সয়ে যাবে। এমনকি ভালো লাগতেও পারে। কেউ আমার লেখা পড়ে খিল্লি না করলে কেমন আলুনি আলুনি লাগে। বিশেষ করে "হিহি"র। আই লাইক হিম। 
    ভিন্নরুচির্হি লোকাঃ। 
     এব্যাপারে দময়ন্তীর আমাকে দেয়া পরামর্শটি প্রণিধানযোগ্য। 
    'রঞ্জনদা, লেখা পাবলিক ফোরামে পেশ করার পর সেটা আর আপনার সম্পত্তি নয়, বরং আপনার। যে কমেন্ট ট্রোলিং  মনে হচ্ছে তার জবাব  দিয়ে সময় নষ্ট না করে নিজের লেখা লিখে যান"। 
  • :|: | 174.251.162.48 | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২৩526472
  • "... ফোরামে পেশ করার পর সেটা আর আপনার সম্পত্তি নয়, বরং আপনার।" কঠিন বাইক্য। :(
  • Ranjan Roy | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫১526473
  • ঠিক।
    হবে " বরং পাঠক সাধারণের"।
     
    ধন্যবাদ  চতুর্ভুজ!
  • Kishore Ghosal | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৮526476
  • রঞ্জনদা, ওই চিহ্নটির তাৎপর্য এত দিনে জানলাম,  "চতুর্ভুজ"!!  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন