এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভৌতিক কাণ্ড স্বামী জব্দ

    লেখক শংকর হালদার লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩৮০ বার পঠিত
  • ভৌতিক কাণ্ড স্বামী জব্দ।
     
    ◆ চূর্ণী নদী থেকে ইছামতি নদীর উৎপত্তিস্থলের দুই নদীর পাড়ে পাড়ে প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের ছোট ও বড় গাছ পালায় ভরে উঠেছে। তার পাশ দিয়ে গেদে টু শিয়ালদা রেল লাইন ইছামতি নদী পার হয়ে চলে গেছে। এক কিলোমিটার দূরে ইছামতি পাড়া অবস্থিত। উৎপত্তিস্থলের নিরিবিলি পরিবেশের মাঝে চূর্ণী নদীর পাড়ে মহাশ্মশানে মানুষের শেষ ঠিকানা। এই মহাশ্মশানে দিনের বেলায় মানুষ আসতে ভয় পায়। এখানকার ঠান্ডা পরিবেশে কেমন যেন ভৌতিক ভৌতিক ভাব মনে হয়। একই গোড়া থেকে জন্ম বট, অশ্বত্থ ও নিম তিনটি গাছ একত্রে মিশ্রণে বসবাস করছে। এই তিন মাথা গাছের কাছে শ্রদ্ধা ভক্তি নিয়ে কোনো মানুষ মনের কামনা বাসনা জানালে নাকি সাফল্য লাভ হয়ে থাকে।
     
    ◆ অপরাজিতা নামে একজন গৃহিণী বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাগলীর বেশ ধারণ করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে এক রাতে মহাশ্মশানে তিন মাথা গাছের কাছে উপস্থিত হয়। মনের দুঃখে কান্নাকাটি করতে থাকে। অন্ধকার আচ্ছন্ন রাতে শিয়াল সহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী ও মরা মানুষের কান্নার আওয়াজে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিচিত্র শব্দের মাঝে আবার বাঁশি সুর বেজে ওঠে, বাতাসের গতি কখনো ধীর গতিতে আবার কখনো প্রচন্ড ঝড়ের গতিতে চলতে থাকে । 
     
    ◆ অপরাজিতা পাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পায়, মরার মাথা গুলো নাচানাচি করছে। কঙ্কাল দেহ গুলো নাচতে নাচতে অপরাজিতার সামনে আসে আর অপরাজিতা চিৎকার করে তিন মাথা গাছে কে জড়িয়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। গাছ কে জড়িয়ে এক সময় মনের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে।
     
    ◆ ভোরের দিকে লম্বা জটাধারী লাল কাপড় পড়া এক সাধু বাবা উপস্থিত হয়ে অপরাজিতার পিঠে হাত রেখে বলেন :- মা; উঠে পড়ে, এই ভয়ংকর জঙ্গলের মাঝে মরতে এসেছো, ত্রিনাথ ঠাকুরের কৃপায় বেঁচে গিয়েছে এখন ঘরে ফিরে যাও।
     
    ◆ অপরাজিতা মানুষের আওয়াজ শুনে ভয়ে আতঙ্কে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে, আর সাধু বাবাকে দেখতে পেয়ে তার পা জড়িয়ে ধরে বলে :- বাবা; স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
     
    ◆ সাধু বাবা বলেন :- তোমার শুভ দিন আসতে এখনো তিন বছর দেরি আছে কিন্তু এই দেহের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে তারপর পূর্ণ জন্ম লাভ করতে হবে।  
     
    ◆ অপরাজিতা বলে :- বলুন কি করতে হবে?
     
    ◆ সাধু বাবা বলেন :- আমি ভূতেদের মধ্যে একজন সাধু অর্থাৎ ভূত সাধু বাবা।
     
    ◆ অপরাজিতা বলে :- শুনেছি সাধুরা নাকি কখনোই ভূত হয় না।
     
    ◆ সাধু বাবা বলেন :- মাগো; যার যেমন কর্মফল কিন্তু তাকেই ভোগ করতে হবে। আমার পূর্বজন্মে অভিরাজ সাধু বাবা নাম ছিল কিন্তু কোন এক খারাপ কর্ম করার ফলে এক সাধারণ মানুষ আমাকে খুন করে তারপর ভুত সমাজের কাছে সাধু ভূত নামে পরিচিতি লাভ হয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে নিজের স্বাধীনতা নিয়ে সব সময় চলাফেরা করি। 
     
    ◆ অপরাজিতা বলে :- স্বামীর মন পাওয়ার জন্য ও ছেলে মেয়ে কে নিয়ে সংসার করার জন্য আমাকে 
    কি করতে হবে?
     
    ◆ সাধু বাবা হাত উঁচু করে কোন কিছু আহবান করার পর অপরাজিতার দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন :- এই মহামূল্যবান সম্পদ নিয়ে বাড়িতে চলে যাও। তারপর কানে কানে কিছু কথা বলে।
     
    ◆ অপরাজিতা রেললাইন ধরে মাজদিয়া স্টেশন আসে তারপর ট্রেন ধরে তার বাড়িতে উপস্থিত হয়। ছেলে মেয়ে মামা বলে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে আর স্বামী বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করতে থাকে। সারাদিন সংসারের কাজকর্ম করার পর রাতে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়। 
     
    ◆ অনেক বেলা হয়ে গেলেও অপরাজিতা ঘুম থেকে উঠেছে না দেখে তার বড় ছেলে মা মা গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে :- মা কিছু খেতে দাও।
     
    ◆ বড় ছেলে কোন সাড়া না পেয়ে তার মাকে আরো জোরে ধাক্কা দিতে থাকে আর মা মা বলে ডাকতে থাকে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে অপরাজিতার স্বামী অভিলাষ পাশের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে বলে, দেমাগ দেখো, এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। তারপর কাছে গিয়ে জোরে হাত ধরে হেঁচকা টান দেয় আর অপরাজিতার দেহ মেঝেতে পড়ে যায়।
     
    ◆ তবুও কোন নড়াচড়া না করাই ছেলে মেয়ে মা মা বলে কান্না করে উঠে বলে :- আমার মা মরে গেছে।
     
    ◆ পাড়া-প্রতিবেশী মহিলারা সহ পুরুষেরা ছুটে আসে। বয়স্ক মহিলা অপরাজিতার দেহ পরীক্ষা করে বলে, মনে হচ্ছে তো বহু সময় আগে মারা গিয়েছে। অভিলাষ তোর কারনে বউটা অকালে চলে গেল কিন্তু বউটা কে মেরে ফেলিস নি তো?
     
    ◆ অভিলাষ বলে :- কাকিমা; শুধু শুধু আমার ঘাড়ে দোষ দিচ্ছেন কেন? কাল তো অপরাজিতা ছেলে-মেয়ের কাছে ছিল কিন্তু আমি কিছু করিনি।
     
    ◆ মানুষের সন্দেহের কারণে থানায় খবর দেয় আর পুলিশ আসে। পুলিশ প্রাথমিক পরীক্ষা করে কোন আত্মহত্যা চিহ্ন দেখতে পায় না কিন্তু ভাবে পাথরের মত শক্ত মরার দেহ কেন! নিশ্চয়ই কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করে এই মহিলাকে মারা হয়েছে। তারপর পুলিশ অফিসার নির্দেশে লাশ কে পোস্ট ম্যাডামের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
     
    ◆ মর্গের মরা দেহ কাঁটা ডাক্তার অপরাজিতা দেহে ছুড়ি চাকু কোন ভাবে চালাতে পারছেন না। বিরক্ত হয়ে হাতুড়ি ছেনি ব্যবহার করে কিন্তু হাতুড়ি ছুটে ডাক্তারের কপালে লাগে ফেটে রক্তপাত শুরু হয়।
     
    ◆ ডাক্তার চিৎকার করতে করতে লাশ ঘর বেরিয়ে অফিস ঘরে ঢুকে বলেন :- দেহ নয়তো একদম পাথর হয়ে গিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ঠনঠন আওয়াজ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে লাশ কাটছি কিন্তু এরকম তো কোনদিন হয়নি। তাহলে কি সত্যি সত্যিই ভূত-পেত আছে?
     
    ◆ ডোম ছুটে এসে ডাক্তার বাবুর উদ্দেশ্য বলে :- এই লাশ থেকে আরও অঘটন ঘটতে পারে, তাড়াতাড়ি গুড রিপোর্ট লিখে দিয়ে লাশ ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আপনি আর লাশ ঘরে কতক্ষণ আর থাকেন, আমাকে সব সময় থাকতে হয়। আমি এইসব ভূতেদের কাণ্ডকারখানা ভালোভাবে অনুভব করতে পারি। এই পাথর ভূত রাত হলে যে কি কাণ্ড ঘটাবে তা অনুভব করতে পারছেন না। দিনের বেলায় আপনার মাথা ফাটিয়ে দিল আর রাত হলে এরা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
     
    ◆ লাশ মর্গ থেকে সরাসরি গ্রামের শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই মুহূর্তে আকাশে কালো মেঘ দেখা দেয় আর মুহুর্তের মধ্যে প্রলয়কারী ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে শ্মশান জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শ্মশানে কোন ঘর না থাকার কারণে লোকজন লাশ ফেলে রেখে এদিকে ওদিকে ছুটে পালাতে শুরু করে। ঘন্টা তিনেক ঝড় বৃষ্টি হওয়ার পর কিছু প্রতিবেশীরা লাঠি সোটা নিয়ে ও হাতে বড় টর্চ লাইট নিয়ে শ্মশানে উপস্থিত হয় কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লাশের কোন সন্ধান করতে পারে না। ভৌতিক আতঙ্ক নিয়ে লোকজন আবার গ্রামের দিকে রওনা দেয়।
     
    ◆ অপরাজিতার স্বামী অভিলাষ কয়েক মাস পর বিধবা প্রেমিকা অবন্তিকা কে ঘরে নিয়ে আসে। আর কয়েকদিন পর হঠাৎ করে তার ছেলে-মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। বহু খোঁজাখুঁজি করেও কিন্তু ছেলে মেয়েকে আর উদ্ধার করতে পারে না।
     
    ◆ অপরাজিতার মৃত্যুর নয় মাস পর এক অমাবস্যার রাতে অভিলাষের বাড়ির উপর প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ের তান্ডবে ফটাফট আওয়াজ করে বন্ধ ঘরের সব দরজা-জানলা খুলে যেতে শুরু করে। আর বৃষ্টির জল ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
     
    ◆ একটি ছায়া মূর্তি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে আর ঘুমন্ত অভিলাষের উপর আক্রমণ করে। অভিলাষ কিছু বোঝার আগেই তার দুই পা ধরে জোরে টান দিয়ে ঘরের দেওয়ালে ছুড়ে মারে। অভিলাষ মরে গেলাম রে, মরে গেলাম বলে চিৎকার করে ওঠে।
    অবন্তিকা চিৎকার শুনে তার স্বামীকে সাহায্য করতে আসলে তাকে উঁচু করে ধরে মেঝের উপর আছার মারে আর অবন্তিকা চিৎকার করে বলে, আমার মাজা ভেঙ্গে দিয়েছে। ওরে বাবারে ভুত ভুত বলে চিৎকার শুরু করে। 
     
    ◆ অভিলাষের দ্বিতীয় স্ত্রী অবান্তিকার মুখ চেপে ধরে প্রলয়কারী শক্তি বলে :- চেঁচামেচি করলে শ্বাস রুদ্ধ করে মেরে ফেলবো।
     
    ◆ সকাল হতে না হতেই অবন্তিকা পাড়ার মহিলাদের কাছে গিয়ে রাতের ঘটনা জানায়। আর এভাবে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, আবাল বৃদ্ধ সবাই একে একে অভিলাষের বাড়িতে উপস্থিত হয়।
     
    ◆ একজন বয়স্ক লোক ভৌতিক বিবরণ শোনার পর বলেন :- আরে; তোরা কি পাগল হয়ে গেলি নাকি? কাল রাতে কোন ঝড় বৃষ্টি হয়নি। রাস্তাঘাট সব একদম শুকনো আর তোর বাড়িতে এক ফোটা জল আছে। না ঝড়ে কোন গাছপালা ভেঙেছে, সবার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভয় দেখানোর কোন যুক্তি নেই।
     
    ◆ এইভাবে কয়েকবার ভৌতিক কাণ্ড ঘটার পর একদিন সকালবেলা অবন্তিকা তার স্বামীর উদ্দেশ্য করে বলে :- এই ভৌতিক বাড়িতে আমি আর থাকতে চাই না, চলো অন্য কোথাও গিয়ে আমরা বাস করি। আমাদের সমস্যা গুলো পাড়া প্রতিবেশী কেউ বুঝতে চায় না। সবাই আমাদের ব্যঙ্গ করে পাগল বলে কিন্তু এখানে আর বেশিদিন থাকলে আমরা সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।
     
    ◆ অভিলাষ বলে :- বললেই তো আর চলে যাওয়া যায় না। চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ছেড়ে আমি যেতে পারব না, তারপর এখানেই আমাদের চাষবাস ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। তান্ত্রিক ডেকে ভূত তাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।
     
    ◆ দেশের বড় বড় তান্ত্রিক আসে কিন্তু ভূতের উপদ্রব বন্ধ হয় না বরং তান্ত্রিক আসলে আরো বেশি উৎপাত শুরু হয় আর তান্ত্রিক ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
     
    ◆ অবন্তিকা ভূতের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে, একদিন সকাল বেলা স্বামীর সাথে একচোট ঝগড়া অশান্তি করার পর ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
     
    ◆ অভিলাষ উত্তেজিত হয়ে বলে :- তুমি চলে যেতে চাও, যেতে পারে কিন্তু আমি তোমার সাথে যাবো না।
     
    ◆ অবন্তিকা বলে :- আমার কথা তো বিশ্বাস হয় না, আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য কিন্তু
    তোমার বড় বউ মরে গিয়ে এইসব ভৌতিক কাণ্ড করছে। থাকো তোমার ভৌতিক বউ নিয়ে আমি সারা জীবনের জন্য চলে গেলাম।
     
    ◆ অবন্তিকা সোজা রাস্তা না ধরে আম বাগানের মধ্যে দিয়ে চলতে শুরু করে। চলতে চলতে এক সময় একজন মহিলাকে রামদা হাতে দেখে চমকিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
      
    ◆ মহিলাটি বলে :- তোমার সংসার করা হয়ে গেল। আমার স্বামীকে ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে কিন্তু আমার সাজানো সংসারটাকে তুমি ভেঙে দিয়েছে।
    আমি মরে গিয়েও দেখতে পেয়েছিলাম কিন্তু তোমার ভালোবাসা নাটকের অভিনয়। আবার আমার ছেলে মেয়েকে তুমি তাড়িয়ে দিয়েছে। তোমাকে আজ আমি আর বাঁচতে দেব না।
     
    ◆ অবন্তিকা ভয়ে ভয়ে বলে দিদি, তুমি তো দু বছর আগে মারা গিয়েছে কিন্তু তুমি ভূত না মানুষ। আর তোমার ছেলে মেয়েকে আমি তাড়িয়ে দেয়নি, ওরা নিজের থেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। আমি বাঁচতে চাই আমাকে মেরো না দিদি।
     
    ◆ মহিলাটি বলে :- আমি অপরাজিতা মানুষ ভূত কিন্তু কাউকে ছাড়বো না। বলে দুই হাতের উপর অবন্তিকাকে উঁচু করে ধরে রাখে।
     
    ◆ অবন্তিকা কান্না করতে করতে বলে :- দিদি আমাকে ছেড়ে দাও আমি আর কোনদিন ভৌতিক বাড়িতে সংসারে ফিরে যাব না। আর তোমার স্বামীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখবো না।
     
    ◆ অপরাজিতা বলে :- আজকের মত তোকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু যদি কোনদিন স্বামীর সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা করিস, তাহলে সেদিন তোর ধার ঘাড় মটকে তোর রক্তে স্নান করবো। তারপর লম্বা জিভ বের করে ভয় দেখাতে থাকে।
     
    ◆ অপরাজিতার মৃত্যুর তিন বছর পর আবার তার স্বামীর সংসারে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সকাল আটটার সময় উপস্থিত হয়। অপরাজিতার স্বামী দেখা মাত্রই ভূত ভূত বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।
     
    ◆ অপরাজিতা বলে :- আমি ভূত নয় জ্যান্ত মানুষ আমার মৃত্যু হয়নি।
     
    ◆ পাড়ার লোকজন এসে শুনে কেউই আর এগিয়ে আসে না তারপর অপরাজিতার ছেলে মেয়ে দুজনেই পাড়ায় গিয়ে বলে :- আমরা ফিরে এসেছি আর আমার মা ভূত নয় তোমরা সবাই আসো।
     
    ◆ সকাল বেলা আবার পাড়া-প্রতিবেশী লোকজনে ভরে ওঠে আর সবাই অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মায়ের আচল মুখ লুকিয়ে বলে, কাকিমা জ্যান্ত ভূত নাকি।
     
    ◆ অপরাজিতা সকলের উদ্দেশ্য করে বলে :- আপনারা কেউ ভয় পাবেন না কারণ ভূতেরা কখনোই দিনের বেলায় বের হতে পারে না।
     
    ◆ কয়েকজন বলে :- তোমার কথা আমরা বিশ্বাস করি না কারণ ভূতেরা অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা সব সময় চলাফেরা করতে পারে আর তুমি তো তিন বছর আগেই মরে গেছো।
     
    ◆ একজন বয়স্ক সাহসী মহিলা অপরাজিতার কাছে এসে শরীরের বিভিন্ন অংশ টিপে টিপে ও চিমটি কেটে পরীক্ষা করতে থাকে তারপর ছায়া পরীক্ষা করে বলে, অপরাজিতা তো ভূত বলে মনে হচ্ছে না।
     
    ◆ সেই মুহূর্তে অভিরাজ সাধু বাবা উপস্থিত হয়ে বলেন :- সবই সংসারের মায়া। অপরাজিতা ভূত নয় জ্যান্ত একজন মানুষ কিন্তু লৌকিকভাবে অপরাজিতার মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা তার শরীর রক্ষা করা ছিল, সেই জন্য দেহ পাথরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। শ্মশানে ঝড় বৃষ্টির সময়ে তোমরা অপরাজিতার লাশ রেখে চলে যাও। সেই মুহূর্তে আমি তার পাথরের দেহকে আবার স্বাভাবিক দেহ বানিয়ে জীবিত করে আমার আশ্রয়ে রেখে ছিলাম। বিশেষভাবে সাধনা করার নির্দেশ দেয় আর স্বামীকে পাওয়ার জন্য সেই শক্তির মাধ্যমে ভৌতিক ক্রিয়া চালিয়েছে। আবার ছেলে মেয়েকে তার মা অপরাজিতা এই বাড়ি থেকে আমার আশ্রয়ে নিয়ে যায়। আশা করি সবার মনের সন্দেহ দূর হয়েছে।
     
    ◆ অপরাজিতা ছুটে এসে সাধু বাবা কে প্রণাম করে বলে :- বাবা; আপনি বসুন।
     
    ◆ দুজন ব্যক্তি দুটি গরু নিয়ে আলোচনা উঠানে উপস্থিত হয়ে সাধু বাবার উদ্দেশ্য বলে :- বাবা কোথায় রাখবো।
     
    ◆ সাধু বাবা গরু দুটো অপরাজিতার হাতে দিয়ে বলেন :- আমার নাতি নাতনির জন্য এই গরু দান করলাম কিন্তু কখনোই এই গরু বিক্রি করবে না। মরার পরে এই বাড়ির সীমানার মধ্যে সমাধি দিয়ে রাখবে।
     
    ◆ অপরাজিতা কয়েক দিন পর স্বামীর পাশে বসে তার এক প্রশ্নের উত্তরে বলে :- এরপর যদি আবার এরকম উল্টোপাল্টা কাজ কর তাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি ভূত হয়ে তোমার ঘাড় মটকে দেবো।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    রচনাকাল :- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে।
    বাঙালি লেখক সংসদ কার্যালয় দত্তপুলিয়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ। শব্দ সংখ্যা ১৯১০ 
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০৭523472
  • প্রত্যেক প্যারাগ্রাফের আগে বুলেট পয়েন্ট দিয়েছেন কেন ? অদ্ভুত দেখতে লাগছে। কারণটা জানতে পারলে ভালো হতো।
  • র২হ | 96.230.209.161 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:৪৩523483
  • চমৎকার হচ্ছে। ভুতের সঙ্গে সামাজিক বার্তাও আছে। তবে ভৌতিক শব্দ স্বামী জব্দ - নামটা এরকম হলে অন্ত্যমিল হতো।
    আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, আগের গল্পেও অবন্তিকা ছিল। মাল্টিভার্স মত এগোচ্ছে। লিখুন, পাঠক অপেক্ষায়।
  • :|: | 174.251.162.60 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৪০523484
  • একটি টেকনিক্যাল প্রশ্ন: কথায় বলে জুতো মেরে গোরু দান। তা এখানে এমনি এমনি দু-দুটো গোরু দিয়ে দেওয়া কি ঠিক হলো?   
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e07d:c09:1460:6be0 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৬523495
  • বুলেট পয়েন্ট কনসেপ্টটা খুব ভালো লাগলো। চট করে একটা পাওয়ারপয়েন্ট বা প্রেজি প্রেসেন্টেশান বানিয়ে ফেলা যাবে, তারপর মিটিং এর মাঝে চালিয়ে দিলেই হলো। 
  • kk | 2607:fb91:149f:50ef:e1a7:7b65:465f:7e04 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৯523496
  • তাছাড়া এটি ভীষণ ভয়ের গল্প। আমি এই গল্প পড়ে শুতে যাচ্ছি, রাত্রে নিশ্চয়ই হৃৎকম্প লাগবে। বলা রইলো, সকালে আর না উঠলে আপনারা প্লিজ আমাকে 'পোস্ট ম্যাডামের' জন্য পাঠাবেন।
  • Aranya | 2601:84:4600:5410:eced:a15:dc00:9e60 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৪523497
  • ভীষণ ই ভয়ের smiley
  • &/ | 107.77.234.111 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:০৪523501
  • আমি তো শেষদিক ঠেকে একটু পড়লাম, কোনো ভয় নেই , দুটো গরু দিয়ে গেল বরং :)
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e07d:c09:1460:6be0 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১৭523502
  • গরু দিলে কোন ভয় নেই, গৌমাতা দিলে ভয় আছে। 
  • &/ | 107.77.234.111 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮523503
  • আরেকটু পড়লাম । কিন্তু লোকটার মাজা তো ভাঙল না ?দেয়ালে যে ছুঁড়েছিল ঠ্যাং ধরে ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন