এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৯২২৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৯২২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সন্তোষ বন্দোপাধ্যায় | 2401:4900:3147:5d74:0:53:666f:6b01 | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২৯514832
  • যথেষ্ট যুক্ত সঙ্গত আলোচনা। অবশ্যই যুক্তি মনা মানুষের জন্য। কারন, এই মুহূর্তে , এতদদেশে , এতদঞ্চলের অবস্থায় যে সামগ্রিক ঘৃনা, উগ্রতা আর ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হয় এর সম্যক গ্রহন যোগ্যতা খুব একটা হবেনা। সবাই তো ‌‌‌‌এখন একটা ঘোরে ‌‌‌আছি ! তবুও বলছি ‌‌‌সময়োচিত প্রতি বেদন । ধন্যবাদ।
  • AK Shaw | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:১০514833
  • দাদা এই পর্বটিও পড়ে ফেললাম। আপনি আগেই বলেছিলেন এই লেখায় ইসলাম সম্পর্কে একটি আলাদা পর্ব থাকবে। আপনি প্রতিশ্রুতি রেখেছেন কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। লেখার শুরুতেই ইসলাম নিয়ে সাধারণ মানুষের যে ধারণা তা সাতটি প্রশ্নের আকারে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন তা অসম্পূর্ণ। ওখানে মাদ্রাসা নিয়ে অন্তত অষ্টম প্রশ্ন থাকতেই পারত। আধুনিক পৃথিবীতে কীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসা টিকে থাকে তা নিয়ে যে কোনো সভ্য মানুষের বিস্মিত হবার কথা। মাদ্রাসাগুলো প্রতি শিক্ষা বর্ষে তৈরি করে চলে অসংখ্য ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ এবং এই শিক্ষিত মানুষদের যেহেতু অন্য কোনো ভাবে কর্ম সংস্থান সম্ভব নয় তাই তাদের জন্য টিকে থাকতে হয় মাদ্রাসাগুলোকে। অন্য সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ধর্মের প্রভাব যেভাবে কমেছে ইসলামের ক্ষেত্রে যে তার গতি অত্যন্ত ধীর তার কারণ এই দুষ্টচক্র।

    যাই হোক এই সাতটি প্রশ্নের সন্তোষজনক ব্যাখ্যাও এই লেখায় পাওয়া যায় না।

    এই লেখার মস্ত বড় দুর্বলতা ইসলামের রাজনৈতিক দিকটির অনুল্লেখ। বিগত কয়েকটি দশকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটলেও ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের উত্থানের সঙ্গে তাকে ঘুলিয়ে ফেলা এক ধরণের সরলীকরণ। ইসলাম যতটা না ধর্ম তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। এই বিষয়টি না বুঝলে ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের উত্থানের কারণ বোঝা যাবে না। বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে না ঘটলেও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ও রাশিয়ার দ্বন্দ্ব এই উপমহাদেশে ইসলামের বাড়বাড়ন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর এরই প্রতিক্রিয়ায় ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো জেগে উঠেছে ঘুমন্ত হিন্দুত্ববাদ।

    তবুও রচনাটি সুখপাঠ্য। সংক্ষিপ্ত পরিসরে এত জটিল বিষয়কে শাণিত যুক্তি অথচ সরস ভাবে উপস্থাপন করতে এই সময় বাংলা ভাষায় একজনই পারেন এবং সেটা আপনি।

    পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
  • Debasis Bhattacharya | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৪৯514837
  • সন্তোষবাবু,
     
    সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। লেখা কে পড়বে বা পড়বে না, লেখার বক্তব্য কার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বা হবেনা, সে তো পরের কথা। কিন্তু, যেটা সবার কাছে বলা উচিত বলে মনে হয়, সেটা তো বলে যেতে হবে। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৫১514840
  • AK Shaw,
     
    এতবড় এবং একগুচ্ছ গ্রাফ ও চার্ট ওয়ালা একটা লেখা যে আপনি কষ্ট করে পড়ে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, সে জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এ লেখায় যে অনেক প্রত্যাশাই পূরণ হবেনা এ কথা আমি গোড়ায় বলে দিয়েছিলাম, তবে আপনি যে রকম প্রত্যাশার কথা লিখেছেন সে প্রত্যাশার কথা কিন্তু ভাবিনি। যাইহোক, মাদ্রাসা প্রসঙ্গে বলি, আমি যে কোনও রকম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তীব্র বিরোধী। আমি মাদ্রাসা চাইনা, মিশনারি স্কুল চাইনা, বিদ্যাভারতী চাইনা, এবং সেক্যুলার সরকারি স্কুলে সরস্বতী পুজোও চাইনা। আশা করি, আপনিও। কিন্তু, আমার আপনার চাওয়া না চাওয়ায় কীই বা আসে যায় বলুন?
     
    ওখানে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আপনি পাননি, জেনে দুঃখিত হলাম। সম্ভাব্য সব প্রশ্নেরই সন্তষজনক জবাব দিতে পারব এমন দাবি যে করেছিলাম, তা নয়। তবু, অন্তত কিছু প্রশ্ন নিয়ে কিছু অর্থপূর্ণ চর্চা করতে পারব, এ আশা অবশ্যই করেছিলাম। তথ্য, যুক্তি, গ্রাফ, চার্ট --- চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। তবু এটা সম্ভব যে, কোথাও হয়ত ফাঁক থেকে গেছে। ঠিক কোথায়, সেটা আপনি না বললে তো আর জানতে পারব না। 
     
    সব মৌলবাদই 'পলিটিক্যাল', এবং ইসলামও, বলা বাহুল্য। আমার ধারণা ছিল, আমার তিন পর্বের আলোচনা থেকে তা এমনিতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাই, ইসলামের ব্যাপারে আলাদা করে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করিনি।  
     
    না, হিন্দুত্ববাদ মোটেই মুসলমান মৌলবাদের প্রতিক্রিয়া নয়, ওটা হিন্দুত্ববাদীদের মিথ্যে দাবি। বস্তুত, কোনও মৌলবাদই এসেনশিয়ালি অন্য কোনও মৌলবাদের প্রতিক্রিয়াজাত নয়, বরং সবকটাই আধুনিকতার প্রতিক্রিয়াজাত। আমার আলোচনা থেকে অন্তত এটুকু পরিষ্কার হয়ে যাবে, এ প্রত্যাশা করেছিলাম। 
     
    "সংক্ষিপ্ত পরিসরে এত জটিল বিষয়কে শাণিত যুক্তি অথচ সরস ভাবে উপস্থাপন করতে এই সময় বাংলা ভাষায় একজনই পারেন এবং সেটা আপনি" --- এ হেন প্রশংসায় আমার আনন্দ আর ধরিতেছে না। তবে কিনা, আমার মত তুচ্ছ ব্যক্তির পক্ষে এ প্রশংসা কিঞ্চিৎ গুরুপাক হইয়াছে! 
  • বিপ্লব বসাক | 117.226.225.82 | ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:২৯514842
  • খুব ভালো এগোচ্ছে।আশাকরি আরো কয়েকটি পর্ব থাকবে।এই লেখাটির সবচেয়ে বড় গুন আরো বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে পাঠককে আরো পড়াশোনা করার ও আরো চিন্তা,বিতর্ক করতে উদ্বুদ্ধ করে।
    যেমন মাদ্রাসা বিষয়ে অনেকের আংশিক ধারনা, তিন ধরণের মাদ্রাসার পার্থক্য,হিন্দুদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রামকৃষ্ণ আশ্রমের মত কিছু প্রতিষ্ঠান যেখানে সুপ্ত ও ব্যক্তভাবে হিন্দু ধর্মীয় অন্ধ মতাদর্শ সমৃদ্ধ গর্বিত শিক্ষিত শ্রেণীর সৃষ্টি।প্রসঙ্গতঃ মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত কাউকেই আলাদা করে প্রগতিশীল তকমা পেতে দেখিনি কিন্তু রামকৃষ্ণ আশ্রমের ছাত্রদের একই ভাবে না দেখে উল্টে অতিরিক্ত সামাজিক মর্যাদা দেওয়া হয়,ব্যক্তির বিচার না করেই।
    অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের স্থায়ীত্বের প্রশ্নটি বিভিন্নভাবে আপনার বহু লেখায় সঠিকভাবেই উঠে এসেছে। এখন পুঁজিবাদী ব্যবস্হা দেশে দেশে এ-ই বৈষম্য আরো বাড়াতে থাকবে তার নিজের অন্তর্নিহিত কারনেই।তাই সারাবিশ্বে ধর্মীয় মৌলবাদীদের বিদায়ের সাথে কি পুঁজিবাদী ব্যবস্হা উচ্ছেদের কোনে সম্পর্ক আছে? 
    এছাড়া,পুঁজিবাদী ব্যবস্হা আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাস্ত্র তৈরী ও ব্যবহারের উপর অনেকাংশে বর্তমানে নির্ভরশীল, যেহেতু রাষ্ট্র তার ক্রেতা, তাই পয়সার অভাব হবে না।বর্তমানে আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে বামশিবিরের অনুপস্হিতিতে যুদ্ধের অজুহাত হিসাবে ধর্মীয় মৌলবাদ ও জাতিগত গোঁড়ামি দুইটি লোভনীয় উপাদান। তাই যে পুঁজিবাদী ব্যবস্হা মানুষের অস্তিত্বকে ঈশ্বরের সন্তানের ধারণা থেকে মুক্ত করেছিলো তাকেই এর সঙ্গে প্রয়োজন অনুসারে সহাবস্থন বা সমঝােতা করতে হচ্ছে।
    অর্থাৎ সামন্ততন্ত্রে ধর্মীয় মৌলবাদ স্বাভাবিক দাঁতের মতো মূল শরীরের অংশ কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্হায় এটা বাঁধানো দাঁতের মতো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় প্রয়োজনে খুলে রাখা যায়।
    তাই পরবর্তীতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে ধর্মীয় ও অন্যান্য মৌলবাদকে লড়াই দেওয়ার আমাদের কর্তব্য বিষয়ে লেখা আশা করছি।
    পরিশেষে জানাই বিষয়টি খুব সময়োপযোগী, গভীর ও এর প্রভাব ব্যাপক। তাই লেখাটা শেষ না করে আরো কয়েকটা পর্ব চালান। লেখাটা সবে পাঁপড়ি মেলতে শুরু করেছে। আর আপনার লেখায় যে বিশেষ প্রাপ্তি, কিছু statistical data তা আরো পাবো এই আশা রাখছি।
  • guru | 103.211.133.155 | ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:১২514847
  • দেবাশিসবাবু 
     
    আপনার লেখাগুলি পড়ছি | সত্যি সত্যি অসম্ভব মনোগ্রাহী ভাবে আপনি বর্তমান বিশ্বের একটি খুব মনোজ্ঞ বিষয়ে লিখেছেন ভীষণ সহজ সরল ভাষাতে | অনেক ধন্যবাদ আপনাকে | বাংলা তে এই ব্যাপারে আপনি পথিকৃত |
     
    ইরানের ২০২১ সালের এই সার্ভে ব্যাপারটি ভীষণ ইন্টারেস্টিং | তবে আমার মনে হয় শিয়া সুন্নি ইত্যাদি মিলিয়ে মুসলিম পার্সেন্টেজে ৩৭ শতাংশ একটু কম দেখানো হয়েছে |
     
    আপনার এই তথ্য থেকেই দেখতে পারছি humanist (2.7%), মিস্টিক্যাল (সুফী ) (3.2%), agnostic (5.8%), স্পিরিচুয়াল (7.1%) এই সবকটি অংশকেই আমি মনে করি ইরানের ক্ষেত্রে মুসলিম এর অংশে ধরা উচিত | সেই ক্ষেত্রে ইরানে মুসলিম এর পার্সেন্টেজ ৫৭ % এর থেকে 60 % হয়ে যাবে |
     
    আমি আমার পরিচিত ইরানী এক ভদ্রলোকের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি এই বিশেষ সার্ভে বিষয়ে | উনি নিজেই নিজেকে হিউম্যানিস্ট , মিস্টিক্যাল (সুফী ) , agnostic এবং স্পিরিচুয়াল বলেই দাবি করেন এবং তাকে সার্ভে করলে তিনি নিজেকে এই বলেই বর্ণনা করতেন | কিন্তু একই সঙ্গে ভদ্রলোক নিজেকে একজন নিষ্ঠাবান শিয়া মুসলিম বলেও দাবি করেন | 
     
    ওনার আরো বক্তব্য ইরানে হিউম্যানিস্ট সুফী agnostic এবং স্পিরিচুয়াল এই ধরণে মানুষের সংখ্যা চিরকালই যথেষ্ট ছিল অন্তত গত কয়েক শো বছর ধরেই এবং এরা নিজেদের মুসলিম বলেই বর্ণনা করেছেন | উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় স্বয়ং মৌলানা রুমি নিজেকে মিস্টিক্যাল (সুফী ) বলেই বর্ণনা করতেন অথচ সেই তিনি কখনো নিজেকে অমুসলিম বলে দাবি করেননি |
     
    আমার মনে হয় ইরানের এই সার্ভেটি ভীষণভাবেই পশ্চিমের দৃষ্টিতে করা যেখানে পশ্চিমের দৃষ্টিতে মিস্টিক্যাল (সুফী), humanist এগ্নস্টিক  স্পিরিচুয়াল এরা কখনোই মুসলিম বা অন্য কোনো ধর্মের হতে পারেনা | কিন্তু ইরানীয় দৃষ্টিতে মিস্টিক্যাল (সুফী ), humanist এগ্নস্টিক  স্পিরিচুয়াল এরা মুসলিম বা অন্য কোনো ধর্মের হতেই পারে  |  
     
    এই ব্যাপারটি নিয়ে আপনার মতামত জানার অপেক্ষা রইলো |
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:০৩514856
  • বিপ্লব বসাক,
     
    আপনি যে লেখাটিকে জরুরি মনে করেছেন, তাতে ভরসা পেলাম। দুয়েকটি কথা বলি। 
     
    (১) এই লেখাটিকে খুব বেশি বড় করার কথা ভাবছি না, হয়ত আর একটি বা বড়জোর দুটি পর্ব থাকবে। তবে, বিষয়টির নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন লেখা লিখতেই থাকব, অনুগ্রহ করে নজর রাখবেন। 
     
    (২) ভবিষ্যৎ কারুরই জানা নেই, তবে, মৌলবাদকে নিকেশ করলেই পুঁজিবাদের উচ্ছেদ হয়ে যাবে, তা মনে হয়না। বরং, এতে করে পুঁজিবাদ আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ হয়ে উঠবে। পুঁজিবাদে বৈষম্য থাকবেই, কিন্তু সে বৈষম্যটা খানিক কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যায়। সেটা করা গেলে যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই ধর্মের রমরমা কমানো সম্ভব, সেটা প্রমাণিত। আপাতত এটুকুই হোক না! আমার ধারণা, যাঁরা পুঁজিবাদের অবসান চান, তাঁদেরও এতে আখেরে লাভই হবে। 
     
    (৩) যুদ্ধের রাজনীতি ও অর্থনীতি নানাভাবে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে, এটা তো ঠিকই। আর, ধর্মোন্মাদনা যে যুদ্ধের উন্মাদনা জাগানোর অন্যতম বড় হাতিয়ার, তাতেও সন্দেহ নেই। তবু, আধুনিক পৃথিবীর যুদ্ধগুলো ধর্মের সঙ্গে বোধহয় ততটা সম্পর্কিত নয়। মৌলবাদীরা যত্রতত্র নাশকতা ঘটিয়ে প্রচুর নিরীহ নির্দোষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে পারে, এবং জনমনে প্রবল আতঙ্কের সঞ্চারও করতে পারে। তবে, আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধে নামা তাদের সাধ্যায়ত্ত নয়, সেটা হলে তো আধুনিকতা এতদিনে নিকেশই হয়ে যেত। উন্নত দেশগুলো যে তাদেরকে দাবার বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করবার সাহস পায়, সেটা তাদের ওই প্রান্তিকতার কারণেই, যদিও সে সাহসের প্রতিফল তারা ভালই পেয়েছে। 
     
    (৪) সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদে ধর্মের ভূমিকার পার্থক্যটুকু আপনি আসল দাঁত ও বাঁধানো দাঁতের উপমা দিয়ে চমৎকার তুলে ধরেছেন, আমি তার সঙ্গে অনেকটাই একমত। তবে, আপনি এখানে যেভাবে 'ধর্ম' না বলে 'মৌলবাদ' বলছেন, তাতে আমার অবস্থানের সাপেক্ষে আপনার একটা টেকনিক্যাল ভুল হচ্ছে হয়ত। আমার মতে, ধর্মে অন্ধত্ব আর হিংস্রতা বরাবরই ছিল, কিন্তু মৌলবাদ জিনিসটা আমাদের কালেরই ব্যাপার। আমার ধারণা, বিষয়টা আপনি বুঝেছেন, কিন্তু 'মৌলবাদ' কথাটা একটু আলগাভাবে বলেছেন বলেই এই বিভ্রান্তিটা হচ্ছে।
     
    (৫) এই লেখা আর বেশি চলবে না, তবে ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে আমার লেখা চলতে থাকবে, এবং মৌলবাদ বিষয়টার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকবে। হ্যাঁ, সেখানে আরও অনেক পরিসংখ্যান এবং গবেষণাজাত তথ্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হবে। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:৩৮514857
  • Guru,
     
    আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুবই আনন্দিত, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলি, ইরান সম্পর্কে আমার কোনও বিশেষজ্ঞতা নেই, শুধুমাত্র ধর্ম আর মৌলবাদ বিষয়ক আগ্রহের কারণেই আমি ইরান সংক্রান্ত ওই সমীক্ষাকর্মটি অধ্যয়ন করেছি, মনোযোগ সহকারেই। 
     
    আপনি যা বলছেন সে সম্ভাবনা খুবই বেশি। অর্থাৎ, ইরানে যাঁরা নিজেদেরকে সুফি বা মিস্টিক্যাল বা স্পিরিচুয়াল এই সব বলছেন, তাঁরা যে শিয়া মুসলমান সম্প্রদায় থেকেই এসেছেন, এটা সহজ অনুমান। একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সেটাই হবার কথা। তবে, এখানে শুধু দুটো কথা।
     
    (১) 'গামান' সংস্থার ওই সমীক্ষায় অংশ নেওয়া লোকজন যাঁরা নিজেদেরকে সুফি বা মিস্টিক্যাল বা স্পিরিচুয়াল এই সব বলছেন, তাঁরা যাইই বিশ্বাস করুন না কেন, নিশ্চয়ই সমীক্ষার ফর্মে নিজেদেরকে ওভাবেই বর্ণিত করেছেন, মুসলমান বলে দাবি করেননি। করলে প্রকাশিত তথ্যে তা এসে যেতই, নিঃসন্দেহে। 
     
    (২) কেউ যদি নিজেকে হিউম্যানিস্ট বা অ্যাথেইস্ট বা অ্যাগনোস্টিক বলেন, তো তিনি কিন্তু সংজ্ঞা অনুসারেই সমস্ত ধর্মের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছেন, সে তিনি যে ধর্মগোষ্ঠী থেকেই আসুন না কেন। কাজেই, তাঁদেরকে আলাদা করে হিসেব করাই বাঞ্ছনীয়। 
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩১514881
  • [1]
    আপনি মৌলবাদের উত্থানের ইতিহাসটা খুব সংক্ষেপে হলেও দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেছেন। 

    সেখানে পদাঙ্কগুলো হল-
    ১) নায়গ্রা কনফারেন্স(১৯৭৬-৮৭)
    ২)সালাফি মুভমেন্ট (১৮৮০)
    ৩) আর্য সমাজ (১৮৭৫)( যদিও আর্যসমাজকে হিন্দুধর্মের রেজিমেন্টেশন এর প্রথম ধাপ বলে দেখা যেতে পারে, কিন্তু আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মৌলবাদের তালিকায় ফেলা যাবে কিনা,তা নিয়ে সংশয় আছে,আপাতত সে কথা থাক

    ৪)The Fundamentals(1910-15)

    ৫)Muslim Brotherhood (1928)
    ৬)RSS(1925)( যদিও আবার,RSS ও পুরোপুরি মৌলবাদী সংজ্ঞায় পড়ছে না,প্রতিষ্ঠাকালে তো নয়ই)

    এরপর এর কন্টিনিউয়েশন চলেছে।বিভিন্ন ধর্মেই মৌলবাদী গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে ( সেকথাও লিখেছেন)

    কিন্তু ১৯৮০-২০০০ এই রেঞ্জে হঠাৎ করে আমার উপরিউক্ত তালিকায় উল্লিখিত অতগুলো প্যান ইসলামিস্ট গ্রুপ তৈরী হয়ে গেল? আমি টাইমটাকে অ্যাড্রেস করছি ১৯৮০-২০০০।ঐ নির্দিষ্ট সময়টাতে কী এমন হল? 

    আমার মনে হয়,শুধুমাত্র "আধুনিকতার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন ধর্মেই যে মৌলবাদী গোষ্ঠীর জন্ম হচ্ছিল, তারই ফল ওটা"- এভাবে বললে পুরো ব্যাখ্যাটা পাওয়া যাচ্ছে না।১৯০০ সাল বা তার আগের শতক থেকে প্রসেস শুরু হয়েছে, তার আগে একাধিক ধর্মীয় রাষ্ট্রও গঠন হয়েছে, কিন্তু ঐ শর্ট টার্ম পিরিয়ডের মধ্যে অতগুলো প্যান ইসলামিস্ট গ্রুপের আবির্ভাব - এই ব্যাখ্যাটা আমি পাচ্ছি না।
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩৩514882
  • [2]
    আপনি লিখেছেন 
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়।

    অর্থাৎ, 
    ১) মার্কিনি পুঁজিপতি গোষ্ঠীর ফিন্যান্স করা( ইসলাম বহির্ভূত কারণ) - যেটা বলা হয়
    ২) এটাই একমাত্র কারণ নয়, মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ কোন কারণও থাকতে পারে।

    এবার আমার প্রশ্ন, মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ কারণ তো থাকতেই পারে, কিন্তু মুসলিম সমাজ বা মুসলিম জনগোষ্ঠী তো আর নতুন নয়! মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যেই বা কী এমন পরিবর্তন এল ঐ ১৯৮০ র কাছাকাছি সময়ে? ঐ বিশেষ সময়টাকে অ্যাড্রেস করে ঠিকমত ব্যাখ্যা না করলে আইসিস সহ কুড়ি পঁচিশখানা প্যান ইসলামিস্ট গোষ্ঠীর জন্মের ব্যাখ্যা পাচ্ছি না মোটেই।মৌলবাদও তো বহু আগে থেকেই এসছে,তার এক দেড়শো বছর আগে থেকে।
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩৪514883
  • [3]
    //বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়।//

    ১) বিশ শতকের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে - এমনটা কেন হবে?সমস্ত ঘটনা ঘটুক বা না ঘটুক,আপাতত আইসিস  মার্কা গোষ্ঠীগুলোর উত্থানের কারণটার দিকে ফোকাস রাখাটা দরকারী। 
    ২) " তারা তা পারল কী করে,তারা যা চেয়েছে, সবজায়গায় তা পেরেছে, এমনটা তো নয়"- এটা একটু স্পষ্ট হওয়া দরকার। তাহলে তারা এমন একটা জায়গায় অন্য কোন ধর্মের মধ্যে মৌলবাদী গোষ্ঠী ফিন্যান্স করেছে,কিন্তু তা সত্ত্বেও ঐ ধর্মসম্পৃক্ত রাষ্ট্রকে পুরোপুরি ধর্মীয় বানাতে সক্ষম হয়নি- এরকম একটা উদাহরণ দিতে হবে।তবে কথাটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। নাহলে " তারা তা যেখানে যা পেরেছে তা তো পারেনি"- কথাটা এই প্রেক্ষিতে ঠিক প্রাসঙ্গিক হচ্ছে না।

    ৩) এখানে আরও একটা প্রশ্ন আছে।মার্কিন ক্যাপিটালিস্টরা যে আইসিস মার্কা গোষ্ঠীগুলোকে ফিনান্স করেছে, এটা কিন্তু আপনিও উড়িয়ে দেননি।তবে আপনি তারপর এক্সটেনশন টেনেছেন, শুধু ইসলামেই তারা এ কাজ করতে সক্ষম হল কী করে।এখানে আমার প্রশ্ন,ইসলাম ছাড়া আর ঠিক কোন ধর্মে তারা এ কাজ করতে পারত বলে মনে হয় আপনার? 
    a) খ্রীষ্টান? সেটা তো সেমসাইড গোল হয়ে যেত তাদের কাছে,কারণ তাদের নিজেদের অবস্থানও খ্রীষ্টধর্ম প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেই
    তাছাড়া এনলাইটেনমেন্ট এর ফলস্বরূপ খ্রিষ্টান ধর্মপ্রধান রাষ্ট্রগুলোয় অন্য রিগ্রেসিভ ভাবনা থাকলেও ধর্মীয় ভাবাবেগ তুলনায় কম।কাজে খ্রিষ্টানের পক্ষে এটা সম্ভবই ছিল না।
    b) ইসলাম আর খ্রীষ্টান ছাড়া অন্য ধর্মগুলোর খেলার ফিল্ডটাও তো খুব ছোট।হিন্দু মেজরিটি রাষ্ট্র বা জনসংখ্যা, বৌদ্ধ মেজরিটি রাষ্ট্র বা জনসংখ্যা কতই বা? সেসব ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষে কার্যতই আইসিস মার্কা মৌলবাদী গোষ্ঠীর উদ্ভব সম্ভব নয়,এটা স্রেফ সুযোগের অভাবে
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩৫514884
  • [4]
    //মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল।//

    আবারও সেই একই প্রশ্ন, উপরোক্ত তিনটে কীর্তিকলাপ অন্য কোন ধর্মের পক্ষে করার "সুযোগ" রয়েছে বলে মনে হয়? 
    খ্রীষ্টানের ক্ষেত্রে কেন সম্ভব নয়,আর অন্য ধর্মগুলোর ক্ষেত্রেও কেন নয়,সেটা 3) এ বলার চেষ্টা করেছি।আর অন্যদের ক্ষেত্রে সুযোগটাই না থাকলে এটাকে ইসলামিক মৌলবাদ এর  গুণগত বৈশিষ্ট্যই বা বলা যায় কীভাবে?
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩৭514885
  • [5]
    মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি?

    ১) ইসলামের প্রভাব আছে অথচ বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামাজিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে সমস্ত জায়গাতেও মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? 

    হ্যাঁ, অবশ্যই, পাকিস্তান,বাংলাদেশ। 
    ২)যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সেরকম কোন জায়গায় কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি?

    তার আগে একটা প্রশ্ন, আপনি কি শ্রীলঙ্কাকে এই তালিকায় রাখতে চান? তাহলে কিন্তু LTTE আছে।

    তবু এটাও যদি ছেড়ে দিই,তাহলে প্রশ্ন আসে

    ইসলামের বা মুসলিম সমাজের অন্তর্বস্তুই যদি এরজন্য দায়ী হয়,তাহলে ২৫ টা রাষ্ট্র সেক্যুলার থাকে কীভাবে?
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩৮514886
  • [6]

    আপনি একটা জায়গায় লিখেছেন, ৫১ টার মধ্যে ২১ টা মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্র সেক্যুলার। মনে হয় না।৫০ টার মধ্যে ২৫ টা রাষ্ট্র সেক্যুলার।আর সুদানের পর তিউনিসিয়াও ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়েছে।
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৪২514887
  • [৭] 
    ঠিক গুছিয়ে প্রশ্নগুলো করতে পারলাম কিনা জানি না।তবে আপনার তিননম্বর পর্বটা পড়ার পর এগুলো মনের মধ্যে খচখচ করছিল।আপনি সময় নিয়ে বলুন দাদা,দেরি হলেও সমস্যা নেই। 

    সাম আপ করে একটা কথা বলি
    " সাধারণ মৌলবাদের উত্থানের সঙ্গে হঠাৎ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ইসলামে ২০/২৫ টা প্যান ইসলামিস্ট গোষ্ঠী গজিয়ে ওঠাকে একইভাবে ব্যাখ্যা করলে ব্যাখ্যাটা ঠিক দাঁড়াচ্ছে না,ওটার স্বতন্ত্র ব্যাখা চাই।আর আমার মানসিক খচখচানিটাও এইজায়গাতেই।
     
     
     
    আর সবশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তো কৃতজ্ঞতা জানাই,আমাদের সকলের কৌতুহল নিয়ে কী বোর্ড ধরার জন্য। তবে লেখাটা আর মাত্র ২/১ টা পর্বে শেষ হয়ে যাবে,এটা শুনে একটু মনখারাপ হয়ে গেল।আরও বিস্তৃত আলোচনা খুব দরকারি। ভবিষ্যতে যদি সময় সুযোগ করে আপনি ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিকভাবে এই বিষয়ে ডিটেইলসে কোন বই বা পত্রিকা সংখ্যা বের করেন বা কোন পাঠচক্রের আয়োজন করেন,সকলেই ভীষণ উপকৃত হব।
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০৯514889
  • রাধার কানাই,
     
    আপনার সবিস্তার অনুসন্ধানের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি যে সব প্রশ্ন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে অন্তত কয়েকটির উত্তর দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা থাকা দরকার, কিন্তু আমার তা নেই। বিশেষজ্ঞদের লেখা পড়ে আত্মস্থ করবার চেষ্টা আমাকে করতে হয় বটে, কিন্তু আমি দিনের শেষে গিয়ে শুধুই একজন অ্যাক্টিভিস্ট মাত্র। তবু, এ ব্যাপারে যেটুকু যা জানি, বলার চেষ্টা করব বইকি! কিন্তু, তার আগে আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। আপনার প্রথম মন্তব্যের মধ্যে আপনি লিখেছেন, 
     
    "কিন্তু ১৯৮০-২০০০ এই রেঞ্জে হঠাৎ করে আমার উপরিউক্ত তালিকায় উল্লিখিত অতগুলো প্যান ইসলামিস্ট গ্রুপ তৈরী হয়ে গেল? আমি টাইমটাকে অ্যাড্রেস করছি ১৯৮০-২০০০।ঐ নির্দিষ্ট সময়টাতে কী এমন হল? "
     
    প্রশ্নটি আগ্রহজনক, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এখানে আপনার ওই 'প্যান ইসলামিস্ট' গোষ্ঠীগুলোর তালিকা, যেটি নাকি 'উপরিউক্ত' বলে আপনি দাবি করছেন, আসলে কিন্তু তার অস্তিত্ব নেই, অন্তত আপনার ওই মন্তব্যে নেই। ওটা আগে দিন, না হলে আপনার প্রশ্নের কোনও মানেই থাকবে না। 
  • রাধার কানাই | 42.110.162.17 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:১৭514890
  • আলকায়দা-1988
    তালিবান-1994
    Abu sayyaf-1989
    Ansar Al Islam -2001
    Armed Islamic group of আলজিরিয়া-1993
    Army of Islam(Gaza) -2006
    বোকো হারাম-2002
    ইজিপ্সিয়ান ইসলসমিক জেহাদ-1979
    লস্কর ই তৈবা-1985
    জইশ ই মহম্মদ- 2000
    জিমা ইসলামিয়া- 1993
    Hamas-1987
    হারকত উল জেহাদ অল ইসলামি- 1985
    হারকাত উল মুজাদ্দিন-1985
    ইন্ডিয়ান মুজাহিদ্দিন - 2003
    ISIS-1999
    পাকিস্তানি তালেবান-2007
    তারির আল শাম - 2017
     
     
    ( সমস্ত প্যান ইসলামিস্ট গোষ্ঠীগুলোর জন্মলগ্ন আর অ্যাকশন শুরুর সময়গুলো লিস্ট করে দিলাম, যাতে (১) নং প্রশ্ন থেকে বাকি প্রশ্নগুলোতে আমার সংশয়গুলো বুঝতে সুবিধা হয়।
     
    ( ১) এ " আমার উপরিউক্ত তালিকা" বলতে এটার কথাই বলেছি)
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৪০514893
  • ধন্যবাদ। আসছি, তবে একটু সময় লাগবে। 
  • guru | 103.211.134.210 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:২৯514896
  • @রাধার কানাই
     
    পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসে একটা খুবই গুরুত্তপূর্ণ ঘটনা ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামিক বিপ্লব ও আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ও তার প্রতিক্রিয়াতে পশ্চিমি দুনিয়ার আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ|
     
    সৌদি আরবের রাজ্ বংশ ইরানের ইসলামিক বিপ্লব পরবর্তী যুগে খুবই চাপে ছিলো যে যদি তাদের দেশেও এই রকম কিছু হয়ে থাকে তাই তারা পশ্চিমি শক্তিদের মদতে আফগানিস্তানে এইসব বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীগুলোর নজর ঘুরিয়ে দেয় |
     
    আফগানিস্তানের পরবর্তী ধাপে কাশ্মীর বলকান চেচনিয়া ফিলিপিন্স ও বর্তমানে আরব বসন্তের পরে সিরিয়া ও লিবিয়া এই সব জায়গাতে এই একই প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে |
     
    অর্থাৎ আমরা একটা প্যাটার্ন দেখতে পেলাম যে এক জন শাসক যে অত্যাচারী ও অগণতান্ত্রিক সে নিজের স্বার্থে নিজের দেশের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীগুলোর নজর ঘুরিয়ে দেয় দূরদেশের কোনো ভূ রাজনৈতিক সংঘর্ষে | পশ্চিমী কায়েমী পুঁজিবাদী স্বার্থ এতে হস্তক্ষেপ করে তাদের কায়েমী ভূ রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে |
     
    ১৯৮০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত যতগুলি ইসলামী গোষ্ঠীর উত্থান তার একটি অন্যতম কারণ এটি | যেমন আলকায়দা-1988 , তারির আল শাম - 2017 ISIS-1999 
     
    তবে আপনি যতগুলি গ্রুপের নাম আপনার লিস্টে দিয়েছেন তার সবগুলির উত্থানের কারণ এক নয় |
     
    ১। হামাস-১৯৮৭ Army of Islam(Gaza) -2006 এদের মূলত উৎপত্তি হয় প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ হিসাবে | 
    ২ | লস্কর ই তৈবা-১৯৮৫ জইশ ই মহম্মদ- 2000 হারকত উল জেহাদ অল ইসলামি- ১৯৮৫ হারকাত উল মুজাদ্দিন-1985 এই গ্রুপ গুলি মূলত কাশ্মিরে ১৯৮৭-৮৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পরেই সামনে আসে একটি পপুলার রিঅ্যাকশন হিসাবে |
    ৩ |  তালিবান-1994 সালে সামনে আসে মূলত সোভিয়েত পরবর্তী আফগানিস্তানের ভূ রাজনৈতিক ফসল হিসেবে |
    ৪ | পাকিস্তানি তালেবান-2007 মূলত পাকিস্তানের FATA অঞ্চলে (এই অঞ্চলটি আফগানিস্তানের একেবারে নিকট প্রতিবেশী ) মার্কিন ড্রোনের হামলার প্রতিবাদে একটি রিঅ্যাকশন |
    ৫ | Armed Islamic group of আলজিরিয়া-1993 আলজেরিয়াতে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরবর্তী ফসল |
    ৬ | ইজিপ্সিয়ান ইসলসমিক জেহাদ-১৯৭৯ মূলত মিশরের রাষ্ট্রপতি আনওয়ার সাদাতের অপশাসনের বিরুদ্ধে  ও তার ইস্রায়েল এর সঙ্গে শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুড গ্রুপের কিছু সদস্যের একটি রিঅ্যাকশন | 
     
    আরেকটি প্যাটার্ন আছে যখন কোনো অঞ্চলে একটি এক বা একাধিক জঙ্গী গ্রুপ আসে তখন সেখানে একটি প্যারালাল ইকোনমি তৈরী হয়ে যায় | এই প্যারালাল ইকোনমির প্রভাবে আরো অনেক গ্রুপ তখন গজিয়ে ওঠে |
     
    অর্থাত আপনি যে যে গ্রুপ গুলির নাম বলছেন তার সবগুলির পিছনে কোনো না কোনো ভূ রাজনৈতিক কারণ আছে | 
     
    আপনার মতামতের অপেক্ষাতে রইলাম |
     
     
     
     
     
     
     
     
  • guru | 103.211.134.210 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৪১514897
  • @রাধার কানাই
     
    "খ্রীষ্টান? সেটা তো সেমসাইড গোল হয়ে যেত তাদের কাছে,কারণ তাদের নিজেদের অবস্থানও খ্রীষ্টধর্ম প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেই
    তাছাড়া এনলাইটেনমেন্ট এর ফলস্বরূপ খ্রিষ্টান ধর্মপ্রধান রাষ্ট্রগুলোয় অন্য রিগ্রেসিভ ভাবনা থাকলেও ধর্মীয় ভাবাবেগ তুলনায় কম।কাজে খ্রিষ্টানের পক্ষে এটা সম্ভবই ছিল না।
    "
     
    সেমসাইড গোল হয়ে যায়নি আপনাকে কে বললো ?? ওকলাহোমা বম্বিং , anders ব্রেইভিক এরা কি কম সন্ত্রাসবাদী নাকি ? সত্যি কথা বলতে কি বর্তমানে পশ্চিমি দুনিয়া মুসলিম জঙ্গিদের থেকে শ্বেতাঙ্গ খৃস্টান জঙ্গিদের নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত |
     
    2020 সালে আম্রিকার বিতর্কিত নির্বাচনে হেরে যাবার পরে ট্রাম্প সমর্থকেরা অনেকেই আম্রিকি কংগ্রেস ভবনের উপর সশস্ত্র আক্রমণ করেছিলো | 
    এই ২০২২ এর ডিসেম্বর মাসেই জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা কিছু শ্বেতাঙ্গ খৃস্টান জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেছে যাদের অনেকেই জার্মান সামরিক বাহিনীর সদস্য | তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর যে তারা জার্মান রাষ্ট্রের উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে |
     
    আসলে বর্তমানে পশ্চিমি বিশ্বে আর্থিক অসাম্য বেড়ে যাবার ফলে শ্বেতাঙ্গ খৃস্টান যুবকদের অনেকেরই বিদ্ধেষ বেড়ে গেছে রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপরে , এর জেরে এরা অনেকেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে | সেই কারণেই বর্তমানে পশ্চিমি দুনিয়া মুসলিম জঙ্গিদের থেকে শ্বেতাঙ্গ খৃস্টান জঙ্গিদের নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত |
  • Debasis Bhattacharya | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:২৩514903
  • guru,
     
    আপনি অনেক কথার জবাব দিয়ে আমার চাপ অনেকই কমিয়ে দিয়েছেন। তবু, আপনাকে ধন্যবাদ দিয়েও, দু-এক কথা বলি না হয়।
     
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:৫০514906
  • রাধার কানাই,
     
    আপনি অনেকগুলো ভাগে প্রশ্ন করেছেন, এবং সে সব প্রশ্নের মধ্যে অনেকগুলোই আবার ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত (এবং আমার মতে কিঞ্চিৎ জট পাকানো), ফলে প্রত্যেকটা প্রশ্নকে আলাদা করে বেছে নিয়ে প্রশ্ন-পিছু এক একটা স্বচ্ছ উত্তর খাড়া করা খুব সহজ নয়। সেইজন্যে, উত্তর দিতে যাবার আগে মূল প্রশ্নগুলোকে আলাদা করে বেছে একটা তালিকা বানিয়ে নিতে পারলে সুবিধে হবে। তাতে হয়ত পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা এড়ানো যাবে। তলায় রইল সে তালিকা।
     
    (১) ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে হঠাৎ করে একসাথে অনেকগুলো 'প্যান ইসলামিস্ট গ্রুপ' উঠে এল কেন (আপনি এ রকম আঠেরোটি সংগঠনের তালিকা দিয়েছেন)?  মৌলবাদকে শুধু 'আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া' বললে এ ঘটনার ব্যাখ্যা মিলছে না। মৌলবাদের উত্থান তো এক দেড়শো বছর ধরেই ঘটছে, তাহলে ওই অত্যল্প সময়সীমার মধ্যে এতবড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার ব্যাখ্যা কি ইসলাম-বহির্ভুত কারণের (যেমন পশ্চিমী শক্তির মদত) দিকেই নির্দেশ করে না?  
     
    (২) উন্নত পশ্চিমী শক্তিগুলোর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও ধর্মের মৌলবাদে (খ্রিস্টান হিন্দু বৌদ্ধ ইত্যাদি) মদত দেবার সুযোগ আছে কি আদৌ? যদি না থাকে, তাহলে তা কি আবারও ইসলামীয় মৌলবাদী জঙ্গিপনার পেছনে একমাত্র ইসলাম-বহির্ভুত কারণই ('মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলন' ইত্যাদি) নির্দেশ করছে না? 
     
    (৩) যেখানে সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সঙ্কট আছে, সেখানে তো ইসলাম না থাকলেও জঙ্গি আন্দোলনের উৎপত্তি হতে পারে (যেমন শ্রীলঙ্কায় LTTE), তাহলে ইসলামে মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভবের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশ তথা সমাজের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সঙ্কটের অনুসন্ধান না করে ইসলামের নিজস্ব গুনগত বৈশিষ্ট্য খুঁজে বেড়ানো কতটা সঠিক কাজ? 
     
    (৪) মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ একান্নটি রাষ্ট্রের মধ্যে একুশটি নয়, পঁচিশটি 'সেক্যুলার' বা ধর্মনিরপেক্ষ। ইসলামের নিজস্ব গুণগত বৈশিষ্ট্য তার বিপরীত হলে এইটা ঘটতে পারল কীভাবে? 
     
    এখন  এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চাইব এক এক করে। কিন্তু তার আগে জেনে নিতে চাইব, উপরোক্ত তালিকায় আপনার প্রশ্নগুলোর সঠিক উপস্থাপনা হল কি? সে ব্যাপারে আপনি একমত না হলে জবাব দেওয়া বৃথা হবে, কাজেই সেইটা আগে কনফার্ম করুন প্লিজ।
     
    আর একটা কথা। এর পর মাত্র এক বা দুই পর্বে এই লেখাটি শেষ হয়ে গেলেও, বিষয়টি নিয়ে চর্চা থামবে না মোটেই। ধর্ম, মৌলবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং তার সঙ্গে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা চলতেই থাকবে। এ নিয়ে আগেও লিখেছি এবং পরেও লিখব আরো বেশ কয়েকটি, এখানে এবং অন্যত্রও। একটু নজর রাখবেন প্লিজ। চর্চায় সবাই মিলে থাকলে তবেই একটা অর্থপূর্ণ কিছু হবার সম্ভাবনা। 
     
     
     
     
  • রাধার কানাই | 42.110.161.23 | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:১৫514912
  • ধন্যবাদ দেবাশিস্ দা,প্রশ্নগুলোকে আরও গুছিয়ে সাম আপ করার জন্য, শুধু আমি একটা প্রশ্নকে একটু মডিফাই করার জন্য একটা বিষয় স্পষ্ট করছি
     
    ১) আঠারোটা মত প্যান ইসলামিস্ট গ্রুপ ঐ নির্দিষ্ট সময়ে গজিয়ে ওঠার জন্য ইসলাম বহির্ভূত কারণ হিসাবে পশ্চিমের পুঁজিপতিদের ফিনান্স করা ছাড়া অন্য কারণও থাকতে পারে, কিন্তু মুসলিম সমাজের বা মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্রের ধর্মীয় কারণে নিজস্ব কারণও থাকতে পারে, এমনটা ভেবে নেওয়ার অ্যালিবাই কী? 
     
    ২) আর একটা প্রশ্নও করেছি 
     
    " আপনি বলছেন, পশ্চিমা পুঁজিবাদীরা এটা পারল কী করে,সব জায়গাতেই তারা যা পেরোছে,তা পারেনি।" এক্ষেত্রে, তারা " চেয়েছে কিন্তু পারেনি" এরকম একটা দুটো দৃষ্টান্ত দিলে ভাল হয়।
  • রাধার কানাই | 42.110.161.23 | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:২১514913
  • @গুরু 
     
    আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমি ঠিক যা জানতে আগ্রহী ছিলাম, ঠিক তার ওপর আলো ফেলেছেন।সংক্ষেপে আপনি এই গ্রুপগুলো জন্মের পিছনকার ঐতিহাসিক কারণগুলো দেখিয়েছেন, এগুলোর মধ্যে আমি যা দেখলাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই গ্রুপগুলো তৈরী। এখন এরকম গ্রুপ তো ভারতেও আছে ( ULFA, অগপ,তিপ্র্যালান্ড,গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা( যারা আলাদা গোর্খাল্যান্ড দাবি করে ইত্যাদি)  এদের জন্মেরও বিভিন্ন কারণ আছে,এখন এই গোষ্ঠীগুলোর ধর্মকে আমরা কাঠগড়ায় তুলছি না,অথচ আমার মেনশন করা গোষ্ঠীগুলোর অনেকগুলোই কোন রাজনৈতিক কারণে উদ্ভুত হয়,সেটা জানার পরও তাদের ধর্মকে কাঠগড়ায় তুলছি কেন?
     
    @দেবাশিস্ , এই প্রশ্নটাও একটু বিবেচনা করবেন?দুজনকেই আগাম ধন্যবাদ 
  • guru | 115.187.51.147 | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫০514915
  • @রাধার কানাই 
     
                             "এগুলোর মধ্যে আমি যা দেখলাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই গ্রুপগুলো তৈরী। এখন এরকম গ্রুপ তো ভারতেও আছে ( ULFA, অগপ,তিপ্র্যালান্ড,গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা( যারা আলাদা গোর্খাল্যান্ড দাবি করে ইত্যাদি)  এদের জন্মেরও বিভিন্ন কারণ আছে,এখন এই গোষ্ঠীগুলোর ধর্মকে আমরা কাঠগড়ায় তুলছি না,অথচ আমার মেনশন করা গোষ্ঠীগুলোর অনেকগুলোই কোন রাজনৈতিক কারণে উদ্ভুত হয়,সেটা জানার পরও তাদের ধর্মকে কাঠগড়ায় তুলছি কেন?"
     
                                আপনার প্রশ্নের উত্তরে জানাই , এটি একটি খুব দীর্ঘমেয়াদী প্রসেস যা কিনা বেশ কয়েক বছর ধরে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র আস্তে আস্তে একটি শত্রু চিন্নিত করে যার ফলে সে তার ভূ রাজনৈতিক স্বার্থে সেই শত্রুটির বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে জনমত গঠন করে | আমি নতুন কিছুই বলছিনা , নোম চমস্কি তার "ম্যানুফ্যাকচারিং অফ কনসেনসাস " বইটিতে এই ব্যাপারটাই অনেক বিস্তৃতে জানিয়েছেন |
     
                                  এখন দেখুন বর্তমান একমেরু বিশ্বের দাদা আম্রিকার একটি পলিসি আছে কোনো একটি শত্রু তৈরী করবার যার ফলে যুদ্ধ চালানো যাবে ও সমস্ত মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এর ফলে অনেক অস্ত্রের বরাত পেয়ে মুনাফা করবে | প্রথম দুটি বিশ্বযুদ্ধে শত্রু ছিল জার্মানি তার পরে ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে শত্রু ছিল সোভিয়েতরা এবং শীত যুদ্ধ শেষ হবার পরে একটি নতুন শত্রুর দরকার ছিলো | সেই শত্রুটি হলো ইসলাম | 
     
                                 আপনি যে timeline দেখিয়েছেন বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দেখেবেন তার মধ্যে ঠিক নব্বই দশকের শুরুতেই স্যামুয়েল huntington "ক্লাশ অফ civilizations" লিখছেন যেহেতু তখন ঠান্ডা যুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে ও নতূন শত্রুর প্রয়োজন হয়েছে | অর্থাৎ কিনা নতুন শত্রু হিসেবে ইসলামকে চিন্নিত করার কাজটি শুরু হলো যেটি 9/11 এর পরে আরো রাষ্ট্রীয় মদতে ব্যাপক ভাবে হবে |
     
                               আরেকটি ব্যাপার লক্ষ্য করুন ঐতিহাসিক ভাবেই পশ্চিমি দুনিয়ার কিন্তু ইসলামী দুনিয়ার সঙ্গে একটি বৈরিতা আছে সেই crussade এর সময় থেকেই | তার সঙ্গে যোগ করুন পশ্চিম এশিয়ার তৈল সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণের পশ্চিমী দুনিয়ার মূল লক্ষ্যের স্বার্থটা | ইরানে ১৯৫৩ সালে পাশ্চাত্য শিক্ষাতে শিক্ষিত ও পুরোপুরি সেক্যুলার মহম্মদ মোসাদেকের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে আম্রিকা একটি পুতুল সরকার বসিয়ে দেয় যেহেতু মোসাদেক দেশের মানুষের স্বার্থে ইরানের তেলসম্পদ জাতীয়করণ করতে চেয়েছিলেন | সেই শুরু থেকে বর্তমানে এই বছরের এপ্রিলেই পাকিস্তানের ইমরান খানের সরকারকে ফেলে দেওয়া এটিও বলা যায় আম্রিকার নীতির ধারাবাহিক প্রয়োগ | অর্থাৎ মুসলিম দুনিয়ার যে যে সরকারকেই আম্রিকা মনে করবে তার ভূ রাজনৈতিক স্বার্থের বিরোধী তাকে দানব চিন্নিত করে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু হবে |
     
                                এছাড়া আমাদের পৃথিবী যেহেতু পাশ্চাত্যের চোখেই বিশ্বকে দেখতে অভ্যস্ত কাজেই বর্তমানে ভারতে ইসলামোফেবিয়া এখন মোটামুটি আমাদের জাতীয় আইডেন্টিটি এর একটা অংশ হয়ে গেছে | 
     
    আপনার মতামতের অপেক্ষাতে রইলাম |
     
                                  
  • রাধার কানাই | 42.110.161.23 | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:২৩514923
  • @গুরু 
    আপনার ব্যাখ্যার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত( যদিও আপনি সংক্ষেপে হলেও যেভাবে তথ্যগুলো তুললেন, তা আমি এতটা ডিটেইলসে জানতাম না) 
     
    কিন্তু দেবাশিস্ দা আরেকটু এগিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওঁর বক্তব্য, এই যে বেছে বেছে মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোকে আমেরিকা টার্গেট করছে,তারা তা পারছে কী করে।
    এখানেই উঠছে পরবর্তী প্রশ্ন। তবে কি আদৌ মুসলিম জনগোষ্ঠী বা মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলোরই অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিই এরজন্য দায়ী? 
     
    এরই প্রতিক্রিয়ায় আমি ওপরের প্রশ্নগুলো তুলেছি।
     
     
    আর আমার পড়াশুনা বা ডেপথ সেরকম নেই, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের লেখালেখি দেখেই শিখি,বিশদে চর্চা শুরু করিনি এখনও। এব্যাপারে দেবাশিস্ দার থেকেও প্রচুর সাহায্য পাই।মুসলিম দুনিয়ার ভূ রাজনীতি আর আমেরিকার পিছনে তাদের অবদান ইত্যাদি নিয়ে, বা এর পিছনে দায়ী অন্য কারণ নিয়ে কোন সমাজবিজ্ঞানী এক্সপার্ট এর লেখা বই বা পেপার সাজেস্ট করতে পারবেন? আবারও আগাম ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা 
  • রাধার কানাই | 42.110.161.23 | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:২৬514924
  • // তবে কি আদৌ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের কোন অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য বা মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ কোন বৈশিষ্ট্যও কি এরজন্য  দায়ী //
     
     
    এই লাইনটা আগের মন্তব্যে ভুল টাইপ করেছিলাম, এবার ঠিক করে দিলাম।
  • guru | 103.211.132.30 | ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫২514928
  • @রাধার কানাই
     


    অনেক ধন্যবাদ |
     
    "কিন্তু দেবাশিস্ দা আরেকটু এগিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওঁর বক্তব্য, এই যে বেছে বেছে মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোকে আমেরিকা টার্গেট করছে,তারা তা পারছে কী করে।
    এখানেই উঠছে পরবর্তী প্রশ্ন। তবে কি আদৌ মুসলিম জনগোষ্ঠী বা মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলোরই অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিই এরজন্য দায়ী? "
    আসলে আমরা যে ধর্ম , সেক্যুলার , ইসলামিস্ট জঙ্গী এইসব টার্ম গুলি ব্যবহার ও আলোচনা করি এইগুলি সব কটি কোনো না কোনো ভাবে পশ্চিমী দুনিয়ার মুসলিম দুনিয়ার সঙ্গে নিজস্ব ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও বর্তমান কালের ভূ রাজনৈতিক স্বার্থ এর কথা ভেবে তৈরী করা |
     
    আম্রিকা যে কয়টি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোকে টার্গেট করেছে তার পিছনে কয়েকটি কারণ |
     
    ১ | তৈল সম্পদ 
    ২ | এই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আম্রিকি স্বার্থের শর্ত মানতে রাজি ছিলেননা 
    ৩ | ভূ রাজনীতি 
     
    এইসব দেশের ধর্মের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ নেই এইক্ষেত্রে | 
     
    মুসলিমদের মধ্যে সেক্যুলার বা ইসলামিস্ট কে সেই ব্যাপারে পশ্চিমী দুনিয়ার নিজস্ব একটি স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ঠিক করা হয় | সেক্যুলার বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি তা হলো একজন মুসলিম যে দাড়ি রাখেনা, নিয়মিত ভাবে নামাজ পড়েনা , ভালো ইংরিজি বলতে পারে পশ্চিমি পোশাক পরে ইত্যাদি ইত্যাদি |
     
    এখন আমি ৫ জন মুসলিম নেতার নাম বলছি যারা এই তথাকথিত সেক্যুলার স্টিরিওটাইপে মডেলে পড়ে যায় | মোহাম্মদ মোসাদেক , মোহাম্মেদ আলী জিন্নাহ , সাদ্দাম হোসেন, রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান ও ইমরান খান | পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে এরা ইসলামিস্ট খল নায়ক যেহেতু এরা তথাকথিত সেক্যুলার লাইফস্টাইল নিয়েও কোনো না কোনো ভাবে পশ্চিমী স্বার্থের বিরোধিতা করে |   এখন এরা কি আপনার কাছে সেক্যুলার নাকি ইসলামিস্ট ?? 
     
    আপনি বই পড়তে চাইলে আমি কয়েক জন লেখকের নাম বলছি | এইগুলি পড়ে দেখতে পারেন আপনি |
     
    "গ্লোবালিস্তান " পেপে এস্কোবার 
    "দি এম্পায়ার অফ chaous"   পেপে এস্কোবার 
    "Clash of Fundamentalisms: Crusades, Jihads and Modernity" তারিক আলী 
    "The Great War for Civilisation: The Conquest of the Middle East "  রবার্ট ফিস্ক 
  • guru | 146.196.47.27 | ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:২৯514931
  • দেবাশীষ বাবু 
     
                      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে | আপনি বর্তমানের ধর্ম ও মৌলবাদ বিষয়ে বেশ কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে খুব ভালো কাজ করেছেন | কয়েকটি প্রশ্ন আছে আপনার কাছে |
     
    ১ | ধর্ম সেক্যুলারিজম ইসলামিজম মৌলবাদ এই টার্ম গুলি নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করছি সবই মোটামুটি পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণাকে নিয়ে | এই টার্ম গুলি নিয়ে অন্য কোনো রকম ধারণা দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে কি করা সঠিক হবে বর্তমানের প্রেক্ষিতে ?
     
    ২ | আরেকটি ইন্টারেষ্টিং প্যাটার্ন আমরা দেখতে পাই | অনেক মুসলীম ইন্টেলেকচুয়াল যাদের পাশ্চাত্য দুনিয়া ইসলামিস্ট বা মৌলবাদী বলে ছাপ্পা লাগিয়ে দিয়ে থাকে তারা অনেকেই কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষাতে শিক্ষিত এবং বহুদিন পাশ্চাত্যে কাঠিয়েছেন | যেমন ধরুন মিশরের মুসলীম ব্রাদারহুডের ideological মেন্টর সায়ীদ কুতুব , ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের ইডিওলজিক্যাল মেন্টর আলী শারীয়াতী , বা পাকিস্তানের ইকবাল যেমন | অথচ বর্তমানে এদের ইসলামিস্ট মৌলবাদী (খলনায়ক অর্থে ) দেখানো হয়ে থাকে | তাহলে কি পশ্চিমী শিক্ষার প্রসারের ফলেই মুসলীম দুনিয়ার মৌলবাদ শুরু হয়েছে ?
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২০514932
  • guru,
     
    এ আলোচনায় আপনার উৎসুক, মেধাবী এবং অবহিত অংশগ্রহণটি আমার চমৎকার লেগেছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সম্ভবত সব জায়গায় আপনার সঙ্গে আমার মত ঠিক খাপে খাপে মিলবে না, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনা। ধর্মের প্রতি কোনও লুকোনো সহানুভূতিকে যাঁরা 'ক্রিটিক্যালিটি' দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করেন, আপনি অন্তত তাঁদের দলে পড়েন না, এটুকু আমার মনে হয়েছে। এবং, এই মনে হওয়াটা আমার কাছে স্বস্তিকর। 
     
    'রাধার কানাই' যা বলেছেন তার প্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য আগে বলে নিই, তারপর আপনার কথায় আসব।
     
    ধীরগতিতে সাড়া দেবার জন্য দুঃখিত, অনুগ্রহ করে একটু সহ্য করুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন