এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মা কালীর শিল্পবিপ্লব ঃ সাংকেতিক ভাষা ২

    Nilanjan Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ অক্টোবর ২০২২ | ২৮৬ বার পঠিত
  • প্রথম শিল্পবিপ্লব কি মা কালী করেছিলো? তার সংকেত কি রাখা আছে পুরাণে?
     
    বিষ্ণু নিদ্রায় রয়েছে। আর সেই সময় মধু আর কৈটভ বিষ্ণুর কানের মল থেকে তৈরী হয়ে ব্রহ্মাকে খেতে গেলো। ব্রহ্মা মহামায়ার স্তব করলে মহামায়া কালী বিষ্ণুর ঘুম ভাঙালো আর বিষ্ণু বধ করলো তাদের। তাদের মেদ দিয়ে তৈরী হলো মেদিনী বা পৃথিবী। গল্পটাতো জানা। এই গল্পকে সংকেত ধরলে আরেকটা গল্প বেরিয়ে আসে। 

    বিষ্ণুকে নগদ নারায়ণ ধরলে সেই হলো আদি ক্যাপিটালিষ্ট। পূর্বের যৌথ সমাজ ভেঙে বিষ্ণু তৈরী করেছিলো ব্যবসায়ী সমাজ, বিনিময় প্রথা, দুধ সাগর আর সর বা উদ্বৃত্তের লেনদেন। যৌথ সমাজে সকলে সমান ভাগ পেতো। ধনতন্ত্রে শ্রমিক পেতো কেবল পারিশ্রমিক আর লাভ নিতো মালিক। শ্রম বিক্রয় শুরু হয়েছিলো। শিবেরা বা জ্ঞানের শিখা বহনকারী (শিব) মানুষেরা নতুন নতুন আবিষ্কার করতো আর তাকে বিক্রয়যোগ্য করতো বিষ্ণুরা। আর সেই নব আবিষ্কার আর উৎপাদনের শুভ-অশুভ জ্ঞান জমা হতো ব্রহ্মার কাছে বা আধুনিক স্কুল-কলেজের শিক্ষায়। কিন্তু সব যখন যন্ত্রের মতো ঠিক চলেছে তখন বিষ্ণু বা ব্যবসায়ীরা নিদ্রা বা অবসরে দিন কাটাতে লাগলো। মালিকবেশ নিয়ে বিষ্ণুর সাথে শ্রমিকদের দূরত্ব বাড়তে লাগলো আর সেই স্থান নিলো কর্মকর্তারা। মালিকের চোখ বন্ধ, সে আর দেখে না খালি কর্মকর্তাদের কথা শোনে। কর্মকর্তারা তার কানে নিজেদের সুবিধা মতো কথা বা পুঁজ যা কিনা পুঁজি থেকে প্রাপ্ত তা ঢোকাতে লাগলো। এই নজরদারীর অভাবে অনাচার শুরু হলো। মধু বা মিষ্টভাষী দুষ্ট কর্মকর্তারা সকলকে ভোলাতে লাগলো যে সব ঠিক আছে আর এদিকে কৈটভ বা কর্মকে কেবল টাকার দিশায় নিয়ে গিয়ে তাতে নিজেদের ভরণপোষণ করতে লাগলো বা জুয়া (কৌতব) বা অতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে একসাথে অনাচার নিয়ে এলো। এ অনাচারও ব্রহ্মা লিপিবদ্ধ করবে তাই তাকে খেতে গেলো তারা। নিদ্রিত বিষ্ণুর আর ঘুম ভাঙে না। ব্রহ্মা বা শিক্ষিত সমাজ স্বরণ নিলো শ্রমজীবী সমাজের। মহা কালী মানে ক বা কর্মকে যারা আ-কার দিয়ে দ্রব্য উৎপাদন করে আর ঈ বা সমাজের অস্তিত্বকে সক্রিয় রাখে সেই শ্রমজীবী সমাজ জেগে উঠলো। তারা বিদ্রোহ করলো। উৎপাদন বন্ধের মুখে গেলো। এবার বিষ্ণুকে জাগতেই হলো এবার আর সকল অনাচারীদের দমন করে তাদেরই মেদ বা অসৎপথে উপার্জিত ধন দিয়ে ধরনী বা যা সকলকে ধরে রাখবে তার রচনা করলো। শান্ত হলো সকলে। 

    কালী হলো শ্রমজীবীদের ভয়ঙ্কর প্রতীকী রূপ। তার গলায় ঝুলছে শিল্পপতিদের বা কর্মযজ্ঞের মাথাদের মুণ্ড আর কোমরে তাদের চালনাকারী কর্মকর্তদের হাত। খড়্গহস্ত সে রূপ সাবধান করে দিচ্ছে ধনতান্ত্রিক সমাজকে যে তারা যেন নিদ্রিত হয়ে না পড়ে। তাদের পুঁজি যখন পুঁজ হয়ে বের হতে শুরু করে তখন মহা সংগ্রামের পথে নেবে পড়ে শ্রমিকসমাজ। প্রাচীন সেই শিল্প বিপ্লবের প্রতীক হলো কালীমূর্তি। শিল্পী যখন সেই বিপ্লবকে মূর্ত করলেন তখন কালীর রূপ তৈরী করলেন। আমরা প্রতীকী অর্থ না বুঝে সেই মূর্ত ধারণাকেই পুজো করতে শুরু করলাম। লক্ষ্য করলে দেখবো যে কালী পুজোয় সেই আভিজাত্য নেই যা দুর্গা পুজোয় থাকে। এ হলো নীচু সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের পুজো। শিল্পীর সাফল্য এখানেই। তাঁর সংকেত না বুঝলেও সঠিক শ্রেনীর মানুষ হৃদয়ে কালীকেই আপন করে। অন্যের চোখে ভয়ঙ্কর হলেও তার মধ্যেই মুক্তি খুঁজে পায় সেই অবহেলিত শ্রেণীর মানুষ। 

    কলিম খানের প্রতীকী ভাষাকে মূল ধরে লিখলাম। তাঁর মতো ভাষাবিদ নই বলে ভুল থাকতে পারে। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন