এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দত্ত জুয়েলার্স - ১২ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ অক্টোবর ২০২২ | ২৪৩ বার পঠিত
  • পার্থসারথিবাবু কলতানকে ফরেনসিক  রিপোর্টটা মেল করলেন । তাতে টেবল কভার এবং মেঝেতে পড়া মাংসের ঝোলের দাগের সময়কালও জানা গেল । সেটা সতীনাথের বলা সময়ের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গেছে । সতীনাথ 
    বলেছিল যে , বেলা তিনটের সময় তারা লাঞ্চ করেছিল । রিপোর্টেও ঝোলের দাগের টাইম আছে ----- সেদিন বেলা তিনটের কাছাকাছি ।

        রাত এগারোটার সময় কলতানের বাইক এসে দাঁড়াল নিউ হরাইজনের সামনে । সুনীল ধাড়ার আজ নাইট ডিউটি আছে । কিয়স্কের ভিতর আর একজন বসে আছে । এর কি নাম কে জানে ।#দত্ত_জুয়েলার্স_১২

    পার্থসারথিবাবু কলতানকে ফরেনসিক  রিপোর্টটা মেল করলেন । তাতে টেবল কভার এবং মেঝেতে পড়া মাংসের ঝোলের দাগের সময়কালও জানা গেল । সেটা সতীনাথের বলা সময়ের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গেছে । সতীনাথ 
    বলেছিল যে , বেলা তিনটের সময় তারা লাঞ্চ করেছিল । রিপোর্টেও ঝোলের দাগের টাইম আছে ----- সেদিন বেলা তিনটের কাছাকাছি ।

        রাত এগারোটার সময় কলতানের বাইক এসে দাঁড়াল নিউ হরাইজনের সামনে । সুনীল ধাড়ার আজ নাইট ডিউটি আছে । কিয়স্কের ভিতর আর একজন বসে আছে । এর কি নাম কে জানে । গেট দিয়ে কলতানকে ঢুকতে দেখে সুনীল উঠে দাঁড়াল । তারপর একগাল হেসে আস্তে আস্তে কলতানের দিকে হেঁটে আসতে লাগল । কলতানের চোখ আটকে গেল সুনীল ধাড়ার হাঁটার ভঙ্গীতে । সেই সেদিনের মতোই কষ্ট করে হাঁটছে । ডান পায়ে অবশ্যই চোট আছে । 
    ----- ' আপনি স্যার এই সময়ে এখানে ? ' সুনীল বিগলিত ভঙ্গীতে জিজ্ঞাসা করে । 
    ----- ' আরে ভাই , আর বল কেন ... আমাদের আবার সময় আর অসময় ... আজ রাতটা এখানেই কাটাব ভাবছি .... '
    ----- ' কেন স্যার ? '
    ----- ' যাতে এখানে বসে বসেই সবকিছু দেখতে পাই .... চল বসি ওখানে ... '
    ----- ' হ্যা... চলুন স্যার ... '
    ----- ' তুমি এরকম খোঁড়াচ্ছ কেন ? '
    ----- ' আর বলেন কেন ... খুচরো পাপ .... কাঁচে পা কেটেছে ... কি ঝামেলা ... খুব ব্যথা ... '
    ----- ' হ্যা.... কাঁচে কাটা .... শুকোতে সময় তো লাগবেই .... তা এভাবে পা কাটল কি করে ? '
    ----- ' আর বলেন কেন ... সেদিন, শনিবার হাত থেকে পড়ে একটা কাঁচের গ্লাস ভাঙল । অসাবধানে যেতে গিয়ে ভাঙা কাঁচে পা পড়ে একেবারে ... একটা টুকরো ডিপ হয়ে ঢুকে গেল .... '
    ------ ' ইশশ্ .... তা কখন হল ওটা ? '
    ------ ' ওই তো ... সেদিন সকালের দিকে ... '
    ------ ' হুমম্ ... ডাক্তার দেখিয়েছ ? '
    ------ ' হ্যা.... ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ... '
    ----- 'হুমম্ ... সাবধানে থেক ... '
    কলতান সুনীলের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল । আর একজন রক্ষী কিয়স্ক থেকে বেরিয়ে গেটের দিকে গেল । আস্তে আস্তে রাত বাড়ছে ।
    সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল কমে গেছে । মাঝে মাঝে তীব্র গতিতে ছুটে চলে যাচ্ছে এক একটা মোটরবাইক । রাস্তার ওপারে গাছগুলো ঝলসাচ্ছে সাদাটে আলোয় । আলো ঠিকরে পড়ছে রাস্তায় । ক্ষীণ কোন আওয়াজ ভেসে আসছে মাঝে মাঝে কোথা থেকে । 
    রাত বারোটা বাজতে চলল । সুনীল দুবার হাই তুলল । 
    কলতান বলল, ' এখনই হাই তুলছ ... এখনও তো সারারাত বাকি .... '
    ----- ' না স্যার ... ওতে কোন অসুবিধে হবে না । এইভাবেই তো ডিউটি করছি এতদিন ধরে ... আজ শরীরটা তেমন ভাল নেই ... '
    ----- ' তুমি এখানে ঢোকার পর থেকেই মহুয়া মিত্রকে এই ফ্ল্যাটে দেখছ ? '
    ----- ' হ্যা স্যার .... ' সুনীল সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় ।
    ----- ' উনি কেমন লোক ছিলেন ? '
    ----- ' ভালই ছিল । আমাদের সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি .... , তারপর হাসি হাসি মুখে বলল, ' বখশিসও দিত প্রায়ই ... সে সব অসুবিধে ছিল না ... কিন্তু সত্যি বলতে কি .... আপনাকে বলেই বলছি .... ওর ওই ভাতারটা... মানে, সতীনাথ ... ওই লোকটাকে মোটেই সুবিধের মনে হয় না আমার .... মহুয়া মিত্রের মৃত্যুর পেছনে ও..ই আছে বলে আমার ধারণা .... '
    ----- ' তা হতে পারে ... কেউই তো ধারণার বাইরে নয় ... তুমিই বল না ... এ দুনিয়ায় কি কাউকে বিশ্বাস করা যায় ? আমরা তো প্রায়ই
    দেখি যে রক্ষক সেই কোন এক সময়ে ভক্ষক হয়ে ওঠে .... '
    সুনীল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কলতানের মুখের  দিকে তাকাল । তারপর একটু সময় নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল, ' সে তো বটেই ... ' , বলে চুপ করে রইল । 
    ----- ' মানুষের রক্ত পরীক্ষা করলেই তার কাজকর্মের হদিশ পাওয়া যায় জান তো ? ' 
    সুনীল কিছু বুঝতে না পেরে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর মুখ নামিয়ে নিল । 
    দুজনেই চুপ করে বসে আছে । কলতান যে কেন এই রাত্রিরবেলায় এখানে এসে হাজির হল 
    সে ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না । যে ছেলেটা গেটের দিকে গিয়েছিল সে ফিরে আসছে । কাছে আসতে কলতান জিজ্ঞাসা করল , ' তোমার নাম কি ভাই ? '
    ---- ' সন্দীপ ... সন্দীপ ঘোষ স্যার... '
    ---- ' কতদিন ঢুকেছ এ চাকরিতে ? '
    ---- ' এই পাঁচ মাসে পড়েছে স্যার ... '
    ---- ' বাড়ি কোথায় ? '
    ----- ' হাওড়ায়.... রামরাজাতলায় ... '
    ---- ' মহুয়া ম্যাডামকে চিনতে ? '
    ----- ' হ্যা... দেখতাম রোজই কিন্তু তেমন পরিচয় হয়নি । কথাও বলিনি কোনদিন । সুনীলদার সঙ্গে ভাল পরিচয় ছিল .... নাইট ডিউটিতে থাকলে , কোন দরকার পড়লে ... '
    সুনীল মাঝখানে ঢুকে কথাটা চাপা দিল । 
    ----- ' আরে.... দুবার মাঝরাতে হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল .... খুব ড্রিঙ্ক করত তো ....'
    ----- ' অত রাত্রে ডাক্তার পাওয়া যেত ? '
    ----- ' এই অ্যপার্টমেন্টেই ডাক্তার আছে । ইমার্জেন্সি হলে আসে । নইলে তো ... '
    ----- ' ওনাকে ড্রিঙ্ক করতে দেখেছ ? '
    ----- ' না আমি কি করে দেখব .... তবে ঘরে হুইস্কির বোতল দেখেছি ... '
    ----- ' খালি বোতলগুলো কে নিয়ে যেত, বা কোথায় ফেলা হতো ? '
    ----- ' অত জানি না .... হতে পারে বাথরুমের পেছনদিকের জানলা গলিয়ে ফেলে দিত । ওদিকে তো কেউ যায় না .... আগাছায় ভর্তি । কিন্তু ওভাবে কাঁচের জিনিস ফেলা তো উচিত নয় ... কখন কার পা কাটে অসাবধানে পা ফেলে .... '
    ----- ' যেমন তোমার কাটল আর কি .... ' কলতানের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ।
    চমকে উঠল সুনীল ধাড়া । সন্দীপ ঘোষ আবার কিয়স্কে গিয়ে বসেছে । বর্ষাভেজা হাওয়া বয়ে আসছে দক্ষিণদিক থেকে । শুনশান রাত্রি বিছিয়ে গেছে শহর জুড়ে । ফাঁকা রাস্তায় দু একজন দেহপোজীবিনী ঘোরাঘুরি করছে , মায়াবী ছায়ার মতো , তাদের টানে কোন গাড়ি থমকে যাওয়ার আশায় ।
    সুনীল চমকে উঠে বলল, ' মানে ! ... বললাম তো ওখানটায় কেউ যায় না .... '
    ----- ' হ্যা.... তা তো বটেই । তেমন দরকার না পড়লে ওখানে কেই বা যাবে ? এক, কোন চোর টোর যদি বাথরুমের জানলা গ'লে ভেতরে আসার চেষ্টা করে , কিংবা ভেতর থেকে ওই জায়গা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাতে চায় । আর যদি সে কোন কারণে খালি পায়ে থাকে তাহলে তো ভাঙা কাঁচে পা পড়ে রক্তারক্তি হবেই .... তাই না ? ' কলতান সুনীলের দিকে তাকিয়ে থাকে হাসিমুখে । 
    সুনীল ভ্রু কুঁচকে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ' কিন্তু এখানে কোন ঘরে আমাদের চোখ এড়িয়ে চোরের ঢোকা বা বেরনো তো কোনমতেই সম্ভব নয় স্যার ... বিল্ডিং-এ তো চব্বিশ ঘন্টা সিকিউরিটি থাকে ... '
    ----- ' হ্যা সে তো অবশ্যই । আমি শুধু সম্ভাবনার কথা বলছি । আচ্ছা বিল্ডিং-এ এখনও সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়নি কেন ? '
    ------ ' সেটা তো আমরা বলতে পারব না স্যার... মালিক বলতে পারবে .... অফিসে জিজ্ঞেস করতে পারেন ... শুনেছিলাম সামনের মাসে লাগানো হবে । '
    ----- ' ও আচ্ছা ... ওটা ইন্সটল করা থাকলে আমাদের এই কেসটা নিয়ে আমাদের এত কাঠখড় পোড়াতে হত না ... '
    ----- ' কিন্তু স্যার ... এটা যদি মার্ডার কেস হয়ে থাকে .... তাহলে সতীনাথ দত্তকে জেরা করলেই 
    তো সব বেরিয়ে আসবে .... এছাড়া তো সন্দেহ করার মতো কেউ নেই ... তাই না ? '
    সুনীল বেশ বিজ্ঞের মতো মতামত দেয় ।
    ----- ' হ্যা... কথাটা মন্দ বলনি ... কথায় যুক্তি আছে । কিন্তু সেদিন সতীনাথবাবুর এগজিট টাইমটাই খটকা বাঁধাচ্ছে .... তাছাড়া জেরা করতে গেলে আরো কাউকে কাউকে করতে হয় । সমস্যার  সমাধান না হলে সেদিকেই যেতে হবে এবং তা আজ কালের মধ্যেই ... বুঝলে কিনা ? '
    ----- ' কিরকম স্যার ?  '  
    ----- ' টাইমটা সাড়ে পাঁচটা থেকে নটা চল্লিশ হয়ে গেল কি করে ? ওই টাইমটা তো তোমারই লেখা ...তাই না ? '
    ----- ' হ্যা.... ওটা আমিই লিখেছি .... অনেকেই বেরোবার টাইম না দিয়েই বেরিয়ে যায় ... ওটা আমরাই বসিয়ে দিই ... '
    ----- ' হমম্... কি মুশকিলে পড়া গেল বল তো ? '
    আর একজন রক্ষী সন্দীপ ঘোষ আবার গেটের বাইরে গেল, বোধহয় ধূমপান করতে । 
    নিস্তব্ধ রাত্রে কলতানের পাশাপাশি বসে সুনীল ধাড়ার মনে এক ছমছমে ভাবনা চেপে বসল । 
    সে ভাবল, এই ভদ্রলোক এই রাতদুপুরে এখানে এসে বসে আছে কোন উদ্দেশ্যে ।  আপনমনে মাথা নীচু করে আগডুম বাগডুম ভাবতে ভাবতে
    সে হঠাৎ  মুখ তুলে দেখল , তার জামার বোতামের দিকে তাকিয়ে আছেন পাশে বসা ভদ্রলোক ।
      ( ক্রমশঃ )
    ****************************************** গেট দিয়ে কলতানকে ঢুকতে দেখে সুনীল উঠে দাঁড়াল । তারপর একগাল হেসে আস্তে আস্তে কলতানের দিকে হেঁটে আসতে লাগল । কলতানের চোখ আটকে গেল সুনীল ধাড়ার হাঁটার ভঙ্গীতে । সেই সেদিনের মতোই কষ্ট করে হাঁটছে । ডান পায়ে অবশ্যই চোট আছে । 
    ----- ' আপনি স্যার এই সময়ে এখানে ? ' সুনীল বিগলিত ভঙ্গীতে জিজ্ঞাসা করে । 
    ----- ' আরে ভাই , আর বল কেন ... আমাদের আবার সময় আর অসময় ... আজ রাতটা এখানেই কাটাব ভাবছি .... '
    ----- ' কেন স্যার ? '
    ----- ' যাতে এখানে বসে বসেই সবকিছু দেখতে পাই .... চল বসি ওখানে ... '
    ----- ' হ্যা... চলুন স্যার ... '
    ----- ' তুমি এরকম খোঁড়াচ্ছ কেন ? '
    ----- ' আর বলেন কেন ... খুচরো পাপ .... কাঁচে পা কেটেছে ... কি ঝামেলা ... খুব ব্যথা ... '
    ----- ' হ্যা.... কাঁচে কাটা .... শুকোতে সময় তো লাগবেই .... তা এভাবে পা কাটল কি করে ? '
    ----- ' আর বলেন কেন ... সেদিন, শনিবার হাত থেকে পড়ে একটা কাঁচের গ্লাস ভাঙল । অসাবধানে যেতে গিয়ে ভাঙা কাঁচে পা পড়ে একেবারে ... একটা টুকরো ডিপ হয়ে ঢুকে গেল .... '
    ------ ' ইশশ্ .... তা কখন হল ওটা ? '
    ------ ' ওই তো ... সেদিন সকালের দিকে ... '
    ------ ' হুমম্ ... ডাক্তার দেখিয়েছ ? '
    ------ ' হ্যা.... ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ... '
    ----- 'হুমম্ ... সাবধানে থেক ... '
    কলতান সুনীলের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল । আর একজন রক্ষী কিয়স্ক থেকে বেরিয়ে গেটের দিকে গেল । আস্তে আস্তে রাত বাড়ছে ।
    সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল কমে গেছে । মাঝে মাঝে তীব্র গতিতে ছুটে চলে যাচ্ছে এক একটা মোটরবাইক । রাস্তার ওপারে গাছগুলো ঝলসাচ্ছে সাদাটে আলোয় । আলো ঠিকরে পড়ছে রাস্তায় । ক্ষীণ কোন আওয়াজ ভেসে আসছে মাঝে মাঝে কোথা থেকে । 
    রাত বারোটা বাজতে চলল । সুনীল দুবার হাই তুলল । 
    কলতান বলল, ' এখনই হাই তুলছ ... এখনও তো সারারাত বাকি .... '
    ----- ' না স্যার ... ওতে কোন অসুবিধে হবে না । এইভাবেই তো ডিউটি করছি এতদিন ধরে ... আজ শরীরটা তেমন ভাল নেই ... '
    ----- ' তুমি এখানে ঢোকার পর থেকেই মহুয়া মিত্রকে এই ফ্ল্যাটে দেখছ ? '
    ----- ' হ্যা স্যার .... ' সুনীল সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় ।
    ----- ' উনি কেমন লোক ছিলেন ? '
    ----- ' ভালই ছিল । আমাদের সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি .... , তারপর হাসি হাসি মুখে বলল, ' বখশিসও দিত প্রায়ই ... সে সব অসুবিধে ছিল না ... কিন্তু সত্যি বলতে কি .... আপনাকে বলেই বলছি .... ওর ওই ভাতারটা... মানে, সতীনাথ ... ওই লোকটাকে মোটেই সুবিধের মনে হয় না আমার .... মহুয়া মিত্রের মৃত্যুর পেছনে ও..ই আছে বলে আমার ধারণা .... '
    ----- ' তা হতে পারে ... কেউই তো ধারণার বাইরে নয় ... তুমিই বল না ... এ দুনিয়ায় কি কাউকে বিশ্বাস করা যায় ? আমরা তো প্রায়ই
    দেখি যে রক্ষক সেই কোন এক সময়ে ভক্ষক হয়ে ওঠে .... '
    সুনীল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কলতানের মুখের  দিকে তাকাল । তারপর একটু সময় নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল, ' সে তো বটেই ... ' , বলে চুপ করে রইল । 
    ----- ' মানুষের রক্ত পরীক্ষা করলেই তার কাজকর্মের হদিশ পাওয়া যায় জান তো ? ' 
    সুনীল কিছু বুঝতে না পেরে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর মুখ নামিয়ে নিল । 
    দুজনেই চুপ করে বসে আছে । কলতান যে কেন এই রাত্রিরবেলায় এখানে এসে হাজির হল 
    সে ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না । যে ছেলেটা গেটের দিকে গিয়েছিল সে ফিরে আসছে । কাছে আসতে কলতান জিজ্ঞাসা করল , ' তোমার নাম কি ভাই ? '
    ---- ' সন্দীপ ... সন্দীপ ঘোষ স্যার... '
    ---- ' কতদিন ঢুকেছ এ চাকরিতে ? '
    ---- ' এই পাঁচ মাসে পড়েছে স্যার ... '
    ---- ' বাড়ি কোথায় ? '
    ----- ' হাওড়ায়.... রামরাজাতলায় ... '
    ---- ' মহুয়া ম্যাডামকে চিনতে ? '
    ----- ' হ্যা... দেখতাম রোজই কিন্তু তেমন পরিচয় হয়নি । কথাও বলিনি কোনদিন । সুনীলদার সঙ্গে ভাল পরিচয় ছিল .... নাইট ডিউটিতে থাকলে , কোন দরকার পড়লে ... '
    সুনীল মাঝখানে ঢুকে কথাটা চাপা দিল । 
    ----- ' আরে.... দুবার মাঝরাতে হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল .... খুব ড্রিঙ্ক করত তো ....'
    ----- ' অত রাত্রে ডাক্তার পাওয়া যেত ? '
    ----- ' এই অ্যপার্টমেন্টেই ডাক্তার আছে । ইমার্জেন্সি হলে আসে । নইলে তো ... '
    ----- ' ওনাকে ড্রিঙ্ক করতে দেখেছ ? '
    ----- ' না আমি কি করে দেখব .... তবে ঘরে হুইস্কির বোতল দেখেছি ... '
    ----- ' খালি বোতলগুলো কে নিয়ে যেত, বা কোথায় ফেলা হতো ? '
    ----- ' অত জানি না .... হতে পারে বাথরুমের পেছনদিকের জানলা গলিয়ে ফেলে দিত । ওদিকে তো কেউ যায় না .... আগাছায় ভর্তি । কিন্তু ওভাবে কাঁচের জিনিস ফেলা তো উচিত নয় ... কখন কার পা কাটে অসাবধানে পা ফেলে .... '
    ----- ' যেমন তোমার কাটল আর কি .... ' কলতানের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ।
    চমকে উঠল সুনীল ধাড়া । সন্দীপ ঘোষ আবার কিয়স্কে গিয়ে বসেছে । বর্ষাভেজা হাওয়া বয়ে আসছে দক্ষিণদিক থেকে । শুনশান রাত্রি বিছিয়ে গেছে শহর জুড়ে । ফাঁকা রাস্তায় দু একজন দেহপোজীবিনী ঘোরাঘুরি করছে , মায়াবী ছায়ার মতো , তাদের টানে কোন গাড়ি থমকে যাওয়ার আশায় ।
    সুনীল চমকে উঠে বলল, ' মানে ! ... বললাম তো ওখানটায় কেউ যায় না .... '
    ----- ' হ্যা.... তা তো বটেই । তেমন দরকার না পড়লে ওখানে কেই বা যাবে ? এক, কোন চোর টোর যদি বাথরুমের জানলা গ'লে ভেতরে আসার চেষ্টা করে , কিংবা ভেতর থেকে ওই জায়গা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাতে চায় । আর যদি সে কোন কারণে খালি পায়ে থাকে তাহলে তো ভাঙা কাঁচে পা পড়ে রক্তারক্তি হবেই .... তাই না ? ' কলতান সুনীলের দিকে তাকিয়ে থাকে হাসিমুখে । 
    সুনীল ভ্রু কুঁচকে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ' কিন্তু এখানে কোন ঘরে আমাদের চোখ এড়িয়ে চোরের ঢোকা বা বেরনো তো কোনমতেই সম্ভব নয় স্যার ... বিল্ডিং-এ তো চব্বিশ ঘন্টা সিকিউরিটি থাকে ... '
    ----- ' হ্যা সে তো অবশ্যই । আমি শুধু সম্ভাবনার কথা বলছি । আচ্ছা বিল্ডিং-এ এখনও সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়নি কেন ? '
    ------ ' সেটা তো আমরা বলতে পারব না স্যার... মালিক বলতে পারবে .... অফিসে জিজ্ঞেস করতে পারেন ... শুনেছিলাম সামনের মাসে লাগানো হবে । '
    ----- ' ও আচ্ছা ... ওটা ইন্সটল করা থাকলে আমাদের এই কেসটা নিয়ে আমাদের এত কাঠখড় পোড়াতে হত না ... '
    ----- ' কিন্তু স্যার ... এটা যদি মার্ডার কেস হয়ে থাকে .... তাহলে সতীনাথ দত্তকে জেরা করলেই 
    তো সব বেরিয়ে আসবে .... এছাড়া তো সন্দেহ করার মতো কেউ নেই ... তাই না ? '
    সুনীল বেশ বিজ্ঞের মতো মতামত দেয় ।
    ----- ' হ্যা... কথাটা মন্দ বলনি ... কথায় যুক্তি আছে । কিন্তু সেদিন সতীনাথবাবুর এগজিট টাইমটাই খটকা বাঁধাচ্ছে .... তাছাড়া জেরা করতে গেলে আরো কাউকে কাউকে করতে হয় । সমস্যার  সমাধান না হলে সেদিকেই যেতে হবে এবং তা আজ কালের মধ্যেই ... বুঝলে কিনা ? '
    ----- ' কিরকম স্যার ?  '  
    ----- ' টাইমটা সাড়ে পাঁচটা থেকে নটা চল্লিশ হয়ে গেল কি করে ? ওই টাইমটা তো তোমারই লেখা ...তাই না ? '
    ----- ' হ্যা.... ওটা আমিই লিখেছি .... অনেকেই বেরোবার টাইম না দিয়েই বেরিয়ে যায় ... ওটা আমরাই বসিয়ে দিই ... '
    ----- ' হমম্... কি মুশকিলে পড়া গেল বল তো ? '
    আর একজন রক্ষী সন্দীপ ঘোষ আবার গেটের বাইরে গেল, বোধহয় ধূমপান করতে । 
    নিস্তব্ধ রাত্রে কলতানের পাশাপাশি বসে সুনীল ধাড়ার মনে এক ছমছমে ভাবনা চেপে বসল । 
    সে ভাবল, এই ভদ্রলোক এই রাতদুপুরে এখানে এসে বসে আছে কোন উদ্দেশ্যে ।  আপনমনে মাথা নীচু করে আগডুম বাগডুম ভাবতে ভাবতে
    সে হঠাৎ  মুখ তুলে দেখল , তার জামার বোতামের দিকে তাকিয়ে আছেন পাশে বসা ভদ্রলোক ।
      ( ক্রমশঃ )
    ******************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন