এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পুস্তক রিভিউ ঃ ফিরে আসে বার বার,  পল্লবী সেনগুপ্ত

    Himadrisekhar Datta লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ অক্টোবর ২০২২ | ৪৪৬ বার পঠিত
  • ফিরে আসে বার বার
    লেখিকাঃ পল্লবী সেনগুপ্ত
    প্রকাশকঃ পত্রভারতী
    পাঠ প্রতিক্রিয়া 

     
    বইটি কেনার মূল এবং একমাত্র ভাবনা ছিল, মহাভারতের কথা, নতুন প্রজন্মের সাহিত্যিকের নজরে জানা এবং খোঁজা। পল্লবী দেবীর কোনও রচনা আমার পড়া ছিল না, এটাই প্রথম। 
    এক বেলাতেই পড়া শেষ হয়ে গেল। বইটির ব্যাক ফ্ল্যাপে পড়লাম, লেখিকার গল্প শর্ট ফিল্ম এবং ওয়েব সিরিজের জন্য নির্বাচিতও হয়েছে। বর্তমান বইটিও যেন তিনি চিত্রনাট্যের রূপেই বোধহয় লিখতে চেয়েছেন। 
    পাশাপাশি তিনটি ভিন্ন পরিবেশের মানুষ এবং চরিত্র নিয়ে তার রচনার বিস্তার। তা কখনও ৫০০০ বছর আগে, দ্বাপরের শেষ পর্বে, কখনও আজকের দিনে - কলকাতায়?  কখনও উত্তরাখন্ডের গন্ডগ্রাম পাউরিতে।  যদিও কলকাতা স্পষ্ট করে বলা নেই কোথাও। সুপার লং শট, তারপর ডিরেক্টরের কাট, ফোকাস অন আজকের সময়, শর্ট জাম্প নিয়ে উত্তরাখন্ড। এই যে তিন স্থান এবং মহাকালের চক্র থেকে তুলে আনা তিনখানি পৃথক ঘটনা, তারই বিন্যাসে গল্প ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছিল। 
    ইউ টিউব নামক আমেরিকান স্যোসাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম, ভারতীয় ভূখন্ডে পপুলার হবার পরে, দ্রৌণিকে নিয়ে,প্রায় এক হাজার ভিডিওকারেরা, অশ্বত্থামার বেঁচে থাকার এবং আধুনিক হিন্দুত্বের জিগির ঢেলে কয়েক হাজার ভিডিও বানিয়েছেন। এটা খুব রিসেন্ট ট্রেন্ড। এমন রোজই বানাচ্ছেন। কারণ একটাই। এই যে মিথ, এক যোদ্ধা তার পাপের ফলে শাপিত হয়ে, পৃথিবীর বুকে নির্ণিমেষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যার মৃত্যু নেই - আর এই ঘুরে বেড়ানোটা কেবল ভারতেই সীমাবদ্ধ; এর থেকে ইন্টারেস্টিং টপিক আর কি হতে পারে?  আমরা সকলেই মুখে না বললেও, কোথাও না কোথাও এই অলৌকিকতায় বিশ্বাস করি, বিশ্বাস রাখি। 

    তারপরে ভাইরোলজি নিয়ে,লেখিকা, আমাদের গল্পের নায়ক অম্লানকে আঁকতে চেয়েছেন। তার প্রেমিকার রিসার্চ সাবজেক্ট অবশ্যই অশ্বত্থামা, যা তাকে আর অম্লানকে জুড়ে রাখার সোলডারিং মেটেরিয়াল। কোন আপত্তি থাকতেই পারে না। যদিও অম্লানের মধ্যে দ্বাপরের যুগপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের কাছাকাছি অনুরূপ, অনুচ্চারিত ভাবে,বলবার চেষ্টা করেছেন। সেটা যারা তাড়াহুড়ো করে পড়বে, তাদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে হয়ত। আমার খুব স্ট্রং ধারনা, এই কনসেপ্ট এবং গল্পের আতুড় ঘর, লকডাউন পিরিয়ডেই সম্ভবত হয়েছিল। তাতেও কোন কমপ্লেইন্ নেই। অ্যাবসোলিউটলি ফাইন। 
    ভাইরাস সম্বন্ধে কেবল আন্দাজে আর কোভিডের সময়কার খবর আর সারা দুনিয়ার চিন্তাকেই মূল ধারা হিসেবে তিনি গল্পে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ভারতে উৎপন্ন ভাইরাসের বিশেষ স্বরূপ নিয়ে আলাদা কিছু বলেন নি। সেটাকে পাঠকের চিন্তা আর কল্পনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু নেরুয়ার সামনে উপস্থিত অম্লান, যাকে ভারত সরকার, এই ভাইরাসের গতি প্রকৃতি এবং দমনের নিমিত্ত, কমিটিতে বিশেষ পদে আসীন করেছেন, সে একবারও ভাইরোলজিস্টের মত কোন আচরণ করলোনা কেন? সে তো উত্তরাখন্ড এসেছেই একদম গোড়া থেকে সব কিছু জানতে! নেরুয়ার তৃতীয় নয়ন (ঘা) থেকে ফ্লুইড নিতে না আগ্রহী হয়েছে, না গিরিবাবার থানে মহাদেবের দেওয়া চির হরিত লতাপাতার স্যাম্পল দেখতে আগ্রহী হয়েছে। অশ্বত্থামার মণিহীন ললাটের ঘা, ভাইরাসের লক্ষণ ছিল কি?  যা অম্লানের বন্ধুর মায়ের, তাকে সেবারতা নার্সের কপালে দেখা গেলেও, অম্লানকে তা ভাবায় নি। সে শুধু সচদেব রাজগুরুর সাথে কথা বলেই সন্তুষ্ট থাকে। এবং পরে, বুরাহানগড়ের শতাব্দী প্রাচীন মহাদেবের মন্দিরে, সেই অলীক চরিত্র অশ্বত্থামার মুখোমুখি হবার ঠিক পর, সে কি করল কিছুই জানা গেল না। গল্প সেখানে শেষ। 

    গল্পের প্লটটি বেশ জমকালো ছিল, কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ পরিশ্রম করেই, এই গল্প পল্লবী দেবী লিখেছেন, মুখবন্ধে তা নিজেই বলেছেন। 
    কিন্তু তার গল্প বলার যেন বেশ তাড়া ছিল, এমনটা আমার মনে হল। কোন ঘটনা, যা বিশেষ তাতপর্য্য পূর্ণ হতে পারতো (যেমন অম্লানের হঠাৎ জানতে পারা, সে অনাথ, দত্তকপুত্র মাত্র, শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু অনাথ ছিলেন না এবং জীবন রক্ষা হেতু পালিত পুত্র ছিলেন- যোগসূত্র বানাবার একটা চেষ্টা, তেওয়ারি কি মিরাকল বাবার এজেন্ট ছিল), সেগুলিকে তিনি উন্মোচিত করেন নি। তুলনায় উপপান্ডব হত্যা এবং অম্লান রুকমির প্রেমপর্ব তে অনেকটা সময় দিয়েছেন। পঞ্চপান্ডবের কাটা মুন্ড ভেবে, রাতের অন্ধকারে হত্যার পশ্চাতে, নিজের উত্তরীয় করে যা বেঁধে নিয়ে গেছিলেন অশ্বত্থামা দুর্য্যোধনের শেষ শয্যায়, ভোরের আলোয়, যখন তা পঞ্চ উপ পান্ডবের ছিন্ন মুন্ড হিসাবে প্রতিভাত হয়, তখন দুর্য্যোধন একেবারেই খুশী হন নি, তিনি অশ্বত্থামাকে অজস্র কটুক্তি করেছিলেন। আর অশ্বত্থামাও, সেই প্রথম তার মহা ভুল হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন। ভয়ে তিনি পালিয়ে গেছিলেন৷ আমি যতটা মহাভারত পড়েছি, তার ওপর নির্ভর করেই বললাম৷ মহাভারত আমার প্যাশন। তাই এই বই কিনতে উৎসুক হই। 

    ভেকুলা এবং ঝিমনাই এর উপস্থিতি এবং কার্য্যকলাপ কোন উত্তেজনার পশ্চাৎপদ তৈরী করে না। ভালর সাথে খারাপের লড়াই, যার অনেকগুলি ফ্রন্ট এই গল্পের শুরুতে অঙ্কুরিত হয়েছিল, তারা অকালে কিছুটা অবহেলায় ঝরে গেল যেন। ঝিমনাইয়ের মৃত্যুর ব্যাখা প্রায় কিছুই নেই। অনর্থকই মরল মেয়েটা৷ 

    আমি এক সাধারণ চিন্তাশীল পাঠক হিসেবে লেখিকাকে কিছুটা চিন্তা করাবার জন্য এই লেখাটা লিখলাম। আমার মতে, তিনটি পৃথিবীর অস্তিত্ব মিলে মিশে এক হতে পারলো না যেন। হঠাৎই কোন যুক্তিগ্রাহ্য সমাপ্তি হবার আগেই এই বই শেষ হয়ে গেল। 
    তবে কি এর পরবর্ত্তী সিকোয়েল আসবে শীঘ্রই?  অপেক্ষায় থাকব। একটু ভাববেন পল্লবী দেবী। 

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :-) | 2405:8100:8000:5ca1::89:e465 | ০১ অক্টোবর ২০২২ ২০:১৬512466
  • সে কি মোয়াই গোটা দুনিয়ার সামনে লিখে দিয়ে বলচেন চুপি চুপি কানে কানে বললাম। ফেবুর দেয়ালে লিখলে তাও আপনার লিস্টির বাইরে কেউ পড়ত না লাখ স্টুর মধ্যেও সবাই পড়ত কিনা সন্দ। এলহানে তো সারা পৃথিবীর বাঙালি পড়বে।
    আপনি বরং এইলহান থেকে গল্প বড়গল্প পড়তে থাকুন
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন