এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • #বয়কট BOLLYWOOD

    রজত দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৩৯২ বার পঠিত
  • .
    ফিল্মের মহারথীদের একের পর এক বিপুল বাজেটে নির্মিত ফিল্ম বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছে। একটি আপাত জোলো কারণ আকাশে বাতাসে মিডিয়ার কল্যাণে ভেসে বেড়াচ্ছে। হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে কিছু লোক নাকি বয়কট লিখে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছে। তাই নাকি ফিল্মগুলো দর্শক দেখতে হ'ল ভরাচ্ছেন না। আমির খান, অক্ষয় কুমার প্রমুখ তারকা খচিত একটি ছবি, কয়েকজনের করা বয়কট পোস্টের জন্য মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিলেন ? এই বালখিল্য যুক্তিটি মানানসই বলে মনে হয় ? বিশেষ করে আমির খান ও অক্ষয় কুমারের মত সুপার স্টারের ছবি ! মুম্বইয়ের অনেক তাবড় ফিল্ম বিশেষজ্ঞদের ভাবনা অনুযায়ী কারণ এমনটাই বর্ণিত। অথচ দক্ষিণী ছবিগুলো ডাবিং করে সারা দেশ জুড়ে যেখানে ব্যবসা করে চলে যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে "বাহুবলী" ছবিটা এই ব্যবসার পথ প্রদর্শক বলা যেতেই পারে। যদিও বাহুবলীর আগেও দক্ষিণী বহু ছবি ডাবিং করে সারা দেশে ব্যবসা করেছিল। যেমন কামাল হাসান অভিনীত দুটি ছবি, আপ্পু রাজা ও মেয়রসাহেব। মনি রত্নম পরিচালিত দুটি ছবি রোজা ও বম্বে। এই ছবিগুলোর ব্যবসা চোখে পড়ার মত ছিল। তারপরেও কিছু খুচখাচ ছবিও ব্যবসা করেছে। হাল আমলে বাহুবলীর দুটি পার্ট। প্রশ্ন একের পর এক হিন্দি ছবি ফ্লপ হচ্ছে। আর দক্ষিণী ছবিগুলো কিভাবে হিট বা সুপারহিট করছে ? 

    আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, বয়কট ট্রেন্ডের যে কারণটা ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা আসল কারণকে তলিয়ে দেওয়ার জন্য। অথবা বলা যেতে পারে, আসল কারণগুলো জানার চেষ্টাই না করা। আসুন, কারণগুলো অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি। এখানে আলোচ্য বিষয় যেহেতু শুধুমাত্র হিন্দি ছবি। তাই হিন্দি ছবির মূল উপকরণ বা নির্মাণের ধারাকে সামনে থেকে বিচার করতে সুবিধে হবে। এটা লক্ষ্য করা গেছে, বেশ কিছু বছর ধরেই সিনেমার ভাষার আমূল বদল ঘটেছে। তার সাথে বদলে গেছে মনোরঞ্জনের দুনিয়া। সিঙ্গেল স্ক্রিনের সংখ্যা ক্রমশ কমতে কমতে এক চতুর্থাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তার জায়গায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে মাল্টিপ্লেক্স। যা মূলতঃ সাধারণ প্রান্তিক মানুষের মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে পরিপন্থী। একদা গ্রামে গঞ্জে নিম্ন রোজগারের মানুষজনের মনোরঞ্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল হ'লে গিয়ে সিনেমা দেখা। বিভিন্ন উৎসব পার্বণে সপরিবারে মানুষ সিনেমা হ'লমুখী হতেন। তখন সব ভাষাতেই মূল ধারার সিনেমা তৈরির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মনোরঞ্জন। তার জন্যে ব্যবহৃত হত গান, নাচ, মারদাঙ্গা। যা সহজেই প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষকে আকৃষ্ট করত। সিনেমার ভাষা বদলে যাওয়ার সাথে সাথে সেইসব উপকরণের বিলুপ্তি ঘটেছে। স্বল্প শিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত প্রান্তিক মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য এখনকার সিনেমায় উপকরন কমে গেছে। এখনো এদেশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখেন। বাস্তব জীবনের দুঃখ দুর্দশা ভুলতে দু আড়াই ঘন্টার ব্যয় করতে পর্দার সামনে বসেন। সেটাই যখন সিনেমা থেকে খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে সেই শ্রেণীর দর্শকদের সিনেমার প্রতি আগ্রহ অবশ্যম্ভাবী কমবে। 

    পনেরো বিশ বছর আগেও মূলধারার সিনেমায় আমার আপনার গল্পই বেশি বলা হত। গল্প বলায় লার্জার দ্যান লাইফের ভঙ্গি বেশি করে থাকত। নায়কের প্রতিবাদ, নায়িকার খুনসুটি দেখে মানুষ নিজের আইডেন্টিটি খুঁজে পেত। স্মার্ট মেকিং এসে সেসব কবেই হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই মানুষ সিনেমা দেখতে বসে নিজেকে বা পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েকে আর খুঁজে পায়না। আরো বলা যেতে পারে, সিনেমা যে স্বপ্ন দেখাত। তার থেকে ধীরে ধীরে সরে গিয়ে ভিন্ন এক অবস্থান তৈরি করার অবিরত চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভাবুন, সেই যুগে রাজ কাপুর, দিলীপ কুমার থেকে রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন কিংবা জিতেন্দ্র বা ধর্মেন্দ্রর ছবিতে মানুষ বুঁদ হয়ে যেত। একটি সিনেমা মানে কমপ্লিট বিনোদন। একটি ছবির একাধিক গান মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যেত। আজ সারা বছরে কটা গান হিট হয় ! কটা গান সকলের মুখে মুখে ফেরে ? সংখ্যাটা খুবই পীড়াদায়ক। 

    আসলে আজকের যুগে হিন্দি সিনেমায় প্রতিভার কদর কমে গেছে। ভিড় বেড়েছে আগাছার। আর তারকা বাবা মায়ের ছেলেমেয়েদের। অবশ্যই তাদের মধ্যে সকলেই মাকাল ফল নয়। কিন্তু সকলেই আপেলও নয়। ভাল পরিচালকের অভাব লক্ষ্যনীয়। রাজকুমার হিরানি যা বানান, তাই সুপারহিট করে। অথচ অন্যদের ক্ষেত্রে কেন সেটা হচ্ছে না ! এর কারণ দর্শকের পালস বুঝে ছবির গল্প বলিয়ের দক্ষতার অভাব প্রকট। বলিউডের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। গুচ্ছের গান কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে। অথচ মনে রাখার মত গানের সংখ্যা....!!

     মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি প্রকৃত অর্থে আর শিল্পীদের হাতে নেই। বেওসাদারদের, আরো স্পষ্ট করে বললে মাফিয়াদের হাতে চলে গেছে। তারফলে যা হবার তাই হচ্ছে। এ কথা সত্যি আমির খানের মত জাত শিল্পীর অঙ্কেও ভুল ধরা পড়ছে। অস্কার বিজয়ী ইংরেজি ছবি ফরেস্ট গাম্প হিন্দিতে বানানোর কি মানে, সেটা পারফেকশনিস্ট খান সাহেবই ভাল বলতে পারবেন। সকলেই ভুলতে বসেছে বৃহত্তর গ্রামীণ জগতের কথা। গ্রাম কেন্দ্রিক গল্প ঘিরে সিনেমা তৈরি হওয়া প্রায় উঠে গেছে। গ্রামের মানুষের কাছে সফিস্টিকেট শহুরে জীবনের গল্প একটুও আকর্ষক নয়। তাও যদি লার্জার দ্যান লাইফের গল্প হয়। তবুও সেটি দেখতে পছন্দ করেন। নচেৎ মদের গ্লাস হাতে কর্পোরেট চাকুরের জীবন কাহিনীর গল্প নিয়ে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উৎসাহ উদ্দীপনা জাগার কোনো কারণ নেই। 

    দক্ষিণী ছবি সফল হওয়ার রহস্য এখানেই লুকিয়ে। ওরা লার্জার দ্যান লাইফের গল্প এখনো ভোলেনি। বরং স্মার্ট মেকিংয়ের সাথে লার্জার দ্যান লাইফের মিশেলে অদ্ভুত ককটেল বানানোর কৌশল রপ্ত করে নিত্য নতুন ঝকঝকে সিনেমা দর্শককে উপহার দিয়ে চলেছে। সত্তরোর্ধ রজনীকান্ত কিংবা কামাল হাসানকে এখনো দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রেখে নাচানাচি বা ফাইট সিন করে যেতে হচ্ছে। দক্ষিণের পরিচালক শঙ্কর ও রাজামৌলী কয়েকশো কোটি টাকা বাজেটের ফিল্ম নির্দ্বিধায় বানিয়ে ফেলার সাহস রাখেন। কারণ তাঁরা তাঁদের কাজ নিয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের ফিল্ম ব্যবসা করে প্রযোজকের ঘরে লাভ তুলে দেবেই। আর সেখানে আমীর খানের দেড়শ কোটির ছবি লাল সিং চাড্ডা একশো কোটি ঘরে তুলতে অসমর্থ। সত্যিই এ লজ্জা ঢাকতে খান সাহেব মুখ লুকোবার জায়গা পাচ্ছেন না। 

    মাথায় রাখতে হবে, এখন একটি সিনেমাকে শুধুমাত্র আর একটি সিনেমার সাথে প্রতিযোগিতায় লড়তে হয়না। তাকে লড়তে হচ্ছে, ইউটিউব আর ওটিটির মত প্ল্যাটফর্মের সাথেও। দর্শকের পাতে এখন শুধুমাত্র উত্তম নয়। অতীব উত্তম তুলে দিতে হবে। নাহলে জায়গা হবে আস্তাকুঁড়ে। এখন দর্শকের হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোনের কৃপায় সারা দুনিয়া। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সত্যিকারের প্রতিভাকে জায়গা দিতে হবে। যা আগেকার যুগে হত। এখন আর হয়না বললেই চলে। দক্ষিণ পারলে মুম্বইও পারবে, এই আশা অবশ্যই রাখি।

    _____________
    ©রজত দাস
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হজবরল | 95.214.52.156 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:৪৪511595
  • আর বাংলা ছবির পাশে দাঁড়াবেন না ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন