এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আসামের সুইজারল্যান্ড - হাফলং

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ আগস্ট ২০২২ | ৫৩১ বার পঠিত
  • Switzerland of Assam হিসেবে পরিচিত হাফলং, অনন্যসাধারণ এক শৈলশহর। আসামের একমাত্র শৈলশহর গৌহাটি - শিলচর রেললাইনে গৌহাটি থেকে প্রায় ২৯০ কিলোমিটার আর শিলচর থেকে ১০৩ কিলোমিটার দূরে। আগে ট্রেন পাহাড়ের ওপরে উঠে যেত, কিন্তু ব্রডগেজ লাইন হওয়ার পর থেকে পাহাড়ের নীচে নতুন 'নিউ হাফলং' স্টেশনে নেমে গাড়ীতে করে প্রায় ৯ কিলোমিটার পাহাড়ে উঠে আসতে হয়। শিলচর শহর থেকে ১০৩ কিলোমিটার দূরত্ব হলেও পাহাড়ী রাস্তা বলে ৪ ঘন্টা সময় লাগে ট্রেনে। এই লাইনে ট্রেনের লেট হওয়া নিত্যনৈমিত্যিক ব্যপার, কারণ সিঙ্গল লাইন। আজ ট্রেন এক ঘন্টা লেট করেছে কিন্তু, রাস্তার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল ট্রেন আরও লেট করলেই ভালো হয়।

    দিমা হাসাও জেলার আর একটি শহর মাইবং ছিল দিমা হাসাও রাজ্যের রাজধানী। পরবর্তীতে রাজধানী মাইবং থেকে স্থানান্তরিত হয়ে কাছাড় জেলার খাসপুর - এ হয়। ১৮২৬ সালে আসামে ব্রিটিশ রাজত্ব কায়েম হওয়ার পরে ১৮৫৩ সালে তখনকার উত্তর কাছাড় পাহাড়ী জেলাকে (বর্তমানের দিমা হাসাও জেলা এবং আরও বৃহত্তর এলাকা) নওগাঁ জেলার একটি সাব - ডিভিশন হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬৭ সালে আবার সেই সাব - ডিভিশনকে তিন ভাগে ভাগ করে কাছাড় জেলা, নওগাঁ জেলা এবং তখনকার খাসি ও জয়ন্তিয়া হিলস জেলার (বর্তমানের মেঘালয় রাজ্য) সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। তখনকার কাছাড় জেলার সাথে জুড়ে দেওয়া অংশই বর্তমানের দিমা হাসাও জেলা, যার হেড কোয়ার্টার হাফলং - এ স্থানান্তরিত করা হয় ১৮৯৫ সালে। ১৯৫১ সালে মিকির পাহাড়ী জেলা এবং উত্তর কাছাড় পাহাড়ী জেলাকে রাষ্ট্রপতির আদেশবলে আসামের প্রথম স্বশাসিত কাউন্সিলে (North Cachar Hills Autonomous Council) পরিণত করা হয়। ২০১০ সালে এই উত্তর কাছাড় পাহাড়ী জেলার নাম পরিবর্তন করে দিমা হাসাও রাখা হয়, যদিও স্বশাসিত কাউন্সিলের নাম অপরিবর্তিত রাখা হয়।

    দিমা হাসাও জেলার বাসিন্দারা মূলতঃ আদিবাসী, দিমাসা, কুকী, নাগা ইত্যাদি সম্প্রদায়ের। কিন্তু ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এখানে শিক্ষার হার ৭৭.৫৪ শতাংশ এবং এটা ক্রমবর্ধমান কারণ ২০০১ সালে এই হার ছিল ৬৭.৬২ শতাংশ। দিমা হাসাও কথার মানে দিমাসা ভাষায় "দিমা পাহাড়' যা আমরা চিনি বড়াইল পাহাড় হিসেবে। অপরূপ সৌন্দর্য এই বড়াইল পাহাড়ের, যা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। বর্তমানে আসাম সরকার চেষ্টা করছে দিমা হাসাও জেলায় পর্যটনকে গড়ে তুলতে। বড়াইল পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার পরে মনে প্রানে কামনা করি আসাম সরকারের এই প্রচেষ্টা যেন সফল হয়।

    জেমি নাগা ভাষায় (নাগা সম্প্রদায়ের একটি ভাষা) জাটিঙ্গা শব্দের অর্থ হলো, "বৃষ্টি ও জলের পথ"। বড়াইল পাহাড় থেকে ঝিরিঝিরি করে বেরিয়ে এসেছে জাটিঙ্গা নদী এবং এই নদীর নামেই বড়াইল পাহাড়ের গায়ে এবং পাদদেশে হাফলং থেকে প্রায় ৯ কিমি দূরে এই অঞ্চলের নামকরণ হয়েছে জাটিঙ্গা। এই অঞ্চল বিখ্যাত এখানকার কমলালেবু, আনারস, কফি এবং তিরিতিরি করে বয়ে চলা জাটিঙ্গা নদীর জন্য। কমলালেবু বাগান, আনারস বাগান, কফি বাগান, জাটিঙ্গা নদী সবই দেখলাম আজকে। মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। জাটিঙ্গার একটি জায়গায় সরকারীভাবে "এথনিক ভিলেজ" গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে এই দিমা হাসাও জেলার সমস্ত উপজাতির আদল, ব্যবহৃত পোশাক, তাদের নিজস্ব শৈলীর ঘরবাড়ী বানিয়ে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন উপজাতির নিজস্ব শৈলী এবং সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো মনোমুগ্ধকর।

    তবে জাটিঙ্গার মূল পরিচিতি হলো পাখিদের আত্মহত্যার কেন্দ্র হিসেবে। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস অব্দি হাজারে হাজারে ভিনদেশী পাখিরা এখানে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার কারণ আজ অব্দি আবিষ্কৃত হয়নি। স্থানীয় লোকেদের সাথে কথা বলে কিন্তু গণমাধ্যমের প্রচারকে খানিকটা বাড়াবাড়ি বলেই মনে হলো। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস অব্দি তিনটি শর্ত যদি পূরণ হয় তবে দেখা যায় হাজারে হাজারে ভিনদেশী পাখিরা (migrated birds, mainly of kingfisher types) বড়াইল পাহাড়ের পাদদেশে নেমে আসে রাত্রিবেলায়। শর্ত তিনটি হলো ১. শিলচরের দিক থেকে হওয়া বইতে হবে ২. হাল্কা বা ঘন কুয়াশা হতে হবে ৩. হাল্কা বা ভারী বৃষ্টি হতে হবে। এমনও অনেক বছর গেছে যখন শর্ত তিনটি পূরণ হয়নি তাই একটাও পাখি আসেনি। আগে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় লোকেরা বড়াইল পাহাড়ের পাদদেশে আগুন জ্বালিয়ে রাখতো। এই আগুনে পড়ে পাখিরা মারা যেত। আশেপাশের বাড়িগুলোতে আলো (electric light) জ্বালিয়ে রাখলেও সেই আলোর কাছে পাখিরা চলে আসে, কিন্তু মরে না। তবে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। যেমন জল বা খাবার দিলেও তারা খায় না, সাময়িকভাবে উড়তে পারে না ইত্যাদি। বর্তমানে বেশ কিছু বছর ধরে সরকারী ব্যবস্থায় "জাটিঙ্গা বার্ড ফেস্টিভ্যাল" করা হচ্ছে প্রতিবছর এই সময়টাতে। গতবছর এবং এবছর যদিও কিছুটা বাধ্যবাধকতা মেনে পালন করা হয়েছে কোভিডের কারণে। তবুও এই ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে বোঝানো হয় পরিযায়ী পাখিদের সম্বন্ধে এবং তাদের রক্ষা করা সম্পর্কে। এই বছর শর্ত তিনটি এখনও পূর্ণ হয়নি বলে পাখিরা আসেনি। আবার বিগত কিছু বছর ধরে পাখিদের মরার ঘটনাও অনেক কমেছে। সুতরাং স্থানীয় লোকেদের কারণেই পাখিরা মারা পরে, তারা আত্মহত্যা করতে আসে না। কিন্তু কি কারণে তারা এই জাটিঙ্গাতেই আসে অন্য কোথাও না গিয়ে, দিগভ্রষ্ট হয়ে পড়ে, খাবার বা জল খায়না বা উড়তে পারেনা এসবের ব্যাখ্যা এখনও অজানা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন