ডেমি মুর (স্ত্রী) , উডি হারেলসন (স্বামী) ও রবার্ট রেডফোর্ড (কোটিপতি) অভিনীত একটা বিখ্যাত হলিউডি মুভি ছিল "ইনডিসেন্ট প্রপোজাল" (১৯৯৩) নামে। ডেমি ও উডি পরস্পরকে হাই স্কুল থেকে গভীর ভাবে ভালবাসে। পড়াশোনা শেষে তাদের গভীর ভালোবাসাকে সামাজিক বন্ধনে বেঁধে নেয়।
.
উডি পেশায় আর্কিটেক্ট। আর দশটা শহরের মতো নবদম্পতির জীবন শুরু হয় আর্থিক সংকটের ভেতর দিয়ে। স্বামীকে সাহায্য করার জন্য ডেমি রিয়েল এস্টেট ব্রোকারের কাজ শুরু করে। এই কাজ করতে গিয়ে ডেমি প্যাসিফিক কোষ্টের সান্তা মনিকা বিচে নিজেদের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করার একটা চমৎকার প্লট খুঁজে পায়।
.
তাদের যৌথ স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে দুজনেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে থাকে। এমন সময় অর্থনৈতিক মন্দা এসে এই নবদম্পতিকে আর সবার মতোই আঘাত করে। উডি ব্যাংক থেকে নেওয়া লোনের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক প্লট ও বাড়ি নিয়ে নেবে। আর কোন উপায় দেখতে না পেয়ে দুজনে একটা বুদ্ধি বের করে।
.
তাদের শেষ পাঁচ হাজার ডলার লা ভেগাসের ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে আরও বাড়িয়ে নেবে। ক্যাসিনোর স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমদিকে জিতলেও খুব শীগ্রই তাদের হাতের ডলার শেষ হয়ে যায়। অতঃপর দুজনেই হাল ছেড়ে দেয়। দুজনের কেউই জানত না কোটিপতি ব্যবসায়ী রেডফোর্ড অনেকক্ষণ ধরেই দুজনের কাজকর্ম লক্ষ্য করছিলো। তাদেরকে হতাশ হতে দেখে এগিয়ে এসে নিজেই পরিচিত হয় ও সব কথা জানতে পারে।
.
এমন সময় রেডফোর্ড বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একটা অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব দেয়। ডেমিকে এক রাত রেডফোর্ডের ইয়টে কাটাতে হবে আর বিনিময় পাবে উডি পাবে এক মিলিয়ন ডলার। স্বামী-স্ত্রীর জন্য প্রস্তাবটি খুবই আকর্ষনীয় ও লোভনীয় হলেও সামাজিকভাবে ছিল খুবই ইনডিসেন্ট ও মর্ম পীড়াদায়ক।
.
দুজনেই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে ফিরে যায় কিন্তু ব্যাংকের দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধের তারিখ এগিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দুজনেরই চিন্তা-ধারা এই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। নিরবতার প্রাচীর ভঙ্গ করে ডেমিই প্রথম মুখ খোলে প্রস্তাবটি নিয়ে।
.
উডিকে বলে লোকটা শুধুই এক রাত্রের জন্য তার দেহটা পাবে। ডেমির মন চিরকালের জন্য উডির ছিল এবং থাকবে। অনেক মানসিক দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়নের পর উনি রাজি হয়। উকিলের উপস্থিতিতে চুক্তি হয়ে ডেমি এক রাত ইয়টে থেকে আসে। তাদের আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
.
আর্থিক সমস্যা সমাধানের পরেও তারা হতাশ হয়ে খেয়াল করে দুজনের মধ্যে নানা রকম নতুন সমস্যা গজিয়ে উঠেছে যা আগে ছিল না। দুজনেই খেয়াল করে তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য দূরত্বের প্রাচীর গড়ে উঠেছে যা দুজনের কেউই ভঙ্গ করতে পারছে না। ডেমির মনে চিন্তা খেলতে থাকে উডি কি তাকে আগের মতো গ্রহণ করতে পারছে ?
.
উডি ভাবতে থাকে সেদিন ইয়টে আসলে কি ঘটেছিল ? ডেমি তাকে নিয়ে কি ভাবছে ? সে কিভাবে এরকম একটা ব্যাপার অনুমোদন করতে পারলো ? ডেমি কি আগের মতই আছে নাকি ওই কোটিপতিকে মনটাও দিয়ে এসেছে ? হতাশ হয়ে উডি লক্ষ্য করে তাদের অর্থ ছিল না কিন্তু পরস্পরের ভেতরে ছিল আস্থা বিশ্বাস ভালোবাসা। অর্থ এসেছে কিন্তু ওগুলি হারিয়ে গেছে।
.
বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলতে দুলতে শেষ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ডেমি ডিভোর্স ফাইল স্যুট করে। উডি এক মিলিয়ন ডলার না ছোঁয়ার প্রতিজ্ঞা করে ছোট একটা চাকরি খুঁজে নেয়।
.
একসময় দুজনেই বুঝতে পারে অর্থ সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। অনেক টানাপোড়েনের পর একপর্যায়ে দুজনেই শহরের সেই বেঞ্চের কাছে গিয়ে হাজির হয় যেখানে তারা দুজন চিরদিন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিল।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।