এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে প্রাচীন এক অদ্ভুত প্রথা "উবাস্তে ইয়ামা"

    AR Barki লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ জুন ২০২২ | ২৯৬ বার পঠিত
  • ‘উবাস্তে ইয়ামা’ জাপানি শব্দটির ‘উবা’ হল বৃদ্ধা, ‘স্তুতে’ মানে ফেলে দেয়া আর ‘ইয়ামা’ শব্দের অর্থ পর্বত। জাপানি এই শব্দ দুটির অর্থ — যে পর্বতে ময়লা ফেলা হয়। প্রাচীন জাপানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে লালন-পালন করার সামর্থ্য সব সময় থাকতো না।
    .
    একটা পর্যায়ে তারা পিঠে করে বাবা-মাকে নিয়ে পর্বতের খাদে ফেলে দিয়ে আসত। তখন সবার কাছে এটাই ছিল স্বাভাবিক। পিঠে চড়া বৃদ্ধ পিতা-মাতার হাতে গাছের একটি ডাল থাকত।
    .
    এই ডাল দিয়ে তারা পুত্রের গায়ে আস্তে আস্তে বাড়ি দিত এবং পাতাগুলো পথে ফেলে ফেলে যেত। এই কাজটা তারা কেন করত , তা পরিষ্কার নয়। বলা হয়ে থাকে, এই কাজটি তারা করত , যেন পুত্র ফিরে যাওয়ার পথ ভুলে না যায়।
    .
    উবাস্তে ইয়ামা পাহাড়টির অবস্থান জাপানের নাগানোতে। এখন জাপানে অভাব নেই কিন্তু উবাস্তে ইয়ামা অন্যভাবে এখনো জাপানে আছে।
    .
    এখন আর পাহাড়-পর্বতে জাপানিরা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে রেখে আসছে না , তারা ফেলে দিয়ে আসছে আধুনিক ওল্ড হোমে। তাদের এই অনির্দিষ্টকালীন একাকিত্বে ছুড়ে ফেলে দেওয়া উবাস্তে ইয়ামার চেয়েও করুণ। কারণ পাহাড়ে অনাহারে , শীতে মানুষটা মরতে সময় নেয় না।
    .
    কিন্তু একা ঘরের এই শূন্য জীবন তো শেষ হয় না। আমি মা দিবসে হাসপাতালে গিয়েছিলাম কিন্তু মায়েদের সাথে দেখা করার জন্য হাসপাতালে সন্তানদের আনাগোনা খুব কমই চোখে পড়েছে।
    .
    হয়ত অনেকে আসেন দেখা করতে কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য। ভাবতেই কষ্ট লাগে , যে প্রজন্মের মানুষগুলো আধুনিক জাপান গড়েছে , আজ তারা একা একা হাসপাতালে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যুর জন্য দিন গুনছে।
    বার্ধক্যে বিরামহীন নিসঙ্গতার বেদনা কি আমরা এ বয়সে উপলব্ধি করতে পারি?
    .
    জাপানে নি:সঙ্গতার কারণে প্রতি বছর আত্মহত্যা করা বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। জাপানে এক ভদ্রলোক তাকানোবু নিশিমোতো ইতিমধ্যে নি:সঙ্গতার দারুণ একটা সমাধান বের করেছেন , তা হচ্ছে-মানুষের কথা শোনা।
    .
    যিনি বলবেন , তিনি বয়স্ক কোনো নিঃসঙ্গ ব্যক্তি হতে পারেন , আবার হতে পারেন স্বপ্নভঙ্গ হওয়া কোনো তরুণ। তার কথা তিনি শুনবেন। তবে এ জন্য ওই ভদ্রলোককে নগদ টাকা দিতে হবে। এক ঘণ্টার জন্য জাপানি মুদ্রায় ১ হাজার ইয়েন , যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫০ টাকা।
    .
    আমরা অনেক ভাগ্যবান যে বাংলাদেশি বয়স্করা বেশির ভাগই নিঃসঙ্গ নন। শত কাজ ও ব্যস্ততার মধ্যেই একটি ছেলে বা মেয়ে তার বাবা-মায়ের খোঁজখবর ঠিকই রাখে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির এ যুগেও ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণী আপনজনের একটু সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল থাকে , ঈদে বাড়ি যায়।
    .
    কেন এত গ্রামে যাওয়ার টান? কারন এ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বেড়ে উঠা গ্রামে কিন্তু যে নতুন প্রজন্ম শহরে লেখাপড়া শিখছে , উন্নত দেশে স্থায়ী আবাস ঘরে তুলছে, তারা কি পারবে শেকড়ের টান ধরে রাখতে?
    .
    আমাদের বর্তমান গড়ে দিয়েছেন আজকের প্রবীণরা। তাদের স্বস্তিদায়ক মর্যাদাপূর্ণ প্রবীণজীবন নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
    .
    সম্পর্কগুলো যদি টিকে না থাকে তাহলে আমরা আমাদের সমাজ থেকে সুখ হারিয়ে ফেলব কেননা সুখে থাকা মানে সফলতার শিখরে অবস্থান করা নয় , সুখে থাকা মানে জীবনের প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করা , সময়টাকে আনন্দের সাথে সবাই মিলে অতিবাহিত করা।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন