এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • ডলু চা-বাগান ও সবুজধ্বংসী বিমানবন্দরের বিশ্বাসঘাতকতা (পর্ব - ২)

    পার্থপ্রতিম মৈত্র
    আলোচনা | সমাজ | ৩০ মে ২০২২ | ১৬১৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • পর্ব ১ | পর্ব ২

    অদ্ভূতুড়ে চুক্তিপত্র


    এখন একথা প্রায় প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, এই পরিকল্পনা অনেকদিনের। দীর্ঘদিন ধরেই তা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চলছিল। আজ তার প্রকাশ্য রূপ দেখা যাচ্ছে। শিলচর শহর থেকে বেরোলে সামান্য দূরেই যে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোর (জাতীয় মহাসড়ক), তার দু’ধারের জমির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে এবং সেগুলি অধিকাংশই অবাঙালি ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত। পরিকল্পনা অনেকদিন ধরেই চলছে। এমনকি ডলু চা বাগানে শোনা যাচ্ছে গত বছরের শেষ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এই পরিকল্পনার অংশীদার জাতীয় রাজনীতির বড় বড় খেলোয়াড়েরা। যে কারণে মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে রাজ্য প্রশাসন, বাগানের মালিক পক্ষ এবং শ্রমিকদের তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে (জাতীয় কংগ্রেস, সিপিআইএম এবং বিজেপির শ্রমিক ইউনিয়ন)। এই চুক্তিপত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল মন্ত্রগুপ্তির শপথ, গোপনীয়তা। পরবর্তী সময়ে চুক্তি সম্পর্কিত অসংখ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ায় প্রশাসন বাধ্য হয় চুক্তিপত্রটি প্রকাশ করতে, যেখানে এখনও জ্বলজ্বল করছে গোপনীয়তা রক্ষার শর্তটি। শ্রমিকের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন যেখানে জড়িত, সেই চুক্তি গোপন হবে কেন? আর শ্রমিকদের ইউনিয়ন তা নতমস্তকে মেনে নেবে কেন? তা অবশ্য রহস্যাবৃতই থেকে গেল।




    স্থানীয় পত্রপত্রিকাগুলো (বরাক-বুলেটিন ইত্যাদি) এই মৌ-এর শর্ত আলোচনায় কতগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যেমন মৌ-তে বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের একদল আধিকারিকের সঙ্গে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জমির উপযুক্ততা খতিয়ে দেখে এই জমিটিকেই সর্বপেক্ষা উপযুক্ত বলে পছন্দ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেহেতু এই নির্মাণ কাজের জন্য ত্রিশ লক্ষ চারাগাছ এবং ২৫০০ বিঘা উর্বরা জমি ধ্বংস করে ফেলা হবে, সে ক্ষেত্রে কাছাড় জেলার অন্য আর কোন কোন জমি এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়াকে দেখানো হয়েছিল যা এই মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম অনুপযুক্ত বলে বাতিল করেছে? সেগুলির সম্বন্ধে মৌ-তে কোনো উল্লেখ নেই কেন? দ্বিতীয়তঃ করিমগঞ্জ বা হাইলাকান্দি জেলার কোন জমি কি এই কাজের জন্য উপযুক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য দেখানো হয়েছিল? শিলচর সংসদ ক্ষেত্রের বাইরে কোনও জমি কি দেখানো হয়েছিল? বরাক উপত্যকার অন্য দুটি জেলা, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি, সবসময়ই সমস্ত ব্যাপারে উপেক্ষিত। মেডিকেল কলেজ, এয়ারপোর্ট, টার্মিনাল স্টেশন, এনআইটি, ইউনিভার্সিটি, আকাশবাণী, দূরদর্শন সমস্ত কিছুই শিলচরে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রশ্ন তুলছে যে, প্রথম থেকেই কি সবুজক্ষেত্র বিমানবন্দরের জন্য ডলু বাগানকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল?

    ডলু ছিল একটি চালু এবং লাভজনক চা-বাগান। সেই বাগানের এক বিশাল অংশ অধিগ্রহণের জন্য রাজ্য সরকার কোম্পানিকে কত টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেবেন তার কোনো উল্লেখ গোটা চুক্তিপত্রে নেই। এমনকি শ্রমিকদের যে ক্ষতিপূরণের কথা উঠেছে, তাও শুধুমাত্র কোম্পানির বকেয়া পিএফ এবং গ্র্যাচুয়িটি টাকা জমা দেওয়া বা ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি চালু এবং লাভজনক চা বাগানে বহু শ্রমিককে কর্মহীন করে দিয়ে যে অধিগ্রহণ, তার জন্য শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পাবে না? এই চুক্তিপত্রে লেখা আছে, শ্রমিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা পাবে তা হল, মালিকপক্ষ বেআইনিভাবে এতদিন যে সব শ্রমিকের বহু টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড হিসেবে কেটে নেওয়ার পরেও সেই টাকা এবং কোম্পানির দেয় সমপরিমাণ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড অফিসে জমা না করে যে যে বেআইনি কাজ করে এসেছে, রাজ্যসরকার সেই টাকাই মালিকের হয়ে পরিশোধ করছে, এবং তা ক্ষতিপূরণ হিসেবে চালাতে চাইছে। বলা আছে, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে কোম্পানি সে টাকা জমা দেবে। এবং ভবিষ্যতে আর কোনও পিএফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা বাকি রাখবে না। প্রশ্ন হল, এতদিন শ্রমিকদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া টাকা জমা পড়েনি কেন? প্রাপ্য টাকা ক্ষতিপূরণ ধরা হবে কেন? মৃত অথবা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের গ্রাচুয়িটিও তো প্রাপ্য। সেটা ক্ষতিপূরণ? মৌ-তে বলা হয়েছে, যে, শ্রমিকদের লিখিত আবেদন করতে হবে এবং কোম্পানি সেই আবেদন খতিয়ে দেখে জেনুইন বুঝলে তবেই, রাজ্য সরকারের দেয় ক্ষতিপূরণ পাবার এক মাসের মধ্যে সেই টাকা শ্রমিকদের ফেরত দেবে। আসলে চা-শ্রমিকদের জীবন এবং জীবিকাকে এইভাবেই মালিকপক্ষের বেআইনি কাজ মেনে নিতে অভ্যস্ত করা হয় এবং ইউনিয়নগুলি তাতে মদত যোগায়। আজ যখন কোম্পানির মালিক একটি অকথিত অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পাবে, সেই টাকা থেকে তারা শুধুমাত্র শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেবে এটুকুই চুক্তিতে লেখা হয়েছে। ইউনিয়নগুলির উপর নির্ভরশীল চা-শ্রমিকরা, মালিকপক্ষের অর্থনৈতিকভাবে অনৈতিক কার্যকলাপে অভ্যস্ত হয়ে পড়া চা-শ্রমিকরা, সেই শর্ত গুলি মেনে নিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। না মানলেই তারা উন্নয়নবিরোধী অথবা মাওবাদী?




    আবারও বলছি, চুক্তিপত্রের কোথাও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বলা নেই। অনিচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের টাকা ধরা হয়েছে কিনা, হলে তার পরিমাণ কত – সেটা বলা হয়নি। কোম্পানি ইউনিয়নগুলিকে আশ্বস্ত করেছে, যে, জমির পরিমাণ কমে যাওয়া সত্ত্বেও কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা হবে না। কোথাও বলা নেই – এই চুক্তিটি, এই আশ্বাস – কত সময়ের জন্য বলবৎ থাকবে। আইনে কোম্পানিগুলিকে অধিকার দেওয়া হয়েছে অপ্রয়োজনীয় শ্রমিকদের ছাঁটাই করার। অনতিদূর ভবিষ্যতে কোম্পানি যে তার এই অধিকার প্রয়োগ করে শ্রমিক ছাঁটাই করবে না – তার গ্যারান্টি কী? এবং তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এই ধারাটিকে এই রকম শূন্যগর্ভ অর্থহীন শব্দ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কেন? চুক্তিতে ৩(সি) ধারায় বলা হয়েছে যে অনেক শ্রমিককে বাগানের নতুন এলাকায় উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে। এই অনেক বলতে কত? কোথাও বলা নেই। কোম্পানি তার নিজের প্রয়োজন অনুসারে ‘অনেক’ শব্দটির ব্যাখ্যা করতে পারে। বলা আছে যে অনেক নতুন চা-গাছ পোঁতা হবে। কত চা-গাছ পোঁতা হবে, কোন সময়ের মধ্যে এবং কতটা জমিতে – সে সবই অনির্দিষ্ট। সেই জমি ৭-৮ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ চা-বাগানে পরিণত হবে। কিন্তু ততদিন উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের বসিয়ে খাওয়ানো হবে? ইউনিয়নগুলিকে কোম্পানি আশ্বস্ত করেছে, যে, কোম্পানি শ্রমিকদের থাকার জায়গা যাতায়াত ইত্যাদিতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করবে। প্রথমত, সেই প্রশ্ন কোনো ইউনিয়ন তোলেনি যে, এতদিন এই বিনিয়োগ হয়নি কেন? এই নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ কত? এবং টাইমফ্রেম কী? কোথাও কিছু বলা নেই। ৩(আই) ধারায় বলা হয়েছে যে ডলু বাগানের অন্তর্ভুক্ত ময়নাগড় সাব ডিভিশনের শ্রমিকদের অন্যান্য ডিভিশন-এর মধ্যে অ্যাবজর্ব করে নেওয়া হবে। প্রশ্ন হল, যাদের অ্যাবজর্ব করা হবে, তাদের কোন পোস্টে এবং কী কাজে ব্যবহার করা হবে, সেটা কে ঠিক করবে? সেক্ষেত্রে তাদের মজুরি ও কি একই থাকবে, না যে কাজে তাদের লাগানো হবে সেই কাজ অনুসারে তার মজুরি পরিবর্তিত হবে? ৩(জে) ধারায় বলা হয়েছে, যে, কোম্পানি আশ্বস্ত করেছে লালবাগ সাব-ডিভিশন এর শ্রমিকদের জন্য নতুন ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা হবে। কিন্তু যেহেতু এই চা-বাগান উপড়ে ফেলার সময় ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে যতদিন না নতুন ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি হবে, ততদিন পর্যন্ত লালবাগের চা শ্রমিকরা কোন জল পান করবেন? কোম্পানি ইউনিয়নকে আশ্বাস দেয়, যে তারা চা-বাগানের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে – যেমন লেবার কোয়ার্টার, আভ্যন্তরীণ রাস্তা, পানীয় জল ইত্যাদি। কোম্পানি কিছু আনুষঙ্গিক উন্নয়নমূলক কাজেও বিনিয়োগ করবে – যেমন হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স প্রদান, ফুটবল মাঠের পুনর্গঠন। ইউনিয়নের অনুরোধ অনুযায়ী স্থানীয় স্কুল ইত্যাদির জন্য জমি এবং কিছু সাহায্যও করবে। কোম্পানি, ইউনিয়নকে এই আশ্বাসও দেয়, যে তারা নতুন মেশিন স্থাপন, পুরোনো মেশিন আপগ্রেড করা – ইত্যাদির মাধ্যমে এস্টেটের প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে। কোম্পানি আশ্বাস দেয়, যে এটি লালবাগ বিভাগ থেকে শ্রমিকদের জন্য সড়ক তৈরি করবে, যাতে তারা কাজের জায়গায় সুবিধামত যাতায়াত করতে পারে। কোম্পানি ইউনিয়নকে এই আশ্বাসও দিচ্ছে – ২২.০৮.২০০৩ সালের সরকারি নোটিফিকেশন নং জিএলআর(আরসি) ৪১/৯৬/১৭১ অনুসারে ধীরে ধীরে শ্রমিক কোয়ার্টারের সব কাঁচা ঘর পাকা করে দেবে অর্থাৎ বছরে ৮ শতাংশ হারে আবাসিক শ্রমিকদের প্রতি বছর সিজিআই ছাদের শিট প্রদান করে ৮০টি বাড়িতে লেবার কোয়ার্টার মেরামতের কাজ করাবে। তবে একবার একটি কাঁচা বাড়িতে সিজিআই ছাদের শিট দেওয়া হলে, কোম্পানি পরবর্তী ৫ বছর একই বাড়ির মেরামতের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করবে না। হোক আর না হোক, একথাও স্পষ্ট – এতদিন জীবন ও জীবিকা নির্বাহের এই ন্যূনতম কাজগুলিও এই কোম্পানি করেনি। কোনও চা-বাগান মালিকই করে না। মুনাফা যেখানে প্রধান, সেখানে শোষণই চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।




    গোটা চুক্তিপত্রটি কতগুলি অনির্দিষ্ট ফাঁকা বুলি দিয়ে সাজানো হয়েছে। কোনো প্রতিশ্রুতির কোনো আইনগত প্রভিশন নেই, কোনো টাইম-ফ্রেম নেই। সমস্ত দায়িত্বটাই ন্যস্ত করা হয়েছে কোম্পানির সদিচ্ছার ওপর। সরকারের দায়িত্ব শুধুমাত্র কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনিচ্ছুক শ্রমিকদের পুনর্বাসন এর সম্পূর্ণ দায়িত্বও কোম্পানির। শুধু বলা হয়েছে, যে শ্রমিকদের এই পুনর্বাসনের কাজটি খতিয়ে দেখার জন্য জেলা প্রশাসন একটি মনিটরিং কমিটি তৈরি করবে।

    ভারতবর্ষের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একদল বাণিয়া ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন। বাজার অর্থনীতির ঢক্কানিনাদের উৎসবমুখরতায় চাপা পড়ে যাচ্ছে মানুষ বিক্রির তীব্র আর্তনাদের শব্দ। সবুজ ধ্বংসকারী উন্নয়নের চুক্তিপত্রটি প্রমাণ করে সাম্প্রতিক ভারতবর্ষে শ্রমিক কতটা বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হয়। তার বিরুদ্ধে তার মালিকপক্ষ, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, আর তাদেরই ইউনিয়ন। ডলু চা বাগানের শ্রমিকরা এমনিতে কাঁদছেন না। তাদের জীবন, জীবিকা, অস্তিত্ব – সমস্তই আজ সংকটে।


    শেষ

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • আলোচনা | ৩০ মে ২০২২ | ১৬১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুশান্ত কর | 117.211.56.180 | ৩১ মে ২০২২ ০৯:৪৮508292
  • সুন্দর লিখেছেন। শ্রমিকদের বীরত্ব পূর্ণ সংগ্রামের কথাও আসুক। 
  • মৃত্যুঞ্জয় দাস | 117.237.206.152 | ৩১ মে ২০২২ ১৭:৩৫508319
  • পুরো বিষয় আড়াল করে রাখার দায় মূলত তিনটে ইউনিয়নের। কথাটি এখন বুঝতে কারও আর অসুবিধা হচ্ছে না। তারা যদি চুক্তিতে জি-হুজুর না বলে প্রশ্ন তুলতো অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের মতো, তাহলে হয়তো আগে থেকে আওয়াজ উঠতো।
     এখন প্রশ্নগুলো উত্থাপন শুরু হয়েছে বাগানের, চা-শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে পথে বসানোর পর। এর একটা কারণ অবশ্যই তিন ইউনিয়নের সঙ্গে কথিত মৌ। তারাই তা জনসমক্ষে আনতে দেয়নি। এরপর যখন সমালোচনা শুরু হয়, তখন নিজেকে মহান দর্শাতে বিশেষত সিপিএমের ইউনিয়ন মজুরি শ্রমিক ইইনিয়নকে গালিগালাজ শুরু করে। এমনকী, এটি স্বীকৃত নয় বলে সাংসদের সঙ্গে সুর মেলায়। মাওবাদী, উন্নয়ন-বিরোধী তকমা দেওয়া ছাড়াও মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের গ্রেফতার সবই চলতে থাকে।
    এই লেখায় যথার্থ প্রশ্নই তোলা হয়েছে যে, বরাকের অন্য দুটি জেলাতে বিমানবন্দর স্থাপনের কথা বিবেচনা করা হয়ে নি কেন ? সবকিছুই তো কাছাড় বা শিলচরকেন্দ্রিক। হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জের কি দোষ ? বিকাশের বিকেন্দ্রীকরণ যেখানে কাম্য, উন্নয়নের প্রাকশর্তও--- সেখানে এই একচোখা সিদ্ধান্ত অবশ্যই সন্দেহের উদ্রেক করে। এবং ডলু চা-বাগানের মতো একটা ফলনশীল ও লাভদায়ী বাগানের বিনাশসাধনে সৃষ্ট বিমানবন্দর কখনও এতগুলো শ্রমিকের জীবন-জীবিকা দিতে পারবে না।  গণহারে চা-গাছ ওপড়ানো, বড়বড় শিরিষ জাতীয় ছায়াবৃক্ষ বিনষ্ট করা বা সমূলে ছেদনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর যে প্রভাব পড়বে, আকাশে হাজার বিমান উড়িয়েও তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব হওয়ার নয়।
     তবুও বাগান-শ্রমিকদের শেষতক্ লড়াইর সাক্ষী হয়েছে দেশদুনিয়া। তাঁদের কান্না ও মিনতির পরেও সেই লড়াই মনে রাখবে বরাক। 
     এ সংক্রান্ত আরও লেখা এবং গবেষণালব্ধ কাজ চলুক। 
     
    ধন্যবাদ পার্থপ্রতিম মৈত্র। 
     
    অভিনন্দন গুরুচণ্ডা৯।
  • santosh banerjee | ০২ জুন ২০২২ ২১:১৮508410
  • মজার ব্যাপার হলো এই...... Congress, BJP, CPM ....এরা আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী পার্টি হলেও ঐ....""এক জায়গায় আছে মোদের মিল""এই ধর্মে বিশ্বাসী। তাই না ? শ্রমিকদের দাবী দাওয়া বা তাদের সার্বিক উন্নতির প্রশ্নে এরা প্রচন্ড সরকারি চাটুকার। ভারতবর্ষের সমস্ত বড়ো মাপের আন্দোলনে এই ভূমিকা জ্বল জ্বল করছে। ভাবতে অবাক লাগে এরাই আবার বর্তমান ফ্যাসিসট  , বর্বর , কর্পোরেট পা চাটা সরকারের বিরুদ্ধে গলা ফাটায়.. এই দুমুখো নীতি র ইউনিয়ন গুলো সবচেয়ে বিষাক্ত। বিজেপি কে বুঝি, ওটাতো ল্যাঙটা করেছে দেশটাকে ঐ কয়েকটি কর্পোরেট বরাহ শাবকের হাতে তুলে দিয়ে। কিন্তু CPM? এদের পতাকা টাই লাল মাত্র। সংসদীয় বজ্জাতি তে এরা বিজেপি'র বাপ !! আর Congress? ৭০ বছর ধরে এরাই তো শ্রমিকদের ঠকিয়ে এসেছে!!  
  • অরূপ বৈশ্য | 2401:4900:3a6e:91ac:e97d:f69c:5dc1:14be | ০৪ জুন ২০২২ ২৩:৩৬508491
  • অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ডলুতে হাজার শ্রমিকের দৃপ্ত মিছিল করে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার বিশদ ব্যাখ্যা উল্লেখ করে 2 ফেব্রুয়ারী প্রথম স্মারকপত্র সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কাছে প্রদান করে। একটি রেজিস্ট্রিকৃত ইউনিয়ন ডলু বাগানের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি উত্থাপন করার পর, জেলা প্রশাসন কেন ইউনিয়নকে আলোচনায় সামিল করার কথা চুক্তি করার আগেই ভাবলেন না, সেটা রহস্যজনক। 
    অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের 2 ফেব্রুয়ারীর স্মারকপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছিল, স্মারকপত্রের বিষয়বস্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী তিনটি ইউনিয়নের নজরে এসেছিল, তারপরও তারা এই যথাযথ প্রক্রিয়ার উপর কেন গুরুত্ত্ব দিলেন না, সেটাও রহস্যজনক। ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকের অধিকার সুনিশ্চিত করবে, কিন্তু একটি শিল্পের কোনধরনের পরিবর্তন হলে তার কীধরনের বিরূপ প্রভাব শ্রমিকের উপর পড়বে সেটা বোঝার বিশেষজ্ঞ ট্রেড ইউনিয়ন নাও হতে পারে, সেজন্যই সোশ্যাল অডিটের আইনি বিধান রয়েছে, তিনটি ইউনিয়ন এব্যাপার চক্রান্তমূলকভাবে চেপে গেল, এমনকি ইণ্ডাস্ট্রিয়্যাল ডিসপিউট অ্যাক্টের 9এ ও 9বি ধারার কথা তাদের স্মরণে আসল না। এটা ভাবতে কষ্ট হয় যে, তারা এনভায়রেনমেন্ট অডিটের আইনি বাধ্যবাধকতা সম্পর্কেও অজ্ঞ। 
     
    সবচাইতে রহস্যজনক ও বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, গোপনীয়তার শর্ত লাগিয়ে একটি ট্রেড ইউনিয়ন কী করে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে? সিটু তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে শিলচরের সাংসদের সাথে সুর মিলিয়ে নির্লজ্জের মত অতি বাম, ভূ-মাফিয়া, শ্রমিকদের উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দেওয়া, দুষ্ট চক্র ইত্যাদি অভিধায় অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়ে। এবার ভূমাফিয়াদের যোগসাজসের অভিযোগের তীর তাদের দিকেই ছুটে যাচ্ছে, চালাকি ও শঠতার মাধ্যমে মালিকের সেবাদাস হওয়া যায়, শ্রমিকের স্বার্থকে প্রাধাণ্য দেওয়া যায় না।
  • পার্থপ্রতিম মৈত্র | 2409:4060:104:4eab:bde7:6a79:98a:f3ba | ০৫ জুন ২০২২ ১৬:২৫508517
  • অরূপ বৈশ্য, আপনারা এই আন্দোলনের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করছেন। দূর থেকে শ্রমিক আন্দোলনের দৈনন্দিন গতি প্রকৃতির সত্যনিষ্ঠ বিবরণ দেওয়া কঠিন। বিশেষতঃ প্রশাসন যখন স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের কণ্ঠরোধ করতে চায়। চুক্তিপত্রে গোপনীয়তার শর্ত থেকে শুরু করে ১৪৪ ধরা জারি করে ডলু তে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে এটি বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। আপনারা শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে অবহিত করলে সকলে সত্য জানতে পারে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন