আমি - হ্যালো ! কে বলছেন ?
সে - কে বলছি, গলা শুনে বুঝতে পারছেন না ? আশ্চর্য্য তো !
আমি - বুঝতে পারছি না বলেই তো জিজ্ঞেস করছি।
সে - আপনি তো আশ্চর্য্য মানুষ দেখছি। সেই থেকে কে বলছেন ? কে বলছেন, বলে যাচ্ছেন।
আমি - আপনি কে সেটি জানা থাকলে কি জিজ্ঞেস করতাম যে, কে বলছেন ? প্লিজ বলুন আপনি কে ?
সে - আমি একটি মেয়ে। ভুত নই।
আমি - আপনি যে মেয়ে সেটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। ওটা না বললেও চলত। আর আপনি যে ভুত নন। সেটাও আমি বেশ বুঝতে পারছি।
সে - ও মা ! তাই নাকি ? আমি ভুত নই, কি করে বুঝলেন শুনি...
আমি - কথা বলার সময় আপনার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি যে... ভূতে তো নিঃশ্বাস নেয় বলে শুনিনি।
সে - হি হি হি হি…
আমি - এ কি ? অমন করে হাসলেন কেন ? এবার তো আমার আপনাকে ভুত থুড়ি পেত্নী মনে হচ্ছে।
সে - উঁহু। আমি পেত্নী নই। শাকচুন্নি। হি হি হি হি...
আমি - আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল দেখছি। মশাই আপনি ভুত পেত্নী শাকচুন্নি যাই হন। লাইনটা ছাড়ুন। আমার জরুরি কথা বলার আছে।
সে - ও তাই বুঝি ! মেয়েরাও মশাই হয় নাকি ?
আমি - কেন হবে না ? মশাইয়ের গায়ে পুরুষ বা মহিলা দাগিয়ে দেওয়া আছে নাকি ?
সে - হ্যাঁ, এটা তো আপনি ঠিক বললেন। মশা আর মশাই ব্যাপারটা একই রকম। দুজনকেই দেখে বোঝার জো নেই। পুরুষ না মহিলা। তাই না বলুন ?
আমি - হ্যাঁ, তাই। আপনি লাইনটা ছাড়বেন ? বললাম তো আমার জরুরি একটা ফোন করার আছে।
সে - ইস। জরুরী কথাগুলো আমাকেই বলুন না। আমায় বলা যায় না বুঝি !
আমি - আপনি তো দেখছি, আচ্ছা গায়ে পড়া মহিলা। আপনার কোনো কাজ টাজ নেই নাকি ? সকাল সকাল ফোন ধরে ফাজলামো মারছেন !
সে - এই মুখ সামলে কথা বলুন। আমি গায়ে পড়া মহিলা ! তাহলে আপনি কি ? গায়ে পড়া ব্যাটা ছেলে কোথাকার !
আমি - দেখুন, ভাল হবে না কিন্তু। সেই থেকে লাইনটা আপনি ধরে বসে রয়েছেন। আর আমায় বলছেন...
সে - আপনি ওরকম বললেন বলেই তো বাধ্য হয়ে বলে ফেললাম। নাহলে আমি অমন নয়।
আমি - তাহলে আপনি কেমন ?
সে - আমি কেমন, সেটা কি এখনো বুঝতে পারেননি ?
আমি - হুঁ। একটু একটু বুঝেছি। যেমন আপনার গলাটা ভীষণ মিষ্টি। গান টান শেখেন নাকি ?
সে - কি করে জানলেন ?
আমি - কি জানলাম ?
সে - ওই যে গান শিখি কিনা !
আমি - যাচ্চলে, আমি তো আপনাকেই জিজ্ঞেস করলাম।
সে - কি ?
আমি - গান শেখেন কি না ?
সে - হুঁ। শিখি। রবীন্দ্র সংগীত।
আমি - বাহ্ ! ওই জন্যেই আপনার গলাটা এত মিষ্টি। যেন মধু ঝরছে।
সে - যাহ্ ! অত বাড়িয়ে বলার মত কিছু নয়।
আমি - মা কালীর দিব্যি বলছি। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আপনার গলাটা...
সে - থাক। অতবার বললে আমার ভীষণ লজ্জা করে। আমি একটা কথা বলতে পারি...
আমি - স্বচ্ছন্দে।
সে - আপনার গলাটাও না দারুণ। একদম অরূপ কুমারের মত। প্রথম শুনে তো আমি ভেবে ফেলেছিলাম, স্বয়ং উনিই আমার সাথে কথা বলছেন।
আমি - এ্যাঁ ! বলেন কি ? একেবারে সুপারস্টার অরূপ কুমার ! বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে।
সে - বিশ্বাস করুন। মা কালীর দিব্যি বলছি।
আমি - আপনিও মা কালীর দিব্যি দিচ্ছেন !
সে - হি হি হি হি... আপনার ছোঁয়ায় এক্ষুনি বদভ্যাস গজালো।
আমি - থাক। মা কালীকে ছেড়ে দিন। দুজনে মিলে টানাটানি করলে উনি কার দিকে যাবেন ভেবে পাবেন না। আমি বিশ্বাস করলুম।
সে - তাহলে কথা দিন।
আমি - কিসের আবার কথা দেব ?
সে - এই সময়ে কাল ফের ফোন করবেন !
আমি - কেন ? খামোখা কাল আপনাকে আবার কেন ফোন করতে যাব ?
সে - জানি না। যান তো। আপনি মশাই ভীষণ বেরসিক।
হঠাৎ ফোনটা কেটে গেল। ল্যান্ড ফোনের ওপ্রান্ত থেকে শুধু টঁক টঁক টঁক... করে শব্দ আসতে থাকল।
_______________

©রজত দাস