এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কামিনী কাঞ্চন ও জাপানী তেল

    রজত দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ মে ২০২২ | ৬৭৫ বার পঠিত
  • একচল্লিশে এসে কাঞ্চনের শেষমেষ বিয়েটা হল। পুলিশের চাকরিতে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আজ বালি তো কাল বলাগড়ে বদলি। তারপরে দিবারাত্র অপরাধীদের সঙ্গে সহবাস। জীবন যেন হাঁসফাঁস। তিতিবিরক্ত জীবনটাকে আর বিয়ের বাঁধনে বাঁধতে উৎসাহী ছিল না। কিন্তু অমলেশ কাকু ছাড়লেন না। প্রায় ঊনসত্তরটি পাত্রী দেখে কামিনীকে ফাইনাল করেই ফেললেন। কাঞ্চনের চেয়ে পনেরো বছরের ছোট কামিনী কামনার আগুনে জ্বলেপুড়ে মরছিল। দেখতে শুনতে তাকে মন্দ নয়। তবুও কেউই তাকে পছন্দ করছিল না। সব পাত্রপক্ষই দেখেশুনে খেয়েদেয়ে নাকচ করে যাচ্ছিল। কারণ, পাত্রী নাকি ভীষণ কামুক। চোখেমুখে কামনার আগুন। ছাব্বিশ বছরের কামিনীকে দেখে কি করে বুঝতে পেরে যাচ্ছিল, যে সে কামুক। কামিনীর বাবা সত্যব্রত ব্যাপারটায় বেজায় চটে ছিলেন। এত সংস্কারের মধ্যে দিয়ে মেয়েকে মানুষ করলেন। তবুও তাকে দেখেই কামুক কি করে বলছে ! কে জানে ? তিনি বুঝতে পারছিলেন না। 

    কাঞ্চন ভেবেছিল, এই বয়সে বিয়ে। তাই একটু কামুক ধরনের মেয়েই তো ভাল। কামিনী তাকে সর্বক্ষণ কামনায় ভাসিয়ে দেবে। এই নিরস পুলিশি জীবন। কামিনী তার কামনার রসে কাঞ্চনকে ভিজিয়ে সপসপে করে রাখবে। মন্দ কি ! একচল্লিশের কাঞ্চন বিয়ের আগে অনেক কিছুই জানত না। নিজের শরীর কিংবা নারীর শরীর, দুটোতেই সে ছিল ভীষণ আনাড়ি। তারফলে মধুচন্দ্রিমায় পুরীতে গিয়ে যা ঘটল তার বিবরণ সর্বসমক্ষে বলা যাবে না। 
    কাঞ্চন তো পারেইনা। তার কাছ থেকে অতি গোপনে গোকুলদা জেনেছে। তার কাছ থেকে আমি। আমিও কিভাবে অত গোপন কম্মের কথা সকলের সামনে বলব বুঝে উঠতে পারছিনা। তবুও বলতে আমায় হবেই। কারণ আর কেউ যেন, বেশি বয়সে কাঞ্চনের মত বিয়ের পিঁড়িতে না বসে। তাহলে তাদের হাল ও কাঞ্চনের মতই হবে।

    কাঞ্চন ভেবেছিল সবেতো বিয়ে হয়েছে। কামিনীর বয়সও কাঁচা। বিয়ের জল পড়ে সে একটু পাকুক। তারপর নাহয় বাচ্চাকাচ্চা নেওয়া যাবে। দু একবছর একটু ফুর্তি টুর্তি করেই নাহয় কাটুক। সেই ভেবে, আর গোকুলদার পরামর্শে বিয়েতে উপহার পাওয়া হোলসেল প্যাকের পুরোটাই লুকিয়ে ট্রলি ব্যাগের ভেতরে নিয়েছিল। নিজের একখানা লুঙ্গি তারওপর চাপা দিয়ে নিয়েছিল। যাতে কামিনী দেখতে না পায়। দেখতে পেয়ে গেলে তার ভারী লজ্জা করবে। গোপনতম অঙ্গের নতুন মোজা বলে কথা। 

    এদিকে কামিনী, বিএ পরীক্ষায় বার পাঁচেক বসেও উৎরাতে ব্যর্থ। বাবা সত্যব্রত গত্যন্তর না দেখে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু কামিনী বিএ পরীক্ষার মতই বিয়ের পরীক্ষাতেও তথৈবচ। সত্যব্রত বাবুও ভেবে পাননা, মেয়েকে দেখতে শুনতে মন্দ নয়। ফর্সা, বেশ তাক লাগানো ফিগার। তবুও কারোর পছন্দ কেন হচ্ছে না ! সকলেরই এক রা। কামিনী নাকি কামুক। তা বাপু বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি গিয়ে কি করবে টা কি ? স্বামী সোহাগে তো কামুক মেয়েই ভাল। যাইহোক শেষমেষ পুলিশ পাত্র কাঞ্চনের গলায় কামিনী ঝুলল। 

    ফুলশয্যার রাতে দুজনের মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি। আলাপ পরিচয় করেই ক্লান্ত দেহ দুটি ঘুমিয়ে পড়েছিল। বয়সে বড় হলেও কামিনীর বর পছন্দ হয়েছিল। নাহয়েই বা যায় কোথায় ! নয় নয় করে ছত্রিশখানা পাত্র পক্ষের সামনে হলুদ শাড়ি পরে সেজেগুজে বসতে হয়েছে। নিট ফল শূন্য। সকলেই তার মুখে কামনার আগুন দেখে পালিয়েছে। 
    কামিনীর খুব ইচ্ছে ছিল কামনার দন্ডটি চোখের দেখা একবার দেখে। কিন্তু তা ঘটেনি। যাকগে, পরদিনই তো ট্রেন। মধুচন্দ্রিমায় একেবারে সব কিছু উল্টে পাল্টে দেখে নেবেক্ষণ। খুব আদর করবে। মনে মনে ভেবে রেখেছে।

    হলও তাই। কাঞ্চন কিছু করার আগেই কামিনী ওকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর দুজনের দুটি মুখ খুব কাছে। একে অপরের নিঃশ্বাস শুনতে শুধু নয় অনুভব করতে পারছে। কামিনী নিজের লজ্জা টজ্জা সব ঝেড়ে ফেলে নতুন বরের গলা জড়িয়ে চকাত চকাত করে ছাড় পাঁচটা চুমু খেয়ে ফেলল। 

    কাঞ্চন তো আর একটু হলেই ভিরমি যেত। জীবনে কখনো মহিলা সঙ্গ করেনি। হঠাৎ করে নতুন বউয়ের এইভাবে আক্রমন, তার সহ্যসীমার বাইরে। সে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরেই লুঙ্গির গিঁটে একটি প্যাকেট লুকিয়ে বেঁধে নিয়েছিল। যা হবার মোজা পরেই হবে। মোজা ছাড়া মাঝের পা কদাপি কোথাও নয়, গোকুলদার কড়া নির্দেশ। 

    কামিনীর লালাসিক্ত জিভ কাঞ্চনের মুখে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন কাঞ্চন চোখ বুজে খুঁজে চলেছে, আপন দন্ডটি। লুঙ্গির ভাঁজ থেকে প্যাকেটের মোজা এখন তার হাতের ভাঁজে। কামিনীর আধবোজা চোখ। ওর আড়ালে লুঙ্গি তুলে কোনরকম ভাবে গলিয়ে ফেলতে পড়লেই কেল্লাফতে। কামিনী কোনোভাবেই মা হতে পারবে না। আর কাঞ্চন বাবা।

    কিন্তু কোথায় কি ? সেটা তো আগের মতোই !! এইটুকুন। অনেক চেষ্টা করেও কামুক কামিনী নতুন বরের ইয়ে জাগাতে পারল না। রেগে গিয়ে সে লুঙ্গি তুলে দেখতে চাইল। কাঞ্চন তো লজ্জায় লাল। সে কিছুতেই দেখাবে না। লুঙ্গি ধরে দুজনের টানাটানি চলছে। কাঞ্চন লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে বলছে, আমি কি তোমারটা দেখতে চেয়েছি ? তুমি এমন করছ কেন ? কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা। ইত্যাদি ইত্যাদি।

    কামিনী অবশ্য অনেক লড়াইয়ের শেষে লুঙ্গি টেনে খুলে দিয়েছিল। আর তারপরই সে ভীষণ হতাশ। তার যাবতীয় কামনা বাসনা কামুকিপনা উধাও। কামিনী একটু দূর থেকে অনেক চেষ্টা করেও কাঞ্চনের জঙ্গলের মাঝে কিচ্ছু খুঁজে পায়নি। সে রেগেমেগে পুরী থেকে ফিরে, সেই যে বাপের বাড়ী গেছে। আজও ফেরেনি।

    গোকুলদার কাছে লেটেস্ট খবর, কাঞ্চন এক শিশি জাপানি তেল কিনেছে। তেলে ফল পেলে তবেই কাঞ্চনের কাছে কামিনী ফিরবে। কামিনীর নাকি এটাই শেষ কথা।

    ___________
    ©রজত দাস
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন