এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একটা পুরনো লেখা

    Swati Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ মে ২০২২ | ৩৬৪ বার পঠিত
  • বছরটা  শুরু হয়েছিল নানা লোকের নানা টিপ্পনি দিয়ে। বিশে বিশ, বিষাক্ত। সাবধান বাণী ছুটে এসেছিল হবু দম্পতিদের নিয়ে। কেউ কেউ হাসাহাসি করে উড়িয়ে দিয়েছিল কেউবা একটু ভয়‌ও পেয়েছিল। কিন্তু বেশীদিন পেরোতে হয়নি সুদূর চীন থেকে নভেল করোনা ভাইরাস পাড়ি দিয়েছিল ভারতবর্ষে। তার কদিন আগেই কনটাজিয়ন ছবিটা দেখেছিলাম। ২০১১সালেই সিনেমাটা পরিচালক স্টিভেন সোডারবার্গ কিভাবে বানিয়ে ফেলেছিলেন ঈশ্বর জানেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে ২০২০_২০২১এ প্রায় সাতচল্লিশ লাখের‌ও বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই কারনে। করোনা পূর্ব আর করোনা উত্তর জীবন ভিন্ন হয়ে গিয়েছে। গভীর এবং স্হায়ী প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়। তবে আজ সেই ভয়াবহতার কথা লিখবনা। আজ লিখব গতকালকের কথা। অর্থাৎ২০.৫.২০এর কথা।

    এখন লিখছি অত্যন্ত ক্ষীন প্রায় নিভন্ত এক L.E.D লাইটের আলোয়। যেটা এক্ষুনি নিভে যাবে চার্জের অভাবে। আর আমিও ডায়রীর পাতা বন্ধ করব। কারন গতকাল সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে আছে। আমফান কাল ভৈরবের নৃত্য করেছে গোটা বাঙলার ওপর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে গত ১০০বছরে এরকম ঘূর্ণিঝড় বাঙলার বুকে হয়নি। ২৪৬কি.মি/ঘন্টা ছিল তার গতিবেগ। করোনায় বিপর্যস্ত মানুষ গতকালকের ঝড়ে একেবারে ভেঙে পড়েছে।

    আজ যখন এই অন্ধকারে সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতায় শুধু মাত্র ঝিঁঝিঁ র একটানা কনসার্টে বসে আছি। তখন মেলাতে পারছিনা গতকালকের সাথে আজকের রাত। নিকষ কালো অন্ধকারে তীব্র গতিশীল হাওয়ায় জাগতিক সব কিছুকে ভীষন তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। খড়কুটোর মত উড়ছিল গাছ, বাড়ির চাল, রাস্তার হোর্ডিং। শতাব্দী প্রাচীন বৃক্ষের আত্মগরিমা কে মুহূর্তের মধ্যে তাচ্ছিল্যের সাথে উপড়ে এনে ফেলেছ রাস্তায়, যেন তার গতিপথের সামনে দাঁড়ানোর এটাই প্রাপ্য শাস্তি। কি দাপট!!কি সাংঘাতিক দূর্বার শক্তি।

    অথচ আজ! যেন চেনাই যায়না। শান্ত, নিঃঝুম তান্ডব পরবর্তী গাম্ভির্যে।

    কিছুই ভাল লাগছিল না। লাগার কথাও নয়। গত মার্চ মাস থেকে একেই ছিল অসহনীয় গৃহবন্দী দশা তার ওপর গতকাল থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বসে আছি গুম হয়ে অনভ্যাসের অন্ধকারে। লাইট বিদায় নিয়েছে চার্জের অভাবে, মোমবাতি ই ভরসা। উঠে বসলাম জানলার ধারে। ব‌হুদিন পর রাতের অন্ধকার কে দেখলাম। । রাত দেখলাম। নিয়ন লাইটে তো পূর্ণিমার চাঁদ কেও স্ট্রিট লাইট মনে হয়। তাই ‌‌‌যখন আধুনিকতার আর কিছুই বাকি র‌ইলনা তাকালাম প্রকৃতির দিকে। আহা, কি মনোরম, কি মমতাময়ী, কত শান্ত। পুকুরের ঝিরঝিরে স্রোতে ডুবুক ডুবুক আওয়াজ, মাছ স্নান করছে। পাখির নতুন বাসায় নিশ্চিন্ত ডানা ঝাপটানো। নিরলস জাগতে রহো ডাক দিয়ে চলেছে ঝিঁ ঝিঁ। হাওয়ার ওড়না গায়ে দিয়ে আস্তে আস্তে মাথা দোলাচ্ছে তরুদল। যেন পূণর্জন্ম উদযাপন করছে।

    অদ্ভূত, অদ্ভুত লাগছে আমার। দিন ই ছিল, আলোই ছিল জীবন। রাতের অন্ধকার যে জীবনের অর্ধেকাংশ ভুলে গেছিলাম। আঁধার নিশীথের গানের সাথে, তার আপন ছন্দের সাথে থাকিনি তো কতকাল। তাকিয়ে আছি চোখ পেতে কান পেতে। দূরে নক্ষত্র রাশি যেন পাতা জুড়ে ছড়ানো অভ্র। বাতাসের দ্রুত পদচারণ, সেই বাতাস যা গতকাল প্রায় ১০০জনের প্রান নিয়েছে, যে বাতাসে ভর করে সাক্ষাৎ মৃত্যু দূত নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছে শরীরে। আজ সে প্রানদায়িনী। না জানা হরেক পতঙ্গের শব্দগুচ্ছ। আমার কাছে নতুন। রাতের কথা। রাতের ভাষা। রাত যত যৌবন লগ্না হয় সে তত রহস্যময়ী হয়ে ওঠে। এক এক প্রহরে এক এক ভাষা। কে বলে যামিনী আলোকশূন্য?তার আলো তো চোখ দিয়ে দেখা যায়না, দেখতে হয় অন্তর দিয়ে। অন্ধকারে ই তো আলোর খোঁজ চলে। আর আলোতেই অন্ধকারের শেষ।

    অন্তর মম বিকশিত করো
    অন্তরতর হে।
    নির্মল করো, উজ্জ্বল করো 
    সুন্দর কর হে।


    তাইতো ভোরের এত স্নিগ্ধতা। এত পবিত্র ঊষালগ্ন। সেই রূপসীরাতের সাথে আমার ক্ষনযাপন আমায় জীবনের অন্ধকার কে গ্ৰহন করতে শিখিয়েছিল। প্রকৃতির পাঠ বড় নিগূঢ়। তার কাছে আমরা নেহাত শিশু। তাই শিশুর মত‌ই চেয়ে র‌ইলাম চলন্ত লন্ঠনের আলোয়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন