এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যে ভাবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ আমেরিকাকে বিশ্ব নেতা বানিয়ে দিল

    AR Barki লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ৬৯৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ১৯৪১ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কেঁপে উঠেছে ইউরোপ। ব্রিটেনের সামনে একটাই রাস্তা খোলা আছে। যদি নতুন মহাশক্তি আমেরিকা তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। রুজভেল্ট সাহেব চার্চিলকে জানালেন আমেরিকা সব কিছু দিয়ে ব্রিটেনকে বাঁচাবে , কোন সমস্যা নেই।
    .
    শর্ত একটাই – যুদ্ধ শেষ হলে সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশদের অধীনে যত ভূখণ্ড আছে , সেখানে স্বাধিকার (সেলফ ডিটারমিনেশান) দিতে হবে। এর মানে হল – ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মানুষ স্বাধিকার পাবে। তাঁরা নিজেরা চাইলে ব্রিটেনের অধীনে থাকবে , না চাইলে স্বাধীন হয়ে যাবে।
    .
    যুদ্ধ শুরু হবার পরেই চার্চিলের পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছিল। এবার রুজভেল্টের প্রস্তাব শুনে তাঁর মনে হল – এর চেয়ে আটলান্টিকে ডুবে যাওয়াও ভাল। তিনি বললেন , এ কথা মানলে ব্রিটেনের মানুষ আমাকে ছাড়বে না।
    .
    রুজভেল্ট জবাব দিলেন , কিন্তু যুদ্ধটা ব্রিটেন জিতে যাবে। চার্চিল মনে মনে বললেন , তা বটে। কিন্তু আমি মনে হয় আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারব না। আর হয়েছেও তাই। যুদ্ধে জয়ী হয়েও তিনি পরের নির্বাচনে হেরে গেলেন।
    .
    সকাল বিকাল মহাত্মা গান্ধীকে ‘নেকেড বেগার’ বলে গালি দেয়া চার্চিল নিজেই তখন ভিখারি। তবে মহাত্মা গান্ধীর মত ন্যাংটা না – কোট পরা , চুরুট মুখে ভিখারি। আটলান্টিকের বুকে দাঁড়িয়ে তাঁকে মানতে হল রুজভেল্টের কথা।
    .
    স্বাক্ষর হল চুক্তি – আটলান্টিক সনদ। এটাই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। তাঁর চেয়েও অনেক গভীরের কথা হল, এতে নিশ্চিত হল – যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয় দেশগুলো একে একে হারাবে তাদের সকল উপনিবেশ।
    .
    হারাবে বিনা পয়সায় পাওয়া কাঁচামাল , মনোপলি মার্কেট। যে সাগরপথ তারা আটকে রেখেছে , সেগুলো খুলে দিতে হবে সবার জন্য। অনেক নতুন স্বাধীন দেশ তৈরি হবে। সেখানে সস্তায় পাওয়া যাবে অনেক কাঁচামাল।
    .
    যেই বাজারগুলো উপনিবেশের বাঁধনে দখল করে রেখেছে ইউরোপীয়রা , সেগুলো হবে উন্মুক্ত। আর যুদ্ধ শেষে একমাত্র বড় শক্তি হবে আমেরিকা। তাই ধীরে ধীরে এসবই আসবে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে।
    .
    রুজভেল্ট নিশ্চিত করলেন – যুদ্ধ শেষে যে দিন আসবে , সেই দিন হবে আমেরিকার দিন। কিন্তু কিভাবে ? আগে তো ইউরোপিয়ানরা সরাসরি দস্যু পাঠিয়ে লুট করে আনত। জোর করে শুধু তাঁদের বানানো জিনিসই চড়াদামে বিক্রি করত উপনিবেশগুলোতে। এখন তো সেটা হবে না।
    .
    আবার শুরু হল আলোচনা আমেরিকার মাটিতে। নিউ হ্যাম্পসায়ারের ব্রেটন উডসে। মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে – ১৯৪৪ সালে। ততদিনে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার রূপরেখা অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তার মানে রাজনৈতিকভাবে পৃথিবীকে পরিচালনা করার প্লট প্রায় রেডি। এখন দরকার অর্থনৈতিক নকশা। সেই নকশায় তৈরি হবে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুড়ি।
    .
    ঘুড়িটা ওড়তে থাকবে পৃথিবীর কোনায় কোনায় , তবে লাগাম লাগবে মাত্র কয়েকটা ধনী দেশের হাতে। একটানা বাইশ দিন আলাপ চলল ব্রেটন উডসে। এই আলাপ থেকে জন্ম হল তিনটি প্রতিষ্ঠানের – বিশ্ব ব্যাংক (ডব্লিউবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)।
    .
    পৃথিবী পেল এক নতুন মহাজনী কারবার। চরিত্রে আন্তর্জাতিক , আর মুখে মধুর ভাষণ। টাইয়ের নটে বাঁধা অদৃশ্য ছুড়ি। এই মহাজনী কারবারে ভিন্ন ভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ টাকা দিল। সেই টাকায় একটা ফান্ড হল। আর সেই ফান্ড থেকে ঋণ দেয়া হবে বিভিন্ন দেশকে। অদৃশ্য ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলা হলো মুক্ত বিশ্বকে।
    .
    সুজন দেবনাথ , কৃত্তিনাশা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন