গ্রাস
খাঁচার কপাট খুলে দিতেই মিঠু তুর তুর করে বেরিয়ে আসে। ও এখন অমিতের
হাত থেকে দানা খাবে। তারপর আবার
তুর তুর করে হেঁটে ঢুকে যাবে খাঁচায়।
এভাবে কেটে গেছে বারো বছর।নাহ,
মিঠু উড়ে পালায় না। মিঠু উড়তে
চায় না। মিঠু উড়তে ভুলেই গেছে।
কিংবা মিঠুর ডানা একটু ছেঁটে রেখেছে
অমিত। যাতে মিঠু উড়তে চাইলেও
উড়তে না পারে। মিঠু এখন এই
খাঁচাটাতে থাকলে নিজেকে নিরাপদ
মনে করে। যতই হোক পদে পদে বিপদ
নেই, খাবার খুঁটে খেতে হয় না। নির্দিষ্ট
সময়ে খাবার পেয়ে যায়। এক কালে সে
যে আকাশে উড়ত সেটা আজ ইতিহাস।
বনের টিয়া জীবনের সেই পরম আনন্দের
বৃহৎ ওড়া আজ খাঁচায় বন্দী
হয়ে আছে তাতে নিত্যকার জীবনের
ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে না কোনও। তবু এক
এক দিন মিঠু ছটফটায়। খাঁচার ভেতরেই
ডানা মেলে ধরে তীক্ষ্ণ স্বরে প্রতিবাদ জানায়।
সে চায় উড়তে, এক গাছ থেকে আর
এক গাছ, এক বন থেকে আর এক বন,
তার মতো যারা তাদের সাথে এক সুরে
গান গাইতে চায়, চায় কলহে মেতে উঠতে।
অমিত লক্ষ্য করেছে সেসব দিনে
মিঠু খাঁচায় ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
যেমন অমিত। ঝাঁ চকচকে করপোরেট
অফিস থেকে ফিরে সার্দান আভিনিউয়ের
সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ান।
ভাবেন কত দিন খোলা মাঠে গিয়ে ঘাসে
পা রাখেন নি, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এক
বাটি মুড়ি নিয়ে দাওয়ায় বসে চিবিয়ে
চিবিয়ে রসিয়ে রসিয়ে খান নি। কতদিন
পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে নেমে সাঁতার কাটেন নি
কত দিন....কত দিন রাতে ছাদে চিৎ
হয়ে শুয়ে তারা দেখেন নি। নিরাপত্তার
ঘেরাটোপ যেন মস্ত খাঁচা হয়ে
তাদের দু'জনকেই গ্রাস করতে আসে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।